কবি জয়দেব খ্রীষ্টীয় ১২শ শতকের শেষার্ধে পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমজেলার অন্তর্গত কেন্দুবিল্বগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন৷ অজয় নদীর উত্তরদিকে অবস্থিত এই গ্রাম৷ জয়দেব একাধারে ছিলেন কবি, সঙ্গীতরসজ্ঞ ও ভক্ত৷ “গীত গোবিন্দ” তাঁরই রচনা, যদিও কোন কোন পণ্ডিতের অভিমত যে, গীতগোবিন্দের কোন কোন অংশ অপরাপর কবিদের যোজনা৷ পণ্ডিত শ্রীহরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় তাঁর “কবি জয়দেব ও শ্রীগীতগোবিন্দ”-গ্রন্থের ভূমিকায় কাব্যকথাপ্রসঙ্গে পাঁচটি যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখিয়ে প্রমাণ করেছেন যে, সমগ্র “গীতগোবিন্দ” কাব্যগ্রন্থ বা পদগানগ্রন্থ কবি জয়দেবেরই রচনা৷ (“কবি জয়দেব ও শ্রীগীতগোবিন্দ” (৩য় সংস্করণ, ১৩৬২), পৃঃ ৬১-৬২৷) তবে “জয়দেব” নামধারী ব্যক্তি ছিলেন আরও দু”জন ঃ একজন ছন্দসূত্রের প্রণেতা গীতগোবিন্দ-রচয়িতা কবি জয়দেবের পূর্ববর্তী ও অপরজন “প্রসন্নরাঘব” নাটক ও “চন্দ্রলোক” -নামক অলঙ্কারশাস্ত্রের প্রণেতা জয়দেব৷ কাশ্মীরবাসী কহ্লন “সুক্তিমুক্তাবলী” গ্রন্থে (১১৭৯ শকাব্দা) এই শেষোক্ত জয়দেবের নামোল্লেখ করেছেন৷ (“কবি জয়দেব ও শ্রীগীতগোবিন্দ” (৩য় সংস্করণ, ১৩৬২), পৃঃ ৪১৷)
কবি জয়দেব-রচিত গীতগোবিন্দের দ্বাদশ সর্গের ২৯ শ্লোক থেকে জানা যায়, তাঁর পিতার নাম ছিল ভোজদেব, মাতা বামাদেবী (অনেকের মতে, বামাদেবী কিংবা রাধাদেবী৷ অবশ্য বামাদেবীর “ব” “র”-এ (রামাদেবীতে)পরিণত হওয়া কিছু অস্বাভাবিক নয়৷ ) ও প্রিয়সখা অষ্টপদীগায়ক পরাশর৷ শ্লোকটি হোল —
শ্রীভোজদেবপ্রভবস্য বামাদেবীসুত শ্রীজয়দেবকস্য৷
পরাশরাদিপ্রিয়বন্ধুকণ্ঠে শ্রীগীতগোবিন্দকবিত্বমস্তু৷৷
পূজারী গোস্বামী টীকায় এর বিশ্লেষণ কোরে বলেছেন ঃ “ভোজদেবনামা অস্য পিতা বামাদেবীনাম্নী জননী তস্যাঃ সুতস্য শ্রীজয়দেবস্য পরাশরাদীনাং যে প্রিয়াস্তন্মতজ্ঞাতারস্তেষ্বপি যে বান্ধবাস্তন্মতানুসারেণ শ্রীরাধামাধবরহঃকেলিজ্ঞানেন বন্ধুত্বং প্রাপ্তাস্তেষামেব কণ্ঠে ভূষণবৎ সদা গীতগোবিন্দাখ্যং কবিত্ব মস্তু ৷” তাছাড়া প্রথম সর্গের দ্বিতীয় শ্লোকে উল্লিখিত “পদ্মাবতীচরণচারণচক্রবর্তী” এবং দশম সর্গের ১০ম শ্লোকে উল্লিখিত “জয়তি পদ্মাবতীরমণজয়দেবকবি” প্রভৃতি পদাংশ থেকে জয়দেব -পত্নী পদ্মাবতীর নাম পাওয়া যায় ঃ “তথা-নাম্নী জয়দেব-পত্নী”৷ কারো কারো মতে, জয়দেবের