যমুনা কিনারে

সাঁঝহি নিঅ মুঘপ্রেম পিয়াই

সাঁঝহি নিঅ মুঘপ্রেম পিয়াই।
কমলিনি ভমরী রাখল ছিপাই।।
সেজ ভেল পরিমল ফুল ভেল বাসে।
কতয় ভমরা মোর পরল উপাসে।।
ভমি ভমি ভমরী বালভু নিজ খোজে।
মধু পিবি মধুকর সুতল সরোজে।।
নই ফুল কহেস নই উগই ন সূরে।
সিনেহো নহি জায় জীব সৌ মোরে।।
কেও নহি কহে সখি বালমু বাতে।
রইন সমাগম ভই গেল প্রাতে।।
ভনই বিদ্যাপতি সুনিএ ভমরী।
বালভু অছি তোর অপনহি নগরী।।

অন্তঃকথন:
মিলনের আশা নিয়ে অভিসারে এসে রাধারানী আর মাধবের দেখা পান না! মাধবকে খুঁজতে খুঁজতে রাত্রি প্রভাত হতে চলল, কিন্তু কোথায় মাধব! ভ্রমরী রাধারানী মাধব ভ্রমরের সন্ধানে ফিরছেন আর ওদিকে মাধব কমলিনীর মধুপান করে নিদ্রা গেছেন! সে বৃত্তান্তই লিখছেন কবি। বলছেন, কমলিনী ভ্রমরকে আপনার মুখের মধু পান করিয়ে সন্ধ্যাবেলাই তাকে লুকিয়ে রাখলো। শয্যা সুগন্ধী হয়ে উঠল, ফুলেল হল বাসগৃহ। আর ওদিকে আমার ভ্রমর কত উপোসী রইল এই ভেবে ভেবে ভ্রমরী ঘুরে ঘুরে বল্লভের খোঁজ করছে! মধুকর যে মধুপান করে কমলেই শায়িত। কিন্তু ফুল তো সে কথা কয় না, ওদিকে সূর্যদেবও উদিত হন না যে কমলিনী ফুটে উঠে ভ্রমরকে প্রকাশ করে দেবে! অর্থাৎ এই আঁধার রজনীতে মাধব অন্য নারীর মধু পান করে তারই ঘরে রয়েছেন, আর রাধারানী খুঁজে মরছেন, আঁধারে সন্ধানও পান না আর যে মাধবকে পেয়েছে সেই বা কেন বলে দেবে! তবু জীবন থেকে স্নেহ যায় না! রাধাভ্রমরী আক্ষেপ করে সখীর কাছে বলছেন, সখী, আমার পতির কথা কেউ বলে না, কেউ আমায় তার সংবাদ দেয় না, রাত্রিতে মিলনের কথা ছিল অথচ দেখো প্রভাত হয়ে গেল! রাধারানীর দশা দেখে বিদ্যাপতি বলছেন, শোনরে ভ্রমরী, তোর পতি নিজেরই নগরীতে আছে! ভ্রমরের নগরী অর্থাৎ পুষ্প! অন্যফুলে ভ্রমর যে মধুপানে মত্ত সে কথাই বিদ্যাপতি প্রকাশ করতে চাইলেন রাধিকার কাছে! ভ্রমর-ভ্রমরী ও কমলিনীর রূপক পদটিতে অনুপম লাবণ্যের সঞ্চার করেছে।

পদকর্তা:বিদ্যাপতি
রাগ:অজ্ঞাত
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:দেবহূতি সরকার

সন্ধিনী