‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’
‘‘ফাল্গুনী পূর্ণিমা তিথি শুভগ সকলি।’’
ফাল্গুনী পূর্ণিমা তিথি—যাইরে তিথির বালাই যাইরে
যে তিথিতে গোরাচাঁদের উদয়—যাইরে তিথির বালাই যাইরে
যে তিথিতে আমার গৌর আইলা—যাইরে তিথির বালাই যাইরে
যে তিথিতে প্রাণগৌর প্রকট হৈলা—যাইরে তিথির বালাই যাইরে
ফাল্গুনী পূর্ণিমা তিথিতে—সকল মঙ্গল মিলিল আসি
জগন্মঙ্গল আসবে বোলে—সকল মঙ্গল মিলিব আসি
আসবে জেনে,–জগন্মঙ্গল গোরা-শশী—সকল মঙ্গল মিলিল আসি
আপনাকে ধন্য করিতে—সকল মঙ্গল উদয় হৈলা
মহাপ্রভুর আগমন জেনে—সকল মঙ্গল উদয় হৈলা
ভুবনমঙ্গল গৌর আস্বাদিতে—সকল মঙ্গল উদয় হৈলা
মঙ্গল মঙ্গল আস্বাদিতে—সকল মঙ্গল উদয় হৈলা
‘মঙ্গল মঙ্গল আস্বাদিতে—
গৌরের আগমন তিথিতে—মঙ্গল মঙ্গল আস্বাদিত
জগন্মঙ্গলের আসবার দিনে—মঙ্গল মঙ্গল আস্বাদিতে
আপন আপন,–মঙ্গলনামের সার্থকতা লাগি—সকল মঙ্গল মিলিল আসি
আপন আপন,–মঙ্গলনামের সার্থকতা লাগি’—
জগন্মঙ্গল প্রভুর সেবা করি—আপন আপন,–মঙ্গলনামের সার্থকতা লাগি
‘জগন্মঙ্গল প্রভুর সেবা করি’—
তার আগমন তিথিতে মিশি—জগন্মঙ্গলপ্রভুর সেবা করি
আপন আপন,–মঙ্গলনামের সার্থকতা লাগি—সকল মঙ্গল মিলিল আসি
জনম লভিবে গোরা পড়ে হুলাহলি।।’’
জগন্মঙ্গময় আসবে জানি’—উঠিল,–চারিদিকে জয়ধ্বনি
গৌরাঙ্গস্বরূপের আবির্ভাব কথা—কেবা তাদের বলে দিল
‘গৌরাঙ্গস্বরূপের আবির্ভাব কথা’—
মহারাসবিলাসের পরিণতি—গৌরাঙ্গস্বরূপের আবির্ভাব কথা
তাদের,–জানিবারনয় তারা কেমনে জানিল—
প্রাণগৌর আবির্ভাব হবে বলে—কেবা তাদের ইঙ্গিত কৈল
কেবল লীলাশক্তির খেলা
লীলাশক্তি জানায়েছে
প্রাণগৌর আসবে বলে—লীলাশক্তি জানায়েছে
দেখিতে প্রাণগৌর-মুখ—তাইতে সবে উনমুখ
নৈলে,–আর কেবা জানাবে
নিগূঢ় গৌরলীলার সন্ধান—নৈলে,–আর কেবা জানাবে
এবার,–জানাইবে যে জগতের
লীলাশক্তি,–উদারতা স্বভাব পেয়েছে
ব্রজের নিকুঞ্জ-বিলাস-বৈভবে—লীলাশক্তি,–উদারতা স্বভাব পেয়েছে
কুঞ্জবাসী–বিনা কেউ জানত না যারে—এবার,–জানাইবে যে জগতেরে
এস,–জগমঙ্গল গৌর দেখবে এস—তাই,–লীলাশক্তি তাদের জানাইল
গৌরস্বরূপ আসবে বলে—লীলাশক্তির ইঙ্গিত পেয়ে
‘গৌরস্বরূপ আসবে বলে’—
ফাল্গুনী,–পূর্ণিমাতে নদীয়া মণ্ডপে—গৌরস্বরূপ আসবে বলে
জগন্মঙ্গলালয়ে দেখবে বলে
দেখিবারে গোরা-চাঁদমুখ—কেবা তাদের লালসা দিল
দেখিবারে নিকুঞ্জ-বিলাস-বৈভব—কেবা তাদের শকতি দিল
কেবা সে অধিকার দিল
তাদের সৌভাগ্য উদয় লাগি—বুঝি,–লীলাশক্তি দিয়াছে শকতি
এবার,–অনর্পিত অর্পণ জানি—বুঝি,–লীলাশক্তি দিয়াছে শকতি
আসিবে সোণার গোরা দূরে যাবে দুঃখ।।’’
দূরে যাবে সকল দুঃখ—দেখিতে সুখময় স্বরূপ
চল যাই দেখি গিয়া
মা যোগমায়া করিছেন ইঙ্গিত—চল যাই দেখি গিয়া
সোণার গোরা আসবে নদীয়া—চল যাই দেখি গিয়া
প্রেমধনে ধনী না হলে পরে—আত্যন্তিক,–দুঃখের নিবৃত্তি হয় না জীবেরে
জীবের দুঃখ নিবৃত্তির তরে—এতদিন,–অনেক উপায় করেছেন বটে
প্রেমধন দেওয়া হয় নাই—কিন্তু,–আত্যন্তিক দুঃখের নিবৃত্তি হয় নাই
প্রেমধনে জীব ধনী হবে—এবার দুঃখের নিবৃত্তি হবে
