‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধ শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।’’
ভাই রে এই ত,–কলিযুগের মহামন্ত্র-জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম
গৌর-কলিযুগের,–পরিত্রাণের মূলমন্ত্র—জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম
হলেন শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য
…..-ব্রহ্ম-নন্দনন্দন—হলেন শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য
বিলাসের তনু—বলরাম নিত্যানন্দ
পরতত্ত্ব-নির্দ্দেশক-স্বরূপ—মহাবিষ্ণু শ্রীঅদ্বৈত
প্রচারিতে নিজ-নামধর্ম্ম—সঙ্গোপাঙ্গে অবতীর্ণ
প্রচারিত নিজ-নামধর্ম্ম’—
আস্বাদিতে রাধা—প্রেমধর্ম্ম—প্রচারিতে নিজ-নামধর্ম্ম
একে একে আসি মিলিলা সবে
তিন-যুগের ভকত যত—একে একে আসি’ মিলিলা সবে
তিন-যুগের ভকত যত’—
মধুর—অনাস্বাদে অতৃপ্ত—তিন-যুগের ভকত যত
মধুর-রস আস্বাদানের লোভে—একে একে আসি মিলিলা সবে
‘মধুর-রস আস্বাদনের লোভে’—
চিরকালের অনর্পিত—মধুর-রস আস্বাদনের লোভে
চিরকালের অনর্পিত—মধুর-রস আস্বাদনের লোভে
শ্রীচৈতন্য,–কল্পতরুর ছায়ায় বসে—মধুর-রস আস্বাদনের লোভে
অপূর্ণ-সাধ পূরাইতে—একে একে আসি’ মিলিলা সবে
নিত্যানন্দ না পাইয়া কাঁদে গৌরচন্দ্র।।’’
না দেখিলে নিতাই-সোণা—খেলা প্রাণে জাগে না
তাই,–‘‘নিত্যানন্দ না পাইয়া কাঁদে গৌরচন্দ্র।।’’
প্রাণগৌরাঙ্গের আকর্ষণে—আসি’,–মিলিলা নিতাই কতদিনে
নিত্যানন্দ-হরিদা-দ্বারে—নাম-প্রেম—প্রচার হইল আরম্ভ
করিলেন প্রভু কাজি-দলন
জাগাই-মাধাইকে কৈল নিজজন
তাদের দুর্ব্বৃত্ততা ঘুচাইয়ে—জগাই-মাধাইকে কৈল নিজজন
পতিত হইল পতিতপাবন—জগাই-মাধাইকে কৈল নিজজন
প্রাণ কেঁদে উঠল
লীলাবিগ্র-গৌরহরির—প্রাণ কেঁদে উঠ্ল
স্বমাধুরী,–আস্বাদনের সাধ মনে জাগিল—প্রাণ কেঁদে উঠ্ল
সন্ন্যাস,–অঙ্গীকার করব মনে করি’—চলিলেন প্রভু নদীয়া ছাড়ি
শ্রীকেশর-ভারতীর দ্বারে—উপনীত হলেন কন্টক-নগরে
শ্রীকেশবভারতী গুরু করি’ স্বীকার—করিলেন সন্ন্যাস অঙ্গীকার
জগাই-মাধাই-উদ্ধার-লীলায়—উড়ায়ে পতিত-পাবন-বাণী
কণ্ঠক-নগরে হইল ঘোষণা
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য নাম—কণ্ঠক-নগরে হইল ঘোষণা
