অজ্ঞানতিমিরান্ধস্য জ্ঞানাঞ্জনশলাকয়া।
চক্ষুরুন্মীলিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ।।
শ্রীচৈতন্যমনোহভীষ্টং স্থাপিতং যেন ভূতলে।
স্বয়ং রূপ কদা মহ্যং দদাতি স্বপদান্তিকং ।।
দান্তো রমাদি শব্দশ্চ যস্যাভা কথ্যতে বুধে।
সা দেবি কৃপয়া মহ্যং দদাতি স্বপদান্তিকং ।।

শ্রীগুরুচরণপদ্ম বন্দো সাবধানে।
প্রেমভক্তি রত্ন ধন পাইবে যার স্থানে।।
সংসার তরণ হেতু যে পদ আশ্রয়।
কৃষ্ণপদ প্রাপ্তি অজ্ঞান পরাজয়।।
এ হেন গুরুর বাক্য হৃদএ করিয়া।
বিশ্বাস করিয়া যাই এ ভব তরিয়া।।
বুঝিয়া করিব গুরু পরম সাদরে।
না পূজিব না নিন্দিব সকল দেবেরে।।
গুরুতে করিয়া ভক্তি আনন্দিত মনে।
যাহা বই গতি নাই জীবনে মরণে।।
(চক্ষুদান দিল যেই জন্মে জন্মে প্রভু সেই
দিব্য জ্ঞান হৃদি প্রকাশিত।)
ইহলোকে পরলোকে কিবা দুঃখে কিবা সুখে
সো চরণে রহু মোর চিত।।
(শ্রীগুরুকরুণাসিন্ধু অধম জনার বন্ধু
লোকনাথ লোকের জীবন।
হাহা প্রভু কর দয়া দেহ মোরে পদ ছায়া
যশ শুনি ঘুষু ত্রিভুবন।)
ভক্ত পাদপদ্মরেণু ভূষণ হউক তন
যাহাতে অভীষ্ট পূর্ণ হয়।
স্বজাতীয় ভক্ত সঙ্গ প্রেমসুখ লীলা রঙ্গ
ক্লেশাদি অবিদ্যা পরাজয়।।
(জয় সনাতন রূপ প্রেমভক্তি-রস-কূপ
যুগল উজ্জ্বল তনু।)
চতুর্দশ লোক মাঝে তোমার মহিমা রাজে
প্রকট কলপতরু জনু।।
গণ সহে কর দয়া দেহ মোরে পদ ছায়া
তুমি নাথ করুণার নিধি।
তোমার চরণ বলে এ ভব তরিয়ে হেলে
মনের বাসনা হয় সিদ্ধি।।
ব্রজবাসী যত জন বন্দো সবার চরণ
গৌর প্রেম পরিবার যত।
দশনে ধরিয়া তৃণ করো এই নিবেদন
দয়া কর মোরে অভিমত।।
অধম পতিত কত নিস্তারিলে শত শত
পতিত পাবন জয় বানা।
কহে নরোত্তম দাস পূরাহ মনের আশ
তনু মন নিছনি আপনা।।

শ্রীভাগবত অভিমত শুন সর্ব্বজন।
কায়মন বাক্য করি কৃষ্ণের ভজন।।
ভক্তি অঙ্গ বহু মত অশেষ প্রকার।
সংক্ষেপে করিএ কিছু তাহার বিচার।।
কৃষ্ণ কথা শ্রবণ কীর্ত্তন লীলাগুণ।
পূজন করিব তাথে করিব সেবন।।
পূজন করিব সদা সিদ্ধ দেহ পাইয়া।
প্রার্থনা করিব পদে প্রণতি হইয়া।।
মানসে করিব চিন্তা সিদ্ধ নিরবধি ।
আত্ম নিবেদন করি সাধিব ভকতি।।
সাধুসঙ্গ সর্ব্বদায় মথুরায় স্থিতি।।
ভাগবত শ্রবণ জিজ্ঞাসা নিতি নিতি।।
প্রকট বিগ্রহ সেবা নাম সংকীর্ত্তন।
হৃদএ লালসা এই হব অনুক্ষণ।।
বৈরাগ্য করিব মনে সংসার হইতে।
তৃণ হইতে নীচ মানিব আপনাতে ।।
