শ্রীশ্রীরামচন্দ্র কবিরাজের সূচক-কীর্ত্তন

(আশ্বিন-কৃষ্ণাষ্টমী তিথি)


— ০ —

‘‘শ্রীগুরু-প্রেমানন্দে নিতাই গৌর হরিবোল’’
‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।

‘‘প্রভু মোর রামচন্দ্র, সেন-চিরঞ্জীব-পুত্র,
জন্মভূমি শ্রীখণ্ডে যাহার।’’

চিরঞ্জীব-সেনের পুত্র

প্রভু মোর রামচন্দ্র—চিরঞ্জীব-সেনের পুত্র
খণ্ডবাসী গৌরপ্রিয়—চিরঞ্জীব-সেনের পুত্র

[মাতন]

‘‘মাতামহ-দেহ-অন্তে, অনুজ-গোবিন্দ-সাথে,
স্থিতি যার কুমার-নগর।।’’

অভিন্ন শ্রীনরোত্তম

প্রভু মোর রামচন্দ্র-অভিন্ন শ্রীনরোত্তম

অতিগূঢ় রহস্য ভাই
অনুভব কর ভাই রে

গৌরগণের গূঢ়-চরিত—অনুভব কর ভাই রে
শ্রীগুরুচরণ হৃদে ধরে—অনুভব কর ভাই রে

ব্রজের অপূর্ণ-সাধ মিটাইতে
আইলা—কিশোরী গদাই অনঙ্গ নিতাই হয়ে

নিগূঢ়-গৌরাঙ্গ-লীলায়,–আইলা,–কিশোরী গদাই অনঙ্গ নিতাই হয়ে

দোঁহার ত’ এই স্বভাব

‘‘নিত্যানন্দ গদাধরে যে প্রীতি অন্তরে। রে !
একের অপ্রিয় আরে সম্ভাষা না করে।। রে !!


গদাধর পণ্ডিতের সঙ্কল্প এইরূপ। রে !
নিত্যানন্দ-বিমুখের না দেখেন মুখ।। রে !!
নিত্যানন্দ-স্বরূপেতে প্রীতি যার নাই। রে !!
দেখাও না দেন তারে পণ্ডিত গোসাঞি।। রে !!’’

দোঁহার,–মনে বড় সাধ সদাই

নিরন্তর,–থাকি’ দোঁহে একঠাঁই—দোঁহার,–মনে বড় সাধ সদাই
কিশোরী গদাই অনঙ্গ নিতাই—দোঁহার,–মনে বড় সাধ সদাই

সে সাধ পূর্ণ হয় নাই

নিতাই গদাই স্বরূপেতে—সে সাধ পূর্ণ হয় নাই
নিরন্তর মিলন-সাধ—সে সাধ পূর্ণ হয় নাই

সেই সাধ মিটাইতে
এলেন আবার দুই-স্বরূপে

নরোত্তম-রামচন্দ্র-রূপে—এলেন আবার দুই-স্বরূপে

ঠাকুর-শ্রীনরোত্তম

নিত্যানন্দের দ্বিতীয়-প্রকাশ—ঠাকুর শ্রীনরোত্তম

প্রভু মোর রামচন্দ্


শ্রীগদাধরের দ্বিতীয়-প্রকাশ—প্রভু মোর রামচন্দ্র

তাইতে এত মাখামাখি

নরোত্তম রামচন্দ্রে—তাইতে এত মাখামাখি

তেমনি তেমনি মাখামাখি

পূর্ব্বলীলায়,–নিতাই-গদাধরের যেমন দেখি—তেমনি তেমনি মাখামাখি

পূর্ণরূপে ভোগ হল

এই দ্বিতীয়-প্রকাশে—পূর্ণরূপে ভোগ হল
রাধা অনঙ্গে যে প্রীতি-পূর্ণরূপে ভোগ হল
সেই স্বভাব প্রকট হল—পূর্ণরূপে ভোগ হল

কেউ কারে ছাড়তে নারে

নিরন্তর সঙ্গ-বাসনা করে—কেউ কারে ছাড়তে নারে

পলকে প্রলয় গণে

দোঁহে দোঁহার অদর্শনে—পলকে প্রলয় গণে
নরোত্তম রামচন্দ্র—পলকে প্রলয় গণে

পরিচয় পাবে ভাই

রামচন্দ্রের চরিতে তার—পরিচয় পাবে ভাই

শুন রামচন্দ্রের কথা

এ যে অমিয়া-মাখান-গাথা—শুন রামচন্দ্রের কথা

অপরূপ প্রসঙ্গ ভাই

আচার্য্য প্রভুর সঙ্গে রামচন্দ্রের মিলন—অপরূপ প্রসঙ্গ ভাই

একদিন–,‘যাজিগ্রামে বৃক্ষমূলে কৃষ্ণকথা কুতূহলে,
ভক্ত-সনে আচার্য্য-ঠাকুর।’’

বসিয়াছেন বটবৃক্ষ-মূলে

ভক্ত-সঙ্গে-কৃষ্ণ-কথা-রঙ্গে—বসিয়াছেন বটবৃক্ষ-মূলে

অদ্যাপিও সাক্ষী আছে

সেই স্মৃতিচিহ্ন-বটবৃক্ষ—অদ্যাপিও সাক্ষী আছে

‘‘রামচন্দ্র হেনকালে, বিবাহান্তে নিজালয়ে
ফিরিছেন মূরতি মধুর।।
হেরি’ তার রূপঠাম, শ্রীআচার্য্য গুণধাম,
কহিছেন উদ্দেশে তাঁহার।’’

আপন-মনে বলছেন

নিজ-ভক্তগণ-মধ্যে বসে—আপন-মনে বলছেন
রামচন্দ্রে লক্ষ্য করি—আপন-মনে বলছেন

‘‘অপূর্ব্ব এ-রূপ ধন্য, নহে আত্মভোগ-জন্য,
যোগ্য শুধু গোবিন্দ-সেবার।।’’

আত্মভোগের দেহ নয়

এ ত’ গোবিন্দ সেবার দেহ—আত্মভোগের দেহ নয়

কিন্তু,–‘‘সংসার-বিষয়কূপে, ডুবাইতে সর্ব্ব-জীবে,
মায়ার মূরতি এই নারী।


‘‘কৃষ্ণদাস্য ভুলাইতে,’’

অবশ্য-কর্ত্তব্য-কৃষ্ণদাস্য ভুলাইতে

‘‘কৃষ্ণদাস্য ভুলাইতে, নরক-যন্ত্রণা দিতে,
পুরুষ-রতনে লয় হরি’।।


আচার্য্য-বচন শুনি,’ রামচন্দ্র গুণমণি,
গৃহে গিয়া উৎসাহ না পায়।’’

স্বভাব জাগিয়া উঠল

নিত্যসিদ্ধ কৃষ্ণসেবার—স্বভাব জাগিয়া উঠল

মনে মনে গণে রে
কি কথা শুনলাম কাণে

পথে আসতে যাজিগ্রামে—কি কথা শুনলাম কাণে

কি শুনলাম অপূর্ব্ব-তত্ত্ব

মানব-জীবনের অবশ্য-কর্ত্তব্য—কি শুনলাম অপূর্ব্ব-তত্ত্ব

এই যে দুর্ল্লভ তনু

শ্রীকৃষ্ণ-ভজনের-এই যে দুর্ল্লভ তনু

ইহারে করিলাম নাশ
হায় আমি কি করিলাম

গোবিন্দ-সেবার দেহ কারে দিলাম—হায় আমি কি করিলাম

[মাতন]

‘‘সদা প্রাণ উচাটন, কভু স্থির নহে মনে,’’

সেইকথা শুনা-অবধি

আচার্য্য-মুখে যাজিগ্রামে—সেইকথা শুনা-অবধি

সদাই তার প্রাণ চঞ্চল
আর,–কতক্ষণে যাজিগ্রামে যাব

কেমন করে সুযোগ পাব—আর,–কতক্ষণে যাজিগ্রামে যাব
আচার্য্য-পদে গিয়া লুটাইব—আর,–কতক্ষণে যাজিগ্রামে যাব

‘‘মানে গৃহ অনল-সমান।।’’

