নরকাসুরের সেনাপতি। নরকাসুরের রাজধানী প্রাগ্জ্যোতিষপুরকে রক্ষা করার সমস্ত দায়িত্ব এই মুর দানবের উপর ন্যস্ত ছিল। নরকাসুর যে ষোল হাজার একশত সুন্দরী স্ত্রীকে অপহরণ করে এনেছিলেন, তাঁদের বসবাসের জন্য প্রাগ্জ্যেতিষপুরে মণি পর্বতের উপর অলকা নামে এক নগর নির্মিত হয়েছিল। মুর সেই নগরীরও শাসনকর্তা ছিলেন। অপহৃতাদের পাহারা দেবার জন্য যে সেনা নিযুক্ত ছিল, তারাও মুর দানবেরই অধীনস্থ কর্মচারী ছিল। বিভিন্ন পুরাণে মুরের প্রভাব প্রতিপত্তির এই যে বিবরণ পাওয়া যায়, তা থেকেই ধারণা হয় মুর নরকাসুরের কতটা বিশ্বাসভাজন ছিলেন এবং নরকাসুর তাঁর বাহুবলের উপর কতখানি আস্থা রাখতেন।
নরকাসুর একবার দেবমাতা অদিতির কুণ্ডল হরণ করেন। নবকাসুরের নানা অত্যাচারে দেব-মানব সকলেই অতিষ্ট ছিলেন, কিন্তু এই ঘটনা দেবতাদের পক্ষে অসহনীয় হয়ে উঠল। দেবরাজ ইন্দ্র নরকাসুর বধের জন্য কৃষ্ণকে অনুরোধ করলেন। কৃষ্ণ সত্যভামাকে সঙ্গে নিয়ে গরুড়-পৃষ্ঠে আরোহণ করে প্রাগ্জ্যোতিষপুরে উপস্থিত হলেন। কৃষ্ণ প্রাগ্জ্যোতিষ পুরের নানা অস্ত্রশস্ত্র সমন্বিত সুরক্ষা প্রাচীর ধ্বংস করলে মুরাসুর তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করলেন। ভাগবত পুরাণে বর্ণিত হয়েছে, মুর দানবের পাঁচটা মাথা ছিল। সেই পাঁচ মুখে সে গরুড়কে গ্রাস করতে এগিয়ে এল। কিন্তু গরুড়ের কোনও ক্ষতিই সে করতে পারল না। কৃষ্ণ এবং মুর দানবের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ হল। যুদ্ধে মুর কৃষ্ণের হাতে নিহত হলেন।
মুর দানবকে হত্যা করার পর মুরের পুত্ররা পিতৃ হত্যার প্রতিশেআধ নেবার জন্য কৃষ্ণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এলেন। মুরের সাত পুত্র (হরিবংশ পুরাণ মতে দশ পুত্র) যুদ্ধে কৃষ্ণের হাতে নিহত হন। বিষ্ণুপুরাণে উল্লিখিত হযেছে মুর নাকি সাত হাজার পুত্র সন্তানের পিতা ছিলেন। কৃষ্ণের হাতে তাঁরা সকলেই নিহত হন। মুর দানবকে হত্যা করেছিলেন বলেই ভগবান কৃষ্ণ মুরারি (মুর দানবের অরি অর্থাৎ শত্রু) নামেও খ্যাত। মহাভারত এবং পুরাণের কোনও কোনও শ্লোকে মুরকে মুরু নামেও উল্লেখ করা হয়েছে।