সময় জেনে প্রকাশ হল
লীলাশক্তির ইঙ্গিত জেনে—সময় জেনে প্রকাশ হল
তাই,–মাঙ্গলিক ধ্বনি করে
অমরগণ সুরপুরে—তাই,–মাঙ্গলিক ধ্বনি করে
মঙ্গলময় আসবে বলে—তাই,–মাঙ্গলিক ধ্বনি করে
লীলাশক্তির কৃপাবলে—তারা গৌরের,–সেবা অধিকার পেয়েছে
গোরা,–রাসরাজে সুখ দিতে—সুগন্ধি,–পবন হল প্রবাহিত
আপনায় করিতে কৃতার্থ—সুখময়,–সুযোগ পেয়ে সমাগত
গৌর-সেবায় হয়ে নিয়োজিত –সুখময়,–সুযোগ পেয়ে সমাগত
গৌর-অঙ্গ-পরশ পেয়ে—সেবাছলে ধন্য হবে
আনন্দঘন দেখবে বলে—আনন্দ আর ধরে নারে
আনন্দেতে সুরবালাগণ—করে পুষ্প বরিষণ
আসছে জেনে শচীনন্দন—করে পুষ্প বরিষণ
জয় নদীয়া-বিহারী বলে—করে পুষ্প বরিষণ
করিবারে প্রেমামৃত সিঞ্চন—করে পুষ্প বরিষণ
ব্রজবালার স্বভাব পেয়েছে
স্বরগেতে সুরবালা—ব্রজবালার স্বভাব পেয়েছে
যা হবার নয় তাই হয়েছে—ব্রজবালার স্বভাব পেয়েছে
দরশনের বাধা দূর করি’—আসিছেন,–হরিনাম আগে করি
দরশনে,–মনের বাধা দূর করি’—আসিছেন,–হরিনাম আগে করি
ধরা দিতে জগভরি’—আসিছেন,–হরিনাম আগে করি
আগে সকল-অমঙ্গল হরি—আসিছে,–জগন্মঙ্গল গৌরহরি
গ্রহণের ছল করি—জগভরি’ বোলাইল হরি
অন্তরে অন্তরঙ্গ গ্রহণ—বাহিরে প্রাকৃত গ্রহণ
রাধাভাব,–কান্তি ধরি’ বংশীধারী—আজ,–প্রকট হৈলা শচীনন্দন
রাধাভাব,–কান্তি ধরি’ বংশীবদন—প্রকট হৈলা শচীনন্দন
কেন বলে কিছু না জানে—আজ,–সবাই হরি হরি বলে
কে যেন তাদের বলায় বলে—আজ,–সবাই হরি হরি বলে
বুঝি,–আগে রটনা করে দিছে
বিষম চোরের আবির্ভাব—বুঝি,–আগ রটনা করে দিছে
সব হরণ করবে বলে—বুঝি,–আগে রটনা করে দিছে
জগভরি বলায়ে হরি—আসছেন আমার গৌরহরি
বুঝি,–নিজস্বভাব প্রকট করি—আসছেন আমার গৌরহরি
পিছে,–প্রেম দিয়ে পূরণ করি—আগে,–হরি বলে সর্ব্বস্ব হরি’
হরি বলি সবার অভাব হরিছে– নিজস্বভাব প্রকট করিছে
হরি বলি সবার অভাব হরিছে–
পিছে প্রেমে ভরবে সবে–হরি বলি সবার অভাব হরিছে
আমার আগমনের পরিচায়ক
আমার মঙ্গলময় নাম—আমার আগমনের পরিচায়ক
নিজ নাম আগে করি—তাই,–পিছে আসছেন গৌরহরি
নামীর আগে নাম চলে—আজ,–সবাই হরি হরি বলে
নাম,–প্রচারিতে আসবার কথা
আসবার আগেই হল নামের প্রচার—নম,–প্রচারিতে আসবার কথা
নিজ নাম আগে করি—এমন করে এল কেনে
নাম যদি না যায় আগে—নৈলে,–কেবা তারে জানাবে
নাম জানা না থাকিলে—কারও কি সন্ধান মিলে
নাম চাঁদে আগে করি—আইলা প্রাণের গৌরহরি
চিরকাল ছিল এই ত রীতি
আগে ভজলে তবে প্রেম প্রাপ্তি—চিরকাল ছিল এই ত রীতি
আগে নাম প্রেম জগতে দিয়ে—এবার পিছেই এল ধেয়ে
আগে নাম দিয়ে রসাইয়া—এল আমার গোরা রসিয়া
নাম দিয়ে রসনা –কেন বা হবে না
নাম যে তার স্বরূপ প্রকাশ
এই নামও ত রস-স্বরূপ
বরং,–নামে অধিক রসের বিকাশ
নামী হতে নাম বড়—বরং,–নামে অধিক রসে বিকাশ
নাম দিয়ে জগৎ রসাইয়া—এল গোরা রসিয়া
বুঝি,–জানাবে সবার এক স্বভাব—তাই,–আজ হইল সবার এক ভাব
মধুর রসে মাতাবে সবে—এক স্বভাব সবার জানাবে
আসছে মধুর গৌরাঙ্গহরি—সবে হবে,–একরসের অধিকারী
সব সুমঙ্গল আগে করি—আইলা—জগন্মঙ্গল গৌরহরি
জগভরি হরি হরি বলায়ে—খেলার,–ভূমি করে আইল পিছে