অশান্তি-অনল জ্বলে

শ্রীরামচন্দ্র-মনে—অশান্তি-অনল জ্বলে
হায় কি করেছি বলে—অশান্তি-অনল জ্বলে

‘‘সবাকার অলক্ষিতে, অতি ব্যাকুল-চিতে,
আসি’ নিশিযোগে যাজিগ্রামে।
প্রাতে,– ছিন্নমূল-বৃক্ষপ্রায়, কাঁদি তিঁহ উভরায়,
পড়িলেন আচার্য্য-চরণে।।’’

পড়িলা আচার্য্য-পদতলে

ভাসি’ দুটি-নয়ন-জলে—পড়িলা আচার্য্য-পদতলে
তোমার,–ক্রীতাদাস এসেছে বলে—পড়িলা আচার্য্য-পদতলে
‘তোমার,–ক্রীতদাস এসেছে বলে’—
যারে,–ইঙ্গিতেতে এনেছ টেনে—‘তোমার,–ক্রীতদাস এসেছে বলে’

পড়িলা আচার্য্য-পদতলে
কৃপাদিঠে দেখ চেয়ে

তোমার,–নিজদাস পড়ে পদতলে—কৃপাদিঠে দেখ চেয়ে

অঙ্গীকার সর হে

নিজ-গুণে লও তুলে—অঙ্গীকার কর হে

রাখ নিজ-পদ-পাশে

বাঁধি’ নিজ-প্রেম-ফাঁদে—রাখ নিজ-পদ-পাশে
বাঁধিয়া মোহন-ফাঁদে—রাখ নিজ-পদ-পাশে
গাঁথিয়া মোহন-ছাঁদে—রাখ নিজ-পদ-পাশে

[মাতন]

‘‘হেরি’ প্রভু প্রেমভরে,রামচন্দ্রে বক্ষে ধরে,’’

তখন হতে,–আচার্য্য কাঁদছিলেন প্রাণে

যখন,–রামচন্দ্র যেতে দেখেছেন –তখন হতে,–আচার্য্য কাঁদছিলেন প্রাণে
‘যখন,–রামচন্দ্রে যেতে দেখেছেন’—
বিবাহবন্ধনে বাঁধা পড়ে—যখন,–রামচন্দ্রে যেতে দেখেছেন

তখন হতে,–আচার্য্য কাঁদছিলেন প্রাণে

প্রাণ,–রামচন্দ্রে পাব কতক্ষণে—তখন হতে,–আচার্য্য কাঁদছিলেন প্রাণে

যেন হারানিধি পেলেন ফিরে
রামচন্দ্রে কৈলেন কোলে

আইস বাপু আইস বলে—রামচন্দ্রে কৈলেন কোলে
‘আইস বাপু আইস বলে’—
প্রেমবাহু পসারিয়ে—আইস বাপু আইস বলে
‘প্রেমবাহু পসারিয়ে’—
প্রেম-দিঠে চেয়ে—প্রেমবাহু পসারিয়ে

আইস বাপু আইস বলে

তোমার,–পথ চেয়ে আছি বসে—আইস বাপু আইস বলে

রামচন্দ্রে কৈলেন কোলে

‘‘হেরি’ প্রভু প্রেমভরে, রামচন্দ্রে বক্ষে ধরে,


অশ্রুনীরে সিক্ত কলেবর।’’

আচার্য্য ভাসে নয়ন-জলে

প্রিয়-রামচন্দ্রে করি’ কোলে—আচার্য্য ভাসে নয়ন-জলে

আনন্দ আর ধরে না রে

মায়ার কবল হতে এনেছে বলে—আনন্দ আর ধরে না রে

‘‘কহিলা মধুর-বাণী, কৃষ্ণ মোর কৃপা-খনি,
ও বাপ,–ছুটাইলা সংসার তোমার।।’

কৃপার খনি কৃষ্ণ আমার

ছুটাইলা সংসার তোমার—কৃপার খনি কৃষ্ণ আমার

[মাতন]

‘‘রামচন্দ্রে যতনে, রাখি’ নিজ-সন্নিধানে,
রাধাকৃষ্ণ-মন্ত্র দীক্ষা দিলা।
গৌরগণ-সুসম্মত, ভকতি-সিদ্ধান্ত যত,
কৃপা করি’ সব জানাইলা।।
প্রভু-কৃপা হৃদে ধরি’, সদা চিন্তে গৌরহরি,
মন প্রাণ আকুল সদায়।’’

প্রকট-লীলার অদর্শনে

প্রাণের প্রাণ গৌরাঙ্গের—প্রকট-লীলার অদর্শনে

‘‘মন প্রাণ আকুল সদায়।
নরোত্তম-সঙ্গ পাবে, সর্ব্বাভীষ্ট সিদ্ধ হবে,
স্বপ্নে গৌর কহেন তাহায়।’’

ও প্রিয় রামচন্দ্র
তোমার,–সর্ব্বাভীষ্ট সিদ্ধ হবে

নরোত্তমের সঙ্গ পাবে যবে—তোমার,–সর্ব্বাভীষ্ট সিদ্ধ হবে

আগে হতে শুনেছিলেন

শ্রীনিবাস-আচার্য্য-মুখে—আগে হতে শুনেছিলেন
নরোত্তমের গুণগাথা—আগে হতে শুনেছিলেন

হয়েছিলেন ব্যাকুল-চিত

তাঁর সঙ্গ পাবার লাগি’—হয়েছিলেন ব্যাকুল-চিত

এখন,–স্বপ্নাদেশ পেয়ে
অবধি নিশিদিশি মনে জপে

নরোত্তম-সঙ্গ পাব কবে—নিশিদিশি মনে জপে

‘‘তেলিয়া-বধুরী-গ্রাম, গঙ্গা-পদ্মা-মধ্যস্থান,
শ্রীখেতুরী-সন্নিকট-স্থিতি।
অতি-উৎকণ্ঠিত-মনে, ভ্রাতা-শ্রীগোবিন্দ-সনে,
তাঁহা আসি’ করিলা বসতি।।’’

কুমার-নগর-বাস পরিহরি’

নরোত্তমের সঙ্গ পাবার লাগি’—কুমার-নগর-বাস পরিহরি’

কৈল বধুরীতে বাস

রামচন্দ্র-কবিরাজ—কৈল বুধরীতে বাস
করি’,–নরোত্তমের সঙ্গ-আশ—কৈল বুধরীতে বাস

লীলাশক্তি কৈল সংঘটনে

রামচন্দ্রের বাস বুধরী-গ্রামে—লীলাশক্তি কৈল-সংঘটনে
পরস্পর-প্রীতির টানে—লীলাশক্তি কৈল সংঘটনে

বাস দিলেন,–পদ্মার এ-পারে ও-পারে

অনায়াসে দোঁহারে মিলাবার তরে—বাস দিলেন,–পদ্মার এ-পারে ও-পারে

পদ্মার উত্তরে খেতুরী

দক্ষিণ-পারে বুধরী—পদ্মার উত্তরে খেতুরী

এ-পারে ও-পারে বাস

নরোত্তম-রামচন্দ্রের হল—এ-পারে ও-পারে বাস

অপূর্ব্ব মিলনের কথা

নরোত্তম-রামচন্দ্রের—অপূর্ব্ব মিলনের কথা

নিরন্তর চিন্তে অন্তরে

রামচন্দ্র বধুরী-এসে—নিরন্তর চিন্তে অন্তরে
খেতুরী-গ্রামের পানে চেয়ে—নিরন্তর চিন্তে অন্তরে
নরোত্তমের সঙ্গ পাব কবে—নিরন্তর চিন্তে অন্তরে
একদিন,–‘‘নিজালয়ে পিণ্ডোপরে,উৎকণ্ঠিত-অন্তরে,
রামচন্দ্র আছেন বসিয়া।’’

মনে মনে ভাবছেন
এই ত’ যাতায়াতের পথ

ঠাকুর-শ্রীনরোত্তমের—এই ত’ যাতায়াতের পথ
যাজিগ্রামে আচার্য্যের কাছে—এই ত’ যাতায়াতের পথ

এই,–পথের ধারে বসে থাকি

যদি,–পথে যেতে দেখা হয়—এই,–পথের ধারে বসে থাকি
এত-ভাবি’ বসে আছেন রামচন্দ্র আছেন বসে
নিজালয়ে পিণ্ডোপরে—রামচন্দ্র আছেন বসে
নরোত্তম-দর্শন-উৎকণ্ঠা অন্তরে—রামচন্দ্র আছেন বসে
নরোত্তম-সঙ্গ-আশা অন্তরে—রামচন্দ্র আছেন বসে