তরু হইতে সহিষ্ণুতা অমানী হইব।
জীব মাত্রে আদর সম্মান সদা দিব।।
ব্রহ্মা আদি দেবগণ নিন্দা না করিব ।
কোন দেব ভজন পূজন না করিব ।।
কায় মন বাক্যে কৃষ্ণচন্দ্র আরাধন।
তার স্থান তার দাস তার নাম গুণ।।
ঈশ্বরের অনন্ত অবতার লীলাস্থান।
জীব কীট জানে কিবা তাহার আখ্যান।।
সাধ মুখে শুনি করি সভার বন্দন।
ব্রজেন্দ্রনন্দন মাত্র করি আরাধন।।
সখির অনুগা এই যুগল সেবন।
… … …
সেই পহু কলিকালে গৌড়ে অবতরি।
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য নাম কীর্তন বিহারী।।

প্রেমের নাগর সদা প্রেম আস্বাদিল।
অনুযঙ্গে ত্রিজগতের লোক নিস্তারিল।।
তাহার ভজন করে সেই ভাগ্যবান।
শুনিতে গৌরাঙ্গ লীলা বিদরে পরাণ।।
প্রেম কল্পতরু সম তাহার পরিবার।
না যাচিতে দেয় প্রেম বড় চমৎকার।।
অদ্বৈত অবধৌত আদি গৌর পরিবার।
ভূমিতে পড়িয়া বন্দো চরণ সভার ।।
যোগী কর্মী জ্ঞানী সন্ন্যাসী বিরোধী।
অন্য দেব পূজক ধ্যান বিড়ম্বিল বিধি।।
কামক্রোধ লোভ মোহ হৈয়া সাবধান।
সরল হৃদয় করি সাধি নিজ কাম।।
ধর্মাধর্ম না কহিব বেদের বিধান।
অনন্য ভকতি করি ভজি ভগবান।।
অসৎ বার্তা অসৎ সঙ্গ দূরে পরিহরি।
সাধুসঙ্গে সদা ফিরি ভজি গিরিধারী।।
কপট কুটিনাটি ছাড়ি জীব হিংসন।
ব্রজে রাধাকৃষ্ণ পদ করি আরাধন।।
হরিনাম গ্রহণ সদাই যেবা করে।
তারে কামক্রোধ আদি কি করিতে পারে।।
সিংহ রবে মৃগী যেন করে পলায়ন।
গরুড় স্মরণে যেন ভাগে ফণীগণ।।
সকল বিপত্তি যায় শ্রীকৃষ্ণ স্মরণে।
প্রেম করি ভজ তাই তাহার চরণে।।
কৃষ্ণ কথা শ্রবণ কীর্তন কৃষ্ণ নাম।
অবশ্য করিবে দয়া করুণানিধান।।
নরোত্তম দাস বলে হইয়া কাতর।
কৃপা কর একবার প্রভু গিরিধর।।

(যাবত জনম মোর অপরাধে হৈলুঁ ভোর
নিকপটে না ভজিল তোমা।
তথাপি তোমায় গতি না ছড়িহ প্রাণপতি
মোর সম নাহিক অধমা।।
পতিত পাবন নাম ঘোষণা তোমার শ্যাম
উপেখিলে নাহি মোর গতি।
যদি হঙ অপরাধী তথাপি তোমায় গতি
সত্য সত্য যেন সতি পতি ।।
তুমি ত পরম দেবা নিজ প্রিয় সেবা দিবা
শুন শুন প্রাণের ঈশ্বর।
যদি করোঁ অপরাধ তথাপিহ তুমি নাথ
কৃপা করি কর অনুচর ।।
কামে মোর হতচিত নাহি গুণে নিজ হিত
মনের না ঘুচে দুর্বাসনা।।
মোরে নাথ অঙ্গীকরু বাঞ্ছাকল্পতরু
করুণা দেখুক সর্বজনা।।
মুঞি সম অধম নাহি ত্রিভুবনে দেখ চাহি
নরোত্তমপাবন নাম ধর।
নরোত্তম বড় দুঃখী নাথ মোরে কর সুখী)
এইবার কর দয়া প্রিয় গিরিধর।।