পাপতম বিনাশিতে আকাশের চাঁদ ভূমিতে এল’
দেখি,–আকাশের চাঁদ মাটিতে উদয়—সব জগৎ হইল বিস্ময়
‘দেখি—আকাশের চাঁদ মাটিতে উদয়’
এই মধুর নদীয়ায়—দেখি,–আকাশের চাঁদ মাটিতে উদয়
আজ,–গোরাচাঁদের উদয় হল
শচীগর্ভসিন্ধু হতে—আজ,–গোরাচাঁদের উদয় হল
প্রেমরসসিন্ধু মন্থন করা—আজ,–গোরাচাঁদের উদয় হল
আকাশেতে চাঁদের উদয়—রাহুর প্রাণে সইল নারে
গগনচাঁদের প্রকাশ আজ—রাহুর প্রাণে সইল নারে
যোগ পেয়ে গ্রাস কৈল—রাহুর প্রাণে নাহি সইল
সে ত,–বাহিরের তাপতম নাশে
গগনচাঁদ উদয় হয়ে আকাশে—সে ত,–বাহিরের তাপতম নাশে
ভিতর বাহির আলো করা—আজ,–গোরাচাঁদের উদয় হল
রাহু মনে মনে বলে
গগনচাঁদকে উঠতে দেখে’—রাহু মনে মনে বলে
নদীয়াতে,–গোরাচাঁদ হইলা প্রকাশে—চাঁদ তুমি কেন আকাশে
‘‘গোরাচাঁদ উদয় হল নদীয়াতে’—
অলকঙ্ক ষোলকলা—গোরাচাঁদ উদয় হল নদীয়াতে
কেবা তোমার আদর করবে—কেন,–বৃথা উদয় হইছ আকাশেতে
‘কেবা তোমার আদর করবে’—
ও কলঙ্কী গগনচাঁদ—কেবা তোমার আদর করবে
তোমার,–আর কি উপরে থাকা ভাল
গোরাচাঁদ নদীয়াতে উদয় হল—তোমার,–
যদি,–ধন্য হতে সাধ থাকে
আকাশ হতে নীচে এস—যদি,–নিজ সৌভাগ্য করিতে চাও
গোরাচাঁদের পদে শরণ লও—যদি,–নিজ সৌভাগ্য প্রকট করিতে চাও
শরণ লও,–গৌরপদনখ কোণে—যদি আপনাকে,–ধন্য করা থাকে মনে
ওরে,–নিলাজ কলঙ্কী গগনচাঁদ—আশ্রয় কর গোরাপদতলে
যদি আপন সৌভাগ্য চাও—গোরপদতলে শরণ লও
গগনচাঁদ তোমার আর—উপরে,–প্রকশ থাকা উচিত নয়
ভূমে আসি গৌরচরণে রও—যদি নিজ কৃতার্থতা চাও
গোরাচাঁদের,–আগে প্রাকৃত চাঁদের প্রকাশ—রাহুর প্রাণে আর সইল না
এবে অপরূপ গ্রহণ
এদিকে কিন্তু বিরুদ্ধ গ্রহণ
চাঁদকে রাহু করিল গ্রহণ—এদিকে কিন্তু বিরুদ্ধে গ্রহণ
চাঁদ বাহুকে গ্রাস করিছে—এবার,–রাহু চাঁদকে গ্রাস করিছে
চাঁদ রাহু গ্রহণ করা—আসছে আমাপ প্রাণ গোরা
রাহুকে চাঁদ গ্রাস করিল—গৌরারাজ্যে অপূর্ব্ব গ্রহণ
গ্রহণ করে স্বরূপ প্রকাশ হতেছে
ভাবকান্তি গ্রহণ করে—গৌরস্বরূপ প্রকাশ হতেছে
হরি হরি ধ্বনি উঠে ভরিয়া ভুবন।।’’
গোরা,–প্রকাশ পেয়ে গ্রহণচ্ছলে—জগভরি’ হরি বলায় সকলে
হরিধ্বনি প্রকাশ করিছে
সর্ব্বস্ব হরি হরি আসছে—হরিধ্বনি প্রকাশ করিছে
সাবধান গৌরহরি আসছে—নেপথ্যে,–কেউ যেন বলে দিছে
সামলে নাও যার যা আছে—আসছে গৌরহরি আসছে
সর্ব্বস্ব হরণ করিবে—কাউকে বাকী রাখবে না
সর্ব্বস্ব হরি আপন করিতে—গৌরহরি আসছে নদীয়াতে
নিগম নিগূঢ় গৌরহরি—আজ,–জগভরি’ বলায় হরি হরি
গ্রহণের ছল করি—আজ,–জগভরি’ বলায় হরি হরি
দেখি,–নদীয়া প্রকট গৌরহরি—হরিধ্বনি উঠে ভুবনভরি’
দীন হীন উদ্ধার হইবে ভেল আশ।’’
আর পতিতের ভয় নাইরে প্রাণগৌর এল নদীয়াতে
আজ,-দীনজনে উদ্ধারিতে—প্রাণগৌর এল নদীয়াতে
সবাই,–প্রেমধনে হবে ধনী—আর,–দীন কেউ থাকবে না
বিশ্বম্ভর নাম পূর্ণ করিতে আসছে—আর,–দীন কেউ থাকবে না
নামপ্রেমে বিশ্ব ভরবে—আর,–দীন কেউ থাকবে না
এল,–কলিপাবন অবতার—কলিহত-জীবের ভয় নাই আর
জগন্নাথ আইল দেখে’—আজ,–জগন্নাথদাস আনন্দে ভাসে
কলিজীবের,–উদ্ধার হবে অনায়াসে—আজ,–জগন্নাথদাস আনন্দে ভাসে
