শ্রীশ্রীশ্যামানন্দ প্রভুর সূচক-কীর্ত্তন

(জ্যৈষ্ঠ-কৃষ্ণা-প্রতিপদ)

‘‘শ্রীগুরু-প্রেমানন্দে নিতাই গৌর হরিবোল’’
‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।

—- ০ —-

‘‘ও-মোর পরাণ-বন্ধু, শ্যামানন্দ সুখসিন্ধু,’’

শ্যামানন্দ সুখসিন্ধু

শ্রীগুরু-আজ্ঞা-পালনের আদর্শ মূরতি—শ্যামানন্দ সুখসিন্ধু
শ্রীসীতানাথের প্রেম-অবতার—শ্যামানন্দ সুখসিন্ধু
শ্রীঅদ্বৈতের দ্বিতীয় প্রকাশ—শ্যামানন্দ সুখসিন্ধু

প্রকট শ্যামানন্দরূপে

অদ্বৈত অদ্বৈত আস্বাদিতে—প্রকট শ্যামানন্দরূপে

সেই ত’ গুণের শ্যামানন্দ

‘‘দণ্ডেশ্বর গ্রামে বাস সর্ব্বাংশে প্রবল।
মাতা শ্রীদুরিকা পিতা শ্রীকৃষ্ণ মণ্ডল।।
ধারেন্দা-বাহাদুরর-পুরেতে পূর্ব্বস্থিতি।
শিষ্টলোক কহে শ্যামানন্দ-জন্মতিথি।।
কোন মতে মণ্ডলের নাহি প্রতিবন্ধ।
পুত্র-কন্যা গত হৈলে হৈলে শ্যামনন্দ।।
জন্মিলেন শ্যামানন্দ অতি শুভক্ষণে।
যে দেখে বারেক তার মহানন্দ মনে।।’’

সবার মনে আনন্দ

দেখি’ বদন শ্যামানন্দ—সবার মনে আনন্দ

‘‘গ্রামবাসী স্ত্রীগণ কহয়ে বার বার।
এখন দুঃখীয়া নাম রহুক ইহার।।
মাতাপিতা দুঃখসহ পালন করিল।
এই হেতু দুঃখী নাম প্রথমে হইল।।
দিনে দিনে বাড়ে দেখি’ সবার উল্লাস।
পরম-অদ্ভুত চেষ্টা হইল প্রকাশ।।
কখন না যায় অন্য-বালকের মেলে।
ব্যকরণ-আদি-পাঠ হইল অল্পকালে।।
গৌরনিত্যানন্দাদ্বৈতগণের চরিত।
বৈষ্ণবের মুখে শুনে হইয়া সাবহিত।।’’

আর কিছু ভাল লাগে না

নিতাই-গৌর-সীতানাথের গুণ বিনা—আর কিছু ভাল লাগে না

‘‘নিরন্তর সেই গুণ করয়ে কীর্ত্তন।
নদীরপ্রবাহ প্রায় ঝরে দু’নয়ন।।’’

তিন—প্রভুর গুণ গায়

নিতাই গৌর সীতানাথ—তিন-প্রভুর গুণ গায়
স্বাভাবিক স্বভাবে—তিন-প্রভুর গুণ গায়
ভাসে দুটী-নয়ন-ধারায়—তিন-প্রভুর গুণ গায়

‘‘সদা রাধাকৃষ্ণ-লীলামৃত করে পান।
পিতামাতা-সেবায় অত্যন্ত সাবধান।।
পিতা-মাতা পুত্রে যোগ্য দেখিযা কহয়।
কৃষ্ণমন্ত্রে দীক্ষা লহ যথা মনে লয়।।’’

প্রাণ কেঁদে উঠল

দীক্ষা-গ্রহণের কথা শুনে—প্রাণ কেঁদে উঠল

দীক্ষা গ্রহণ করবে সেইখানে

যা আছে তার প্রাণে প্রাণে—দীক্ষা গ্রহণ করবে সেইখানে

‘‘সদাই বিহ্বল গোরাগুণে।’’

সদাই প্রাণ কাঁদছে

গৌরাঙ্গ-বিহার-কথা শুনি’—সদাই প্রাণ কাঁদছে
কিছুই দেখতে পেলাম না বলে—সদাই প্রাণ কাঁদছে
গৌরাঙ্গ-বিহার-কথা শুনি’—সদাই প্রাণ কাঁদছে
কিছুই দেখতে পেলাম না বলে—সদাই প্রাণ কাঁদছে

নিশিদিশি গৌর-গুণে ঝুরে

আর ত’ মন থাকে না রে—নিশিদিশি গৌর-গুণে ঝুরে

সে,–আর কি ঘরে রইতে পারে

যার,–প্রাণ কেঁদেছে গৌর-গুণে—সে,–আর কি ঘরে রইতে পারে

‘‘সদাই বিহ্বল গোরা-গুণে।’’


তাই,–‘‘গৃহ পরিহরি দূরে,’’

পূর্ব্বে ইঙ্গিত পেয়েছেন

স্বপ্নাদেশে প্রাণ-গৌরহরির—পূর্ব্বে ইঙ্গিত পেয়েছেন

তোমার প্রভু হৃদয়চৈতন্য

গৌরীদাস-পণ্ডিতের শিষ্য—তোমার প্রভু হৃদয়চৈতন্য

যাও ত্বরায় অম্বিকাপুরে

হৃদয়চৈতন্য-পদে বিকাও গিয়ে—যাও ত্বরায় অম্বিকাপুরে

প্রাণগৌর-কৃপা-ইঙ্গিত পেয়ে
পাগল হয়ে ছুটলেন

‘‘গৃহ পরিহরি দূরে, আনন্দে অম্বিকাপুরে,
আইলেন প্রভুর ভবনে।।’’

ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে

অম্বিকার পথে যেতে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে

অঙ্গিকার করবেন কি

প্রভু হৃদয়চৈতন্য—অঙ্গীকার করবেন কি

মনে মনে গণে রে
কতক্ষণে দেখতে পাব

শ্রীগুরুদেবের চরণ—কতক্ষণে দেখতে পাব
প্রভু হৃদয়চৈতন্য—কতক্ষণে দেখতে পাব

জেনেছেন প্রাণে প্রাণে

ঠাকুর হৃদয়চৈতন্য—জেনেছেন প্রাণে প্রাণে
শ্যামানন্দ আসিছে এখানে—জেনেছেন প্রাণে প্রাণে

তাই,–পথ-পানে চেয়ে আছে

কতক্ষণে আসবে শ্যামানন্দ বলে—তাই,–পথ-পানে চেয়ে আছে
‘‘হৃদয়চৈতন্য দেখি,’’

তাই নাম হৃদয়চৈতন্য

তাঁর হৃদে বিহরে চৈতন্য—তাই নাম হৃদয়চৈতন্য

হৃদয়চৈতন্যে দেখি, অঝোরে ঝরয়ে আঁখি,’’

যেন,–কতকালের পরিচয়

বহুদিন দেখা হয় না—কিন্তু যেন,–কতকালের পরিচয়

আঝোরে নয়ন ঝরে

নিত্য সম্বন্ধ তার তাই—অঝোরে নয়ন ঝরে
স্বাভাবিক-অনুরাগে—অঝোরে নয়ন ঝরে
এই ত’ আমার প্রভু বলে—অঝোরে নয়ন ঝরে
‘এই ত’ আমার প্রভু বলে’—
সর্ব্বাভীষ্টদাতা—এই ত’ আমার প্রভু বলে

অঝোরে নয়ন ঝরে

‘‘হৃদয়চৈতন্যে দেখি,’ অঝোরে ঝরয়ে আঁখি,
ভূমিতে পড়য়ে লোটাইয়া।’’

তোমার,–ক্রীতদাস এসেছে বলে

তোমার কৃপা-আকর্ষণ-বলে—তোমার,–ক্রীতদাস এসেছে বলে

টেনে এনেছ নিজ-বলে

সংসার-কূপ-হতে তুলে—টেনে এনেছ নিজ-বলে

দেখ প্রভু নয়ন মেলে

চিরদাস পড়ে চরণতলে—দেখ প্রভু নয়ন মেলে
‘‘শিরে ধরি’ সে-চরণ,’’

তাহার সর্ব্বস্বধন

শ্রীগুরু–হৃদয়চৈতন্য–চরণ–তাহার সর্ব্বস্বধন

“শিরে ধরি’ সে–চরণ, করি আত্ম-সমর্পণ,’’

