ঝুলনযাত্রা কীর্ত্তন

শ্রীশ্রীরাধারমণো জয়তি

‘‘শ্রীগুরু-প্রেমানন্দে নিতাই-গৌরহরিবোল’’
‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’

(১)

জয়জয়ন্তী

‘‘দেখ ত ঝুলত, গৌরচন্দ্র, অপরূপ দ্বিজমনিয়া।
বিধির অবধি, রূপনিরুপণ, কষিত কাঞ্চন জিনিয়া।।
ঝুলাওত কত, ভকতবৃন্দ, গৌরচন্দ্র বেড়িয়া।
আনন্দে সঘন, জয় জয় রব, উথলে নগর নদীয়া।।
নয়ন লোক, ধায় একমুখ, হরি হরি ধ্বনি শুনিয়া।।
ধন্য কলিযুগ, গোরা অবতার, সুরধুনী ধনি ধনিয়া।
গোরাচাঁদ বিনে, আন নাহি মনে, বাসুঘোষ কহে জানিয়া।।’’

(২)

ইমন বা কামোদ

‘‘দেখ দেখ ঝুলত গৌর কিশোর।
সুরধুনীতীরে, গদাধর সঙ্গহি, চাঁদনি রজনী উজোর।।
শাঙন মাহ, গগনে ঘন গরজন, লসতহি দামিনী মাল।
বরিখত বারি, পবন মৃদুমন্দহি, গরজ তরঙ্গ বিশাল।।
বিবিধ সুরঙ্গ, রচতহি দোলা, খচিত কুসুমচয় দাম।
বটতরুডালে, ডোর করি বন্ধন, মালতিগুচ্ছ সুঠান।।
বৈঠল গৌর বামে, প্রিয় গদাধর, ঝুলন-রঙ্গ-রসে ভাস।
সহচর মেলি, দোলায়ত মৃদু মৃদু্, দোলা ধরিয়া দ্বৌ পাশ।।
বাজত মৃদঙ্গ, পূরবরস গাওত, সং কীর্ত্তন সুররঙ্গ।
শ্রীনিত্যানন্দ, শান্তিপুরনায়ক, হরিদাস শ্রীনিবাস সঙ্গ।
পুরুষোত্তম, সঞ্জয় আদি বরখত, কুঙ্কুম চন্দন ফুল।
উদ্ধবদাস, নয়নে কব হেরব, গৌর হোয়ব অনুকূল।।’’

(৩)

কামোদ দশকুশি

দেখ দেখ গৌরচন্দ্র বড় রঙ্গী
ঝুলত যুগল, কিশোরক যৈছন, চলত সোই করি ভঙ্গী।।
রচত শিঙ্গার, ঝুলন সুখ হোয়ব, মনহি ভেল উপনীত।
যৈছন সহচর, গাওত আনন্দে, গৌরপহুঁ মনোনীত।।
হেরি গদাধর, লহুপহু বোলত, মনমাহা কিয়ে ভেল রঙ্গ।
আজু হাম তুয়া সনে, ঝুলন বিলসব, সহচরগণ করি সঙ্গ।।
ঐছে বিলাস, গোরাপহুঁ বিলসয়ে, পূরব প্রেমরসে ভোর।
কহ শিবরাম, মনহি সুখ ঐছন, কোই করব অব ওর।।

(৪)

মল্লার বা ইমন

ঝুলত রসময় গৌরকিশোর।
সুরধুনীতীরে, তুঙ্গতরুতলহি, বিরচিত নিরুপম ললিত হিণ্ডোর।।
পরিকর সুঘন, ঝুলায়ত লঘুলঘু, গায়ত সরসতালরস মাতি।
উচরত রুচির, বচন ধিক ধিক ধিনি,বায়ত মধুর যন্ত্র কত ভাতি।।
নদীয়াপুর-নর-নারীনিকর ঘর, তেজি চলত ধৃতি ধরই না পারি।
লোচন চপল, নিমিখ নাহি সঞ্চরু, হাসমিলিত বিধুবদন নেহারি।।
সুরগণ গগনে, মগন গণ সহ, বরষত কুসুম করত জয় কারি।
নরহরি প্রাণনাথ, গুণে উনমত, ভণত নিয়ত গুণ গণই না পারি।।

(৫)

কামোদ
গোরাপহুঁ দোলে হিণ্ডোলেতে। কতসুখ সে ভাব ভাবিতে।।
গদাধর মুখ পানে চায়।পুলক ভরয়ে হেমগায়।।
পারিষদ উলসিত চিতে। নামাইয়া হিণ্ডোলা হইতে।।
বসাইতে নীপতরুমূলে।নিতাই ভাসয়ে প্রেমজলে।।
অদ্বৈত করয়ে হুহুঙ্কার।বাঢ়ে মহাসুখের পাথার।
শ্রীবাসাদি যতন করিয়া।দিল নানা দ্রব্য সাজাইয়া।।
সভার পরাণ গোরারায়।ভুঞ্জিব কি সভারে ভুঞ্জায়।।
যে কৌতুক কহিতে কি পারি। অবশেষে ভুঞ্জে নরহরি।।