এই দিনে সন্ন্যাস-লীলায়—কণ্ঠক-নগরে হইল ঘোষণা
ভক্ত-হৃদয়—বিদারণ-লীলায়—কণ্ঠক-নগরে হইল ঘোষণা
দিতে,–রাধাপ্রেমের প্রতিদান—হল শ্রীকৃষ্ণের চৈতন্য নাম
অনুভব কর ভাই রে
শ্রীগুরু-চরণ হৃদে ধরে—অনুভব কর ভাই রে
কিশোরী-জড়িতে শ্যাম—তারই ত চৈতন্য নাম
শ্যামসু্ন্দর যখন শ্রীঢাকা—তখ চৈতন্য আখ্যা
রাধাভাবে বিভাবিত শ্যাম যখন—শ্রীচৈতন্য আখ্যা তখন
দৈববাণী শুনে—ভারতী রাখলেন এ নাম
ভারতীর ইঙ্গিত পেয়ে—ভারতী রাখলেন এ নাম
সবাই বলে গৌর সন্ন্যাসী হল
সে কেন সন্ন্যাসী হবে
তবে একবার,–মনে বাসনা উঠেছিল
পাষণ্ডীর ব্যবহার দেখে—তবে একবার,–মনে বাসা উঠেছিল
সবাই করত দণ্ডবৎ প্রণাম
যারা আমায় নিন্দা করছে—তারা,–সবাই করত দণ্ডবৎ প্রণাম
সাধুবুদ্ধিতে মর্য্যাদা দিত—তাদের অপরাধ ক্ষালন হয়ে যেত
সঙ্গে আছেন সেবা-বিগ্রহ
তাঁর,–হৃদয়ে হল প্রতিফলিত
সেবা-বিগ্রহ নিতাচাঁদের—হৃদয়ে হল প্রতিফলিত
গৌরের সাধ হয়ে মূর্ত্তিমন্ত—হৃদয়ে হল প্রতিফলিত
অভিন্নতনু শ্রীনিত্যানন্দ—অমনি,–সাজ এসে দাঁড়াল সম্মুখে
প্রাণে প্রাণে বুঝেছি—বলে,–সাধু সাজতে সাধ হয়েছে
তুমি ত বলেছ শ্রীমুখে
তোমার যতেক কাজ আমা হতে—তুমি ত বলেছে শ্রীমুখে
আমি,–সাধু সাজাব তোমাকে –তুমি থাক আপন ভোগে
এই যে আমি থাকলাম উপরে
তোমার মনোমত বেশ ধরে—এই যে অমি থাকলাম উপরে
তোমার,–নাম-প্রেমে বিশ্ব ভরবে—এই বিশ্ব জগৎ উদ্ধার করবে
তোমার,–সর-কাজ করবে নিতাই—কোন,–
সব সমাধান করব
তোমায় বুকে ধরে আমি—সব সমাধান করব
তোমার চির আজ্ঞা জেনে—সব সমাধান করব
যে ভোগ করতে এসেছে—তুমি,–আশ-মিটায়ে সে ভোগ কর
সেবা-বিগ্রহ নিতাই-চাঁদের—এক-কাজে অনেক কাজ
তাতে,–বাদী নিরস্ত হয়ে গেল
বাদীপক্ষ ত সঙ্গেই আছে
ব্রজের জটিলা কুটিলা—বাদী-পক্ষ ত সঙ্গেই আছে
ব্রজজন ত সবাই এসেছে—বাদী-পক্ষ ত সঙ্গেই আছে
ব্রজে,–যুগলের পরস্পরের—আগে,–নাম লইতে ছিল মানা
কত কত কইত নানা
বাদীগণ বিরোধী হয়ে—কত কথা কইত নানা
আগে,–নাম লইতে ছিল বাধা—এখন পরস্পর,–বুকে ধরে ফিরছে সদা
কখনও কৃষ্ণভাবের প্রকাশ
এই দুই-ভাবের প্রকাশ দেখে
রাইকানু-মিলিত গৌর-স্বরূপে—এই দুই-ভাবের প্রকাশ দেখে