জীবের,–নিজের স্বরূপ প্রকাশ হবে
স্বরূপ জাগান স্বরূপ এল—জীবের,–নিজের স্বরূপ প্রকাশ হবে
গৌরমুখ-ইন্দু হেরে— আনন্দসিন্ধু উথলিল
আনন্দঘন আবির্ভাবে—আনন্দের পাথার বয়ে যায় রে
মধুর-নদীয়াপুরে—আনন্দের পাথার বয়ে যায় রে
আনন্দঘন আবির্ভাবে—আনন্দের পাথার বয়ে যায় রে
আনন্দঘন আইল নদীয়াপুরে—আনন্দের পাথার বয়ে যায় রে
ফাল্গুনী পূর্ণিমাতিথি নক্ষত্র ফাল্গুনী।’’
গৌরস্বরূপে সব বিপরীত
আগমনেই বিপরীত
সেথায় কৃষ্ণাষ্টমী এথায় পূর্ণিমা—আগমনেই বিপরীত
নদীয়ায়,–পূর্ণিমাতে প্রকাশ হল—ব্রজে,–অষ্টমীতে এসেছিল
সেখানে বুঝি একা ছিল—তাই,–অষ্টমীতে এসেছিল
শুক্লাষ্টমীর বড়ই প্রভাব
কৃষ্ণাষ্টমীর বরণ ধরাল—শুক্লাষ্টমীর বড়ই প্রভাব
শুক্লপক্ষের এক পূর্ণিমা এল—বরণ ধরায়ে এক করে নিল
তিথি-নক্ষত্রের বালাই লয়ে মরি
প্রকাশ হৈলা গৌরহরি—তিথি-নক্ষত্রের বালাই লয়ে মরি
যে,–তিথিতে আইল নদের নিমাই—শুভ,–তিনি-নক্ষত্রের বালাই যাইরে
এ যে,–ভিতর-বাহিরের তমনাশী—পূর্ণিমার চাঁদ বাইরের তমনাশী
বুঝি,–গগনচাঁদ লজ্জিত হল
গৌরচাঁদের প্রকাশ হল—বুঝি,–গগনচাঁদ লজ্জিত হল
আমার,–আর উপরে থাকা নয় ভাল,–তাই আসি,–পদনখে শরণ নিল
গগনচাঁদ দশ-খণ্ড হল—তাই আসি,–পদনখে শরণ নিল
দূরে গেল অন্ধকার পাইয়া নৈরাশ।।’’
গোরাচাঁদ প্রকাশ হল—আমার আদর কেবা করবে
অন্ধকার মনে করে—আর,–এদেশে থাকা ভাল নয় হে
গোরাচাঁদের উদয় হয়েছে—আর,–এদেশে থাকা ভাল নয় হে
পাপতম দূরে গেল তিমির বিনাশ।।’’)
পূর্ণ,–শশধর চৈতন্য উদয় হল—কলিঘোর,–পাপতম দূরে গেল
যশোদার উদরে জন্ম বিদিত সংসার।
শচীর উদরে এবে জন্ম নদীয়াতে।’’
এবার,–জনমের নূতন রীতি
ব্রজে ছিল কৃষ্ণাষ্টমী তিথি—এবার,–জনমের নূতন রীতি
সেখানে,–কৃষ্ণাষ্টমীতে জনম ছিল—এযে,–পূর্ণিমাতে জনম নিল
এখানে তাহা পূর্ণ হল—সেখানে,–বুঝি কিছু বাকী ছিল
রাইচাঁদের সঙ্গে জড়াজড়ি—এ-চাঁদের অধিক মাধুরী
রাধা-সঙ্গে মিলে পূর্ণ হয়েছে—তাইতে উদয় পূর্ণিমাতে
কৃষ্ণাষ্টমীতে প্রকাশ কাল
ব্রজাকাশে একা কাল—কৃষ্ণাষ্টমীতে প্রকাশ কাল
রাধাসঙ্গ না পাওয়ায়—সে,–চাঁদ হয়েও পূর্ণ বিকাশ হয় নাই
যদি,–কিশোরী চাঁদ কাছে না থাকে—শ্যাম,–চাঁদের আলোর চাঁদেই থাকে
এবার,–দুই মিলে ষোলকলা হয়েছে
তাইতে উদয় পূর্ণিমাতে
পূর্ণ স্বরূপ দেখাবার তরে—তাইতে উদয় পূর্ণিমাতে
শ্যামচাঁদ আর রাইচাঁদ—উদয় হয়েছিল ব্রজাকাশে
কৃষ্ণাষ্টমী আর শুক্লাষ্টমীতে—উদয় হয়েছিল ব্রজাকাশে
এবার,–পূর্ণিমার গঠন হয়েছে
এবার উদয় নদীয়াতে
দুই চাঁদ জড়াজড়ি হয়ে—এবার উদয় নদীয়াতে
নদীয়া,–জড়াজড়ি স্থান বটে—এবার উদয় নদীয়াতে
যেখানে,–দুই তনু সদা মিলিত—ব্রজের,–নিভৃত-কুঞ্জের নিভৃত-কুঞ্জ
‘যেখানে,–দুই তনু সদা মিলিত’—
রাসরসের পরিণতিতে—যেখানে দুই তনু সদা মিলিত
ব্রজের –নিভৃত-কুঞ্জের নিভৃত-কুঞ্জে সেই মধুর নদীয়াতে
কলিযুগের জীব সব নিস্তার করিতে।।’’
রাধাকৃষ্ণ একাধারে—আইলা,–গৌরহরি নদীয়াতে
কলিজীবে উদ্ধারিতে—আইলা,–গৌরহরি নদীয়াতে
‘কলিজীবে উদ্ধারিতে’—
দান করি চির-অনর্পিতে—কলিজীবে উদ্ধারিতে