(৬)

মল্লার

নবঘন কানন শোভন কুঞ্জ। বিকশিত কুসুম মধুকর গুঞ্জ।।
নবনব পল্লবে শোভিত ডাল। শারী শুক পিক গাওয়ে রসাল।।
তঁহি বনি অপরূপ রতন হিন্দোল। তা’ পর বৈঠলি কিশোরী কিশোর।
ব্রজরমণীগণ দেওত ঝকোর। জাগরত জানি ধনি করতহিঁ কোর।
কত কত উপজল রস পরসঙ্গ। গোবিন্দদাস তঁহি দেখত রঙ্গ।।

(৭)

মল্লার

দেখ সখি ঝুলত ত যুগলকিশোর। নীলমণি জড়াওল কাঞ্চন জোর।।
ললিতা বিশাখা সখী ঝুলাওত সুখে। আনন্দে মগন হেরি দোঁহে দোঁহা মুখে।
গরজত গগনে সঘনে ঘন ঘোর। রঙ্গিণী সঙ্গিনী ঘেরত চৌওর।।
বিবিধ কুসুমে সবে রচিত হিন্দোলা। দোলায় যুগল সখী আনন্দে বিভোলা।
ঝুলাওত সখীগণ করতালি দিয়া। সুরদনী কহে পাছে গিরয়ে বঁধুয়া।
বিগলিত দুকুল উদিত স্বেদ বিন্দু।অমিয়া ঝরয়ে যেন দুহুঁ মুখ ইন্দু।
হেরি সব সখীগণ দোঁহাকার শ্রম। চামর বীজন লেই করয়ে সেবন।
ভ্রমর কোকিল সব বসি তরুডালে। জয়জয় রাধাকৃষ্ণ রাধাকৃষ্ণ বলে।
কহে জগন্নাথ কবে হবে শুভদিনে। সখাসহ দোঁহাকারে হেরিব বিপিনে।।

(৮)

মল্লার

দেখ সখি ঝুলত রাধাশ্যাম।
বিবিধ যন্ত্র, সুমেলি সুস্বর, তান মান সুঠাম।।
আষাঢ় গত পুন, মাহ শাঙন, সুখদ যমুনা তীর।
চাঁদনী রজনী, সুখময় সুখোদয়, মন্দমন্দ মলয় সমীর।।
পরিপূর্ণ সরোবর, প্রফুল্লিত তরুবর, গগনহিঁ গরজে গভীর।
ঘোর ঘটা ঘন, দামিনী দমকত, বিন্দু বরিখত নীর।।
তঁহি কল্পদ্রুম, তল-ছায়া সুশীতল, রচিত রতন হিণ্ডোর।
ঝুলয়ে তছুপর, গোরী’শ্যামর, ঝুলায়ে সখী দুই ওর।।
তড়িত ঘন জনু, দোলয়ে দুঁহু তনু, অধরে মৃদুমৃদু হাস।
বদন হেমনীল, কমল বিকশিত, স্বেদবিন্দু পরকাশ।।
ছরম হেরি কোই, বীজন বীজই, কর্পূর তাম্বূল যোগায়।
সুরট মেঘ, মল্লার গাওত, মোহন মৃদঙ্গ বাজায়।
কুসুমচয় বর,হার লটকত, ভ্রমর গুণ গুণ বোল।
হংস সারস, সুস্বর শবদিত, দাদুরী ঘন ঘন বোল।
দুঁহুভালে চন্দন, চাঁদ চমকিত, তিলক রচিত কপোল।
চঞ্চল মুকুট, সুচারু চন্দ্রিক, পীঠ’পরি বেণী দোল।।
দুঁহু শ্রবণে কুণ্ডল, চপল ঝলমল, হৃদয়ে শশিমণি হার।।
কোই মসৃণ ঘুসৃণ, সুগন্ধি ছিরকত, শ্যামগোরী-অঙ্গ হেরি।
সখীভাবে ইঙ্গিতহিঁ, দাস উদ্ধব, করত, কুসুমকি ঢেরি।।

(৯)