তবে ত ভোগে বাধা পড়বে
সন্ন্যাস বেশরূপে—তাই,–নিতাই দিলেন আবরণ
নিতাই,–আছেন সন্ন্যাসীবেশ ধরি’
অবরণ করি’ প্রাণ-গৌরহরি—নিতাই,–আছেন সন্ন্যাসীবেশ ধরি’
সবাই দেখে উপরে উপরে
ভিতরের রহস্য কেউ জানতে নারে
যুগল সে স্বচ্ছন্দে বিহরে—এই—ভিতরের রহস্য কেউ জানতে নারে
আরও রহস্য আছে ভাই
স্বপ্নবিলাস-লীলায় বর্ণন আছে
একদিন দেখলেন স্বপনে
রাই-কিশোরী নিধুবনে—একদিন দেখলেন স্বপনে
গৌর-আকৃতি সুন্দর-পুরুষ—একদিন দেখলেন স্বপনে
ভূমিতে পাড়েন আছাড়
ভাবোন্মত্ত হয়ে বার-বার—ভূমিতে পাড়েন আছাড়
সঙ্কীর্ত্তন-ভাবাবেশে—সেই উত্থান-পতন দেখে
প্রাণবঁধুর অঙ্গে লাগছে
বার-বার ভূমে আছাড় পড়ছে—প্রাণ-বঁধুর অঙ্গে লাগছে
বঁধুর,–অঙ্গে লাগতে নাহি দিব
আমি ত উপরে থাকব—বঁধুর,–অঙ্গে লাগতে নাহি দিব
পরাণ-বঁধুরে ভিতরে রাখব—বঁধুর—অঙ্গে লাগতে নাহি দিব
প্রাণবঁধুর অঙ্গ আবরণ করে—রাই-কিশোরী থাকলেন উপরে
বঁধুকে,–বুকে ধরে আছে রাই-কিশোরী—এই ত সহজ গৌর-মাধুরী
অনঙ্গ প্রাণে সইল না
ব্যথা পায় রাই-সোণা—অনঙ্গ প্রাণে সইল না
প্রাণ-কিশোরীর অঙ্গে—বলে,–কেন বা আঘাত লাগতে দিব
বঁধু,–বুকে ধরে রাই ভিতরে থাকবে—আমি ত উপরে থাকব
সন্ন্যাস-বেশে আবরণ দিতে—সেই বাসনা পূরণ হল
আরও এক বাঞ্ছা পূর্ত্তি আছে
রাধার মনে সাধ উঠেছিল
কালা নিল জাতি কুল, প্রাণ নিল বাঁশী।।
কানু-অনুরাগে রাঙা-বসন পরিয়া।
দেশে দেশে ভরমিব যোগিনী হইয়া।।’’
নিতাই,–সন্ন্যাসীবেশে আবরণ দিতে—রাধার,–এই সাধ পূর্ণ হল
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য আমার—নিগম-নিগূঢ় নিধি রে
তিনবাঞ্ছা-পূর্ত্তি-অভিলাষী—গৌর সাজলেন কপট-সন্ন্যাসী
গৌর হলেন শুদ্ধ রাধ
বিকাশ ত হয় নাই
নবদ্বীপে এ স্বভাব—বিকাশ ত হয় নাই
কার্য্যক্রমে গোপনে ছিল—বিকাশ ত হয় নাই
নদীয়ায় আবরণ ছিল—কাটোয়ায় খুলে গেল
সন্ন্যাস-লীলা-ছলে—কাটোয়ায় খুলে গেল
শুধু শুদ্ধ রাধা নয়
হইলেন বিরহিণী রাধা
সন্ন্যাস—গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে—হইলেন বিরহিণী রাধা
যাতে পূরিবে অপূর্ণ সাধা—হইলেন বিরহিণী রাধা
শ্রীকেশব ভারতী মহাশয়
গৌর-বাঞ্ছা পূরণের—দরজা খুলে দিলেন
গৌর-অন্তরঙ্গ ভারতী মহাশয়—দরজা খুলে দিলেন
