শ্রীশ্রীমহাপ্রভুর জন্মলীলা কীর্ত্তন

(ফাল্গুনী পূর্ণিমা)


‘‘শ্রীগুরুপ্রেমানন্দে নিতাই-গৌর-হরিবোল’’
‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’
‘‘ফাল্গুনী পূর্ণিমা তিথি শুভগ সকলি।’’

যাইরে তিথির বালাই যাইরে

ফাল্গুনী পূর্ণিমা তিথি—যাইরে তিথির বালাই যাইরে
যে তিথিতে গোরাচাঁদের উদয়—যাইরে তিথির বালাই যাইরে
যে তিথিতে আমার গৌর আইলা—যাইরে তিথির বালাই যাইরে
যে তিথিতে প্রাণগৌর প্রকট হৈলা—যাইরে তিথির বালাই যাইরে

সকল মঙ্গল মিলিল আসি

ফাল্গুনী পূর্ণিমা তিথিতে—সকল মঙ্গল মিলিল আসি
জগন্মঙ্গল আসবে বোলে—সকল মঙ্গল মিলিব আসি
আসবে জেনে,–জগন্মঙ্গল গোরা-শশী—সকল মঙ্গল মিলিল আসি

সকল মঙ্গল উদয় হৈলা

আপনাকে ধন্য করিতে—সকল মঙ্গল উদয় হৈলা
মহাপ্রভুর আগমন জেনে—সকল মঙ্গল উদয় হৈলা
ভুবনমঙ্গল গৌর আস্বাদিতে—সকল মঙ্গল উদয় হৈলা
মঙ্গল মঙ্গল আস্বাদিতে—সকল মঙ্গল উদয় হৈলা
‘মঙ্গল মঙ্গল আস্বাদিতে—
গৌরের আগমন তিথিতে—মঙ্গল মঙ্গল আস্বাদিত
জগন্মঙ্গলের আসবার দিনে—মঙ্গল মঙ্গল আস্বাদিতে

সকল মঙ্গল মিলিব আসি

আপন আপন,–মঙ্গলনামের সার্থকতা লাগি—সকল মঙ্গল মিলিল আসি
আপন আপন,–মঙ্গলনামের সার্থকতা লাগি’—
জগন্মঙ্গল প্রভুর সেবা করি—আপন আপন,–মঙ্গলনামের সার্থকতা লাগি
‘জগন্মঙ্গল প্রভুর সেবা করি’—
তার আগমন তিথিতে মিশি—জগন্মঙ্গলপ্রভুর সেবা করি
আপন আপন,–মঙ্গলনামের সার্থকতা লাগি—সকল মঙ্গল মিলিল আসি

‘‘ফাল্গুনী পূর্ণিমা তিথি শুভগ সকলি।
জনম লভিবে গোরা পড়ে হুলাহলি।।’’

উঠিল,–চারিদিকে জয়ধ্বনি

জগন্মঙ্গময় আসবে জানি’—উঠিল,–চারিদিকে জয়ধ্বনি

‘‘অম্বরে অমর সব ভেল উনমুখ।’’

কেবা তাদের বলে দিল

গৌরাঙ্গস্বরূপের আবির্ভাব কথা—কেবা তাদের বলে দিল
‘গৌরাঙ্গস্বরূপের আবির্ভাব কথা’—
মহারাসবিলাসের পরিণতি—গৌরাঙ্গস্বরূপের আবির্ভাব কথা

কেবা তাদের বলে দিল

তাদের,–জানিবারনয় তারা কেমনে জানিল—

কেবা তাদের ইঙ্গিত কৈল

প্রাণগৌর আবির্ভাব হবে বলে—কেবা তাদের ইঙ্গিত কৈল

যার,–গরজ বালাই জানায়েছে
কেবল লীলাশক্তির খেলা
লীলাশক্তি জানায়েছে

প্রাণগৌর আসবে বলে—লীলাশক্তি জানায়েছে

তাইতে সবে উনমুখ

দেখিতে প্রাণগৌর-মুখ—তাইতে সবে উনমুখ

লীলাশক্তি জানায়েছে
নৈলে,–আর কেবা জানাবে

নিগূঢ় গৌরলীলার সন্ধান—নৈলে,–আর কেবা জানাবে

লীলাশক্তি জানায়েছে
এবার,–জানাইবে যে জগতের
লীলাশক্তি,–উদারতা স্বভাব পেয়েছে

ব্রজের নিকুঞ্জ-বিলাস-বৈভবে—লীলাশক্তি,–উদারতা স্বভাব পেয়েছে

এবার,–জানাইবে যে জগতের

কুঞ্জবাসী–বিনা কেউ জানত না যারে—এবার,–জানাইবে যে জগতেরে

তাই,–লীলাশক্তি তাদের জানাইল

এস,–জগমঙ্গল গৌর দেখবে এস—তাই,–লীলাশক্তি তাদের জানাইল

লীলাশক্তির ইঙ্গিত পেয়ে

গৌরস্বরূপ আসবে বলে—লীলাশক্তির ইঙ্গিত পেয়ে
‘গৌরস্বরূপ আসবে বলে’—
ফাল্গুনী,–পূর্ণিমাতে নদীয়া মণ্ডপে—গৌরস্বরূপ আসবে বলে

লীলাশক্তির ইঙ্গিত পেয়ে
জগন্মঙ্গলালয়ে দেখবে বলে

‘‘অম্বরে অমর সবে ভেল উনমুখ।’’

কেবা তাদের লালসা দিল

দেখিবারে গোরা-চাঁদমুখ—কেবা তাদের লালসা দিল

কেবা তাদের শকতি দিল

দেখিবারে নিকুঞ্জ-বিলাস-বৈভব—কেবা তাদের শকতি দিল

তাদের ত দেখবার কথা নয়
কেবা সে অধিকার দিল
বুঝি,–লীলাশক্তি দিয়াছে শকতি

তাদের সৌভাগ্য উদয় লাগি—বুঝি,–লীলাশক্তি দিয়াছে শকতি
এবার,–অনর্পিত অর্পণ জানি—বুঝি,–লীলাশক্তি দিয়াছে শকতি

‘‘লভিবে জনম গোরা যাবে সব দুঃখ।
আসিবে সোণার গোরা দূরে যাবে দুঃখ।।’’

দেখিতে সুখময় স্বরূপ

দূরে যাবে সকল দুঃখ—দেখিতে সুখময় স্বরূপ

আসবে,–দুঃখহারী গৌরহরি
চল যাই দেখি গিয়া

মা যোগমায়া করিছেন ইঙ্গিত—চল যাই দেখি গিয়া
সোণার গোরা আসবে নদীয়া—চল যাই দেখি গিয়া

‘‘আসিবে সোণার গোরা দূরে যাবে দুঃখ।।’’

আত্যন্তিক,–দুঃখের নিবৃত্তি হয় না জীবের

প্রেমধনে ধনী না হলে পরে—আত্যন্তিক,–দুঃখের নিবৃত্তি হয় না জীবেরে

এতদিন,–অনেক উপায় করেছেন বটে

জীবের দুঃখ নিবৃত্তির তরে—এতদিন,–অনেক উপায় করেছেন বটে

কিন্তু,–আত্যন্তিক দুঃখের নিবৃত্তি হয় নাই

প্রেমধন দেওয়া হয় নাই—কিন্তু,–আত্যন্তিক দুঃখের নিবৃত্তি হয় নাই

এবার দুঃখের নিবৃত্তি হবে

প্রেমধনে জীব ধনী হবে—এবার দুঃখের নিবৃত্তি হবে

‘‘শঙ্খ দুন্দুভি ধ্বনি সুগন্ধি পবন।’’