পরাভক্তি দিয়ে সবে—কলিজীবে উদ্ধারিতে
এ কিন্তু বাহিরের কথা
যখন,–আকাশে চাঁদ উদয় হয়
তখন,–আপনা হতে সব আলো হয়
ইচ্ছা করে আলো করতে হয় না
গৌর,–এসেছে এবার নদীয়াতে
অশেষ বিশেষে,–স্বমাধুরী ভোগ করিতে—গৌর,–এসেছে এবার নদীয়াতে
সেই ভোগ অনায়াসে—জগজীবে বিলাইছে
আনুসঙ্গে নাম-প্রেম প্রচার
কেবল,–রসাস্বাদন উদ্দেশ্য তার—আনুসঙ্গে নাম-প্রেম প্রচার
গৌরপাদপদ্ম বিনে নাহিরে ভরসা।।’’
দুই চাঁদ মিলে আসছে—এবার,–অন্ধকার নিরাশ হবে
এ যে,–পতিত-পাবন অবতার—পতিতের ভয় নাইরে আর
কৃপাকরি করিলা উদয়।
পাপতম হইল নাশ, ত্রিজগতে উল্লাস,
জগভরি হরিধ্বনি হয়।।’’
বিশ্বভরি বলে হরি
আইলা,–বিশ্বম্ভর গৌরহরি—বিশ্বভরি’ বলে হরি
‘আইলা,–বিশ্বম্ভর গৌরহরি’—
প্রেমে জগৎ দিবে ভরি—আইলা,–বিশ্বম্ভর গৌরহরি
বিশ্বভরি’ বলে হরি
সীতানাথ,–নৃত্য করে আনন্দিত মনে।’’
নৈলে,–জগভরি কেন হরি বলে
বিশ্বম্ভর না আইলে—নৈলে,–জগভরি’ কেন হরি বলে
বুঝি,–ত্রিভুবন-পাবন হয়েছে প্রকাশ—নৈলে,–কেন দেখি ত্রিভুবনে উল্লাস
জীবের,–দুঃখে দুঃখী সীতানাথের—আনন্দ আর ধরে নারে
জগভরি’ হরিধ্বনি শুনে’—আনন্দ আর ধরে নারে
জগভরি’ আনন্দ হেরে—আনন্দ আর ধরে নারে
এবার,–বুঝি ব্রত উজ্জাপন হল
আমার,–ডাক তা’ হলে লেগেছে কাণে
নৈলে,–কেন হরি বলবে জগজনে’—আমার,–ডাক তা’ হলে লেগেছে কাণে
কেন মঙ্গল,–চিহ্ন দেখি চারিদিকপানে—আমার,–ডাক তা হলে
আনন্দময় এসেছে বুঝি
নৈলে কেন,–জগভরি’ আনন্দ দেখি—আনন্দময় এসেছে বুঝি
আমার কান্নার ফল ধরেছে—প্রাণে প্রাণে ইঙ্গিত পেয়ে
‘আমার কান্নার ফল ধরেছে’—
প্রাণ,–মদনগোপাল এসেছে—আমার কান্নার ফল ধরেছে
সীতানাথ নাচে আনন্দমনে
আমার,–বাসনা পূরণ অনুমানে—সীতানাথ নাচে আনন্দমনে
অনশনের ফল ধরেছে
আমার,–বিশ্বম্ভর এসেছে—অনশনের ফল ধরেছে
আমার,–বাপ বিশ্বম্ভর এসেছে—অনশনের ফল ধরেছে
হরিদাস লৈয়া সঙ্গে, হুঙ্কার-গর্জ্জন-রঙ্গে,
কেন নাচে কেহ নাহি জানে।।’’
নয়নে শতধারা—পুলকেতে অঙ্গ ভরা
তাইতে সীতানাথ নাচে
প্রভু এসেছে প্রাণ নেচেছে—তাইতে সীতানাথ নাচে
আনন্দে করিলা গঙ্গাস্নান।’’
সীতানাথ,–আনন্দে করিলা গঙ্গাস্নান—অনুমান করি প্রভুর আগমন
ব্রত,–উজ্জাপনের ফল জানিল—আনন্দে গঙ্গাস্নান কৈল
ব্রাহ্মণেরে করে নানা দান।।’’
আমার,–সেই প্রভু এসেছে বলে
যার তরে এস বলে,–ভেসেছিলাম নয়নজলে—আমার,
প্রাণে প্রাণে বলে রে
ব্রাহ্মাণের দান করে—আর,–প্রাণে প্রাণে বলে রে
যেন,–অনুমান হয় সকল—কৃপা কর ব্রাহ্মণ সকল
দানের ফল কিছু পাব বলে—লোক,–দান করে এই আশা করে
কিন্তু,–এ দান নয় পাবার তরে
পেয়েছি বলে দান করে—কিন্তু,–এ দান নয় পাবার তরে
গ্রহণ করেছি বলে দান করে—এত’,–চন্দ্রগ্রহণের দান নয় রে
এসেছে কি আনন্দময়—আজ,–জগৎ কেন আনন্দময়
তোমার ঐছন রঙ্গ, মোর মন পরসন্ন,
জানি,–দেখি কিছু কার্য্যে আছে ভাষ।।’’
সীতানাথের বদন চেয়ে—হরিদাস কহে ইঙ্গিতে
ও শান্তিপুর-নাথ—আজ,–কেন তোমার এত উল্লাস
বুঝি,–আশ মিটাবার পেয়েছ আভাস—আজ,–কেন তোমার এত উল্লাস
তোমার,–রঙ্গ দেখে মনে হতেছে—বুঝি,–মনোবাসনা পূর্ণ হয়েছে