পত্নীর নাম রোহিণী৷ পণ্ডিত শ্রীহরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় বলেছেন, সহজিয়াগণ বলেন যে, রোহিণী কবি জয়দেবের পরকীয়া৷ (“কবি জয়দেব গীতগোবিন্দ”, পৃঃ ৯) কিন্তু এইনাম কবি-কল্পনা বলেই মনে হয়, কেননা গীতগোবিন্দের প্রায় সকল টীকা ও ভাষ্যকর পদ্মাবতীকেই জয়দেব-পত্নী বলে উল্লেখ করেছেন৷
জয়দেব ছিলেন বঙ্গদেশজাত বাঙালী৷ তিনি রাঢ়ভূমি বীরভূমজেলার অন্তর্গত কেন্দুবিল্বগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সেকথা পূর্বেই উল্লেখ করেছি৷ কেন্দুবিল্ব চলিত ভাষায় “কেন্দুলী” বা “কেঁদুলী” নামে পরে পরিচিত হয়৷ অধ্যাপক তারাপদ ভট্টাচার্য বলেন ঃ “বীরভূম জেলার কেন্দুবিল্ব গ্রাম ইহার (কবির) জন্মভূমি বলিয়া প্রসিদ্ধি আছে৷ বর্তমানে কিন্তু কেন্দ্রবিল্ব বা কেঁদুলী বলিয়া কোন গ্রামের অস্তিত্ব নাই, অজয়নদীর বালুকাময় তীরভূমিতে পৌষ সংক্রান্তিতে “কেঁদুলীর মেলা” নামক একটি বাৎসরিক মেলা বসিতে দেখা যায় মাত্র৷ সেইজন্য মিথিলা ও উড়িষ্যা হইতে জয়দেবকে দাবী করা হইয়াছে৷ (“তীর্‌হুত জেলায় অবস্থিত জেঞ্ঝারপুর-শহরের কাছে কেন্দোলি নামক একটি গ্রাম আছে৷ মিথিলাবাসীদের মতে, জয়দেব এই কেন্দোলিগ্রামের অধিবাসী ছিলেন৷ উড়িষ্যাবাসীরাও পুরীর নিকটে কেন্দুবিল্বগ্রামে জয়দেবের অবির্ভাব কল্পনা করিতে চাহেন”৷ -ডঃ শ্রীঅসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ঃ “বাংলা-সাহিত্যের ইতিবৃত্ত” (প্রথম খণ্ড, ১৯৫৯), পৃঃ ৭৮) যেহেতু উড়িষ্যার বিভিন্ন মন্দিরে অশ্লীল যৌন (উড়িষ্যার মন্দির -ভাস্কর্যে নগ্ন মূর্তিগুলি যথার্থভাবে যৌনভাবের প্রকাশ কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্কের অবসর আছে৷ সার্থক শিল্পী ও শিল্পী-সমালোচকদের সিদ্ধান্ত এসব সম্পূর্ণ ভিন্ন৷ কেননা ঐগুলি আসলে আদিরস শৃঙ্গারের অভিব্যক্তি মানব মনের সহজাত কামাভিব্যক্তির (Id)প্রতিকৃতি নয়৷ নাট্যশাস্ত্রে আদিরস শৃঙ্গার সৃষ্টি ও নির্বেদের প্রকাশক৷ নাট্যশাস্ত্রের ভাষ্য ও টীকাকারগণ শৃঙ্গারকে শ্রেষ্ঠ ও অপার্থিব উজ্জ্বল-রস বলে বর্ণনা করেছেন৷ )ভাস্কর্য দেখা যায়, সেহেতু আদিরসের কবি জয়দেব উৎকলী ছিলেন –ইহাই উড়িষ্যাবাসিগণের যুক্তি৷ বলা বাহুল্য এইযুক্তি দুর্বল৷ জয়দেবেকে অ-বাঙ্গালী বলিবার পক্ষে যথেষ্ট যুক্তি এখনও উপস্থাপিত হয় নাই৷” (“বঙ্গ-সাহিত্যের ইতিহাস”, প্রাচীন পর্ব(১ম সংস্করণ, ১৬২১), পৃঃ ৫৫)