মোর মনে এই হয় তোমার পদ আশ্রয়
তোমার ভজন সংকীর্ত্তনে।
অন্তরায় যেন নয় এইত পরম ভয়
নিবেদন করোঁ অনুক্ষণে।।
(আন কথা আন ব্যথা নহে মোর যাঙ তথা
তোমার চরণ স্মৃতি লাজে।
অবিরত অবিকল তুয়া গুণে কলকল
গাঙ যেন সতে সমাজে।।
অন্য ব্রত অন্য দান নাহি করোঁ বস্তু জ্ঞান
অন্য সেবা অন্য দেব পূজা।
হাহা হরি বোলি বোলি বেড়াঙ আনন্দ করি
মনে যেন নহে আর দুজা।।
মরণে জীবনে গতি রাধাকৃষ্ণ প্রাণপতি
রহুমন দুহু লীলা সুখে।)
দোঁহ প্রেম সুধানিধি বাঞ্ছা মোর কর সিদ্ধি
দোঁহ রূপ রহু মোর বুকে।।
(যুগল চরণ সেবা যুগল চরণ ধ্যেবা
যুগল সঙ্গতি হই সদা।)
যুগল পিরিতি রসে মন যেই অভিলাষে
যুগল সঙ্গতি বিনু বাধা।।
দশনেতে তৃণ ধরি বৃষভানু কুমারী
চরণে করিএ নিবেদন।
রূপ কোটি রমা জিনি গুণ লীলা রস খনি
ব্রজপতি পরাণের পরাণ।।
গোরোচনা অঙ্গ কাঁতি কনক কেতকি ভাতি
তাহে শোভে নীল নিচোল।
(অভরণ মণিময় অঙ্গে অঙ্গে অভিনয়)
অমিয়া বরিখে মিঠ বোল।।
কির্ত্তিকা যাহার মাতা বৃষভানু যার পিতা
শ্রীদাম হয়েন জ্যেষ্ঠ ভাই।
শাশুড়ী জটিলা খ্যাতি ননদী কুটিল অতি
অভিমন্যু পতি সভে গাই।।
ললিতা বিশাখা বরা চিত্রা চম্পকলতা
রঙ্গদেবী সুদেবিকা আর।
তুঙ্গবিদ্যা ইন্দুলেখা এই অষ্ট সখী লেখা
আর আছে কতেক প্রকার।।
জাবট শ্বশুর গ্রাম বৃন্দাবন লীলাধাম
গোবিন্দ প্রেয়সী শিরোমণি।
যে মতে তাহাকে পায় কহি তার উপায়
সাধুসঙ্গ হৈতে সব জানি।।
ব্রজে নিত্য দেহ পাইয়া সখীর সঙ্গিনী হইয়া
বস্ত্র অলঙ্কার বিভূষিত।
ডগমগি হব সদা নিরবধি প্রেমকথা
ব্রজজন ভাব যুত চিত।।
মানসে সাধিয়া যাহা সিদ্ধ হইলে পাই তাহা
অপরূপ প্রেম ভজন।
নিশি দিশি রসময় যখন যে লীলা হয়
মনে মনে করিব চিন্তন।।
পরম যে গুহ্য কথা না কহিব যথা তথা
স্বজাতীয় সঙ্গ হৈতে জানি।
ব্রজের নির্ম্মল প্রেম শতবাণ যেন হেম
যাহা বাঞ্ছে লক্ষ্মী ঠাকুরাণী।।
উদ্ধব নারদ শুক শিব আদি চতুর্ম্মুখ
যে প্রেম চিন্তয়ে অনুক্ষণ।
শ্রুতিকন্যা মুনিকন্যা ব্রজ প্রেমে হৈলা ধন্যা
লোকাতীত ব্রজের ভজন।।
পরম সুন্দর শ্যাম বৃন্দাবন যার ধাম
ভূমি চিন্তামণি রসময়।
বংশী গান যাহা দুতি গমন নিত্যর ভাঁতি
কল্পবৃক্ষ সব বনময়।।
ছয় ঋতু মূর্ত্তিমান সেবে যাহা অবিশ্রাম
ব্রজপুর আনন্দ পূরিত।
শুক সারি করু গান কোকিল পঞ্চম তান
ভ্রমর ঝঙ্কারে হরে চিত।।
পুচ্ছের মণ্ডন করি শিখি নাচে ফিরি ফিরি
