গোকুল নগরে ইন্দ্র পূজা করে

গোকুল নগরে ইন্দ্র পূজা করে
দেখি আইল যতেক নারী।
নগর ভিতরে মহাকলরব
নাগর হইল পসারী।।
দোকান দাকান মেলিলা তখন
দেখিয়া গাহকীগণ।
কহয়ে পশারী ”বহুদ্রব্য আছে
যে চাহে নিতে যে ধন।।
মুকুতা প্রবাল মণিময় মাল
পোতিক মাণিক যত।
বহুদিন মনে আনিল যতনে
তোমাদের অভিমত।।”
খন্তিকা পুঁতিয়া মুকুতা ঝুলায়া
কহয়ে গাহকী আগে।
শুনি গাহকিনী আসিয়া আপনি
দোকান নিকটে লাগে।।
সুমধুর বাণী বলে সে দোকানী
কিসের লইবে ছড়া।
মুকুতার মাল লইবেযে ভাল
কড়ি যে লাগিবে বাড়া।।
শুনি নারীগণ বলয়ে বচন
গাহকী নহিয়ে মোরা।
”কিবা ভাগ্য মেনে দেখেছি জনমে
এমন ধন যে তোরা।।”
যুবতী রসাল নিল এক মাল
দিল এক সখী গলে।
পরিমাণ হল আনন্দ বাড়িল
কতেক লইবে বলে।।
আর এক জনে সাধ করি মনে
লইল সোনার সূচ।
লই চলি যায় বেতন না দেয়
পসারী ধরিল কুচ।।
ফেরা ফিরি করে কুচ নাহি ছাড়ে
কহে মূল্য দেহ মোর।
সঘন বদন করয়ে চুম্বন
এমতি কাজ যে তোর।।
কাড়া কাড়ি ঘন না মানে বারণ
অরাজক হল পারা।
যাহার যে বন কাটে সেই জন
রক্ষক হইবে কারা।।
রজক সঙ্গতি চণ্ডীদাস গীতি
রচিল আনন্দ বটে।
দোকান দাকান হৈল সমাধান
সকলি গেল যে লুটে।।


অন্তঃকথন:
এটি কৃষ্ণের স্বয়ং দৌত্যের পদ। এই পদে আমরা কৃষ্ণকে দেখব দোকানী বেশে। গোকুল নগরে হবে ইন্দ্রপুজা। সকল নারীগণ এসেছেন পুজো দিতে। নগরের ভিতরে তখন সে এক মহাকলরব। নাগর কানাই দোকানী বেশে বসলেন পসার সাজিয়ে। তখন ক্রেতাদের দেখে মেলে ধরলেন সকল পসার। পসারি বললে, ‘বহু দ্রব্য আছে। মুক্তা, প্রবাল, মণিময়মালা, পোতিক, মানিক - যে যেটা নিতে চাও। তোমাদের অভিমত অনুযায়ী বহু যত্নে বহুদিনের সংগ্রহে এ সকল এনেছি’। খন্তিকা পুঁতে তাতে মুক্তার মালা ঝুলিয়ে দোকানী ক্রেতাদের সামনে একথা বলল। তা শুনে গ্রাহক নারী নিজেই এগিয়ে এল দোকানের কাছে। সুমধুর স্বরে দোকানী জানতে চাইল, ‘কিসের মালা নেবে? ভালো মুক্তার মালা পাবে, তবে মূল্য লাগবে একটু বেশি’। সে কথা শুনে মেয়েরা বলল, ‘আমরা খরিদ্দার নই গো’! ‘তোমরা যে প্রত্যেকেই এক একটি মহামূল্যবান ধন, কোন সে ভাগ্যে এ জন্মে যে তোমাদের সাক্ষাৎ পেলাম!’ রসবতী এক যুবতী একটি মালা নিয়ে সখীর গলায় পরিয়ে দিল। ঠিক মাপের হল সে মালা। যুবতী আনন্দিত হয়ে কয়েকটি নিতে চাইল। আর একজন মনের সাধপূরণের আশায় নিল একটি সোনার সূঁচ। মূল্য না দিয়েই সে চলে যেতে উদ্যত হলে, তখনি পসারি তাকে ধরে ফেলল। অনেক ফেরাফেরিতেও পসারি তাকে ছাড়ল না। বললে,‘ আমায় আগে যথাযথ দাম দাও’। সঘনে তার বদন চুম্বন করল। নিষেধ না মেনে এই কড়াকাড়ির মাঝে সৃষ্টি হল অরাজক অবস্থা। যার বন, সেই যদি কাটে, তাহলে কেইবা রক্ষক হবে। রজকিনী সাহচর্যে চণ্ডীদাসের গান সঞ্চার করল আনন্দ। সকল লুঠের মাঝে দোকানের পর্ব শেষ হল।
পদকর্তা:চণ্ডীদাস
রাগ:অজ্ঞাত
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:মুনমুন ঘোষ

keyboard_arrow_right
সন্ধিনী
অভিসার আক্ষেপানুরাগ কুঞ্জভঙ্গ খণ্ডিতা গীতগোবিন্দ গোষ্ঠলীলা দানলীলা দূতী ধেনুবৎস শিশুহরণ নৌকাখন্ড পূর্বরাগ বংশীখণ্ড বিপরীত বিলাস বিরহ বৃন্দাবনখন্ড ব্রজবুলি বড়াই বড়াই-বচন--শ্রীরাধার প্রতি মাথুর মাধবের প্রতি দূতী মান মানভঞ্জন মিলন রাধাকৃষ্ণসম্পর্ক হীন পরকীয়া প্রেমের পদ রাধা বিরহ রাধিকার মান লখিমাদেবি শিবসিংহ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন শ্রীকৃষ্ণের উক্তি শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগ শ্রীকৃষ্ণের মান শ্রীকৃষ্ণের স্বয়ংদৌত্য শ্রীগুরু-কৃপার দান শ্রীরাধা ও বড়াইয়ের উক্তি-প্রত্যুক্তি শ্রীরাধার উক্তি শ্রীরাধার প্রতি শ্রীরাধার প্রতি দূতী শ্রীরাধার রূপবর্ণনা শ্রীরাধিকার পূর্বরাগ শ্রীরাধিকার প্রেমোচ্ছ্বাস সখীতত্ত্ব সখীর উক্তি সামোদ-দামোদরঃ হর-গৌরী বিষয়ক পদ