প্রাণে প্রাণে আগেই হয়েছিল

শ্রীগুরুপদে-আত্ম-সমর্পণ—প্রাণে প্রাণে আগেই হয়েছিল

এখন একান্তেতে বিকাইল
বলে,–অঙ্গীকার কর নিজগুণে

যদি,–টেনে এনেছ নিজ-কৃপা-বলে—বলে,–অঙ্গীকার কর নিজগুণে

আর আমার কেউ নাই হে

ঐ-চরণে শরণ নিলাম—আর আমার কেউ নাই হে

‘‘এক-ভিতে রহে দাঁড়াইয়া।।’’

হৃদয়চৈতন্য-পানে চাইয়া

অঝোরে ঝুরিয়া—হৃদয়চৈতন্য-পানে চাইয়া

‘‘এক-ভিতে রহে দাঁড়াইয়া।’’

ভক্তির স্বভাব-দৈন্যে

কত অপরাধী যেন—ভক্তির স্বভাব-দৈন্যে

‘‘দেখি’ শ্যামানন্দ-রীত, ঠাকুর করিয়া প্রীত,’’

এস এস আমার বাপ বলে

বাহু পসারি’ কৈল কোলে—এস এস আমার বাপ বলে

‘‘নিকটে রাখিয়া শিষ্য কৈল।’’

এ ত,–নূতন শিষ্য করা নয়

শ্যামানন্দ তাঁর নিত্যদাস হয়—এ ত,–নূতন শিষ্য করা নয়

‘‘করি অনুগ্রহ অতি, শিখাইয়া ভক্তি-রীতি,
নিতাই-চৈতন্যে সমর্পিল।।’’

প্রাণে প্রাণে অঙ্গীকার কর বলে
দোঁহে প্রভু কর অঙ্গীকার

এ যে তোমাদের নিত্যকিঙ্কর—দোঁহে প্রভু কর অঙ্গীকার

‘‘নিতাই-চৈতন্য সমর্পিল।।’’
‘‘শ্রীহৃদয়চৈতন্যের দায় উপজিল।
দুঃখী নাম পূর্ব্বে কৃষ্ণদাস নাম থুইল।।
দুঃখীকৃষ্ণদাস নাম হইল বিদিত।
নিজ-ইষ্ট-সেবায় হইল নিয়োজিত।।’’

কি বলব সে সেবার কথা

ঠাকুর-শ্রীশ্যামানন্দের—কি বলব সে সেবার কথা

আদর্শ শ্রীশ্যামনন্দ

শ্রীগুরু-আজ্ঞা-পালনের—আদর্শ শ্রীশ্যামানন্দ

কি বলব সে নিষ্ঠার কথা

সঙরিলে প্রাণ কেঁদে উঠে—কি বলব সে নিষ্ঠার কথা

শ্রীগুরু-আজ্ঞা-পালনে যথাবিধি

কি বলব শ্যামানন্দ-রীতি—শ্রীগুরু-আজ্ঞা-পালনে যথাবিধি

আদেশিলেন হৃদয়চৈতন্য

প্রাণপ্রিয়-শ্যামানন্দে—আদেশিলেন হৃদয়চৈতন্য
‘ফুলবাটীতে জল দিতে’—
প্রভুনিতাই—প্রাণগৌরাঙ্গের—ফুলবাটীতে জল দিতে

আদেশিলেন হৃদয়চৈতন্য
এই সেবা দিলেন তারে

পুষ্পবাটীতে জল সেচন—এই সেবা দিলেন তারে

শ্রীগুরু-আজ্ঞা করি’ শিরোধার্য্য
জল সেচন করে শ্যামানন্দ

মাথায় লয়ে মৃৎকুম্ভ—জল সেচন করে শ্যামানন্দ
আর,–নাই তার কোন লক্ষ্য—জল সেচন করে শ্যামানন্দ

অপূর্ব্ব সে আজ্ঞা-পালন

আর কিছুতেই নাই মন—অপূর্ব্ব সে আজ্ঞা-পালন

যায় শ্যামানন্দ গঙ্গাতীরে

ভাসি’ দুটী-নয়ন-নীরে—যায় শ্যামানন্দ গঙ্গাতীরে
হা নিতাই গৌরাঙ্গ বলে—যায় শ্যামানন্দ গঙ্গাতীরে

নয়ন-জলে ভাসে শ্যামানন্দ

মস্তকে তার গঙ্গা-কুম্ভ—নয়ন-জলে ভাসে শ্যামানন্দ
মুখে হা প্রভু হৃদয়চৈতন্য—নয়ন-জলে ভাসে শ্যামানন্দ

আনিয়া সে গঙ্গাবারি

মাথায় মৃৎকুম্ভ করি’—আনিয়া সে গঙ্গাবারি

নিরন্তর করে সেচন

নিতাই-গৌরের ফুল-বাটীতে—নিরন্তর করে সেচন

আজ্ঞা-পালনে উনমত

দেহ-স্মৃতি নাই শ্যামানন্দের-আজ্ঞা-পালনে উনমত

আহার-নিদ্রার আবেশ নাই

পান-ভোজনের চেষ্টা নাই—আহার-নিদ্রার আবেশ নাই
জল সেচন করে সদাই—আহার-নিদ্রার আবেশ নাই

জল বহন করতে করতে

মাথায় মৃৎকুম্ভ লয়ে—জল বহন করতে করতে

মাথায় তার ঘা হল
তাতে হল পোকার জন্ম

কুম্ভ-জলে পচে পচে–তাতে হল পোকার জন্ম

দেহ স্মৃতি নাই শ্যামানন্দের
শ্রীগুরু–আজ্ঞা–পালনে রত

জল–সেচনে আবিষ্ট—শ্রীগুরু-আজ্ঞা-পালনে রত

দেখিলেন হৃদয়চৈতন্য

শ্যামানন্দের অপূর্ব্ব ব্যবহার-দেখিলেন হৃদয়চৈতন্য

মাথা বেয়ে পড়েছে পোকা
আর কি প্রভ রইতে পারে
কৃপাসিদ্ধ করলেন তারে

শ্যামানন্দের সেবা-নিষ্ঠা দেখে—কৃপাসিদ্ধ করলেন তারে

মনে মনে গণিলেন
এ ত’ যোগ্য দেহ বটে

গোস্বামীগণের আজ্ঞা-পালনের –এ ত’ যোগ্য দেহ বটে

এ শুদ্ধ-আধার লয়ে
গেলে মধুর-বৃন্দাবনে

গোস্বামীগণের চরণে–গেলে মধুর–বৃন্দাবনে

অভিলষিত ফল পাবে
এ ত যোগ্য আধার বটে

গোস্বামীগণের কৃপা পাবার—এ ত’ যোগ্য আধার বটে
ভক্তি যাজন করবার—এ ত’ যোগ্য আধার বটে

পাঠাইব ব্রজবনে

অচিরে দুঃখী-কৃষ্ণদাসে—পাঠাইব ব্রজবনে
গোস্বামীগণের চরণে–পাঠাইব ব্রজবনে

শুধু কি মুখের কথায় মিলে

শ্রীগৌরাঙ্গগণের কৃপা—শুধু কি মুখের কথায় মিলে
এমন,–গুরু-আজ্ঞা-পালন না করিলে—শুধু কি মুখের কথায় মিলে

তাই,–পাঠাইলেন বৃন্দবনে

হৃদয়চৈতন্য কৃষ্ণদাসে—তাই,–পাঠাইলেন বৃন্দবনে
তার,–গুরু-আজ্ঞা-পালন-গুণে—তাই,–পাঠাইলেন বৃন্দবনে
তার,–গোস্বামীগণের সেবাযোগ্য-দেহ জেনে—তাই,–পাঠাইলেন বৃন্দবনে

‘‘কতেক দিবস পরে, পাঠাইতে ব্রজপুরে,’’

ত্বরায় যাও ব্রজবনে

হৃদয়চৈতন্য বলেন মধুর-স্বরে—ত্বরায় যাও ব্রজবনে
ও বাপ দুঃখী-কৃষ্ণদাস—ত্বরায় যাও ব্রজবনে
মিল গোস্বামীগণের সনে—ত্বরায় যাও ব্রজবনে

