‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।
‘‘প্রভু মোর রামচন্দ্র, সেন-চিরঞ্জীব-পুত্র,
জন্মভূমি শ্রীখণ্ডে যাহার।’’
প্রভু মোর রামচন্দ্র—চিরঞ্জীব-সেনের পুত্র
খণ্ডবাসী গৌরপ্রিয়—চিরঞ্জীব-সেনের পুত্র
স্থিতি যার কুমার-নগর।।’’
প্রভু মোর রামচন্দ্র-অভিন্ন শ্রীনরোত্তম
অনুভব কর ভাই রে
গৌরগণের গূঢ়-চরিত—অনুভব কর ভাই রে
শ্রীগুরুচরণ হৃদে ধরে—অনুভব কর ভাই রে
নিগূঢ়-গৌরাঙ্গ-লীলায়,–আইলা,–কিশোরী গদাই অনঙ্গ নিতাই হয়ে
একের অপ্রিয় আরে সম্ভাষা না করে।। রে !!
নিত্যানন্দ-বিমুখের না দেখেন মুখ।। রে !!
নিত্যানন্দ-স্বরূপেতে প্রীতি যার নাই। রে !!
দেখাও না দেন তারে পণ্ডিত গোসাঞি।। রে !!’’
নিরন্তর,–থাকি’ দোঁহে একঠাঁই—দোঁহার,–মনে বড় সাধ সদাই
কিশোরী গদাই অনঙ্গ নিতাই—দোঁহার,–মনে বড় সাধ সদাই
নিতাই গদাই স্বরূপেতে—সে সাধ পূর্ণ হয় নাই
নিরন্তর মিলন-সাধ—সে সাধ পূর্ণ হয় নাই
এলেন আবার দুই-স্বরূপে
নরোত্তম-রামচন্দ্র-রূপে—এলেন আবার দুই-স্বরূপে
নিত্যানন্দের দ্বিতীয়-প্রকাশ—ঠাকুর শ্রীনরোত্তম
র
শ্রীগদাধরের দ্বিতীয়-প্রকাশ—প্রভু মোর রামচন্দ্র
নরোত্তম রামচন্দ্রে—তাইতে এত মাখামাখি
পূর্ব্বলীলায়,–নিতাই-গদাধরের যেমন দেখি—তেমনি তেমনি মাখামাখি
এই দ্বিতীয়-প্রকাশে—পূর্ণরূপে ভোগ হল
রাধা অনঙ্গে যে প্রীতি-পূর্ণরূপে ভোগ হল
সেই স্বভাব প্রকট হল—পূর্ণরূপে ভোগ হল
নিরন্তর সঙ্গ-বাসনা করে—কেউ কারে ছাড়তে নারে
দোঁহে দোঁহার অদর্শনে—পলকে প্রলয় গণে
নরোত্তম রামচন্দ্র—পলকে প্রলয় গণে
রামচন্দ্রের চরিতে তার—পরিচয় পাবে ভাই
এ যে অমিয়া-মাখান-গাথা—শুন রামচন্দ্রের কথা
আচার্য্য প্রভুর সঙ্গে রামচন্দ্রের মিলন—অপরূপ প্রসঙ্গ ভাই
ভক্ত-সনে আচার্য্য-ঠাকুর।’’
ভক্ত-সঙ্গে-কৃষ্ণ-কথা-রঙ্গে—বসিয়াছেন বটবৃক্ষ-মূলে
সেই স্মৃতিচিহ্ন-বটবৃক্ষ—অদ্যাপিও সাক্ষী আছে
ফিরিছেন মূরতি মধুর।।
হেরি’ তার রূপঠাম, শ্রীআচার্য্য গুণধাম,
কহিছেন উদ্দেশে তাঁহার।’’
নিজ-ভক্তগণ-মধ্যে বসে—আপন-মনে বলছেন
রামচন্দ্রে লক্ষ্য করি—আপন-মনে বলছেন
যোগ্য শুধু গোবিন্দ-সেবার।।’’
এ ত’ গোবিন্দ সেবার দেহ—আত্মভোগের দেহ নয়
মায়ার মূরতি এই নারী।
‘‘কৃষ্ণদাস্য ভুলাইতে,’’
পুরুষ-রতনে লয় হরি’।।
গৃহে গিয়া উৎসাহ না পায়।’’
নিত্যসিদ্ধ কৃষ্ণসেবার—স্বভাব জাগিয়া উঠল
কি কথা শুনলাম কাণে
পথে আসতে যাজিগ্রামে—কি কথা শুনলাম কাণে
মানব-জীবনের অবশ্য-কর্ত্তব্য—কি শুনলাম অপূর্ব্ব-তত্ত্ব
শ্রীকৃষ্ণ-ভজনের-এই যে দুর্ল্লভ তনু
হায় আমি কি করিলাম
গোবিন্দ-সেবার দেহ কারে দিলাম—হায় আমি কি করিলাম
আচার্য্য-মুখে যাজিগ্রামে—সেইকথা শুনা-অবধি
আর,–কতক্ষণে যাজিগ্রামে যাব
কেমন করে সুযোগ পাব—আর,–কতক্ষণে যাজিগ্রামে যাব
আচার্য্য-পদে গিয়া লুটাইব—আর,–কতক্ষণে যাজিগ্রামে যাব
শ্রীরামচন্দ্র-মনে—অশান্তি-অনল জ্বলে
হায় কি করেছি বলে—অশান্তি-অনল জ্বলে
আসি’ নিশিযোগে যাজিগ্রামে।
প্রাতে,– ছিন্নমূল-বৃক্ষপ্রায়, কাঁদি তিঁহ উভরায়,
পড়িলেন আচার্য্য-চরণে।।’’
ভাসি’ দুটি-নয়ন-জলে—পড়িলা আচার্য্য-পদতলে