বাঞ্ছা-পূর্ত্তির খুলল দ্বার—ও ত নয় সন্ন্যাস-অঙ্গীকার
একরাত্রি বাস কৈলেন
ভারতী-সঙ্গে কথোপকথনে—এক রাত্রি বাস কৈলেন
ছুটিলে বৃন্দাবন-পানে
প্রাণকৃষ্ণ-অন্বেষণে—ছুটিলেন বৃন্দাবন-পানে
বিশ্রাম করিলেন
এক গণ্ডগ্রামে—বিশ্রাম করিলেন
বিশ্রাম করেছিলেন বলে—এখনও তার খ্যাতি আছে
শ্রীবিশ্রামতলা বলে—এখনও তার খ্যাতি আছে
ভ্রমণ করিলেন
তিনদিনে রাঢ়দেশে—ভ্রমণ করিলেন
বক্রেশ্বর-আদি-স্থানে—ভ্রমণ করিলেন
নিতাই-সুন্দর কৌশল করি’
আনিলেন প্রভুকে গঙ্গাতীরে
এই যমুনাতীরে যাব বলে—আনিলেন প্রভুকে গঙ্গাতীরে
ভক্ত-বিরহ নিবারণ-তরে—আনিলেন প্রভুকে গঙ্গাতীরে
শুধালেন প্রাণ গৌরহরি
শ্রীগঙ্গাদর্শন করি’—শুধালেন প্রাণ গৌরহরি
নিতাই বলে হয় হয়—এই কি যমুনা হয়
উঠি তীরেতে দাঁড়ালেন
এদিকে আগে পাঠায়েছেন সংবাদ
নিতাই,–শান্তিুপুরে সীতানাথে—এদিকে আগে পাঠায়েছেন সংবাদ
প্রাণ-গৌরাঙ্গে তোমার ঘরে—আমি লয়ে যেতেছি
তাই ত এসেছেন
সীতানাথ নৌকা লয়ে—তাই ত এসেছেন
সীতানাথে প্রশ্ন করি’—বুঝিতে পারিলেন প্রভু
গঙ্গাতীরে লয়ে এসেছে
যমুনাতীর বলে—গঙ্গাতীরে লয়ে এসেছে
কিছুক্ষণে আপনায় সম্বরিলেন
সীতানাথের ব্যাকুলতা দেখি’—কিছুক্ষণে আপনায় সম্বরিলেন
শুষ্ক-বসন পরালেন
সিক্ত-বসন ত্যাগ করায়ে—শুষ্ক-বসন পরালেন
আসি’,– মিলিলেন সব নদীয়াবাসী
শচীমাতা সঙ্গে লয়ে—আসি’,–মিলিলেন সব নদীয়াবাসী
আর যে ভকত যেখানে ছিল—সকলে আসিয়া মিলিল
গৌর-বিরহে জর্জ্জরিত—সকলে আসিয়া মিলিল
সবাই ত ব্যাকুল হলেন
সন্ন্যাস-স্বরূপ দেখে—সবাই ত ব্যাকুল হলেন
দেখি নব-মাধুরী—কিছু-পরে স্থির হলেন
রন্ধন করিবার—শচীমাতা নিলেন ভার
শান্তিপুরে পরমানন্দে—এইরূপে কিছুদিন গেল
শচীমাতার আজ্ঞা লয়ে
চলিলেন নীলাচলপুরে
অন্তরঙ্গ,–কয়েকজন সঙ্গে করে—চলিলেন নীলাচলপুরে
‘অন্তরঙ্গ,–কয়েকজন সঙ্গে করে’—
শ্রীনিত্যানন্দ-আদি—অন্তরঙ্গ,–কয়েকজন সঙ্গে করে
নীলাচলে যাবার পথে
নিতাই,–করলেন প্রভুর দণ্ড ভঙ্গ
না জানি কি আবেশে—নিতাই,–করলেন প্রভুর দণ্ড ভঙ্গ
অনুভব কর ভাই
শ্রীগুরু-চরণ হৃদে ধরে—অনুভব কর ভাই
নিতাই আমার গৌরহরির দণ্ড—কেন করলেন তিন-খণ্ড
শ্রীগুরুদেবের কৃপায়—প্রাণে প্রাণে এই ত জাগে
