যদি হরিস্মরণে সরসং মনো
যদি বিলাসকলাসু কুতূহলম্।
মধুরকোমলকান্তপদাবলীং
শৃণু তদা জয়দেবসরস্বতীম্।।
–গীতগোবিন্দ, সামোদ-দামোদরঃ

জয়দেব গীতগোবিন্দের প্রথম সর্গে লিখেছিলেন, যদি হরি স্মরণে মনকে সরস করার বাসনা থাকে, যদি তাঁর বিলাসকলা জানবার কৌতুহল হয় তাহলে জয়দেব রচিত এই মধুর কোমলকান্ত পদাবলী শ্রবণ করুন।

আমাদের বাসনাও প্রায় অনুরূপ, হরিভক্তি পরায়ণ ভক্ত অথবা হরিবিলাস রসাস্বাদনকামী ভাবুক রসিক সকলের জন্যই আমাদের এই পদাবলী কীর্তন সংকলন। এবং এর থেকে আরো কিছুদূর অগ্রসর হয়ে বাংলার সুপ্রাচীন এই সঙ্গীত-সংস্কৃতির ধারাকে গবেষকের চোখ দিয়ে দেশ-কাল-ধর্ম-আচরণের নিরিখে কেউ যদি দেখতে চান , জানতে চান এর উৎস ও বিবর্তনের ধারাটিকে তাহলে তাঁর জন্যও আমরা হাজির।
আমাদের মূল কেন্দ্র পদাবলী কীর্তন গান গুলি। সুদীর্ঘকাল ধরে চলে আসা কীর্তন গান গুলি, যার কিছু লিখিত কিছু বা কেবল কণ্ঠে কণ্ঠে আজও বেঁচে আছে, প্রতিদিন পুণর্জন্ম লাভ করছে, সেই সবগুলিকেই প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে অন্তর্জাল মাধ্যমে ধরে রেখে আপামর মানুষের নাগালে নিয়ে আসতে চাই আমরা। গানের বাণী এবং সেই বাণীর অন্তর্গত ভাবটি আমরা যেমন বুঝেছি রসিকের চোখ দিয়ে, তত্ত্বের সাহায্য নিয়ে, তা আমরা তুলে ধরতে চেয়েছি কীর্তন অংশে। সেই সঙ্গে গানের রাগ, তাল, রসপর্যায় যতদূর আমরা জানতে পেরেছি তাও জানাচ্ছি। কিন্তু গান তো কেবল লিখিত বাণী বা রাগ তাল বিশিষ্ট স্বরলিপি নয়। গীত হলেই তার প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয়। তাই আমাদের চেষ্টা থাকবে যতদূর সম্ভব গানগুলির শ্রাব্য রূপ অডিও ফাইল হিসেবে সংযোজিত করার। তবে যে পদগুলির শ্রাব্য রূপ আমরা পাবো না তাও আমরা লিখে রাখছি, ভবিষ্যতের জন্য। রাগ ও তাল মাথায় রেখে কেউ তো সে বাণীতে পুণরায় প্রাণ প্রতিষ্ঠাও করতে পারেন !

কীর্তনগুলিকে আবর্তন করে যা কিছু তথ্য ও তত্ত্ব পাওয়া সম্ভব তার সবই থাকছে তথ্য অংশে। কীর্তনের ইতিহাস, পদকর্তাদের পরিচয়, গৌড়ীয় বৈষ্ণব তত্ত্বের বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক অংশ, কীর্তনের ধর্মীয়,ঐতিহাসিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক গুরুত্ব এবং প্রবহমান বাংলা সাহিত্যে ও সংস্কৃতিতে এর প্রভাব এই জাতীয় আলোচনায় আমাদের তথ্য সম্বৃদ্ধ হবে।

এইবার আমাদের প্রাণের কথাটি বলি, এটি একটি জায়মান প্রকল্প। আমরা শুধু আমরা নই। আমরা চাই আপনারাও আমাদের সঙ্গে এসে যোগ দিন। না, শুধু পাঠক হিসেবে নয়। আপনারা তথ্য নিয়ে, গান নিয়ে, বক্তব্য নিয়ে আসুন। এই ওয়েবসাইটে আপনাদের সংযোজন আপনাদের নামেই প্রকাশিত হবে। আমাদের স্বপ্ন বাংলা কীর্তনের ধারাটিকে আরো সজীব আরো প্রাণবন্ত করে তোলা। আসুন, আমরা সবাই সেই স্বপ্নটিকে সফল করে তুলি।

একবার হরি হরি বলো রে…

গহন কুসুম কুঞ্জমাঝে যে মৃদুল মধুর বংশীধ্বনি শোনা যায়, তা শুধু বনমাঝে নয় আমাদের মনমাঝেও বেজে উঠুক…