বিদ্যাপতির শিব-গীতগুলিও কম জনপ্রিয় নয়, বিশেষত যেগুলিতে শিবের সঙ্গে নগাধিরাজ হিমালয়দুহিতা পার্বতীর বিবাহবর্ণনা আছে; এগুলি মিথিলার মহিলারা বিবাহগীতি হিসেবে গেয়ে থাকেন ৷ বিদ্যাপতি শিব ভক্তিসূচক কিছু পদ একটি বিশেষ সুরে রচনা করেন যা ভক্তরা নৃত্যসহযোগে ও ডমরু বাজিয়ে গেয়ে থাকেন এবং এই গীতগুলি নাচারি হিসেবে পরিচিত ৷ নাচারির বিশেষত্ব তার বিষয়বস্তুতে নয়, সুরে ৷ বিশেষ তার সুরটি, যে কোনো শিবমন্দিরে দেখা যায় কোনো ভক্ত উদ্বেল হয়ে নাচারি গাইতে গাইতে নৃত্য করছেন ৷ মৈথিলীরা বেশীর ভাগই শৈব; যাঁরা শক্তির উপাসনা করেন, তাঁরাও শিবকে সমভাবে প্রাধান্য দেন ৷ বিদ্যাপতির শিবগীতিগুলিই তাঁকে শৈব হিসেবে পরিচিত করেছে এবং বহু অলৌকিক ঘটনাও প্রচারিত হয়েছে যেমন শিব তাঁর উপাসনায় সন্তুষ্ট হেয় উগনা নামক ভৃত্যের ছদ্মবেশে তাঁর সেবা করতে আবির্ভূত হয়েছিলেন ৷
বিষয়বস্তুর দিক থেকে বিদ্যাপতির শিবগীতগুলি তিন প্রকার ৷ শিবের স্তুতি করে লিখিত গানগুলি অনুভূতিতে এত অকপট, ভঙ্গিতে এত অনুতপ্ত, প্রকাশে এত সমর্পণাত্মক,অভিব্যক্তিতে এত সরল, রচনাশৈলীতে এত মধুর ও সুরের মায়াজালে এতই মোহময় যে এগুলি সর্বত্র জনপ্রিয়; বিশেষ কারণ আরও যে বর্ণ ও স্ত্রীপুরুষ নির্বিশেষে সব হিন্দুরই শিব প্রধান বা অন্যতম আরাধ্য দেবতা, ”হে ভোলানাথ, কবে তুমি আমার দুঃখ দূর করবে?”কিংবা ”আমি কি করে এই জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছব? জীবনরূপী সাগরের কোনো অন্তই যে নজরে পড়ে না ৷ হে ভৈরব, তুমি আমার জীবনতরীর হাল ধর ৷” এগুলি হল কিছু কিছু জনপ্রিয় পদাবলীর নমুনা, যা সকলের হৃদয়কে দ্রবীভূত করে যখন তারা একান্তে বসে নিজেদের অসহায়তাকে পলে পলে অনুভব করে ৷ কিছু কিছু গানে বিদ্যাপতি শিবের জীবন,দর্শন ও কার্যের অসমতা নিয়ে হাস্যকর পরিস্থিতির উদ্রেক করেছেন ৷ তিনি বলেছেন শিব মদনদেবকে ভস্ম করে দিয়েছিলেন কিন্তু অর্ধনারীশ্বর রূপে স্ত্রী গৌরীকে নিজের শরীরের সঙ্গে সংযুক্ত করে নিয়েছিলেন ৷ এই বিষয়ের ইঙ্গিত করে পার্বতীর এক সখী শিবের উদ্দেশে প্রশ্ন করে”, ”হে পরোপকারী শম্ভু, হে শিবশম্ভু, হে কামদেবের ভস্মকারী, আপনি পঞ্চশরাধিপতিকে ভস্ম করে দিয়েছেন, কিন্তু এ কি করে সম্ভব হল যে আপনার শরীরের এক দিকে পুরুষের মতো শ্মশ্রু আর অন্যদিকে স্ত্রীলোকের স্তনশোভা– কি সুন্দর মিল ! সত্যিই, গৌরীর সৌন্দর্যধারণ করবার বিচিত্র অভিলাষে আপনি তাঁকে নিজের দেহের সঙ্গে সংযুক্ত করেছেন, কিন্তু তাতে যে বৈসাদৃশ্য প্রকট হচ্ছে তা আপনার মনে বিন্দুমাত্র ভাববৈলক্ষণ্য সৃষ্টি করেনি ৷”