‘‘হেনকালে আচম্বিতে, নরোত্তম অতিপ্রীতে,
মিলিলেন তথায় আসিয়া।’’

আর কি রইতে পারে

প্রাণে প্রাণে পড়েছে টান—আর কি রইতে পারে
এ ত’ নয় নূতন টান
স্বাভাবিক-প্রীতির আকর্ষণ—এ ত’ নয় নূতন টান

‘‘দোঁহে দোঁহা-মুখ দেখি’’, ফিরাইতে নারে আঁখি’’,

আঁখি ফিরাইতে নারে

দূরে পরস্পর হেরে—আঁখি ফিরাইতে নারে

আছে পরিচয় প্রাণে প্রাণে
প্রাণে প্রাণে আছে পরিচয়

এই দেখা-শুনা নয়—প্রাণে প্রাণে আছেপরিচয়

‘‘দোঁহে দোঁহা-মুখ দেখি’, ফিরাইতে নারে আঁখি,
প্রেমজলে ভাসে দুনয়ন।’’

যেন বহুদিন-পরে দেখা

দোঁহে দোঁহার চির-পরিচিত—যেন বহুদিন-পরে দেখা

কতদিন দেখে নাই
চকোর-আঁখি পিপাসিত ছিল

অভিলষিত-সুধা-পানের আশে—চকোর-আঁখি পিপাসিত ছিল

বহুদিন পরে পেয়ে ভোগ্যধন
অনিমিখ হইল নয়ন
প্রথম-মিলনের এই ত’ দশা

পরস্পর-অনুরাগীর—প্রথম-মিলনের এই ত’ দশা

কারো পদ চলে না

আঁখি-তারা মানে না—কারো পদ চলে না

না চলে পা না সরে রা

রসরাজ্যে,–নব-মিলনের এ ত’ ধারা—না চলে পা না সরে রা
হয়-দোঁহে,–থকিত-পার ঠউর-হারা—না চলে পা না সরে রা
কেবল,–দুনয়নে বহে ধারা—না চলে পা না সরে রা

[মাতন]
পহিলহি রাগ রে

নরোত্তম-রামচন্দ্রের—পহিলহি রাগ রে

বুঝি দোঁহে,–কোটি-আঁখি বাঞ্ছা করে
বিধাতারে নিন্দা করে
বিধি সৃজন জানে না রে
কোটি-আঁখি দিল না রে

দেখতাম বদন নয়ন-ভরে—কোটি-আঁখি দিল না রে

কতক্ষণে—‘‘রামচন্দ্র নরোত্তম, কৈল দণ্ড-পরণামে,’’

এবার,–করে সব উল্টো রীতি

প্রণম্য হয়ে প্রণাম করে—এবার,–করে সবে উল্টো রীতি

‘‘তিঁহ তাঁরে কৈল আলিঙ্গন।।’’

রামচন্দ্রে করে কোলে

নরোত্তম প্রেমভরে—রামচন্দ্রে করে কোলে
প্রেমবাহু পসারিয়ে—রামচন্দ্র করে কোলে
ভাসি’ দুটী নয়ন-নীরে—রামচন্দ্রে করে কোলে

যে প্রাণে প্রাণে কি বলিল

রামচন্দ্রে কোলে নিল—যেন, প্রাণে প্রাণে কি বলিল
বলিবার কিছু ভাষা নাই—যেন, প্রাণে প্রাণে কি বলিল

মনে মনে এই ত’ জাগে
যেন,–এই বলে কৈল আলিঙ্গন

রামচন্দ্রে নরোত্তম—যেন,–এই বলে কৈল আলিঙ্গন
এস প্রাণের দিদি এস—যেন,–এই বলে কৈল আলিঙ্গন

এস তোমায় বুকে রাখি

হৃদয়-পিঞ্জরের পাখী—এস তোমায় বুকে রাখি

‘‘নরোত্তম-সঙ্গে তাঁর, যে প্রীতি-ব্যবহার,
বর্ণিবারে নাহিক শকতি।’’

নরোত্তম রামচন্দ্র দুঁহু

এক প্রাণ ভিন্ন দেহ-নরোত্তম রামচন্দ্র দুঁহু

‘‘ক্ষণমাত্র অদর্শনে, যুগ-সম করি’ মানে,
যাচে দোঁহে দোঁহার সঙ্গতি।।’’

কেউ,–কারে ছেড়ে রইতে নারে
যেন এই প্রার্থনা করে

নরোত্তম রামচন্দ্র—যেন এই প্রার্থনা করে

এই করো প্রাণ-গৌরহরি

না হই যেন ছাড়াছাড়ি—এই করো প্রাণ-গৌরহরি

‘‘কৃষ্ণকথা নিরন্তর, আস্বাদয়ে পরস্পর,
কভু কাঁদে গোরা-গুণ স্মরি’।’’

ভাসে দুটী-নয়ন-জলে

নরোত্তম রামচন্দ্রে করি’ কোলে—ভাসে দুটী-নয়ন-জলে

ব্যাকুল-অন্তরে হা-হুতাশ

না দেখি’ সে সুখ-বিলাস—ব্যাকুল-অন্তরে হা-হুতাশ

‘‘ভাবে গরগর মন, প্রেমাবেশে অনুক্ষণ,
পিয়ে কৃষ্ণ বিগ্রহ মাধুরী।।’’

নিরন্তর পান করে

রাধা-জড়িত-কৃষ্ণ-মাধুরী—নিরন্তর পান করে

‘‘শ্রীআচার্য্য-প্রিয়তম, নরোত্তম-প্রাণ যেন,
রামচন্দ্র-কবিরাজ সেই।
অদ্ভুত চরিত্র তাঁর, শুনি’ লাগে চমৎকার,
উল্লাসেতে কথা এক কই।।
একদিন,–নিশিতে আচার্য্য-সঙ্গে, আঙ্গিনাতে ফিরে রঙ্গে,
রজ্জু এক আছিল তথায়।
রামচন্দ্র জানে তাহা, কিন্তু,–প্রভু কহে সর্প ইহা,

রজ্জু দেখায়ে বলছেন আচার্য্য

রামচন্দ্র দেখ বিষধর সর্প—রজ্জু দেখায়ে বলছেন আচার্য্য

অমনি,–‘‘তিঁহ সর্প মানয়ে তাহায়।।’’

শ্রীগুরু-বাক্য সর্প মানে

রজ্জু বলে আগে জানে—শ্রীগুরু-বাক্যে সর্প মানে

শুধু,–মনে মনে মান নয়
রজ্জুতেই সর্প দেখে

শ্রীগুরু-বাক্য-নিষ্ঠা-বলে—রজ্জুতেই সর্প দেখে

প্রভুর,–বাক্য—সঙ্গেই সর্প দেখে

রজ্জু জানি পরতেকে—প্রভুর,–বাক্য-সঙ্গেই সর্প দেখে

রজ্জুতে,–সর্প দেখে সেইকালে

শ্রীগুরু- বাক্যে বিশ্বাসের বলে—রজ্জুতে,–সর্প দেখে সেইকালে

তাই,–ঐ সাপ বলে তটস্থ হয় রে

‘‘কহে বটে সর্প হয়, পুনঃ প্রভু কহে নয়,
ইহ রজ্জু দেখহ নিশ্চয়,’’

রামচন্দ্র ! ও ত’ সর্প নয়

দেখ এ য়ে রজ্জু হয়—রামচন্দ্র ! ও ত’ সর্প নয়

অমনি—‘‘সর্পস্থানে ততক্ষণে, পুনঃ রজ্জু দরশন,
করে রামচন্দ্র মহাশয়।।’’

আদর্শ শ্রীরামচন্দ্র

শ্রীগুরু-বাক্য-নিষ্ঠার—আদর্শ শ্রীরামচন্দ্র

শুধু,–মুখের কথায় কি গৌর মিলে

এমন,–গুরু-বাক্যে নিষ্ঠা না হইলে—শুধু,–মুখের কথায় কি গৌর মিলে

যদি,–গুরু-বাক্য-নিষ্ঠা-স্বভাব চাও

যার অভাবে,–সাধন ভজন কিছু না হয়—যদি,–গুরু-বাক্য-নিষ্ঠা-স্বভাব চাও
রামচন্দ্রের পদে বিকাও—যদি,–গুরু-বাক্য-নিষ্ঠা-স্বভাব চাও

