কল্পশেষে জগৎ যখন একার্ণব কারণ সমুদ্রে পরিণত হল, তখন জগৎপ্রভু ভগবান বিষ্ণু অনন্ত শয্যা বিস্তার করে যোগনিদ্রায় মগ্ন হলেন। সে সময় ভগবান বিষ্ণুর কর্ণ-মল (কানের নোংরা) থেকে মধু আর কৈটভ নামে দুই অসুর উৎপন্ন হল। তারা সামনে বিষ্ণুর নাভিকমলে অবস্থিত ব্রহ্মাকে বধ করতে উদ্যত হল। বিষ্ণুকে যোগনিদ্রায় মগ্ন দেখে ব্রহ্মা বিপন্ন বোধ করলেন। উদ্যত দুই অসুরকে রোধ করার জন্য বিষ্ণুর জাগরণের জন্য ভগবান শ্রীহরির নয়নাশ্রিতা বিশ্বের স্থিতি-সংহারকারিণী বিষ্ণুর যোগনিদ্রার স্তব করতে লাগলেন। ব্রহ্মার স্তবে তুষ্টা দেবী মধু-কৈটভকে বধ করার জন্য বিষ্ণুকে জাগরিত করলেন। জাগরিত বিষ্ণু মারণোদ্যত দুই অসুরকে দেকে সেই মধু এবং কৈটভের সঙ্গে যুদ্ধ করা আরম্ভ করলেন। বহু বছর ধরে এই যুদ্ধ চলল। অত্যন্ত বলোন্মত্ত অবস্থায় এবার মধু এবং কৈটভকে বিমোহিত করলেন যোগমায়া। অসুররা এবার বিষ্ণুকেই বলল—তুমি আমাদের কাছে বর প্রার্থনা করো। বিষ্ণু বললেন—তোমরা যদি এতই তুষ্ট হয়ে থাকো আমার ওপর, তাহলে আজকেই যাতে তোমাদের আমি বধ করতে পারি, তোমরা সেই বর দাও। এ কথায় মধু এবং কৈটভ খানিক বিভ্রান্ত হল, কিন্তু বিচলিত হল না। তারা পৃথিবীকে একার্ণব জলময় অবস্থায় দেখে বিষ্ণুকে বলল—তোমার সঙ্গে যুদ্ধ করে আমরা বেশ খুশীই হয়েছি। তোমার হাতে আমাদের মৃত্যু ভালই হবে। কিন্তু একটাই শর্ত আছে। যেখানে পৃথিবী জল দ্বারা প্লাবিত হয়নি, সেইখানে আমাদের নিয়ে গিয়ে বধ করো। শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্মধারী বিষ্ণু দুই অসুরকে বললেন—তবে তাই হোক। এই কথা বলেই তিনি দুই অসুরকে নিজের জঘনদেশে স্থাপন করে চক্র দিয়ে তাদের মস্তক ছেদন করলেন। জয়দেব-কৃত স্তোত্রের মধ্যে ‘মধু-মুর-নরক-বিনাশন এই সম্বোধনের অন্তর্গত ‘মধু’ নামক অসুর-দৈত্যের বিনাশ এইভাবেই হয়েছিল। তবে এখানে বিষ্ণু-কর্তৃক এই মধু দৈত্য বধের কীর্তি বিষ্ণুর পূর্ণ অবতার ভগবান শ্রীহরির ওপরে অর্থাৎ কৃষ্ণের ওপর আরোপিত এবং এইভাবেই কৃষ্ণের মধুসূদন নাম সার্থক হয়ে ওঠে।