যমুনা কিনারে

না যাইও যমুনার জলে তরুয়া কদম্বমূলে

না যাইও যমুনার জলে তরুয়া কদম্বমূলে
চিকণকালা করিয়াছে থানা।
নবজলধর রূপ মুনির মন মোহে গো,
তেঁই জলে যেতে করি মানা।।
ত্রিভঙ্গ ভঙ্গিমা ভাতি রহিয়া মদন জিতি
চাঁদ জিতি মলয়জ ভালে।
ভুবনবিজয়ী মালা মেঘে সৌদামিনী কলা
শোভা করে শ্যাম-চাঁদের গলে।।
নয়ান কটাক্ষ ছাঁদে হিয়ার ভিতরে হানে
আর তাহে মুরলীর তান।
শুনিয়া মুরলীর গান ধৈরজ না ধরে প্রাণ
নিরখিলে হারাবি পরাণ।।
কানড়া কুসুম যিনি শ্যামের বদনখানি
হেরিবে নয়ানের কোণে যে।
দ্বিজ চণ্ডীদাস ভণে চাহিয়া গোবিন্দ পানে
পরাণে বাঁচিবে সখি কে।।

অন্তঃকথন:
এই পদটি শ্রীরাধার প্রতি সখীর উক্তিতে বর্ণিত। যেও না গো রাই যমুনায় জল আনতে। সেখানে কদম্ব তরুমূলে নিত্য বিহার করে চিকণ কালো ঘনশ্যাম। নিত্য নতুন জলধরের মতো তার রূপ। কঠিন তপস্যায় সফল কত শত মুনি যে তার রূপে মোহগ্রস্ত হয়! তাই তো তোমাকে রাই জল আনতে যেতে মানা করি। বড়ই অপরূপ তার ত্রিভঙ্গ ভঙ্গিমা কান্তি। কন্দর্পের রূপ সে প্রভার কাছে ম্লান দেখায়। আর চাঁদের চেয়ে অধিক সৌম্য তার ললাটের চন্দন। শ্যামচাঁদের কন্ঠে শোভা পায় মনমোহিনী মালা। কৃষ্ণমেঘের বক্ষজুড়ে যেমন সৌদামিনীর বিস্তার কলা, তেমনি যে শ্যামচাঁদের কন্ঠে শোভা পায় ভুবনবিজয়ী মনমোহিনী পুষ্পমাল্যখানি। তার আড় চোখের চাহনির মধুময় শ্রী, একেবারে যে হৃদয়ের গোপন কোমল স্তরে আঘাত করে গো। তার উপর আবার যদি বাজায় মোহনমুরলী! মুরলীর সেই গান-তান শুনে প্রাণে যে আর ধৈর্য ধরে না, সই। কানাড়া কুসুমের চেয়েও মনোরম শ্যামের মুখখানি। আরও অপরূপ তার কটাক্ষ চাহনি। দ্বিজ চণ্ডীদাস গোবিন্দের দিকে চেয়ে বলেন, ‘সখী, কে আর প্রাণে বাঁচবে!’

পদকর্তা:চণ্ডীদাস
রাগ:সুহই
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:মুনমুন ঘোষ

সন্ধিনী