যূথে যূথে হরিণের মেলা।
তরু সব বেদী বান্ধা কত ভাঁতি মণি গাঁথা
মধ্যে মধ্যে ক্রীড়া রত্নশালা।।
কদম্বের সারি সারি চৌদিগে মণ্ডন করি
কত শত পুষ্প বিকশিত।
মেওআ ফল কত কত তরুলতা অদভুত
স্বর্ণলতা তমালে বেষ্টিত ।।
গোবর্ধন গিরিরাজ বৃন্দাবনে সুবিরাজ
কুণ্ড যুগল তহি শোভা।
অষ্ট সখীর অষ্ট কুঞ্জ রসময় প্রেম পুঞ্জ
যোগীন্দ্র মুনীন্দ্র মনলোভা।।
সেবা করে বনচারি শত শত সুকুমারী
বৃন্দার আজ্ঞাতে নিরবধি।
যেখানে যে লীলা করে রাধাকৃষ্ণ নিরন্তরে
বৃন্দাদেবী করে সব সিদ্ধি।।
ব্রহ্মা শিব রমা আদি অগোচর প্রেম নিধি
যাহা হিল্লোলয়ে নিরন্তর।
সিদ্ধ পীঠ তার মাঝে রতন বেদী তাথে সাজে
বরাসন তাহার উপর।।
তদুপরি শ্রীগোবিন্দ ত্রিভঙ্গ আনন্দ কন্দ
ময়ূর পুচ্ছের চূড়া মনোহর।
কলাপী কুসুম কাঁতি জিনিয়া অঙ্গের যুতি
মুখ শোভা কোটি শশধর।।
কপালে চন্দন চান্দ মূরতি মরম ফান্দ
মদন ধনুক ভুরু শোভা।
আরক্ত সুন্দর আঁখি যেন মত্ত অলি দেখি
ঈষৎ চাহনি মনলোভা।।
গণ্ড মুকুর কোলে মকর কুণ্ডল দোলে
অধর বাঁধুলি ফুল জিনি।
দ্বিরদ করভ কর জিনি শোভা বাহুবর
অভরণ রতন গাঁথুনি।।
হৃদয় অম্বর মাঝে কৌস্তভ অরুণ সাজে
গুঞ্জহার মুকুতার মালা।
গজ ঐরি কটি খিনি সুপীত বসন বনি
রতন বসনা তহি মেলা।।
মরকত স্তম্ভ জিনি উরুযুগ সুবলনী
অপরূপ চরণারবিন্দ।
চান্দের সাধকগণ নখমণি সুশোভন
রতন মঞ্জীর তহি বন্দ।।
ত্রিভঙ্গ ভঙ্গিমা ঠাম রূপ জিনি কোটি কাম
অধরে মূরলী বিরাজিত।
নবীন যৌবন তায় বেশ নটবর রায়
রূপ হেরি উনমত চিত।।
রাধিকা সুন্দরী বামে অর্বুদ নটিনী ঠামে
নব গোরোচনা কাঁতি অঙ্গ।
কেশ বেশ অহি ফণি তাহি বিরাজিত মণি
ভালে অরুণ বিধু সঙ্গ।।
কনক মধুর জিনি শ্রীমুখ মাধুরী বনি
অপরূপ অধর সুরঙ্গ।
শুক চঞ্চু নাসা হুলে নবীন মুকুতা লোলে
ললিত অলক অলি গুঞ্জ।।
ভুরু জিনি কামধনু নয়ান বিশিখ জনু
চঞ্চল চাহনি পুরে বাণ।
ঈষৎ মধুর হাসি অমিয়া বরিখে রাশি
ব্রজ বধু পরাণের পরাণ।।
(অভরণ মণিময় অঙ্গে অঙ্গে অভিনয়
তনু সোহে নীল নিচোল।
গজ ঐরি কটি খিনি শোভিত কিঙ্কিনী মুনি
চরণে মণি মঞ্জীর উজর।।
দোঁহ প্রেম ডগমগি দুহুঁ অতি সগবগি
দোহা রূপ দোঁহ করু পান।
দুহুঁ কান্ধে দুহুঁ ভুজ দুহুঁ রসে প্রেমপুঞ্জ
নয়ানে অধরে দেই দান।।
দুহুঁ রূপ নিরখই রতি কাম মূরছই
পিরিতি মূরতি পরতেক।
সখিগণ চারি পাশে সেবা করে অভিলাষে
