হাওড়া সমাজ শ্রীশ্রীনদের নিমাই মন্দিরে কীর্ত্তন

(১লা মাঘ)

‘‘শ্রীগুরু-প্রেমাবন্দে নিতাই-গৌর-হরিবোল।।’’
‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধ শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।’’

জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম

ভাই রে এই ত,–কলিযুগের মহামন্ত্র-জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম
গৌর-কলিযুগের,–পরিত্রাণের মূলমন্ত্র—জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম

কলি,–যুগোচিত এই নাম ধর্ম্ম
হলেন শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য

…..-ব্রহ্ম-নন্দনন্দন—হলেন শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য

বলরাম নিত্যানন্দ

বিলাসের তনু—বলরাম নিত্যানন্দ

মহাবিষ্ণু শ্রীঅদ্বৈত

পরতত্ত্ব-নির্দ্দেশক-স্বরূপ—মহাবিষ্ণু শ্রীঅদ্বৈত

সাঙ্গোপাঙ্গে অবতীর্ণ

প্রচারিতে নিজ-নামধর্ম্ম—সঙ্গোপাঙ্গে অবতীর্ণ
প্রচারিত নিজ-নামধর্ম্ম’—
আস্বাদিতে রাধা—প্রেমধর্ম্ম—প্রচারিতে নিজ-নামধর্ম্ম

সাঙ্গোপাঙ্গে অবতীর্ণ
একে একে আসি মিলিলা সবে

তিন-যুগের ভকত যত—একে একে আসি’ মিলিলা সবে
তিন-যুগের ভকত যত’—
মধুর—অনাস্বাদে অতৃপ্ত—তিন-যুগের ভকত যত

একে একে আসি’ মিলিলা সবে

মধুর-রস আস্বাদানের লোভে—একে একে আসি মিলিলা সবে
‘মধুর-রস আস্বাদনের লোভে’—
চিরকালের অনর্পিত—মধুর-রস আস্বাদনের লোভে
চিরকালের অনর্পিত—মধুর-রস আস্বাদনের লোভে
শ্রীচৈতন্য,–কল্পতরুর ছায়ায় বসে—মধুর-রস আস্বাদনের লোভে

একে একে আসি’ মিলিলা সবে

অপূর্ণ-সাধ পূরাইতে—একে একে আসি’ মিলিলা সবে

‘‘মিলিলা সকল ভক্ত বহি নিত্যানন্দ।
নিত্যানন্দ না পাইয়া কাঁদে গৌরচন্দ্র।।’’

খেলা প্রাণে জাগে না

না দেখিলে নিতাই-সোণা—খেলা প্রাণে জাগে না
তাই,–‘‘নিত্যানন্দ না পাইয়া কাঁদে গৌরচন্দ্র।।’’

আসি,–মিলিলা নিতাই কতদিনে

প্রাণগৌরাঙ্গের আকর্ষণে—আসি’,–মিলিলা নিতাই কতদিনে

নাম-প্রেম-প্রচার হইল আরম্ভ

নিত্যানন্দ-হরিদা-দ্বারে—নাম-প্রেম—প্রচার হইল আরম্ভ

নাম-প্রেম-প্রচার-কালে
করিলেন প্রভু কাজি-দলন
জাগাই-মাধাইকে কৈল নিজজন

তাদের দুর্ব্বৃত্ততা ঘুচাইয়ে—জগাই-মাধাইকে কৈল নিজজন
পতিত হইল পতিতপাবন—জগাই-মাধাইকে কৈল নিজজন

জগাই-মাধই উদ্ধার হল
প্রাণ কেঁদে উঠল

লীলাবিগ্র-গৌরহরির—প্রাণ কেঁদে উঠ্‌ল
স্বমাধুরী,–আস্বাদনের সাধ মনে জাগিল—প্রাণ কেঁদে উঠ্‌ল

চলিলেন প্রভু নদীয়া ছাড়ি

সন্ন্যাস,–অঙ্গীকার করব মনে করি’—চলিলেন প্রভু নদীয়া ছাড়ি

উপনীত হলেন কণ্টক-নগরে

শ্রীকেশর-ভারতীর দ্বারে—উপনীত হলেন কন্টক-নগরে

করিলেন সন্ন্যাস অঙ্গীকার

শ্রীকেশবভারতী গুরু করি’ স্বীকার—করিলেন সন্ন্যাস অঙ্গীকার

উড়ায়ে পতিত-পাবন-বাণী

জগাই-মাধাই-উদ্ধার-লীলায়—উড়ায়ে পতিত-পাবন-বাণী

সন্ন্যাসী সাজলেন গৌরাঙ্গ-সোণা
কণ্ঠক-নগরে হইল ঘোষণা

শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য নাম—কণ্ঠক-নগরে হইল ঘোষণা
এই দিনে সন্ন্যাস-লীলায়—কণ্ঠক-নগরে হইল ঘোষণা
ভক্ত-হৃদয়—বিদারণ-লীলায়—কণ্ঠক-নগরে হইল ঘোষণা

