যমুনা কিনারে

নয়ন কাজর তুঅ অধর চোরাওল

নয়ন কাজর তুঅ অধর চোরাওল
নয়নে চোরাওল রাগে।
বদন বসন অব লুকাওব কতিখন
তিলাএক কৈতব লাগে।।
মাধব কি আবে বোলঅব সতাহে।
জাহি রমণী সঙ্গে রয়নি গমওলহ
ততহি পলটি পুনু জাহে।।
সগর গোকুল জিনি সে পুনমতি ধনি
কি কহব তাহেরি ভাগে।
পদযাবক রস জাহেরি হৃদয় অছ
আও কি কহব অনুরাগে।।

অন্তঃকথন:
অন্য নারীর সঙ্গে রাত্রি যাপন করে মাধব এসেছেন রাধারানীর কাছে! শ্রীহরির সর্ব অঙ্গে সহবাসচিহ্ন! রাধিকার হৃদয় অভিমানে জর্জরিত, ক্রোধে-ঈর্ষায় খণ্ডিত! খণ্ডিতা শ্রীমতী অবিশ্বাসী মাধবকে তাঁর অন্তরজ্বালায় বাক্যবাণে বিদ্ধ করছেন! শ্রীমতী বলছেন, মাধব তোমার অধরে কাজল আর নয়নে রক্তিমা! যার সঙ্গে প্রণয়যাপন করে এলে তুমি তার নয়নের কাজল তোমার অধর চুরি করে নিয়েছে আর তার অধর রাগ চুরি করেছে তোমার নয়ন, রাত্রি জাগরণে আরক্ত তোমার নয়ন! একি আর গোপন থাকে বনমালী! তোমার বদন ও বসন তুমি কতক্ষণ লুকিয়ে রাখবে? তোমার মুখমণ্ডল যে সেই অপরার নয়নকজ্জলে আর চুম্বনচিহ্নে চিত্রিত, আর বসন যে তোমার তার সঙ্গে বদল হয়ে গিয়েছে! তোমার কপটতা ধরা পড়তে তিলমাত্র সময় লাগে! হা মাধব, এখন আর তুমি আমায় কি সত্য কথা বলবে? অভিমানদগ্ধা রাধিকা বলছেন, এখন আর আমার কাছে এসে কি হবে? যার সঙ্গে রাত্রি যাপন করে এলে তার কাছেই ফিরে যাও তুমি! হায়! সে নারীর ভাগ্যের কথা কি আর বলব! সকল গোকুল জয় করেছে সেই পুণ্যবতী ধনী! যার পদ অলক্তকে তোমার হৃদয় রাঙা মাধব সেই মহাভাগ্যবতীর অনুরাগের কথাই বা আর আমি কি বলব! মাধবের প্রতি অপরিসীম অভিমান, আর যে নারীর জন্য মাধব তাঁকে ভুলেছেন তার প্রতি ঈর্ষা শ্রীমতীর জবানিতে এই পদে হৃদয়স্পর্শী হয়ে উঠেছে! পদকর্তা রূপে বিদ্যাপতির সেখানেই জয়!

পদকর্তা:বিদ্যাপতি
রাগ:অজ্ঞাত
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:দেবহূতি সরকার

সন্ধিনী