তোমার,–ক্রীতাদাস এসেছে বলে—পড়িলা আচার্য্য-পদতলে
‘তোমার,–ক্রীতদাস এসেছে বলে’—
যারে,–ইঙ্গিতেতে এনেছ টেনে—‘তোমার,–ক্রীতদাস এসেছে বলে’
কৃপাদিঠে দেখ চেয়ে
তোমার,–নিজদাস পড়ে পদতলে—কৃপাদিঠে দেখ চেয়ে
নিজ-গুণে লও তুলে—অঙ্গীকার কর হে
বাঁধি’ নিজ-প্রেম-ফাঁদে—রাখ নিজ-পদ-পাশে
বাঁধিয়া মোহন-ফাঁদে—রাখ নিজ-পদ-পাশে
গাঁথিয়া মোহন-ছাঁদে—রাখ নিজ-পদ-পাশে
যখন,–রামচন্দ্র যেতে দেখেছেন –তখন হতে,–আচার্য্য কাঁদছিলেন প্রাণে
‘যখন,–রামচন্দ্রে যেতে দেখেছেন’—
বিবাহবন্ধনে বাঁধা পড়ে—যখন,–রামচন্দ্রে যেতে দেখেছেন
প্রাণ,–রামচন্দ্রে পাব কতক্ষণে—তখন হতে,–আচার্য্য কাঁদছিলেন প্রাণে
রামচন্দ্রে কৈলেন কোলে
আইস বাপু আইস বলে—রামচন্দ্রে কৈলেন কোলে
‘আইস বাপু আইস বলে’—
প্রেমবাহু পসারিয়ে—আইস বাপু আইস বলে
‘প্রেমবাহু পসারিয়ে’—
প্রেম-দিঠে চেয়ে—প্রেমবাহু পসারিয়ে
তোমার,–পথ চেয়ে আছি বসে—আইস বাপু আইস বলে
প্রিয়-রামচন্দ্রে করি’ কোলে—আচার্য্য ভাসে নয়ন-জলে
মায়ার কবল হতে এনেছে বলে—আনন্দ আর ধরে না রে
ও বাপ,–ছুটাইলা সংসার তোমার।।’
ছুটাইলা সংসার তোমার—কৃপার খনি কৃষ্ণ আমার
রাধাকৃষ্ণ-মন্ত্র দীক্ষা দিলা।
গৌরগণ-সুসম্মত, ভকতি-সিদ্ধান্ত যত,
কৃপা করি’ সব জানাইলা।।
প্রভু-কৃপা হৃদে ধরি’, সদা চিন্তে গৌরহরি,
মন প্রাণ আকুল সদায়।’’
প্রাণের প্রাণ গৌরাঙ্গের—প্রকট-লীলার অদর্শনে
নরোত্তম-সঙ্গ পাবে, সর্ব্বাভীষ্ট সিদ্ধ হবে,
স্বপ্নে গৌর কহেন তাহায়।’’
তোমার,–সর্ব্বাভীষ্ট সিদ্ধ হবে
নরোত্তমের সঙ্গ পাবে যবে—তোমার,–সর্ব্বাভীষ্ট সিদ্ধ হবে
শ্রীনিবাস-আচার্য্য-মুখে—আগে হতে শুনেছিলেন
নরোত্তমের গুণগাথা—আগে হতে শুনেছিলেন
তাঁর সঙ্গ পাবার লাগি’—হয়েছিলেন ব্যাকুল-চিত
অবধি নিশিদিশি মনে জপে
নরোত্তম-সঙ্গ পাব কবে—নিশিদিশি মনে জপে
শ্রীখেতুরী-সন্নিকট-স্থিতি।
অতি-উৎকণ্ঠিত-মনে, ভ্রাতা-শ্রীগোবিন্দ-সনে,
তাঁহা আসি’ করিলা বসতি।।’’
নরোত্তমের সঙ্গ পাবার লাগি’—কুমার-নগর-বাস পরিহরি’
রামচন্দ্র-কবিরাজ—কৈল বুধরীতে বাস
করি’,–নরোত্তমের সঙ্গ-আশ—কৈল বুধরীতে বাস
রামচন্দ্রের বাস বুধরী-গ্রামে—লীলাশক্তি কৈল-সংঘটনে
পরস্পর-প্রীতির টানে—লীলাশক্তি কৈল সংঘটনে
অনায়াসে দোঁহারে মিলাবার তরে—বাস দিলেন,–পদ্মার এ-পারে ও-পারে
দক্ষিণ-পারে বুধরী—পদ্মার উত্তরে খেতুরী
নরোত্তম-রামচন্দ্রের হল—এ-পারে ও-পারে বাস
নরোত্তম-রামচন্দ্রের—অপূর্ব্ব মিলনের কথা
রামচন্দ্র বধুরী-এসে—নিরন্তর চিন্তে অন্তরে
খেতুরী-গ্রামের পানে চেয়ে—নিরন্তর চিন্তে অন্তরে
নরোত্তমের সঙ্গ পাব কবে—নিরন্তর চিন্তে অন্তরে
একদিন,–‘‘নিজালয়ে পিণ্ডোপরে,উৎকণ্ঠিত-অন্তরে,
রামচন্দ্র আছেন বসিয়া।’’
এই ত’ যাতায়াতের পথ
ঠাকুর-শ্রীনরোত্তমের—এই ত’ যাতায়াতের পথ
যাজিগ্রামে আচার্য্যের কাছে—এই ত’ যাতায়াতের পথ
যদি,–পথে যেতে দেখা হয়—এই,–পথের ধারে বসে থাকি
এত-ভাবি’ বসে আছেন রামচন্দ্র আছেন বসে
নিজালয়ে পিণ্ডোপরে—রামচন্দ্র আছেন বসে
নরোত্তম-দর্শন-উৎকণ্ঠা অন্তরে—রামচন্দ্র আছেন বসে
নরোত্তম-সঙ্গ-আশা অন্তরে—রামচন্দ্র আছেন বসে
