যমুনা কিনারে

সবহু সখি পরবোধি কামিনি

সবহু সখি পরবোধি কামিনি
আনি দেলি পিয়া পাস।
জনু বাঁধি ব্যাধা বিপিন সয়ঁ মৃগ
তেজ তীখ নিসাস।।
বৈঠলি সয়ন সমীপে সুবদনি
জতনে সমূহি ন হোই।
ভেল মানস বুলএ দহোদিস
দেল মনমথে ফোই।।
সকল গাত দুকূল দৃঢ় অতি
কতহু নহি অবকাস।
পানি পরস পরান পরিহর
পূরতি কী রতি আস।।
কঠিন কাম কঠোর কামিনি
মান নহি পরবোধ।
নিবিড় নীবিবন্ধ কঠিন কঞ্চুক
অধরে অধিক নিরোধ।।
করব কী পরকার আবে হমে
কিছু ন পর অবধারি।
কোপে কৌসলে করএ চাহিঅ
হঠহি হল হিঅ হারি।।
দিবস চারি গমাএ মাধব
করব রতি সমধান।
বড়হিক বড় হোয় ধৈরজ
সিংঘ ভূপতি ভান।।

অন্তঃকথন:
এ এক অভিসার রাতের বর্ণনা যখন সখীরা শ্রীমতীকে মাধবের কাছে এনে তো দিয়েছেন কিন্তু শ্রীমতী মন মিলনে অনিচ্ছুক, তিনি কাঠিন্যে বেঁধে রেখেছেন নিজেকে। এমন রাতে মাধবের বিচলিত চিত্তের ছবি আঁকছেন বিদ্যাপতি মাধবেরই ভাষায়। মাধব বলছেন, সখীসকল সান্তনা দিয়ে প্রবোধ দিয়ে অনেক বুঝিয়ে রমণীকে প্রিয়তমের কাছে এনে তো দিল কিন্তু ব্যাধ বন থেকে হরিণকে বেঁধে আনলে সে যেমন দীর্ঘ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে এও তো তেমনই দীর্ঘ নিঃশ্বাস ত্যাগ করল! শয্যার সমীপে সুন্দরী বসল তো ঠিকই কিন্তু আদর করে বহু যত্নে ডাকলেও তো সে আমার দিকে ফেরে না। মনে হল যেন বন্ধন খুলে দিলে তবেই মদন দশদিকে ভ্রমণ করবে। রাইয়ের সকল অঙ্গ ঘিরে বস্ত্র সুদৃঢ়, কোথাও এতটুকু স্পর্শের অবকাশ নেই। করস্পর্শেই মনে হচ্ছে যেন জীবন ত্যাগ করবে, রতি-অভিলাষ কি আজ আর সফল হবে?! আমার হৃদয়ে কঠিন কাম অথচ রমণী তদপেক্ষাও কঠোরা, প্রবোধ মানে না, কোন কথাই শুনতে চায় না। নীবিবন্ধ সুদৃঢ়, বক্ষে কঞ্চুক কঠিন আর অধরে প্রতিরোধ তো আরো বেশি! কি যে উপায় করি এখন আমি তার কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। ছল করে রাগ দেখাবো ভাবি কিন্তু বল প্রদর্শন করতেও তো ইচ্ছে হয় না। মাধবের এই দ্বিধাকরুণ অবস্থা দেখে নরপতি শিবসিংহ উপদেশ দিচ্ছেন, হে মাধব উতলা হয়ো না, কদিন গেলে, রাধিকার মন প্রস্তুত হলে তারপর না হয় রতি সমাধা কোরো। ধৈর্য ধরো মাধব, বড় মানুষেরই ধৈর্য্য বড় হয়!

পদকর্তা:বিদ্যাপতি
রাগ:অজ্ঞাত
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:দেবহূতি সরকার

সন্ধিনী