লোচনে করএ অভিষেক।।
(মনের স্মরণ প্রাণ মধুর মধুর কাম
বিলাস যুগল স্মৃতি সার।
সাধ্য সাধন এই ইহা বই আর নাই
এই তত্ত্বে স্মরণ বিচার।।)
মানসে করিব সেবা মনেতে স্ফুরয়ে যেবা
পাদ্য অর্ঘ্য স্নানাদি সেবন।
গন্ধমাল্য সচন্দন দুহু অঙ্গে বিলেপন
বস্ত্র অলঙ্কার সমর্পণ।।
ললিতা বিশাখা সঙ্গে সেবন করিব রঙ্গে
মনের আরতি নিতি নিতি ।
জীবনে মরণে গতি রাধাকৃষ্ণ প্রাণপতি
নরোত্তম মনের আকূতি।।

(ব্রজপুর বনিতার চরণ আশ্রয় সার
কায় মন একান্ত করিয়া।
অন্য বোল গণ্ডগোল না শুনহ উতুরোল
রাখ মন হৃদএ ভরিয়া।।
অন্যের পরশ যেন নহে কদাচিৎ হেন
ইহাতে হইবে সাবধান।
রাধাকৃষ্ণ নামগান এইত পরম ধ্যান
আর না করিহ পরমান।।
মিছা ভক্তি কর্ম্ম জ্ঞান ইহাতে হইবে সাবধান
শুদ্ধ ভজনে কর মন।
ব্রজজন যেন রীত তাহাতে ডুবাহ চিত
এইত পরম রত্ন ধন।।
প্রার্থনা করিব সদা শুদ্ধভাবে প্রেম কথা
নাম মন্ত্রে করিয়া অভেদ।
আস্তিক করিয়া মন ভজ যুগল চরণ
গ্রন্থি পাপ হরে পরিচ্ছেদ।।

রাধাকৃষ্ণ চরণ কমল বলি জাঙ।
ভক্ত মুখে পুনি পুনি তুয়া নাম শুনি শুনি
পরম আনন্দ সুখ পাঙ ।।
রাধাকৃষ্ণ বল ধ্যান স্বপনে না বোল আন
প্রেম বিনু আন নাহি চাঙ।
যুগল কিশোর প্রেম লাখ বান জেন হেম
আরতি পিরিতি রসে ধাঙ।।
জল বিনু যেন মীন দুঃখ পায় আয়ু হীন
এই মত প্রেম বিনু কথা।
চাতক জলদ গতি এমত প্রেমের রীতি
প্রেমী সঙ্গ করিব সর্বথা।।
বিষয় আবেশ মন কেনে হঙ অচেতন
সেও সুখ দুঃখ করি মান।
গোবিন্দ বিষয় রস সঙ্গ কর তার দাস
প্রেমভক্তি সত্য করি জান।।
গোবিন্দ বিমুখ জন স্ফূর্ত্তি নহে হেন ধন
লৌকিক করিয়া সব মানে।
প্রেমী জনা রহে যেথা জন্ম মোর হউ তথা
প্রেম কথা সদা শুনে কানে।।
অজ্ঞান মোহিত যত নাহি লয় সত মত
অহঙ্কারে না জানে আপনা।
অভিমানে ভক্তিহীন জগমাঝে সেই দীন
বৃথা জন্ম পাইল সেই জনা।।
আর সব পরিহরি ভজ ভজ শ্যাম গৌরী
এক প্রেমভক্তি কর আশা।
গোবিন্দ রসিক বর স্থান তার ব্রজপুর
করহ সদাই অভিলাষা।।
নরোত্তম দাসে কহে সদা মোর প্রাণ দহে
হেন ভক্ত সঙ্গ না পাইয়া।
অভাগ্যের নাহি ওর অসতে হইল ভোর
দুঃখ রহু অন্তরে জাগিয়া।।

হরি হরি কিবা হইল করমের গতি।
যুগল চরণ রতি না হৈল প্রেমভক্তি।।
প্রেমী জনার না হইল সঙ্গতি।।
সদাই বিদরে বুক কারে বা কহিব দুঃখ
না করিল একান্ত ভজনে।
কলিযুগ কাল ভয় সদাই আপদময়
মোর গতি হইবে কেমনে।।
শরীর আপদময় রবিসুত নিরদয়
