শ্রীপানিহাটিতে শ্রীমন্মহাপ্রভুর শুভাগমন-স্মরণ কীর্ত্তন

শ্রীশ্রীরাধারমণো জয়তি
‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।’’

(আশ্বিন কৃষ্ণা দ্বাদশী)

‘‘গৌর,–প্রেমে-বন্যায় ভাসে পানিহাটি গ্রাম।
আজ,–রাঘব-পণ্ডিতের ঘরে গৌর গুণধাম।।’’

প্রাণ-গৌর এলো পানিহাটিতে

মধুর-নীলাচল হতে—প্রাণ-গৌর এলো পানিহাটিতে
রাঘব-পণ্ডিতের প্রীতে—প্রাণ-গৌর এলে পানিহাটিতে

চল যাই দেখিতে

প্রাণ-গৌর এলো পানিহাটিতে—চল যাই দেখিতে

(মাতন)
(গঙ্গাতীর হইতে বৃক্ষরাজের তলায় আগমন)
‘‘জয় জয় গৌরচন্দ্র জয় নিত্যানন্দ।’’
প্রাণ-ভরে জয় দাও ভাই

আরে আমার,–রসময় গৌরাঙ্গ-েমঘের—প্রাণ-ভরে জয় দাও ভাই

অপরূপ-মেঘ গৌরহরি

প্রেমধারা-বর্ষণকারী—আপরূপ-মেঘ গৌরহরি

(মাতন)

‘প্রেমধারা—বর্ষণকারী’—
গৌড়দেশে-উদ্যানোপরি—প্রেমধারা-বর্ষণকারী

অপরূপ-মেঘ গৌরহরি

‘‘জয় জয় গৌরচন্দ্র জয় নিত্যানন্দ।
জয়াদ্বৈতচন্দ্র জয় গৌরভক্তবৃন্দ।।’’

প্রাণ-ভরে জয় দাও ভাই

শচীদুলাল-গৌরহরির—প্রাণ-ভরে জয় দাও ভাই
সাঙ্গোপাঙ্গে প্রাণ-গৌরহরির—প্রাণ-ভরে জয় দাও ভাই

‘‘মহা—‘‘প্রভুর হইল ইচ্ছা যাইতে বৃন্দাবন।’’

নীলাচল-বিহার করতে করতে

গৌরসুন্দর নিজ-গণ-সনে—নীলাচল-বিহার করতে করতে

‘‘মহা,–প্রভুর হইল ইচ্ছা যাইতে বৃন্দাবন।
এ কথা,–শুনিয়া প্রতাপরুদ্র হইলা বিমন।।’’

অমনি,–বিরহ জেগে উঠ্‌ল হৃদে

গৌরগত-প্রাণ রাজ্য-প্রতাপরুদ্রের—অমনি,–বিরহ জেগে উঠ্‌ল হৃদে
প্রভু বৃন্দাবন যাবেন শুনে—অমনি,–বিরহ জেগে উঠ্‌ল হৃদে

‘‘সার্ব্বভৌম রামানন্দ আনি দুইজন।
দোঁহাকে কহেন রাজা বিনয়-বচনযয
নীলাদ্রি ছাড়ি প্রভুর মন অন্যত্র যাইতে।
তোমরা করিহ যত্ন তাঁহারে রাখিতে।।’’

তোমরা করহ যত্ন

ও,–সার্ব্বভৌম ! রামানন্দ !–তোমরা করহ যত্ন
আমার বচন রাখ—তোমরা করহ যত্ন

‘‘তোমরা করিহ যত্ন তাঁহারে রাখিতে।।
তাঁহা বিনা এই রাজ্য মোরে নাহি ভায়।’’

কি কাজ রাজ্য-অধিকারে

যদি,–গৌর যায় নীলাচল ছেড়ে—কি কাজ রাজ্য-অধিকারে

‘‘গোঁসাঞি রাখিতে করিহ অনেক উপায়।।’’

তোমরা দোঁহে কর উপায়

প্রভু,–নীলাদ্রি-ছাড়ি না যায়-তোমরা দোঁহে কর উপায়

আমি,–কেমন করে থাক্‌ব

কেঁদে বলেন প্রতাপরুদ্র—আমি,–কেমনে করে থাক্‌ব

কেমনে থাক্‌ব প্রাণ-ধরে

গৌর-শূন্য-নীলাচলে—কেমনে থাক্‌ব প্রাণ-ধরে

‘‘রামানন্দ সার্ব্বভৌম দুইজন-সনে।
যবে যুক্তি করে প্রভু যাইতে বৃন্দাবনে।।’’

শুনেই প্রাণ কেঁদে উঠ্‌ল

প্রভু বৃন্দাবন যাবেন—শুনেই প্রাণ কেঁদে উঠ্‌ল

যেও না তো বলতে নারে

কিন্তু,–বিরহ স্মঙরি প্রাণ বিদরে—যেও না তো বল্‌তে নারে

প্রাণ কেঁদে কেঁদে উঠ্‌ছে

প্রভুর সন্তোষে কথা বলতে—প্রাণ কেঁদে কেঁদে উঠ্‌ছে

‘‘দোঁহে কহে রথযাত্রা কর দরশন।’’

মনের কথা গোপন করে

‘‘দোঁহে কহে রথযাত্রা কর দরশন।
কার্ত্তিক আইলে তবে করিও গমন।।
কার্ত্তিক আইলে কহে এবে মহাশীত।
দোলযাত্রা দেখি যাইও এই ভাল-রীত।।’’

মনে মনে গণে রে

সর্ব্বভৌম রামানন্দ—মনে মনে গণে রে

কেমন করে থাক্‌ব রে

গৌর,–ছেড়ে গেলে এই নীলাচলে—কেমন করে থাক্‌ব রে

‘‘আজি কালি করি উঠায় বিবিধ উপায়।
যাইতে সম্মতি না দেয় বিচ্ছেদের ভয়।।
যদ্যপি স্বতন্ত্র প্রভু নহে নিবারণ।
ভক্ত-ইচ্ছা বিনা তবু না করে গমন।।

তবু ভক্ত-পরতন্ত্র

প্রভু যদ্যপি স্বতন্ত্র—তবু ভক্ত-পরতন্ত্র

‘‘এইমত মহাপ্রভুর চারি বৎসর গেল।’’

সেই চারি বৎসরের মধ্যে

‘‘দক্ষিণ যাঞা আসিতে দুই বৎসর লাগিল।।
আর দুই বৎসর চাহে বৃন্দাবন যাইতে।
রামানন্দ হঠে প্রভু না পারে চলিতে।।
পঞ্চম বৎসরে গৌড়ের ভক্তগণ আইলা।
রথ দেখি না রহিলা গৌড়ে চলিলা।।
তবে প্রভু সার্ব্বভৌম—রামানন্দ-স্থানে।
আলিঙ্গন করি কহে মধুর-বচনে।।
বহুত উৎকণ্ঠা মোহ যাইতে বৃন্দাবন।
তোমার হঠে দুই বৎসর না কৈলা গমন।।
এবে—অবশ্য চলিব দুঁহে করহ সম্মতি।’’

আমায়,–আর নিষেধ করো না

ও,–সার্ব্বভৌম রামানন্দ—আমায়,–আর নিষেধ করো না

আমার মন বড় উচাটন

যাবার লাগি বৃন্দাবন—আমার মন বড় উচাটন

আর আমায় করো না বারণ

যেতে দাও বৃন্দাবন—আর আমায় করো না বারণ

করিব আমি দরশন

নব-কৈশোর-নটবর—করিব আমি দরশন
‘নব-কৈশোর-নটবর’—
গোপবেশ-বেণুকর—নব্‌-কৈশোর-নটবর

(মাতন)
করিব আমি দরশন

‘‘তোমা দোঁহা বিনা মোর নাহি অন্যগতি।।’’


বালাই লয়ে মনে যাই
প্রভুর ভক্ত-বাৎসল্যের—বালাই লয়ে মরে যাই

‘‘গৌড়দেশে হয় মোর দুই সমাশ্রয়।
জননী জাহ্নবী এই দু দয়াময়।।
গৌড়দেশ দিয়া যাব ‘তাঁ’ সবা দেখিয়া।
তুমি দোঁহে আজ্ঞা দেহ প্রসন্ন হইয়া।।
শুনিয়া প্রভুর বাণী দোঁহে বিচারয়।
প্রভু-সনে অতি হঠ কভু ভাল নয়।।
দুঁহে গকহে এবে বর্ষা চলিতে নারিবা।
বিজয়া-দশমী আইলে অবশ্য চলিবা।।’’

আর বাধা দিব না

ব্রজে যেতে তোমার বড় উৎকণ্ঠা—আর বাধা দিব না

মনে মন দিন গণে

প্রাণ-গৌরসুন্দর আমার—মনে মনে দিন গণে

বিজয়া-দশমী আসবে কতদিনে

যাব আমি বৃন্দাবনে—বিজয়া-দশমী আসবে কতদিনে

‘‘আনন্দে মহাপ্রভু বর্ষা কৈল সমাধান।
বিজয়-দশমী দিনে করিলা পয়ান।।’’

প্রভু চলিলেন নীলাচল হতে

বিজয়া-দশমী-তিথিতে—প্রভু চলিলেন নীলাচল হতে

‘‘জগন্নাথের প্রসাদ প্রভু যত পাইয়াছিলা।
কড়ার চন্দন ডোর সবে সঙ্গে লৈলা।।’’

ভক্তগণে দিবেন বলে

গৌড়দেশের সব –ভক্তগণে দিবেন বলে

‘‘জগন্নাথের আজ্ঞা মাগি প্রভাতে চলিলা।।
জড়িয়া-ভক্তগণ সব পাছে ঢলি আইলা।।’’

আ’মরি,–কাঁদে নীলাচলবাসী

বলে,–কোথা যাও গোরা-শশী—কাঁদে নীলাচলবাসী

গৌর কোথা যাও চালে

নীলাচলবাসী বলে সবে—গৌর কোথা যাও চলে
আমাদের অনাথ করে ফেলে—গৌর কোথা যাও চলে
আঁধার করি এই নীলাচলে—গৌর কোথা যাও চলে
আমরা,–কেমনে থাক্‌ব তোমায় ছেড়ে—গৌর কোথা যাও চলে;

ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে

নীলাচলবাসী নরনারী—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
কতদিনে দেখ্‌তে পাব বলে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে

আর,–কতদিনে দেখ্‌তে পাব

ঐ,–হরিবোলা রসের বদন—আর,–কতদিনে দেখ্‌তে পাব

পিছে পিছে কেঁদে চলে

উড়িয়া-ভক্তগণ সবে—পিছে পিছে কেঁদে চলে
হা-গৌর প্রাণ-গৌর বলে—পিছে পিছে কেঁদে চলে

‘‘উড়িয়া-ভক্তগণে প্রভু যত্নে নিবারিলা।
নিজগণ-সঙ্গে প্রভু ভবানীপুর আইলা।।
রামানন্দ আইলা পাছে দোলায় চড়িয়া।’’

আর কি তাঁরা রইতে পারে

গৌরগত-প্রাণ যাদের—আর কি তারা রইতে পারে

কেমন করে থাকবে রে

গৌরগত-প্রাণ রামানন্দ—কেমন করে থাক্‌বে রে
প্রাণ-গেলে নীলাচল ছেড়ে—কেমন করে থাক্‌বে রে

‘‘রামানন্দ আইলা পাছে দোলায় চড়িয়া।
বাণীনাথ বহু প্রসাদ দিল পাঠাইয়া।।’’

প্রভুর,–বড়-কষ্ট হবে বলে

পথে যেতে ভোজনের—প্রভুর,–বড়-কষ্ট হবে বলে

‘‘প্রসাদ ভোজন করি তাঁহাই রহিলা।
প্রাতঃকালে চলি প্রভু ভুবনেশ্বর আইলা।।
কটক আসিয়া কৈল গোপাল দর্শন।
স্বপ্নেশ্বর বিপ্র প্রভুর কৈল নিমন্ত্রণ।।
‘‘রামানন্দ রায় সব গণ নিমন্ত্রিল।
বাহির উদ্যানে আসি প্রভু বাসা কৈল।।
ভিক্ষা করি বকুলতলে করিলা বিশ্রাম।’’

আজও তার স্মৃতি আছে

পূণ্যভূমি কটক-নগরে—আজও তার স্মৃতি আছে
প্রভু,–বসেছিলেন যে বকুল-তলে—আজও তার স্মৃতি আছে

‘‘প্রতাপরুদ্র-ঠাঁই রায় করিল পয়ান।।
শুনি আনন্দিত রাজা শীঘ্র আইলা।’’

মনে মনে বলে রে
এ কি আমার ভাগ্যোদয়

গৌরচন্দ্রের হইল উদয়—এ কি আমার ভাগ্যোদয়

প্রতাপরুদ্র প্রেমে গড়ি যায়

‘‘প্রভু দেখি দণ্ডবৎ ভূমিতে পড়িলা।।
পুনঃ উঠে পুনঃ পড়ে হইয়া বিহ্বল।
স্তুতি করে পুলকাঙ্গ পড়ে অশ্রুজল।।
তাঁর ভক্তি দেখি প্রভুর তুষ্ট হইল মন।
উঠি মহাপ্রভু তাঁরে কৈল আলিঙ্গন।।’’

বাহু পসারি কৈল কোলে

আইস আইস আইস বলে—বাহু পসারি কৈল কোলে
ভাসি দুটি-নয়ন-জলে—বাহু পসারি কৈল কোলে

‘‘পুনঃ স্তুতি করি রাজা করয়ে প্রণাম।
প্রভুর কৃপা-অশ্রুতে তাঁর দেহ হইল স্নান।।’’

গৌর ভাসে নয়ন-জলে

প্রতাপরুদ্রে করি কোলে—গৌর ভাসে নয়ন-জলে

‘‘সুস্থ করি রামানন্দ রাজা বসাইল।
কায়মনোবাক্যে প্রভু তাঁরে কৃপা কৈল।।
ঐছে তাঁহারে কৃপা কৈল গৌরধাম।
প্রতাপরুদ্র-সংত্রাতা জগতে হৈল নাম।।’’

চারিদিকে উঠ্‌ল রোল
বলে,–জয় জয় গৌরহরি

জয়,–প্রতাপরুদ্র-ত্রাণকারী—বলে,–জয় জয় গৌরহরি

[মাতন]
জয় জয় শচীনন্দন

গজপতি-উদ্ধারণ—জয় জয় শচীনন্দন

‘‘রাজ-পাত্রগণ কৈল প্রভুর বন্দন।
রাজারে বিদায় দিল শচীর নন্দন।।
বাহিরে আসিয়া রাজা পত্র লিখাইল।
নিজরাজ্যে যত বিয়য়ী তাহারে পাঠাইল।।’’

পত্র লিখেন প্রতাপরুদ্র

নিজ-রাজ্যের বিষয়ীগণের—পত্র লিখেন প্রতাপরুদ্র

তোমরা কর প্রভুর সেবন

তোমাদের,–কাছে করি এই নিবেদন—তোমরা কর প্রভুর সেবন

করজোড়ে করি বিনয়

‘‘গ্রামে গ্রামেতে নূতন আবাস করিবা।
পাঁচ সাত নব গৃহে সামগ্রী ভরিবা।।
আপনি প্রভুকে লঞা তাঁহা উত্তরিবা
রাত্রিদিন বেত্রহস্তে সেবায় রহিবা।।’’

আমার ভাগ্যে হল না

সঙ্গে যাব সেবা কর্‌ব—আমার ভাগ্যে হল না

তোমরা প্রভুর সেবা করো

আমার ভাগ্যে নাহি হলো—তোমরা প্রভুর সেবা করো

সেবা করো অশেষ-বিশেষে

তোমরা সবে অকপটে—সেবা করো অশেষ-বিশেষে
প্রাণ-গৌর চলেছেন গৌড়দেশে—সেবা করো অশেষ-বিশেষে।

‘‘দুই মহাপাত্র হরিচন্দন মঙ্গরাজ।
তাঁরে আজ্ঞা দিল রাজা কর সব কাজ।।
এক নব নৌকা আনি রাখ নদীতীরে।
মহাপ্রভু স্নান করি যাইবেন নদীপারে।।
তাঁহা স্তম্ভ রোপন কর মহাতীর্থ করি।
নিত্য স্নান করিব তাঁহা, তাঁহা যেন মরি।।’’

তাঁহা,–স্তম্ভ এক কর রোপণ

যেথা,–প্রভু করবেন অবগাহন—তাঁহা,–স্তম্ভ এক কর রোপন

এখনও তাঁর স্মৃতি আছে

কটক-নগরে মহানদীতীরে—এখনও তাঁর স্মৃতি আছে
চরণ-চিহ্নিত মঞ্চ—এখনও তাঁর স্মৃতি আছে

‘‘চতুর্দ্বারে করহ উত্তম নবব্য-বাস।
রামানন্দ যাহ তুমি মহাপ্রভু-পাশ।।
সন্ধ্যাতে চলিবে প্রভু নৃপতি শুনিল।
হস্তী-উপরে তাম্বুগৃহে স্ত্রীগণে চড়াইল।।
প্রভু চলিবার পথে রহে সারি হঞা।
সন্ধ্যায় চলিলা প্রভু, নিজগণ লঞা।।
চিত্রোৎপলা নদী আসি তাঁহা কৈল স্নান।
মহিষী সকল দেখি করয়ে প্রণাম।।
প্রভুর দর্শনে সবে হৈল প্রেমময়।’’

প্রাণ-গৌর করি দরশন

রাজা,–প্রতাপরুদ্রের মহিষীগণ—প্রাণ-গৌর করি দরশন

পুলকিত হইল প্রেমে

দূর হতে গৌর দর্শন করে—পুলকিত হইল প্রেমে
হস্তা-উপরে তাম্বুগৃহে—পুলকিত হইল প্রেমে

‘‘কৃষ্ণ কৃষ্ণ কহে নেত্রে অশ্রু বরিষয়।।
এমন কৃপালু নাহি শুনি ত্রিভুবনে।
কৃষ্ণ-প্রেমা হয় যাঁর দূর দরশনে।।’’

কত-গুণের গৌর আমার

যাঁরে,–দূরে হেরি প্রেমোদয়—কত-গুণের গৌর আমার

তাঁর, পরশ হলে কি না হয়

যাঁরে—দূরে হেরি প্রেমোদয়—তাঁর,–পরশ হলে কি না হয়

(মাতন)
কি না হয় তার পরশনে

প্রেম উপজয় যাঁর দূর-দরশনে—কি না হয় তার পরশনে

‘‘নৌকাতে চড়িয়া প্রভু হৈলা নদীপার।
জ্যোৎস্নাবতী রাত্রে চলি আইলা চতুর্দ্বার।।
রাত্রে তথা রহি প্রাতে স্নানকৃত্য কৈল।
হেন-কালে জগন্নাথের মহাপ্রসাদ আইল।।’’

মহাপ্রসাদ,–পাঠায়েছেন প্রতাপরুদ্র

ভূর,–সেবায় পাছে হয় কষ্ট—মহাপ্রসাদ,–পাঠায়েছেন প্রতাপরুদ্র

প্রতাপরুদ্র্ আছেন নিজবাসে

কিন্ত,–প্রাণ আছে গৌর-পদ-পাশে—প্রতাপরুদ্র আছেন নিজবাসে

সদাই প্রাণ কাঁদছে

গৌর-প্রেমিক প্রতাপরুদ্রের—সদাই প্রাণ কাঁদছে
আমার, প্রভুর দুঃখ হয় পাছে—সদাই প্রাণ কাঁদছে

‘‘রাজার আজ্ঞায় পড়িছা প্রতি দিনে দিনে।
বহুত প্রসাদ পাঠায় দিয়া বহুজনে।।’’