গোস্বামীগণের—কৃপালাভ কর গিয়ে

যাও শ্যামানন্দ ব্রজপুরে—গোস্বামীগণের,–কৃপালাভ কর গিয়ে

কর গিয়া আস্বাদন

গোস্বামীগণের গ্রন্থগণ—কর গিয়া আস্বাদন

ভক্তি-রীতি জানি’ কর ভজন

কর গ্রন্থ অধ্যয়ন—ভক্তি-রীতি জানি’ কর ভজন

আশ্রয় লও গিয়ে

শ্রীজীবগোস্বামীর চরণে—আশ্রয় লও গিয়ে

তার,–আশ্রয় নিয়ে থাক সদা

মিলিবে তোমার মনঃসাধা—তার,–আশ্রয় নিয়ে থাক সদা

‘‘শ্যামানন্দ ব্যাকুল হইল।’’
ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে

ব্রজে যাবার আজ্ঞা শুনে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
হৃদয়চৈতন্য-চরণে পড়ে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
‘অনিমিখে বন-পানে চেয়ে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
‘অনিমিখে বদন-পানে চেয়ে’—
তাই প্রভু-হৃদয়চৈতন্যের—অনিমিখে বদন-পানে চেয়ে

ব্যাকুল হায়ে কাঁদে রে
কেমন করে থাকব প্রভু

চরণ-সেবায় বঞ্চিত হয়ে—কেমন করে থাকব প্রভু

কেমন বঁচব প্রাণে

ও চাঁদ-বদন না হেরে—কেমনে বাঁচব প্রাণে

যাব তোমার চরণ ছাড়ি’

তোমার আজ্ঞা শিরে ধরি’—যাব তোমার চরণ ছাড়ি’
বল আবার,–কতদিনে হেরব বদন-মাধুরী—যাব তোমার চরণ ছাড়ি’

কতদিনে দেখতে পাব

ঐ প্রেমময় রসের বদন—কতদিনে দেখতে পাব
ঐ—অভয়-চরণ দুখানি—কতদিনে দেখতে পাব

আর কি দেখতে পাব হে

কাতরে শ্যামানন্দ বলে—আর কি দেখতে পাব হে
হা প্রভু হৃদয়চৈতন্য—আর কি দেখতে পাব হে

আনন্দ আর ধরে না

ঠাকুর-হৃদয়চৈতন্যের—আনন্দ আর ধরে না
কৃপা পাবার আধার জেনে—আনন্দ আর ধরে না

বলেন,–যাও বাপু বৃন্দাবনে

কৃপা পাবে এই নিষ্ঠা-মনে—বলেন,–যাও বাপু বৃন্দাবনে
‘‘প্রভু নিতাই চৈতন্য,’’

বলে দুঃখী প্রাণে প্রাণে

চেয়ে দোঁহার বদন-পানে—বলে দুঃখী প্রাণে প্রাণে

চলিলাম বটে বৃন্দাবনে

শ্রীগুর-আজ্ঞা করিতে পালনে—চলিলাম বটে বৃন্দাবনে

এই কৃপা কর দুইজন

যেন,–হৃদে থাকে শ্রীগুর-চরণ—এই কৃপা কর দুইজন

সদা যেন হৃদে জাগে

প্রভু-হৃদয়চৈতন্য-চরণ—সদা যেন হৃদে জাগে
সর্ব্বস্ব শ্রীগুরু-চরণে—সদা যেন হৃদে জাগে

যেন করতে পারি আজ্ঞা-পালন

হৃদে ধরি’ শ্রীগুরু-চরণ—যেন করতে পারি আজ্ঞা-পালন
আমার নাই কিছু অন্য সাধন—যেন করতে পারি আজ্ঞা-পালন

‘‘প্রভু নিতাই চৈতন্য, শ্যামানন্দে কৈলা ধন্য,
যাত্রাকালে আজ্ঞামালা দিল।।’’

তাঁদের আজ্ঞা-মালা লয়ে
শ্রীগুরু-চরণ হৃদে ধরে

‘‘শ্যামানন্দ পথে চলে,

যায় যায় ফিরে চায়

অম্বিকাপুর হতে—যায় যায় ফিরে চায়
হৃদয়চৈতন্য-বদন-পানে—যায় যায় ফিরে চায়

পদ,–আগে ফেলতে পিছে পড়ে
শ্যামানন্দ,–ভাসে দুটি-নয়ন-জলে

শ্রীগুরুদেবের-সঙ্গ হারা হলাম বলে—শ্যামানন্দ,–ভাসে দুটী-নয়ন-জলে
কতদিনে দেখতে পাব বলে—শ্যামানন্দ,–ভাসে দুটী-নয়ন-জলে

আজ,–শ্যামানন্দ ব্রজে চলে

শ্রীগুরু-আজ্ঞা-পালন তরে—আজ,–শ্যামানন্দ ব্রজে চলে

‘‘শ্যামানন্দ পথে চলে, ভাসয়ে আঁখির জলে,
সোঙারিয়া প্রভুর গুণগণ।’’

ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে

পথে যেতে শ্যামানন্দ—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
শ্রীগুরু,–হৃদয়চৈতন্যের গুম সঙরিয়ে’—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে

শ্যামানন্দের দুনয়নে বহে বারি

শ্রীগুরুদেবের কৃপা সঙরি’—শ্যামানন্দের দু’নয়নে বহে বারি

বলে,–এ কি কৃপা কৈলে মোরে

পাঠাইলে ব্রজপুরে—বলে,–এ কি কৃপা কৈলে মোরে

পাঠাইলেন বৃন্দাবনে

শ্রীগোস্বামীগণের চরণে—পাঠাইলেন বৃন্দাবনে

কি অহৈতুকী-কৃপা তোমার

আমি কি যোগ্য ব্রজে যাবার—কি অহৈতুকী-কৃপা তোমার

‘‘একাকী কতেকদিনে, প্রবেশিলা বৃন্দাবনে,
বহুতীর্থ করিলা ভ্রমণ।।’’


‘‘নবদ্বীপ-আদি-স্থান করিলা দর্শন।
সর্ব্বত্র মাগিল প্রেমভক্তি-মহাধন।।
শ্রীগৌড়মণ্ডল বলি’ করয়ে ফুৎকার।
মুখ বুক বাহিয়া পড়য়ে অশ্রুধার।।’’

শ্যামনন্দ ব্যাকুল হয়ে কাঁদে
আর কি দেখা দিবে মোরে

হা গৌড়মণ্ডল-ভূমি—আর কি দেখা দিবে মোরে

‘‘নিত্যানন্দাদ্বৈতচৈতন্যের পরিকর।
লইতে সে সব নাম কাঁদে নিরন্তর।।’’

ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
দেখতে ত’ দিলে না

হা পরাণ-গৌরাঙ্গগণ—দেখতে ত’ দিলে না
পরাণ-গৌরাঙ্গ-বিহার—দেখতে ত’ দিলে না

বিহার দেখতে পেলাম না

এই ত’ সেই বিহার-ভূমে—বিহার দেখতে পেলাম না

কাতরে প্রার্থনা করে
এই,–কৃপা কর গৌরাঙ্গগণ

যেন,–আমার মনঃসাধ হয় পূরণ—এই,–কৃপা কর গৌরাঙ্গগণ

যেন,–গুরু-আদেশ পালন করতে পারি

কেবল তার সুখের লাগি’—যেন,–গুরু-আদেশ পালন করতে পারি

‘‘প্রভুকে প্রার্থনা পুনঃ করে বারে বারে।
শ্রীগৌড়মণ্ডলে কৃপা করুন আমারে।।’’

তাইতে প্রার্থনা করে

শ্রীগৌড়মণ্ডলের কৃপা—তাইতে প্রার্থনা করে

নিতাই-গৌরের চরণ মিলে

শ্রীগৌড়মণ্ডলের কৃপা হলে—নিতাই-গৌরের চরণ মিলে

‘‘একাকী কতেকদিনে, প্রবেশিলা বৃন্দাবনে,
বহুতীর্থ করিলা ভ্রমণ।।’’

কাঁদতে কাঁদতে যায় রে

শ্যামানন্দ ব্রজের পথে—কাঁদতে কাঁদতে যায় রে
ভাসি’ দুটী-নয়ন-ধারে—কাঁদতে কাঁদতে যায় রে

বলে,–দেখতে ত’ পাব না

প্রভু,–পাঠালেন বটে বৃন্দাবনে—বলে,–দেখতে ত’ পাব না
শ্রীরূপ-শ্রীসনাতনে—বলে,–দেখতে ত’ পাব না
তাঁরা,–করেছেন লীলা—সঙ্গোপন—বলে,–দেখতে ত’ পাব না

দিবেন কি মোরে পদাশ্রয়

শ্রীজীব-গোসাঞি মহাশয়—দিবেন কি মোরে পদাশ্রয়

‘‘দেখিয়া শ্রীবৃন্দারণ্য, আপনা মানয়ে ধন্য,
আনন্দে ধরিতে নারে থেহা।’’