“বাংলা-সাহিত্যের ইতিবৃত্ত”-রচয়িতা ডঃ শ্রীঅসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন ঃ “সংস্কৃত-সাহিত্যে “ছন্দসূত্র”-এর রচয়িতা জয়দেব বাংলার জয়দেবের অনেক পূর্ববর্তী”, “বাংলাদেশের বাহিরে জয়দেবের যে কতদূর প্রতিষ্ঠা বৃদ্ধি পাইয়াছিল”, “বাংলার কবি পদলালিত্যে ও উজ্জ্বলরসাত্মক ভক্তিরসামৃত-সিন্ধুতরঙ্গে বাংলার বাহিরেও যে প্রেমভক্তির প্লাবন আনিয়াছিলেন” প্রভৃতি (“বাংলা-সাহিত্যের ইতিবৃত্ত”, ১ম খণ্ড, ১৯৫৯, পৃঃ ৯৩-৯৪) থেকে তিনি যে কবিকে বঙ্গবাসী বলে স্বীকার করেছেন তা বোঝা যায়৷ তাছাড়া প্রাচীন বাংলা-সাহিত্যের ইতিহাস -রচয়িতাদের মধ্যে ডঃ শ্রীসুশীলকুমার দে “জয়দেব ও গীতগোবিন্দ” নিবন্ধে, পণ্ডিত শ্রীহরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় “কবি জয়দেব ও গীতগোবিন্দ” গ্রন্থে ডঃ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় “কবি জয়দেব” নিবন্ধে স্বর্গীয় রসিকমোহন বিদ্যাভূষণ সবঙ্গানুবাদ–“শ্রীশ্রীগীতগোবিন্দম্‌” গ্রন্থে কবি জয়দেবকে বাঙালী তথা বঙ্গদেশজাত বলে স্বীকার করেছেন৷ বাংলাভাষার সাহিত্য-রচনার পথিকৃৎ স্বর্গীয় ডঃ দীনেশচন্দ্র সেন ও বাংলার অন্যান্য মনীষীদেকর সিদ্ধান্তও তাই৷ (যদিও দক্ষিণ-ভারতীয় ও মহারাষ্ট্রদেশীয় কোন কোন লেখক জয়দেবকে তৎতদ্দেশীয় বলে মন্তব্য করেছেন৷ তাছাড়া উৎকলবাসী মণীষীরা জয়দেবের “মিশ্র” পদবীও দাবী করেন৷)
কবি জয়দেব যে বীরভূমি তথা বীরভূমজেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন, সেই বীরভূমির নাম-সার্থকতা নিয়েও বাদানুবাদের অন্ত নেই৷ বৈষ্ণবপদাবলীকীর্তনের ঐতিহাসিক আলোচনায় ঐ সকল প্রসঙ্গ অপরিহার্য না হলেও পদ-রচয়িতাদের অন্যতম কবি জয়দেবের জীবনালেখ্যরচনায় এ সকল আলোচনা ও উপাদানের সার্থকতা আছে৷
পণ্ডিতবর শ্রীহরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় বলেন ঃ “বীরভূমির পূর্ব নাম ছিল “কামকোটী”৷ সেকালে পূর্বে অজয়-সম্মিলিতা গঙ্গা, পশ্চিমে আরণ্যভূমি (ঝাড়খণ্ডের ঘন-অরণ্য), উত্তরে পাথরের দেশ (রাজমহলের পর্বতশ্রেণী) এবং দক্ষিণে বিন্ধ্যপাদোদ্ভবা বহু নদ-নদী (দামোদর প্রভৃতি) এই ভূমিখণ্ডের চতুঃসীমারূপে নির্দিষ্ট হইত৷” (কবি জয়দেব ও গীতগোবিন্দ (৩য় সংস্করণ, ১৩৬২) পৃঃ ১৫) আরো প্রাচীনকালে বীরভূমির ও তার চুর্তদিকের ভূমিখণ্ড “সুহ্ম” নামে পরিচিত ছিল এবং দণ্ডী, কালিদাস, বাণভট্ট, ধোয়ী প্রভৃতি কবি