আজ,–এল কি জগন্মঙ্গল—এত আনন্দ কোথা হতে এল
দেখি’ তোমার প্রেমোল্লাস—মনে এই আসে আভাস
পূরাইতে তোমার অভিলাষ—বুঝি,–জগন্মঙ্গল হৈল প্রকাশ
নৈলে কেন,–জগৎ দেখি আনন্দময়—এসেছেন বুঝি সুখময়
যাই স্নান করে গঙ্গাজলে।
আনন্দে বিহ্বল মন, কৈল হরি সঙ্কীর্ত্তন,
নানা দান কৈল মনোবলে।।
এই মত ভক্ত ততি, যার যেই দেশে স্থিতি,
তাঁহা তাঁহা পাই মনোবলে।
নাচে গায় সঙ্কীর্ত্তন, আনন্দে বিহ্বল মন,
আজ,–দান করে গ্রহণের ছলে।।’’
মুর্ত্তিমন্ত প্রাণ এসেছে—সবাই আনন্দে মেতেছে
তাই সবে,–আনন্দেতে নৃত্য করে—আনন্দের মূরতি নদীয়াপুরে
যে দেশে যে ভক্ত আছে—আজ,–সবাবি আনন্দ মনে
আনন্দ ঘনের আগমনে—আজ,–সবারি আনন্দ মনে
গ্রহণের মূর্ত্তি প্রকট হৈলা—তাই গ্রহণ করেছে ছলা
শ্রীরাধিকার ভাবকান্তি—গ্রহণের মূরতি বটে
ভাসিল সকলে কুতূহলে।
ভাসিল গগন শশী, মাখিল বদনে মসী,
কাল পেয়ে গ্রহণের ছলে।।’’
অকলঙ্ক-চাঁদের উদয় দেখে—চাঁদ,–আপন মুখে কালী মাখল
নয়নে,–ধারা বহে কুলু কুলু—জয় দেয় উলু উলু
দামামা দগড় কাঁসি, সানাই ভেউর বাঁশী,
তুড়ী ভেড়ী আর জয় ঢাক।।
মিশ্র-জগন্নাথ-মন, আনন্দে নিমগন’’,
পাইয়া আনন্দঘন—জগন্নাথ মিশ্রের আনন্দিত মন
অনিমিষে পুত্রমুখ চাই।।
গ্রহণের অন্ধকার কেহ না চিনয়ে কারে,
দেবনরে হৈল মিশামিশি।
নদীয়া-নাগরী-সঙ্গে, দেবনারী আসি রঙ্গে,
হেরিছে গৌরাঙ্গ-রূপরাশি।।’’
নৈলে,–গৌর দেখতে নারবে—আইলা,–নদীয়া-নাগরী-বেশে
আনন্দ-সাগরে ভাসি—গৌর-রূপ হেরে দেবনারী
করে দান দরিদ্র সকলে।’’
আমার তনয় থাকুক সুখে—আশীর্ব্বাদ কর সবে
বাসু কহে জীব ভাগ্যফলে।’’
চন্দ্রগ্রহণের কালে ফাল্গুনের মাসে।।’’
রাধা-ভাব-কান্তি অঙ্গীকরি—আইলা,–পূর্ণচন্দ্র গৌরহরি
আজ,–চন্দ্রগ্রহণ ছল করি—আইলা,–পূর্ণচন্দ্র গৌরহরি
রাই কিশোরী শ্যামকে করিছে গ্রহণ—তাই বুঝি আকাশে চন্দ্রগ্রহণ
তাকেই ত গ্রহণ বলে
রাহু চাঁদকে গ্রাস করে—তাকেই ত গ্রহণ বলে
রাইচাঁদ,–শ্যামরাহুকে করল গ্রহণ—এযে দেখি বিপরীত গ্রহণ
না জানি,–প্রভু আসবে কতদিনে—প্রাণ কাঁদছে নিশিদিনে
ত্রিতাপানলে জগৎ জ্বলে—এস আমার,–প্রাণকৃষ্ণ এস বলে
হরিদাস সচকিতে দেখি’ ভঙ্গী তার।।
আনিলুঁ আনিলুঁ গৌর আনিলুঁ নদীয়া।
ইহা বলি নৃত্য করে আনন্দে মাতিয়া।।’’
অনিলুঁ গৌর আনিলুঁ বলে—সীতানাথ নাচে হেলেদুলে
আপনাকে,–আবরি রাধাভাব-কান্তিতে—মদনগোপাল আইলা নদীয়াতে
হরিদাস সীতানাথের –মনোবৃত্তি ভাল জানে
সীতানাথের বাসনা পূর্ণ হল—হরিদাস প্রাণে জানিল
‘সীতানাথের বাসনা পূর্ণ হল—
মদনগোপাল গৌররূপে এল—সীতানাথের বাসনা পূর্ণ হল
হা গৌর প্রাণ গৌর—আজ তোমার আসবার দিন
আজ,–ফাল্গুনী পূর্ণিমা তিথি—আজ তোমার আসবার দিন
উদ্ধারিতে,–জগমাঝে যত দীন—আজ তোমার আসবার দিন
হবে তোমার প্রেমাধীন—জগমাঝে থাকবে না দীন
হা গৌর প্রাণ গৌর—এই দিনে এসেছিলে
বিশ্বম্ভর নাম ধরিলে—এই দিনে এসেছিলে
‘বিশ্বম্ভর নাম ধরিলে’—
নাম,–প্রেমে বিশ্ব ভরবে বলে—বিশ্বম্ভর নাম ধরিলে
সীতানাথের কাতর ক্রন্দন শুনে—এসেছিলে এই দিনে
এই মধুর নদীয়া ভুবনে—এসেছিলে এই দিনে