আর এক রকম গান হচ্ছে শিবের সঙ্গে পার্বতীর পরিণয়ের বিভিন্ন অধ্যায়-শিবের পাঁচটি মাথা, তিনটি চোখ, তার মধ্যে তৃতীয়টি বহ্নিমান, তাঁর জটায় গঙ্গা প্রবহমানা, তিনি চন্দ্রমৌলি, শ্মশানভস্ম সারা শরীরে মেখে কেবল হস্তিচর্ম পরিধান করে ষণ্ডপৃষ্ঠে আসীন, গলা, হাত ও দেহ বেষ্টন করে আছে সাপ, বিষপান করে তিনি নীলকণ্ঠ, ভূতপ্রেতের দল, পিশাচ তাঁর সঙ্গী ৷ সুতরাং তিনি কি করে সুন্দরী সুশীলা হিমালয়-দুহিতার যোগ্য স্বামী হতে পারেন ? কুমারসম্ভব কাব্যে কালিদাস বর্ণনা করেছেন কি করে মহাদেব ব্রাহ্মণ ছাত্রের ছদ্মবেশে পার্বতীর তপোভঙ্গ করতে যান ৷ পার্বতী তখন শিবকে পতিরূপে লাভ করবার কঠোর তপস্যায় রত ৷ ছদ্মবেশী মহাদেব পার্বতীকে পরীক্ষা করবার অভিপ্রায়ে তাঁকে বোঝাতে যান যে শিব ও পার্বতীর মিলন অসম ৷ ছদ্মবেশী শিব পার্বতীকে বলেন, শিব বৃদ্ধ, কুদর্শন, উন্মাদ, শ্মশানবাসী সাধু এবং সেই কারণেই তরুণী পার্বতীর উপযুক্ত স্বামী হতে পারেন না ৷ বিদ্যাপতি কালিদাসের কাব্যবর্ণনা অনুসরণ করেছিলেন এবং কালিদাস যা সাতটি কবিতার মধ্যে দিয়ে বলেছেন, বিদ্যাপতি সেই একই কথা বহু গীতের মধ্যে দিয়ে আক্ষেপের বিভিন্ন রূপ ও বিভিন্ন ব্যক্তি উক্তি হিসেবে বর্ণনা করেছেন, কখনও পার্বতীর মায়ের মুখ দিয়ে, কখনও সখীদের বক্তব্যে, কখনও সখীদের পরিবারের অন্যান্য রমণীদের মুখ দিয়ে, কিন্তু সর্বদাই শিবের ব্যক্তিত্ব, বয়স, রূপ, গুণ ও সহচরের নিন্দাই করেছেন ৷ পার্বতীর মা বলেন ”যে জন্মের পর থেকেই ঘরে ঘরে ভিক্ষা চেয়ে এসেছে, সে বিবাহের বিষয়ে চিন্তা করে কি করে আর তাও গৌরীর সঙ্গে — এ তো অসহনীয়” অথবা ”ওকে শঙ্কর (মঙ্গলময়) নাম কে দিয়েছে, যার পাঁচটি মাথা, যে পুর-দৈত্যর বিনাশকারী, যে প্রোজ্জ্বল তৃতীয় নয়নটির কারণে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে এবং যার বংশ পরিচয় নেই”৷ প্রতিবেশিনী বলেন — ”হে সখি, হিমভাত কি এক উন্মাদ বৃদ্ধকে ঘরে নিয়ে এল, ভেবেই আমি মূর্চ্ছা যাচ্ছি ৷ এই উন্মাদ বৃদ্ধ ঘোড়ায় চড়তে পারে না, ঘোড়া যতই সুসজ্জিত হোক না কেন ইত্যাদি” ৷ আমরা বুঝতে পারি এই কবিতার ছত্রে ছত্রে কতখানি ইঙ্গিত লুকিয়ে আছে, যখন ভাবি যে মিথিলায় আজও কেনো তৃতীয় ব্যক্তির মধ্যস্থতায় কন্যার অভিভাবক জামাতা নির্বাচন বের হন এবং বিবাহের জন্য তাকে ঘরে নিয়ে আসেন৷ আর এই সব গানে, যিনি তৃতীয় ব্যক্তি ও বিবাহে মধ্যস্থতা করেন তিনি নারদ মুনি এবং এই অসম বিবাহের জন্য রমণীকুলের আক্রমণ ও বক্রোক্তির লক্ষ্য৷ এই হল সামাজিক পটভূমিকা, যা মিথিলার নারী সমাজের কাছে এই গানের চিরস্থায়ী প্রভাবের জন্য দায়ী৷