হল শ্রীকৃষ্ণের চৈতন্য নাম

দিতে,–রাধাপ্রেমের প্রতিদান—হল শ্রীকৃষ্ণের চৈতন্য নাম

ঐ নামই স্বরূপ বলেদিছে
অনুভব কর ভাই রে

শ্রীগুরু-চরণ হৃদে ধরে—অনুভব কর ভাই রে

তারই ত চৈতন্য নাম

কিশোরী-জড়িতে শ্যাম—তারই ত চৈতন্য নাম

তখনি চৈতন্য আখ্যা

শ্যামসু্ন্দর যখন শ্রীঢাকা—তখ চৈতন্য আখ্যা

শ্রীচৈতন্য আখ্যা তখন

রাধাভাবে বিভাবিত শ্যাম যখন—শ্রীচৈতন্য আখ্যা তখন

ভারতী রাখলেন এ নাম

দৈববাণী শুনে—ভারতী রাখলেন এ নাম
ভারতীর ইঙ্গিত পেয়ে—ভারতী রাখলেন এ নাম

সাজিলেন সন্ন্যাসী-বেশে
সবাই বলে গৌর সন্ন্যাসী হল
সে কেন সন্ন্যাসী হবে
তবে একবার,–মনে বাসনা উঠেছিল

পাষণ্ডীর ব্যবহার দেখে—তবে একবার,–মনে বাসা উঠেছিল

আমি যদি সাধু হতাম
সবাই করত দণ্ডবৎ প্রণাম

যারা আমায় নিন্দা করছে—তারা,–সবাই করত দণ্ডবৎ প্রণাম

তাদের অপরাধ ক্ষালন হয়ে যেত

সাধুবুদ্ধিতে মর্য্যাদা দিত—তাদের অপরাধ ক্ষালন হয়ে যেত

একবার,–মনে এ সাধ হয়েছিল
সঙ্গে আছেন সেবা-বিগ্রহ
তাঁর,–হৃদয়ে হল প্রতিফলিত

সেবা-বিগ্রহ নিতাচাঁদের—হৃদয়ে হল প্রতিফলিত
গৌরের সাধ হয়ে মূর্ত্তিমন্ত—হৃদয়ে হল প্রতিফলিত

অমনি,–সাজ এসে দাঁড়াল সম্মুখে

অভিন্নতনু শ্রীনিত্যানন্দ—অমনি,–সাজ এসে দাঁড়াল সম্মুখে

বল,–সাধু সাজতে সাধ হয়েছে

প্রাণে প্রাণে বুঝেছি—বলে,–সাধু সাজতে সাধ হয়েছে

তাতে তোমার ভাবনা কিসের
তুমি ত বলেছ শ্রীমুখে

তোমার যতেক কাজ আমা হতে—তুমি ত বলেছে শ্রীমুখে

তুমি থাক আপন ভোগে

আমি,–সাধু সাজাব তোমাকে –তুমি থাক আপন ভোগে

তোমার সাজত আমি বটে
এই যে আমি থাকলাম উপরে

তোমার মনোমত বেশ ধরে—এই যে অমি থাকলাম উপরে

এই বেশ জগৎ উদ্ধার করবে

তোমার,–নাম-প্রেমে বিশ্ব ভরবে—এই বিশ্ব জগৎ উদ্ধার করবে

কোন,–চিন্তা নাই তোমার নদের নিমাই

তোমার,–সর-কাজ করবে নিতাই—কোন,–

চিন্তা নাই তোমার নদের নিমাই
সব সমাধান করব

তোমায় বুকে ধরে আমি—সব সমাধান করব
তোমার চির আজ্ঞা জেনে—সব সমাধান করব

তুমি,–আশ মিটায়ে সে ভোগ কর

যে ভোগ করতে এসেছে—তুমি,–আশ-মিটায়ে সে ভোগ কর

এক-কাজে অনেক কাজ

সেবা-বিগ্রহ নিতাই-চাঁদের—এক-কাজে অনেক কাজ

বেশরূপে দিলেন আবরণ
তাতে,–বাদী নিরস্ত হয়ে গেল
বাদীপক্ষ ত সঙ্গেই আছে

ব্রজের জটিলা কুটিলা—বাদী-পক্ষ ত সঙ্গেই আছে
ব্রজজন ত সবাই এসেছে—বাদী-পক্ষ ত সঙ্গেই আছে

আগে,–নাম লইতে ছিল মানা

ব্রজে,–যুগলের পরস্পরের—আগে,–নাম লইতে ছিল মানা

বাদীগণ দিত হানা
কত কত কইত নানা

বাদীগণ বিরোধী হয়ে—কত কথা কইত নানা

এখন পরস্পর,–বুকে ধরে ফিরছে সদা

আগে,–নাম লইতে ছিল বাধা—এখন পরস্পর,–বুকে ধরে ফিরছে সদা

কখনও রাধাভাবের প্রকাশ
কখনও কৃষ্ণভাবের প্রকাশ
এই দুই-ভাবের প্রকাশ দেখে

রাইকানু-মিলিত গৌর-স্বরূপে—এই দুই-ভাবের প্রকাশ দেখে

যদি তারা ধরে ফেলে
তবে ত ভোগে বাধা পড়বে
তাই,–নিতাই দিলেন আবরণ

সন্ন্যাস বেশরূপে—তাই,–নিতাই দিলেন আবরণ

এই ত,–সন্ন্যাসের গূঢ়-রহস্য ভাই
নিতাই,–আছেন সন্ন্যাসীবেশ ধরি’

অবরণ করি’ প্রাণ-গৌরহরি—নিতাই,–আছেন সন্ন্যাসীবেশ ধরি’

আর কেউ লখিতে নারে
সবাই দেখে উপরে উপরে
ভিতরের রহস্য কেউ জানতে নারে

যুগল সে স্বচ্ছন্দে বিহরে—এই—ভিতরের রহস্য কেউ জানতে নারে

এই ত কে কথা বটে
আরও রহস্য আছে ভাই
স্বপ্নবিলাস-লীলায় বর্ণন আছে
একদিন দেখলেন স্বপনে

