যমুনা কিনারে

জতনে জতেক ধন পাপে বটোরলুঁ

জতনে জতেক ধন পাপে বটোরলুঁ
মেলি পরিজনে খায়।
মরনক বেরি হেরি কোঈ ন পূছত
করম সঙ্গ চলি জায়।।
এ হরি বন্দোঁ তুঅ পদ নায়।
তুঅ পদ পরিহরি পাপ-পয়োনিধি
পার হব কৌন উপায়।।
জাবত জনম হম তুঅ পদ ন সেবিলুঁ
জুবতী মতিময় মেলি।
অমৃত তেজি কিয়ে হলাহল পীয়লুঁ
সম্পদে বিপদহি ভেলি।।
ভনহুঁ বিদ্যাপতি লেহ মনে গনি
কহিলে কি জানি হয়ে কাজে।
সাঁঝক বেরি সেব কোই মাগই
হেরইতে তুঅ পদ লাজে।।

অন্তঃকথন:
এই পদ প্রার্থনা পর্যায়ের পদ। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে কবির উপলব্ধি ঘটেছে সারা জীবন ধরে তিনি বৃথা কালাতিপাতই করেছেন কেবল, হরি ভজন সাধন আরাধন কিছুই করেননি। আজ শেষ বেলায় পারানির করি কিছুই নেই যা দিয়ে তিনি মৃত্যুনদী পার হবেন। তাই কবি মাধবের চরণে শরণ প্রার্থনা করছেন। কবি বলছেন, সারা জীবন ধরে পাপ কর্ম করে যত্নে যত ধন সঞ্চয় করলাম আজ দেখি সবই পরিজনেরা মিলে ভোগ করছে, অথচ মৃত্যু কালে কেউ খবরও নেয় না। আমার বলতে কিছুই নেই, কিছুই আমি সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবো না, কেবল কর্মই আমার সঙ্গে যাবে। হে হরি তোমার পদরূপ নৌকার বন্দনা করি, তোমার সে পুণ্য পদ-তরী ছাড়া আর কি ভাবেই বা আমি এই পাপ সমুদ্র পার হব! জন্মাবধি কোনদিন আমি তোমার পদসেবা করিনি! যুবতী চিন্তা আমার মতি আচ্ছন্ন করে রেখেছিল! হায় অমৃত ত্যাগ করে আমি কি হলাহল পান করলাম! আমার অর্জিত সম্পদই আমার বিপদ হল! এর পর কবি আক্ষেপ করে বলছেন, কর্ম না করে শুধু কথায় কি আর কাজ হয়! সন্ধ্যেবেলায় কেউ কি সেবা করার কাজ প্রার্থনা করে? অর্থাৎ সারাজীবন তোমায় ভুলে থেকে এখন শেষ বেলায় তোমার চরণ সেবা করতে চাইলে সে প্রার্থনার কি কোন মূল্য আছে! তোমার চরণ যা আমি এতকাল অবহেলা করে এসেছি আজ সেদিকে তাকাতেও আমার লজ্জা করছে।

পদকর্তা:বিদ্যাপতি
রাগ:অজ্ঞাত
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:দেবহূতি সরকার

সন্ধিনী