বলাই লয়ে মরে যাই

প্রতাপরুদ্রের গৌরাঙ্গ-সেবার—বালাই লয়ে মরে যাই

প্রাণ আছে গৌর-চরণে

দেহ আছে নিজ-ভবনে—প্রাণ আছে গৌর-চরণে

‘‘স্বগণ সহিতে প্রভু প্রসাদ অঙ্গীকরি।
উঠিয়া চলিলা প্রভু বলি হরি হরি।।
রামানন্দ, মঙ্গরাজ, শ্রীহরিচন্দন।
সঙ্গে সেবা করি চলে এই তিনজন।।
প্রভু-সঙ্গে পূরী-গোঁসাঞি, স্বরূপ দামোদর।
জগদানন্দ, মুকুন্দ, গোবিন্দ, কাশীশ্বর।।
হরিদাস ঠাকুর আর পণ্ডিত বক্রেশ্বর।’’

সঙ্গ ছাড়া কি রইতে পারে

গৌরগত-প্রাণ যাঁদের—সঙ্গ ছাড়া কি রইতে পারে

‘‘হরিদাস ঠাকুর আর পণ্ডিত বক্রেশ্বর।
গোপীনাতাচার্য্য আর পণ্ডিত দামোদর।।
রামাই নন্দাই আর বহু ভক্তগণ।
প্রধান কহিল সবার কে করে গণন।।
গদাধর পণ্ডিত যবে সঙ্গে চলিলা।
ক্ষেত্র-সন্ন্যাস না ছাড়িও প্রভু নিষেধিলা।।’’

কেমন করে থাকবে বল

যদিও প্রভু নিষেধিল—কেন করে থাকবে বল

কখনও ত থাকে না

কায়া ছাড়িয়া ছায়া—কখনও ত থাকে না

‘‘পণ্ডিত কহে যাঁহা তুমি সেই নীলাচল।
ক্ষেত্র-সন্ন্যাস মোর যাউক রসাতল।।’’

ক্ষেত্র-সন্ন্যাস কিসের তরে

তোমার সঙ্গ ত্যাগ করে—ক্ষেত্র-সন্ন্যাস কিসের তরে

ক্ষেত্র-সন্ন্যাস যাক্‌ রসাতল

প্রাণ-গৌর-আগে বলেন গদাধর—ক্ষেত্র-সন্ন্যাস যাক্ রসাতল
যাঁহা তুমি সেই নীলাচল—ক্ষেত্র-সন্ন্যাস যাক্‌ রসাতল

‘‘প্রভু কহে ইহাঁ কর গোপীনাথ-সেবন।
পণ্ডিত কহে কোটি সেবা ত্বৎপদ-দর্শন।।’’

বালাই লয়ে মরে যাই

পণ্ডিত-গোঁসাঞির গৌর-অনুরাগের—বালাই লয়ে মরে যাই

‘‘প্রভু কহে সেবা ছাড়িবে আমার সাগে দোষ।
ইহাঁ রহি সেবা কর আমার সন্তোষ।।
পণ্ডিত কহে সব দোষ আমার উপর।’’

অভিমানে বলে রে

পণ্ডিত গোঁসাঞি প্রেমভরে—অভিমানের বলে রে

‘‘আমি,–তোমা-সঙ্গে না যাইব যাব একেশ্বর।।’’

যদি তোমায় দোষ লাগে

তোমার সঙ্গে গেলে পরে –যদি তোমায় দোষ লাগে

আমি একা যাব তবে

তোমাতে দোষ না লাগিবে—আমি একা যাব তবে

আ’মরি কত মধুর রে
এ যে,–বেদস্তুতি হতেও মধুর

এই,–প্রেম-মাখা অভিমান-বাক্য—এ যে,–বেদস্তুতি হতেও মধুর

‘‘আই দেখিতে যাব আমি না যাব তোমা লাগি।’’

আমি,–তোমার লাগি যাব না

শচীমাকে দেখ্‌তে যাব—আমি,–তোমার লাগি যাব না

‘‘প্রতিজ্ঞা-সেবা—ত্যাগ-দোষ তার আমি ভাগী।।
এত বলি পণ্ডিত-গোঁসাঞি পৃথক চলিলা।
কটক আসি প্রভু তাঁরে সঙ্গে আনাইলা।।
পণ্ডিতের চৈতন্যপ্রেম বুঝন না যায়।
প্রতিজ্ঞা-শ্রীকৃষ্ণ-সেবা ছাড়িল তৃণ প্রায়।।
তাঁহার চরিতে প্রভুর অন্তরে সন্তোষ।
তাঁহার হাতে ধরি কহে করি প্রণয়-রোষ।।’’

বাইরে করে প্রণয়-রোষ।

অন্তরে প্রভু সন্তোষ—বাইরে করে প্রণয়-রোষ

‘‘প্রতিজ্ঞা-সেবা ছাড়িবে এই তোমার উদ্দেশ।
সেই সিদ্ধ হইল ছাড়ি আইলে দূরদেশ।।
আমার সঙ্গে রহিতে চাহ বাঞ্ছ নিজসুখ।
তোমার দুই ধর্ম্ম যায় আমার হয় দুঃখ।।
মোর সুখ চাহ যদি নীলাচলে চল।
আমার শপথ যদি আর কিছু বল।।’’

ঈশ্বরের এই ত স্বভাব

সর্ব্বশাস্ত্রে আছে প্রকাশ—ঈশ্বরের এই ত স্বভাব

কুসুম হতে কোমল রে

লীলা-বিশেষে—কুসুম হতে কোমল রে

আবার কোনও লীলাতে
ব্রজ হইতে কঠিন রে
দুই আছে একাধারে

সর্ব্বেশ্বর ভগবানে—দুই আছে একাধারে
যত কোমল তত কঠিন—দুই আছে একাধারে

আজ,–সেই গুণের প্রকাশ কৈলা

অনুভব কর ভাই রে—আজ,–সেই গুণের প্রকাশ কৈলা
পাষাণ হতে কঠিনতা—আজ,–সেই গুণের প্রকাশ কৈলা

ব্রজ হতেও কঠোর ব্যবহারে

এ-লীলাতে গৌরের আমার—ব্রজ হতেও কঠোর ব্যবহার

যে,–এক-তিল ছেড়ে রইতে নারে

ছায়ার মত সঙ্গে সঙ্গে ফিরে—যে,–এক-তিল ছেড়ে রইতে নারে

তাঁরে,–আজ্ঞা কৈলেন শপথ দিয়ে

সঙ্গ ছেড়ে নীলাচলে যেতে—তাঁরে,–আজ্ঞা কৈলেন শপথ দিয়ে

আ’মরি কি বিবর্ত্ত-লীলা

গৌর-গোবিন্দ কৈলা—আ’মরি কি বিবর্ত্ত-লীলা

আ’মরি কি ব্রজ-সম বাণী

গৌরাঙ্গের গদাধর-প্রতি—আ’মরি কি ব্রজ-সম বাণী

এই, ত তার পরিচয়

শাস্ত্রে যে কঠোর স্বভাব কয়—এই ত তার পরিচয়

আ’মরি কি বিবর্ত্ত-লীলা

আজ গৌর-গোবিন্দ কৈলা—আ’মরি কি বিবর্ত্ত –লীলা
গদা-রাধার উপেখিলা—আ’মরি কি বিবর্ত্ত-লীলা

‘‘এত বলি’ মহাপ্রভু নৌকাত চড়িলা।
মূর্চ্ছিত হইয়া পণ্ডিত তথায় পড়িলা।।’’

গদাই,–মূরছিত মহানদী-তীরে

হা প্রাণ-গৌরসুন্দর বলে—গদাই,–মূরছিত মহানদী-তীরে
প্রেম,–বিবর্ত্ত-লীলার বালাই যাই রে—গদাই,–মূরছিত মহানদী-তীরে

‘‘পণ্ডিতে লইয়া যাইতে সার্ব্বভৌমে আজ্ঞা দিল।
ভট্টাচার্য্য কহে উঠ ঐছে প্রভুর লীলা।।’’

ওঁর,–কাঁদানই স্বভাব রে

তুমি ত সকলি জান—ওঁর,–কাঁদানই স্বভাব রে

নিজে কেঁদে কাঁদায় আনে

ভক্ত-বাক্য রক্ষা-কারণে—নিজে কেঁদে কাঁদায় আনে

‘‘তুমি জান কৃষ্ণ নিজ-প্রতিজ্ঞা ছাড়িলা।
ভক্ত-কৃপাবশে ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা রাখিলা।।
এইমত মহাপ্রভু তোমার বিচ্ছেদ সহিয়া।
তোমার প্রতিজ্ঞা রক্ষা কৈল যতন করিয়া।।
এইমত কহি তাঁরে প্রবোধ করিলা।
দুইজনে শোকাকুল নীলাচলে আইলা।।’’

দোঁহে গেলা নীলাচলে

হা গৌর বলি ভাসি নয়ন-জলে—দোঁহে গেলা নীলাচলে

গলা ধরে দুজনে কাঁদে

‘কতদিন দেখা পাব বলে—গলা ধরে দুজনে কাঁদে
‘কতদিনে দেখা পাব বলে’—
সেই,–হরিবোলা রসের বদন –কতদিনে দেখা পাব বলে

গলা ধরে দু’জনে কাঁদে

‘‘প্রভু-লাগি ধর্ম্ম-কর্ম্ম ছাড়ে ভক্তগণ।
ভক্ত-ধর্ম্ম-হানি প্রভুর না হয় সহন।।’’


‘‘প্রেমের বিবর্ত্ত ইহা শুনে যেই জন।
অচিরে মিলয়ে তারে চৈতন্য-চরণ।।
দুই রাজ পাত্র যেই প্রভু সঙ্গে যায়।
যাজপুর আসি প্রভু তাঁরে দিলেন বিদায়।।
প্রভু বিদায় দিল রায় যান তাঁর সনে।’’