বলে,–এ কি-কৃপা কৈলে হে

হা প্রভু হৃদয়চৈতন্য—বলে,–এ কি-কৃপা কৈলে হে

ব্রজপুরী দেখাইলে

আমা-হেন-অযোগ্য—ব্রজপুরী দেখাইলে

কোথায় আমায় আনিলে হে

তোমার কৃপার বালাই যাই—কোথায় আমায় আনিলে হে
আমি,–নরকের কৃমি ছিলাম—কোথায় আমায় আনিলে হে

আমি কি দর্শনের যোগ্য

রাধাগোবিন্দের বিহারভূমি—আমি কি দর্শনের যোগ্য

‘‘সিক্ত হৈয়া নেত্রজলে, লোটাইয়া ধরণীতলে,’’

বলে,–এ কি-কৃপা কৈলে মোরে

হা শ্রীগুরুদেব—বলে,–এ কি-কৃপা কৈলে মোরে
আমায়,–ব্রজরজ পরশ করালে—বলে,–এ কি-কৃপা কৈলে মোরে

‘‘বিপুল-পুলকময় দেহা।।
গিয়া গিরিগোবর্দ্ধনে, কৈলা যা আছিল মনে,
শ্রীরাধাকুণ্ডের তটে আসি’।’’

প্রাণ কেঁদে উঠল রে

এই ত’ সেই কুণ্ডতীর—প্রাণ কেঁদে উঠল রে
‘এই ত’ সেই কুণ্ডতীর’—
মধ্যাহ্ন-বিহার-ভূমি—এই ত’ সেই কুণ্ডতীর

প্রাণ কেঁদে উঠল রে
অমনি প্রাণে জাগিল
এই,–কুণ্ডতীরে করেন বাস

গৌরপ্রিয় রঘুনাথ-দাস—এই,–কুণ্ডতীরে করেন বাস

দাস-গোস্বামী কি কৃপা করবেন মোরে

আমার এমন কি ভাগ্য হবে—দাস-গোস্বামী কি কৃপা করবেন মোরে

এত বলি’ কাঁদে রে

শ্যামানন্দ রাধাকুণ্ড-তীরে—এত বলি’ কাঁদে রে

দেখিলেন দাস-ব্রজবাসী

দাস-গোস্বামীর অনুগত—দেখিলেন দাস-ব্রজবাসী
তাঁর প্রেমোন্মত্ততা—দেখিলেন দাস-ব্রজবাসী

প্রাণে প্রাণে গণিলেন
এ,–কে এল গৌর-প্রেমের পাগল
নিশ্চয় গৌর-পরিকর হবে

নৈলে এ-প্রেম কোথা পাবে—নিশ্চয় গৌর-পরিকর হবে

[মাতন]
দাস-ব্রজবাসী তারে লয়ে গেলেন

রঘুনাথ-দাস-গোসাঞির কাছে—দাস-ব্রজবাসী তারে লয়ে গেলেন

দাস-গোস্বামী দেখি শ্যামানন্দ
লোটাইয়া পড়িল চরণে

কতশত-ধারা বহে দুনয়নে—লোটাইয়া পড়িল চরণে
দীনে কৃপা কর বলে—লোটাইয়া পড়িল চরণে

‘‘প্রেমায় বিহ্বল হৈলা, দেখি’ অনগ্রহ-কৈলা,
শ্রীদাস-গোস্বামী গুণরাশি।।’’

দাস-গোস্বামী তুলিলেন তারে

প্রেমবাহু পসারিয়ে—দাস-গোস্বামী তুলিলেন তার

গৌর-কৃপার লক্ষণ দেখে
ডাকি’ কাছে বসাইলেন
তার সাত্বিক বিকার দেখে
মধুর-স্বরে জিজ্ঞাসিলেন
কে বাপু তুমি বটে

তোমার পরিচয় বল—কে বাপু তুমি বটে

নিজ-পরিচয় দিলেন

বিনয়-বচনে শ্যামানন্দ-নিজ-পরিচয় দিলেন
গৌরদাসের গণ বলে—নিজ-পরিচয় দিলেন

শ্রীচরণে স্থান দিয়েছেন মোরে

অহৈতুকী-কৃপার বলে—শ্রীচরণে স্থান দিয়েছেন মোরে
হৃদয়চৈতন্য-ঠাকুর—শ্রীচরণে স্থান দিয়েছেন মোরে

আমার প্রভু হৃদয়চৈতন্য

অম্বিকানগরবাসী—আমার প্রভু হৃদয়চৈতন্য
গৌরীদাস-পণ্ডিতের শিষ্য—আমার প্রভু হৃদয়চৈতন্য

গৌরীদাসের গণ এই পরিচয় পেয়ে
ডাকিলেন প্রেমস্বরে

কুণ্ডবাসী দাস-গোসাঞি—ডাকিলেন প্রেমস্বরে
আইস বাপু আইস বলে—ডাকিলেন প্রেমস্বরে

আইস বাপু তোমায় দেখি

বহুদিন হতে সাধ ছিল—আইস বাপু তোমায় দেখি

বাহু পসারি’ কৈলেন কোলে

জেনে রঘুনাথ শ্যামানন্দে—বাহু পসারি’ কৈলেন কোলে

শ্রীমুখেতে আজ্ঞা দিলেন
ব্রজবনে বাস কর গিয়া

শ্রীজীবের পদাশ্রয় লৈয়া—ব্রজবনে বাস কর গিয়া

‘‘শ্রীজীবেরে নিকটে গেলা, নিজ-পরিচয় দিলা,
তেঁহ কৃপা কৈলা বাৎসল্যেতে

বাৎসল্য উপজিল মনে

গৌরীদাসের গণ জেনে—বাৎসল্য উপজিল মনে

আপনার কাছে রাখিলেন
বাহু পসারি’ কৈলেন কোলে

আইস বাপু আইস বলে—বাহু পসারি’ কৈলেন কোলে

ভজন-প্রণালী জানাইলেন
গোস্বামি-গ্রন্থ পড়াইলেন

‘‘যে বা মনোরথ ছিল, তাহা যেন পূর্ণ হৈল,
হৃদয়চৈতন্য-কৃপা হইতে।।’’

সব মনোরথ পূর্ণ হল

শ্রীজীবগোস্বামীর কৃপা পেয়ে—সব মনোরথ পূর্ণ হল
হৃদয়চৈতন্যের কৃপায়—সব মনোরথ পূর্ণ হল

শ্যামানন্দের সাধনের সম্বল

হৃদয়চৈতন্যের কৃপাবল—শ্যামানন্দের সাধনের সম্বল

কোন ফল বা কারে মিলে

শ্রীগুর-কৃপা না হইলে—কোন ফল বা কারে মিলে

মন দিয়ে শুন ভাই

শ্রীগুরু-হৃদয়চৈতন্যের কৃপা—মন দিয়ে শুন ভাই

বৃন্দাবনে পাঠাইয়ে

ঠাকুর-শ্রীশ্যামানন্দে—বৃন্দাবনে পাঠাইয়ে

‘‘শ্রীজীব-গোস্বমীরে লিখয়ে পত্রিদ্বারে।
দুঃখী-কৃষ্ণদাস-শিষ্যে সঁপিনু তোমারে।।’’

যোগ্য-আধার জেনে

তোমাদের কৃপা পাবার—যোগ্য-আধার জেনে

‘‘ইহার যে মনোহভীষ্ট পূরিবে সর্ব্বথা।
কতদিন-পরে পুনঃ পাঠাইবে এথা।।
শ্যামানন্দে কহিয়া পাঠান নিরন্তর ।
শ্রীজীবে জানিবে তুমি আমার সোসর।।
সাবধান হবে ভক্তিরত্ন উপার্জ্জনে।
অপরাধ নহে যেন বৈষ্ণবের স্থানে।।’’

সদাই সাবধান হবে

বৈষ্ণব-অপরাধ হতে—সদাই সাবধান হবে

‘‘এইরূপ শিষ্যে সদা করে সাবধান।
গুরু-অনুগ্রহে শ্যামানন্দ ভাগ্যবান।।’’

নিশিদিশি হা-হুতাশ

ঠাকুর-শ্রীশ্যামানন্দের –নিশিদিশি হা-হুতাশ
শ্রীজীব-পদাশ্রয়ে বাস—নিশিদিশি হা-হুতাশ

ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে

শ্রীজীবের চরণে পড়ে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে

বল বল শ্রীজীব-গোসাঞি

আমি কি গৌরাঙ্গ পাব—বল বল শ্রীজীব-গোসাঞি

[মাতন]
হৈল,–অপূর্ব্ব-মিলন কিছুদিনে

শ্রীজীব-গোস্বামীর কাছে গিয়ে—হৈল,–অপূর্ব্ব-মিলন কিছুদিনে
শ্রীনিবাস-নরোত্তম-সনে—হৈল,–অপূর্ব্ব-মিলন কিছুদিনে

নিশিদিশি হিয়া জ্বলছিল

গৌরের,–প্রকট-লীলার অদর্শনে—নিশিদিশি হিয়া জ্বলছিল

দগ্ধহৃদয় শান্ত হল

প্রাণপ্রিয়-সঙ্গ পেল—দগ্ধহৃদয় শান্ত হল

দুইজনের সঙ্গে দেখা হল
অপূর্ণ-সাধ পূর্ণ হল
বহুদিনে সাধ ছিল
যে-দিন হতে নাম শুনেছিল

শ্রীনিবাস-নরোত্তমের—যে-দিন হতে নাম শুনেছিল

সে-দিন হতে সাধ ছিল মনে

এঁদের সঙ্গ পাব কতদিনে—সে-দিন হতে সাধ ছিল মনে

পূর্ব্বে এসেছেন বৃন্দাবনে

শ্রীনিবাস-নরোত্তম দুইজনে—পূর্ব্বে এসেছেন বৃন্দাবনে

পথ-পানে চেয়েছিলেন

স্বাভাবিক-প্রেমের টানে—পথ-পানে চেয়েছিলেন

তিন-জনে হৈল মিলন

শ্রীনিবাস নরোত্তম শ্যামানন্দে—তিন-জনে হৈল মিলন
বিনে এক তনু মন—তিন-জনে হৈল মিলন

তিন-শক্তি একঠাঁই

নিতাই গৌর সীতানাথ—তিন-শক্তি একঠাঁই
মধুর-শ্রীবৃন্দাবনে-তিন-শক্তি একঠাঁই

এবার হল দ্বিতীয় মিলন

আবেশ-অবতারে—এবার হল দ্বিতীয় মিলন
ব্রজবনে শ্রীজীবগোস্বামীর কাছে—এবার হল দ্বিতীয় মিলন
নিতাই গৌর সীতানাথের-এবার হল দ্বিতীয় মিলন

এমন মিলন বুঝি হয় নাই

পূর্ব্ব-অবতারে—এমন মিলন বুঝি হয় নাই

হৈল অপূর্ব্ব মিলন

ব্রজবনে তিন-শক্তির—হৈল অপূর্ব্ব মিলন
অপূর্ণ পূর্ণ-অশে—হৈল অপূর্ব্ব মিলন

এ-তিনজনের মিলনে

শ্রীজীব-গোস্বামি-চরণে—এ-তিনজনের মিলনে

হইল আনন্দ বৃন্দাবনে
নিরজনে কাঁদেন তিনজনে

মধুর-শ্রীবৃন্দাবনে—নিরজনে কাঁদেন তিনজনে
শ্রীরূপ শ্রীসনাতন বলে—নিরজনে কাঁদেন তিনজনে

তাঁদের,–অঝোরে, নয়ন ঝুরে

হা গৌর গৌরগণ বলে—তাঁদের,–অঝোরে নয়ন ঝুরে

বলে,–কোথা প্রাণ-শচীনন্দন

কোথা শ্রীরূপ-সনাতন—বলে,–কোথা প্রাণ-শচীনন্দন
‘‘ভ্রমিলা দ্বাদশ-বন,’’

ভ্রময়ে দ্বাদশ-বনে

হৃদে ধরি’ গুরুকৃপা-ধনে—ভ্রময়ে দ্বাদশ-বনে
সঙরি’ শ্রীগুরুধনে—ভ্রময়ে দ্বাদশ-বনে

ব্রজবনে ভ্রমিছে বটে

কিন্তু,–শান্তি নাই কোন-মতে—ব্রজবনে ভ্রমিছে বটে

প্রাণে উঠছে হা-হুতাশ
দেখতে ত’ পেলাম না

ব্রজবনে গৌরাঙ্গ-বিহার—দেখতে ত’ পেলাম না
ব্রজবনে কৃষ্ণ-অন্বেষণ—দেখতে ত’ পেলাম না
‘ব্রজবনে কৃষ্ণ-অন্বেষণ’—
বিরহিণী গৌর-কিশোরীর—ব্রজবনে কৃষ্ণ-অন্বেষণ

দেখতে ত’ পেলাম না
কেউ ত’ দেখা দিলে না

কৃপা করে আনলে বটে—কেউ ত’ দেখা দিলে না
গৌরপ্রিয়-শ্রীরূপ-সনাতন—কেউ ত’ দেখা দিলে না

‘‘ভ্রমিলা দ্বাদশ-বন, কৈলা গ্রন্থ অধ্যয়ন,
হৈলা অতি-নিপুণ সেবায়।’’

কি বলব সে সেবার কথা
যে নিপুণ-সেবার বলে
শ্যামানন্দ নাম মিলে

নুপুর-তিলক ভালে—শ্যামানন্দ নাম দিলে

অদ্ভুত প্রসঙ্গ ভাই

শ্যামানন্দের সেবা-অধিকার—অদ্ভুত প্রসঙ্গ ভাই

প্রাণে প্রাণে আশা জাগিল

ঠাকুর-শ্রীশ্যামানন্দের—প্রাণে প্রাণে আশা জাগিল

শ্রীজীবগোস্বামীর আজ্ঞা পেয়ে
নিধুবন-সেবা করে

সম্মার্জ্জনী করে ধরে—নিধুবনে-সেবা করে
রাধাদাসী-ভাব অন্তরে—নিধুবনে-সেবা করে
মানসেতে শ্যামানন্দ—নিধুবন—সেবা করে

শ্যামানন্দের নিত্য-সেবা

নিকুঞ্জবন মার্জ্জন—শ্যামানন্দের নিত্য-সেবা

নিতুই গিয়ে ঝাড়ু দেয়

শ্রীজীব-গোস্বামীর আজ্ঞা-মতে—নিতুই গিয়ে ঝাড়ু দেয়

প্রাণে প্রাণে এই বাসনা
কতদিনে দেখতে পাব

এই নিকুঞ্জে যুগল-বিহার—কতদিনে দেখতে পাব

অপরূপ রহস্য ভাই
অনুভব কর ভাই রে

শ্রীগুরুচরণ হৃদে ধরে—অনুভব কর ভাই রে
শ্যামানন্দের চরিত্র—অনুভব কর ভাই রে
শ্রীগুরু-আজ্ঞা-পালনের কি ফল—অনুভব কর ভাই রে
অকপটে শ্রীগুরু-সেবার ফল—অনুভব কর ভাই রে

[মাতন]
মন দিয়ে শুন ভাই

শ্যামানন্দের ভাগ্যের সীমা—মন দিয়ে শুন ভাই

‘‘একদিন রাধাকৃষ্ণ সখীগণ-সঙ্গে।
কুঞ্জে নৃত্যগীত করে বিবিধ-তরঙ্গে।।
রাধিকার নৃত্য তাহে অত্যন্ত-প্রচুর।
খসিয়া পড়য়ে বাম-পদের নূপুর।’’

বাম-পায়ের নূপুর খসে পড়ল

অপরূপ-নৃত্যরসে—বাম-পায়ের নূপুর খসে পড়ল

‘‘আপনি না জানে সখীগণ না জানিল।
শ্যামানন্দে কৃপার তরে এই ভঙ্গী কৈল।।
প্রাতে রাই নিজে গৃহে প্রবেশ হইলা।
নূপুর না দেখি’ পায়ে চমৎকার পাইলা।।’’

যাও ললিতে তুরিতে

কোথা নূপুর আছে খুঁজিতে—যাও ললিতে তুরিতে

ত্বরায় যাও কুঞ্জবনে

নূপুর বুঝি আছে সেইখানে—ত্বরায় যাও কুঞ্জবনে

‘‘বৃদ্ধা-ব্রাহ্মণী হইয়া ললিতা সুন্দরী।
নূপুর খুঁজিতে কুঞ্জে আইলা শীঘ্র করি’।।
এথা শ্যামানন্দ প্রাতে কুঞ্জ-সেবায় আইলা।
নূপুরের জ্যোতি দেখি’ মূর্চ্ছিত হইলা।।’’