মিলিলেন তথায় আসিয়া।’’
প্রাণে প্রাণে পড়েছে টান—আর কি রইতে পারে
এ ত’ নয় নূতন টান
স্বাভাবিক-প্রীতির আকর্ষণ—এ ত’ নয় নূতন টান
দূরে পরস্পর হেরে—আঁখি ফিরাইতে নারে
প্রাণে প্রাণে আছে পরিচয়
এই দেখা-শুনা নয়—প্রাণে প্রাণে আছেপরিচয়
প্রেমজলে ভাসে দুনয়ন।’’
দোঁহে দোঁহার চির-পরিচিত—যেন বহুদিন-পরে দেখা
চকোর-আঁখি পিপাসিত ছিল
অভিলষিত-সুধা-পানের আশে—চকোর-আঁখি পিপাসিত ছিল
অনিমিখ হইল নয়ন
প্রথম-মিলনের এই ত’ দশা
পরস্পর-অনুরাগীর—প্রথম-মিলনের এই ত’ দশা
আঁখি-তারা মানে না—কারো পদ চলে না
রসরাজ্যে,–নব-মিলনের এ ত’ ধারা—না চলে পা না সরে রা
হয়-দোঁহে,–থকিত-পার ঠউর-হারা—না চলে পা না সরে রা
কেবল,–দুনয়নে বহে ধারা—না চলে পা না সরে রা
নরোত্তম-রামচন্দ্রের—পহিলহি রাগ রে
বিধাতারে নিন্দা করে
বিধি সৃজন জানে না রে
কোটি-আঁখি দিল না রে
দেখতাম বদন নয়ন-ভরে—কোটি-আঁখি দিল না রে
প্রণম্য হয়ে প্রণাম করে—এবার,–করে সবে উল্টো রীতি
নরোত্তম প্রেমভরে—রামচন্দ্রে করে কোলে
প্রেমবাহু পসারিয়ে—রামচন্দ্র করে কোলে
ভাসি’ দুটী নয়ন-নীরে—রামচন্দ্রে করে কোলে
রামচন্দ্রে কোলে নিল—যেন, প্রাণে প্রাণে কি বলিল
বলিবার কিছু ভাষা নাই—যেন, প্রাণে প্রাণে কি বলিল
যেন,–এই বলে কৈল আলিঙ্গন
রামচন্দ্রে নরোত্তম—যেন,–এই বলে কৈল আলিঙ্গন
এস প্রাণের দিদি এস—যেন,–এই বলে কৈল আলিঙ্গন
হৃদয়-পিঞ্জরের পাখী—এস তোমায় বুকে রাখি
বর্ণিবারে নাহিক শকতি।’’
এক প্রাণ ভিন্ন দেহ-নরোত্তম রামচন্দ্র দুঁহু
যাচে দোঁহে দোঁহার সঙ্গতি।।’’
যেন এই প্রার্থনা করে
নরোত্তম রামচন্দ্র—যেন এই প্রার্থনা করে
না হই যেন ছাড়াছাড়ি—এই করো প্রাণ-গৌরহরি
কভু কাঁদে গোরা-গুণ স্মরি’।’’
নরোত্তম রামচন্দ্রে করি’ কোলে—ভাসে দুটী-নয়ন-জলে
না দেখি’ সে সুখ-বিলাস—ব্যাকুল-অন্তরে হা-হুতাশ
পিয়ে কৃষ্ণ বিগ্রহ মাধুরী।।’’
রাধা-জড়িত-কৃষ্ণ-মাধুরী—নিরন্তর পান করে
রামচন্দ্র-কবিরাজ সেই।
অদ্ভুত চরিত্র তাঁর, শুনি’ লাগে চমৎকার,
উল্লাসেতে কথা এক কই।।
একদিন,–নিশিতে আচার্য্য-সঙ্গে, আঙ্গিনাতে ফিরে রঙ্গে,
রজ্জু এক আছিল তথায়।
রামচন্দ্র জানে তাহা, কিন্তু,–প্রভু কহে সর্প ইহা,
রামচন্দ্র দেখ বিষধর সর্প—রজ্জু দেখায়ে বলছেন আচার্য্য
রজ্জু বলে আগে জানে—শ্রীগুরু-বাক্যে সর্প মানে
রজ্জুতেই সর্প দেখে
শ্রীগুরু-বাক্য-নিষ্ঠা-বলে—রজ্জুতেই সর্প দেখে
রজ্জু জানি পরতেকে—প্রভুর,–বাক্য-সঙ্গেই সর্প দেখে
শ্রীগুরু- বাক্যে বিশ্বাসের বলে—রজ্জুতে,–সর্প দেখে সেইকালে
ইহ রজ্জু দেখহ নিশ্চয়,’’
দেখ এ য়ে রজ্জু হয়—রামচন্দ্র ! ও ত’ সর্প নয়
করে রামচন্দ্র মহাশয়।।’’
শ্রীগুরু-বাক্য-নিষ্ঠার—আদর্শ শ্রীরামচন্দ্র
এমন,–গুরু-বাক্যে নিষ্ঠা না হইলে—শুধু,–মুখের কথায় কি গৌর মিলে
যার অভাবে,–সাধন ভজন কিছু না হয়—যদি,–গুরু-বাক্য-নিষ্ঠা-স্বভাব চাও
রামচন্দ্রের পদে বিকাও—যদি,–গুরু-বাক্য-নিষ্ঠা-স্বভাব চাও
এই বাক্য হয় সুপ্রমাণ।
যথা গুরু-পদে রতি, তুলনা নাহিক কতি,
শুনহ সে অপূর্ব্ব-কথন।।’’
অতিগূহ্য-লীলা ভাই রে
একদিন শ্রীআচার্য্য