দণ্ড বিধি ছিল
সত্য-ত্রেতা-দ্বাপরে—দণ্ড বিধি ছিল
সে তিনযুগের জীব যোগ্য জেনে—দণ্ড বিধি ছিল
নিতাই মনে মনে ভাবে—এবার আবার দণ্ড কেন
অযোগ্য কলিজীব—এবার আবার দণ্ড কেন
এ যে কৃপার যুগ—এবার আবার দণ্ড কেন
বাহিরে প্রাণ-গৌরহরি—দেখাইলেন রুষ্টভাব
দূর-হতে দেখতে পেলে
কমলাপুরে এসে—দূর-হতে দেখতে পেলেন
শ্রীমন্দিরের ধ্বজা—দূর হতে দেখতে পেলেন
শ্রীমন্দিরের ধ্বজা দেখে—নিতাই হলেন ভাবাবিষ্ট
এই সুযোগে গৌরসুন্দর চলিলেন একেশ্বর
ভেটিবারে নীলাচল-নাথ।’’
গেলেন প্রভু আগে চলে
সার্ব্বভৌমে উদ্ধারিবে বলে—গেলেন প্রভু আগে চলে
গোপীনাথ-আচার্য্যের করে—প্রাণগৌরাঙ্গে সঁপে দিলেন
গোপীনাথ-আচার্য্যের করে’—
আপনার সম্বন্ধী—গোপীনাথ—আচার্য্যের করে
নিত্য দর্শন করায়ো
ইহাকে সঙ্গে করে তুমি—নিত্য দর্শন করায়ো
জগন্নাথের শ্রীমন্দিরে—নিত্য দর্শন করোয়ো
গেলে কাশীমিশ্রপুরী
আদরেতে লয়ে গেলেন
সেখানে ছিলেন কাশীমিশ্র—আদরেতে লয়ে গেলেন
নিজঘরে প্রাণগৌরাঙ্গে—আদরেতে লয়ে গেলেন
ভাগ্যবান কাশীমিশ্রালয়ে—প্রাণগৌরাঙ্গের হইল বসতি
নিজগণ-সংহতি—প্রাণগৌরাঙ্গের হইল বসতি
গেলেন ঠাকুর হরিদাস
তারে দিলেন নির্জ্জনবাস
তার অভিমত জেনে—তারে দিলেন নির্জ্জনবাস
কাশীমিশ্রাবাসের কাছে—তারে দিলেন নিজ্জনবাস
সিদ্ধ-বকুল বলে—আজও তার খ্যাতি আছে
সচল ব্রহ্ম গৌরহরি
অচল ব্রহ্ম জগন্নাথ
দুই স্বরূপের দুই দান
কলিজীবের দুঃখ ঘুচাবার তরে—দুই স্বরূপের দুই দান
অচল-ব্রহ্ম দানে অন্নব্রহ্ম
এই চার-ব্রহ্মের বিহার-ভূমি
মধুর-নীলাচল মানি—এই চার-ব্রহ্মের বিহার-ভূমি
মধুর-শ্রীনীলাচলের—অপরূপ রহস্য ভাই রে
তার,–সম্বন্ধ-তত্ত্ব সকলি নিগূঢ়—গৌর আমার নিগম-নিগূঢ়
ব্রজের নিভৃত-কুঞ্জের নিভৃত-কুঞ্জ
যেখানে গৌর-স্বরূপ প্রকট—ব্রজের নিভৃত-কুঞ্জের নিভৃত-কুঞ্জ
মহা,–রাসবিলাসের পরিণতিতে—যেখানে গৌর-স্বরূপ প্রকট
মহাভাব রসরাজ এক হয়ে—যেখানে গৌর-স্বরূপ প্রকট
আমি তুমি ভুলে গিয়ে—যেখানে গৌর-স্বরূপ প্রকট
এবে নবদ্বীপ-রূপে বেকত
সেখানে,–প্রকট কেবল স্বরূপখানি
ব্রজের,–নিভৃত-কুঞ্জের নিভৃত-কুঞ্জ—সেখানে,–প্রকট কেবল স্বরূপখানি
সেখানে স্বরূপের খেলা নাই—সেখানে,–প্রকট কেবল স্বরূপখানি