যেতেও ত পারে না

ছাড়ি প্রাণ-গৌরাঙ্গ-সোণা—যেতেও ত পারে না
লয়ে শূন্য দেহখানা যেতেও ত পাবে না

‘‘কৃষ্ণকথা রামানন্দ-সনে রাত্রিদিনে।।
প্রতি-গ্রামে রাজ-আজ্ঞায় রাজ-ভৃত্যগণ।
নব্যগৃহে নানা-দ্রব্যে করয়ে সেবন।।
এইমত চলি প্রবু রেমুণা আইলা।
তথা হৈতে রামানন্দ-রায়ে বিদায় দিলা।।
ভূমিতে পড়িলা রায় নাহিক চেতন।’’

রায়,–মূরছিত ভূমিতলে

হা-গৌর প্রাণ-গৌর বলে—রায়,–মূরছিত ভূমিতলে

‘‘রায় কোলে করি প্রভু করেন ক্রন্দন।।’’

গৌর ভাসে নয়ন-জলে

রামরায় করি কোলে—গৌর ভাসে নয়ন-জলে

আ’মরি কি মধুর-লীলা

প্রেমাবতার গৌরহরির—আ’মরি কি মধুর—লীলা
প্রেমময়-লীলার বালাই বাই—আ’মরি কি মধুর-লীলা

দাস প্রভু দু’জনে কাঁদে

পরস্পর গলা ধরে—দাস প্রভু দুজনে কাঁদে
দোঁহার,–বিরহ দুহুঁ স্মঙরিয়ে—দাস প্রভু দু’জনে কাঁদে

‘‘রায়ের বিদায় কথা না যায় কথন।
কহিতে না পারি এই তাহার বর্ণন।।
তবে ওড্রদেশ-সীমা প্রভু চলি আইলা।
তথা রাজ-অধিকারী প্রভুরে মিলিলা।।
দিন দুই চারি তেঁহো করিল সেবন।
আগে চলিবার সেই কহে বিবরণ।।
মদ্যপ যবন রাজার আগে অধিকার।
তার ভয়ে পথে কেহো নারে চলিবার।।
পিছলদা পর্য্যন্ত সব তার অধিকার।
তার ভয়ে নদী কেহো হৈতে নারে পার।।
দিন কত রহ সন্ধি করি তার সনে।
তবে সুখে নৌকাতে করাইব গমনে।।
হেনকালে সেই যবনের এক অনুচর।
উড়িয়া-কটকে আইল করি বেশান্তর।।
প্রভুর অদ্ভুত সেই চরিত্র দেখিয়া।
হিন্দুচর কহে সেই যবন পাশে গিয়া।।
এক সন্ন্যাসী আসিলা জগন্নাথ হৈতে।
অনেক সিদ্ধ পুরুষ হয় তাঁহার সহিতে।।
নিরন্তর করে সবে কৃষ্ণ-সংকীর্ত্তন।
সবে হাসে নাচে গায় করয়ে ক্রন্দন।।
লক্ষ লক্ষ লোক আইসে তাঁরে দেখিবারে।
তাঁরে দেখি পুনরপি যাইতে নারে ঘরে।।

সে,–দেহ গেহ পাসরে

একবার যে তাঁরে হেরে—সে,–দেহ গেহ পাসরে

কি জানি কি মোহিনী করে

তার দেখে ঘরে যেতে নারে—কি জানি কি মোহিনী করে

শুধু কেবল তাই নয়

‘‘সেই সব লোক হয় বাউলের প্রায়।
কৃষ্ণ কহি নাচে কাঁদে গড়াগড়ি যায়।।
কহিবার কথা নহে দেখিলে সে জানে।
তাঁহার প্রভাবে তাঁরে ঈশ্বর করি মানে।।
এত কহি সেই চর ‘‘হরি কৃষ্ণ’’ গায়।’’

এ শক্তি কি মানুষে ধরে

যারে হেরে তার প্রাণ হরে—এ শক্তি কি মানুষের ধরে

‘‘হাসে কাঁদে নাচে গায় বাউলের প্রায়।।
এত শুনি যবনের মন ফিরি গেল।
আপন বিশ্বাস উড়িয়া-স্থানে পাঠাইল।।
বিশ্বাস আসিয়া প্রভুর চরণ বন্দিল।
‘‘কৃষ্ণ কৃষ্ণ’’ কহি প্রেমে বিহ্বল হইল।।’’

কৃষ্ণ-নাম হইল স্ফুর্ত্তি

দেখি শ্রীগৌরাঙ্গ-মূরতি—কৃষ্ণ-নাম হইল স্ফূর্ত্তি

যবনেও নাম করে
যবনেও নাচে গায়

শ্রীগৌরাঙ্গ-করুণায়ৃ—যবনেও নাচে গায়

‘‘ধৈর্য্য হইয়া উড়িয়াকে কহে নমস্করি।
তোমাস্থানে পাঠাইলা ম্লেচ্ছ-অধিকারী।।
তুমি যদি আজ্ঞা দেহ এখানে আসিয়া।
যবনাধিকারী যায় প্রভুকে মিলিয়া।
বহুত উৎকণ্ঠা তার, করিয়াছে বিনয়।
তোমা সনে এই সন্ধি নাহি যুদ্ধ ভয়।।
শুনি মহাপাত্র কহে হইয়া বিস্ময়।
মদ্যপ যবনের চিত্তে ঐছে কে কহয়।।
আপনি মহাপ্রভু তার মন ফিরাইল।
দর্শন স্মরণে যাঁর জগৎ ভরিল।।’’

ভুবন-পাবন গৌরহরি

তরাইল,–ম্লেচ্ছযবনাদি করি—ভুবন-পাবন গৌরহরি

‘‘এতবলি বিশ্বাসেরে কহিল বচন।
ভাগ্য তার আসি করুক প্রভু-দরশন।।
প্রতীত করিয়ে যদি নিরস্ত্র হইয়া।
আসিবেক পাঁচ সাত ভৃত্য সঙ্গে লইয়া।।
বিশ্বাস যাইয়া তারে সকল কহিল।
হিন্দুবেশ ধরি সেই যবন আইল।।
দূর হইতে প্রভু দেখি ভূমিতে পড়িলা।
দণ্ডবৎ করে অশ্রু পুলকিত হৈয়া।।’’

যবনের প্রেমোদয়

হেরি,–প্রেমাবতার শচীতনয়—যবনের প্রেমোদয়

‘‘মহাপাত্র আনিল তারে করিয়া সম্মান।
জোড়-হাতে প্রভূ আগে লয় কৃষ্ণ নাম।।’’

কেঁদে কেঁদে যবন বলে

‘‘অধম-যবন-কুলে কেন জন্মাইল।
বিধি মোরে হিন্দুকুলে কেন না জন্মাইল।।’’

দৈন্য–ভক্তির উদয় হয়েছে তানে

যবনের প্রভু-দরশনে—দৈন্য-ভক্তির উদয় হয়েছে তানে

তাই যবন বলে কাতরে

কেন,–জন্ম না হলো হিন্দুকুলে—তাই যবন বলে কাতরে
তোমার,–সেবা করিতাম প্রাণভরে—তাই যবন বলে কাতরে

তোমার সেবা করিতে নারিলাম

যবন-কুলে জনম পেলাম—তোমার সেবা করিতে নারিলাম
সেবাযোগ্য দেহ না পাইলাম—তোমার সেবা করিতে নারিলাম

এ কেবল দৈন্য উক্তি

ভক্তির স্বভাবে যবন বলে—এ কেবল দৈন্য উক্তি

মহাপ্রভুর নাই জাতির বিচার

যে কুলে—জনম হোক সবার তাঁর—মহাপ্রভুর নাই জাতির বিচার

‘‘হিন্দু হইলে পাইতাম তোমার চরণ সন্নিধান।
ব্যর্থ মোর এই দেহ যাউক পরাণ।’’

ব্যাকুল হয়ে যবন কাঁদে

ভক্তির স্বভাব-দৈন্যে—ব্যাকুল হয়ে যবন কাঁদে

কাজ কি আমার ছার জীবনে

যদি,–না পেলাম তোমার সেবাধনে—কাজ কি আমার ছার-জীবনে

আমার বেঁচে কি ফল বল

তোমার সেবা যদি না মিলিল—আমার বেঁচে কি ফল বল

ধিক্‌ ধিক্‌ আমার প্রাণ

তোমার সেবায় বঞ্চিত হলাম—ধিক্‌ ধিক্‌ আমার প্রাণ

‘‘এত শুনি মহাপাত্র আবিষ্ট হইয়া।
প্রভুকে করে স্তুতি চরণে ধরিয়া।।
চণ্ডাল পবিত্র যাঁর শ্রীনাম শ্রবণে।
হেন তোমার এই জীব পাইল দর্শনে।।
ইহার যে এই গতি কি ইহা বিস্ময়।
তোমার দর্শন প্রভাব এইমত হয়।।’’

যবনেও নাচে কাঁদে

হরিনাম বলে মুখে—যবনেও নাচে কাঁদে
তোমার দর্শন-প্রভাবে—যবনেও নাচে কাঁদে

‘‘তবে মহাপ্রভু তারে কৃপা-দৃষ্টি করি।
আশ্বাদিয়া কহে তুমি কহ ‘কৃষ্ণ হরি’।।
সেই কহে মোরে যদি কৈলে অঙ্গীকার।
এক আজ্ঞা দেহ সেবা করি যে তোমার।।
গো-ব্রাহ্মণ-বৈষ্ণব-হিংসা করেছি অপার।
সেই পাপ হইতে মোর হউক নিস্তার।
তবে মুকুন্দদত্ত কহে শুন মহাশয়।
গঙ্গাতীর অইতে মহাপ্রভুর মন হয়।।
তাঁহা যাইতে কর তুমি সহায় প্রকার।
এই বড় আজ্ঞা এই বড় উপকার।।’’

গৌর আমার প্রেমাবতার

যবনে দিলেন সেবাধিকার—গৌর আমার প্রেমাবতার

‘‘তবে সেই মহাপ্রভুর চরণ বন্দিয়া।
সবার চরণ বন্দি চলে তুষ্ট হইয়া।’’