রাই-কিশোরী নিধুবনে—একদিন দেখলেন স্বপনে
গৌর-আকৃতি সুন্দর-পুরুষ—একদিন দেখলেন স্বপনে

দেখিলেন তার ব্যবহার
ভূমিতে পাড়েন আছাড়

ভাবোন্মত্ত হয়ে বার-বার—ভূমিতে পাড়েন আছাড়

সেই উত্থান-পতন দেখে

সঙ্কীর্ত্তন-ভাবাবেশে—সেই উত্থান-পতন দেখে

রাধারাণীর মনে হয়েছিল
প্রাণবঁধুর অঙ্গে লাগছে

বার-বার ভূমে আছাড় পড়ছে—প্রাণ-বঁধুর অঙ্গে লাগছে

আমি কি তা সইতে পারি
বঁধুর,–অঙ্গে লাগতে নাহি দিব

আমি ত উপরে থাকব—বঁধুর,–অঙ্গে লাগতে নাহি দিব
পরাণ-বঁধুরে ভিতরে রাখব—বঁধুর—অঙ্গে লাগতে নাহি দিব

রাই-কিশোরী থাকলেন উপরে

প্রাণবঁধুর অঙ্গ আবরণ করে—রাই-কিশোরী থাকলেন উপরে

এই ত সহজ গৌর-মাধুরী

বঁধুকে,–বুকে ধরে আছে রাই-কিশোরী—এই ত সহজ গৌর-মাধুরী

অমনি,–সেবা-শক্তির ক্ষোভ হল
অনঙ্গ প্রাণে সইল না

ব্যথা পায় রাই-সোণা—অনঙ্গ প্রাণে সইল না

বলে,–কেন বা আঘাত লাগতে দিব

প্রাণ-কিশোরীর অঙ্গে—বলে,–কেন বা আঘাত লাগতে দিব

আমি ত উপরে থাকব

বঁধু,–বুকে ধরে রাই ভিতরে থাকবে—আমি ত উপরে থাকব

সেই বাসনা পূরণ হল

সন্ন্যাস-বেশে আবরণ দিতে—সেই বাসনা পূরণ হল

এই ত এক বাসনা পূরণ
আরও এক বাঞ্ছা পূর্ত্তি আছে
রাধার মনে সাধ উঠেছিল

‘‘কালার লাগিয়া আমি হব বনবীসা।
কালা নিল জাতি কুল, প্রাণ নিল বাঁশী।।
কানু-অনুরাগে রাঙা-বসন পরিয়া।
দেশে দেশে ভরমিব যোগিনী হইয়া।।’’

রাধার,—এই সাধ পূর্ণ হল

নিতাই,–সন্ন্যাসীবেশে আবরণ দিতে—রাধার,–এই সাধ পূর্ণ হল

নিগম-নিগূঢ় নিধি রে

শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য আমার—নিগম-নিগূঢ় নিধি রে

গৌর সাজলেন কপট-সন্ন্যাসী

তিনবাঞ্ছা-পূর্ত্তি-অভিলাষী—গৌর সাজলেন কপট-সন্ন্যাসী

সন্ন্যাস-গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে
গৌর হলেন শুদ্ধ রাধ
বিকাশ ত হয় নাই

নবদ্বীপে এ স্বভাব—বিকাশ ত হয় নাই
কার্য্যক্রমে গোপনে ছিল—বিকাশ ত হয় নাই

কাটোয়ার খুলে গেল

নদীয়ায় আবরণ ছিল—কাটোয়ায় খুলে গেল
সন্ন্যাস-লীলা-ছলে—কাটোয়ায় খুলে গেল

হইলেন শুদ্ধ রাধা
শুধু শুদ্ধ রাধা নয়
হইলেন বিরহিণী রাধা

সন্ন্যাস—গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে—হইলেন বিরহিণী রাধা
যাতে পূরিবে অপূর্ণ সাধা—হইলেন বিরহিণী রাধা

আমরা বললে বলতে পারি
শ্রীকেশব ভারতী মহাশয়

গৌর-বাঞ্ছা পূরণের—দরজা খুলে দিলেন
গৌর-অন্তরঙ্গ ভারতী মহাশয়—দরজা খুলে দিলেন

ও ত নয় সন্ন্যাস-অঙ্গীকার

বাঞ্ছা-পূর্ত্তির খুলল দ্বার—ও ত নয় সন্ন্যাস-অঙ্গীকার

সন্ন্যাস গ্রহণ করে
একরাত্রি বাস কৈলেন

ভারতী-সঙ্গে কথোপকথনে—এক রাত্রি বাস কৈলেন

পরদিন গৌরহরি
ছুটিলে বৃন্দাবন-পানে

প্রাণকৃষ্ণ-অন্বেষণে—ছুটিলেন বৃন্দাবন-পানে

কিছুদূর গিয়া প্রভু
বিশ্রাম করিলেন

এক গণ্ডগ্রামে—বিশ্রাম করিলেন

এখনও তার খ্যাতি আছে

বিশ্রাম করেছিলেন বলে—এখনও তার খ্যাতি আছে
শ্রীবিশ্রামতলা বলে—এখনও তার খ্যাতি আছে

সেখানে হতে চলিলেন প্রভু
ভ্রমণ করিলেন

তিনদিনে রাঢ়দেশে—ভ্রমণ করিলেন
বক্রেশ্বর-আদি-স্থানে—ভ্রমণ করিলেন

সন্ন্যাসের পঞ্চমদিনে
নিতাই-সুন্দর কৌশল করি’
আনিলেন প্রভুকে গঙ্গাতীরে

এই যমুনাতীরে যাব বলে—আনিলেন প্রভুকে গঙ্গাতীরে
ভক্ত-বিরহ নিবারণ-তরে—আনিলেন প্রভুকে গঙ্গাতীরে