‘‘শ্রীগুরু-বাক্যে নিষ্ঠা তাঁর, ত্রিভুবনে পরচার,
এই বাক্য হয় সুপ্রমাণ।
যথা গুরু-পদে রতি, তুলনা নাহিক কতি,
শুনহ সে অপূর্ব্ব-কথন।।’’

কি বলব সে লীলার কথা
অতিগূহ্য-লীলা ভাই রে
একদিন শ্রীআচার্য্য
আদেশিলেন রামচন্দ্রে
যাও,–রামচন্দ্র একবার যাও
সম্ভাষণ করে এস

বিবাহিত-পত্নী-সনে—সম্ভাষণ করে এস

আজ্ঞা-পালন করতে গেলেন

রামচন্দ্র অবিচারে—আজ্ঞা-পালন করতে গেলেন

রামচন্দ্র গেলেন নিজ-গৃহে

প্রাণ রাখি’ আচার্য্য-চরণেরামচন্দ্র গেলেন নিজ-গৃহে
বেলি-অবশান-কালে—রামচন্দ্র গেলেন নিজ-গৃহে

রামচন্দ্রে এই ত’ দশা

শ্রীআচার্য্য-প্রভুর কৃপায়—রামচন্দ্র এই ত’ দশা

স্ত্রী পুরুষ ভেদ-জ্ঞান-নাই

নিজের,–পুরুষ-দেহ-স্মৃতি নাই—স্ত্রী পুরুষ ভেদ-জ্ঞান-নাই

নিশিদিশি আচার্য্যে সেবে

আপন-প্রকৃতি-স্বভাবে—নিশিদিশি আচার্য্যে সেবে

নিশিদিশি সেবায় মত্ত
সেই-দশায় রামচন্দ্র
গেলেন আজ্ঞা-পালনে
অপূর্ব্ব রহস্য-কথা

স্থির হয়ে অনুভব কর ভাই—অপূর্ব্ব রহস্য-কথা

আর কিছু জানে না

আচার্য্যের,–সেবা বিনে রামচন্দ্র—আর কিছু জানে না

সদাই তার প্রাণে-জাগে

শ্রীআচার্য্য-প্রভুর সেবা—সদাই তার প্রাণে জাগে

তাই,–সারা-নিশি করলেন আলাপন

আপনার পত্নী-সনে—তাই,–সারা-নিশি করলেন আলাপন
শ্রীআচার্য্যের সেবা-কথা—প্রসঙ্গে—সারা-নিশি করলেন আলাপন

আমার প্রভু এই করছেন

এইকালে যাজিগ্রামে-আমার প্রভু এই করছেন

এমনি করে করি সেবা

এইকালে আমার প্রভুর—এমনি করে করি সেবা

এই-প্রসঙ্গে নিশি প্রভাত
রামচন্দ্রের স্মৃতি নাই

কেবা তার স্ত্রী বলে—রামচন্দ্রের স্মৃতি নাই
স্ত্রী সঙ্গে কি সম্বন্ধ—রামচন্দ্রের স্মৃতি নাই

রামচন্দ্রের দেহ-স্মৃতি নাই

সিদ্ধদেহে স্থিতি সদাই—রামচন্দ্রের দেহ-স্মৃতি নাই

সারা-নিশি কাটালেন

স্ত্রীকে নিজ-সঙ্গী জেনে—সারা-নিশি কাটালেন

এই-ভাবে কাটালেন নিশি

দুই যেন একজাতি—এই-ভাবে কাটালেন নিশি

সংসার-কূপ-কাঁহা তার

দেহ-স্মৃতি নাহি যার—সংসার—কূপ-কাঁহা তার

নিশি পরভাত হলে

শ্রীআচার্য্যের কথা প্রসঙ্গে—নিশি পরভাত হলে

প্রাণ কেঁদে উঠল

শ্রীগুরু-সেবাকাল হয়েছে দেখে—প্রাণ কেঁদে উঠল
নিজ-প্রভুর সেবার তরে—প্রাণ কেঁদে উঠল

চলিলেন ত্বরা করে

নিজ-প্রভুর সেবার তরে—চলিলেন ত্বরা করে
শ্রীযাজিগ্রাম-পানে—চলিলেন ত্বরা করে

কিছুদূর এসে মনে হল
প্রভু আজ্ঞা করেছিলেন

স্ত্রী-সনে সম্ভাষণের—প্রভু আজ্ঞা করেছিলেন

আবার,–ফিলে গেলেন রামচন্দ্র

শ্রীগুরু-আজ্ঞা পালন করতে—আবার,–ফিরে গেলেন রামচন্দ্র

সম্ভাষণ করলেন
বাহু পসারি’ কৈলেন আলিঙ্গন

আপনার পত্নীকে—বাহু পসারি’ কৈলেন আলিঙ্গন
রামচন্দ্রের,–পুরুষ-অভিমান নাই

সেই স্বভাবে রামচন্দ্র
করিলেন আলিঙ্গন

প্রভু-আজ্ঞা সঙরি’—করিলেন আলিঙ্গন

তেমনি করে আলিঙ্গন

সখী সখীরে কোলে নেয়—তেমনি করে আলিঙ্গন

রামচন্দ্রের নাই বাহ্য-স্মৃতি

আলিঙ্গনের আজ্ঞা-পালন লাগি’—রামচন্দ্রের নাই বাহ্য-স্মৃতি

রামচন্দ্র জানলেন না

কারে আলিঙ্গন করলেন—রামচন্দ্র জানলেন না
পুরুষ কিম্বা প্রকৃতি ঐ—রামচন্দ্র জানলেন না