এই,–কৃপা কর গৌরাঙ্গগণ

প্রাণে প্রাণে বলে যবন—এই,–কৃপা কর গৌরাঙ্গগণ
যেন,–করতে পারি আজ্ঞা-পালন—এই,–কৃপা কর গৌরাঙ্গগণ

‘‘মহাপাত্র তার সনে কৈল কোলাকুলি
অনেক সামগ্রী দিয়া করিল মিতালী।।
প্রাতঃকালে সেই বহু নৌকা সাজাইয়া।।
প্রভুকে আনিল নিজ-বিশ্বাস পাঠাইয়া।।
মহাপাত্র ঢলি আইলা মহাপ্রভুর স্থানে।
ম্লেচ্ছ আসি কৈল প্রভুর চরণ বন্দনে।।
এক নবীন নৌকা তার মধ্যে এক ঘর।
স্বগণ চড়াইল প্রভু তাহার উপর।।’’

যবনে সেবা কে শিখাল

সে যে নবীন নৌকা সাজাল—যবনে সেবা কে শিখাল

সেবা-বুদ্ধি কারেও না স্ফুরে

সেবা-বিগ্রহের কৃপা না হলে—সেবা-বুদ্ধি কারেও না স্ফুরে

নিশ্চয় নিতাই-কৃপা হয়েছে

তাই,–গৌর-সেবা স্ফূর্ত্তি পেয়েছে—নিশ্চয় নিতাই-কৃপা হয়েছে
নিতাই ও লীলায় আছে অলক্ষিতে-নিশ্চয় নিতাই-কৃপা হয়েছে

‘‘মহাপাত্রে মহাপ্রভু করিলা বিদায়।
কাঁদিতে কাঁদিতে সেই তীরে রহি চায়।।’’

মহাপাত্র কাঁদে ব্যাকুল হয়ে

আর কি দেখা পাব বলে—মহাপাত্র কাঁদে ব্যাকুল হয়ে

প্রাণভরে জয় দাও
জয়,–প্রেমাবতার শচীননন্দন

অধব-যবন-উদ্ধারণ—জয়,–প্রেমাবতার শচীনন্দন,

(মাতন)

‘‘জলদস্যু ভয়ে সেই যবন চলিল।
দশ নৌকাভরি সেই সৈন্য সঙ্গে নিল।।
মন্ত্রেশ্বর দুষ্ট-নদে পার করাইল।
পিছলতা পর্য্যন্ত সেই যবন আইল।।
তারে বিদায় দিল প্রভু সেই গ্রাম হৈতে।
সেকালে তার প্রেম-চেষ্টা না পারি বর্ণিতে।।’’

ব্যাকুল হয়ে যবন কাঁদে

পড়ি গোরার প্রেম-ফাঁদে–ব্যাকুল হয়ে যবন কাঁদে
হেরি গোরার মুখ-চাঁদে–ব্যাকুল হয়ে যবন কাঁদে

হা প্রাণ শচীনন্দন

আমা হেন যবন-উদ্ধারণ—হা প্রাণ শচীনন্দন

আর কি পাব দরশন

ঐ,–হরিবোলা রসের বদ—আর কি পাব দরশন(মাতন)

‘‘অলৌকিক লীলা করে শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য।
যেই ইহা শুনে তার জন্ম-দেহ ধন্য।।
সেই নৌকায় চড়ি প্রভু আইলা পানিহাটি।
নাবিকেরে পরাইল প্রভু নিজ-কৃপাশাটী।।’’

প্রাণ-গৌর আইলা পানিহাটিতে

মধুর-নীলাচল হতে—প্রাণ-গৌর আইলা পানিহাটিতে

জল-পথে গৌর আগমন

উদ্ধারিয়ে পথে যবন-জল-পথে গৌর আগমন

(মাতন)

‘‘প্রভু আইলা বলি লোকে হৈল কোলাহল।
মনুষ্যে ভরিল সব জল আর স্থল।।’’

এই ঘাটে উত্তরিলা

এই বটবৃক্ষমূলে—এই ঘাটে উত্তরিল
এমনও নিদর্শন আছে

এই সেই বটবৃক্ষরাজ—এখনও নিদর্শন আছে

আজ সেই দিন রে

প্রাণ-গৌর আইলা পানিহাটিতে—আজ সেই দিন রে

প্রাণ কেঁদে কেঁদে উঠ্‌ছে
কিছই দেখ্‌তে পেলাম না

তখন জনম হলো না—কিছুই দেখতে পেলাম না
কীর্ত্তন-নটন-লীলা—কিছুই দেখতে পেলাম না
‘কীর্ত্তন-নটন-লীলা’—
এই,–সুরধুনীর তীরে তীরে—কীর্ত্তন-নটন-লীলা

কিছুই দেখতে পেলাম না
বিশেষতঃ এই পানিহাটিতে

এই বটবৃক্ষমুলে—বিশেষতঃ এই পানিহাটিতে
‘বিশেষতঃ এই পানিহাটিতে’—
কীর্ত্তন-নটন-লীলা—বিশেষতঃ এই পানিহাটিতে

কিছুই দেখ্‌তে পেলাম না
নিশিদিশি জ্বলছে হিয়া

সেই লীলা-অদর্শন শেল—নিশিদিশি জ্বলছে হিয়া

শ্রীগুরু-মুখে শুনেছি মোরা

ত্রিকাল-সত্য গৌরলীলা—শ্রীগুরুমুখে শুনেছি মোরা

এখনও হতেছে সেই লীলা
ভাগ্যবান জনে দেখ্‌ছে
তাই এসেছি ভাই ভাই মিলে

আজ এই পানিহাটি-গ্রামে—তাই এসেছি ভাই ভাই মিলে

এসেছি আশা করে মনে

ত্রিকাল-সত্য লীলা জেনে—এসেছি আশা করে মনে
এই আগমন-কাল জেনে—এসেছি আশা করে মনে
দেখ্‌তে পাব গোরা-ধনে—এসেছি আশা করে মনে

নিশ্চয় এসেছ তুমি

হা,–প্রাণ-গৌর গুণমণি—নিশ্চয় এসেছ তুমি

ত্রিকাল-সত্য লীলা তোমার

ওহে,–প্রাণ-গৌর প্রেমাবতার—ত্রিকাল-সত্য লীলা তোমার

তুমি,–এসেছিলে এইখানে

এইদিনে নিজগণ সনে—তুমি,–এসেছিলে এইখানে
তোমার রাখবেরে দেখা দিতে—তুমি,–এসেছিলে এইখানে

আজ,–নিশ্চয় এসেছ পানিহাটিতে

ত্রিকাল-সত্য,–লীলায় এই আসবার দিনে—আজ,–নিশ্চয় এসেছ

পানিহাটিতে
করেছ তুমি অবতরণ

এই গঙ্গাতীরে এই বৃক্ষমূলে—করেছ তুমি অবতরণ

একবার দেখা দাও

আজ তোমার আসবাব দিন—একবার দেখা দাও

নিশ্চয় এসেছ তুমি

অনুমান বুঝিতেছি—নিশ্চয় এসেছ তুমি

নৈলে,–এসেছে কার আকর্ষণে

শত শত নরনারী—নৈলে,–এসেছে কার আকর্ষণে

কেবা কারে ডেকেছে

পানিহাটিতে এস বলে—কেবা কারে ডেকেছে

এসেছে কত কূল-নারী

ঘরের আঙ্গিনা যাদের বাহির—এসেছে কত কুল-নারী
দেহ গেহ পাসরি—এসেছে কত কুল-নারী

সবাই,–এসেছে তোমার আকর্ষণে

তুমি এসেছ পানিহাটি-গ্রামে—সবাই,–এসেছে তোমার আকর্ষণে

নিশ্চয় এসেছ তুমি

ও,–চিতচোর চূড়ামণি—নিশ্চয় এসেছ তুমি
ও,–মহাভাব-প্রেমরস-খনি—নিশ্চয় এসেছে তুমি

এই ত সেই লীলাস্থলী

এই ত তরুরাজ রয়েছে সাক্ষী—এই ত সেই লীলাস্থলী

দেখা দাও নিজগুণে

আমরা বড় অভাগা জেনে’—
তোমার,–প্রকট-লীলার অদর্শনে—আমরা বড় অভাগ্য জেনে

একবার দেখা দাও

হা গৌর প্রাণগৌর—একবার দেখা দাও

‘‘একবার দাঁড়াও রসের বদন হেরি হে।’’

একবার দাঁড়াও

ওহে ও,–সীতানাথের আনানিধি—একবার দাঁড়াও
ওহে ও,–প্রাণ শচীদুলালিয়া—একবার দাঁড়াও
ওহে ও,–নদীয়া-বিনোদিয়া—একবার দাঁড়াও
শ্রীবাস-অঙ্গনের নাটুয়া—একবার দাঁড়াও
ওহে ও,–গদাধরের প্রাণ-বঁধুয়া—একবার দাঁড়াও
ওহে ও,–কীর্ত্তন-কেলিরস-বিনোদিয়া—একবার দাঁড়াও
ওহে ও,–নরহরির চিতচোরা—একবার দাঁড়াও
প্রাণ,–রসময়-গৌর-কিশোর—একবার দাঁড়াও
সার্ব্বভৌমের চৈতন্যদাতা—একবার দাঁড়াও
রাজা,–প্রতাপরুদ্রের ত্রাণকারী—একবার দাঁড়াও
স্বরূপের সরবস—একবার দাঁড়াও
রামরায়ের চিতচোর—একবার দাঁড়াও
দাঁড়াও রসের বদন হেরি হে দাঁড়াও
ও,–শ্রীরূপ-হৃদকেতন-দাঁড়াও রসের বদন হেরি হে দাঁড়াও
ও,–শ্রীসনাতনের গতি—দাঁড়াও রসের বদন হেরি হে দাঁড়াও
ও,–শ্রীলোকনাথের চিতচোর—দাঁড়াও রসের বদন হেরি হে দাঁড়াও
ও,–শ্রীজীব-জীবনধন-দাঁড়াও রসের বদন হেরি হে দাঁড়াও
ও,–রঘুনাথ-ভট্টের প্রাণারাম-দাঁড়াও রসের বদন হেরি হে দাঁড়াও
ও,–গোপাল-ভট্টের সর্ব্বস্বদন—দাঁড়াও রসের বদন হেরি হে দাঁড়াও
ও,–দাস-রঘুনাথের সাধনের ধন—দাঁড়াও রসের বদন হেরি হে দাঁড়াও
ও,–প্রকাশানন্দের নয়নানন্দ—দাঁড়াও রসের বদন হেরি হে দাঁড়াও
ও,–নিতাই-পাগল-করা গোরা—দাঁড়াও রসের বদন হেরি হে দাঁড়াও

