কীর্তনের ইতিহাসে এই মহামহোৎসবের বৃত্তান্ত বিশেষ স্মরণীয়৷ গোপালপুরের জমিদার কৃষ্ণানন্দ দত্তের পুত্র নরোত্তম যৌবনে গৃহত্যাগ করিয়া বৃন্দাবনে পলায়ন করেন এবং সেখানে লোকনাথ গোস্বামীর নিকট দীক্ষা গ্রহণ করিয়া একজন শ্রেষ্ঠ বৈষ্ণব বলিয়া গণ্য হন৷ এই বৈষ্ণব সন্ন্যাসী তাঁহার জন্মভূমি দর্শন করিতে আসিলে তাঁহার পিতৃব্যপুত্র সন্তোষ দত্তের অনুরোধে গ্রামপ্রান্তে কুটীর নির্মাণ করিয়া সেখানেই ভজন সাধনে জীবনাতিপাত করেন৷ তিনি সন্ন্যাসী হইয়াও স্বগ্রামে কেন বাস করিলেন, তাহা এইভাবে বর্ণিত হইয়াছে :
পদ্মাবতী পার হৈয়া খেতরি যাইতে৷
আইলা গ্রামবাসী লোক আগুসরি নিতে৷৷
… …
মনে উল্লাসে কেহ কহে কারু ঠাঁই৷
এ অপূর্ব বৈরাগ্য উপমা দিতে নাই৷৷
কেহ কহে মোর মনে এই চিন্তা হয়৷
নিজ রাজ্য বলি এথা রয় বা ন রয়৷৷
… …
কেহ কহে হেথা পাষণ্ডির সীমা নাই৷
নিজ রাজ্য হইলেও রহিব এক ঠাঁই৷৷
কেহ কহে এসকল দেশ উদ্ধারিতে৷
হৈল আগমন সত্য বিচারিনু চিতে৷
সে সময়ে উত্তরবঙ্গ বিলোপোন্মুখ বৌদ্ধধর্মের কেন্দ্রস্থল ছিল৷ পাহাড়পুরে যে সোমপুর বিহারের ভগ্নাবশেষ বর্তমান রহিয়াছে তাহা দেখিলেই বুঝিতে পারা যায় যে, বৌদ্ধধর্ম উত্তরবঙ্গে এক সময়ে প্রবল প্রভাব বিস্তার করিয়াছিল৷ বৌদ্ধধর্ম কালক্রমে নানা রহস্যপূর্ণ মতবাদে ও গুপ্ত ক্রিয়াকলাপে পরিণত হইয়া ধ্বংসের প্রতীক্ষা করিতেছিল৷ যাহারা বৌদ্ধধর্মের নামে নানা অদ্ভুত ক্রিয়াকলাপ প্রচার করিতেছিল৷ যাহারা বৌদ্ধধর্মের নামে নানা অদ্ভুত ক্রিয়াকলাপ প্রচার করিতেছিল, বৈষ্ণব-গ্রন্থে তাহারাই পাষণ্ডী বলিয়া উল্লিখিত হইয়াছে৷ শ্রীচৈতন্যের জীবনে যেমন, নরোত্তমদাসের জীবনেও সেইরূপ, দুর্গত পতিত আশাহত নরনারীকে উদ্ধারের জন্য ব্যাকুলতা দেখা যায়৷ কীর্তন-প্রচারই হইল সেই উদ্ধারের উপায়৷ খেতরির মহোৎসবে কীর্তনের যে ধুম পড়িয়া গেল, তাহা সহস্র বাদানুবাদ অপেক্ষা কার্যকর হইয়াছিল৷ নীরস শুষ্ক কঠোর কর্মযোগ বা বৌদ্ধদের অষ্টাঙ্গমার্গ -সাধন অপেক্ষা হরিনাম গান করা সাধারণ লোকের পক্ষে অনেক সহজ ও আনন্দপ্রদ হইয়াছিল৷ আধ্যাত্মিক কল্যাণের সঙ্গে সংগীতের আনন্দ মিশ্রিত হইয়া অনায়াসেই লোকমতের মোড় ফিরাইতে সক্ষম হইল৷
কীর্তনের পদ্ধতি সম্বন্ধে খেতরির মহোৎসবে নরোত্তমদাস ঠাকুর যে পন্থা দেখাইলেন, তাহা অনেকটা অভিনব বলিয়া মনে করা যাইতে পারে৷ প্রথমতঃ অনিবদ্ধ ও নিবদ্ধ সংগীতের দ্বারা কীর্তনের আরম্ভ৷ গোকুলানন্দ অনিবদ্ধ গীতক্রম আলাপ করিলেন; অর্থাৎ শুধু ‘বর্ণন্যাস স্বরালাপের’ দ্বারা গীতের সূচনা হইল৷