মধুর,–নদীয়া তার খেলার ভূমি—সেখানে,–প্রকট কেবল স্বরূপখানি
মহা-মহারাস-রঙ্গালয়—মধুর-নদীয়া হয়
গৌরের নিগূঢ়-বিহার-স্থান—সেই নদীয়ার নিভৃত-উদ্যান
নদীয়ার গুপ্ত উদ্যান—ধরে নীলাচল নাম
নদীয়া বিনে ভেবো না আন—নীলাচল নদীয়ার গুপ্ত উদ্যান
সে সে নিভৃত-গম্ভীরা—সেই উদ্যানের ঘর চোরা
অমূল্য-রতন যাতে থাকে—চোরা ঘর তারে বলে
তোমরা মালঘর বল
ব্যবহারিক-জগতে—তোমরা মাল-ঘর বল
অমূল্য-রতন প্রাণগৌর থাকে—সেই চোরা-কুটরী গম্ভীরাতে
নিগম-নিগূঢ়-সার—মধুর গম্ভীরা-বিহার
কি জানি কি বলব আর—মধুর গম্ভীরা-বিহার
শ্রীগুর অহৈতুকী-কৃপার খনি—যা বলার তাই বলি বাণী
গম্ভীরা-ভিতরে প্রাণগোরা-রায়—জাগিয়া রজনী পোহায়
রাধাভাবে প্রাণ-গোরা-রায়—কাঁদিয়া রজনী পোহায়
স্বরূপ-রামরায়ে কণ্ঠ ধরি’—কাঁদিয়া রজনী পোহায়
কই,–এল না এল না বলে—গৌর-কিশোরী ভাসে নয়ন-জলে
রাধাভাবে মত্ত গোরাশশী—ভোগ করে নিশিদিশি
কর্ণামৃত শ্রীগীতগোবিন্দ।
‘‘স্বরূপ-রামানন্দ-সনে মহাপ্রভু রাত্রি-দিনে,
গায় শুনে পরম-আনন্দ।।’’
আপনি হইয়ে রাধা—কৃষ্ণ বলে কাঁদে সদা
কৃষ্ণের বিরহভরে, মন্দিরে রহিতে মারে,
বাহির যাইতে মন ধায়’’।।
ভাবনিধি-প্রাণগৌরাঙ্গের—সেই দশা হল রে
শ্রী,–কৃষ্ণ-বেণু শুনি বনে যান।’’
সেইমতো আচম্বিতে, বংশী পাইয়া শুনিতে
অপূরব অনুরাগের খেলা
পূরব হতেও অধিক বিকাশ—অপূরব অনুরাগের খেলা
পূরব-অনুরাগে যা শুন নাই—তাই এখন শুন ভাই
গৌরাঙ্গ-কিশোরীর–অনুরাগের কি মহাবল
গৌর-কিশোরীতে যা প্রকাশ হল—এ অনুরাগ কি আগে প্রকাশ ছিল
তেলেঙ্গাগাই-এর মাঝে, দেখি গোরা রসরাজে,
পড়িয়োছে শ্বাস নাহি চলে।।’’
স্বরূপাদি প্রিয়গণ—সবাই ব্যাকুলিত চিত
গম্ভীরায় নাই শচীসুত—সবাই ব্যাকুলিত চিত
প্রভু আমাদের গেল কোথায়—স্বরূপাদি ইতি উতি ধায়
অঙ্গ সব সঙ্কুচিত অঙ্গে।
অন্বেষিয়া ভক্তগণ, দীপ জ্বালি দরশন,
করে কূর্ম্মাকৃতি-শ্রীগৌরাঙ্গে।।’’
মহাভাবে হয়ে ভোরা—কূর্ম্মাকৃতি প্রাণ-গোরা
প্রভু দেখি’ কূর্ম্মাকৃতি–তখন স্বরূপ-রামরায়
প্রাণগৌরাঙ্গে কৈল শান্ত—প্রসঙ্গ করি’ মনের মত
শ্রী,–নীলাচলে প্রাণগৌরাঙ্গের—অদ্ভুত বিহার রে
অনাদির আদি শ্রীগোবিন্দ—এসেছেন গৌর-রূপ ধরে