সেই-সম্ভাষণ-কালে য
লাগিল রামচন্দ্র-ললাটে

প্রিয়ার সিঁথির-সিন্দুর—লাগিল রামচন্দ্র-ললাটে

রামচন্দ্রের দেহ-স্মৃতি নাই
সেই-চিহ্ন নিয়ে রামচন্দ্র
ব্যাকুল হয়ে ছুটে যায়

প্রভুর,–সেবার সময় বয়ে যায়—ব্যাকুল হয়ে ছুটে যায়

উপনীত হলেন যাজিগ্রামে

প্রভুর শ্রীঅঙ্গনে—উপনীত হলেন যাজিগ্রামে

সেইকালে নরোত্তম
করছিলেন আঙ্গিনা মার্জ্জন

সম্মার্জ্জনী করে ধরে—করেছিলেন আঙ্গিনা মার্জ্জন

অকস্মাৎ দেখতে পেলেন

রামচন্দ্র কাছে দাঁড়ায়ে—আকস্মাৎ দেখতে পেলেন

রামচন্দ্রের পানে চেয়ে

সিন্দুর-বিন্দু দেখে তার মাথে—রামচন্দ্রে পানে চেয়ে

কহিলেন দৃঢ় করে

যেন অতি রোষভরে—কহিলেন দৃঢ় করে

কোথা গিয়েছিলে তুমি

এখন বা কোথা যাও—কোথা গিয়েছিলে তুমি

রামচন্দ্র নিবেদিলেন
পত্নী-সম্ভাষণে গিয়েছিলাম

প্রভুর আজ্ঞাক্রমে আমি—পত্নী-সম্ভাষণে গিয়েছিলেন

এই এখনি ফিরে এলাম


প্রভুর সেবা করবে বলে—এই এখনি ফিরে এলাম

নরোত্তম বলিলেন প্রেমভরে
ছি ছি রামচন্দ্র

এ কি তোমার ব্যবহার—ছি ছি রামচন্দ্র

এসেছ প্রভুর সেবায়

ধিক্‌ ধিক্‌ তোমায়—এসেছ প্রভুর সেবায়

প্রভু-সেবা করবে কেমনে

এই অপবিত্র-দেহে—প্রভু-সেবা করবে কেমনে

এত বলি’ নরোত্তম
অপরূপ লীলা রে

প্রাণগৌর-গৌরগণের—অপরূপ লীলা রে
মহিমা প্রকাশের লাগি’—অপরূপ লীলা রে

এই বলি’ ক্রোধ প্রকাশে
সেই সম্মার্জ্জনী লয়ে

আঙ্গিনা ঝাড়ু দেওয়া—সেই সম্মার্জ্জনী লয়ে

আঘাত করলেন রোষভরে

রামচন্দ্রের পৃষ্ঠদেশে—আঘাত করলেন রোষভরে

দেহ-স্মৃতি নাহি ছিল

এতক্ষণ রামচন্দ্রে—দেহ-স্মৃতি নাহি ছিল

সঙ্গে সঙ্গে মনে করলেন
হায় হায় কি করেছি
কি অকার্য্য করেছি
মানি,–নিজ-কৃত-অপরাধ

রামচন্দ্র-কবিরাজ—মানি,–নিজ-কৃত-অপরাধ

গেলেন প্রভু সেবা-কাজে

অবগাহন করি—গেলেন প্রভুর সেবা-কাজে

এদিকে মধ্যাহ্ন-কালে
ঠাকুর-নরোত্তমের সেবা

আচার্য্যের অঙ্গে তৈল-মর্দ্দন—ঠাকুর-নরোত্তমের সেবা

করিতেছেন তৈল-মর্দ্দন

বড়-সুখে নরোত্তম-করিতেছেন তৈল-মর্দ্দন

অকস্মাৎ দেখতে পেলেন

আচার্য্যের পৃষ্ঠদেশে—অকস্মাৎ দেখতে পেলেন
সম্মার্জ্জনীয় আঘাত—অকস্মাৎ দেখতে পেলেন

মনে মনে ভাবলেন
হায় হায় কি করেছি
কার অঙ্গে আঘাত করেছি

কারণ না জেনে আমি—কার অঙ্গে আঘাত করেছি
দোষী মনে করে আমি—কার অঙ্গে আঘাত করেছি

ও ত’ নয় রামচন্দ্রের দেহ

ও-যে,–আচার্য্যের অঙ্গীকৃত-দেহ—ও ত’ নয় রামচন্দ্রের দেহ

নৈলে কেন পড়ল

তার অঙ্গ-আঘাত—নৈলে কেন পড়ল
শ্রীঅচার্য্যের অঙ্গে—নৈলে কেন পড়ল

নরোত্তম বড় ব্যাকুল হলেন
হায় হায় কি করেছি

আচার্য্যের অঙ্গে আঘাত করেছি—হায় হায় কি করেছি

নিজ-অপরাধ মানি’
অপরাধ ক্ষালন লাগি’
মনে করলেন সঙ্কল্প
উপযুক্ত-দণ্ড দিব

এই-অপরাধী-হস্তে—উপযুক্ত-দণ্ড দিব

আর আমি রাখব না

রামচন্দ্র-অঙ্গে আঘাত-করা-হস্ত—আর আমি রাখব না

অপরাধ লীল তাহার
নরোত্তম করলেন মনে

হাত পোড়াব আগুনে—নরোত্তম করলেন মনে

অমনি আচার্য্য জানলেন প্রাণে
কেমন করে বাধা দিবেন
নরোত্তমের সান্ত্বনা লাগি’
জানাইছেন তার অধিক অধিকার
আপন-মনে বলছেন

তার অধিকার জানায়ে—আপন-মনে বলছেন

‘‘এ-দেশে বিচার নাই বাপ রে বাপ।
দিনে মারে ঝাঁটার বাড়ী রাত্রে পোড়ায় হাত।।’’

[মাতন]
আমার অঙ্গে লেগেছে

রামচন্দ্রের অঙ্গে আঘাত করাতে—আমার অঙ্গে লেগেছে

আর আমার হাত পুড়েছে

তুমি,–হার পোড়াব এই মনে করাতে—আর আমার হাত পুড়েছে

ও ত’ নয় তোমার হাত

ও ত’ করেছি আমি আত্মসাৎ–ও ত’ নয় তোমার হাত

দুই ত’ আমার বটে
দুইজন আমার দুই-হাত

তুমি রামচন্দ্র-সাথ—দুইজন আমার দুই-হাত

এ-দেহের যেমন দুই-হস্ত

তেমনি তুমি আর রামচন্দ্র—এ-দেহের যেমন দুই-হস্ত

নরোত্তমে শান্ত কৈলেন

ইঙ্গিতে অধিকার জানায়ে—নরোত্তমে শান্ত কৈলেন

বাহু-পসারি ধরলেন বুকে
আবেশেতে বলিলেন
তোমরা আমার,–দুই-বাহু দুইজন

ও রামচন্দ্র নরোত্তম –তোমরা আমার,–দুই-বাহু দুইজন

কি সুমধুর লীলা রে
বালাই লয়ে মরে যাই
আদর্শ শ্রীরামচন্দ্র

শ্রীগুরু-পদে আত্ম-সমর্পণের—আদর্শ শ্রীরামচন্দ্র

যদি কারো সাধ থাকে

শ্রীগুরুপদে বিকাইতে—যদি কারো সাধ থাকে
রামচন্দ্রে ধর বুকে—যদি কারো সাধ থাকে

[মাতন]
রামচন্দ্রের শরণ লও

যদি,–গুরু-পদে বিকাতে চাও—রামচন্দ্রের শরণ লও

[মাতন]
পাওয়া যায় কি সাধন-ফলে

শ্রীগুরু-পদে বিকান-স্বভাব—পাওয়া যায় কি সাধন-ফলে

আমার ত’ আশা হয় না

সাধনে আনুগত্যের কক্ষায় যেতে—আমার ত’ আশা হয় না

আমার প্রাণে এই ত’ জাগে

পাওয়া যায় কেবল কৃপা বলে—আমার প্রাণে এই ত’ জাগে

তবে অনায়াসে মিলে

শ্রীগুরু-আনুগত্য-স্বভাব—তবে অনায়াসে মিলে
বিকালে তার পদতলে—তবে অনায়াসে মিলে

[মাতন]
তারে অনায়াসে মিলে

যে বিকায়েছে শ্রীগুরু-পদে—তারে অনায়াসে মিলে

সর্ব্বোত্তমা-গতি মিলে

শ্রীগুরু-পদে রতি—সর্ব্বোত্তমা-গতি মিলে
রামচন্দ্রের কৃপা হলে—সর্ব্বোত্তমা-গতি মিলে

[মাতন]
শ্রীগুরু-পদে বিকাবার এই ত’ সাধন

রামচন্দ্রের গুণ-কীর্ত্তন—শ্রীগুরু-পদে বিকাবার এই ত’ সাধন

[মাতন]
কি বলব গুণের কথা

প্রাণের ঠাকুর রামচন্দ্রের—কি বলব গুণের কথা

একদিন,–‘‘শ্রীআচার্য্য লীলা-ধ্যানে, মগ্ন ছিলা নিকেতনে,
বাহ্যজ্ঞান নাহি ছিল তাঁহার।’’

লীলা-স্মরণে আছেন আবিষ্ট

তিনদিন শ্রীআচার্য্য—লীলা-স্মরণে আছেন আবিষ্ট
‘‘শ্রীগৌরাঙ্গপ্রিয়া-আদি,’’

শ্রীআচার্য্যের ঘরণী

‘‘শ্রীগৌরাঙ্গপ্রিয়া-আদি, আকুল হইলা কাঁদি,
চিন্তান্বিত মন সবাকার।।’’

সবাই,–মনে মনে ভয় গণে

আচার্য্য,–কৈলা বুঝি লীলা-সঙ্গোপনে—সবাই,–মনে মনে ভয় গণে
‘‘রামচন্দ্র-হেনকালে,’’

লীলা-শক্তির আকর্ষণে

‘‘রামচন্দ্র হেনকালে, আসি’ উপনীত হলে
শুনি’ তার সব বিবরণ।’’

প্রাণে প্রাণে হইল স্ফুরণ

শ্রীগুরু-আনুগত-বলে—প্রাণে প্রাণে হইল স্ফুরণ
প্রভু আছেন লীলায় মগন—প্রাণে প্রাণে হইল স্ফুরণ

সবারে সান্ত্বনা দিলেন

প্রভু এখনই প্রকৃতিস্থ হবেন—সবারে সান্ত্বনা দিলেন

তোমরা স্থির হও সবে
চিন্তা ছাড় মাতা তুমি

প্রভু চৈতন্য হবে এখনি—চিন্তা ছাড় মাতা তুমি

এখনই সমাধান করব আমি

তোমার চরণধূলি-বলে ঠাকুরাণী—এখনই সমাধান করব আমি

এত বলি’ ভাবলেন মনে
যাই গিয়ে দেখে আসি

কোন-সুখে ভাসছেন গুরুমণি—যাই গিয়ে দেখে আসি
‘‘করি’ দণ্ড-পরণামে,’’

আচার্য্যঘরণী-পদে

গৌরাঙ্গপ্রিয়া-দেবী—আচার্য্যঘরণী-পদে

আনুগত্যে,–‘‘করি’ দণ্ড-পরণামে রাধাকৃষ্ণ-লীলা-ধ্যানে,’’