আলাপে গমক মন্দ্র মধ্য তার স্বরে
সে আলাপ শুনিতে কেবা বা ধৈর্য ধরে৷৷
– ভক্তিরত্নাকর

উদারা মুদারা তারা এই তিন স্বরগ্রাম অধিকার করিয়া গায়কের সুর নিম্ন হইতে উচ্চে উঠিতে লাগিল৷ সে আলাপচারিতে সকলেই মুগ্ধ হইল৷ গায়কগণ নরোত্তমদাস ঠাকুরের পরিবারভুক্ত ছিলেন৷ তাঁহারা শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য, নিত্যানন্দ ও অদ্বৈতপ্রভু প্রভৃতিকে মনে মনে প্রণাম করিয়া গান ধরিলেন :
বার বার প্রণমিয়া সবার চরণে৷
আলাপে অদ্‌ভুত রাগ প্রকট কারণে৷
রাগিণী সহিত রাগ মূর্তিমন্ত কৈলা৷৷
শ্রুতি স্বর গ্রাম মুর্ছনাদি প্রকাশিলা৷৷
সুমধুর কণ্ঠধ্বনি ভেদয়ে গগন৷
পরম মাদক সুধা নহে তার সম৷৷
– ভক্তিরত্নাকর
ভক্তিরত্নাকরের এই প্রমাণ অনুসারে বলিতে হয় যে, এই কীর্তনের সঙ্গে খোল করতাল ব্যতীত অন্য কোনও বাদ্য যন্ত্র ব্যবহৃত হয় নাই৷ পরবর্তী কালেও দেখা যায় উচ্চাঙ্গের কীর্তনের অন্য কোনও যন্ত্রের সংগতি থাকে না৷ এখানে বাদ্যযন্ত্র-মধ্যে খোল ও করতাল ব্যতীত অন্য কোনও যন্ত্রের উল্লেখ নাই৷

শ্রীপ্রভুর সম্পত্তি শ্রীখোল করতাল৷
তাহে স্পর্শাইলা শ্রীচন্দন ফুলমাল৷৷
– ভক্তিরত্নাকর