কল্যাণী

ঝুলত শ্যাম, গোরী বাম, আনন্দ-রঙ্গে মাতিয়া।
ঈষত হসিত রভস কেলি, ঝুলায়ত সব সখিনী মেলি, গাওত কত ভাতিয়া।।
হেমমণিযুত বরহিঁডোর, রচিত কুসুম-গন্ধে ভোর, পড়ত ভ্রমর পাঁতিয়া।
নবীনলতায় জড়িত ডাল, বৃন্দাবিপিন শোভিত ভাল, চাঁদ উজোর রাতিয়া।
নবঘন তনু দোলয়ে শ্যাম, রাইসঙ্গে ঝুলত বাম, তড়িত জড়িত কাঁতিয়া।
তারামণি চন্দ্রহার, ঝুলিত দোলিত গলে দোঁহার, হিলন দুঁহুক গাতিয়া।
ধি ধি কট ধিয়া তাথৈয়া বোল, বাজে মৃদঙ্গ মোহন রোল, তিনিনা তিনিনা তাঁতিয়া।
ভেদ পবন গ্রামপুর, ঘোর মরদ জীল সুর, বরণ নাহিক জাতিয়া।।
মণি আভরণ কিঙ্কিণী বঙ্ক, ঝুলনে বাজয়ে ঝুনুর ঝঙ্ক, ঝন ঝন ঝন ঝাঁতিয়া।
রাধামোহন-চরণে আশ, কেবল ভরসা উদ্ধব দাস, রচিত পূরিত ছাতিয়া।।

(১0)

আজু রাধা শ্যাম-সঙ্গেতে ঝুলে।
মণিময় নব, হিন্দোলা সাজাইয়া, বংশীবট-তট কালিন্দীকূলে।।
ললিতাদি রঙ্গে, ভঙ্গী করি বেগে, ঝুলায়ই দুঁহু বদন চাহিয়া।
রসবতী ভুজ,পসারি নাগরে, ধরে ভয়ে অতি আকুল হৈয়া।।
শ্যাম-অঙ্গে চারু, চিবুক পরশি, চুম্ব দেই ঘন মনের সুখে।
তাহা দেখি সখী, হাসি রসে ভাসি, বসন অঞ্চল ঝাঁপিয়া মুখে।।
কৌতুক বচন, কহি বৃন্দাদেবী, ঝুলায়ই পুনঃ যতনে ধীরে।
কি আনন্দ বৃন্দা-বনে নরহরি, জয় জয় দিয়া রঙ্গেতে ফিরে।।

(১১)

ধানশী

ঝুলনা হইতে, নামিলা তুরিতে রসবতী রসরাজ।
রতন আসনে, বসিলা যতনে, রতন মন্দির মাঝ।।
সুচামর লই, বীজন বীজই, সেবাপরায়ণা সখী।
সুবাসিত জলে, বদন পাখালে, বসনে মোছাঞা দেখি।।
থারি ভরি কোই, বিবিধ মিঠাই, ধরি দুহুঁ সম্মুখে।
সখীগণ সঞে, কতহুঁ কৌতুকে, ভোজন করিল সুখে।
তাম্বুল সাজাঞা, কোন সখী লঞা, দোঁহার বদনে দিল।
এ কেশ কুসুমে, আপাদ বদনে, নিছিয়া নিছিয়া নিল।।
কুসুম তলপে, অলপে অলপে, বসিলা রাধিকা শ্যাম।
অলসে ঈষত, নয়ন মুদিত, হেরিয়া মোহিত কাম।।
দেখি সখীগণে, কতই যতনে, শুতায়ল দুহুঁ তায়।
সখীর ইঙ্গিতে, চরণ সেবিতে, এ দাস বৈষ্ণব ধায়।।



অভিসার আক্ষেপানুরাগ কুঞ্জভঙ্গ খণ্ডিতা গীতগোবিন্দ গোষ্ঠলীলা দানলীলা দূতী ধেনুবৎস শিশুহরণ নৌকাখন্ড পূর্বরাগ বংশীখণ্ড বিপরীত বিলাস বিরহ বৃন্দাবনখন্ড ব্রজবুলি বড়াই বড়াই-বচন--শ্রীরাধার প্রতি মাথুর মাধবের প্রতি দূতী মান মানভঞ্জন মিলন রাধাকৃষ্ণসম্পর্ক হীন পরকীয়া প্রেমের পদ রাধা বিরহ রাধিকার মান লখিমাদেবি শিবসিংহ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন শ্রীকৃষ্ণের উক্তি শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগ শ্রীকৃষ্ণের মান শ্রীকৃষ্ণের স্বয়ংদৌত্য শ্রীগুরু-কৃপার দান শ্রীরাধা ও বড়াইয়ের উক্তি-প্রত্যুক্তি শ্রীরাধার উক্তি শ্রীরাধার প্রতি শ্রীরাধার প্রতি দূতী শ্রীরাধার রূপবর্ণনা শ্রীরাধিকার পূর্বরাগ শ্রীরাধিকার প্রেমোচ্ছ্বাস সখীতত্ত্ব সখীর উক্তি সামোদ-দামোদরঃ হর-গৌরী বিষয়ক পদ