আদেশিলেন রামচন্দ্রে
যাও,–রামচন্দ্র একবার যাও
সম্ভাষণ করে এস
বিবাহিত-পত্নী-সনে—সম্ভাষণ করে এস
রামচন্দ্র অবিচারে—আজ্ঞা-পালন করতে গেলেন
প্রাণ রাখি’ আচার্য্য-চরণেরামচন্দ্র গেলেন নিজ-গৃহে
বেলি-অবশান-কালে—রামচন্দ্র গেলেন নিজ-গৃহে
শ্রীআচার্য্য-প্রভুর কৃপায়—রামচন্দ্র এই ত’ দশা
নিজের,–পুরুষ-দেহ-স্মৃতি নাই—স্ত্রী পুরুষ ভেদ-জ্ঞান-নাই
আপন-প্রকৃতি-স্বভাবে—নিশিদিশি আচার্য্যে সেবে
সেই-দশায় রামচন্দ্র
গেলেন আজ্ঞা-পালনে
অপূর্ব্ব রহস্য-কথা
স্থির হয়ে অনুভব কর ভাই—অপূর্ব্ব রহস্য-কথা
আচার্য্যের,–সেবা বিনে রামচন্দ্র—আর কিছু জানে না
শ্রীআচার্য্য-প্রভুর সেবা—সদাই তার প্রাণে জাগে
আপনার পত্নী-সনে—তাই,–সারা-নিশি করলেন আলাপন
শ্রীআচার্য্যের সেবা-কথা—প্রসঙ্গে—সারা-নিশি করলেন আলাপন
এইকালে যাজিগ্রামে-আমার প্রভু এই করছেন
এইকালে আমার প্রভুর—এমনি করে করি সেবা
রামচন্দ্রের স্মৃতি নাই
কেবা তার স্ত্রী বলে—রামচন্দ্রের স্মৃতি নাই
স্ত্রী সঙ্গে কি সম্বন্ধ—রামচন্দ্রের স্মৃতি নাই
সিদ্ধদেহে স্থিতি সদাই—রামচন্দ্রের দেহ-স্মৃতি নাই
স্ত্রীকে নিজ-সঙ্গী জেনে—সারা-নিশি কাটালেন
দুই যেন একজাতি—এই-ভাবে কাটালেন নিশি
দেহ-স্মৃতি নাহি যার—সংসার—কূপ-কাঁহা তার
শ্রীআচার্য্যের কথা প্রসঙ্গে—নিশি পরভাত হলে
শ্রীগুরু-সেবাকাল হয়েছে দেখে—প্রাণ কেঁদে উঠল
নিজ-প্রভুর সেবার তরে—প্রাণ কেঁদে উঠল
নিজ-প্রভুর সেবার তরে—চলিলেন ত্বরা করে
শ্রীযাজিগ্রাম-পানে—চলিলেন ত্বরা করে
প্রভু আজ্ঞা করেছিলেন
স্ত্রী-সনে সম্ভাষণের—প্রভু আজ্ঞা করেছিলেন
শ্রীগুরু-আজ্ঞা পালন করতে—আবার,–ফিরে গেলেন রামচন্দ্র
বাহু পসারি’ কৈলেন আলিঙ্গন
আপনার পত্নীকে—বাহু পসারি’ কৈলেন আলিঙ্গন
রামচন্দ্রের,–পুরুষ-অভিমান নাই
করিলেন আলিঙ্গন
প্রভু-আজ্ঞা সঙরি’—করিলেন আলিঙ্গন
সখী সখীরে কোলে নেয়—তেমনি করে আলিঙ্গন
আলিঙ্গনের আজ্ঞা-পালন লাগি’—রামচন্দ্রের নাই বাহ্য-স্মৃতি
কারে আলিঙ্গন করলেন—রামচন্দ্র জানলেন না
পুরুষ কিম্বা প্রকৃতি ঐ—রামচন্দ্র জানলেন না
লাগিল রামচন্দ্র-ললাটে
প্রিয়ার সিঁথির-সিন্দুর—লাগিল রামচন্দ্র-ললাটে
ব্যাকুল হয়ে ছুটে যায়
প্রভুর,–সেবার সময় বয়ে যায়—ব্যাকুল হয়ে ছুটে যায়
প্রভুর শ্রীঅঙ্গনে—উপনীত হলেন যাজিগ্রামে
করছিলেন আঙ্গিনা মার্জ্জন
সম্মার্জ্জনী করে ধরে—করেছিলেন আঙ্গিনা মার্জ্জন
রামচন্দ্র কাছে দাঁড়ায়ে—আকস্মাৎ দেখতে পেলেন
সিন্দুর-বিন্দু দেখে তার মাথে—রামচন্দ্রে পানে চেয়ে
যেন অতি রোষভরে—কহিলেন দৃঢ় করে
এখন বা কোথা যাও—কোথা গিয়েছিলে তুমি
পত্নী-সম্ভাষণে গিয়েছিলাম
প্রভুর আজ্ঞাক্রমে আমি—পত্নী-সম্ভাষণে গিয়েছিলেন
য
প্রভুর সেবা করবে বলে—এই এখনি ফিরে এলাম
ছি ছি রামচন্দ্র
এ কি তোমার ব্যবহার—ছি ছি রামচন্দ্র
ধিক্ ধিক্ তোমায়—এসেছ প্রভুর সেবায়
এই অপবিত্র-দেহে—প্রভু-সেবা করবে কেমনে
অপরূপ লীলা রে
প্রাণগৌর-গৌরগণের—অপরূপ লীলা রে
মহিমা প্রকাশের লাগি’—অপরূপ লীলা রে
সেই সম্মার্জ্জনী লয়ে
আঙ্গিনা ঝাড়ু দেওয়া—সেই সম্মার্জ্জনী লয়ে