আর যখন শিব বিবাহের জন্য উপস্থিত হন তখন তাঁর ব্যক্তিত্ব, বেশভূষা ও সঙ্গীসাথীরা যথেষ্ট বিভ্রান্তি ও কৌতুকের উদ্রেক করে৷ শাস্ত্রসম্মত বৈদিক বিধি-বিধান ছাড়াও কিছু স্ত্রী আচার থাকে যার অনেকগুলিই বিদ্যাপতির গীতিমালা নির্ধারণ করে দিয়েছে এবং এই গানগুলি কয়েক শতক ধরে মিথিলায় প্রচলিত৷ মহিলারা শিবকে বরণ করতে গিয়ে লজ্জারুণ অবস্থায় ফিরে আসেন কারণ শিব সম্পূর্ণ নগ্ন, তাঁর পরনে কেবলমাত্র হস্তিচর্ম৷ মহিলারা চাইছেন শিবের কণ্ঠ বস্ত্রাচ্ছাদিত করতে কিন্তু তাঁদের ফিরে আসতে হচ্ছে সাপের ভয়ে, তাঁরা শিবের চোখে পরাতে চেয়েছেন কাজল, কিন্তু তাঁদের হাত পুড়ে গেছে তৃতীয় নয়নের বহ্নিশিখায়৷ একজন মহিলা, যিনি স্ত্রী আচার করতে এগিয়ে ছিলেন, বলেন ”কি বরই জোগাড় করে এনেছেন ঘটক ঠাকুর, যাকে দেখে গৌরী এতই মোহিত হয়ে গেছে৷! চোখে জ্বলছে আগুন, কাজল পরাবো কোথায়? মাথার জটায় বয়ে যাচ্ছে গঙ্গা, কি করে আমরা চুমাওঁ করব? বিয়ের আসরে এসেছে সব ভূত প্রেতের দল, কি খাওয়াবো তাদের? বরের পাঁচটি মাথা, কোন মুখটিতে আমরা মহুয়ক দেব? ইত্যাদি৷ এগুলি সবই লৌকিক আচার কিন্তু বৈদিক শাস্ত্রাচারের সময়েও নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়৷ একজন দর্শক বলেন ”শিব যখন বেদীর ওপর উঠে আসেন, সে এক বিচিত্র দৃশ্য৷ যখন শিবের জটায় অঙ্কুশী দেওয়া হয়,গঙ্গা নীচে প্রবাহিত হতে শুরু করে এবং যাবতীয় হোমের উপকরণ ভেসে যেতে থাকে৷ শিবের ষণ্ডটি
কুশঘাস চর্বণ করতে থাকে৷ সাপেরা চালের দানা দেখে আকৃষ্ট হয়ে ভয়ংকর ভাবে হিস হিস শব্দ করতে থাকে, যা শুনে ষণ্ডটি ভয় পেয়ে যায়,ইত্যাদি৷”
এই জনপ্রিয় গানগুলির অন্তর্নিহিত অর্থ আমরা তখনই ঠিকমতো বুঝতে ও প্রশংসা করতে পারি যখন এগুলির সামাজিক পটভূমিকা সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান থাকে৷ সেই কারণেই মৈথিলি সমাজের বাইরে এগুলির তেমন কদর হয়নি৷ তবে এগুলি যথেষ্ট চিত্তরঞ্জক, লঘুকল্পনাশ্রয়ী এবং কৌতুককর পরিস্থিতির বর্ণনা করে৷