হয়ে গঙ্গাতীরে উপনীত
শুধালেন প্রাণ গৌরহরি

শ্রীগঙ্গাদর্শন করি’—শুধালেন প্রাণ গৌরহরি

এই কি যমুনা হয়

নিতাই বলে হয় হয়—এই কি যমুনা হয়

অবগাহন করলেন প্রভু
উঠি তীরেতে দাঁড়ালেন
এদিকে আগে পাঠায়েছেন সংবাদ

নিতাই,–শান্তিুপুরে সীতানাথে—এদিকে আগে পাঠায়েছেন সংবাদ

আমি লয়ে যেতেছি

প্রাণ-গৌরাঙ্গে তোমার ঘরে—আমি লয়ে যেতেছি

তুমি এস গঙ্গাতীরে
তাই ত এসেছেন

সীতানাথ নৌকা লয়ে—তাই ত এসেছেন

বুঝিতে পারিলেন প্রভু

সীতানাথে প্রশ্ন করি’—বুঝিতে পারিলেন প্রভু

নিতাই ছলনা করেছে
গঙ্গাতীরে লয়ে এসেছে

যমুনাতীর বলে—গঙ্গাতীরে লয়ে এসেছে

ব্যাকুল হইলেন গৌরহরি
কিছুক্ষণে আপনায় সম্বরিলেন

সীতানাথের ব্যাকুলতা দেখি’—কিছুক্ষণে আপনায় সম্বরিলেন

তখন সীতানাথ পরালেন
শুষ্ক-বসন পরালেন

সিক্ত-বসন ত্যাগ করায়ে—শুষ্ক-বসন পরালেন

আনিলেন তাঁরে শান্তিপুরে
আসি’,– মিলিলেন সব নদীয়াবাসী

শচীমাতা সঙ্গে লয়ে—আসি’,–মিলিলেন সব নদীয়াবাসী

সকলে আসিয়া মিলিল

আর যে ভকত যেখানে ছিল—সকলে আসিয়া মিলিল
গৌর-বিরহে জর্জ্জরিত—সকলে আসিয়া মিলিল

প্রভু,–সবারে প্রীতি-সম্ভাষা কৈলেন
সবাই ত ব্যাকুল হলেন

সন্ন্যাস-স্বরূপ দেখে—সবাই ত ব্যাকুল হলেন

কিছু-পরে স্থির হলেন

দেখি নব-মাধুরী—কিছু-পরে স্থির হলেন

শচীমাতা নিলেন ভার

রন্ধন করিবার—শচীমাতা নিলেন ভার

এইরূপে কিছুদিন গেল

শান্তিপুরে পরমানন্দে—এইরূপে কিছুদিন গেল

কিছুদিন-পরে গৌরহরি
শচীমাতার আজ্ঞা লয়ে
চলিলেন নীলাচলপুরে

অন্তরঙ্গ,–কয়েকজন সঙ্গে করে—চলিলেন নীলাচলপুরে
‘অন্তরঙ্গ,–কয়েকজন সঙ্গে করে’—
শ্রীনিত্যানন্দ-আদি—অন্তরঙ্গ,–কয়েকজন সঙ্গে করে

চলিলে নীলাচলপুরে
নীলাচলে যাবার পথে
নিতাই,–করলেন প্রভুর দণ্ড ভঙ্গ

না জানি কি আবেশে—নিতাই,–করলেন প্রভুর দণ্ড ভঙ্গ

দণ্ড করলেন তিন-খণ্ড
অনুভব কর ভাই

শ্রীগুরু-চরণ হৃদে ধরে—অনুভব কর ভাই

কেন করলেন তিন-খণ্ড

নিতাই আমার গৌরহরির দণ্ড—কেন করলেন তিন-খণ্ড

প্রাণে প্রাণে এই ত জাগে

শ্রীগুরুদেবের কৃপায়—প্রাণে প্রাণে এই ত জাগে

নিতাই মনে মনে ভবে
দণ্ড বিধি ছিল

সত্য-ত্রেতা-দ্বাপরে—দণ্ড বিধি ছিল
সে তিনযুগের জীব যোগ্য জেনে—দণ্ড বিধি ছিল

এবার আবার দণ্ড কেন

নিতাই মনে মনে ভাবে—এবার আবার দণ্ড কেন
অযোগ্য কলিজীব—এবার আবার দণ্ড কেন
এ যে কৃপার যুগ—এবার আবার দণ্ড কেন

তাই,–করলেন প্রভুর দণ্ড ভঙ্গ
দেখাইলেন রুষ্টভাব

বাহিরে প্রাণ-গৌরহরি—দেখাইলেন রুষ্টভাব

কিছুদূর যেতে যেতে
দূর-হতে দেখতে পেলে

কমলাপুরে এসে—দূর-হতে দেখতে পেলেন
শ্রীমন্দিরের ধ্বজা—দূর হতে দেখতে পেলেন

নিতাই হলেন ভাবাবিষ্ট

শ্রীমন্দিরের ধ্বজা দেখে—নিতাই হলেন ভাবাবিষ্ট
এই সুযোগে গৌরসুন্দর চলিলেন একেশ্বর

‘‘দণ্ডভক্ত করি ছলা, আগে পঁহু চলি গেলা,
ভেটিবারে নীলাচল-নাথ।’’

