যমুনা কিনারে

সাঁঝক বেরি উগল নব সসধর

সাঁঝক বেরি উগল নব সসধর
ভরমে বিদিত সবিতাহু।
কুণ্ডল চক্র তরাসে নুকাএল
দূর ভেল হেরথি রাহু।।
জনু বইসসি রে বদন হাথ চলাই।
তুঅ মুখ চঙ্গিম অধিক চপল ভেল
কতি খন ধরব লুকাঈ।।
রক্তোপল জনি কমল বইসাওল
নীল নলিনি দল তহু।
তিলক কুসুম তহু মাঝু দেখিকহু
ভমর আবথি লহু লহু।।
পানি-পলব-গত অধর বিম্ব-রত
দসন দাড়িম বিজ তোরে।
কীর দূর ভেল পাস ন আবএ
ভৌঁহ ধনুহি কে ভোরে।।

অন্তঃকথন:
শ্রীমতীর রূপ বর্ণনা করছেন কবি। সূর্যাস্তের সময় রাধারানী এলেন, সাঁঝবেলায় নবীন চাঁদের উদয় হল। আহা যেন সূর্যদেবের অবধি চন্দ্রমা বলে ভ্রম হল, তিনি অস্তগামী হলেন! শ্রীমতীর কর্ণকুণ্ডলচক্রের ভয়ে রাহু লুকিয়ে দূর থেকে দেখতে লাগলেন! করতলে মুখ ঢেকো না রাই, তোমার সুন্দর মুখের চপল শোভা তুমি কতক্ষণ লুকিয়ে রাখবে? করপদ্মে ঢাকা তোমার ও মুখ দেখে মনে হচ্ছে যেন রক্তকমলে কমল বসিয়ে রেখেছে কেউ আর তাতে আবার নীল কমল, তারও মাঝে তিলক পুষ্প, এ দেখে ভ্রমর তোর ধীরে ধীরে সমাগত হবেই! ভাষার ভাঁজে কবি বলতে চাইলেন শ্রীমতীর রক্তকরকমলে মুখকমল রাখা, আর সেই মুখকমলে দুটি নীল পদ্মের মত চক্ষু, দুই নয়নের মাঝে পুষ্প সদৃশ্য তিলক আঁকা, এত পুষ্পের সমাহারে কৃষ্ণ-ভ্রমর কি না এসে পারে! রাধারানী তোমার করপল্লবে লগ্ন অধর বিম্বফলতুল্য, আর দশন পঙক্তি ডালিমের বীজের মত, উন্নত নাসিকা তোমার শুকপক্ষীর মত, অধরের কাছে থেমে আছে। দাড়িম্ব বীজ তুল্য অধর দেখে শুকেরও তো লোভ হয়, কিন্তু সে যেন তোমার জোড়াভুরুকে ধনুক মনে করে অধরপ্রান্তেই থেমে থাকে, কাছে আসে না!

পদকর্তা:বিদ্যাপতি
রাগ:অজ্ঞাত
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:দেবহূতি সরকার

সন্ধিনী