করিতে তিন-বাঞ্ছা পূরণে—এসেছিল এই দিনে
আনুসঙ্গে করিতে নাম-প্রেম দানে—এসেছিলে এই দিনে
পূর্ণিমাতে আসি নদীয়ায়—জগৎ ভাসালে প্রেমের বন্যায়
আজ তোমার আসবার দিন–তেমনি করে একবার এস
যাও নাই কোথা জানি প্রাণে—এসেছিলে আছ বটে
ত্রিকাল সত্য তোমার—লীলা—আসবার,–দিন মাত্র বলবার কথা
কলিহত জীবের কাছে—জকাশ পেলে আজকার দিনে
বাইরে থাকিলে চলবে না
উদয় হও প্রতি-হৃদাকাশে
যেমনি,–উদয় হলে নদীয়া—আকাশে—উদয় হও প্রতি-হৃদাকাশে
আজ,–জগতের বড়ই দুর্দ্দিন
আজ,–অধিক দুর্দ্দিন তা হতে
তুমি,–এসেছিলে যে দুর্দ্দিনে—আজ,–অধিক দুর্দ্দিন তা হতে
দেখে শুনে মনে হচ্ছে—আজ,–অধিক দুর্দ্দিন তা হতে
জগবাসী জীব যত—কালকলি পীড়নে প্রপীড়িত
পার্থিব পরমার্থিক—দুইদিকে ঘটায় বিপর্য্যয়
জগতের গতি উচ্ছৃঙ্খল হয়—পৃথিবীর ধর্ম্ম বিপর্য্যয়
তোমার পরমার্থ জগৎ–সকলে ভুলে গেছে
তুমি না,–আচরিয়ে শিখাইলে—সকলে ভুলে গেছে
আর তাদের কেবা আছে
প্রাণগৌর তুমি বিনে—আর তাদের কেবা আছে
ওহে,–নবদ্বীপ-সুধাকর—তাই বলি একবার এস
রাইকানু মিশামিশি—উদয় হও গোরাশশী
কলিতম সব নাশি’—উদয় হও গোরাশশী
জীবের,–প্রতিহৃদে বিহর—বিশ্বম্ভর নাম পূর্ণ কর
নামপ্রেমে বিশ্ব ভর—বিশ্বম্ভর নাম পূর্ণ কর
মধুর-রসের মূরতি তোমার—সবাই,–হৃদে ধরুক গুণে ঝুরুক
রাধাভাব-দ্যুতি চোরা—প্রতি,–হৃদে জাগ প্রাণ গোরা
সবাই,–হৃদে রাখুক প্রাণ জুড়াক—প্রতি,–হৃদে জাগ প্রাণ গোরা
ম্লেচ্ছ যবনাদি করে—সবাই ভাসুক নয়ন-জলে
আত্মপর,–দ্বেষাদ্বেষ ভুলে গিয়ে—সবাই ভাসুক নয়ন-জলে
প্রাণ-শচীদুলাল বলে—সবাই ভাসুক নয়ন-জলে
জগভরি তোমার নামের ধ্বনি—একবার শুনি যেন মরি
এই,–একমাত্র বাসনা গৌরহরি—একবার শুনে যেন মরি
তখন জনম দাও নাই মোদের
যখন,–প্রকটলীলায় বিহরিলে
সেই,–সুরধুনীর তীরে তীরে—যখন,–প্রকটলীলায় বিহরিলে
কীর্ত্তন-নটন-রঙ্গে—যখন,–প্রকট লীলায় বিহরিলে
কীর্ত্তন-নটন-লীলা—কিছুই দেখতে পাই নাই
সেই,–লীলা অদর্শন শেল—নিশিদিশি জ্বলছে হিয়ায়
সেই,–লীলা অদর্শন শেল—নিশিদিশি জ্বলছে হিয়ায়
আশাপথ চেয়ে আছি
শ্রীগুরু-শ্রীমুখে কথা স্মঙরি—আশাপথ চেয়ে আছি
প্রতিজ্ঞা করেছ তুমি
সর্ব্বত্র প্রচার হইবে মোর নাম রে।।’’
নামপ্রেমে বিশ্ব ভরল কৈ—কৈ তা হল কৈ
নামপ্রেমে বিশ্ব কৈ ভরল—বরং যে বিপরীত হল
তোমার,–নামে যে কলঙ্ক –বরং যে বিপরীত হল
দেখাও নামের মহিমা দেখাও—ঘুচাও নামের কালিমা ঘুচাও
তোমার সঙ্কল্প ত’ বৃথা হবে না
তাই এই করি প্রার্থনা
আমাদের কি দেখাবে না –তাই এই করি প্রার্থনা
জগভরি’ তোমার নামের কান্না—তাই এই করি প্রার্থনা
বল বল প্রাণের গৌরহরি—সে দিনের আর কদিন বাকী
আমরা দেখতে পাব না কি—সে’ দিনের আর কদিন বাকী
কারে বলব প্রাণের কথা
সেই ব্যথা বুকে ধরে
তোমার,–শ্রীমুখের বাণী শ্রবণ করে—সেই ব্যথা বুকে ধরে
এখন হলাম নিরাশা
দেখি জগতের দুর্দ্দশা—এখন হলাম নিরাশা
নামের ফল কি ফলবে না—আশা কি মিটাবে না
কোথা শান্তিপুর-নাথ
তোমার,–প্রভুর নামে কলঙ্ক হল
ঘুচাও নামের কালিমা ঘুচাও
কোথা আছ প্রভু নিতাই
তোমার,–হাতে ধরে বলে দিয়েছে