জয় প্রভু শ্রীনিবাস বলে

তাঁর চরণে শরণাগত হয়ে—জয় প্রভু শ্রীনিবাস বলে

‘‘বসিলেন নিকটে তাহান।।’’

বসিলেন লীলা-ধ্যানে

শ্রীআচার্য্যের আনুগত্যে—বসিলেন লীলা-ধ্যানে
নিজ,–সিদ্ধস্বরূপ সঙরিয়ে—বসিলেন লীলা-ধ্যানে

অনুভব কর ভাই রে

আনুগত্যের কত বল—অনুভব কর ভাই রে

‘‘ধরি’ নিজ-সিদ্ধদেহ, গুরুরূপা-সখী-সহ,
মিলিলেন শ্রীযমুনা-নীরে।
দেখি’ সখী-আজ্ঞা-মতে, খুঁজিছেন একচিতে,
শ্রীমতীর নাসার বেশরে।।’’

এই ত’ বটে লীলা-রহস্য
রাসলীলা-অন্তে
যমুনায় জলকেলি করতে করতে
স্খলিত হয়েছে যমুনার নীরে

প্রাণ-কিশোরীর নাসার বেশর—স্খলিত হয়েছে যমুনার নীরে

হারায়েছেন প্রাণ-কিশোরী

আপনার নাসার বেশর—হারায়েছেন প্রাণ-কিশোরী

জলকেলি শেষ হলে
সবাই গেলেন নিজ-গৃহে
প্রাতে আসি’ সখী-সবে

প্রাণ-কিশোরীর কাছে—প্রাতে আসি’ সখী-সবে

দেখে নাসার বেশর নাই
বড়ই ব্যস্ত হলেন সবাই
সেইকালে হয়েছেন লীলায় প্রবিষ্ট

নিজ,–সিদ্ধ-স্বরূপে শ্রীআচার্য্য—সেইকালে হয়েছেন লীলায় প্রবিষ্ট

রামচন্দ্র দেখলেন

সেই-লীলায় প্রবেশ করে—রামচন্দ্র দেখলেন

সেই-অনুসন্ধানে মত্ত

শ্রীগুরু-শ্রীআচার্য্য—সেই-অনুসন্ধানে মত্ত
সখীর আদেশ-মত—সেই-অনুসন্ধানে মত্ত

তাতেই আছেন বিভোর হয়ে

কোন সন্ধান না পেয়ে—তাতেই আছেন বিভোর হয়ে

তাই আচার্য্যের বাহ্য নাই

বেশর-সন্ধানে মত্ত সদাই—তাই আচার্য্যের বাহ্য নাই

এই-দশায় তিনদিন গেছে

বেশর-সন্ধানে শ্রীআচার্য্যের—এই-দশায় তিনদিন গেছে

‘‘তবে দুই-সখী-মিলি’, হয়ে অতি-কুতুহলী,
খুঁজি তথা পদ্মপত্র-তলে।
পাইয়া বেশর-খানি, আনন্দেতে পুনি পুনি,
বক্ষে শিরে ধরে পরস্পরে।।’’

অনুভব কর ভাই রে

শ্রীগুরু-আনুগত্যের কত বল—অনুভব কর ভাই রে

পাইলা সে-বেশরে

রামচন্দ্র পদ্মপত্রতলে—পাইয়া সে-বেশরে
শ্রীগুরু-আনুগত্যের বলে—পাইলা সে-বেশরে

আনন্দেতে ভেসে যায়

প্রাণ-কিশোরীর বেশর জানি’—আনন্দেতে ভেসে যায়
‘‘শ্রীগুণমঞ্জরী-করে,’’

শ্রীগোপাল ভট্ট-গোসাঞি

শ্রীনিবাসাচার্য্যের প্রভু—শ্রীগোপাল ভট্ট-গোসাঞি

‘‘শ্রীগুণমঞ্জরী-করে, দোঁহে সমর্পণ করে,’’

অনায়াসে দিতে পারতেন

কিশোরীর করে কিশোরীর বেশর—অনায়াসে দিতে পারতেন

তা ত দিলেন না
দিলেন শ্রীগুণমঞ্জরী-করে

শ্রীগুরু-আনুগত্য-ভরে—দিলেন শ্রীগুণমঞ্জরী-করে

আনুগত্যের এই ত’ রীতি

‘‘তিঁহ রূপমঞ্জরীরে দিলা।’’

দেখ আনুগত্যের গতি

উপাসনার এই ত’ রীতি—দেখ আনুগত্যের গতি

আনুগত্যে দান কৈলা

কোটি-গুণ ভোগ করবে বলে—আনুগত্যে দান কৈলা
‘কোটি-গুণ ভোগ করবে বলে’—
কিশোরীর মনের আনন্দ—কোটি-গুণ ভোগ করবে বলে

আনুগত্যে দান কৈলা
তারা কিন্তু চায় না

কিশোরীর সুখ-ভোগ—তারা কিন্তু চায় না
আনুগত্য যেচে দেয়—তারা কিন্তু চায় না

‘‘তিঁহ শীঘ্র শ্রীমতীরে, পরাইলা সে বেশরে,
সবে অতি আনন্দ লভিলা।।’’

অপরূপ রহস্য ভাই
পর পর আনন্দের বিকাশ
শ্রীমতীর সুখ যত

হয়,–শ্রীরূপেতে পর্য্যবসিত—শ্রীমতীর সুখ যত

কোটি-গুণে ভোগ করে

শ্রীরূপ আবার সে আনন্দ—কোটি-গুণে ভোগ করে
শ্রীমতীর সন্তোষ দেখে—কোটি-গুণে ভোগ করে

এইরূপ,–আনন্দের হয় ক্রম বিকাশ

পরস্পর মুখ হেরে—এইরূপ,–আনন্দের হয় ক্রম বিকাশ

শ্রীরূপের ভোগ হয়ে কোটি—গুণিত

হয়,–শ্রীগুণমঞ্জরীতে পর্য্যবসিত—শ্রীরূপের-ভোগ হয়ে কোটি-গুণিত

আবার,–শ্রীআচার্য্য-প্রভু ভোগ করে

গুণমঞ্জরীর হাসি-মুখ হেরে—আবার,–শ্রীআচার্য্য-প্রভু ভোগ করে
গুণমঞ্জরী সুখ কোটিগুণে—আবার,–শ্রীআচার্য্য-প্রভু ভোগ করে

আবার,–আচার্য্যের ভোগ হয়ে কোটি-গুণিত
হয়,—শ্রীরামচন্দ্রে পর্য্যবসিত
তাই লিখেছেন শ্রীকবিরাজ
সখীগণ পল্লব-পুষ্প-পাতা

শ্রীরাধাকৃষ্ণ-লীলা-বৃক্ষে—সখীগণ পল্লব-পুষ্প-পাতা

পল্লবাদ্যে কোটি-সুখ-ভোগ

রাধাকৃষ্ণ-বিলাস যত সুখ—তার,–পল্লববাদ্যে কোটি-সুখ-ভোগ

আনুগত্যে অধিক সুখ

‘‘শ্রীরাধিকা হৃষ্টমনে,’’

নিজ,–নাসার বেশর পেয়ে

‘‘শ্রীরাধিকা হৃষ্টমনে, চর্ব্বিত-তাম্বুল দানে,
তুষিলেন নব-সখীদ্বয়ে।
তাঁহার অধরামৃত, পাই’ দোঁহে ফুল্লচিত,
রাধে জয়ধ্বনি উচ্চারয়ে।।’’

জয় প্রেমময়ী রাধে

না চাইতে পূরালে সাধে—জয় প্রেমময় রাধে

[মাতন]
জয় রাধে কিশোরী

করে রেখো নিজ-কিঙ্করী—জয় রাধে কিশোরী

[মাতন]

‘‘রাধে জয়ধ্বনি উচ্চারয়ে।।
বাহ্য হৈল হেন-মতে, দেখিল তাম্বুল হাতে,
সৌরভেতে ভরিল আলয়।’’