বন আলোকিত হয়েছে

শ্যামানন্দ দেখে বিস্ময়-মনে—বন আলোকিত হয়েছে
নূপুরের জ্যোতিতে—বন আলোকিত হয়েছে

শ্যামানন্দ,–মূরছিত ভূমিতলে

হায় এ কি দেখলাম বলে—শ্যামানন্দ,–মূরছিত ভূমিতলে

‘‘তবে কতক্ষণে তি হ চেতন পাইলা।
নূপুর করিয়া হস্তে মস্তকে ধরিলা।।’’

মনে অনুভব কৈলা

কিশোরীর পদের নূপুর বটে—মনে অনুভব কৈলা

এই মনে অনুভব করি’
আনন্দ আর ধরে না

‘‘গদগদ স্বেদ স্তম্ভ আনন্দে বিহ্বল।
নূপুর চূম্বয়ে ধরে হৃদয়-কমল।।’’

অষ্ট-সাত্ত্বিক-ভাবের প্রকাশ

গরবিণীর নূপুর-পরশে—অষ্ট-সাত্ত্বিক-ভাবের প্রকাশ

কেন বা হবে না
যে পরশ পেয়েছে

মহাভাব-স্বরূপিণীর—যে পরশ পেয়েছে

তার পরশেতে ভাবোদগম
কে বা হবে না

‘‘প্রেমেতে আকুল হইয়া করয়ে রোদন।
কবে মোরে রাধাকৃষ্ণ দিবে দরশন।।’’

শ্যামানন্দের নয়ন ঝুরে

সেই নূপুর বুকে ধরে—শ্যামানন্দের নয়ন ঝুরে

বলে,–কেন দেখা না দিলা

অঙ্গের ভূষণ দেখাইলা—বলে,–কেন দেখা না দিলা

[মাতন]

‘‘তারে দেখি’ শ্রীললিতা জিজ্ঞাসেন বাণী।
বধূর নূপুর মোর পাইয়াছ তুমি।।
যমুনার জল নিতে বধূ এসেছিল।
স্বভ্রমে নূপুর কুঞ্জে খসিয়া পড়িল।।
শ্যামানন্দ কহে বটে পাহিয়াছি আমি।
কিন্তু তোমার নূপুর নয় শুন ঠাকুরাণী।।
নূপুর দেখিয়া মূঞি মূর্চ্ছিত হইনু।
নূপুর ছুঁইেত প্রেম-সমুদ্রে ডুবিনু।।
মনুষ্যের নূপুর ছুঁইতে প্রেম নাহি হয়।
শ্রীরাধার নূপুর এই জানিহ নিশ্চয়।।’’

জেনেছি—পরশেতে প্রেম পেয়ে

শ্রীগুরু-কৃপা-প্রেরণাতে—জেনেছি—পরশেতে প্রেম পেয়ে
এ শ্রীরাধিকার নূপুর বটে—জেনেছি—পরশেতে প্রেম পেয়ে

এ যে রাই-কিশোরীর

আমার শ্যামা-প্যারীর—এ যে রাই-কিশোরীর

প্রেম ত’ কভু হয় না

শ্রীরাধার নূপুর-পরশ বিনা—প্রেম ত’ কভু হয় না

এ,–মহাভাবময়ীর নূপুর হবে

নৈলে,–স্পর্শে ভাব কেন উপজিবে—এ,–মহাভাবময়ীর নূপুর হবে

এ,—প্রেমময়ীর নূপুর নিশ্চয়

নৈলে কেন,–স্পর্শে হল প্রেমোদয়—এ,—প্রেমময়ীর নূপুর নিশ্চয়

‘‘যে পদের নূপুর সেই-পদে পরাইব।’’

আমি তার পায়ে পরাব

এ যার নূপুর হবে—আমি তার পায়ে পরাব

‘‘নৈলে নূপুর আমি তোমায় কেনে দিব।।’’

এ বা কিসের বল বলো।

এ যে শ্রীগুরু-কৃপা কেবল—এ বা কিসের বল বলো।

‘‘শুনি’ ললিতা কহে সত্য তোমার বচন।
তোমারে যে আমি হইল সুপ্রসন্ন মন।।
কি বর মাগিবে মাগ তোমারে সে দিব।
বাঞ্ছাসিদ্ধ করিয়া নূপুর লইয়া যাব।।
তোমারে প্রসন্ন হৈলা বৃষভানু-সুতা।
নূপুর পাইলে হাতে বুঝিয়ে সর্ব্বথা।।’’

আনে কি পাইতে পারে

যাঁর নূপুর তাঁর কৃপা না হলে—আনে কি পাইতে পারে

নূপুরের,–সে ত’ দরশ পরশ পায়

শ্রীরাধা-কৃপা যারে হয়—নূপুরের,–সেই ত’ দরশ পরশ পায়

সেই ত’ পরশিতে পারে

ভানুসুতার কৃপা যারে—সেই ত’ পরশিতে পারে

তোমারে,–ভানুসুতার কৃপা নিশ্চয়

‘‘শ্যামানন্দ বলে তবে শুন ঠাকুরাণী।
কে তুমি তোমার রূপ দেখিব যে আমি।।’’

আনে কেন আসবে

শ্রীরাধার গণ না হলে—আনে কেন আসবে

কেন আসবে অন্যজনে

তাঁর নূপুর অন্বেষণে—কেন আসবে অন্যজনে

আমি,–নূপুর ত দিব না

তোমার পরিচয় না পাইলে—আমি,–নূপুর ত’ দিব না

শুধু পরিচয়ে মানব না

রূপ দেখে মেনে নিব—শুধু পরিচয়ে মানব না

তখন শ্রীললিতা দেবী

নিজ-পরিচয় দিলেন হাসি’ হাসি’—তখন শ্রীললিতা দেবী

আমি হই রাধাদাসী

নূপুর খুঁজতে এসেছি—আমি হই রাধাদাসী

‘‘শ্রীরাধার দাসী মুঞি নাম সে ললিতা।
এত বলি’ নিজরূপ দেখাইল সর্ব্বথা।।’’

নিজরূপ দেখাইলা

শ্রীললিতা অনুরাধা—নিজরূপ দেখাইলা

‘‘ললিতার রূপ নেত্রে নিরীক্ষণ কৈলা।
মূর্চ্ছিত হই শ্যামানন্দ ভূমিতে পড়িলা।।’’

শ্যামানন্দ,–মূরছিত ভূমিতলে

ললিতার রূপ দরশনে—শ্যামানন্দ,–মূরছিত ভূমিতলে
হায় কি দেখলাম বলে—শ্যামানন্দ,–মূরছিত ভূমিতলে
জয় প্রভু হৃদয়চৈতন্য বলে—শ্যামানন্দ,–মূরছিত ভূমিতলে

শ্যামানন্দ মূরছিত

দেখি,’—ললিতার রূপ অদভুত—শ্যামানন্দ মূরছিত

‘‘শ্রীললিতা দেবী তারে করান চেতন।
প্রণময়ে শ্যামানন্দ সাশ্রুলোচন।।
প্রেমে অঙ্গ গদগদ বাক্য নাহি স্ফুরে।
পুলকাঙ্গ প্রেম-অশ্রু ঝর্ ঝর্ ঝরে।।
ললিতা কহেন বর মাগ কৃষদাস।
কোন্-বাঞ্ছা হয় তোমার মনে অভিলাষ।।
শ্যামানন্দ কহে আর কি বর মাগিব।
তব দাসী হঞা রাধাকৃষ্ণকে সেবিব।।
শুনি’ ললিতা দেবীপ্রসন্না হইলা।
‘রাধাকৃষ্ণ প্রাপ্তি হউ’ কহিতে লাগিলা।।
এই নিত্য মন্ত্র তুমি করহ গ্রহণ।
স্মরণ করিলে হবে রাধিকা দর্শন।।’’

রাধার হবে দর্শন

এই মন্ত্রের—রাধার হবে দর্শন

‘‘মন্ত্র গ্রহণ মাত্রেতে প্রেম উপজিলা।
আনন্দিত হঞা তাঁর চরণে পড়িলা।।
শ্যামানন্দ-মাথে তিঁহ পদ তুলি’ দিলা।
কোলে করি’ তবে বহু আশীর্ব্বাদ কৈলা।।
‘নূপুর পাইয়া তার কপালে ছোঁয়াইলা।।’’

কৃপাময়ী শ্রীললিতা

‘‘রাধাপদ-চিহ্ন থাকু’ হাসিয়া বলিলা।।
ললাটে নূপুর-স্পর্শে তিলক হইয়া।’’

