যমুনা কিনারে

নিশি অন্ধিআরী তাহাত কেমনে নারী

নিশি অন্ধিআরী তাহাত কেমনে নারী।
জিএ সে জাহার পাসত পুরুষ নাহী।। আল ।।
মোরে কি না ভয়িঞাঁ গেল বড়ায়ি নাএ।
বিরহে বিকলী খোঁজো মোঁ নান্দের পোএ।।
নিশি সপন দেখিলোঁ কাহ্ন কোলে করি স

চিআয়িঞাঁ চাহোঁ নাহিক বাল গোপালে।
এ মোর যৌবন ভার সকল ভৈল আসার
আনল সরণ হৈবে দূতা রে।।
যে ডালে করো মো ভরে সে ডাল ভাঙ্গিঞাঁ পড়ে
নাহি হেন ডাল যাত করো বিসরামে।
আনি দেহ যবেঁ কাহ্নে ভিড়ি দেউ আলিঙ্গনে
তাক না তেজিবোঁ আর জরমে।।
নেহ আমূল রতনে পালহ মোর বচনে
একবার মোক আণি দেহ কাহ্নে।
ধরোঁ দূতা তোর পাএ হেয় মোর প্রাণ যাএ
গাইল বড়ু চণ্ডীদাস বাসলীচরণে।

অন্তঃকথন:
শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের রাধা বিরহ অংশে দীর্ঘ বিরহে আকুল রাধা যখন কৃষ্ণের দর্শন পেলেন তখন আবার কৃষ্ণ তাঁর মিলনবাঞ্ছা পূরণে অস্বীকৃত হলেন। তিনি তাম্বুলখন্ডের কথা মনে করিয়ে দিয়ে রাধাকে বললেন যদি বড়াই এসে কৃষ্ণকে আদেশ করেন তবেই তিনি রাধার কাছে যাবেন। তখন বিফল্মনোরথা রাধা অন্তরবেদনা বুকে নিয়ে এসে বড়াইএর কাছে এসে ভেঙ্গে পড়লেন। রাধা বড়াই এর কাছে বিলাপ করছেন, এই ঘন অন্ধকার রাতে যাঁর কাছে প্রিয়তম নেই সেই নারী কিকরে বাঁচে? ওগো বড়াই আমার এ কী হল? বিরহে ব্যাকুল হয়ে আমি যে কেবল নন্দ নন্দনকে খুঁজে বেড়াচ্ছি। নিশার স্বপ্নে দেখলাম আমি কৃষ্ণ আলিঙ্গনে শুয়ে আছি অথচ জেগে দেখি বালগোপাল কোথাও নেই। আমার এই নব যৌবন ব্যার্থ হয়ে গেল! এখন আগুনই আমার একমাত্র সহায়! আমি আগুনে পুড়ে মরলেই আমার এই যৌবনজ্বালা জুড়োয়! হায় বড়াই, আমি যে ডালেই ভর করি সে ডালই ভেঙে পড়্রে। এমন কোন আশ্রয় নেই যেখানে আমি একটু আশ্রয় পেতে পারি। যদি তুমি আমার কৃষ্ণকে এনে দাও আমি তাঁকে একবার নিবিড়ভাবে আলিঙ্গন করব।(একমাত্র সেই তো আমার আশ্রয় যাকে জড়িয়ে ধরা যায়!)। তাঁকে একবার পেলে আমি জীবনে আর ছাড়ব না। দূতী, তুমি আমার এই অমূল্য রত্ন উপহার নাও শুধু একবার আমায় মাধবকে এনে দাও! তোমার পায়ে ধরি বড়াই আমার কানাই কে এনে দাও, দেখ কানু বিহনে আমার প্রাণ যায়! তুমি আমার প্রতি দয়া করো , তাঁকে এনে দাও!

পদকর্তা:বড়ু চন্ডীদাস
রাগ:কোড়া
তাল:ক্রীড়া
সংকলন:দেবহূতি সরকার

সন্ধিনী