অম্বরে অমরগণ
সময় জেনে প্রকাশ হল

লীলাশক্তির ইঙ্গিত জেনে—সময় জেনে প্রকাশ হল

সেবা করে ধন্য হবে
তাই,–মাঙ্গলিক ধ্বনি করে

অমরগণ সুরপুরে—তাই,–মাঙ্গলিক ধ্বনি করে
মঙ্গলময় আসবে বলে—তাই,–মাঙ্গলিক ধ্বনি করে

তারা গৌরের,–সেবা অধিকার পেয়েছে

লীলাশক্তির কৃপাবলে—তারা গৌরের,–সেবা অধিকার পেয়েছে

‘‘শঙ্খ দুন্দুভি ধ্বনি সুগন্ধি পবন।’’

সুগন্ধি,–পবন হল প্রবাহিত

গোরা,–রাসরাজে সুখ দিতে—সুগন্ধি,–পবন হল প্রবাহিত

সুখময়,–সুযোগ পেয়ে সমাগত

আপনায় করিতে কৃতার্থ—সুখময়,–সুযোগ পেয়ে সমাগত
গৌর-সেবায় হয়ে নিয়োজিত –সুখময়,–সুযোগ পেয়ে সমাগত

সেবাছলে ধন্য হবে

গৌর-অঙ্গ-পরশ পেয়ে—সেবাছলে ধন্য হবে

‘‘বরিষে কুসুমরাশি সুরবালাগণ।।’’

আনন্দ আর ধরে নারে

আনন্দঘন দেখবে বলে—আনন্দ আর ধরে নারে

করে পুষ্প বরিষণ

আনন্দেতে সুরবালাগণ—করে পুষ্প বরিষণ
আসছে জেনে শচীনন্দন—করে পুষ্প বরিষণ
জয় নদীয়া-বিহারী বলে—করে পুষ্প বরিষণ
করিবারে প্রেমামৃত সিঞ্চন—করে পুষ্প বরিষণ

করে পুষ্প বরিষণ
ব্রজবালার স্বভাব পেয়েছে

স্বরগেতে সুরবালা—ব্রজবালার স্বভাব পেয়েছে
যা হবার নয় তাই হয়েছে—ব্রজবালার স্বভাব পেয়েছে

‘‘ঘনঘন হরিধ্বনি উঠে জগভরি।’’

আসছেন,–হরিনাম আগে করি

দরশনের বাধা দূর করি’—আসিছেন,–হরিনাম আগে করি
দরশনে,–মনের বাধা দূর করি’—আসিছেন,–হরিনাম আগে করি
ধরা দিতে জগভরি’—আসিছেন,–হরিনাম আগে করি

আসিছে,–জগন্মঙ্গল গৌরহরি

আগে সকল-অমঙ্গল হরি—আসিছে,–জগন্মঙ্গল গৌরহরি

জগভরি’ বোলইল হরি

গ্রহণের ছল করি—জগভরি’ বোলাইল হরি

বাহিরে প্রাকৃত গ্রহণ

অন্তরে অন্তরঙ্গ গ্রহণ—বাহিরে প্রাকৃত গ্রহণ

আজ,–প্রকট হৈলা গৌরহরি

রাধাভাব,–কান্তি ধরি’ বংশীধারী—আজ,–প্রকট হৈলা শচীনন্দন

আজ,–প্রকট হৈলা শচীনন্দন

রাধাভাব,–কান্তি ধরি’ বংশীবদন—প্রকট হৈলা শচীনন্দন

‘‘ঘন ঘন হরিধ্বনি উঠে জগভরি।’’

আজ,– সবাই হরি হরি বলে

কেন বলে কিছু না জানে—আজ,–সবাই হরি হরি বলে
কে যেন তাদের বলায় বলে—আজ,–সবাই হরি হরি বলে

ও ত হরি বলা নয়
বুঝি,–আগে রটনা করে দিছে

বিষম চোরের আবির্ভাব—বুঝি,–আগ রটনা করে দিছে
সব হরণ করবে বলে—বুঝি,–আগে রটনা করে দিছে

আসছেন আমার গৌরহরি

জগভরি বলায়ে হরি—আসছেন আমার গৌরহরি
বুঝি,–নিজস্বভাব প্রকট করি—আসছেন আমার গৌরহরি

আগে,–হরি বলে সর্ব্বস্ব হরি’

পিছে,–প্রেম দিয়ে পূরণ করি—আগে,–হরি বলে সর্ব্বস্ব হরি’

নিজস্বভাব প্রকট করিছে

হরি বলি সবার অভাব হরিছে– নিজস্বভাব প্রকট করিছে
হরি বলি সবার অভাব হরিছে–
পিছে প্রেমে ভরবে সবে–হরি বলি সবার অভাব হরিছে

নিজস্বভাব প্রকট করিছে
কিম্বা হরিবলায়ে জানাইছে
আমার আগমনের পরিচায়ক

আমার মঙ্গলময় নাম—আমার আগমনের পরিচায়ক

তাই,–পিছে আসছেন গৌরহরি

নিজ নাম আগে করি—তাই,–পিছে আসছেন গৌরহরি

আজ,–সবাই হরি হরি বলে

নামীর আগে নাম চলে—আজ,–সবাই হরি হরি বলে

যা সঙ্কল্প তা আগেই হল
নাম,–প্রচারিতে আসবার কথা

আসবার আগেই হল নামের প্রচার—নম,–প্রচারিতে আসবার কথা

এমন করে এল কেনে

নিজ নাম আগে করি—এমন করে এল কেনে

নৈলে,–কেবা তারে জানাবে

নাম যদি না যায় আগে—নৈলে,–কেবা তারে জানাবে

কারও কি সন্ধান মিলে

নাম জানা না থাকিলে—কারও কি সন্ধান মিলে

তাই,–আইলা প্রাণের গৌরহরি

নাম চাঁদে আগে করি—আইলা প্রাণের গৌরহরি

এবার কাজের উল্টা রীতি
চিরকাল ছিল এই ত রীতি

আগে ভজলে তবে প্রেম প্রাপ্তি—চিরকাল ছিল এই ত রীতি

এবার পিছেই এল ধেয়ে

আগে নাম প্রেম জগতে দিয়ে—এবার পিছেই এল ধেয়ে

এল আমার গোরা রসিয়া

আগে নাম দিয়ে রসাইয়া—এল আমার গোরা রসিয়া

কেন বা হবে না

নাম দিয়ে রসনা –কেন বা হবে না

তারে ত রস-স্বরূপ বলে
নাম যে তার স্বরূপ প্রকাশ
এই নামও ত রস-স্বরূপ
বরং,–নামে অধিক রসের বিকাশ

নামী হতে নাম বড়—বরং,–নামে অধিক রসে বিকাশ

এল গোরা রসিয়া

নাম দিয়ে জগৎ রসাইয়া—এল গোরা রসিয়া

‘‘আবাল বনিতা বৃদ্ধ যত নরনারী।।’’

আজ হইল সবার এক ভাব

বুঝি,–জানাবে সবার এক স্বভাব—তাই,–আজ হইল সবার এক ভাব

এক স্বভাব সবার জানাবে

মধুর রসে মাতাবে সবে—এক স্বভাব সবার জানাবে

সবে হবে,–একরসের অধিকারী

আসছে মধুর গৌরাঙ্গহরি—সবে হবে,–একরসের অধিকারী

‘‘শুভক্ষণে গোরা শুভ জনম লভিলা।’’

আইলা,–জগন্মঙ্গল গৌরহরি

সব সুমঙ্গল আগে করি—আইলা—জগন্মঙ্গল গৌরহরি

খেলার,–ভূমি করে আইল পিছে

জগভরি হরি হরি বলায়ে—খেলার,–ভূমি করে আইল পিছে

যেন,–‘‘পূর্ণিমার চন্দ্র ভূমে প্রকাশ করিলা।।’’

আকাশের চাঁদ ভূমিতে এল’

পাপতম বিনাশিতে আকাশের চাঁদ ভূমিতে এল’

সব জগৎ হইল বিস্ময়

দেখি,–আকাশের চাঁদ মাটিতে উদয়—সব জগৎ হইল বিস্ময়
‘দেখি—আকাশের চাঁদ মাটিতে উদয়’
এই মধুর নদীয়ায়—দেখি,–আকাশের চাঁদ মাটিতে উদয়