শ্যামানন্দের নূপুর-তিলক

শ্রীললিতার কৃপা হতে—শ্যামানন্দের নূপুর-তিলক

‘‘নূপুরের চূড়া লাগি’ বিন্দু মাথে হৈলা।।
ললিতা কহে পাইলে তুমি শ্যামাপদদ্বন্দ্ব।
আজি হইতে তোমার নাম হইল শ্যামানন্দ।।”

তোমার নাম শ্যামানন্দ

পাইলে শ্যামাপদদ্বন্দ্ব—তোমার নাম শ্যামানন্দ

[মাতন]

‘‘শ্রীজীব বিনা এই কথা কারে না কহিবে।
এত বলি’ শ্রীললিতা চলিলা তুরিতে।।’’

শ্যামানন্দ কাঁদে ব্যাকুল হয়ে
ললিতা-দিদি কোথা গেলে

যদি,–দেখা দিলে কৃপা-বলে—ললিতা-দিদি কোতা গেলে
নূপুর লইয়া করে—বলে-ললিতা-দিদি কোথা গেলে

[মাতন]

‘‘শ্রীললিতা-পরশে শ্রীশ্যামানন্দ দেহ।
কাঞ্চন-বরণ হৈল রূপে জগমোহ।।’’

শুধু পরশ করা নয়

আপন-বরণ ধরাইল—শুধু পরশ করা নয়

‘‘প্রেমাবিষ্ট তিঁহদ আসি’ শ্রীজীবের স্থানে।
গুপতে কহিল তাঁরে সব বিবরণে।।
শ্যামানন্দ কহে পড়ি’ শ্রীজীবের পদে।
আপনে কৈলে কৃপা শ্রীললিতারূপে।।’’

এই ত’ আমার মহালাভ

শ্রীজীব কেবল তোমার কৃপায়—এই ত’ আমার মহালাভ

তাইতে আমায় কৃপা কৈলে

নিকুঞ্জ-সেবায় আদেশ কৈলে—তাইতে আমায় কৃপা কৈলে

অনুভব কর ভাই রে

শ্যামানন্দের আচরণে—অনুভব কর ভাই রে

এ ত’ সাধনের ফল নয়

একমাত্র গুরু-কৃপায় হয়—এ ত’ সাধনের ফল নয়

একমাত্র বল বটে

গৌর-গোবিন্দ পাবার—একমাত্র বল বটে
শ্রীগুরুদেবের কৃপা—একমাত্র বল বটে

‘‘মস্তকে তিলক এই তব কৃপা-চিহ্ন।
করহ করুণা দিঠে মুঞি দীনহীন।।
শুনি’ তারে কোলে করি’ শ্রীজীব-গোসাঞি।
কহিল বিক্রীত আজি হৈনু তব ঠাঞি।।’’

আমি,–তোমার কাছে বিকাইলাম

শ্যামানন্দে বলেন শ্রীজীব-গোসাঞি—আমি,–তোমার কাছে বিকাইলাম
শ্যামানন্দ তোমার হলাম—আমি,–তোমার কাছে বিকাইলাম

[মাতন]
তুমি,–ভাগ্যবান শ্যামানন্দ

পাইলে শ্যামা-পদদ্বন্দ্ব—তুমি,–ভাগ্যবান শ্যামানন্দ

[মাতন]

‘‘তিলকের নাম রাখিল শ্যামানন্দী।
শ্যামানন্দ কহে তোমার প্রেমে হৈনু বন্দী।।’’

আমায়,–রাধারাণীর কৃপা হয়

শ্রীজীবগোসাঞি তোমার কৃপায়—আমায়,–রাধারাণী কৃপা হয়

অনুভব কর ভাই
শ্রীরাধিকা-চরণের নূপুর মিলে

অকপটে শ্রীগুরু-আজ্ঞা-পালনে—শ্রীরাধিকা-চরণের নূপুর মিলে

[মাতন]
অনেক বিবাদ উঠেছিল

এই তিলক লয়ে—অনেক বিবাদ উঠেছিল
শ্রীগৌড়মণ্ডলে—অনেক বিবাদ উঠেছিল

গৌরীদাস-পণ্ডিতের পরিচয়ে

ঠাকুর-শ্রীশ্যামানন্দ-সনে—গৌরীদাস-পণ্ডিতের পরিচয়ে

তাঁর তিলক স্বতন্ত্র
শ্যামানন্দের নূপুর তিলক
এই নিয়ে বিবাদ উঠেছিল
খ্যাতি পড়ে গিয়েছিল

শ্যামানন্দ গুরুত্যাগী বলে—খ্যাতি পড়ে গিয়েছিল

কতই না চেষ্ট কৈল

তিলক মুছাবার লাগি’—কতই না চেষ্টা কৈল

তিলক মুছাবার করে চেষ্টা
আরও তিলক উজ্জ্বল হয়
তাতে হৈল দৈববাণী
বৃথা-চেষ্টা পরিহর

এ যে,–শ্রীরাধারাণীর কৃপার তিলক—বৃথা চেষ্টা পরিহর

গুণ কি বা বলব রে

ঠাকুর-শ্রীশ্যামানন্দের—গুণ কি বা বলব রে

‘‘শ্রীগৌড়-অম্বিকা হৈয়া, রহিলা উৎকলে গিয়া
শ্রীগোস্বামীগণের আজ্ঞায়।।
পাষণ্ডী-অসুরগণে, মাতাইলা গোরাগুণে,
কারে বা না কৈল প্রেম দান।’’

গৌরপ্রেমে ভাসাইল উৎকলে

শ্যামানন্দ নিজ-কৃপা-বলে—গৌরপ্রেমে ভাসাইল উৎকলে

[মাতন]

‘‘শ্রীগৌড়ে-অম্বিকা হৈয়া, রহিলা উৎকলে গিয়া
শ্রীগোস্বামীগণের আজ্ঞায়।।
পাষণ্ডী-অসুরগণে, মাতাইলা গোরাগুণে,
কারে বা না কৈল প্রেম দান।’’

গৌরপ্রেমে ভাসাইলে উৎকলে

শ্যামানন্দ নিজ-কৃপা-বলে—গৌরপ্রেমে ভাসাইল উৎকলে

[মাতন]

‘‘অধম আনন্দে ভাসে, শ্যামানন্দ-কৃপালেশে,
কে বা না পাইল পরিত্রাণ।।
কে জানিবে তাঁর তত্ত্ব, সদা সঙ্কীর্ত্তনে মত্ত,’’

সেই ত’ শ্যামানন্দ এবার

শ্রী অদ্বৈত-অবতার—সেই ত’ শ্যামানন্দ এবার

[মাতন]

‘‘অবনীতে বিদিত মহিমা।
নিজ-পরিকর-সঙ্গে বিলসে পরম-রঙ্গে,
উৎকলে সুখের নাহি সীমা।।’’

উৎকল সুখেতে ভাসে

শ্যামানন্দের প্রেমাবেশে—উৎকল সুখেতে ভাসে

‘‘যে বারেক দেখে তাঁরে, সে ধৃতি ধরিতে নারে,
কি বা সে মূরতি মনোহর।’’

শ্রীঅদ্বৈত-আবেশ-মূরতি

আমার ঠাকুর শ্যামানন্দ—শ্রীঅদ্বৈত-আবেশ-মূরতি

‘‘কি বা সে মূরতি মনোহর।
নরহরি কহে কভু, রসিকানন্দের প্রভু,
হবে কি এ-নয়ন-গোচর।।’’

শ্যামানন্দ কৃপা কর

রসিকানন্দে প্রভু—শ্যামানন্দ কৃপা কর

ব্যাকুল হয়ে রসিকানন্দ কাঁদে

শ্যামানন্দের বিরহে—ব্যাকুল হয়ে রসিকানন্দ কাঁদে

কোথা বা লুকালে

হা ঠাকুর শ্যামানন্দ—কোথা বা লুকালে

‘‘জয় প্রভু শ্যামানন্দ করুণা-নিধান।
হেন প্রভু কোথা গেল করে অনাথিন।।’’

রসিকানন্দ কেঁদে লুটায়

শ্যামানন্দের অদর্শনে—রসিকানন্দ কেঁদে লুটায়
বলি’,–হা শ্যামানন্দ গেলে কোথায়—রসিকানন্দ কেঁদে লুটায়

[মাতন]
হায়,–বিধি মোরে কি করিলা

শ্যামানন্দ প্রভু কোথা গেলা—হায়,–বিধি মোরে কি করিলা

[মাতন]

