চলিলা বৃষ-ভানুসুতা গহনে।
ব্রজ-ভূপতি-নন্দন ভাবি মনে।।
অভিসার সুখার্ণব মগ্ন মনে।
মদমত্ত গজেন্দ্রবধুগমনে।।
মুরলী-ধর-দর্শন-আশ-সুখে।
নাহি জানত পন্থ-পয়ান দুখে।।
কুলকণ্টক লাগত পদ্ম-পদে।
গণয়ে নাহি যে সব প্রেম-মদে।।
চলিতে চলিতে তুলিতে চরণে।
মণি নূপুরনাদ করে সঘনে।।
চুটুটুকি রুনু রুনু রুনু গরজে।
চটকাবলি যা শুনি লাজ ভজে।।
কটিতে রসনা শুনি নাদ করে।
শুনি সে ধ্বনি সারস দর্প হরে।।
ঘন দোলত হার উরোজপুটে।
নিরখি রজনিকর-গর্ব্ব টুটে।।
বড় চম্পক বেণি মাথে দুলিছে।
জনু কাল ফণি রতনে গিলিছে।।
অতি মোহন সৌরভমত্ত মনে।
ভ্রমরা-ভ্রমরি পড়িছে বদনে।।
তছু বারণ লাগি সরোজ ধরি।
বহুবার ঘুরায়ত যত্ন করি।।
কর-পঙ্কজ চালই যে সময়ে।
কর-কঙ্কণ দিব্য ধ্বনি করয়ে।।
হতেছে বহু ভাব প্রকাশ চিতে।
নাহি পারত পণ্ডিত তা কহিতে।।
কভু ভাবই নাগর কাছ গিয়া।
দরশাইব আনন কী করিয়া।।
দিঠি মীলব কি করি লাজ হরি।
মুখ দেখিব তার কিরূপ করি।।
ধরয়ে যদি নাগর মোর করে।
ছুঁওনা ছুঁওনা কব লাজ ভরে।।
করিয়া হঠ সে যদি জোর করে।
ধরিব অমনি ললিতার করে।।
কহিলেই কথা সুবলের সখা।
করিব যে কিয়ে তাহা না যায় লেখা।।
যদি কুঞ্জঘরে চলয়ে লইয়া।
তবহি কব তার করে ধরিয়া।।
মন মধ্যে ইহা কহিতে কহিতে।
রসনা রুষিয়া উঠিলা বলিতে।।
মরিহে মরি ছোড়হ যাই ঘরে।
অবলা প্রতি এ জোর কোন করে।।
ললিতা কহিছে শুনিয়া হাসিয়া।
ধনি ছাড়িও না শঠকে ধরিয়া।।
ললিতাবচনে বৃষ-ভানু-সুতা।
হইলা রাধিকাধিক লাজযুতা।।
চলিলা সকলে সুখমগ্ন মনে।
রঘুনন্দন তোটক ছন্দ ভণে।।