সব জগৎ হইল বিস্ময়
আজ,–গোরাচাঁদের উদয় হল

শচীগর্ভসিন্ধু হতে—আজ,–গোরাচাঁদের উদয় হল
প্রেমরসসিন্ধু মন্থন করা—আজ,–গোরাচাঁদের উদয় হল

‘‘হেন কালে চন্দ্রে রাহু করিলা গ্রহণ।’’

রাহুর প্রাণে সইল নারে

আকাশেতে চাঁদের উদয়—রাহুর প্রাণে সইল নারে
গগনচাঁদের প্রকাশ আজ—রাহুর প্রাণে সইল নারে

রাহুর প্রাণে নাহি সইল

যোগ পেয়ে গ্রাস কৈল—রাহুর প্রাণে নাহি সইল

আর কি কাজ করবে সে
সে ত,–বাহিরের তাপতম নাশে

গগনচাঁদ উদয় হয়ে আকাশে—সে ত,–বাহিরের তাপতম নাশে

আজ,–গোরাচাঁদের উদয় হল

ভিতর বাহির আলো করা—আজ,–গোরাচাঁদের উদয় হল

গগনচাঁদে আর কি কাজ বল
রাহু মনে মনে বলে

গগনচাঁদকে উঠতে দেখে’—রাহু মনে মনে বলে

চাঁদ তুমি কেন আকাশে

নদীয়াতে,–গোরাচাঁদ হইলা প্রকাশে—চাঁদ তুমি কেন আকাশে

কেন,–বৃথা উদয় হইঠছ আকাশেতে

‘‘গোরাচাঁদ উদয় হল নদীয়াতে’—
অলকঙ্ক ষোলকলা—গোরাচাঁদ উদয় হল নদীয়াতে

কেন,–বৃথা উদয় হইছ আকাশেতে

কেবা তোমার আদর করবে—কেন,–বৃথা উদয় হইছ আকাশেতে
‘কেবা তোমার আদর করবে’—
ও কলঙ্কী গগনচাঁদ—কেবা তোমার আদর করবে

কেন,–বৃথা উদয় হইছ আকাশেতে
তোমার,–আর কি উপরে থাকা ভাল

গোরাচাঁদ নদীয়াতে উদয় হল—তোমার,–

আর কি উপরে থাকা ভাল
যদি,–ধন্য হতে সাধ থাকে
যদি,–নিজ সৌভাগ্য প্রকট করিতে চাও

আকাশ হতে নীচে এস—যদি,–নিজ সৌভাগ্য করিতে চাও
গোরাচাঁদের পদে শরণ লও—যদি,–নিজ সৌভাগ্য প্রকট করিতে চাও

যদি আপনাকে,–ধন্য করা থাকে মনে

শরণ লও,–গৌরপদনখ কোণে—যদি আপনাকে,–ধন্য করা থাকে মনে

আশ্রয় কর গোরাপদতল;

ওরে,–নিলাজ কলঙ্কী গগনচাঁদ—আশ্রয় কর গোরাপদতলে

গোরাপদতলে শরণ লও

যদি আপন সৌভাগ্য চাও—গোরপদতলে শরণ লও

উপরে,–প্রকাশ থাকা উচিত নয়

গগনচাঁদ তোমার আর—উপরে,–প্রকশ থাকা উচিত নয়

যদি নিজ কৃতার্থতা চাও

ভূমে আসি গৌরচরণে র‍ও—যদি নিজ কৃতার্থতা চাও

রাহুর প্রাণে আর সইল না

গোরাচাঁদের,–আগে প্রাকৃত চাঁদের প্রকাশ—রাহুর প্রাণে আর সইল না

তাই চাঁদকে গ্রাস কৈল
এবে অপরূপ গ্রহণ
এদিকে কিন্তু বিরুদ্ধ গ্রহণ

চাঁদকে রাহু করিল গ্রহণ—এদিকে কিন্তু বিরুদ্ধে গ্রহণ

এবার,–রাহু চাঁদকে গ্রাস করিছে

চাঁদ বাহুকে গ্রাস করিছে—এবার,–রাহু চাঁদকে গ্রাস করিছে

আসছে আমার প্রাণ গোরা

চাঁদ রাহু গ্রহণ করা—আসছে আমাপ প্রাণ গোরা

গৌররাজ্যে অপূর্ব্ব গ্রহণ

রাহুকে চাঁদ গ্রাস করিল—গৌরারাজ্যে অপূর্ব্ব গ্রহণ

গৌরের,–জন্মলীলা বটেত গ্রহণ
গ্রহণ করে স্বরূপ প্রকাশ হতেছে
গৌরস্বরূপ প্রকাশ হতেছে

ভাবকান্তি গ্রহণ করে—গৌরস্বরূপ প্রকাশ হতেছে

‘‘হেনকালে চন্দ্রে রাহু করিলা গ্রহণ।
হরি হরি ধ্বনি উঠে ভরিয়া ভুবন।।’’

জগভরি’ হরি বলায় সকলে

গোরা,–প্রকাশ পেয়ে গ্রহণচ্ছলে—জগভরি’ হরি বলায় সকলে

আনন্দের রোল হরিধ্বনি
হরিধ্বনি প্রকাশ করিছে

সর্ব্বস্ব হরি হরি আসছে—হরিধ্বনি প্রকাশ করিছে

নেপথ্যে,–কেউ যেন বলে দিছে

সাবধান গৌরহরি আসছে—নেপথ্যে,–কেউ যেন বলে দিছে

আসছে গৌরহরি আসছে

সামলে নাও যার যা আছে—আসছে গৌরহরি আসছে

কাউকে বাকী রাখবে না

সর্ব্বস্ব হরণ করিবে—কাউকে বাকী রাখবে না

গৌরহরি আসছে নদীয়াতে

সর্ব্বস্ব হরি আপন করিতে—গৌরহরি আসছে নদীয়াতে

আজ,–জগভরি’ বলায় হরি হরি

নিগম নিগূঢ় গৌরহরি—আজ,–জগভরি’ বলায় হরি হরি
গ্রহণের ছল করি—আজ,–জগভরি’ বলায় হরি হরি

হরিধ্বনি উঠে ভুবনভরি

দেখি,–নদীয়া প্রকট গৌরহরি—হরিধ্বনি উঠে ভুবনভরি’

‘‘হরি হরি ধ্বনি উঠে ভরিয়া ভুবন।।
দীন হীন উদ্ধার হইবে ভেল আশ।’’


আর পতিতের ভয় নাইরে প্রাণগৌর এল নদীয়াতে
আজ,-দীনজনে উদ্ধারিতে—প্রাণগৌর এল নদীয়াতে

আর,–দীন কেউ থাকবে না

সবাই,–প্রেমধনে হবে ধনী—আর,–দীন কেউ থাকবে না
বিশ্বম্ভর নাম পূর্ণ করিতে আসছে—আর,–দীন কেউ থাকবে না
নামপ্রেমে বিশ্ব ভরবে—আর,–দীন কেউ থাকবে না

কলিহত-জীবের ভয় নাই আর

এল,–কলিপাবন অবতার—কলিহত-জীবের ভয় নাই আর

‘‘দেখিয়া আনন্দে ভাসে জগন্নাথদাস।।’’

আজ,–জগন্নাথদাস আনন্দে ভাসে

জগন্নাথ আইল দেখে’—আজ,–জগন্নাথদাস আনন্দে ভাসে
কলিজীবের,–উদ্ধার হবে অনায়াসে—আজ,–জগন্নাথদাস আনন্দে ভাসে

এবার,–সবার স্বরূপ প্রকাশ হবে
জীবের,–নিজের স্বরূপ প্রকাশ হবে

স্বরূপ জাগান স্বরূপ এল—জীবের,–নিজের স্বরূপ প্রকাশ হবে

‘‘জয় জয় কলরব নদীয়া নগরে।’’