‘‘হেন প্রভু কোথা গেল না দেখিয়ে আর।
এবে শূন্য হল মোর সকল সংসার।’’

আঁধার দেখিয়ে দিনে

রসিকানন্দ কেঁদে বরে—আঁধার দেখিয়ে দিনে
প্রভু শ্যামানন্দ বিনে—আঁধার দেখিয়ে দিনে

‘‘কে মোরে করিবে দয়া বাৎসল্য করিয়া।
কার সঙ্গে দেশে দেশে বুলিব ভ্রমিয়া।।’’

বেড়াইব কার সঙ্গে

নিতাই-গৌর-প্রসঙ্গে—বেড়াইব কার সঙ্গে

‘‘কার সঙ্গে করিব আর তীর্থ পর্য্যটন।
কে মোরে লইয়া যাবে শ্রীবৃন্দাবন।।
আর না দেখিব সে চরণ দু’খানি।
এত বলি’ রসিকানন্দ লুটায় ধরণী।।
রসিকের অনুরাগ কহনে না যায়।
যাঁর অনুরাগ শুনি’ পাষাণ মিলায়।।
মোরে দয়া কর প্রভু শ্যামানন্দ-রায়।
দয়ার ঠাকুর তুমি ত্রিভুবনে গায়।।’’

আয়,–প্রাণভরে গাই ভাই

মিলেছি,–ভাই ভাই এক-ঠাঁই—আয়,–প্রাণভরে গাই ভাই
শ্রীগুরুচরণ হৃদে ধরে—আয়,–প্রাণভরে গাই ভাই

জয়,–শ্যামানন্দ রসিকানন্দ

জয়,–শ্রীনিবাস নরোত্তম রামচন্দ্র—জয়,–শ্যামানন্দ রসিকানন্দ

[মাতন]
এই,–কৃপা কর সবে মিলে
যেন,–বিকাই শ্রীগুরু-পদতলে

অবিচারে ভাই ভাই মিলে—যেন,–বিকাই শ্রীগুরু-পদতলে

শকতি দাও হে

শ্রীগুরু-আজ্ঞা-পালনের—শকতি দাও হে

যেন,–আজ্ঞা-পালন করতে পারি

অবিচারে শ্রীগুরুদেবের—যেন,–আজ্ঞা-পালন করতে পারি
তোমাদের চরণ হৃদে ধরি’—যেন,–আজ্ঞা-পালন করতে পারি

[মাতন]
সকল-সুখেই বঞ্চিত মোরা

কারে বলব দুঃখের কথা—সকল-সুখেই বঞ্চিত মোরা

দেখিতে ত’ পেলাম না

তখন জনম হল না—দেখিতে ত’ পেলাম না
প্রাণ,–গৌর-লীলা তার আবেশের খেলা—কিছুই দেখতে পেলাম না
অতঃপর মহাজনী আক্ষেপ—কীর্ত্তন—
‘‘শ্রীগৌরাঙ্গের সহচর,’’………….ইত্যাদি—

পিছে পিছে প্রাণ যেতে চলে

হা গুরু গৌরাঙ্গ বলে—পিছে পিছে প্রাণ যেত চলে

[মাতন]
হা শ্রীগুরুদেব
নিশিদিশি জ্বলছিলাম

কোন-লীলা দেখতে নাহি পেলাম—নিশিদিশি জ্বলছিলাম

কৃপা করে দেখা দিলে

হা নিতাই-গৌর-প্রেমের পাগল—কৃপা করে দেখা দিলে

সঙ্গে করে লয়ে গেলে

এই কালে নীলাচলে—সঙ্গে করে লয়ে গেলে

গৌরলীলা জানাইলে

ভাবাবেশে কীর্ত্তন-রঙ্গে—গৌরলীলা জানাইলে

দেখাবে বলে বলেছিলে

কিন্তু,–ফাঁকি দিয়ে লুকাইলে—দেখাবে বলে বলেছিলে

লুকাইয়া করছ খেলা
শ্রীমুখে বলেছ তুমি

ত্রিকাল-সত্য গৌরলীলা—শ্রীমুখে বলেছ তুমি

আজ প্রাণ কেঁদে উঠছে

সেই কথা সঙরিয়ে—আজ প্রাণ কেঁদে উঠছে
এই ত’ যাবার সময় জেনে—আজ প্রাণ কেঁদে উঠছে
‘এই ত’ যাবার সময় জেনে’—
ত্রিকাল-সত্য-লীলায় গৌরগণের—এই ত’ যাবার সময় জেনে
শ্রীসীতানাথ-সনে নীলাচলে—এই ত’ যাবার সময় জেনে

আজ প্রাণ কেঁদে উঠছে
কে আমাদের লয়ে যাবে

রথযাত্রা আগত প্রায়—কে আমাদের লয়ে যাবে
আমরা,–আশা করে বলে আছি—কে আমাদের লয়ে যাবে
‘আমরা,–আশা করে বসে অছি’—
ত্রিকাল-সত্য লীলা জেনে—‘আমরা,–আশা করে বসে আছি

আর আমাদের কে বা আছে

আপন বলতে এ-জগমাঝে—আর আমাদের কে বা আছে

ওগো আমার ব্যথার ব্যথী

পাগলা প্রভু শ্রীরাধারমণ—ওগো আমার ব্যথার ব্যথী

লয়ে যেও নিজ-গুণে টেনে

যোগ্যতা অযোগ্যতা না মেনে—লয়ে যেও নিজ-গুণে টেনে

প্রাণভরে ভোগ করতে দিও

ভক্ত-সম্মিলন-লীলা—প্রাণভরে ভোগ করতে দিও
ঝালি-সমর্পণ-লীলা—প্রাণভরে ভোগ করতে দিও
গুণ্ডিচা-মার্জ্জন-লীলা—প্রাণভরে ভোগ করতে দিও
রথাগ্রে কীর্ত্তন-রঙ্গ—প্রাণভরে ভোগ করতে দিও

ভোগ করিব প্রাণভরে

পাগলা—প্রভু তোমার পিছে থেকে—ভোগ করিব প্রাণভরে

এই কৃপা কর হে

ঠাকুর শ্রীশ্যামানন্দ—এই কৃপা কর হে

যেন ভোগ করতে পারি

শ্রীগুরু-আনুগত্যে—যেন ভোগ করতে পারি
রথের আগে গৌর-নটন-মাধুরী—যেন ভোগ করতে পারি
হৃদে ধরি’ সেই মাধুরী—যেন ভোগ করতে পারি
‘হৃদে ধরি’ সে মাধুরী’—
শ্রীগুরু-গৌরাঙ্গ-নটন—হৃদে ধরি’ সেই মাধুরী

যেন ভোগ করতে পারি
যারে দেখি তারে বলি

‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হর কৃষ্ণ হবে রাম।।’’
গৌরহরিবোল, হরিবোল, হরিবোল, হরিবোল।।
‘‘শ্রীগুরু-প্রেমানন্দে নিতাই-গৌর-হরিবোল।।’’


ˍˍˍˍˍˍˍˍˍˍˍˍ



অভিসার আক্ষেপানুরাগ কুঞ্জভঙ্গ খণ্ডিতা গীতগোবিন্দ গোষ্ঠলীলা দানলীলা দূতী ধেনুবৎস শিশুহরণ নৌকাখন্ড পূর্বরাগ বংশীখণ্ড বিপরীত বিলাস বিরহ বৃন্দাবনখন্ড ব্রজবুলি বড়াই বড়াই-বচন--শ্রীরাধার প্রতি মাথুর মাধবের প্রতি দূতী মান মানভঞ্জন মিলন রাধাকৃষ্ণসম্পর্ক হীন পরকীয়া প্রেমের পদ রাধা বিরহ রাধিকার মান লখিমাদেবি শিবসিংহ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন শ্রীকৃষ্ণের উক্তি শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগ শ্রীকৃষ্ণের মান শ্রীকৃষ্ণের স্বয়ংদৌত্য শ্রীগুরু-কৃপার দান শ্রীরাধা ও বড়াইয়ের উক্তি-প্রত্যুক্তি শ্রীরাধার উক্তি শ্রীরাধার প্রতি শ্রীরাধার প্রতি দূতী শ্রীরাধার রূপবর্ণনা শ্রীরাধিকার পূর্বরাগ শ্রীরাধিকার প্রেমোচ্ছ্বাস সখীতত্ত্ব সখীর উক্তি সামোদ-দামোদরঃ হর-গৌরী বিষয়ক পদ