পরিশেষে আর এক রকমের শিবগীতি আছে যা শিবের পারিবারিক জীবন চিত্রিত করে বিশেষ করে শিবের সংসারে পার্বতীর অবস্থিতি৷ সাংসারিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিচার করলে পতিগৃহে পার্বতীর সংকট আর যাই হোক, ঈর্ষার উদ্রেক করে না৷ পরিবারের প্রধান ব্যক্তিটি বয়োবৃদ্ধ, নিঃস্ব ও বিষপায়ী, তিনি নিজে পঞ্চমুখ আর তাঁর দুই পুত্রের একটির ছয়টি মুখ ও অন্যটির মাথার জায়গায় হাতীর মাথা লাগানো৷ পার্বতীর বাহন সিংহ, শিবের ষণ্ড ও সাপ, কার্তিকের ময়ূর ও গণেশের মূষিক এবং এই বাহনগুলি একে অপরের শত্রু৷ গৃহশান্তি বজায় রাখা ও সব সদস্যদের খাবারের ব্যবস্থা করা এক সমস্যা৷ পার্বতী বলেন, ”হে মা, আমি কি করে এখন এখানে থাকব যেখানে এক বস্তা ছাই ছাড়া আর কিছুই নেই৷ কোনো সম্পত্তি নেই, এমন কি পরনের এক টুকরো কাপড়ও নেই, ধার দেবার লোক নেই, আমার ছেলেরা খিদেয় কাতর, তাদেরই বা আমি কি খেতে দেব? সাপেরা বায়ুভূক, তাদের প্রভু বিষপান করে নীলকণ্ঠ ৷ গৃহস্বামী ও তাঁর অনুচরেরা উদাসীন, কিন্তু আমি কি করে? ইত্যাদি৷” শিবের প্রতি পার্বতীর উক্তি–”স্বামী, আমি আপনাকে বারবার পরামর্শ দিয়েছি চাষবাস করুন৷ খাদ্যশস্য না থাকলে ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়া আপনার অন্য উপায় নেই, যা কি না অতি নীচ কাজ, ইত্যাদি৷” একাধিক গানে বিদ্যাপতি দারিদ্র্যও অসহায়তার এক বাস্তব চিত্র রূপায়িত করেছেন যা যে কোনো সাধারণ পরিবারের ঘটনা এবং তাঁর যাবতীয় বক্তব্য সরল সহজবোধ্য ভাষায় বর্ণিত এবং সেই কারণেই নারীসমাজের কাছে বিশেষ আবেদনসৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে৷ পার্বতীর ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা এই ভাবে নারীজাতির হৃদয়কে দ্রবীভূত করেছে৷ এই অতি স্বাভাবিক কারণেই মিথিলার অন্তঃপুরে পার্বতীই উদাহরণস্বরূপ এবং সকলেই তাঁর সফল গার্হস্থ্য জীবনকে সমর্থন করে৷
এই বিষয়টি বিশেষ উল্লেখের দারী রাখে যে এই সব শিবগীতি, তা ব্যঙ্গাত্মকই হোক বা বিষয়বস্তুর দিক থেকে বেমানানই হোক, মহাদেবের বিশেষ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলিকে সফলভাবে উপস্থাপিত করেছে এবং ভক্তের মনেকে উদ্বেল করে তুলতে সক্ষম হয়েছে৷ বহিরঙ্গ রূপটি যাই হোক না কেন, মূলত এগুলি ভক্তিমূলক৷ অনেক গান ভীতির উদ্রেক করে,কিছু হাস্যকর, কিছু বা শৃঙ্গাররসপূর্ণ কিন্তু সবগুলিতেই এক ভক্তিরসাপ্লুত বিস্ময়াবেশ বর্তমান যা ভক্তের মনকে আকুল করে তোলে এবং যে কোনো শিবমন্দিরের অতি পরিচিত দৃশ্য হল এই গানের সঙ্গে সঙ্গে ভক্তের ভাবাবেশপূর্ণ নৃত্য৷
