যমুনা কিনারে

নব কিসলঅ সয়ন সুতলি

নব কিসলঅ সয়ন সুতলি
ন বুঝ দিবস রাতী।
চাঁদ সুরুজ বিসেখ ন জানএ
চাননে মানএ সাতী।।
বিরহ অনল মনে অনুভব
পরকে কহএ ন জাঈ।।
দিবসে দিবসে খিনী বালী
চাঁদ অবথাএঁ জাঈ।।
মাধব রমনি পাউলি মোহে।
আজ ধরি মোয়ঁ আসে জিআউলি
ওতএ জানহ তোহেঁ ।।
কতহু কুসুম কতহু সৌরভ
কতহু ভর রাবে।
ইন্দিঅ দারুন জতহি হটিঅ
ততহি ততহি ধাবে।।
মদনসরে জে তনু পসাহল
রিতুপতি কে রোসে।
অপন বালভু জয়ঁ হোঅ আএত
তয়ঁ দিঅ পরক দোসে।।
ভন বিদ্যাপতি সুন তোয়ঁ জউবতি
রহহি সঙ্গ সপূনে।
কন্ত দিগন্তর জাহি ন সুমর
কী তসু রূপ কি গূনে।।

অন্তঃকথন:
রাধারানীর বিরহ করুণ অবস্থা দেখে দূতী এসেছেন মাধবের কাছে। যদি তার মুখে রাধার বৃত্তান্ত শুনে মাধবের দয়া হয়, আর পূর্ব প্রেম স্মরণ করে তিনি রাধারানীর কাছে ফিরে যান এই আশা নিয়ে দূতী বলছেন, মাধব রাধারানীর কথা কি আর বলব? নব কিশলয়ের শয্যায় শুয়ে থাকে, দিন রাতের জ্ঞান নেই, চন্দ্র সূর্যও আলাদা করতে পারে না, অমন শীতল চন্দন, সেই চন্দনের ছোঁয়াও শাস্তি মনে করে। বিরহানল হল তোমার মনের অনুভবের জিনিস, তা কি আর পরকে বলে বোঝানো যায়? আহা মেয়ে আমাদের দিনে দিনে দুর্বল হয়ে কৃষ্ণপক্ষের চাঁদের মত ক্ষীণ হয়ে গেছে। মাধব, রাইবিনোদিনী মোহগ্রস্ত, আমি এতদিন তাকে তোমার আশা দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছি, কিন্তু এর পর কি হবে তা কেবল তোমারই হাতে! কোথাও কুসুম ফুটে আছে, কোথা থেকে সৌরভ ভেসে আসছে, কোথাও বা নানা সুমধুর কলতান কুহুতানে ভরে আছে। দারুণ ইন্দ্রিয়, যেখানে নিষেধ করা হয় সেখানে ধাবিত হয়। এমন সুঘ্রাণ, সুস্বর এড়িয়ে থাকলে মনকে স্থির রাখা যায়, কিন্তু ইন্দ্রিয় তো বাধা মানে না, ঐদিকেই ছুটে চলে! ঋতুরাজ বসন্তের রোষে মদনের শর শ্রীমতীর তনু আচ্ছন্ন করলো। হে কানাই, বল্লভ যদি অধীনে থাকে তবুও লোকে নানা কথা বলতে ছাড়ে না, আর এখন তুমিও তো তার থেকে মুখ ফিরিয়েছো, আনলোকে তাকে কত যন্ত্রণা দিচ্ছে ভেবে দেখো! বিদ্যাপতি বলছেন, হে যুবতী শোনো, বহু পুণ্যফলে বল্লভের সঙ্গলাভ হয়। যার কান্ত দিগন্তরে থাকলে আর তাকে মনে করে না তার রূপেই বা কি লাভ আর গুণেই বা কি ফল?

পদকর্তা:বিদ্যাপতি
রাগ:অজ্ঞাত
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:দেবহূতি সরকার

সন্ধিনী