নিরজনে কেঁদে কেঁদে—তোমার,–হাতে ধরে বলে দিয়েছে
কৃপা করি লওয়াইত নাম।।
কৃত পাপী দুরাচার, নিন্দুক পাষণ্ডী আর,
কেহ যেন বঞ্চিত না হয়।’’
হা নিতাই প্রভু নিতাই
তোমার,–আজ্ঞা পালন করা হয় নাই
হা নিতাই প্রভু নিতাই
যদি আশা না মিটাবে
আজ্ঞা পালন না করিবে—যদি আশা না মিটাবে
অঙ্গীকার করেছ তুমি
শ্রীগুরুরূপে দেখা দিয়ে—অঙ্গীকার করেছ তুমি
তুমি ত’ অঙ্গীকার করেছ—আমরা তোমার হই বা না হই
আমরা,–বহির্ন্মুখ-দলে মিশিব—নামে কলঙ্ক রটাব
যখন দেখব,–আর কেউ নাই বাকী—সেইদিন তোমার কাছে যাব
ম্লেচ্ছ-যবনাদি করি,–আর কেউ নাই বাকী—সেইদিন তোমার কাছে যাব
সেইদিন তোমার হব
জগদ্গুরু নিত্যানন্দ—সেইদিন তোমার হব
হা,–নিতাই-গৌর-প্রেমের পাগল—হা,–পরম করুণ শ্রীগুরুদেব
কৃপা করে দেখাবে কি-হা,–পরম করুণ শ্রীগুরুদেব
এখন যে তার প্রকট কাল
একবার চেয়ে দেখ প
্রাণ কি কাঁদছে না
নরকের চিত্র দেখে—প্রাণ কি কাদছে না
এ’বুক জুড়াব কার কাছে—আমাদের আর কেবা আছে
কে বলে তোমায় পতিত-পাবন
যদি জীবের এত দুর্গতি—কে বলে তোমায় পতিত-পাবন
‘জীবের যদি এত দুর্গতি’—
কি সে তোমার,–পতিত-পাবনেত্বর খ্যাতি—জীবের যদি এত দুর্গতি
সবাই তোমার নিত্যদাস
তোমার নিত্যদাস সবে
তোমার,–কৃপায় কেন বঞ্চিত হবে—তোমার নিত্যদাস সবে
চিত্তশুদ্ধি করি সবার—কর,–গৌর-নাম-প্রেমে একাকার
পরস্পর বুকে ধরবে—ভাই ভাই করুক কোলাকুলি
পরস্পর বুকে ধরবে—বিরুদ্ধ স্বভাব ভুলে যাবে
হা গৌর প্রাণ গৌর বলে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদুক সবে
তোমার,–গৌর-সম্বন্ধে সবাই বাঁধা পড়বে—সেইদিন প্রাণের ব্যথা যাবে
ম্লেচ্ছ-যবনাদি-নরনারী—অনুরাগে সবাই বলবে
মরমে মরিয়া, যেন থাকি।
সাধ হয় নিরন্তর, হেমকান্তি কলেবর,
সতত হিয়ার মাঝে রাখি।।
তিলক না দেখি তায়, পাঁজর ধ্বসিয়া যায়,
ধৈরয ধরিতে নাহি পারি।
অনুরাগের ডুরি দিয়া, অন্তরে কি করে সিয়া,
না জানি তার কতই ধার ধারি।।’’
সম্বন্ধেতে বাঁধা পড়বে—অনুরাগে সবাই বলবে
জগবাসী নরনারী—অনুরাগে সবাই বলবে
অভাব ঘুচাবে স্বভাব জাগাবে—অনুরাগে সবাই বলবে
অনল জ্বালিয়া দিব লাজে।
গৌরাঙ্গ সম্মুখে করি, হেরিব নয়ন ভরি,’
দিন যায় মিছামিছি কাজে।।’’
নিতাই প্রেম-বিতরণ-দাতা-তবে ঘুচবে মনের ব্যথা।
জগভরি,’—শুনব গৌর-অনুরাগের কথা—তবে ঘুচবে মনের ব্যথা
‘শুনব গৌর-অনুরাগের কথা’—
ম্লেচ্ছ-যবনাদি-নরনারী—শুনব গৌর-অনুরাগের কথা
পূরাও মোদের এই বাসনা
ও,–গুণনিধি নিতাই-সোণা—পুরাও মোদের এই বাসনা
ঘরে ঘরে,–শুনব গৌর-প্রেমের কান্না—পূরাও মোদের এই বাসনা
বলো তোমার প্রাণ-গৌরাঙ্গে
নামপ্রেমে বিশ্ব ভরিতে—বলো তোমার প্রাণ-গৌরাঙ্গে
উদ্ধারিতে যত দীন—আজ তার আসবার দিন
সবার হৃদয় নদীয়া করুক
সবারই হৃদয় ঝুরুক—সবার হৃদয় নদীয়া করুক
হৃদে ধরি গৌর-মূরতি—সকলে যাক্ প্রেমে মাতি
জগভরি উঠুক রোল
গৌরহরি হরিবোল—জগভরি’ উঠুক রোল
ভাইভাই মিলে একপ্রাণে—আমরা বেড়াব আনন্দমনে
হৃদে যদি শ্রীগুরুচরণে—আমরা বেড়াব আনন্দমনে
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’