একথার উল্লেখ করেছেন৷ মহাভারতের টীকাকার নীলকণ্ঠ বলেন — “সুহ্মা রাঢ়াঃ”৷ শ্রীযুক্ত মুখোপাধ্যায়ের অনুমান যে, সেনরাজকুমাররাই তাঁদের পূর্বপুরুষ বীরসেনের নামানুসারে “বীরভূমি” নামকরণ করেন৷ (“কবি জয়দেব ও গীতগোবিন্দ” (৩য় সংস্করণ, ১৩৬২), পৃঃ ১৬) তিনি আরো বলেন ঃ “আইন-ই-আক্‌বরী”-র মতে, বীরভূমির “লক্ষ্ণুর” (অধুনা “নগর” নামে পরিচিত) বল্লালসেনের প্রতিষ্ঠিত৷ লক্ষ্ণুরের” হিন্দু-শাসনকর্তাদিগের সেকালে “বীর” উপাধি ছিল৷ * * জয়দেব রাঢ়ের কবি বীরভূমের কবি৷” (কবি জয়দেব ও গীতগোবিন্দ (৩য় সংস্করণ, ১৩৬২) পৃঃ ১৬)
তন্ত্রসাধকসম্প্রদায়ের মধ্যে “বীরভূমির” নামের এক সৃষ্টিকথার প্রচলন আছে৷ বীরভূমজেলায় সাঁইথিয়া, লাভপুর, তারাপুর(বা তারাপীঠ), নলহাটী ও বক্রেশ্বর এই পাঁচটি স্থানে পাঁচটি শক্তিপীঠের প্রতিষ্ঠা আছে৷ শোনা যায়, দেবীর ভিন্ন ভিন্ন অংশ ঐ পাঁচটি স্থানে পতিত হয়ে শক্তিতীর্থক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে (“শোকোন্মাদ মহাদেবের স্কন্ধলগ্ন সতীদেহকে নারায়ণ তাঁর চক্র দিয়ে বিছিন্ন করেছিলেন। সতীর দেহ একান্নটি অংশে বিভক্ত হয়ে ভারতের বিভিন্ন স্থানে পতিত হয়। সেই থেকে “একান্নটি সতীপীঠ” — লিখেছেন নির্মলচন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায় “মন- মধুকর” গ্রন্থে (পৃঃ ১৪১)। বীরভূমির পাঁচটি শক্তি বা সতীপীঠ ঐ একান্নটি পীঠের অন্তর্গত।) এবং এই পীঠস্থানগুলি তন্ত্রসাধনার ক্ষেত্ররূপে বাংলার শুধু কেন, ভারতের ইতিহাসেও স্থান পেয়েছে৷ তন্ত্রসাহিত্যে তন্ত্রাচারী বা তন্ত্রসাধকরা চক্রানুষ্ঠানে “বীর” নামে পরিচিত৷ বীর এবং বীরাচারসাধনা কিন্তু সমপর্যায়ভুক্ত নয়৷ প্রবাদ যে, তন্ত্রাচারী শক্তিসাধকদের ক্ষেত্ররূপেই “বীরভূমি” (বীরদের ভূমি) বীরভূম নামে পরিচিত৷ ইতিহাস কতটুকু এই নামের সার্থকতাকে মেনে নেবে জানি না, কিন্তু বঙ্গীয় তন্ত্রসাধকরা বীরভূমি বা বীরভূম নামের এই অর্থই সাধারণভাবে গ্রহণ করেন৷ “বঙ্গীয় তন্ত্রসাধক” বলার উদ্দেশ্য এই যে, সমগ্র তন্ত্রসাহিত্যকে পণ্ডিতেরা মোটামুটি তিনভাগে ভাগ করেছেন৷ যেমন ঃ (১) বঙ্গীয় সম্প্রদায় বা “বেঙ্গল স্কুল অফ্‌ তন্ত্র” — যা নিছক আচার ও সাধনাত্মক, (২) কাশ্মীরীয় ত্রিকসম্প্রদায় বা “ত্রিক-স্কুল অফ্‌ তন্ত্র” –যা নিছক দর্শন ও তত্ত্ববিচারাত্মক, এবং (৩) দক্ষিণ ভারতীয় শ্রীবিদ্যাসম্প্রদায় বা “সাউথ-ইণ্ডিয়ান স্কুল অফ্‌ তন্ত্র” — যা