আনন্দসিন্ধু উথলিল

গৌরমুখ-ইন্দু হেরে— আনন্দসিন্ধু উথলিল

আনন্দের পাথার বয়ে যায় রে

আনন্দঘন আবির্ভাবে—আনন্দের পাথার বয়ে যায় রে
মধুর-নদীয়াপুরে—আনন্দের পাথার বয়ে যায় রে
আনন্দঘন আবির্ভাবে—আনন্দের পাথার বয়ে যায় রে
আনন্দঘন আইল নদীয়াপুরে—আনন্দের পাথার বয়ে যায় রে

‘‘জনম লভিলা গোরা নদীয়া নগরে।।
ফাল্গুনী পূর্ণিমাতিথি নক্ষত্র ফাল্গুনী।’’

এবার সব যে বিপরীত
গৌরস্বরূপে সব বিপরীত
আগমনেই বিপরীত

সেথায় কৃষ্ণাষ্টমী এথায় পূর্ণিমা—আগমনেই বিপরীত

ব্রজে,–অষ্টমীতে এসেছিল

নদীয়ায়,–পূর্ণিমাতে প্রকাশ হল—ব্রজে,–অষ্টমীতে এসেছিল

তাই,–অষ্টমীতে এসেছিল

সেখানে বুঝি একা ছিল—তাই,–অষ্টমীতে এসেছিল

এবার,–পূর্ণিমাতে প্রকাশ হল
শুক্লাষ্টমীর বড়ই প্রভাব

কৃষ্ণাষ্টমীর বরণ ধরাল—শুক্লাষ্টমীর বড়ই প্রভাব

বরণ ধরায়ে এক করে নিল

শুক্লপক্ষের এক পূর্ণিমা এল—বরণ ধরায়ে এক করে নিল

তিথি-নক্ষত্রের বালাই যাইরে
তিথি-নক্ষত্রের বালাই লয়ে মরি

প্রকাশ হৈলা গৌরহরি—তিথি-নক্ষত্রের বালাই লয়ে মরি

‘‘শুভক্ষণে জনমিলা গোরা দ্বিজমণি।।’’

শুভ,–তিথি-নক্ষত্রের বালাই যাইরে

যে,–তিথিতে আইল নদের নিমাই—শুভ,–তিনি-নক্ষত্রের বালাই যাইরে

‘‘পূর্ণিমার চন্দ্র জিনি কিরণ প্রকাশ।’’

পূর্ণিমার চাঁদ বাইরের তমনাশী

এ যে,–ভিতর-বাহিরের তমনাশী—পূর্ণিমার চাঁদ বাইরের তমনাশী

গগনচাঁদে কি উপমা তার
বুঝি,–গগনচাঁদ লজ্জিত হল

গৌরচাঁদের প্রকাশ হল—বুঝি,–গগনচাঁদ লজ্জিত হল

তাই আসি,–পদনখে শরণ নিল

আমার,–আর উপরে থাকা নয় ভাল,–তাই আসি,–পদনখে শরণ নিল
গগনচাঁদ দশ-খণ্ড হল—তাই আসি,–পদনখে শরণ নিল

‘‘পূর্ণিমার চন্দ্র জিনি কিরণ প্রকাশ।
দূরে গেল অন্ধকার পাইয়া নৈরাশ।।’’

আমার আদর কেবা করবে

গোরাচাঁদ প্রকাশ হল—আমার আদর কেবা করবে

আর,–এদেশে থাকা ভাল নয় হে

অন্ধকার মনে করে—আর,–এদেশে থাকা ভাল নয় হে
গোরাচাঁদের উদয় হয়েছে—আর,–এদেশে থাকা ভাল নয় হে

(‘‘শচীগর্ভ-সিন্ধ হতে চাঁদের প্রকাশ।
পাপতম দূরে গেল তিমির বিনাশ।।’’)

কলিঘোর,–পাপতম দূরে গেল

পূর্ণ,–শশধর চৈতন্য উদয় হল—কলিঘোর,–পাপতম দূরে গেল

‘‘দ্বাপরে নন্দের ঘরে কৃষ্ণ অবতার।
যশোদার উদরে জন্ম বিদিত সংসার।
শচীর উদরে এবে জন্ম নদীয়াতে।’’

এবার,–নববিধা ধনে ধনী করবে
এবার,–জনমের নূতন রীতি

ব্রজে ছিল কৃষ্ণাষ্টমী তিথি—এবার,–জনমের নূতন রীতি

এযে,–পূর্ণিমাতে জনম নিল

সেখানে,–কৃষ্ণাষ্টমীতে জনম ছিল—এযে,–পূর্ণিমাতে জনম নিল

সেখানে,–বুঝি কিছু বাকী ছিল

এখানে তাহা পূর্ণ হল—সেখানে,–বুঝি কিছু বাকী ছিল

এ-চাঁদের অধিক মাধুরী

রাইচাঁদের সঙ্গে জড়াজড়ি—এ-চাঁদের অধিক মাধুরী

তাইতে উদয় পূর্ণিমাতে

রাধা-সঙ্গে মিলে পূর্ণ হয়েছে—তাইতে উদয় পূর্ণিমাতে

সেখানে,–একা একা এসেছিল
কৃষ্ণাষ্টমীতে প্রকাশ কাল

ব্রজাকাশে একা কাল—কৃষ্ণাষ্টমীতে প্রকাশ কাল

সে,–চাঁদ হয়েও পূর্ণ বিকাশ হয় নাই

রাধাসঙ্গ না পাওয়ায়—সে,–চাঁদ হয়েও পূর্ণ বিকাশ হয় নাই

শ্যাম,–চাঁদের আলো চাঁদেতেই থাকে

যদি,–কিশোরী চাঁদ কাছে না থাকে—শ্যাম,–চাঁদের আলোর চাঁদেই থাকে

এবার,–মাখামাখি হয়ে এসেছে
এবার,–দুই মিলে ষোলকলা হয়েছে
তাইতে উদয় পূর্ণিমাতে

পূর্ণ স্বরূপ দেখাবার তরে—তাইতে উদয় পূর্ণিমাতে

উদয় হয়েছিল ব্রজাকাশে

শ্যামচাঁদ আর রাইচাঁদ—উদয় হয়েছিল ব্রজাকাশে
কৃষ্ণাষ্টমী আর শুক্লাষ্টমীতে—উদয় হয়েছিল ব্রজাকাশে

সেই দুই অষ্টমী মিলে
এবার,–পূর্ণিমার গঠন হয়েছে
এবার উদয় নদীয়াতে

দুই চাঁদ জড়াজড়ি হয়ে—এবার উদয় নদীয়াতে
নদীয়া,–জড়াজড়ি স্থান বটে—এবার উদয় নদীয়াতে

ব্রজের,–নিভৃত-কুঞ্জেরে নিভৃত-কুঞ্জ

যেখানে,–দুই তনু সদা মিলিত—ব্রজের,–নিভৃত-কুঞ্জের নিভৃত-কুঞ্জ
‘যেখানে,–দুই তনু সদা মিলিত’—
রাসরসের পরিণতিতে—যেখানে দুই তনু সদা মিলিত
ব্রজের –নিভৃত-কুঞ্জের নিভৃত-কুঞ্জে সেই মধুর নদীয়াতে

‘‘শচীর উদরে এবে জন্ম নদীয়াতে।
কলিযুগের জীব সব নিস্তার করিতে।।’’

আইলা,–গৌরহরি নদীয়াতে

রাধাকৃষ্ণ একাধারে—আইলা,–গৌরহরি নদীয়াতে
কলিজীবে উদ্ধারিতে—আইলা,–গৌরহরি নদীয়াতে
‘কলিজীবে উদ্ধারিতে’—
দান করি চির-অনর্পিতে—কলিজীবে উদ্ধারিতে
পরাভক্তি দিয়ে সবে—কলিজীবে উদ্ধারিতে

