যমুনা কিনারে

রসিকক সরবস নাগরি বানি

রসিকক সরবস নাগরি বানি।
ভল পরিহর ন আদরি আনি।।
হৃদয়ক কপটী বচনে পিয়ার।
অপনে রসে উকট কুসিয়ার।।
আবে কি বোলব সখি বিসরল দেও।
তুঅ রূপে লুবুধ মহী নহি কেও।।
পএর পখাল রোসে নহি খাএ।
অন্ধরা হাথ ভেটল হর জাএ।।
তঞে জে কলামতি ও অবিবেক।
ন পিব সরোজ অমিয় রস ভেক।।
অকুলিন সয়ঁ জদি কএ সদভাব।
তত কএ কতএ চতুরপন ফাব।।
তোহরা হৃদয় ন রহলে খাগি।
কতএ সুনপ অছ জুড়ি হো আগী।।
ভনই বিদ্যাপতি সহ কত সাতি।
সে নহি বিচল জকরি তে জাতি।।

অন্তঃকথন:
বহুবল্লভ মদনমোহন রাধারানীকে বহু মান দিয়ে বহু প্রতিশ্রুতি দিয়েও ভুলেছেন সেসব কথা। রাধারানী বিরহাকুল! সখীরাও রাধারানীর দশা দেখে মাধবের নিন্দায় মুখর হয়েছেন। সখী বলছেন, যে প্রকৃত রসিকজন নাগরীর মিষ্ট কথাই তার সর্বস্ব হয়! ভালো লোক কখনো আদর করে ডেকে এনে পরিত্যাগ করে না। ইক্ষু কঠিন কিন্তু যখন ফেটে যায় তখন মধুর রসের ধারা বয়। মাধবও ঠিক সেই রকম হৃদয়ে কঠিন কপট কিন্তু বচনে মধুর। সখি, প্রভু যখন তোমায় ভুলেই গেল তখন আর তুমি তাকে কি বলবে বলত? কত ভালো কথা বলবে এর পরেও? তোমার রূপে জগতের কে না লুব্ধ হয়? কানাইও ক্ষুধার্ত, পা ধুয়ে খেতে বসেও কেবল রোষ বশে না খেয়ে রয়েছে। অন্ধের হাতে কিছু দিলে হারিয়ে যায়, কানাই অন্ধ তাই তোমায় পেয়েও হারালো! তুমি কলাবতী নারী আর সেই মাধব অবিবেক নাগর। ভেকী আর কমলের অমৃতরস পান করে না তার মর্ম বোঝে! তুমি অকুলীনের সঙ্গে সদ্ভাব করেছিলে, তা না হলে আর এই চতুরপনা কোথায় দেখা যায় বলো? তোমার হৃদয়ে প্রেমের অভাব ছিলো না রাধারানী, অগ্নি কি কখনো শীতল হতে পারে? সেই অবিবেচক, তোমার মান বুঝলো না! বিদ্যাপতি মাধবকে উদ্দেশ্য করে বলছেন, আর কত শাস্তি সইবে? যার যা স্বভাব তা কখনো বিচলিত হয় না। তুমিও ভুল বুঝে ফিরে এসো মাধব!

পদকর্তা:বিদ্যাপতি
রাগ:অজ্ঞাত
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:দেবহূতি সরকার

সন্ধিনী