রামচন্দ্রের পৃষ্ঠদেশে—আঘাত করলেন রোষভরে
এতক্ষণ রামচন্দ্রে—দেহ-স্মৃতি নাহি ছিল
হায় হায় কি করেছি
মানি,–নিজ-কৃত-অপরাধ
রামচন্দ্র-কবিরাজ—মানি,–নিজ-কৃত-অপরাধ
অবগাহন করি—গেলেন প্রভুর সেবা-কাজে
ঠাকুর-নরোত্তমের সেবা
আচার্য্যের অঙ্গে তৈল-মর্দ্দন—ঠাকুর-নরোত্তমের সেবা
বড়-সুখে নরোত্তম-করিতেছেন তৈল-মর্দ্দন
আচার্য্যের পৃষ্ঠদেশে—অকস্মাৎ দেখতে পেলেন
সম্মার্জ্জনীয় আঘাত—অকস্মাৎ দেখতে পেলেন
হায় হায় কি করেছি
কার অঙ্গে আঘাত করেছি
কারণ না জেনে আমি—কার অঙ্গে আঘাত করেছি
দোষী মনে করে আমি—কার অঙ্গে আঘাত করেছি
ও-যে,–আচার্য্যের অঙ্গীকৃত-দেহ—ও ত’ নয় রামচন্দ্রের দেহ
তার অঙ্গ-আঘাত—নৈলে কেন পড়ল
শ্রীঅচার্য্যের অঙ্গে—নৈলে কেন পড়ল
হায় হায় কি করেছি
আচার্য্যের অঙ্গে আঘাত করেছি—হায় হায় কি করেছি
অপরাধ ক্ষালন লাগি’
মনে করলেন সঙ্কল্প
উপযুক্ত-দণ্ড দিব
এই-অপরাধী-হস্তে—উপযুক্ত-দণ্ড দিব
রামচন্দ্র-অঙ্গে আঘাত-করা-হস্ত—আর আমি রাখব না
নরোত্তম করলেন মনে
হাত পোড়াব আগুনে—নরোত্তম করলেন মনে
কেমন করে বাধা দিবেন
নরোত্তমের সান্ত্বনা লাগি’
জানাইছেন তার অধিক অধিকার
আপন-মনে বলছেন
তার অধিকার জানায়ে—আপন-মনে বলছেন
দিনে মারে ঝাঁটার বাড়ী রাত্রে পোড়ায় হাত।।’’
রামচন্দ্রের অঙ্গে আঘাত করাতে—আমার অঙ্গে লেগেছে
তুমি,–হার পোড়াব এই মনে করাতে—আর আমার হাত পুড়েছে
ও ত’ করেছি আমি আত্মসাৎ–ও ত’ নয় তোমার হাত
দুইজন আমার দুই-হাত
তুমি রামচন্দ্র-সাথ—দুইজন আমার দুই-হাত
তেমনি তুমি আর রামচন্দ্র—এ-দেহের যেমন দুই-হস্ত
ইঙ্গিতে অধিকার জানায়ে—নরোত্তমে শান্ত কৈলেন
তোমরা আমার,–দুই-বাহু দুইজন
ও রামচন্দ্র নরোত্তম –তোমরা আমার,–দুই-বাহু দুইজন
বালাই লয়ে মরে যাই
শ্রীগুরু-পদে আত্ম-সমর্পণের—আদর্শ শ্রীরামচন্দ্র
শ্রীগুরুপদে বিকাইতে—যদি কারো সাধ থাকে
রামচন্দ্রে ধর বুকে—যদি কারো সাধ থাকে
যদি,–গুরু-পদে বিকাতে চাও—রামচন্দ্রের শরণ লও
শ্রীগুরু-পদে বিকান-স্বভাব—পাওয়া যায় কি সাধন-ফলে
সাধনে আনুগত্যের কক্ষায় যেতে—আমার ত’ আশা হয় না
পাওয়া যায় কেবল কৃপা বলে—আমার প্রাণে এই ত’ জাগে
শ্রীগুরু-আনুগত্য-স্বভাব—তবে অনায়াসে মিলে
বিকালে তার পদতলে—তবে অনায়াসে মিলে
যে বিকায়েছে শ্রীগুরু-পদে—তারে অনায়াসে মিলে
শ্রীগুরু-পদে রতি—সর্ব্বোত্তমা-গতি মিলে
রামচন্দ্রের কৃপা হলে—সর্ব্বোত্তমা-গতি মিলে
রামচন্দ্রের গুণ-কীর্ত্তন—শ্রীগুরু-পদে বিকাবার এই ত’ সাধন
প্রাণের ঠাকুর রামচন্দ্রের—কি বলব গুণের কথা
বাহ্যজ্ঞান নাহি ছিল তাঁহার।’’
তিনদিন শ্রীআচার্য্য—লীলা-স্মরণে আছেন আবিষ্ট
‘‘শ্রীগৌরাঙ্গপ্রিয়া-আদি,’’
চিন্তান্বিত মন সবাকার।।’’
আচার্য্য,–কৈলা বুঝি লীলা-সঙ্গোপনে—সবাই,–মনে মনে ভয় গণে
‘‘রামচন্দ্র-হেনকালে,’’
শুনি’ তার সব বিবরণ।’’
শ্রীগুরু-আনুগত-বলে—প্রাণে প্রাণে হইল স্ফুরণ
প্রভু আছেন লীলায় মগন—প্রাণে প্রাণে হইল স্ফুরণ
প্রভু এখনই প্রকৃতিস্থ হবেন—সবারে সান্ত্বনা দিলেন
চিন্তা ছাড় মাতা তুমি
প্রভু চৈতন্য হবে এখনি—চিন্তা ছাড় মাতা তুমি
