শ্রীচৈতন্যকৃপা হৈতে রঘুনাথদাস চিতে
পরম বৈরাগ্য উপজিল।
দারা গৃহ সম্পদ নিজ রাজ্য অধিপদ
মল প্রায় সকল ত্যজিল।।
পুরশ্চরণ কৃষ্ণ নামে গেলা শ্রীপুরুষোত্তমে
গৌরাঙ্গের পদযুগ সেবে।
এই মনে অভিলাষ পুন রঘুনাথ দাস
নয়ান গোচর হবে কবে।।
গৌরাঙ্গ দয়াল হৈয়া রাধা কৃষ্ণ নাম দিয়া
গোবর্দ্ধনের শিলা গুঞ্জাহারে।
ব্রজবলে গোবর্দ্ধনে শ্রীরাধিকার শ্রীচরণে
সমর্পণ করিলা তাহারে।।
চৈতন্যের অগোচরে নিজ কেশ ছিঁড়ি করে
বিরহে আকুল ব্রজে গেলা।
দেহত্যাগ করি মনে গেলা গিরি-গোবর্দ্ধনে
দুই গোসাঞি তাহারে দেখিলা।।
ধরি রূপ সনাতন রাখিলা তার জীবন
দেহত্যাগ করিতে না দিলা।
দুই গোসাঞির আজ্ঞা পাঞা রাধাকুণ্ডতটে গিয়া
বাস করি নিয়ম করিলা।।
ছেঁড়া কম্বল পরিধান পল মাত্র মাঠা পান
অন্ন আদি না করে আহার।
তিন সন্ধ্যা স্নান সারি স্মরণ কীর্ত্তন করি
রাধাপদভজন যাহার।।
ছাপান্ন দণ্ড রাত্রি দিনে রাধা কৃষ্ণ গুণ গানে
স্মরণেতে সদাই গোঙায়।
চারি দণ্ড শুতি থাকে স্বপ্নে রাধাকৃষ্ণ দেখে
এক তিল ব্যর্থ নাহি যায়।।
গৌরাঙ্গের পদাম্বুজে রাখে মনভৃঙ্গরাজে
স্বরূপেরে সদাই চিন্তয়।
অভেদ শ্রীরূপ সনে গতি যার সনাতনে
ভট্টযুগ প্রিয় মহাশয়।।
শ্রীরূপের গণ যত তার পদ আশ্রিত
অত্যন্ত বাৎসল্য যার জীবে।
সেহ আর্ত্তনাদ করি কাঁদি বলে হরি হরি
প্রভুর করুণা হবে কবে।।
হা হা রাধাবল্লভ গান্ধর্ব্বিকা বান্ধব
রাধিকা রমণ রাধানাথ।
হে বৃন্দাবনেশ্বর হাহা কৃষ্ণ দামোদর
কৃপা করি কর আত্মসাথ।।
শ্রীরূপ সনাতন যবে হৈল অদর্শন
অন্ধ হইল এ দুই নয়ন।
বৃথা আঁখি কাঁহা দেখি বৃথা প্রাণ কাঁহা রাখি
এত বলি করয়ে ক্রন্দন।।
শ্রীচৈতন্য শচীসুত তার গণ হয় যত
অবতার শ্রীবিগ্রহ নাম।
গুপ্ত ব্যক্ত লীলাস্থল দৃষ্ট শ্রুত বৈষ্ণবদল
সভারে করয়ে পরণাম।।
রাধাকৃষ্ণবিয়োগে ছাড়িল সকল ভোগে
শুখ রুখ অন্নমাত্র সার।
গৌরাঙ্গের বিয়োগে অন্ন ছাড়ি দিল আগে
মাঠা মাত্র করিল আহার।।
সনাতনের অদর্শনে তাহা ছাড়ি সেই দিনে
কেবল করয়ে জল পান।
রূপের বিচ্ছেদ যবে জল ছাড়ি দিল তবে
রাধাকৃষ্ণ বলি রাখে প্রাণ।।
শ্রীরূপের অদর্শনে না দেখি তাহার গণে
বিরহে ব্যাকুল হৈয়া কান্দে।
কৃষ্ণকথা আলাপন না শুনিয়া শ্রবণ
উচ্চস্বরে ডাকে আর্ত্তনাদে।।
হা হা রাধাকৃষ্ণ কোথা কোথা বিশাখা ললিতা
কৃপা করি দেহ দরশন।
হা চৈতন্য মহাপ্রভু হা স্বরূপ মোর প্রভু
হা হা প্রভু রূপ সনাতন।।
কান্দে গোসাঞি রাত্রিদিনে পুড়ি যায় তনু মনে
ক্ষণে অঙ্গ ধূলায় ধূসর।
চক্ষু অন্ধ অনাহার আপনার দেহ ভার
বিরহে হইল জরজর।।
রাধাকুণ্ড তটে পড়ি সঘনে নিশ্বাস ছাড়ি
মুখে বাক্য না হয় স্ফুরণ।
মন্দ মন্দ জিহ্বা নড়ে প্রেম অশ্রু নেত্রে পড়ে
মন কৃষ্ণ করয়ে স্মরণ।।
সেই রঘুনাথ দাস পূরাহ মনের আশ
এই মোর বড় আছে সাধ।
এ রাধাবল্লভ দাস মনে বড় অভিলাষ
প্রভু মোরে কর পরসাদ।।