ইহার পর শ্রীখণ্ডের রঘুনন্দন ঠাকুর মহাশয় নরোত্তমদাস ঠাকুরকে মালা পরাইয়া দিলেন৷ অদ্যাপি কীর্তনে গায়কের কণ্ঠে মাল্যদান করিবার পদ্ধতি চলিয়া আসিতেছে৷ নরোত্তম অতঃপর নিবদ্ধ গীতের পরিপাটি প্রচার করিলেন৷ নিবদ্ধ গীত অর্থাৎ যাহাতে কথা ও সুরের মিলন আছে৷ সংগীতশাস্ত্রে নিবদ্ধ ও অনিবদ্ধ সংগীতের এইরূপ নির্দেশ অছে :
অনিবদ্ধং নিবন্ধঞ্চ দ্বিধা গীতমুদীরিতং৷
আলপ্তির্বদ্ধহীনঃ স্যাদ্রাগালাপনরূপিণী৷৷
– সংগীতরত্নাকর
অর্থাৎ গীত ‘অনিবদ্ধ’ ও ‘নিবদ্ধ’ ভেদে দুই প্রকার৷ আলপ্তি বা আলাপে রাগের আলাপনমাত্র হয়, অর্থযুক্ত কথার দ্বারা ইহা আবদ্ধ নয়৷ নিরর্থক হুংকার মাত্র, ‘সা ঋ গ ম’ বা আতানারি প্রভৃতির দ্বারা যে আলাপচারি হয়, তাহার নাম অনিবদ্ধ সংগীত৷ ইহা তালেরও অপেক্ষা রাখে না৷
বদ্ধং ধাতুভিরঙ্গৈশ্চ নিবদ্ধমভিধীরতে৷
– সংগীতরত্নাকর
ধাতু এবং অঙ্গের দ্বারা আলাপ সার্থক বা অর্থযুক্ত পদ হইলে তাহাকে নিবদ্ধ সংগীত বলা যায়৷ সংগীতসারে এই সংগীতের তিন প্রকার কথিত হইয়াছে : শুদ্ধ, শালগ ও সংকীর্ণ৷ শুদ্ধ সংগীতের নাম প্রবন্ধ । ‘প্রকৃষ্টো যস্য বন্ধঃ স্যাৎ স প্রবন্ধো নিগদ্যতে৷’ এই প্রবন্ধসংগীতের চারটি ধাতু ও ছয়টি অঙ্গ থাকে৷ ধাতু অর্থে অবয়ব বা ভাগ, যথা— উদ্গ্রাহ, মেলাপক, ধ্রুব, আভোগ৷ উদ্‌গ্রাহ অর্থাৎ গানের প্রথম পাদ বা কলি৷ উদ্‌গ্রাহের পরেই যে অংশ থাকে তাহাকে মেলাপক বলে৷ ধ্রুব বা ধ্রু – কলি মধ্যভাগে অবস্থিত এবং আভোগ থাকে শেষে— ‘আভোগশ্চাম্ভিমেঃ স্মৃতঃ’৷ ধ্রুব এবং আভোগের মধ্যে যে অংশ থাকে হরিনায়কের মতে তাহাকে ‘অন্তরা’ কহে৷ আভোগাংশে কবি এবং নায়কের নাম থাকে৷ সঙ্গীতশাস্ত্রের এই নিয়মানুসারেই অধিকাংশ বৈষ্ণব-পদাবলী রচিত হইয়াছে৷
কীর্তন -পদাবলীতে প্রায় সকল পদেরই শেষে ‘ভণিতা’ আছে৷ ‘ভণিতা’ বা ‘ভণিতি’ অর্থে ‘উক্তি’৷ পদ যাঁহারা রচিত সেই কবির নাম দিবার পদ্ধতি সংগীতশাস্ত্রের এই সংজ্ঞা হইতেই বুঝিতে পারা যায়৷ সংগীতশাস্ত্রের নির্দেশ অনুসারেই ‘আভোগ’ নামক গীতাংশে কবি বা নায়কের নাম অথবা উভয়ের নাম থাকে৷ বিদ্যাপতির অনেক পদে তাঁহার নিজের নাম, কোনও কোনও পদে নিজের নামের সঙ্গে তাঁহার পৃষ্ঠপোষক (নায়ক) শিবসিংহের এবং কোনও পদে শিবসিংহের মাতা ও পত্নীর নাম সংযুক্ত আছে৷
প্রবন্ধ গীতের পাঁচটি জাতি আছে :
প্রবন্ধজাতয়ঃ পঞ্চ বর্তন্তে তাঃ ক্রমেণ চ৷
ষড়্‌ভিরঙ্গৈর্মেদিনী স্যান্নন্দিনী পঞ্চভির্ভবেৎ৷৷
চতুর্ভি দীপনী প্রোক্তা ত্রিভিরঙ্গৈস্তু পাবনী৷
দ্বাভ্যাং তারাবলী জাতিরঙ্গাভ্যামুপজায়তে৷৷
– সংগীতপারিজাত

অর্থাৎ ষড়ঙ্গযুক্ত প্রবন্ধ মেদিনী জাতীয়, পঞ্চাঙ্গযুক্ত নন্দিনী, চতুরঙ্গযুক্ত দীপনী, অঙ্গত্রয়ে পাবনী এবং অঙ্গদ্বয়ে তারাবলী জাতীয় হয়৷ বস্তুতঃ প্রবন্ধ গীতের জাতি বা প্রকার ভেদ অসংখ্য :