(মাতন)
কৈ,–কথা ত কৈলে না

তবে কি দেখা দিবে না—কৈ,–কথা ত কৈলে না
আমরা,–অপরাধী স্বতন্তরী বলে—কৈ,–কথা ত কৈলে না

তবে কি দেখা দিবে না
কার কাছে যাব রে

কেবা গৌর দেখাইবে—কার কাছে যাব রে

হা পতিতের বন্ধু নিতাই

প্রাণগৌর লয়ে আছ কোথা—হা পতিতের বন্ধু নিতাই

এই ত তোমার বিহার ভূমি

হা নিতাই কোথা তুমি—এই ত তোমার বিহার ভূমি

(মাতন)
একবার প্রভু এনেছিলেন

দণ্ড-মহোৎসবের সমকালে—একবার প্রভু এনেছিলেন
তোমার নটন দেখ্‌বার তরে—একবার প্রভু এনেছিলেন
মধুর-নীলাচল-হতে—একবার প্রভু এনেছিলেন

তুমি,–ইঙ্গিত করে জানায়েছিলে

গৌর এসেছেন বলে—তুমি,–ইঙ্গিত করে জানায়েছিলে
‘গৌর এসেছেন বলে’—
দ্রোণপুষ্পের গন্ধচ্ছলে—গৌর এসেছেন বলে

আবার,–আজ না কি এসেছিলেন

গৌরসুন্দর রাঘবের প্রীতে—আবার,–আজ না কি এসেছিলেন
সবাই,–নয়নভরে দেখেছিলেন—আবার,–আজ না কি এসেছিলেন

তাই আজ,–এসেছি বড় আশা করে

ত্রিকাল-সত্য লীলা জেনে—তাই আজ,–এসেছি বড় আশা করে
তাঁরে,–দেখ্‌ব বলে এই চোখে—তাই আজ,–এসেছি বড় আশা করে

কেবা আছে কারে বা বলব

পতিতের বন্ধু তুমি বিনে—কেবা আছে কারে বা বলব

হা নিতাই প্রভু নিতাই
প্রাণগৌর দেখাও হে
কথা যে কৈছ না
তোমরা,–অনেকেই ত সঙ্গে আছ

হা প্রাণ-গৌরাঙ্গ—তোমরা,–অনেকেই ত সঙ্গে আছ

কৃপা করে একবার দেখাও

হা,–ভুবন-পাবন গৌরাঙ্গগণ—কৃপা করে একবার দেখাও

কথা যে কৈছ না

নিশ্চয় এসেছ—কথা যে কৈছ না

তবে কি দেখা দিবে না

আমরা অপরাধী বলে—তবে কি দেখা দিবে না

প্রাণগৌর দেখাও এনে

সব দোষ ক্ষমা করে—প্রাণগৌর দেখাও এনে
অদোষদরশী-স্বভাবে—প্রাণগৌর দেখাও এনে

অধিকারে দেখ্‌তে চাই না

ভরসা কেবল তোমাদের করুণা—অধিকারে দেখ্‌তে চাই না

(মাতন)
কেউ ত কথা কইছ না

কত,-আর্ত্তনাদ কর্‌ছি মোরা—কেউ ত কথা কইছ না

কোথা বা যাব রে

কেবা সন্ধান বলে দিবে—কোথা বা যাব রে

‘‘বল বল ওগো সুরধুনী।
কোথা প্রাণ গোরা গুণমণি।।’’

বলে দে বলে দে

ও,–গৌর-গরবিনী সুরধুনী –বলে দে বলে দে
গৌরবক্ষ-বিলাসিনী—বলে দে বলে দে

কোথা,–প্রাণগৌর বিহরিছে

তোমার তীরে এই পানিহাটিতে—কোথা,–প্রাণগৌর বিহরিছে

তুমি ত সন্ধান জান
শ্রীগুরু-মুখে শুনেছি মোরা

‘‘ব্রজরাজ-নন্দের কুমার।
আস্বাদিতে প্রেম শ্রীরাধার।।
শ্রীরাধাভাবকান্তি-অঙ্গিকরী।
অবতরী নবদ্বীপপুরী।।
নিজ-প্রিয়াগণ লয়ে সঙ্গে।
বিহরিলা সঙ্কীর্ত্তন-রঙ্গে
নিজ-নাম-প্রেমরস-দানে।
মাতাইলা স্থাবর-জঙ্গমে।।’’

সে তা তোমারি তীরে গো

ওগো,–গৌরগরবিনী সুরধুনী—সে ত তোমারি তীরে গো
কীর্ত্তন-নটন-রঙ্গ—সে ত তোমারি তীরে গো
সঙ্কীর্ত্তন-মহারাস—সে ত তোমারি তীরে গো

সঙ্কীর্ত্তন-রাস-রঙ্গ-ভূমি

নবদ্বীপে তোমার পুলিন মানি—সঙ্কীর্ত্তন-রাস-রঙ্গ-ভূমি

গৌর,–বিহরিল তোমার তীরে

নিজ,–পারিষদ-গোপী-সঙ্গে—গৌর,–বিহরিল তোমার তীরে
সঙ্কীর্ত্তন-রাস প্রকট করে—গৌর,– বিহরিল তোমার তীরে
নাগরালীর পূর্ণবিকাশ করে—গৌর,–বিহরিল তোমার তীরে

তাতে,–স্থাবর জঙ্গম গোপী লো

হেরি,–ভাবনিধি শচীগোপীসুত—তাতে,–স্থাবর জঙ্গম গোপী হলো

সে ত তোমারি তীরে গো
সকলি ত দেখ্‌ছ

মদন-মোহনের নিত্যত্ব-সকলি ত দেখ্‌ছ
মূরতি-মম্ত প্রেম-বৈচিত্ত-সকলি ত দেখ্‌ছ
বিবর্ত্তে বিলাস-রঙ্গ—সকলি ত দেখ্‌ছ

পদাঙ্কিত ভূমি গো

ভাগ্যবতী তোমার তীরপদাঙ্কিত ভূমি গো
প্রভু-নিতাই-প্রাণ-গৌরাঙ্গের—পদাঙ্কিত ভূমি গো

সকলি দেখেছ

এখনও দেখ্‌ছ—সকলি দেখেছ

বলে দাও কোথা গৌরসুন্দর

সকলি তোমার গোচর—বলে দাও কোথো গৌরসুন্দর

কোথা বিহরে নিজগণ-সনে

সুরধুনী হল দয়া করে—কোথা বিহরে নিজগণ-সনে
ত্রিকাল-সত্য-লীলায় এইখানে—কোথা বিহরে নিজগণ-সনে
এই,–পানিহাটিতে গঙ্গাতীরে—কোথা বিহরে নিজগণ-সনে

একবার,-বলে দাও সুরধুনী

কোথা গেল পাব গৌর-গুণমণি—একবার,–বলে দাও সুরধুনী

কথা যে কৈছ না
আর কারে শুধাব

‘‘বল বল ওহে তরুরাজ।
কোথা প্রাণ গোরা নটরাজ।।’’

তরুবর বল বল

কোথা গেল গৌর দেখতে পাব–তরুবর বল বল

তুমি ত আছ লীলার সাক্ষী

বল,–কোথা আছে গোরা-বনমালী—তুমি ত আছ লীলার সাক্ষী

তুমি ত দেখেছ

অদ্ভুত গৌরাঙ্গ-বিহার—তুমি ত দেখেছ
অন্তরঙ্গ-নিতাই-সনে-তুমি ত দেখেছ
এই তোমার মূলদেশে—তুমি ত দেখেছ

তোমার ভাগ্য অশেষ বটে
তুমি তাঁর অঙ্গসঙ্গ পেয়েছ
যখন-গৌর এসেছিল নীলাচল হতে

তাঁর নিতাই-নটন দেখতে-যখন,–গৌর এসেছিল নীলাচল হতে

ছিলেন,–তোমার শাখা অবলম্বনে

দ্রৌণ-পুষ্পের মালা গলে—ছিলেন,–তোমার শাখা অবলম্বনে

তখন,–পেয়েছিলে তাঁর অঙ্গসঙ্গ

ও,–ভাগ্যবান তরুবর—তখন,–পেয়েছিলে তাঁর অঙ্গসঙ্গ

এখনও দেখ্‌ছ

তখনও দেখেছ—এখনও দেখ্‌ছ
ত্রিকাল-সত্য-লীলায়—এখনও দেখছ

দয়া করে বল বল

ও ভাগ্যবান তরুবর—দয়া করে বল বল
প্রাণ-গৌর কোথা গেল—দয়া করে বল বল

(মাতন)

‘‘বল বল ওহে তরুবর।
কোথা গোরা রসময় নটবর।।’’

তুমি ত দেখেছ
এইখানে নেচেছে

তোমারি এই মূলদেশে—এইখানে নেচেছে
গৌরহরি নৌকা হতে নেমে—এইখানে নেচেছে

নিজ-কৃপাশাটী পরায়েছে

নাবিকেরে দয়া করে—নিজ-কৃপাশাটী পরায়েছে

তুমি ত দেখেছ তাঁরে

একবার দেখাও মোরে—তুমি ত দেখেছ তাঁরে

কথা যে কৈলে না
আর কার কাছে যাব

গৌর-সন্ধান জানিতে—আর কার কাছে যাব

‘‘বল বল পানিহাটি-বাসী।
কোথা চিতচোরা গোরাশশী।।’’