বড় অন্তরঙ্গ কথা
গেলেন প্রভু আগে চলে

সার্ব্বভৌমে উদ্ধারিবে বলে—গেলেন প্রভু আগে চলে

প্রাণগৌরাঙ্গে সঁপে দিলেন

গোপীনাথ-আচার্য্যের করে—প্রাণগৌরাঙ্গে সঁপে দিলেন
গোপীনাথ-আচার্য্যের করে’—
আপনার সম্বন্ধী—গোপীনাথ—আচার্য্যের করে

প্রাণগৌরাঙ্গে সঁপে দিলেন
নিত্য দর্শন করায়ো

ইহাকে সঙ্গে করে তুমি—নিত্য দর্শন করায়ো
জগন্নাথের শ্রীমন্দিরে—নিত্য দর্শন করোয়ো

কিছুপরে গৌরহরি
গেলে কাশীমিশ্রপুরী
আদরেতে লয়ে গেলেন

সেখানে ছিলেন কাশীমিশ্র—আদরেতে লয়ে গেলেন
নিজঘরে প্রাণগৌরাঙ্গে—আদরেতে লয়ে গেলেন

প্রাণগৌরাঙ্গের হইল বসতি

ভাগ্যবান কাশীমিশ্রালয়ে—প্রাণগৌরাঙ্গের হইল বসতি
নিজগণ-সংহতি—প্রাণগৌরাঙ্গের হইল বসতি

কিছুদিন পরেতে
গেলেন ঠাকুর হরিদাস
তারে দিলেন নির্জ্জনবাস

তার অভিমত জেনে—তারে দিলেন নির্জ্জনবাস
কাশীমিশ্রাবাসের কাছে—তারে দিলেন নিজ্জনবাস

আজও তার খ্যাতি আছে

সিদ্ধ-বকুল বলে—আজও তার খ্যাতি আছে

নিগূঢ় গৌরাঙ্গ-লীলা
নীলাচলে চার ব্রহ্ম খেলে
সচল ব্রহ্ম গৌরহরি
অচল ব্রহ্ম জগন্নাথ
দুই স্বরূপের দুই দান

কলিজীবের দুঃখ ঘুচাবার তরে—দুই স্বরূপের দুই দান

সচল-ব্রহ্ম দানে নামব্রহ্ম
অচল-ব্রহ্ম দানে অন্নব্রহ্ম
এই চার-ব্রহ্মের বিহার-ভূমি

মধুর-নীলাচল মানি—এই চার-ব্রহ্মের বিহার-ভূমি

অপরূপ রহস্য ভাই রে

মধুর-শ্রীনীলাচলের—অপরূপ রহস্য ভাই রে

গৌর আমার নিগম-নিগূঢ়

তার,–সম্বন্ধ-তত্ত্ব সকলি নিগূঢ়—গৌর আমার নিগম-নিগূঢ়

তার,–বিহার-ভূমি নিগম-নিগূঢ়
ব্রজের নিভৃত-কুঞ্জের নিভৃত-কুঞ্জ

যেখানে গৌর-স্বরূপ প্রকট—ব্রজের নিভৃত-কুঞ্জের নিভৃত-কুঞ্জ

যেখানে গৌর-স্বরূপ প্রকট

মহা,–রাসবিলাসের পরিণতিতে—যেখানে গৌর-স্বরূপ প্রকট
মহাভাব রসরাজ এক হয়ে—যেখানে গৌর-স্বরূপ প্রকট
আমি তুমি ভুলে গিয়ে—যেখানে গৌর-স্বরূপ প্রকট

সেই,–নিভৃত-কুঞ্জের নিভৃত-কুঞ্জ
এবে নবদ্বীপ-রূপে বেকত
সেখানে,–প্রকট কেবল স্বরূপখানি

ব্রজের,–নিভৃত-কুঞ্জের নিভৃত-কুঞ্জ—সেখানে,–প্রকট কেবল স্বরূপখানি
সেখানে স্বরূপের খেলা নাই—সেখানে,–প্রকট কেবল স্বরূপখানি
মধুর,–নদীয়া তার খেলার ভূমি—সেখানে,–প্রকট কেবল স্বরূপখানি

মধুর-নদীয়া হয়

মহা-মহারাস-রঙ্গালয়—মধুর-নদীয়া হয়

সেই নদীয়ার নিভৃত-উদ্যান

গৌরের নিগূঢ়-বিহার-স্থান—সেই নদীয়ার নিভৃত-উদ্যান

ধরে নীলাচল নাম

নদীয়ার গুপ্ত উদ্যান—ধরে নীলাচল নাম

নীলাচল নদীয়ার গুপ্ত-উদ্যান

নদীয়া বিনে ভেবো না আন—নীলাচল নদীয়ার গুপ্ত উদ্যান

সেই উদ্যানের ঘর চোরা

সে সে নিভৃত-গম্ভীরা—সেই উদ্যানের ঘর চোরা

চোরা ঘর তারে বলে

অমূল্য-রতন যাতে থাকে—চোরা ঘর তারে বলে

তারে চোরা কুটরী বলে
তোমরা মালঘর বল

ব্যবহারিক-জগতে—তোমরা মাল-ঘর বল

সেই চোরা-কুটরী গম্ভীরাতে

অমূল্য-রতন প্রাণগৌর থাকে—সেই চোরা-কুটরী গম্ভীরাতে

মধুর গম্ভীরা-বিহার

নিগম-নিগূঢ়-সার—মধুর গম্ভীরা-বিহার
কি জানি কি বলব আর—মধুর গম্ভীরা-বিহার

যা বলায় তাই বলি বাণী

শ্রীগুর অহৈতুকী-কৃপার খনি—যা বলার তাই বলি বাণী

জাগিয়া রজনী পোহায়

গম্ভীরা-ভিতরে প্রাণগোরা-রায়—জাগিয়া রজনী পোহায়

কাঁদিয়া রজনী পোহায়

রাধাভাবে প্রাণ-গোরা-রায়—কাঁদিয়া রজনী পোহায়
স্বরূপ-রামরায়ে কণ্ঠ ধরি’—কাঁদিয়া রজনী পোহায়