এই শিবগীতিগুলি মৈথলী সাহিত্যের বিশেষ অঙ্গ যা অন্য কোনো দেশের সাহিত্যে এমনকি প্রাদেশিক সাহিত্যেও পাওয়া যায় না৷ এগুলি ভারতীয় সাহিত্যে বিদ্যাপতির নিজস্ব সংযোজন এবং দীর্ঘকাল ধরে নাচারি পদাবলী ও বিদ্যাপতির নাম অঙ্গাঙ্গীভূত৷ এর অন্যতম প্রমাণ পঞ্চদশ শতাব্দীতে লখনসেনী ও ষোড়শ শতাব্দীতে আবুল ফজলের মন্তব্য৷ মিথিলায় বিদ্যাপতির পদাবলী সর্বাধিক জনপ্রিয় ভক্তিগীতিকাব্য এবং গত পাঁচ শতক কি তারও বেশী সময় ধরে মিথিলায় শতাধিক কবি সহস্রাধিক পদ বিদ্যাপতির অনুকরণে রচনা করে গেছেন৷ নেপালে এই নাচারির ভঙ্গিতে ভক্তিগীত রচনা অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং বিষ্ণু, গণেশ, সূর্য ও দুর্গার উদ্দেশে রচিত নাচারি সেখানকার সংগ্রহশাায় সংরক্ষিত আছে৷
এটি খুবই দুঃখের বিষয় যে আধুনিক যুগে সাহিত্যে বিদ্যাপতির অবদান বিষয়ে খুবই কম মনোযোগ দেওয়া হয়, যেন এই সব পদাবলী সাহিত্যমানে নিকৃষ্ট এবং বিদ্যাপতির সৃজনশীলতা প্রশংসার্হ নয়৷ এক শতাব্দীরও আগে বিদ্যাপতির প্রতি নবযুগের বিদ্বানদের মনোযোগ আকৃষ্ট হয় এবং বীম্‌স ও গ্রীয়ারসন প্রভৃতি ইংরেজ বিদগ্ধজন ও পরবর্তীকালে সারদাচরণ মিত্র ও নগেন্দ্রনাথ গুপ্তের মতো বাঙালী মনীষী সমীক্ষকের দৃষ্টিতে বিদ্যাপতির কাব্যপ্রতিভার বিচার করেন৷ এঁরা বিদ্যাপতির যা যা রচনা বাংলার বৈষ্ণব সাহিত্যে সুলভ, কেবলমাত্র তারই সাহায্যে বিদ্যাপতির মূল্যায়ন করেন এবং তাঁদের সমীক্ষার রসদ জোগায় মূলত বিদ্যাপতির কৃষ্ণবিষয়ক শৃঙ্গার রসাশ্রয়ী পদগুলি৷ এ ভাবেই বিদ্যাপতির কাব্যশৈলীর সমালোচনার ভিত্তি স্থাপিত হয় এবং দুর্ভাগ্যবশত মিথিলার পণ্ডিতসমাজও বিদ্যাপতির বাঙালী স্তুতিকারদের অনুসরণ করেন৷ অল্প কিছুদিন আগে আমি সানন্দে ডঃ শঙ্করী প্রসাদ বসুর সমালোচনা গ্রন্থটি পাঠ করি যাতে বিদ্যাপতির শিবভক্তিমূলক পদ ও শৃঙ্গার রসধর্মী কৃষ্ণসংক্রান্ত পদাবলী একই রকম প্রাধান্য পেয়েছে এবং আমরা আশা করতে পারি যে বিদ্যাপতির সেই সব শিবভক্তি পদাবলী সংকলিত করবার সযত্ন প্রয়াস করা হবে যা এখনও দুষ্প্রাপ্য বা লুপ্তপ্রায় এবং প্রকৃত মৈথিলী দৃষ্টিকোণ থেকে এই সব গীতি-সংকলনের সমীক্ষামূলক অধ্যয়ন করার প্রচেষ্টা হবে, তবেই আমরা বিদ্যাপতির রচনার সম্যক উপলব্ধি ও মূল্যায়ন করতে সমর্থ হব৷