বড়ুচণ্ডীদাসকৃত শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের একাদশখণ্ডের নাম ‘বাণখণ্ড’। মূল পাণ্ডুলিপিতে খণ্ডটি পুঁথির ১৫৩ পৃষ্ঠার ২নম্বর শ্লোক থেকে পাওয়া যায়। আর সমাপ্ত হয়েছে ১৬৯ পৃষ্ঠার ১ নম্বর শ্লোকে। এই খণ্ডটি সম্পূর্ণ পাওয়া গিয়েছে।
এই একাদশ খণ্ডের সূচনায় দেখি কৃষ্ণ খুবই রুষ্ট হয়েছেন শ্রীরাধিকার ওপরে। আগের খণ্ডে অর্থাৎ হারখণ্ডে কৃষ্ণ রাধিকার কন্ঠহার চুরি করেন। রাধিকা যশোদার কাছে কৃষ্ণের নামে নালিশ করেন। কৃষ্ণ খুব রেগে গিয়ে বড়াইকে বলেন, তিনি রাধিকার সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ত্যাগ করবেন। উপরন্তু রাধিকাকে পঞ্চশরে বিদ্ধ করে বিবশ করে দেবেন বলেও ঘোষণা করেন।
এরপরে বড়াই রাধিকাকে নিয়ে মথুরার হাটের পথে যেতে যেতে যমুনা পার হয়ে সেই কদম গাছের তলায় আসে, যেখানে কৃষ্ণ রাধার অপেক্ষায় বসে ছিলেন। সেখানে পৌঁছে রাধাকে একটু দূরে দাঁড়াতে বলে বড়াই কৃষ্ণের কাছে গিয়ে রাধাকে পঞ্চশর মেরে তাকে বিবশ করে দিতে বলে। আবার এই বড়াইই রাধার কাছে ফিরে এসে রাধাকেও সাবধান করে বলে, রাধা যেন কৃষ্ণের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন, কেননা কৃষ্ণ রাধাকে পঞ্চবাণ মারতে প্রস্তুত হয়েছেন। রাধা রাজি হলেননা। একথা শুনে কৃষ্ণ আরও রেগে গিয়ে রাধার সঙ্গে ঝগড়া শুরু করে দিলেন। চলতে লাগল চাপানউতোর। অবশেষে ক্রুদ্ধ অপমানিত কৃষ্ণ রাধার বুকে পঞ্চশর নিক্ষেপ করলেন। এবারে মদনাক্রান্ত শ্রীরাধিকা কৃষ্ণ সঙ্গলাভের জন্য অস্থির হয়ে উঃঠলেন ও মূর্ছিত হয়ে পড়ে গেলেন।
বড়াই ভয় পেল। কৃষ্ণের ওপরে বিরক্তও হলো। রাধার এই অবস্থার জন্য বড়াই কৃষ্ণকেই দায়ী করল। কৃষ্ণ বলেন, তিনি সব কিছুই করেছেন বড়াইয়ের পরামর্শে। তখন বড়াই কৃষ্ণকে নারীহত্যার দায়ে দায়ী করে। কৃষ্ণকে তীব্র ভাষায় তিরস্কার করতে থাকে। কৃষ্ণও এবার বিলাপ শুরু করেন। অবশেষে কৃষ্ণ বিশেষভাবে রাধার অঙ্গসেবা করে, তালপাতার বাতাস করে, যমুনার জল পান করিয়ে রাধার চেতনা ফিরিয়ে আনেন।
জ্ঞান কিরে পেয়ে প্রেমাচ্ছন্ন রাধিকা কৃষ্ণকে অনুসরণ করে বৃন্দাবনের পুষ্পবনে প্রবেশ করেন। সেখানে তাঁদের মিলন হয়। পরে বড়াই কৃষ্ণের কাছ থেকে রাধাকে নিয়ে ঘরের পথ ধরে। এই খণ্ডের আখ্যানভাগ এই পর্যন্তই।
রাধা-কৃষ্ণের মিলনের মধ্যে দিয়ে ‘বাণখণ্ড’ শেষ হয়। এই খণ্ডে মোট ২৭টি শ্লোক, রাগরাগিণীর নাম পাই ১৪টি। এর পরবর্তী খণ্ডের নাম ‘বংশীখণ্ড’।