গৌর-কিশোরী ভাসে নয়ন-জলে

কই,–এল না এল না বলে—গৌর-কিশোরী ভাসে নয়ন-জলে

ভোগ করে নিশিদিশি

রাধাভাবে মত্ত গোরাশশী—ভোগ করে নিশিদিশি

‘‘চণ্ডীদাস বিদ্যাপতি, রায়ের নাটক-গীতি,
কর্ণামৃত শ্রীগীতগোবিন্দ।
‘‘স্বরূপ-রামানন্দ-সনে মহাপ্রভু রাত্রি-দিনে,
গায় শুনে পরম-আনন্দ।।’’

কৃষ্ণ বলে কাঁদে সদা

আপনি হইয়ে রাধা—কৃষ্ণ বলে কাঁদে সদা

কি বলব সে লীলার কথা

একদিন, –‘‘শয়ন-মন্দিরে গোরা রায়।
কৃষ্ণের বিরহভরে, মন্দিরে রহিতে মারে,
বাহির যাইতে মন ধায়’’।।

সেই দশা হল রে

ভাবনিধি-প্রাণগৌরাঙ্গের—সেই দশা হল রে

‘‘কৃষ্ণের বিরহে রাধা, যেন উৎকণ্ঠিত সদা,
শ্রী,–কৃষ্ণ-বেণু শুনি বনে যান।’’
সেইমতো আচম্বিতে, বংশী পাইয়া শুনিতে

গোকুল-মঙ্গল-বংশী বাজল বলে

সেহেতু বাহিরে যেতে চান।’’

অপরূপ অনুরাগের খেলা
অপূরব অনুরাগের খেলা

পূরব হতেও অধিক বিকাশ—অপূরব অনুরাগের খেলা

তাই এখন শুন ভাই

পূরব-অনুরাগে যা শুন নাই—তাই এখন শুন ভাই

অপূরব অনুরাগের খেলা

‘‘তিন-দ্বার আছে রুদ্ধ, তিন ভিত্তি উচ্চ-উর্দ্ধ,’’

অনুরাগের কি মহাবল

গৌরাঙ্গ-কিশোরীর–অনুরাগের কি মহাবল

‘‘তাহা লঙ্ঘে আবেশের বলে।’’

এ অনুরাগ কি আগে প্রকাশ ছিল

গৌর-কিশোরীতে যা প্রকাশ হল—এ অনুরাগ কি আগে প্রকাশ ছিল

‘‘তাহা লঙ্ঘে আবেশে বলে।
তেলেঙ্গাগাই-এর মাঝে, দেখি গোরা রসরাজে,
পড়িয়োছে শ্বাস নাহি চলে।।’’

সবাই ব্যাকুলিত চিত

স্বরূপাদি প্রিয়গণ—সবাই ব্যাকুলিত চিত
গম্ভীরায় নাই শচীসুত—সবাই ব্যাকুলিত চিত

স্বরূপাদি ইতি উতি ধায়

প্রভু আমাদের গেল কোথায়—স্বরূপাদি ইতি উতি ধায়

‘‘ভাব বুঝা নাহি যায়, প্রভু দেখি কূর্ম্মপ্রায়,
অঙ্গ সব সঙ্কুচিত অঙ্গে।
অন্বেষিয়া ভক্তগণ, দীপ জ্বালি দরশন,
করে কূর্ম্মাকৃতি-শ্রীগৌরাঙ্গে।।’’

কূর্ম্মাকৃতি প্রাণ-গোরা

মহাভাবে হয়ে ভোরা—কূর্ম্মাকৃতি প্রাণ-গোরা

তখন স্বরূপ-রামরায়

প্রভু দেখি’ কূর্ম্মাকৃতি–তখন স্বরূপ-রামরায়

প্রসঙ্গ করি’ মনের মত

প্রাণগৌরাঙ্গে কৈল শান্ত—প্রসঙ্গ করি’ মনের মত

অদ্ভুত বিহার রে

শ্রী,–নীলাচলে প্রাণগৌরাঙ্গের—অদ্ভুত বিহার রে

এসেছেন গৌর-রূপ ধরে

অনাদির আদি শ্রীগোবিন্দ—এসেছেন গৌর-রূপ ধরে
রাধা,–ভাব-কান্তি ধরি’ অঙ্গীকারে—এসেছেন গৌর-রূপ ধরে
মধুর-নীলাচল হরে—এসেছেন গৌর-রূপ ধরে
মহামাধুরী ভোগের তরে—এসেছেন গৌর-রূপ ধরে

গৌর-স্বরূপের আশ মিটাতে

শ্রীরাধিকা—ভাবিত-মতি—গৌর-স্বরূপের আশ-মিটাতে

আগে হয়েছেন জগন্নাথ
শ্রীজগন্নাথের বদন হেরে
গৌর মাতি’ রাধাভাবে
দেখে মুরীলরঞ্জিত-বদন

তার প্রাণের বংশীবদন—দেখে মুরলী-রঞ্জিত-বদন

একদিন আমার গৌরহরি
করিছেন জগন্নাথ দর্শন

শ্রীরাধিকা-ভাবিত মতি—করিছেন জগন্নাথ দর্শন
শ্রী-জগন্নাথের শ্রীমন্দিরে—করিছেন জগন্নাথ দর্শন
গরুড়স্তম্ভের পার্শে দাঁড়ায়ে—করিছেন জগন্নাথ দর্শন