বলে দাও দয়া-করি

তোমাদের,–হাতে ধরি পায়ে পড়ি—বলে দাও দয়া-করি’
তোমারা,–পদাঙ্কিত-ভূমি-নিবাসী—বলে দাও দয়া-করি’

তোমরা,–নিত্য-সিদ্ধ গৌর-পরিকর

তোমরা,–জান বা না জান—তোমরা,–নিত্য-সিদ্ধ গৌর-পরিকর
তোমরা,–বুঝ বা না বুঝ—তোমরা,–নিত্য-সিদ্ধ গৌর-পরিকর
যত আবরণে থাক না কেন—তোমরা,–নিত্য-সিদ্ধ গৌর-পরিকর

যদি,–গৌর-পরিকর না হবে

কেন,–এ-ভূমিতে বসতি পাবে—যদি,–গৌর-পরিকর না হবে

তোমরা বড়—ভাগ্যবান ভাগ্যবতী

পানিহাটি-বাসী নর-নারী—তোমরা বড়,–ভাগ্যবান ভাগ্যবতী
এই ভূমিতে পেয়েছ বসতি—তোমরা বড়,–ভাগ্যবান ভাগ্যবতী

অদ্ভুত ভূমি এই পানিহাটি

হেথা,–নিতুই আসে গোরশশী—অদ্ভুত ভূমি এই পানিহাটি
‘হেথা, নিতাই আসে গোরাশশী’—
রাঘবের,–প্রেম-সেবায় বাঁধা পড়ি’—হেথা,–নিতুই আসে গোরাশশী

অদ্ভুত ভূমি এই পানিহাটি
তোমরা,–নিতাই বুঝি দেখ তাঁরে

আজ ত দেখ্‌ছ সবার সাথে—তোমরা,–নিতুই বুঝি দেখ তাঁরে
আজ,–গৌরের প্রকাশ্য আগমনে—তোমরা,–নিতুই বুঝি দেখ তাঁরে
শ্রীরাঘবের আনুগত্যে—তোমরা,–নিতুই বুঝি দেখ তাঁরে

দেখাও মোদের প্রাণ গোরা

রাঘবের চিতচোরা—দেখাও মোদের প্রাণ গোরা

কেউ যে কথা কৈছ না
তবে,–আর কার কাছে যাব
এ জগমাঝে আর কে আছে

আমাদের ব্যথার ব্যথী—এ জগমাঝে আর কে আছে

ওগো আমার ব্যথার ব্যথী
ওগো আমার দরদী
কেশে ধরে টেনে তুলেছ

সংসার-কূপ হতে—কেশে ধরে টেনে তুলেছ
লীলা-ভূমি দেখায়েছ—কেশে ধরে টেনে তুলেছ
লীলার সন্ধান জানায়েছ—কেশে ধরে টেনে তুলেছ
ভাবাবেশে কীর্ত্তন-রঙ্গে—লীলার সন্ধান জানায়েছ

দেখাবে বলে বলেছিলে
কিন্তু-ফাঁকি দিয়ে লুকাইলে
লুকাইয়ে করছ খেলা

প্রাণ নিতাই গৌর লয়ে—লুকাইয়ে করছ খেলা

(মাতন)
তুমি ত সঙ্গে এসেছ

ত্রিকাল-সত্য-লীলায়—তুমি ত সঙ্গে এসেছ

নৈলে আমারা আসব কেনে

আমরা,–এসেছি তোমার আকর্ষণে—নৈলে আমার আসবে কেনে

একবার দেখা দাও

চিতচোর গোরা লয়ে—একবার দেখা দাও

একবার দেখতে সাধ

অধিকার না থাকিলেও—একবার দেখ্‌তে সাধ
অদোষ-দরশী প্রভু জেনে—একবার দেখ্‌তে সাধ
অযাচিত-কৃপাকারী জেনে—একবার দেখতে সাধ

প্রাণে প্রাণে বলে দাও

ওহে আমার প্রাণের ঠাকুর—প্রাণে প্রাণে বলে দাও
কোথা গেলে দেখতে পাব—প্রাণে প্রাণে বলে দাও

কে যেন বলছে প্রাণে প্রাণ

প্রাণ গৌর আছে রাঘব-ভবনে—কে যেন বলছে প্রাণে প্রাণে

‘‘চল যাই সবে মিলে রাঘবের ঘরে।।
প্রাণ গৌর বিহরিছে দেখব নয়নভরে।।
প্রাণ গৌর তথা বিহরে দেখব নয়নভরে।
চিতচোর প্রাণ গৌরাঙ্গে দেখব নয়নভরে।।’’

(বৃক্ষতলা হইতে শ্রীরাঘবের বাড়ী যাত্রা)
চল যাই রাঘবের বাড়ী

কোথা বিহরে প্রাণ গৌরহরি—চল যাই রাঘবের বাড়ী

(মাতন)
(শ্রীরাঘব-পণ্ডিতের বাড়ীর মাধবীতলায় কীর্ত্তন)
এই ত রাঘব-পণ্ডিতের আলয়

লোকমুখে পেলাম পরিচয়—এই ত রাঘব-পণ্ডিতের আলয়

রাঘব-পণ্ডিত কোথা তুমি

প্রাণ-নিতাই-গৌর-প্রিয়—রাঘব-পণ্ডিত কোথা তুমি
এই ত তোমার বসতি-ভূমি—রাঘব-পণ্ডিত কোথা তুমি

(মাতন)
প্রাণে প্রাণে জানালেন মোদের

পরম করুণ শ্রীগুরুদেব—প্রাণে প্রাণে জানালেন মোদের

প্রাণ গৌর এসেছেন তোমার ঘরে

ত্রিকাল-সত্য,–লীলায় এই পানিহাটিতে –প্রাণ গৌর এসেছেন—তোমার ঘরে
বৃন্দাবন,–যাবার ছলে নীলাচল হতে—প্রাণ গৌর এসেছেন তোমার ঘরে
তাঁর প্রিয়গণ-সঙ্গে—প্রাণ গৌর এসেছেন তোমার ঘরে

তাই,–তাঁরে দেখতে এলাম সবাই

শ্রীগুরুদেবের কৃপা-প্রেরণায়—তাই,–তাঁরে দেখ্‌তে এলাম সবাই

একবার দেখা দাও হে

হা গৌর-প্রিয় রাঘব-পণ্ডিত—একবার দেখা দাও হে
তোমার,–গৃহ-বিহারী গোরাধনে –একবার দেখা দাও হে

এ ত নয় বটে নূতন কথা

তোমার ঘরে গৌরের কথা—এ ত নয় বটে নূতন কথা

শ্রীগুরুমুখে শুনেছি মোরা
শ্রীমুখে বলেছেন গৌরহরি

মধুর-নীলাচলে বসি—শ্রীমুখে বলেছেন গৌরহরি
নদীয়ার ভক্তগণ-প্রান্তে—শ্রীমুখে বলেছেন গৌরহরি

চারি ঠাঁই আমি থাকি সর্ব্বথা

শুন শুন ভক্তগণ—চারি ঠাঁই আমি থাকি সর্ব্বথা

‘‘শ্রীশচীমাতার রন্ধন’’

শচীমাতার হাতে আমি নিতুই খাই

আবেশে কিছু জানে না আই—শচীমাতার হাতে আমি নিতুই খাই

‘‘শ্রীবাস-অঙ্গনে’


নিতুই আমি কীর্ত্তন করি—‘‘শ্রীবাস-অঙ্গনে’’

‘‘নিত্যানন্দ-অঙ্গনে’’

নিতাই,–যেখানে নাচে সেখানে থাকি

আপন,–নটন-মাধুরী দেখ্‌ব বলি’—নিতাই,–যেখানে নাচে-সেখানে থাকি

‘‘শ্রীরাঘব-ভবনে’’

আমি থাকি সর্ব্বদাই

শুন ভক্তগণ এই চারি ঠাঁই—আমি থাকে সর্ব্বদাই

তাই বলি,–তোমার ঘরে প্রভু নিতুই আসে

আমরা,–শুনেছি শ্রীগুরুমুখে—তাই বলি,–তোমার ঘরে প্রভু-নিতুই আসে
তোমার,–অহৈতুকী সেবার বলে—তাই বলি,–তোমার ঘরে প্রভু- নিতাই আসে
প্রেমভূখা স্বভাবেতে—তাই বলি,–তোমার ঘরে প্রভু নিতুই আসে
তোমার,–প্রীতি উপহার ভোগ করিতে—তাই বলি, তোমার ঘরে—প্রভু নিতুই আসে
তোমার প্রীতি-ইঙ্গিতে—তাই বলি,–তোমার ঘরে প্রভু নিতুই আসে
তোমার,–প্রীতিদত্ত নারিকেল-শস্যের তরে—তাই বলি,–তোমার ঘরে প্রভু নিতাই আসে

বড় প্রীতে দাও তুমি

দ্বাদশ, যোজন হতে নারিকেল আনি—বড় প্রীতে দাও তুমি

দময়ন্তীর দ্রব্য ভোগের আশে
সেই প্রীতি ভোগের তরে
এ তো হল নিত্য-বিহার
এ ত নয় সকলের গোচর
এ ত নয় সকলের ভোগ্য

গোপনে তুমি ভোগ কর—এ ত নয় সকলের ভোগ্য

আজকার লীলায় বিশেষ আছে
আজ,–এসেছিলেন এইখানে

নৈমিত্তিক-লীলায় বিশেষ-ভাবে—আজ,–এসেছিলেন এইখানে
সকলের গোচর হয়ে—আজ,–এসেছিলেন এইখানে

ত্রিকাল-সত্য লীলা সেই
তাই আজ,–এসেছি বড় আশা করে

আমরা,–ভাই ভাই ভাই মিলে—তাই আজ,–এসেছি বড় আশা করে
সেই লীলা ভোগের আশে—তাই আজ,–এসেছি বড় আশা করে

কোথা লুকায়ে রেখেছ তারে

গৌর,–এসেছেন নিশ্চয় তোমার ঘরে—কোথা লুকায়ে রেখেছ তারে

এই মাধবীলতার কুঞ্জে
একবার দেখাও মোদের

সেই চিতচোর চূড়ামণিরে—একবার দেখাও মোদের
বড় সাধে এসেছি দেখ্‌ব বলে—একবার দেখাও মোদের