আইলা,–গৌরহরি নদীয়াতে
এ কিন্তু বাহিরের কথা
যখন,–আকাশে চাঁদ উদয় হয়
তখন,–আপনা হতে সব আলো হয়
ইচ্ছা করে আলো করতে হয় না
গৌর,–এসেছে এবার নদীয়াতে

অশেষ বিশেষে,–স্বমাধুরী ভোগ করিতে—গৌর,–এসেছে এবার নদীয়াতে

জগজীবে বিলাইছে

সেই ভোগ অনায়াসে—জগজীবে বিলাইছে

তাই বলেছেন শ্রীকবিরাজ
আনুসঙ্গে নাম-প্রেম প্রচার

কেবল,–রসাস্বাদন উদ্দেশ্য তার—আনুসঙ্গে নাম-প্রেম প্রচার

‘‘বাসুদেব ঘোষ কহে মনে করি আশা।
গৌরপাদপদ্ম বিনে নাহিরে ভরসা।।’’

এবার,–অন্ধকার নিরাশ হবে

দুই চাঁদ মিলে আসছে—এবার,–অন্ধকার নিরাশ হবে

পতিতের ভয় নাইরে আর

এ যে,–পতিত-পাবন অবতার—পতিতের ভয় নাইরে আর

‘‘নদীয়া উদয় গিরি, তাহে পূর্ণচন্দ্র গৌরহরি,
কৃপাকরি করিলা উদয়।
পাপতম হইল নাশ, ত্রিজগতে উল্লাস,
জগভরি হরিধ্বনি হয়।।’’

জগভরি বলে হরি হরি
বিশ্বভরি বলে হরি

আইলা,–বিশ্বম্ভর গৌরহরি—বিশ্বভরি’ বলে হরি
‘আইলা,–বিশ্বম্ভর গৌরহরি’—
প্রেমে জগৎ দিবে ভরি—আইলা,–বিশ্বম্ভর গৌরহরি
বিশ্বভরি’ বলে হরি

‘‘হেন কালে নিজালয়ে, উঠিয়া অদ্বৈত রায়ে,
সীতানাথ,–নৃত্য করে আনন্দিত মনে।’’

বুঝি,–আমার বাসনা পূর্ণ হল
নৈলে,–জগভরি কেন হরি বলে

বিশ্বম্ভর না আইলে—নৈলে,–জগভরি’ কেন হরি বলে

নৈলে,–কেন দেখি ত্রিভুবনে উল্লাস

বুঝি,–ত্রিভুবন-পাবন হয়েছে প্রকাশ—নৈলে,–কেন দেখি ত্রিভুবনে উল্লাস

আনন্দ আর ধরে নারে

জীবের,–দুঃখে দুঃখী সীতানাথের—আনন্দ আর ধরে নারে
জগভরি’ হরিধ্বনি শুনে’—আনন্দ আর ধরে নারে
জগভরি’ আনন্দ হেরে—আনন্দ আর ধরে নারে

সীতানাথ মনে অনুমান করে
এবার,–বুঝি ব্রত উজ্জাপন হল
আমার,–ডাক তা’ হলে লেগেছে কাণে

নৈলে,–কেন হরি বলবে জগজনে’—আমার,–ডাক তা’ হলে লেগেছে কাণে
কেন মঙ্গল,–চিহ্ন দেখি চারিদিকপানে—আমার,–ডাক তা হলে

লেগেছে কাণে
আনন্দময় এসেছে বুঝি

নৈলে কেন,–জগভরি’ আনন্দ দেখি—আনন্দময় এসেছে বুঝি

প্রাণে প্রাণে ইঙ্গিত পেয়ে

আমার কান্নার ফল ধরেছে—প্রাণে প্রাণে ইঙ্গিত পেয়ে
‘আমার কান্নার ফল ধরেছে’—
প্রাণ,–মদনগোপাল এসেছে—আমার কান্নার ফল ধরেছে

প্রাণে প্রাণে ইঙ্গিত পেয়ে
সীতানাথ নাচে আনন্দমনে

আমার,–বাসনা পূরণ অনুমানে—সীতানাথ নাচে আনন্দমনে

আনন্দ আর ধরে নারে
অনশনের ফল ধরেছে

আমার,–বিশ্বম্ভর এসেছে—অনশনের ফল ধরেছে
আমার,–বাপ বিশ্বম্ভর এসেছে—অনশনের ফল ধরেছে

‘‘সীতানাথ,–নৃত্য করে আনন্দিত মনে।
হরিদাস লৈয়া সঙ্গে, হুঙ্কার-গর্জ্জন-রঙ্গে,
কেন নাচে কেহ নাহি জানে।।’’

পুলকেতে অঙ্গ ভরা

নয়নে শতধারা—পুলকেতে অঙ্গ ভরা

কেন নাচে কেউ না জানে
তাইতে সীতানাথ নাচে

প্রভু এসেছে প্রাণ নেচেছে—তাইতে সীতানাথ নাচে

‘‘দেখি উপরাগ রাশি, শীঘ্র গঙ্গাঘাটে আসি,
আনন্দে করিলা গঙ্গাস্নান।’’

অনুমান করি প্রভুর আগমন

সীতানাথ,–আনন্দে করিলা গঙ্গাস্নান—অনুমান করি প্রভুর আগমন

আনন্দে গঙ্গাস্নান কৈল

ব্রত,–উজ্জাপনের ফল জানিল—আনন্দে গঙ্গাস্নান কৈল

‘‘পাঞা উপরাগছলে, আপনার মনোবলে,
ব্রাহ্মণেরে করে নানা দান।।’’

আমার প্রভু এসেছে বলে
আমার,–সেই প্রভু এসেছে বলে

যার তরে এস বলে,–ভেসেছিলাম নয়নজলে—আমার,

সেই প্রভু এসেছে বলে
প্রাণে প্রাণে বলে রে

ব্রাহ্মাণের দান করে—আর,–প্রাণে প্রাণে বলে রে

এই,—কৃপা করা ব্রাহ্মণ সকল

যেন,–অনুমান হয় সকল—কৃপা কর ব্রাহ্মণ সকল

লোকে,–দান করে এই আশা করে

দানের ফল কিছু পাব বলে—লোক,–দান করে এই আশা করে

এ দানের যে বিপরীত রীতি
কিন্তু,–এ দান নয় পাবার তরে

পেয়েছি বলে দান করে—কিন্তু,–এ দান নয় পাবার তরে

এত,–চন্দ্রগ্রহণের দান নয় রে

গ্রহণ করেছি বলে দান করে—এত’,–চন্দ্রগ্রহণের দান নয় রে

‘‘জগত আনন্দময়, দেখি মনে বিস্ময়,’’

আজ,–জগৎ কেন আনন্দময়

এসেছে কি আনন্দময়—আজ,–জগৎ কেন আনন্দময়

‘‘ঠারে ঠোরে কহে হরিদাস।
তোমার ঐছন রঙ্গ, মোর মন পরসন্ন,
জানি,–দেখি কিছু কার্য্যে আছে ভাষ।।’’

হরিদাস কহে ইঙ্গিত

সীতানাথের বদন চেয়ে—হরিদাস কহে ইঙ্গিতে

আজ,–কেন তোমার এত উল্লাস

ও শান্তিপুর-নাথ—আজ,–কেন তোমার এত উল্লাস
বুঝি,–আশ মিটাবার পেয়েছ আভাস—আজ,–কেন তোমার এত উল্লাস