‘‘গৌর-সুন্দর নটরাজ।
শ্রীল জগন্নাথ আগে, বাড়াইয়া অনুরাগে,
নাচে পরি’ ভাবরত্ন-সাজ।।’’

ভাবভূষণে বিভূষিত

ভাবনিধি শচীসুত—ভাব-ভূষণে বিভুষিত

‘‘বৈবর্ণ্য স্তব্ধতা আর, গদ গদ বাক্যোচ্চার,’’

স্বর্ণবর্ণ হল বিবর্ণ

জগন্নাথের বদন চেয়ে—স্বর্ণ-বর্ণ হল বিবর্ণ
না জানি কি বলতে বলতে—স্বর্ণ বর্ণ হল বিবর্ণ

জ জ জ জ গ গ করে

গৌর আমার,–জগন্নাথ বলতে নারে– জ জ জ জ গ গ করে

‘‘বৈবর্ণ্য স্তব্ধতা আর, গদ গদ বাক্যোচ্চার,
কম্প অশ্রু পুলক সঘর্ম্ম।
এই সপ্ত সাত্ত্বিক ভাব, আর দুই অনুভাব,
হাস্য নৃত্য সব প্রেমধর্ম্ম।।’’

গৌর-অঙ্গে হল বেকত

সাত্ত্বিক বিকার যত—গৌর-অঙ্গে হল বেকত

বিরাম নাই বিরাম নাই

অবিরল নয়ন-ধারায়—বিরাম নাই বিরাম নাই

যেন,–পিচ্‌কারী-জলযন্ত্রধারা

প্রাণ-গৌরাঙ্গের নয়ন-ধারা—যেন,–পিচ্‌কারী-জলযন্ত্রধারা
এক এক ধারায় শত শত ধারা—যেন,–পিচ্‌কারী-জলযন্ত্রধারী

অপরূপ প্রকাশ রে

শ্রীগৌরাঙ্গের নয়ন ধারার—অপরূপ প্রকাশ রে

নিরন্তর প্রবাহিত
চারিদিকে বইছে ধারা

সম্মুখে পশ্চাতে ডাহিনে বামে—চারিদিকে বইছে ধারা
চক্রের মত ভ্রমে গোরা—চারিদিকে বইছে ধারা

বিরাম নাই বিরাম নাই
ভাসিল শ্রীমুখ-কমল

অবিরল নয়নধারায়—ভাসিল শ্রীমুখ-কমল

পড়িল শ্রীহৃদি-কমলে

মুখ-কমল ভাসাইয়ে—পড়িল হৃদি-কমলে

পড়িল চরণ-কমলে

হৃদি-কমল ভাসাইয়ে—পড়িল চরণ-কমলে

নিম্ন খাল পূর্ণ কৈল

চরণ-কমল পাখালিয়ে—নিম্ম-খাল পূর্ণ কৈল
গরুড়-স্তম্ভের পার্শ্বদেশের—নিম্ম-খাল পূর্ণ কৈল

পাষাণ গলিয়া গেল

সেই গৌরের পদ-পরশে—পাষাণ গলিয়া গেল

অদ্যাপিও স্মৃতি বিরাজিছে

শ্রী,–জগন্নাথের শ্রীমন্দিরে—অদ্যাপিত স্মৃতি বিরাজিছে
পাষাণে শ্রীপদচিহ্ন—অদ্যাপিও স্মৃতি বিরাজিছে

প্রাণভরে বল ভাই তোরা

পাষাণ-গলান-গোরা—প্রাণভরে বল ভাই তোরা

(মাতন)
হায় রে,–কিছুই দেখতে পেলাম না রে

সেই পাষাণ-গলান-লীলা—হায় রে,—কিছুই দেখেতে পেলাম না রে
প্রাণগৌরাঙ্গের,–কীর্ত্তন-নটন-লীলা—হায় রে,–কিছুই দেখতে পেলাম না রে
কীর্ত্তন-নটন-লীলা’—
শ্রী—জগন্নাথের রথের আগে—কীর্ত্তন-নটন-লীলা

কিছুই দেখতে পেলাম না রে

সচল-অচলের খেলা—কিছুই দেখতে পেলাম না রে

সচল-অচলের খেলা
দুজনে দুজনায় ভোগ করে

সচল আর অচল—দু’জনে দু’জনায় ভোগ করে

গৌর নাচে রাধাভাবে

শ্রী,–জগন্নাথের বদন হেরে—গৌর নাচে রাধাভাবে
পরাণ-নাথ পাইনু বলে—গৌর নাচে রাধাভাবে

আর,–জগন্নাথে ভোগ দিতে

বিহরে গৌরাঙ্গে-রূপেতে—আর,-জগন্নাথে ভোগ দিতে

শ্রীজগন্নাথ-রূপ হয়

প্রেমের অস্ফুট-কলিকা—শ্রীজগন্নাথ-রূপ হয়

সেই,–মহাভাব-বিকার-মূর্ত্তি

ব্রজ-রস-নির্য্যসের কলি—সেই,–মহাভাব-বিকার-মূর্ত্তি

গোরা-রসের বদন হেরি’

মহাভাব,–প্রেমরস-ঘনাকৃতি—গোরা-রসের বদন হেরি’
যুগল-উজ্জ্বল,—রস-নির্য্যাস-মূরতি—গোরা-রসের বদন হেরি’
রাই-কানু একাকৃতি—গোরা-রসের বদন হরি,