উভয়াত্মক হলেও সাধন ও তত্ত্বপ্রধান৷ তাছাড়া তন্ত্রে কাদি, হাদি ও ক-হাদি মত তিনটিরও প্রচলন আছে তন্ত্র ও বীজমন্ত্রের শ্রেণীবিভাগ নিয়ে৷ বাংলাদেশে তন্ত্রসাধনা যে এক সময়ে বিশেষভাবে প্রসার লাভ করেছিল তা রাঢ়দেশ বর্ধমান ও বীরভূমের অন্তর্গত তন্ত্রসাধনার পীঠস্থানগুলি লক্ষ্য করলে বোঝা যায়। বর্ধমানে সাধক কমলাকান্তের সাধনপীঠ ও পঞ্চমুণ্ডির আসন আজও বিদ্যমান৷ চান্নাগ্রাম (বর্ধমান) কমলাকান্তের জন্মস্থান৷
“বীরভূম” নামের আর একটি পরিচয় দিয়েছেন সাহিত্যিক নির্মলচন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায় “মনু-মধুকর”-গ্রন্থে এবং সে-পরিচয় তাঁর নিজের কথায় বলাই সমীচীন মনে করি৷ গ্রন্থকার বীরভূম বা বীরভূমির পরিচয় দিয়েছেন কথোপকথনচ্ছলে৷ তিনি লিখেছেন ঃ “আলোচনা চলেছে বীরভূম কথাটির উৎপত্তি নিয়ে৷ অধ্যাপক বলেছেন, বীরভূম নামের মূলে আছেন রাজা বীরচন্দ্র৷ ত্রয়োদশ শতাব্দীর সূচনায় এই জঙ্গলাকীর্ণ অঞ্চলে তিনি রাজ্য স্থাপন করেন৷ বাংলার মুসলমান সুবেদারের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার যুদ্ধে তিনি প্রাণ দিয়েছিলেন৷ * * সিউড়ির ছ”-সাত মাইল পশ্চিমে তাঁর রাজধানীর ধ্বংসাবশেষ আছে৷ অদূরে গভীর ভাণ্ডীরবন৷ সেই বনের মধ্যে বিরাজ করছেন অনাদিলিঙ্গ মহাদেব ভাণ্ডেশ্বর৷” বিদূষী বউঠান বল্লেন ঃ “এতো হল রাজকীয় নামকরণ৷ এবার লৌকিক নাম শোনো, বীরভূম ছিল সাঁওতালপ্রধান অঞ্চল৷ * * সাঁওতালী ভাষায় “বীর” মানে জঙ্গল৷ সাঁওতালরা তাদের ঐ জঙ্গলরাজ্যের নাম দিয়েছিল বীরভূঁইয়াঁ৷ সেই বীরভূঁইয়াই এখন হয়েছে বীরভূম৷” (“মন-মধুকর” (আনন্দধারা-প্রকাশন, কলিকাতা, ১৩…. ), পৃঃ ১৪৯-১৫০, অনেকের আবার অভিমত যে, বারো জন ভূঁইয়াঁ সেখানে রাজত্ব করতেন বলে বার্‌ভূঁইয়াঁ >”বীরভূম” নাম হয়েছে৷ )। অবশ্য এটি কিংবদন্তী বা গল্পকথা হলেও এই প্রবাদের পিছনে ঐতিহাসিক সত্য থাকা অসম্ভব নয়৷
এই পর্যন্ত জয়দেব-প্রসঙ্গে আলোচনা করলাম সাধক-কবির বহিরঙ্গ রূপের কথা, এবার কবির অন্তরঙ্গ-রূপ কাব্যগীতমিথুনাত্মক অষ্টপদী বা “গীতগোবিন্দ”-পদগানপ্রকৃতির আলোচনায় প্রবৃত্ত হব৷ বাংলার কবি জয়দেবের আদিরসাত্মক “গীতগোবিন্দ”-পদগানই বৈষ্ণব-পদাবলীকীর্তনের অন্যতম সৃষ্টিক্ষেত্র ও লীলাভূমি৷ পরবর্তী বৈষ্ণব-পদাবলী যে ৯ম-১১শ শতকের বৌদ্ধ-চর্যাপদ এবং ১২শ-১৩শ শতকের গীতগোবিন্দের ওপরই ভিত্তিভূমি রচনা করেছিল একথা নিঃসংশয়ে সকলে স্বীকার করেন৷