বুঝি,–মনোবাসনা পূর্ণ হয়েছে

তোমার,–রঙ্গ দেখে মনে হতেছে—বুঝি,–মনোবাসনা পূর্ণ হয়েছে

এত আনন্দ কোথা হতে এল

আজ,–এল কি জগন্মঙ্গল—এত আনন্দ কোথা হতে এল

মনে এই আসে আভাস

দেখি’ তোমার প্রেমোল্লাস—মনে এই আসে আভাস

বুঝি,–জগন্মঙ্গল হৈল প্রকাশ

পূরাইতে তোমার অভিলাষ—বুঝি,–জগন্মঙ্গল হৈল প্রকাশ

এসেছেন বুঝি সুখময়

নৈলে কেন,–জগৎ দেখি আনন্দময়—এসেছেন বুঝি সুখময়

‘‘আচার্য্যরত্ন শ্রীবাস, হৈল মনে সুখোল্লাস,
যাই স্নান করে গঙ্গাজলে।
আনন্দে বিহ্বল মন, কৈল হরি সঙ্কীর্ত্তন,
নানা দান কৈল মনোবলে।।
এই মত ভক্ত ততি, যার যেই দেশে স্থিতি,
তাঁহা তাঁহা পাই মনোবলে।
নাচে গায় সঙ্কীর্ত্তন, আনন্দে বিহ্বল মন,
আজ,–দান করে গ্রহণের ছলে।।’’

সবাই আনন্দে মেতেছে

মুর্ত্তিমন্ত প্রাণ এসেছে—সবাই আনন্দে মেতেছে

আনন্দের মূরতি নদীয়াপুরে

তাই সবে,–আনন্দেতে নৃত্য করে—আনন্দের মূরতি নদীয়াপুরে

আজ,–সবারি আনন্দ মনে

যে দেশে যে ভক্ত আছে—আজ,–সবাবি আনন্দ মনে
আনন্দ ঘনের আগমনে—আজ,–সবারি আনন্দ মনে

‘‘আজ,–দান করে গ্রহণের ছলে।।’’

তাই গ্রহণ করেছে ছলা

গ্রহণের মূর্ত্তি প্রকট হৈলা—তাই গ্রহণ করেছে ছলা

গ্রহণের মূরতি বটে

শ্রীরাধিকার ভাবকান্তি—গ্রহণের মূরতি বটে

‘‘নদীয়া আকাশে আসি, উদিল গৌরাঙ্গ শশী,
ভাসিল সকলে কুতূহলে।
ভাসিল গগন শশী, মাখিল বদনে মসী,
কাল পেয়ে গ্রহণের ছলে।।’’

ও ত,–রাহুর গ্রাস নয় গো
চাঁদ,–আপন মুখে কালী মাখল

অকলঙ্ক-চাঁদের উদয় দেখে—চাঁদ,–আপন মুখে কালী মাখল

‘‘রামাগণ উচ্চৈঃস্বরে, জয় জয় ধ্বনি করে,’’

জয় দেয় উলু উলু

নয়নে,–ধারা বহে কুলু কুলু—জয় দেয় উলু উলু

‘‘ঘরে ঘরে বাজে ঘণ্টা শাঁখ।
দামামা দগড় কাঁসি, সানাই ভেউর বাঁশী,
তুড়ী ভেড়ী আর জয় ঢাক।।
মিশ্র-জগন্নাথ-মন, আনন্দে নিমগন’’,

জগন্নাথমিশ্রের আনন্দিত মন

পাইয়া আনন্দঘন—জগন্নাথ মিশ্রের আনন্দিত মন

‘‘শচীর সুখের সীমা নাই।’’

আনন্দ-পুতলী কোলে পেয়ে

‘‘দেখিয়া নিমায়ের মুখে ভুলিল প্রসব দুঃখ,
অনিমিষে পুত্রমুখ চাই।।
গ্রহণের অন্ধকার কেহ না চিনয়ে কারে,
দেবনরে হৈল মিশামিশি।
নদীয়া-নাগরী-সঙ্গে, দেবনারী আসি রঙ্গে,
হেরিছে গৌরাঙ্গ-রূপরাশি।।’’

আইলা,–নদীয়া-নাগরী-বেশে

নৈলে,–গৌর দেখতে নারবে—আইলা,–নদীয়া-নাগরী-বেশে

গৌর-রূপ হেরে দেবনারী

আনন্দ-সাগরে ভাসি—গৌর-রূপ হেরে দেবনারী

‘‘পুত্রের বদন দেখি, জগন্নাথ মহাসুখী,
করে দান দরিদ্র সকলে।’’

আশীর্ব্বাদ কর সবে

আমার তনয় থাকুক সুখে—আশীর্ব্বাদ কর সবে

‘‘ভুবন আনন্দময়, গৌরবিধু সমুদয়,
বাসু কহে জীব ভাগ্যফলে।’’


‘‘চৌদ্দশত সাতশকে পূর্ণিমা দিবসে।
চন্দ্রগ্রহণের কালে ফাল্গুনের মাসে।।’’

আইলা,–পূর্ণচন্দ্র গৌরহরি

রাধা-ভাব-কান্তি অঙ্গীকরি—আইলা,–পূর্ণচন্দ্র গৌরহরি
আজ,–চন্দ্রগ্রহণ ছল করি—আইলা,–পূর্ণচন্দ্র গৌরহরি

তাই বুঝি আকাশে চন্দ্রগ্রহণ

রাই কিশোরী শ্যামকে করিছে গ্রহণ—তাই বুঝি আকাশে চন্দ্রগ্রহণ

কিন্তু,–এ-গ্রহণের যে বিপরীত রীতি
তাকেই ত গ্রহণ বলে

রাহু চাঁদকে গ্রাস করে—তাকেই ত গ্রহণ বলে

এযে দেখি বিপরীত গ্রহণ

রাইচাঁদ,–শ্যামরাহুকে করল গ্রহণ—এযে দেখি বিপরীত গ্রহণ

‘‘অদ্বৈত-আচার্য্য প্রভু ভক্তি-যুক্ত-মনে।’’

প্রাণ কাঁদছে নিশিদিনে

না জানি,–প্রভু আসবে কতদিনে—প্রাণ কাঁদছে নিশিদিনে

‘‘গঙ্গাতে তুলসী পত্র করিছে প্রদানে।।’’

এস আমার,–প্রাণকৃষ্ণ এস বলে

ত্রিতাপানলে জগৎ জ্বলে—এস আমার,–প্রাণকৃষ্ণ এস বলে

‘‘অকস্মাৎ উঠে নাড়া করিয়া হুঙ্কার।
হরিদাস সচকিতে দেখি’ ভঙ্গী তার।।
আনিলুঁ আনিলুঁ গৌর আনিলুঁ নদীয়া।
ইহা বলি নৃত্য করে আনন্দে মাতিয়া।।’’

সীতানাথ নাচে হেলেদুলে

অনিলুঁ গৌর আনিলুঁ বলে—সীতানাথ নাচে হেলেদুলে

মদনগোপাল আইলা নদীয়াতে

আপনাকে,–আবরি রাধাভাব-কান্তিতে—মদনগোপাল আইলা নদীয়াতে

‘‘জানিলেন হরিদাস গৌরাঙ্গ জনম।’’

মনোবৃত্তি ভাল জানে

হরিদাস সীতানাথের –মনোবৃত্তি ভাল জানে

হরিদাস প্রাণে জানিল

সীতানাথের বাসনা পূর্ণ হল—হরিদাস প্রাণে জানিল
‘সীতানাথের বাসনা পূর্ণ হল—
মদনগোপাল গৌররূপে এল—সীতানাথের বাসনা পূর্ণ হল

হরিদাস প্রাণে জানিল

‘‘আনন্দে উন্মত্ত কানু বুঝিয়া মরম।।’’

আজ তোমার আসবার দিন

হা গৌর প্রাণ গৌর—আজ তোমার আসবার দিন
আজ,–ফাল্গুনী পূর্ণিমা তিথি—আজ তোমার আসবার দিন
উদ্ধারিতে,–জগমাঝে যত দীন—আজ তোমার আসবার দিন

জগমাঝে থাকবে না দীন

হবে তোমার প্রেমাধীন—জগমাঝে থাকবে না দীন

এই দিনে এসেছিলে

হা গৌর প্রাণ গৌর—এই দিনে এসেছিলে
বিশ্বম্ভর নাম ধরিলে—এই দিনে এসেছিলে
‘বিশ্বম্ভর নাম ধরিলে’—
নাম,–প্রেমে বিশ্ব ভরবে বলে—বিশ্বম্ভর নাম ধরিলে