আস্বাদে যুগল-মাধুরী

জগন্নাথে হেরি’ গৌরহরি—আস্বাদে যুগল-মাধুরী

রথের আগে গৌর নেচে যায়

যুগল-মাধুরী বিকাশ করে—রথের আঘে গৌর নেচে যায়
দেখি,’—মুগ্ধ জগন্নাথ-শ্যমরায়—রথের আগে গৌর নেচে যায়

কখনও ত দেখে নাই

জগন্নাথ-বংশীধারী—কখনও ত দেখে নাই
রাধা-সঙ্গে,–মিললে তার কি মাধুরী—কখনও ত দেখে নাই

জগন্নাথে ভাবে অচল হল

দেখি’,–মহাভাবনিধির বদন-কমল—জগন্নাথ ভাবে অচল হল
কোন-মতে না চলিল—জগন্নাথ ভাবে অচল হল

তখন,–আগুসরি যায় গৌরহরি
তারই ত বটে গরজ-বালাই

ত্বরায় বঁধু যাতে কুঞ্জে যায়—তারই ত বটে গরজ বালাই

জগন্নাথের,–ভাবের অচলতা কেড়ে নিল

বঁধু,–ত্বরা করি’ চল বলে—জগন্নাথের,–ভাবের অচলতা কেড়ে নিল

তখন,–ধীরে ধীরে যায় রে

জগন্নাথ ক্ষুদ্ধ-লুব্ধ-মনে—তখন,–ধীরে ধীরে যায় রে

মনে মনে ভাবে রে
তবে,–পূরে আমার মনের আশ

যদি,–গৌর-পরিকর-মাঝে হয় বাস—তবে,–পূরে আমার মনের আশ

নিসন্তর ভোগ করি

ঐ,–মিলিত-মাধুরী-গৌরহরি—নিরন্তর ভোগ করি

অপরূপ ভোগময়-লীলা

সচল-অচলের খেলা—অপরূপ ভোগময়-লীলা

হায় রে,–কিছুই দেখতে পেলাম না
নিশিদিশি জ্বলছে হিয়ায়

সেই,–লীলা-অদর্শন-শেল—নিশিদিশি জ্বলছে হিয়ায়

এই,–কর সবে কৃপা করি’

নদীতীরবাসী নর-নারী—এই,–কর সবে কৃপা করি’

তোমরা,–ভাগ্যবান ভাগ্যবতী
বিহার-ভূমিতে পেয়েছ বসতি

প্রভুনিতাই-প্রাণগৌরাঙ্গের—বিহার-ভূমিতে পেয়েছ বসতি

পাগলা-নিতাই নেচে গেছে

এই,–সুরধুনীর তীরে তীরে—পাগলা-নিতাই নেচে গেছে
গৌরাঙ্গ-নাম-প্রেম যেচে—পাগলা-নিতাই নেচে গেছে

সবে মিলে কৃপা কর
যেন,–প্রাণে প্রাণে ভোগ করি

শ্রীগুরু-চরণ হৃদে ধরি’—যেন,–প্রাণে প্রাণে ভোগ করি
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য বলতে–যেন,–প্রাণে প্রাণে ভোগ করি
নিতাই-জড়িত গৌরহরি—যেন,–প্রাণে প্রাণে ভোগ করি

–প্রাণে প্রাণে ভোগ করি মোরা

নিতাই-রমণ গোরা–প্রাণে প্রাণে ভোগ করি মোরা
‘নিতাই-রমণ গোর’—
সঙ্কীর্ত্তন-রাস-রঙ্গে—নিতাই-রমণ গোরা

এই,–ভোগ-রহস্য হৃদে ধরে

শ্রীগুরু-চরণে মাথা দিয়ে—এই,–ভোগ-রহস্য হৃদে ধরে

যেন,–পাগল হয়ে বেড়াই মোরা

ভাই ভাই একপ্রাণে—যেন,–পাগল হয়ে বেড়াই মোরা

যারে দেখি তারে বলি

‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।
‘‘নিতাই –গৌর-হরিবোল, হরিবোল, হরিবোল, হরিবোল।।’’



অভিসার আক্ষেপানুরাগ কুঞ্জভঙ্গ খণ্ডিতা গীতগোবিন্দ গোষ্ঠলীলা দানলীলা দূতী ধেনুবৎস শিশুহরণ নৌকাখন্ড পূর্বরাগ বংশীখণ্ড বিপরীত বিলাস বিরহ বৃন্দাবনখন্ড ব্রজবুলি বড়াই বড়াই-বচন--শ্রীরাধার প্রতি মাথুর মাধবের প্রতি দূতী মান মানভঞ্জন মিলন রাধাকৃষ্ণসম্পর্ক হীন পরকীয়া প্রেমের পদ রাধা বিরহ রাধিকার মান লখিমাদেবি শিবসিংহ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন শ্রীকৃষ্ণের উক্তি শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগ শ্রীকৃষ্ণের মান শ্রীকৃষ্ণের স্বয়ংদৌত্য শ্রীগুরু-কৃপার দান শ্রীরাধা ও বড়াইয়ের উক্তি-প্রত্যুক্তি শ্রীরাধার উক্তি শ্রীরাধার প্রতি শ্রীরাধার প্রতি দূতী শ্রীরাধার রূপবর্ণনা শ্রীরাধিকার পূর্বরাগ শ্রীরাধিকার প্রেমোচ্ছ্বাস সখীতত্ত্ব সখীর উক্তি সামোদ-দামোদরঃ হর-গৌরী বিষয়ক পদ