তোমার চরণধূলি-বলে ঠাকুরাণী—এখনই সমাধান করব আমি
যাই গিয়ে দেখে আসি
কোন-সুখে ভাসছেন গুরুমণি—যাই গিয়ে দেখে আসি
‘‘করি’ দণ্ড-পরণামে,’’
গৌরাঙ্গপ্রিয়া-দেবী—আচার্য্যঘরণী-পদে
তাঁর চরণে শরণাগত হয়ে—জয় প্রভু শ্রীনিবাস বলে
শ্রীআচার্য্যের আনুগত্যে—বসিলেন লীলা-ধ্যানে
নিজ,–সিদ্ধস্বরূপ সঙরিয়ে—বসিলেন লীলা-ধ্যানে
আনুগত্যের কত বল—অনুভব কর ভাই রে
মিলিলেন শ্রীযমুনা-নীরে।
দেখি’ সখী-আজ্ঞা-মতে, খুঁজিছেন একচিতে,
শ্রীমতীর নাসার বেশরে।।’’
রাসলীলা-অন্তে
যমুনায় জলকেলি করতে করতে
স্খলিত হয়েছে যমুনার নীরে
প্রাণ-কিশোরীর নাসার বেশর—স্খলিত হয়েছে যমুনার নীরে
আপনার নাসার বেশর—হারায়েছেন প্রাণ-কিশোরী
সবাই গেলেন নিজ-গৃহে
প্রাতে আসি’ সখী-সবে
প্রাণ-কিশোরীর কাছে—প্রাতে আসি’ সখী-সবে
বড়ই ব্যস্ত হলেন সবাই
নিজ,–সিদ্ধ-স্বরূপে শ্রীআচার্য্য—সেইকালে হয়েছেন লীলায় প্রবিষ্ট
সেই-লীলায় প্রবেশ করে—রামচন্দ্র দেখলেন
শ্রীগুরু-শ্রীআচার্য্য—সেই-অনুসন্ধানে মত্ত
সখীর আদেশ-মত—সেই-অনুসন্ধানে মত্ত
কোন সন্ধান না পেয়ে—তাতেই আছেন বিভোর হয়ে
বেশর-সন্ধানে মত্ত সদাই—তাই আচার্য্যের বাহ্য নাই
বেশর-সন্ধানে শ্রীআচার্য্যের—এই-দশায় তিনদিন গেছে
খুঁজি তথা পদ্মপত্র-তলে।
পাইয়া বেশর-খানি, আনন্দেতে পুনি পুনি,
বক্ষে শিরে ধরে পরস্পরে।।’’
শ্রীগুরু-আনুগত্যের কত বল—অনুভব কর ভাই রে
রামচন্দ্র পদ্মপত্রতলে—পাইয়া সে-বেশরে
শ্রীগুরু-আনুগত্যের বলে—পাইলা সে-বেশরে
প্রাণ-কিশোরীর বেশর জানি’—আনন্দেতে ভেসে যায়
‘‘শ্রীগুণমঞ্জরী-করে,’’
শ্রীনিবাসাচার্য্যের প্রভু—শ্রীগোপাল ভট্ট-গোসাঞি
কিশোরীর করে কিশোরীর বেশর—অনায়াসে দিতে পারতেন
দিলেন শ্রীগুণমঞ্জরী-করে
শ্রীগুরু-আনুগত্য-ভরে—দিলেন শ্রীগুণমঞ্জরী-করে
উপাসনার এই ত’ রীতি—দেখ আনুগত্যের গতি
কোটি-গুণ ভোগ করবে বলে—আনুগত্যে দান কৈলা
‘কোটি-গুণ ভোগ করবে বলে’—
কিশোরীর মনের আনন্দ—কোটি-গুণ ভোগ করবে বলে
তারা কিন্তু চায় না
কিশোরীর সুখ-ভোগ—তারা কিন্তু চায় না
আনুগত্য যেচে দেয়—তারা কিন্তু চায় না
সবে অতি আনন্দ লভিলা।।’’
পর পর আনন্দের বিকাশ
শ্রীমতীর সুখ যত
হয়,–শ্রীরূপেতে পর্য্যবসিত—শ্রীমতীর সুখ যত
শ্রীরূপ আবার সে আনন্দ—কোটি-গুণে ভোগ করে
শ্রীমতীর সন্তোষ দেখে—কোটি-গুণে ভোগ করে
পরস্পর মুখ হেরে—এইরূপ,–আনন্দের হয় ক্রম বিকাশ
হয়,–শ্রীগুণমঞ্জরীতে পর্য্যবসিত—শ্রীরূপের-ভোগ হয়ে কোটি-গুণিত
গুণমঞ্জরীর হাসি-মুখ হেরে—আবার,–শ্রীআচার্য্য-প্রভু ভোগ করে
গুণমঞ্জরী সুখ কোটিগুণে—আবার,–শ্রীআচার্য্য-প্রভু ভোগ করে
হয়,—শ্রীরামচন্দ্রে পর্য্যবসিত
তাই লিখেছেন শ্রীকবিরাজ
সখীগণ পল্লব-পুষ্প-পাতা
শ্রীরাধাকৃষ্ণ-লীলা-বৃক্ষে—সখীগণ পল্লব-পুষ্প-পাতা
রাধাকৃষ্ণ-বিলাস যত সুখ—তার,–পল্লববাদ্যে কোটি-সুখ-ভোগ
‘‘শ্রীরাধিকা হৃষ্টমনে,’’
তুষিলেন নব-সখীদ্বয়ে।
তাঁহার অধরামৃত, পাই’ দোঁহে ফুল্লচিত,
রাধে জয়ধ্বনি উচ্চারয়ে।।’’
না চাইতে পূরালে সাধে—জয় প্রেমময় রাধে
করে রেখো নিজ-কিঙ্করী—জয় রাধে কিশোরী
বাহ্য হৈল হেন-মতে, দেখিল তাম্বুল হাতে,
সৌরভেতে ভরিল আলয়।’’