আপনার দেখো সর্বনাশ।।
ভব কূপে পড়োঁ দেখি জ্ঞানহীন অন্ধ আঁখি
বিষয়েতে করে অভিলাষ।।
বিষয় অমৃত বন্দ ইহাতে আবেশ মন্দ
সুধাময় কৃষ্ণ ভক্তি তেজি।
সদা করি বিষ পান অচেতন অগেয়ান
বেদবিরুদ্ধ কর্ম ভজি।।
ত্রাহি ত্রাহি নিত্য বপু করুণাময় কংসরিপু
ত্রাণ কর লইনুঁ স্মরণ ।
কলিকাল কাল সাপে গ্রাস কৈল মহাপাপে
মহাভয় দারুণ মরণ।।
হেন জন আর নাই নিস্তারে গোবিন্দ বই
বড়ই ব্যাকুল হৈল নাথ।
কৃপা কটাক্ষে চাহ জগতের তুমি নাথ
বৃক্ষ বৃক্ষ হৈল মোর পাত।।
হেন কৃষ্ণ গোকুল নাথ শ্যামল কোমল গাত্র
মূরলী মিলিত মুখচন্দ্র ।
অরুণ কমল আঁখি মোহন সুন্দর দেখি
মূরতি পরমানন্দ কন্দ।।
ভকত বৎসল যশ জানে লোক চতুর্দ্দশ
কাতর হইয়া বোল পায়।
নরোত্তম দাসে কয় কাঁপে মন দেখি ভয়
দাস করি কর মোরে দায়।।

অশেষ করম গতি না হইল অনন্য ভক্তি
সুদারুণ কুসঙ্গ আপ রে।
ধিক ধিক জীবন ধিক রহু এ জনম
ধিক ধিক বিষয় সুখ ছারে।।
কি করিব কোথা যাম কোথা গেলে তোমা পাম
মোরে কে না করে উপদেশ ।
সাধুজন পদরেণু হেলাএ না কৈল তনু
এনা দুঃখ আছএ বিশেষ।।
হরি হরি বৃথা মোর হইল জনমে ।
পাইয়া অমূল্য নিধি বঞ্চিত করিল বিধি
না জানিএ কি আছে করমে।।
শুন শুন ওরে ভায় বৃথাই জনম যায়
কি লাগি করহ ভববন্ধে।
জ্ঞান হইতে ভক্তি হয় কর্ম্মে ধর্ম্মে পুণ্যময়
পাপপুণ্যে না রয় ভক্তি গন্ধে।।
জ্ঞানী কর্ম্ম নিরবধি কোটি কল্প সাধে যদি
হরি ভক্তি পরম দুর্লভ।
পুন পুন জন্ম হয় অশেষ জনম ফিরয়
রৌরবে পড়িয়া মরে সদা।
তোমারে কহিল ভাই ইহা বই আর নাই
হরি ভক্তি বিনা বড় বাধা।।
গোবিন্দে না করে রতি অন্য দেবে বলে পতি
মূঢ় সেই জগতের মাঝে।
সুখ দুঃখ দেখ যত কর্ম্ম ফল সুবেকত
হেন জন্ম পাইল কোন কাজে।।
অন্য ধর্ম্ম কহে লোক নাহি জানে ভক্তি যোগ
নানা মনে করে অবধান।
তার কথা নাহি শুনি পরমার্থ তবে জানি
মহাজন পথ পরমাণ।।
রতি সতি গৌরী রমা জিনি রূপে অনুপামা
গান্ধর্ব্বিকা বেদ পরাৎপর।।
শুকদেব নারদাদি বাঞ্ছা করে নিরবধি
যার পদ্মচরণের রেণু।
(হেন শ্রীরাধিকাশ্রয় যে করে সে মহাশয়
দীন হীন কল্পতরু জনু।।)
আহ্লাদিনী শক্তি সার প্রেমময়ী অবতার
গোবিন্দমোহিনী শুকবাসী।
শৃঙ্গার রসের সার সঙ্গে নিত্য পরিবার
শ্রীবৃন্দাবিপিনবিলাসী।
ভজরে ভজরে লোক সংসার জনি(ত)শোক
দূরে যাবে পাইবে আনন্দ।
হেন তত্ত্ব জানে যেই উত্তম ভকত সেই
তার পদরেণু করি আশ।