এসেছিলে এই দিনে

সীতানাথের কাতর ক্রন্দন শুনে—এসেছিলে এই দিনে
এই মধুর নদীয়া ভুবনে—এসেছিলে এই দিনে
করিতে তিন-বাঞ্ছা পূরণে—এসেছিল এই দিনে
আনুসঙ্গে করিতে নাম-প্রেম দানে—এসেছিলে এই দিনে

জগৎ ভাসালে প্রেমের বন্যায়

পূর্ণিমাতে আসি নদীয়ায়—জগৎ ভাসালে প্রেমের বন্যায়

তেমনি করে একবার এস

আজ তোমার আসবার দিন–তেমনি করে একবার এস

এসেছিলে আছ বটে

যাও নাই কোথা জানি প্রাণে—এসেছিলে আছ বটে

আসবার,–দিন মাত্র বলবার কথা

ত্রিকাল সত্য তোমার—লীলা—আসবার,–দিন মাত্র বলবার কথা

প্রকাশ পেলে আজকার দিনে

কলিহত জীবের কাছে—জকাশ পেলে আজকার দিনে

আজ,–একবার তেমনি করে এস
বাইরে থাকিলে চলবে না
উদয় হও প্রতি-হৃদাকাশে

যেমনি,–উদয় হলে নদীয়া—আকাশে—উদয় হও প্রতি-হৃদাকাশে

কেন বলি একবার এস
আজ,–জগতের বড়ই দুর্দ্দিন
আজ,–অধিক দুর্দ্দিন তা হতে

তুমি,–এসেছিলে যে দুর্দ্দিনে—আজ,–অধিক দুর্দ্দিন তা হতে
দেখে শুনে মনে হচ্ছে—আজ,–অধিক দুর্দ্দিন তা হতে

কালকলি পীড়নে প্রপীড়িত

জগবাসী জীব যত—কালকলি পীড়নে প্রপীড়িত

দুইদিকে ঘটায় বিপর্য্যয়

পার্থিব পরমার্থিক—দুইদিকে ঘটায় বিপর্য্যয়

পৃথিবীর ধর্ম্ম বিপর্য্যয়

জগতের গতি উচ্ছৃঙ্খল হয়—পৃথিবীর ধর্ম্ম বিপর্য্যয়

সকলে ভুলে গেছে

তোমার পরমার্থ জগৎ–সকলে ভুলে গেছে
তুমি না,–আচরিয়ে শিখাইলে—সকলে ভুলে গেছে

এই কালে একবার এস
আর তাদের কেবা আছে

প্রাণগৌর তুমি বিনে—আর তাদের কেবা আছে

তাই বলি একবার এস

ওহে,–নবদ্বীপ-সুধাকর—তাই বলি একবার এস

উদয় হও গোরাশশী

রাইকানু মিশামিশি—উদয় হও গোরাশশী
কলিতম সব নাশি’—উদয় হও গোরাশশী

বিশ্বম্ভর নাম পূর্ণ কর

জীবের,–প্রতিহৃদে বিহর—বিশ্বম্ভর নাম পূর্ণ কর
নামপ্রেমে বিশ্ব ভর—বিশ্বম্ভর নাম পূর্ণ কর

সবাই,–হৃদে ধরুক গুণে ঝুরুক

মধুর-রসের মূরতি তোমার—সবাই,–হৃদে ধরুক গুণে ঝুরুক

প্রতি,–হৃদে জাগ প্রাণ গোরা

রাধাভাব-দ্যুতি চোরা—প্রতি,–হৃদে জাগ প্রাণ গোরা
সবাই,–হৃদে রাখুক প্রাণ জুড়াক—প্রতি,–হৃদে জাগ প্রাণ গোরা

সবাই ভাসুক নয়ন-জলে

ম্লেচ্ছ যবনাদি করে—সবাই ভাসুক নয়ন-জলে
আত্মপর,–দ্বেষাদ্বেষ ভুলে গিয়ে—সবাই ভাসুক নয়ন-জলে
প্রাণ-শচীদুলাল বলে—সবাই ভাসুক নয়ন-জলে

একবার শুনে যেন মরি

জগভরি তোমার নামের ধ্বনি—একবার শুনি যেন মরি
এই,–একমাত্র বাসনা গৌরহরি—একবার শুনে যেন মরি

সকল সুখেই বঞ্চিত মোরা
তখন জনম দাও নাই মোদের
যখন,–প্রকটলীলায় বিহরিলে

সেই,–সুরধুনীর তীরে তীরে—যখন,–প্রকটলীলায় বিহরিলে
কীর্ত্তন-নটন-রঙ্গে—যখন,–প্রকট লীলায় বিহরিলে

কিছুই দেখতে পাই নাই

কীর্ত্তন-নটন-লীলা—কিছুই দেখতে পাই নাই

নিশিদিশি জ্বলছে হিয়ায়

সেই,–লীলা অদর্শন শেল—নিশিদিশি জ্বলছে হিয়ায়

আশাপথ চেয়ে হিয়ায়

সেই,–লীলা অদর্শন শেল—নিশিদিশি জ্বলছে হিয়ায়
আশাপথ চেয়ে আছি
শ্রীগুরু-শ্রীমুখে কথা স্মঙরি—আশাপথ চেয়ে আছি

শ্রীমুখে বলেছেন শ্রীগুরুদেব
প্রতিজ্ঞা করেছ তুমি

‘‘এই,–পৃথিবীর মধ্যে আছে যতদেশ গ্রাম রে।
সর্ব্বত্র প্রচার হইবে মোর নাম রে।।’’

কৈ তা হল কৈ

নামপ্রেমে বিশ্ব ভরল কৈ—কৈ তা হল কৈ

বরং যে বিপরীত হল

নামপ্রেমে বিশ্ব কৈ ভরল—বরং যে বিপরীত হল
তোমার,–নামে যে কলঙ্ক –বরং যে বিপরীত হল

ঘুচাও নামের কালিমা ঘুচাও

দেখাও নামের মহিমা দেখাও—ঘুচাও নামের কালিমা ঘুচাও

তুমি ত’ সত্য সঙ্কল্প
তোমার সঙ্কল্প ত’ বৃথা হবে না
তাই এই করি প্রার্থনা

আমাদের কি দেখাবে না –তাই এই করি প্রার্থনা
জগভরি’ তোমার নামের কান্না—তাই এই করি প্রার্থনা

সেদিনের আর কদিন বাকী

বল বল প্রাণের গৌরহরি—সে দিনের আর কদিন বাকী
আমরা দেখতে পাব না কি—সে’ দিনের আর কদিন বাকী

প্রাণে বড় ব্যথা আছে
কারে বলব প্রাণের কথা
সেই ব্যথা বুকে ধরে

তোমার,–শ্রীমুখের বাণী শ্রবণ করে—সেই ব্যথা বুকে ধরে

আশাপথ চেয়ে আছি
এখন হলাম নিরাশা

দেখি জগতের দুর্দ্দশা—এখন হলাম নিরাশা

আশা কি মিটাবে না

নামের ফল কি ফলবে না—আশা কি মিটাবে না

আর কারে বা জানাব
কোথা শান্তিপুর-নাথ
তোমার,–প্রভুর নামে কলঙ্ক হল
ঘুচাও নামের কালিমা ঘুচাও
কোথা আছ প্রভু নিতাই
তোমার,–হাতে ধরে বলে দিয়েছে

নিরজনে কেঁদে কেঁদে—তোমার,–হাতে ধরে বলে দিয়েছে

‘‘এই নিবেদন তোরে, নয়নে দেখিবে যারে,
কৃপা করি লওয়াইত নাম।।
কৃত পাপী দুরাচার, নিন্দুক পাষণ্ডী আর,
কেহ যেন বঞ্চিত না হয়।’’