ব্রজপরিকর-গৌরপরিকর-দেহে—কেউ,–ভেদ মনে করো না ভাই
শ্রীরামচন্দ্রের চরিতে—তার প্রমাণ দেখ ভাই
গৌরপরিকর-ব্রজপরিকর-দেহ—যদি,–দুই-দেহ ভিন্ন হয়
শ্রীমতী চর্ব্বিত-তাম্বুল—কেমন করে এল বল
রামচন্দ্র-কবিরাজের হাতে—কেমন করে এল বল
যদি,–সেই-দেহ এই-দেহ না হয়—কেমন করে এল বল
লীলা-ভেদে ভিন্ন দেখায়—দুই-স্বরূপ ত’ এক হয়
কেউ ভেবো না অন্যমত—দুই-স্বরূপ নিত্যসিদ্ধ
নিত্যসিদ্ধ-স্বরূপ বটে—গৌর-গোবিন্দ-পরিকরের
গৌর-পরিকরের স্বরূপ—অসিদ্ধ মনে করো না
শ্রীগুরুর চরণ হৃদে ধরি’—বলতে গেলে বলতে পারি
গৌর-পরিকরগণের—দুই-লীলায় সমান অধিকার
প্রতি-গৌরকিঙ্করে—দুই-লীলা ভোগ করে
নদীয়া-লীলা ব্রজ-লীলা—দুই-লীলা ভোগ করে
ব্রজ-পরিকরের গৌর-লীলা-ভোগে—কিন্তু যদি লোভ হয়
তবে গৌর-পরিকরের—আনুগত্য করতে হয়
আমার গৌর-পরিকর—দুই-লীলার অধিকারী
নদীয়া আর ব্রজপুরী—দুই-লীলার অধিকারী
দুই-লীলা ভোগ করতে পারে—যদি,–গৌর-পরিকর ইচ্ছা করে
শ্রীগুরু-আনুগত্যের—অপূর্ব্ব রহস্য ভাই
শ্রীগুরুচরণ হৃদে ধরি’—অনুভব কর ভাই রে
শ্রীগুরুচরণে যার রতি হয়—এ-দেহ সেই-দেহ হয়
এই-প্রাকৃত-রাজ্যে দেখ
আরশোলা কাঁচাপোকা হয়
কাঁচপোক ভাবতে ভাবতে—আরশোলা কাঁচপোকা হয়
সে-রাজ্যে কে না হবে
এ-দেহ সেই-শক্তি পায়
শ্রীগুরু-আনুগত্যের ফলে—এ-দেশ সেই-শক্তি পায়
প্রত্যক্ষ প্রমাণ দেখ ভাই—এ-দেহ সেই-শক্তি পায়
সবে রামচন্দ্র-গুণ গায়।।’’
শ্রীগুরু-নিষ্ঠার আদর্শ-বলে,–জয় কবিরাজ-রামচন্দ্র
শ্রীরামচন্দ্র কবিরাজ—দেখাইলা জগমাঝ
গৌর-গোবিন্দ-লীলা—যদি,–ভোগ করিতে সাধ কর
শ্রীগুরু-আনুগত্য কর—যদি,–ভোগ করতি সাধ কর
শ্রীগুরুচরণে রতি—সেই সে উত্তমা-গতি
শ্রীগুরুদেবের প্রসাদে—সর্ব্ব-আশা অনায়াসে পূরে
উচ্চৈঃস্বরে সকলেই বলে।
গুরুপদে বিকাইতে, মন-প্রাণ সমর্পিতে,
কেহ শুনিয়াছে কোন-কালে।।
যেই-সঙ্গ-সুখ-লাগি,’ নরোত্তম অনুরাগী,
সকাতরে করেন প্রার্থনা।।’’
ঠাকুর-শ্রীনরোত্তম—কিছুই ত’ চাইলেন না
লীলা-অবসানকালে—কিছুই ত’ চাইলেন না
গুরু গৌর গোবিন্দ-কিছুই ত’ চাইলেন না
এই করো শ্রীগুরুদেব
ব্যাকুল হয়ে বল্লেন—এই করো শ্রীগুরুদেব
তবে হয় নরোত্তম ধন্য।’’
গৌর গোবিন্দ দেখাও বলে—প্রার্থনা ত’ করলেন না
প্রার্থনার রহস্য—অনুভব কর ভাই
গুরু গৌর গোবিন্দ—সবাই,–বাঁধা পড়ে সে-আধারে
যে গুরুপদে বিকায়েছে—সবাই,–বাঁধা পড়ে সে-আধারে
গুরু গৌর গোবিন্দ অভিন্ন—সবাই,–বাঁধা পড়ে সে-আধারে
যে গুরু-বই আর নাহি জানে—তার হৃদে সদা জাগে
গৌর-গোবিন্দ-লীলা—তার হৃদে সদা জাগে
দুই,–লীলা-ভূমির দুই—স্বরূপ—তার হৃদে সদা জাগে
‘দুই,–লীলা-ভূমির দুই-স্বরূপ’—
গৌর আর গোবিন্দ—দুই,–লীলা-ভূমির দুই-স্বরূপ
কোন-ভাগ্যে তার সঙ্গ হলে
গুরু গৌর গোবিন্দ সকলই মিলে—কোন-ভাগ্যে তার সঙ্গ হলে
শ্রীগুরুনিষ্ঠ-ভক্তের সঙ্গ হলে—বাকী থাকে না কিছু পেতে
সর্ব্বোত্তমা প্রাপ্তি ভাই
ঠাকুর,–নরোত্তম-প্রার্থনাতে জেনো—সর্ব্বোত্তমা প্রাপ্তি ভাই
গৌরদাসের দাসের সঙ্গ—সর্ব্বোত্তমা প্রাপ্তি ভাই
সব-লীলা ভোগ হয় অনায়াসে—যদি,–গৌরদাসের সঙ্গে ঘটে
গুরুনিষ্ঠ-ভক্তের বিরহ—বিরহের মধ্যে সেই বড়