ভেদঃ শুদ্ধপ্রবন্ধানামানন্ত্যাদেক এব হি৷

সুকবি প্রবন্ধকে যথেচ্ছভাবে সাজাইতে পারেন৷ এই প্রবন্ধ-গীতই নিবদ্ধ সংগীত এবং ইহাই কীর্তনগানে অনুসৃত হইয়া আসিতেছে৷
নরোত্তম এই নিবদ্ধ গীতই করিয়াছিলেন৷ প্রথমে যে অনিবদ্ধ গীত বা আলাপচারীর দ্বারা গীত আরম্ভ হইয়াছিল, তাহার ধারা কিছুটা এখনও দেখিতে পাওয়া যায়৷ কীর্তনগানের পূর্বে গায়কেরা এখনও অর্থশূন্য বর্ণন্যাসের দ্বারা আলাপ করিয়া থাকেন৷ কিন্তু অনেক স্থলে উহা কেবল পরস্পরের কণ্ঠমিলনব্যাপারে পরিণত হয়৷ এইজন্য এই আলাপচারির নাম হইয়াছে ‘মেল’ বা ‘মেল জমাট’৷ অর্থাৎ সুরের ‘জমাট’ করিয়া গান ধরা হয়৷ কীর্তনিয়াদিগের অজ্ঞতার জন্যই হউক, বা অন্য কোনও কারণেই হউক,রাগরাগিণীর আলাপ এক্ষণে বড় একটা শুনা যায় না৷ কোনও কোনও ক্ষেত্রে হয়তো প্রথমে যে গানটি করা হইবে, তাহারই কিছু আভাস মেলজমাটে দেখা যায়, কিন্তু তাহাকে প্রকৃত ‘আলাপ’ বলা চলে না৷
গৌরচন্দ্রিকার তাৎপর্য : খেতরির মহোৎসবের আর-একটি বৈশিষ্ট্য হইল এই যে, গৌরচন্দ্রিকা গান করিয়া কীর্তন আরম্ভ করা হইয়াছিল৷ ‘শ্রীরাধিকাভাবে মগ্ন নদীয়ার চান্দ’— এইভাবে শ্রীগৌরাঙ্গের গুণগান করিয়া কৃষ্ণরাধিকার লীলা গায়িবার পদ্ধতি সম্ভবতঃ ইহার পূর্বে আবিষ্কৃত হয় নাই৷