রাধাকৃষ্ণ ভজ সদা স্বপনে না জান দুজা
কহে দীন নরোত্তম দাস।।

যুগল কিশোর প্রাণ নানা রস সদা গান
প্রার্থনা লালসাময়ী সদা।
রাধানাম গানে ভাই কৃষ্ণের চরণ পাই
কৃষ্ণনাম গানে পাই রাধা।।
রাধিকা চরণাশ্রয় করে যেই মহাশয়
ভাসে সেই লীলারস সুখে।
যুগল চরণ বিনা ভজে যেবা অন্য জনা
রসলীলা কি করিব তাখে।।
জাতি কুল আভিমান ছাড়িয়া সকল আন
বৈষ্ণব সঙ্গতি করি সদা।
লীলারস করি গান যুগল মুরতি ধ্যান
অনুগা হইয়া পাই রাধা।।
কিবা স্ত্রী পুরুষ বালা শাস্তিকর্তা আছে কাল
বেশ বয়স নাহি মানে।
ব্রহ্ম আদি কীট যত কর্মফলে সুবেকত
ভোগ পূর্ণ হইলে মরণে।।
(কৃষ্ণ বড় দয়াময় ভজিলে সর্বত্র জয়
নিন্দী সিদ্ধি হয় আজ্ঞাকারী।)
শত্রুমিত্র জীব যত সব হয় অনুরক্ত
যারে কৃপা করে গিরিধারী।।
(পিতৃলোক দেবলোক পায় তারা মহা সুখ
ধন্য ধন্য করে সর্বক্ষণে ।)
হৃদয়ে আনন্দ বাড়ে মিত্রভাবে সবাকারে
অপরূপ গোবিন্দ ভজনে।।
শ্রীগুরু বৈষ্ণব বাক্য রুচি যার হয়।
এ হেন অপূর্ব ভক্তি সেই সে করয়।।
শ্রদ্ধা হইলে সাধুসঙ্গ করিতে মন হয়।
সাধুমুখে প্রেমভক্তি তবে সে জানয়।।
কপট করিয়া ভজে গোবিন্দ চরণ।
খাই দাই সুখে থাকি স্ত্রী পুত্র ভরণ।।
চাতুরী প্রবন্ধে করে লোক কে বুঝায়।
রাক্ষসের মায়া করি নাচে কান্দে গায়।।
লাভ পূজা প্রতিষ্ঠা চিন্তয়ে অনুক্ষণ।
অহঙ্কার করি করে বৈষ্ণব নিন্দন।।
যে সব জনের যেন না দেখিএ মুখ।
কহে নরোত্তম দাস তবে বড় সুখ।।

রাধাকৃষ্ণ সদা ভজ জীবনে মরণে।
তার গুণ তার লীলা ভাব অনুক্ষণে ।।
তার সেবকের সেবক হঙ দাসের দাস ।
শ্রীব্রজমণ্ডলে কর তার সঙ্গে বাস।।
যখন যে লীলা করে যুগল কিশোর।
সখীর সঙ্গিনী হৈয়া তাথে করোঁ ভোর।।
কখন চরণ সেবোঁ তাম্বুল জোগাঙ।
কখন মালতি মালা গাথিয়া পারঙ।।
কখন দোহার রূপ করোঁ নিরীক্ষণ ।
চামর ঢুলাও করোঁ মখ দরসন।।
শ্রীরূপমঞ্জরী সঙ্গে থাক নিরবধি।
তার পাদপদ্মরেণু মোর মন্ত্রৌষধি।।
শ্রীরতিমঞ্জরী দেবী কর মোরে দয়া ।
জন্মে জন্মে দেহ মোরে পাদপদ্ম ছায়া।।
শ্রীরসমঞ্জরী মোরে কর অবধান।
জীবনে মরণে মোর তুয়া পদ ধ্যান।।
ভক্তি চিন্তামণি কিছু সংক্ষেপে কহিল।
মনে কিছু নাহি স্ফূরে অন্তরে রহিল।।
বৃন্দাবনে নিত্যলীলা যুগল বিলাসে।
প্রার্থনা করএ সদা নরোত্তম দাসে।।

ইতি শ্রীপ্রেমভক্তিচিন্তামণি সম্পূর্ণ
ক.বি. ৩৯২৮ পুথি হইতে আদর্শ পাঠ গৃহীত)