কৈ তা হল কৈ
হা নিতাই প্রভু নিতাই
তোমার,–আজ্ঞা পালন করা হয় নাই
হা নিতাই প্রভু নিতাই
যদি আশা না মিটাবে

আজ্ঞা পালন না করিবে—যদি আশা না মিটাবে

আমাদের সকলেই জেনেছে
অঙ্গীকার করেছ তুমি

শ্রীগুরুরূপে দেখা দিয়ে—অঙ্গীকার করেছ তুমি

আমরা তোমার হই না বা হই

তুমি ত’ অঙ্গীকার করেছ—আমরা তোমার হই বা না হই

নামে কলঙ্ক রটাব

আমরা,–বহির্ন্মুখ-দলে মিশিব—নামে কলঙ্ক রটাব

সেইদিন তোমার কাছে যাব

যখন দেখব,–আর কেউ নাই বাকী—সেইদিন তোমার কাছে যাব
ম্লেচ্ছ-যবনাদি করি,–আর কেউ নাই বাকী—সেইদিন তোমার কাছে যাব

নাম প্রেমে গাইব
সেইদিন তোমার হব

জগদ্‌গুরু নিত্যানন্দ—সেইদিন তোমার হব

হা,–পরম করুণ শ্রীগুরুদেব

হা,–নিতাই-গৌর-প্রেমের পাগল—হা,–পরম করুণ শ্রীগুরুদেব
কৃপা করে দেখাবে কি-হা,–পরম করুণ শ্রীগুরুদেব

একদিন,–নরকের চিত্র দেখেছিলে
এখন যে তার প্রকট কাল
একবার চেয়ে দেখ প
্রাণ কি কাঁদছে না

নরকের চিত্র দেখে—প্রাণ কি কাদছে না

আমাদের আর কেবা আছে

এ’বুক জুড়াব কার কাছে—আমাদের আর কেবা আছে

তেমনি করে বল হে,
তুমি,–ব্যাকুল হয়ে কেঁদেছিলে
কে বলে তোমায় পতিত-পাবন

যদি জীবের এত দুর্গতি—কে বলে তোমায় পতিত-পাবন
‘জীবের যদি এত দুর্গতি’—
কি সে তোমার,–পতিত-পাবনেত্বর খ্যাতি—জীবের যদি এত দুর্গতি

ব্যাকুল হয়ে জানাও হে য
সবাই তোমার নিত্যদাস
তোমার নিত্যদাস সবে

তোমার,–কৃপায় কেন বঞ্চিত হবে—তোমার নিত্যদাস সবে

কর,–গৌর-নাম-প্রেমে একাকার

চিত্তশুদ্ধি করি সবার—কর,–গৌর-নাম-প্রেমে একাকার

ভাই ভাই করুক কোলাকুলি

পরস্পর বুকে ধরবে—ভাই ভাই করুক কোলাকুলি

বিরুদ্ধ স্বভাব ভুলে যাবে

পরস্পর বুকে ধরবে—বিরুদ্ধ স্বভাব ভুলে যাবে

ব্যাকুল হযে কাঁদুক সবে

হা গৌর প্রাণ গৌর বলে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদুক সবে

সেইদিন প্রাণের ব্যথা যাবে

তোমার,–গৌর-সম্বন্ধে সবাই বাঁধা পড়বে—সেইদিন প্রাণের ব্যথা যাবে

অনুরাগে সবাই বলবে

ম্লেচ্ছ-যবনাদি-নরনারী—অনুরাগে সবাই বলবে

‘‘দণ্ডে দণ্ডে তিলে তিলে, গোরারূপ না হেরিলে,
মরমে মরিয়া, যেন থাকি।
সাধ হয় নিরন্তর, হেমকান্তি কলেবর,
সতত হিয়ার মাঝে রাখি।।
তিলক না দেখি তায়, পাঁজর ধ্বসিয়া যায়,
ধৈরয ধরিতে নাহি পারি।
অনুরাগের ডুরি দিয়া, অন্তরে কি করে সিয়া,
না জানি তার কতই ধার ধারি।।’’

অনুরাগে সবাই বলবে

সম্বন্ধেতে বাঁধা পড়বে—অনুরাগে সবাই বলবে
জগবাসী নরনারী—অনুরাগে সবাই বলবে
অভাব ঘুচাবে স্বভাব জাগাবে—অনুরাগে সবাই বলবে

‘‘সুরধুনী-কূলে গিয়া, কুল দিব ভাসাইয়া,
অনল জ্বালিয়া দিব লাজে।
গৌরাঙ্গ সম্মুখে করি, হেরিব নয়ন ভরি,’
দিন যায় মিছামিছি কাজে।।’’

তবে ঘুচবে মনের ব্যথা

নিতাই প্রেম-বিতরণ-দাতা-তবে ঘুচবে মনের ব্যথা।
জগভরি,’—শুনব গৌর-অনুরাগের কথা—তবে ঘুচবে মনের ব্যথা
‘শুনব গৌর-অনুরাগের কথা’—
ম্লেচ্ছ-যবনাদি-নরনারী—শুনব গৌর-অনুরাগের কথা

তবে গুচবে মনের ব্যথা
পূরাও মোদের এই বাসনা

ও,–গুণনিধি নিতাই-সোণা—পুরাও মোদের এই বাসনা
ঘরে ঘরে,–শুনব গৌর-প্রেমের কান্না—পূরাও মোদের এই বাসনা

হা নিতাই তোমায় বলি
বলো তোমার প্রাণ-গৌরাঙ্গে

নামপ্রেমে বিশ্ব ভরিতে—বলো তোমার প্রাণ-গৌরাঙ্গে

আজ তার আসবার দিন

উদ্ধারিতে যত দীন—আজ তার আসবার দিন

এসেছিল নদীয়ায়
সবার হৃদয় নদীয়া করুক

সবারই হৃদয় ঝুরুক—সবার হৃদয় নদীয়া করুক

সকলে যাক প্রেমে মাতি

হৃদে ধরি গৌর-মূরতি—সকলে যাক্ প্রেমে মাতি

এই বাসনা পূরণ কর
জগভরি উঠুক রোল

গৌরহরি হরিবোল—জগভরি’ উঠুক রোল

আমরা বেড়াব আনন্দমনে

ভাইভাই মিলে একপ্রাণে—আমরা বেড়াব আনন্দমনে
হৃদে যদি শ্রীগুরুচরণে—আমরা বেড়াব আনন্দমনে

যারে দেখব তারে বলব

‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’



অভিসার আক্ষেপানুরাগ কুঞ্জভঙ্গ খণ্ডিতা গীতগোবিন্দ গোষ্ঠলীলা দানলীলা দূতী ধেনুবৎস শিশুহরণ নৌকাখন্ড পূর্বরাগ বংশীখণ্ড বিপরীত বিলাস বিরহ বৃন্দাবনখন্ড ব্রজবুলি বড়াই বড়াই-বচন--শ্রীরাধার প্রতি মাথুর মাধবের প্রতি দূতী মান মানভঞ্জন মিলন রাধাকৃষ্ণসম্পর্ক হীন পরকীয়া প্রেমের পদ রাধা বিরহ রাধিকার মান লখিমাদেবি শিবসিংহ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন শ্রীকৃষ্ণের উক্তি শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগ শ্রীকৃষ্ণের মান শ্রীকৃষ্ণের স্বয়ংদৌত্য শ্রীগুরু-কৃপার দান শ্রীরাধা ও বড়াইয়ের উক্তি-প্রত্যুক্তি শ্রীরাধার উক্তি শ্রীরাধার প্রতি শ্রীরাধার প্রতি দূতী শ্রীরাধার রূপবর্ণনা শ্রীরাধিকার পূর্বরাগ শ্রীরাধিকার প্রেমোচ্ছ্বাস সখীতত্ত্ব সখীর উক্তি সামোদ-দামোদরঃ হর-গৌরী বিষয়ক পদ