গৌরগুণ-গীতারম্ভে অধৈর্য সকলে৷
– ভক্তিরত্নাকর

ইহা হইতে মনে হয়, নরোত্তমদাস ঠাকুরই এই গৌরচন্দ্রিকা গাহিবার প্রথা প্রবর্তন করিলেন৷ এই সময় হইতেই কীর্তন করিবার পূর্বে মহাপ্রভুকে আকর্ষণ করিবার রীতি অবলম্বিত হয়৷ গৌরচন্দ্রিকা শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভুকে কীর্তনে আকর্ষণ করিবার রীতি অবলম্বিত হয়৷ গৌরচন্দ্রিকা শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভুকে কীর্তনে আকর্ষণ করিবার মন্ত্রস্বরূপ৷ যে লীলাগান করিতে হইবে, ‘তদুচিত’ একটি গৌরচন্দ্রিকা বা সংক্ষেপে ‘গৌরচন্দ্র’ গান করিবার রীতি উচ্চাঙ্গের কীর্তনে এখনও বর্তমান৷ এজন্য পদাবলী সাহিত্যে রাধাকৃষ্ণলীলা-বিষয়ক পদ যেরূপ অসংখ্য, গৌরাঙ্গবিষয়ক পদও সেইরূপ বহু৷ কীর্তনের প্রয়োজনেই গৌরচন্দ্রিকার পদ রচিত হইয়াছে৷ প্রণালীবদ্ধ কীর্তনে গৌরচন্দ্রিকা গীত না হইলে রাধাকৃষ্ণলীলা গান করিবার নিয়ম নাই৷ গৌরচন্দ্রকে স্মরণ না করিয়া লীলাগান করিলে অভিজ্ঞ শ্রোতা সে গান শ্রবণ করেন না৷
বৈষ্ণবেরা মনে করেন, রাধাকৃষ্ণলীলা গাহিবার ও শুনিবার অধিকারী হইতে হইলে পূর্বে গৌরচন্দ্রকে স্মরণ করিতে হয়৷ মহাপ্রভু নীলাচলে স্বরূপদামোদর পণ্ডিতের মুখে লীলাগান শুনিয়া আনন্দ পাইতেন৷ মহাপ্রভু নিজে এবং স্বরূপ উভয়েই সন্ন্যাসী; সংসারে আসক্তিশূন্য৷ জীবনের সমস্ত কামনা বাসনা জয় করিয়া তাঁহারা একান্তভাবে ভগবানের পাদপদ্মে আত্মনিবেদন করিয়াছিলেন৷ কীর্তনগায়ক ও শ্রোতা কেহই সে উচ্চাধিকার লাভ করেন নাই৷ কাজেই মহাপ্রভুকে স্মরণ করিয়া তাঁহাকে কীর্তনের আসরে আহ্বান করিয়া, তাঁহার নির্মল চরিত্র ধ্যান করিয়া রাধাকৃষ্ণলীলা গান করিলে তবেই সে বিষয়ে যে৷গ্যতা জন্মে৷ এই কারণেই হউক অথবা যাঁহার কৃপায় রাধাকৃষ্ণের যুগলোপাসনা জগতে প্রচারিত হইয়াছে তাঁহার পবিত্র নামে স্মৃতিচন্দন অর্পণ করিবার মানসেই হউক, গৌরচন্দ্রিকা না গাহিয়া কীর্তন গান করা হয় না৷
কীর্তনে গীত, বাদ্য ও নৃত্যের সমন্বয় : আরও একটি বিশেষ লক্ষ্য করিবার বিষয়, খেতরির মহোৎসবে যে কীর্তন হইল, নৃত্য তাহার একটি প্রধান অঙ্গ ছিল৷
চুতর্দিকে অসংখও লোকের নাহি অন্ত৷
নাচে মহারঙ্গে সে সকল ভাগ্যবন্ত৷৷
– ভক্তিরত্নাকর
নৃত্য, গীত ও বাদ্য এই তিন লইয়াই সংগীত, এই জন্য ইহাকে ‘তৌর্যত্রিক’ বলা হয়৷ অন্য অনেক প্রকার ভারতীয় সংগীতে গীত ও বাদ্যের সমন্বয় দেখা যায়; কখনও কখনও নৃত্য ও বাদ্যের৷ কিন্তু কীর্তনগানে এই তিনের যেরূপ সমাবেশ দেখিতে পাওয়া যায়, তাহা অন অন্যত্র সুলভ নহে৷ মহাপ্রভুর জীবনচরিতেও দেখা যায় যে তিনি পরম আবেশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কীর্তনে নৃত্য করিতেছেন৷ শ্রীবাসের অঙ্গনের এই কীর্তন নৃত্যবিলাসে সমৃদ্ধ হইত৷ এখন কিন্তু নৃত্য কীর্তনের সেরূপ অপরিহার্য অংশ নহে৷ নাম সংকীর্তনের কখনও কখনও নৃত্যের প্রাদুর্ভাব দেখা যায় বটে৷ কিন্তু উচ্চাঙ্গের লীলাকীর্তনে প্রায়ই নৃত্যের সমাবেশ থাকে না৷ কীর্তনের মূলগায়ক কখনও কখনও গানের সঙ্গে, বাদ্যের ছন্দে নৃত্যের আভাস প্রকাশ করিলেও অন্য গায়কেরা এবং শ্রোতারা সে নৃ্ত্যে যোগদান করিতেছেন এরূপ প্রায়ই দেখা যায় না৷
কোনও কোনও কীর্তনগায়ক গৌরচন্দ্রিকা গান করিবার সময় দলসহ দণ্ডায়মান হইয়া কীর্তন করেন ও গৌরচন্দ্রিকা নির্বাহ করিয়া উপবেশন করেন এবং পরবর্তী অংশ বসিয়াই পরিসমাপ্ত করেন৷ শ্রোতার সুবিধার জন্য গায়ককে কখনও কখনও দাঁড়াইতেও দেখা যায় এবং তাঁহার তখনকার অঙ্গভঙ্গী কখনও কখনও নৃত্যেরই অনুরূপ হওয়া বিচিত্র নহে৷ খেতরির মহোৎসবে সম্ভবতঃ নরোত্তমদাস দণ্ডায়মান হইয়া কীর্তন করিয়াছিলেন এবং তদবস্থায় নৃত্যের সুযোগও যথেষ্ট ঘটিয়াছিল৷ যে কীর্তনে গায়ক এবং শ্রোতা নৃত্যের আবেশে মাতিয়া উঠেন তাহাকে ‘উদ্দণ্ড কীর্তন বলে৷