কেউ,–ভেদ মনে করো না ভাই

ব্রজপরিকর-গৌরপরিকর-দেহে—কেউ,–ভেদ মনে করো না ভাই

তার প্রমাণ দেখ ভাই

শ্রীরামচন্দ্রের চরিতে—তার প্রমাণ দেখ ভাই

যদি,–দুই-দেহ ভিন্ন হয়

গৌরপরিকর-ব্রজপরিকর-দেহ—যদি,–দুই-দেহ ভিন্ন হয়

কেমন করে এল বল

শ্রীমতী চর্ব্বিত-তাম্বুল—কেমন করে এল বল
রামচন্দ্র-কবিরাজের হাতে—কেমন করে এল বল
যদি,–সেই-দেহ এই-দেহ না হয়—কেমন করে এল বল

দুই-স্বরূপ ত’ এক হয়

লীলা-ভেদে ভিন্ন দেখায়—দুই-স্বরূপ ত’ এক হয়

দুই-স্বরূপ নিত্যাসিদ্ধ

কেউ ভেবো না অন্যমত—দুই-স্বরূপ নিত্যসিদ্ধ

গৌর-গোবিন্দ-পরিকরের

নিত্যসিদ্ধ-স্বরূপ বটে—গৌর-গোবিন্দ-পরিকরের

অসিদ্ধ মনে করো না

গৌর-পরিকরের স্বরূপ—অসিদ্ধ মনে করো না

বলতে গেলে বলতে পারি

শ্রীগুরুর চরণ হৃদে ধরি’—বলতে গেলে বলতে পারি

দুই-লীলায় সমান অধিকার

গৌর-পরিকরগণের—দুই-লীলায় সমান অধিকার

দুই-লীলা ভোগ করে

প্রতি-গৌরকিঙ্করে—দুই-লীলা ভোগ করে
নদীয়া-লীলা ব্রজ-লীলা—দুই-লীলা ভোগ করে

[মাতন]
কিন্তু যদি লোভ হয়

ব্রজ-পরিকরের গৌর-লীলা-ভোগে—কিন্তু যদি লোভ হয়

আনুগত্য করতে হয়

তবে গৌর-পরিকরের—আনুগত্য করতে হয়

দুই-লীলার অধিকারী

আমার গৌর-পরিকর—দুই-লীলার অধিকারী
নদীয়া আর ব্রজপুরী—দুই-লীলার অধিকারী

যদি,–গৌর-পরিকর ইচ্ছা করে

দুই-লীলা ভোগ করতে পারে—যদি,–গৌর-পরিকর ইচ্ছা করে

অপূর্ব্ব রহস্য ভাই

শ্রীগুরু-আনুগত্যের—অপূর্ব্ব রহস্য ভাই

অনুভব কর ভাই রে

শ্রীগুরুচরণ হৃদে ধরি’—অনুভব কর ভাই রে

এ-দেহ সেই-দেহ হয়

শ্রীগুরুচরণে যার রতি হয়—এ-দেহ সেই-দেহ হয়

কেন বা হবে না
এই-প্রাকৃত-রাজ্যে দেখ
আরশোলা কাঁচাপোকা হয়

কাঁচপোক ভাবতে ভাবতে—আরশোলা কাঁচপোকা হয়

প্রাকৃত-রাজ্যে যদি এই হয়
সে-রাজ্যে কে না হবে
এ-দেহ সেই-শক্তি পায়

শ্রীগুরু-আনুগত্যের ফলে—এ-দেশ সেই-শক্তি পায়
প্রত্যক্ষ প্রমাণ দেখ ভাই—এ-দেহ সেই-শক্তি পায়

‘‘শ্রীমুখ-তাম্বুল পাইয়া, অতি উল্লসিত হৈয়া,
সবে রামচন্দ্র-গুণ গায়।।’’

বলে,–জয় কবিরাজের-রামচন্দ্র

শ্রীগুরু-নিষ্ঠার আদর্শ-বলে,–জয় কবিরাজ-রামচন্দ্র

দেখাইলা জগমাঝ

শ্রীরামচন্দ্র কবিরাজ—দেখাইলা জগমাঝ

যদি,–ভোগ করতে সাধ কর

গৌর-গোবিন্দ-লীলা—যদি,–ভোগ করিতে সাধ কর
শ্রীগুরু-আনুগত্য কর—যদি,–ভোগ করতি সাধ কর

[মাতন]
সেই সে উত্তমা-গতি

শ্রীগুরুচরণে রতি—সেই সে উত্তমা-গতি

সর্ব্ব-আশা অনায়াসে পূরে

শ্রীগুরুদেবের প্রসাদে—সর্ব্ব-আশা অনায়াসে পূরে

‘‘অভিন্ন আচার্য্য-প্রাণ, রামচন্দ্র গুণধাম,
উচ্চৈঃস্বরে সকলেই বলে।
গুরুপদে বিকাইতে, মন-প্রাণ সমর্পিতে,
কেহ শুনিয়াছে কোন-কালে।।
যেই-সঙ্গ-সুখ-লাগি,’ নরোত্তম অনুরাগী,
সকাতরে করেন প্রার্থনা।।’’

কিছুই ত’ চাইলেন না

ঠাকুর-শ্রীনরোত্তম—কিছুই ত’ চাইলেন না
লীলা-অবসানকালে—কিছুই ত’ চাইলেন না
গুরু গৌর গোবিন্দ-কিছুই ত’ চাইলেন না

ঠাকুর,–নরোত্তমের শেষ প্রার্থনা
এই করো শ্রীগুরুদেব

ব্যাকুল হয়ে বল্লেন—এই করো শ্রীগুরুদেব

‘‘যদি হয় জন্ম পুনঃ, পাই,–রামচন্দ্র-সঙ্গ যেন,
তবে হয় নরোত্তম ধন্য।’’

প্রার্থনা ত’ করলেন না

গৌর গোবিন্দ দেখাও বলে—প্রার্থনা ত’ করলেন না

অনুভব কর ভাই

প্রার্থনার রহস্য—অনুভব কর ভাই

সবাই,–বাঁধা পড়ে সে-আধারে

গুরু গৌর গোবিন্দ—সবাই,–বাঁধা পড়ে সে-আধারে
যে গুরুপদে বিকায়েছে—সবাই,–বাঁধা পড়ে সে-আধারে
গুরু গৌর গোবিন্দ অভিন্ন—সবাই,–বাঁধা পড়ে সে-আধারে

তার হৃদে সদা জাগে

যে গুরু-বই আর নাহি জানে—তার হৃদে সদা জাগে
গৌর-গোবিন্দ-লীলা—তার হৃদে সদা জাগে
দুই,–লীলা-ভূমির দুই—স্বরূপ—তার হৃদে সদা জাগে
‘দুই,–লীলা-ভূমির দুই-স্বরূপ’—
গৌর আর গোবিন্দ—দুই,–লীলা-ভূমির দুই-স্বরূপ

তার হৃদে সদা জাগে
কোন-ভাগ্যে তার সঙ্গ হলে

গুরু গৌর গোবিন্দ সকলই মিলে—কোন-ভাগ্যে তার সঙ্গ হলে

বাকী থাকে না কিছু পেতে

শ্রীগুরুনিষ্ঠ-ভক্তের সঙ্গ হলে—বাকী থাকে না কিছু পেতে

তাই,–আর কিছু চাইলেন না
সর্ব্বোত্তমা প্রাপ্তি ভাই

ঠাকুর,–নরোত্তম-প্রার্থনাতে জেনো—সর্ব্বোত্তমা প্রাপ্তি ভাই
গৌরদাসের দাসের সঙ্গ—সর্ব্বোত্তমা প্রাপ্তি ভাই

যদি,–গৌরদাসের সঙ্গ ঘটে

সব-লীলা ভোগ হয় অনায়াসে—যদি,–গৌরদাসের সঙ্গে ঘটে

বিরহের মধ্যে সেই বড়

গুরুনিষ্ঠ-ভক্তের বিরহ—বিরহের মধ্যে সেই বড়

তাই,–ব্যাকুল হয়ে কাঁদিলেন

ঠাকুর-শ্রীনরোত্তম—তাই,–ব্যাকুল হয়ে কাঁদিলেন
শ্রীরামচন্দ্রের বিরহে—তাই,–ব্যাকুল হয়ে কাঁদিলেন