রাধা,–ভাব-কান্তি ধরি’ অঙ্গীকারে—এসেছেন গৌর-রূপ ধরে
মধুর-নীলাচল হরে—এসেছেন গৌর-রূপ ধরে
মহামাধুরী ভোগের তরে—এসেছেন গৌর-রূপ ধরে
শ্রীরাধিকা—ভাবিত-মতি—গৌর-স্বরূপের আশ-মিটাতে
শ্রীজগন্নাথের বদন হেরে
গৌর মাতি’ রাধাভাবে
দেখে মুরীলরঞ্জিত-বদন
তার প্রাণের বংশীবদন—দেখে মুরলী-রঞ্জিত-বদন
করিছেন জগন্নাথ দর্শন
শ্রীরাধিকা-ভাবিত মতি—করিছেন জগন্নাথ দর্শন
শ্রী-জগন্নাথের শ্রীমন্দিরে—করিছেন জগন্নাথ দর্শন
গরুড়স্তম্ভের পার্শে দাঁড়ায়ে—করিছেন জগন্নাথ দর্শন
শ্রীল জগন্নাথ আগে, বাড়াইয়া অনুরাগে,
নাচে পরি’ ভাবরত্ন-সাজ।।’’
ভাবনিধি শচীসুত—ভাব-ভূষণে বিভুষিত
জগন্নাথের বদন চেয়ে—স্বর্ণ-বর্ণ হল বিবর্ণ
না জানি কি বলতে বলতে—স্বর্ণ বর্ণ হল বিবর্ণ
গৌর আমার,–জগন্নাথ বলতে নারে– জ জ জ জ গ গ করে
কম্প অশ্রু পুলক সঘর্ম্ম।
এই সপ্ত সাত্ত্বিক ভাব, আর দুই অনুভাব,
হাস্য নৃত্য সব প্রেমধর্ম্ম।।’’
সাত্ত্বিক বিকার যত—গৌর-অঙ্গে হল বেকত
অবিরল নয়ন-ধারায়—বিরাম নাই বিরাম নাই
প্রাণ-গৌরাঙ্গের নয়ন-ধারা—যেন,–পিচ্কারী-জলযন্ত্রধারা
এক এক ধারায় শত শত ধারা—যেন,–পিচ্কারী-জলযন্ত্রধারী
শ্রীগৌরাঙ্গের নয়ন ধারার—অপরূপ প্রকাশ রে
চারিদিকে বইছে ধারা
সম্মুখে পশ্চাতে ডাহিনে বামে—চারিদিকে বইছে ধারা
চক্রের মত ভ্রমে গোরা—চারিদিকে বইছে ধারা
ভাসিল শ্রীমুখ-কমল
অবিরল নয়নধারায়—ভাসিল শ্রীমুখ-কমল
মুখ-কমল ভাসাইয়ে—পড়িল হৃদি-কমলে
হৃদি-কমল ভাসাইয়ে—পড়িল চরণ-কমলে
চরণ-কমল পাখালিয়ে—নিম্ম-খাল পূর্ণ কৈল
গরুড়-স্তম্ভের পার্শ্বদেশের—নিম্ম-খাল পূর্ণ কৈল
সেই গৌরের পদ-পরশে—পাষাণ গলিয়া গেল
শ্রী,–জগন্নাথের শ্রীমন্দিরে—অদ্যাপিত স্মৃতি বিরাজিছে
পাষাণে শ্রীপদচিহ্ন—অদ্যাপিও স্মৃতি বিরাজিছে
পাষাণ-গলান-গোরা—প্রাণভরে বল ভাই তোরা
সেই পাষাণ-গলান-লীলা—হায় রে,—কিছুই দেখেতে পেলাম না রে
প্রাণগৌরাঙ্গের,–কীর্ত্তন-নটন-লীলা—হায় রে,–কিছুই দেখতে পেলাম না রে
কীর্ত্তন-নটন-লীলা’—
শ্রী—জগন্নাথের রথের আগে—কীর্ত্তন-নটন-লীলা
সচল-অচলের খেলা—কিছুই দেখতে পেলাম না রে
দুজনে দুজনায় ভোগ করে
সচল আর অচল—দু’জনে দু’জনায় ভোগ করে