বড় সাধে এসেছি দেখ্‌ব বলে

এই আসবার কাল জেনে—বড় সাধে এসেছি দেখ্‌ব বলে

বড় সাধ দেখ্‌ব বলে
খুঁজে খুঁজে বেড়াইছি

যেদিন হতে নাম শুনেছি—খুঁজে খুঁজে বেড়াইছি
সুরধুনী-সিন্ধু-যমুনাকূলে—খুঁজে খুঁজে বেড়াইছি

চিতচোরা দেয় না ধরা

খুঁজে খুঁজে হলাম সারা—চিতচোরা দেয় না ধরা
খুঁজে খুঁজে হলাম সারা’—
গঙ্গাতীরে গিয়ে মোরা—খুঁজে খুঁজে হলাম সারা

চিতচোরা দেয় না ধরা
সেখানে পেলাম না দেখতে

শুনলাম এসেছে তোমার গৃহেতে—সেখানে পেলাম না দেখতে

তাই তো এসেছি মোরা

দেখিতে চিতচোরা গোরা—তাই তো এসেছি মোরা

একবার দেখা দাও ওহে

গৌর-প্রিয় রাঘব-পণ্ডিত—একবার দেখা দাও হে

ভয় নাই আমরা লয়ে যাব না
গৌর লয়ে কিবা করব
কি দিয়ে তাঁরে বেঁধে রাখ্‌ব

দুর্ব্বাসনার কিঙ্কর মোরা—কি দিয়ে তাঁরে বেঁধে রাখব
অভিমানের খনি মোরা—কি দিয়ে তাঁরে বেঁধে রাখব
কপটতার মূরতি মোরা—কি দিয়ে তাঁরে বেঁধে রাখব
ভালবাস্‌তে জানি না—কি দিয়ে তাঁরে বেঁধে রাখব
সে যে,–দাস-রঘুনাথের সাধ্যনিধি—কি দিয়ে তাঁরে বেঁধে রাখব

নৈলে,–গৌর পাবার নাই কোন আশা

একমাত্র,–গৌরগণের কৃপা-ভরসা—নৈলে,—গৌর পাবার নাই কোন আশা

দয়া করে একবার দেখাও

অখিল-রসের মূরতি—দয়া করে একবার দেখাও
হরিবোলা রসের বদন—দয়া করে একবার দেখাও

পরীক্ষা করব

একবার মূরতি দেখব—পরীক্ষা করব

তাঁর,—মূরতি কত শকতি ধরে

যাঁর,–নামে ঘরের বাহির করে—তাঁর,–মূরতি কত শকতি ধরে

(মাতন)
একবার দেখাও হে

গৌরপ্রিয় রাঘব-পণ্ডিত—একবার দেখাও হে

সবাই দেখক নয়নভরে

যাঁর,–নাম শুনেছে দেক নাই তাঁরে—সবাই দেখুক নয়নভরে
কনকরুচির-গৌরে—সবাই দেখুক নয়নভরে
সর্ব্বচিত্তৈক-চৌরে—সবাই দেখুক নয়নভরে
প্রকৃতি মধুর-দেহে—সবাই দেখুক নয়নভরে
পূর্ণলাবণ্য-গেহে—সবাই দেখুক নয়নভরে

সবাই দেখুক একবার

সৌন্দর্য্যের সার মাধুর্য্যে পার—সবাই দেখুক একবার
মহাভাবের আধার—সবাই দেখুক একবার

একবার দেখাও হে

নিতাই-প্রিয় রাঘব-পণ্ডিত –একবার দেখাও হে

কথা যে কইছ না
নামে যে কলঙ্ক হল

উদার গৌরাঙ্গদাস এই—নামে যে কলঙ্ক হল
সে উদারতা কোথা গেল—নামে যে কলঙ্ক হল

উদার প্রভুর,–দাসের কি এক স্বভাব
তোমারে—সবে স্বার্থপর বলবে

গৌর নিয়ে রাখলে লুকায়ে—তোমারে,–সবে স্বার্থপর বলবে

দেশে দেশে বলে বেড়াবে

গৌরদাস স্বার্থপর—দেশে দেশে বলে বেড়াবে

যদি কলঙ্কের ভয় থাকে

একবার দেখাও হে—যদি কলঙ্কের ভয় থাকে

পরাণ-গৌরাঙ্গ দেখাও

ঘুচাও নামের কালিমা ঘুচাও—পরাণ-গৌরাঙ্গ দেখাও

কে যেন বলছে প্রাণে প্রাণে
যাও যাও শ্রীরাঘব-মন্দিরে

প্রাণ-গৌর সেথা বিহরে—যাও যাও শ্রীরাঘব-মন্দিরে

চল শ্রীমন্দিরে যাই

দেখিব শ্রীচৈতন্য-গোঁসাঞি—চল শ্রীমন্দিরে যাই

(মাতন)

প্রাণ-গৌর দেখতে এলাম পানিহাটি-গ্রামে।’’

ত্রিকাল-সত্য লীলা জেনে

শ্রীগুরু-কৃপা’-প্রেরণায়—ত্রিকাল-সত্য লীলা জেনে

‘‘প্রাণ গৌর দেখতে এলাম পানিহাটি গ্রামে।
খুঁজিয়া খুঁজিয়া তাঁর না পাইনু সন্ধানে।।
কে যেন বলিয়া দিল মোর প্রাণে প্রাণে ।
প্রাণগৌর বিহরে শ্রীরাঘ-ভবনে।।
অপরূপ দেখলাম আসি রাঘবের ঘরে।
রাধাশ্যাম-রূপ ধরে গৌরাঙ্গ বিহরে।’’

গোপনে গৌরাঙ্গ বিহরে

রাঘব-পণ্ডিতের ঘরে—গোপনে গৌরাঙ্গ বিহরে
রাধাশ্যাম-স্বরূপ ধরে—গোপনে গৌরাঙ্গ বিহারে

(মাতন)

পাছে কেউ ধরে ফেলে তাই—গোপনে গৌরাঙ্গ বিহরে

এবার,–সকলি যে আবরণ

গুপত-গৌরাঙ্গ-লীলায়—এবার,–সকলি যে আবরণ

আপনারে এনেছে যে

রাধাভাবকান্তিতে—আপনারে এনেছে যে

আজ আবার,–হয়ে গেছে ছাড়াছাড়ি

হয়েছিল জড়াজড়ি—আজ আবার,–হয়ে গেছে ছাড়াছাড়ি
বুঝি—নিজ-রহস্য জানাবার লাগি—আজ আবার,–হয়ে গেছে ছাড়াছাড়ি

আমি ত একা নই

আশ্রয়-সঙ্গে মিলিত হই—আমি ত একা নই

এই রহস্য জানাবার লাগি

বুঝি,–হয়ে গেছে ছাড়াছাড়ি—এই রহস্য জানাবার লাগি

‘‘অপরূপ দেখলাম আসি রাঘবের বাড়ী।
রাধাশ্যাম-যুগলরূপে বিহরে গৌরহরি।।’’

অকস্মাৎ দেখতে পেলাম
নাই মুরতি রাধাশ্যাম

গৌররূপে বিহরে একঠাম—নাই মূরতি রাধাশ্যাম

দেখিলাম দেখতে দেখতে
প্রাণগৌর বিহরে

এক,–নব-মূরতি সঙ্গে করে—প্রাণগৌর বিহরে

সে যে অভিন্ন-মূরতি

পরাণ-গৌরাঙ্গ-সনে—সে যে অভিন্ন-মূরতি
গৌর-সনে আছে মাখি—সে যে অভিন্ন-মূরতি

দুই মূরতি মিশামিশি

নিত্যানন্দ গৌরহরি-দুই মুরতি মিশামিশি

বিলসে রাঘবের ঘরে

নিতাইগৌর জড়াজড়ি-রূপে—বিলসে রাঘবের ঘরে

নিতাই রাধা গৌর শ্যাম

শ্রীগুরু-আগেতে দেখলাম—নিতাই রাধা গৌর শ্যাম
অপরূপ রূপ-ঠাম—নিতাই রাধা গৌর শ্যাম
দোঁহে হয় দোঁহার প্রাণ—নিতাই রাধা গৌর শ্যাম

প্রাণভরে করে গান

সবাই হয়ে এক প্রাণ—প্রাণভরে কর গান

‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’

(মাতন)

‘‘শ্রীগুরু-প্রেমানন্দে নিতাই গৌর হরিবোল।।’’



অভিসার আক্ষেপানুরাগ কুঞ্জভঙ্গ খণ্ডিতা গীতগোবিন্দ গোষ্ঠলীলা দানলীলা দূতী ধেনুবৎস শিশুহরণ নৌকাখন্ড পূর্বরাগ বংশীখণ্ড বিপরীত বিলাস বিরহ বৃন্দাবনখন্ড ব্রজবুলি বড়াই বড়াই-বচন--শ্রীরাধার প্রতি মাথুর মাধবের প্রতি দূতী মান মানভঞ্জন মিলন রাধাকৃষ্ণসম্পর্ক হীন পরকীয়া প্রেমের পদ রাধা বিরহ রাধিকার মান লখিমাদেবি শিবসিংহ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন শ্রীকৃষ্ণের উক্তি শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগ শ্রীকৃষ্ণের মান শ্রীকৃষ্ণের স্বয়ংদৌত্য শ্রীগুরু-কৃপার দান শ্রীরাধা ও বড়াইয়ের উক্তি-প্রত্যুক্তি শ্রীরাধার উক্তি শ্রীরাধার প্রতি শ্রীরাধার প্রতি দূতী শ্রীরাধার রূপবর্ণনা শ্রীরাধিকার পূর্বরাগ শ্রীরাধিকার প্রেমোচ্ছ্বাস সখীতত্ত্ব সখীর উক্তি সামোদ-দামোদরঃ হর-গৌরী বিষয়ক পদ