‘‘বিধি মোরে কি করিল, শ্রীনিবাস কোথা গেল,
হিয়া মাঝে দিয়া দারুণ ব্যথা।
গুণের রামচন্দ্র ছিলা, সেই সঙ্গ ছাড়ি গেলা,
শুনিতে না পাই মুখের কথা।।
পুনঃ কি এমন হব, রামচন্দ্র সঙ্গ পাব,
এই জন্ম মিছা বহি গেল।
যদি প্রাণ দেহে থাক, রামচন্দ্র বলি’ ডাক,
তবে যদি যাও সেই ভাল।।
স্বরূপ রূপ সনাতন, রঘুনাথ সকরুণ,
ভট্টযুগ দয়া কর মোরে।
আচার্য্য শ্রীশ্রীনিবাস, রামচন্দ্র যাঁর দাস,
পুনঃ না কি মিলিব আমারে।।’’

নরোত্তম আর্ত্তনাদ করে
সবে মিলে কৃপা কর

পরাণ-গৌরাঙ্গগণ—সবে মিলে কৃপা কর
যেন,–শ্রীনিবাসে পাই রামচন্দ্র-সহ—সবে মিলে কৃপা কর

[মাতন]

‘‘না দেখি’ সে না মুখ, বিদরিয়া যায় বুক,
বিষশরে কুরঙ্গিণী যেন।
আঁচলে রতন ছিল, কোন ছলে কে বা নিল,
নরোত্তমের হেন দশা কেন।’’


—- ০ —-

‘‘সেই রামচন্দ্র-কবিরাজ, ভ্রাতা-শ্রীগোবিন্দ-সাথ,
অধমে কি করিবে করুণা।।’’

এইবার আমায় দয়া কর

রামচন্দ্র-কবিরাজ—এইবার আমায় দয়া কর

সাধের জনম বিফলে গেল

শ্রীগুরু-কৃপা প্রাপ্তি না হইল—সাধের জনম বিফলে গেল

লোক ভাঁড়য়ে জনম গেল

সাধু সেজে দেশ-বিদেশে—লোক ভাঁড়ায়ে জনম গেল
শ্রীগুরুচরণে রতি না মিলিল—লোক ভাঁড়ায়ে জনম গেল

এইবার আমায় দয়া কর
নিষ্ঠাকণা বিতর মোরে

শ্রীগুরুদেবের শ্রীমুখবাক্যে—নিষ্ঠাকণা বিতর মোরে
বিচার করে পড়লাম ফেরে—নিষ্ঠাকণা বিতর মোরে

[মাতন]
যেন,–আজ্ঞা-পালন করতে পারি

অবিচারে শ্রীগুরুদেবের—যেন,–আজ্ঞা-পালন করতে পারি
শ্রীগুরুপদে বিকাইয়ে—যেন,–আজ্ঞা-পালন করতে পারি

রামচন্দ্র কৃপা কর

আপন-স্বভাব সঞ্চার—রামচন্দ্র কৃপা কর

স্বভাব দাও হে

অবিচারে বিকাইবার—স্বভাব দাও হে
‘অবিচারে বিকাইবার’—
শ্রীগুরু-চরণে—অবিচারে বিকাইবার

স্বভাব দাও হে
তোমার ত’ নাই অভাব

কৃপা করে দাও স্বভাব—তোমার ত’ নাই অভাব

কৃপাদিঠে একবার চাও

শ্রীগুরুপদে বিকাইতে শিখাও—কৃপাদিঠে একবার চাও

যেন,–গুরু-আনুগত্য করি

তোমার চরণ হৃদে ধরি’—যেন,—গুরু-আনুগত্য করি

যেন,—আর কিছু চাই না
প্রাণে প্রাণে ভোগ করাও
সব,–চাওয়া-পাওয়া শেষ হয়েছে

যে-দিনে,–গুরুরূপে হাত ধরেছে—সব,–চাওয়া-পাওয়া শেষ হয়েছে

চাইতে হয় না আপনি মিলে

শ্রীগুরুপদে বিকাইলে—চাইতে হয় না আপনি মিলে
গৌর-গোবিন্দ-লীাল-ভোগ—চাইতে হয় না আপনি মিলে

বরং অধিক পাওয়া যায়

শ্রীগুরু-পদাশ্রয়-ফলে—বরং অধিক পাওয়া যায়
শ্রীগুরুলীলা ভোগ হয়—বরং অধিক পাওয়া যায়

সর্ব্বোত্তমা প্রাপ্তি হয়

শ্রীগুরু-পদাশ্রয়ে—সর্ব্বোত্তমা প্রাপ্তি হয়

সর্ব্বোপরি উত্তমা-গতি

শ্রীগুরুচরণে রতি—সর্ব্বোপরি উত্তমা-গতি

এই মোদের দাও মতি

রামচন্দ্র কৃপা করি’—এই মোদের দাও মতি
শ্রীগুরুচরণে রতি—এই মোদের দাও মতি

সবে মিলে কোথা লুকালে

পরাণ-গৌরাঙ্গগণ—সবে মিলে কোথা লুকালে
হা দাস গদাধর—সবে মিলে কোথা লুকালে

—– ০ —–


অতঃপর মহাজনী আক্ষেপ-কীর্ত্তন—

‘‘শ্রীগৌরাঙ্গের সহচর,’’……………..ইত্যাদি


…………………………………………………………………………..
…………………………………………………………………………..


‘‘যতক্ষণ এই-দেহে থাক, হা গুরু-গৌর বলে ডাক,
তবে যদি যাও সেই ভাল।।’’

কণ্ঠহার কর রে

শ্রীগুরু-কৃপাদত্ত-নামাবলী—কণ্ঠহার কর রে

কণ্ঠহার করতে পারবে

তাদের কৃপা হলে পরে—কণ্ঠহার করতে পারবে

তাদের জয় দাও ভাই রে

প্রাণভরে গাও রে—তাদের জয় দাও ভাই রে

জয় শ্রীনিবাস নরোত্তম

জয় রামচন্দ্র শ্যামানন্দ—জয় শ্রীনিবাস নরোত্তম

[মাতন]
এই কৃপা কর চারজনে
যেন,–গান করে মরতে পারি

শ্রীগুরু-কৃপাদত্ত-নামাবলী—যেন,–গান করে মরতে পারি
শ্রীগুরু-সুখ বাঞ্ছা করি’—যেন,–গান করে মরতে পারি

যেন,–প্রাণভরে গাইতে পারি

ভাই ভাই একপ্রাণে—যেন,–প্রাণভরে গাইতে পারি
শ্রীগুরুচরণ হৃদে ধরি’—যেন,–প্রাণভরে গাইতে পারি

এই কৃপা কর সবে
যেন,–নিশিদিশি থাকি মেতে

শ্রীগুরুচরণ হৃদে ধরে—যেন,–নিশিদিশি থাকি মেতে
কেবল,–তাঁর সুখ বাঞ্ছা করে—যেন,–নিশিদিশি থাকি মেতে
তাঁর,–মুখোদ্‌গীর্ণ-নাম গানে—যেন,–নিশিদিশি থাকি মেতে

যারে দেখি তারে বলি

‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।

[মাতন]

জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’


গৌরহরি-বোল, হরিবোল, হরিবোল, হরিবোল।।
‘‘শ্রীগুরু-প্রেমানন্দে নিতাই-গৌর-হরিবোল।।’’

—— ০ ——


অভিসার আক্ষেপানুরাগ কুঞ্জভঙ্গ খণ্ডিতা গীতগোবিন্দ গোষ্ঠলীলা দানলীলা দূতী ধেনুবৎস শিশুহরণ নৌকাখন্ড পূর্বরাগ বংশীখণ্ড বিপরীত বিলাস বিরহ বৃন্দাবনখন্ড ব্রজবুলি বড়াই বড়াই-বচন--শ্রীরাধার প্রতি মাথুর মাধবের প্রতি দূতী মান মানভঞ্জন মিলন রাধাকৃষ্ণসম্পর্ক হীন পরকীয়া প্রেমের পদ রাধা বিরহ রাধিকার মান লখিমাদেবি শিবসিংহ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন শ্রীকৃষ্ণের উক্তি শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগ শ্রীকৃষ্ণের মান শ্রীকৃষ্ণের স্বয়ংদৌত্য শ্রীগুরু-কৃপার দান শ্রীরাধা ও বড়াইয়ের উক্তি-প্রত্যুক্তি শ্রীরাধার উক্তি শ্রীরাধার প্রতি শ্রীরাধার প্রতি দূতী শ্রীরাধার রূপবর্ণনা শ্রীরাধিকার পূর্বরাগ শ্রীরাধিকার প্রেমোচ্ছ্বাস সখীতত্ত্ব সখীর উক্তি সামোদ-দামোদরঃ হর-গৌরী বিষয়ক পদ