শ্রী,–জগন্নাথের বদন হেরে—গৌর নাচে রাধাভাবে
পরাণ-নাথ পাইনু বলে—গৌর নাচে রাধাভাবে
বিহরে গৌরাঙ্গে-রূপেতে—আর,-জগন্নাথে ভোগ দিতে
প্রেমের অস্ফুট-কলিকা—শ্রীজগন্নাথ-রূপ হয়
ব্রজ-রস-নির্য্যসের কলি—সেই,–মহাভাব-বিকার-মূর্ত্তি
মহাভাব,–প্রেমরস-ঘনাকৃতি—গোরা-রসের বদন হেরি’
যুগল-উজ্জ্বল,—রস-নির্য্যাস-মূরতি—গোরা-রসের বদন হেরি’
রাই-কানু একাকৃতি—গোরা-রসের বদন হরি,
জগন্নাথে হেরি’ গৌরহরি—আস্বাদে যুগল-মাধুরী
যুগল-মাধুরী বিকাশ করে—রথের আঘে গৌর নেচে যায়
দেখি,’—মুগ্ধ জগন্নাথ-শ্যমরায়—রথের আগে গৌর নেচে যায়
জগন্নাথ-বংশীধারী—কখনও ত দেখে নাই
রাধা-সঙ্গে,–মিললে তার কি মাধুরী—কখনও ত দেখে নাই
দেখি’,–মহাভাবনিধির বদন-কমল—জগন্নাথ ভাবে অচল হল
কোন-মতে না চলিল—জগন্নাথ ভাবে অচল হল
তারই ত বটে গরজ-বালাই
ত্বরায় বঁধু যাতে কুঞ্জে যায়—তারই ত বটে গরজ বালাই
বঁধু,–ত্বরা করি’ চল বলে—জগন্নাথের,–ভাবের অচলতা কেড়ে নিল
জগন্নাথ ক্ষুদ্ধ-লুব্ধ-মনে—তখন,–ধীরে ধীরে যায় রে
তবে,–পূরে আমার মনের আশ
যদি,–গৌর-পরিকর-মাঝে হয় বাস—তবে,–পূরে আমার মনের আশ
ঐ,–মিলিত-মাধুরী-গৌরহরি—নিরন্তর ভোগ করি
সচল-অচলের খেলা—অপরূপ ভোগময়-লীলা
নিশিদিশি জ্বলছে হিয়ায়
সেই,–লীলা-অদর্শন-শেল—নিশিদিশি জ্বলছে হিয়ায়
নদীতীরবাসী নর-নারী—এই,–কর সবে কৃপা করি’
বিহার-ভূমিতে পেয়েছ বসতি
প্রভুনিতাই-প্রাণগৌরাঙ্গের—বিহার-ভূমিতে পেয়েছ বসতি
এই,–সুরধুনীর তীরে তীরে—পাগলা-নিতাই নেচে গেছে
গৌরাঙ্গ-নাম-প্রেম যেচে—পাগলা-নিতাই নেচে গেছে
যেন,–প্রাণে প্রাণে ভোগ করি
শ্রীগুরু-চরণ হৃদে ধরি’—যেন,–প্রাণে প্রাণে ভোগ করি
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য বলতে–যেন,–প্রাণে প্রাণে ভোগ করি
নিতাই-জড়িত গৌরহরি—যেন,–প্রাণে প্রাণে ভোগ করি
নিতাই-রমণ গোরা–প্রাণে প্রাণে ভোগ করি মোরা
‘নিতাই-রমণ গোর’—
সঙ্কীর্ত্তন-রাস-রঙ্গে—নিতাই-রমণ গোরা
শ্রীগুরু-চরণে মাথা দিয়ে—এই,–ভোগ-রহস্য হৃদে ধরে
ভাই ভাই একপ্রাণে—যেন,–পাগল হয়ে বেড়াই মোরা
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।
‘‘নিতাই –গৌর-হরিবোল, হরিবোল, হরিবোল, হরিবোল।।’’