ঠাকুর-শ্রীনরোত্তম—তাই,–ব্যাকুল হয়ে কাঁদিলেন
শ্রীরামচন্দ্রের বিরহে—তাই,–ব্যাকুল হয়ে কাঁদিলেন
হিয়া মাঝে দিয়া দারুণ ব্যথা।
গুণের রামচন্দ্র ছিলা, সেই সঙ্গ ছাড়ি গেলা,
শুনিতে না পাই মুখের কথা।।
পুনঃ কি এমন হব, রামচন্দ্র সঙ্গ পাব,
এই জন্ম মিছা বহি গেল।
যদি প্রাণ দেহে থাক, রামচন্দ্র বলি’ ডাক,
তবে যদি যাও সেই ভাল।।
স্বরূপ রূপ সনাতন, রঘুনাথ সকরুণ,
ভট্টযুগ দয়া কর মোরে।
আচার্য্য শ্রীশ্রীনিবাস, রামচন্দ্র যাঁর দাস,
পুনঃ না কি মিলিব আমারে।।’’
সবে মিলে কৃপা কর
পরাণ-গৌরাঙ্গগণ—সবে মিলে কৃপা কর
যেন,–শ্রীনিবাসে পাই রামচন্দ্র-সহ—সবে মিলে কৃপা কর
বিষশরে কুরঙ্গিণী যেন।
আঁচলে রতন ছিল, কোন ছলে কে বা নিল,
নরোত্তমের হেন দশা কেন।’’
অধমে কি করিবে করুণা।।’’
রামচন্দ্র-কবিরাজ—এইবার আমায় দয়া কর
শ্রীগুরু-কৃপা প্রাপ্তি না হইল—সাধের জনম বিফলে গেল
সাধু সেজে দেশ-বিদেশে—লোক ভাঁড়ায়ে জনম গেল
শ্রীগুরুচরণে রতি না মিলিল—লোক ভাঁড়ায়ে জনম গেল
নিষ্ঠাকণা বিতর মোরে
শ্রীগুরুদেবের শ্রীমুখবাক্যে—নিষ্ঠাকণা বিতর মোরে
বিচার করে পড়লাম ফেরে—নিষ্ঠাকণা বিতর মোরে
অবিচারে শ্রীগুরুদেবের—যেন,–আজ্ঞা-পালন করতে পারি
শ্রীগুরুপদে বিকাইয়ে—যেন,–আজ্ঞা-পালন করতে পারি
আপন-স্বভাব সঞ্চার—রামচন্দ্র কৃপা কর
অবিচারে বিকাইবার—স্বভাব দাও হে
‘অবিচারে বিকাইবার’—
শ্রীগুরু-চরণে—অবিচারে বিকাইবার
তোমার ত’ নাই অভাব
কৃপা করে দাও স্বভাব—তোমার ত’ নাই অভাব
শ্রীগুরুপদে বিকাইতে শিখাও—কৃপাদিঠে একবার চাও
তোমার চরণ হৃদে ধরি’—যেন,—গুরু-আনুগত্য করি
প্রাণে প্রাণে ভোগ করাও
সব,–চাওয়া-পাওয়া শেষ হয়েছে
যে-দিনে,–গুরুরূপে হাত ধরেছে—সব,–চাওয়া-পাওয়া শেষ হয়েছে
শ্রীগুরুপদে বিকাইলে—চাইতে হয় না আপনি মিলে
গৌর-গোবিন্দ-লীাল-ভোগ—চাইতে হয় না আপনি মিলে
শ্রীগুরু-পদাশ্রয়-ফলে—বরং অধিক পাওয়া যায়
শ্রীগুরুলীলা ভোগ হয়—বরং অধিক পাওয়া যায়
শ্রীগুরু-পদাশ্রয়ে—সর্ব্বোত্তমা প্রাপ্তি হয়
শ্রীগুরুচরণে রতি—সর্ব্বোপরি উত্তমা-গতি
রামচন্দ্র কৃপা করি’—এই মোদের দাও মতি
শ্রীগুরুচরণে রতি—এই মোদের দাও মতি
পরাণ-গৌরাঙ্গগণ—সবে মিলে কোথা লুকালে
হা দাস গদাধর—সবে মিলে কোথা লুকালে
অতঃপর মহাজনী আক্ষেপ-কীর্ত্তন—
…………………………………………………………………………..
তবে যদি যাও সেই ভাল।।’’
শ্রীগুরু-কৃপাদত্ত-নামাবলী—কণ্ঠহার কর রে
তাদের কৃপা হলে পরে—কণ্ঠহার করতে পারবে
প্রাণভরে গাও রে—তাদের জয় দাও ভাই রে
জয় রামচন্দ্র শ্যামানন্দ—জয় শ্রীনিবাস নরোত্তম
যেন,–গান করে মরতে পারি
শ্রীগুরু-কৃপাদত্ত-নামাবলী—যেন,–গান করে মরতে পারি
শ্রীগুরু-সুখ বাঞ্ছা করি’—যেন,–গান করে মরতে পারি
ভাই ভাই একপ্রাণে—যেন,–প্রাণভরে গাইতে পারি
শ্রীগুরুচরণ হৃদে ধরি’—যেন,–প্রাণভরে গাইতে পারি
যেন,–নিশিদিশি থাকি মেতে
শ্রীগুরুচরণ হৃদে ধরে—যেন,–নিশিদিশি থাকি মেতে
কেবল,–তাঁর সুখ বাঞ্ছা করে—যেন,–নিশিদিশি থাকি মেতে
তাঁর,–মুখোদ্গীর্ণ-নাম গানে—যেন,–নিশিদিশি থাকি মেতে
‘‘শ্রীগুরু-প্রেমানন্দে নিতাই-গৌর-হরিবোল।।’’