যমুনা কিনারে

সুধা ছানিয়া কেবা ও সুধা ঢেলেছে গো

সুধা ছানিয়া কেবা ও সুধা ঢেলেছে গো
তেমতি শ্যামের চিকণ দেহা।
অঞ্জন গঞ্জিয়া কেবা খঞ্জন আনিল রে
চাঁদ নিঙ্গাড়ি কৈল থেহা।।
থেহা নিঙ্গাড়িয়া কেবা মুখানি বনাল রে
জবা নিঙ্গাড়িয়া কৈল গণ্ড।
বিল্বফুল যিনি কেবা ওষ্ঠ গড়ল রে
ভুজ, জিনিয়া করিশুণ্ড।।
কম্বু জিনিয়া কেবা কণ্ঠ বনাইল রে
কোকিল জিনিয়া সুস্বর।
আরদ্র মাখিয়া কেবা সারদ্র বনাইল রে
ঐছন দেখি পীতাম্বর।।
বিস্তারি পাষাণে কেবা রতন বসাইল পে
এমতি লাগয়ে বুকের শোভা।
দাম কুসুমে কেবা সুষমা করছে রে
এমতি তনুর দেখি আভা।।
আদলি উপরে কেবা কদলি রোপিল রে
ঐছন দেখি উরুযুগ।
অঙ্গুলি উপরে কেবা দর্পণ বসাইল রে
চণ্ডীদাস দেখে যুগে যুগ।।

অন্তঃকথন:
এটি শ্রীরাধার পূর্বরাগের পদ। সকল সুধা নিঙড়ে নিয়ে তবেই ঢেলেছে ওই সুধা। শ্যামের চিকণ দেহ তো তেমনি। অঞ্জনের কৃষ্ণত্ব নিন্দিত হয় এমন রূপ কেইবা নির্মাণ করল! চাঁদ নিঙড়ে আনল এমন স্থৈর্য গাম্ভীর্য। তার নির্যাসটুকু দিয়ে কে তৈরি করল তার এমন অপরূপ মুখখানি। লাল জবা নিঙড়ে সাজানো যে ওর গণ্ডদেশ। বিম্বফলের চেয়েও অতুলনীয় সুন্দর ওর নিষ্পাপ অধরদ্বয়। আর দুই বাহু, সে তো হস্তীর শুঁড়ের অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী। কম্বু জিনে ওর কণ্ঠ কে গড়ে তুলল সই ? বল আমায়। কণ্ঠস্বর ! তা শুনে তো কোকিল মস্তক অবনত করে। হলুদ মাখিয়ে কে ওকে পীতাভ করল? তাই তো দেখায় যেন পীতাম্বর। ওর প্রশস্থ বক্ষের কি অপরূপ শোভা। যেন কেউ বিস্তৃত পাষাণে বসিয়েছে মূল্যবান রত্ন। তনুর আভা যেন কুসুমদামের সুষমা। আদলির (সম্ভবত অর্ধেক হাঁড়ি, তবে নানা মত আছে) উপরে কেবা রোপন করেছে কদলির চারা। ঐরূপ দেখি তার যুগল ঊরু। আঙ্গুলের উপরে কেইবা দর্পণ স্থাপন করেছে, চণ্ডীদাস দেখছেন যুগে যুগে।

পদকর্তা:চণ্ডীদাস
রাগ:কামোদ
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:মুনমুন ঘোষ

সন্ধিনী

শ্রীরাধিকার পূর্বরাগ20