কুলীনগ্রাম বর্ধমান জেলায় ৷ এই গ্রামের শ্রীমালাধর বসু শ্রীকৃষ্ণবিজয় রচনা করেন ৷ শ্রীকৃষ্ণবিজয় শ্রীমদ্ভাগবতের দশম ও একাদশ স্কন্ধের অনুবাদ ৷
মহাপ্রভু বলিয়াছিলেন —
গুণরাজ খান কৈল শ্রীকৃষ্ণবিজয় ৷
তার মধ্যে বাক্য এক আছে রসময় ৷৷
নন্দের নন্দন কৃষ্ণ মোর প্রাণনাথ ৷
এই বাক্যে বিকাইনু বসু বংশের হাত ৷৷
কোন মুসলমান গৌড়েশ্বর মালাধরকে গুণরাজ খান উপাধি দিয়াছিলেন ৷ মনে হয়; গৌড়-দরবারের সঙ্গে ইঁহার বিশেষ সম্বন্ধ ছিল ৷ গুণরাজের পুত্র—শ্রীলক্ষ্মীকান্ত বসু, উপাধি সত্যরাজ খান ৷ সত্যরাজের পুত্র রামানন্দ বসু প্রসিদ্ধ পদকর্তা ৷ একবার শ্রীজগন্নাথ-দেবকে রথে তুলিবার সময় (পাণ্ডুবিজয়-যাত্রার) পট্টডোরী ছিঁড়িয়া যায় ৷ মহাপ্রভু সে ছিন্নডোর পিতাপুত্রের হাতে দিয়া বলেন— আজ হইতে তোমরা পট্টডোরীর যজমান হইলে, প্রতি বৎসব খুব শক্ত পট্টডোরী তৈয়ারী করিয়া লইয়া আসিও ৷
এক বৎসব পিতাপুত্র মহাপ্রভুকে জিজ্ঞাসা করেন— আমাদের করণীয় কি, আদেশ করুন ৷ মহাপ্রভু বলিলেন— নামকীর্তন কর, বৈষ্ণবসেবা কর, অভীষ্ট সিদ্ধ হইবে ৷ প্রশ্ন হইল— বৈষ্ণব চিনিব কিরূপে? উত্তর— একবার মাত্র যাহার মুখে কৃষ্ণনাম শুনিবে সেই বৈষ্ণব, তাহারই সেবা করিও ৷ দ্বিতীয় বৎসর কে বৈষ্ণব এই প্রশ্নের উত্তরে মহাপ্রভু বলিলেন— যাহারা মুখে নিরন্তর কৃষ্ণনাম শুনিবে সে-ই বৈষ্ণব ৷ তৃতীয় বৎসর বলিলেন,—
যাহারে দেখিলে মুখে স্ফুরে কৃষ্ণনাম ৷
তাহারে জানিও তুমি বৈষ্ণব প্রধান ৷৷

যাহাকে দেখিবামাত্র আপনাআপনি মুখ দিয়া কৃষ্ণনাম উচ্চারিত হয়, কৃষ্ণ-কৃষ্ণ বলিতে প্রচুর আনন্ত হয়, তাহাকেই বৈষ্ণব বলিয়া জানিও ৷ ইঁহারা অর্থশালী ছিলেন, প্রতি বৎসর বহু লোকের সঙ্গে রথযাত্রার সময়ে পুরী যাইতেন এবং রথাগ্রে কীর্তন নর্তন করিতেন ৷ কুলীনগ্রামের অন্ত্যজগণও কৃষ্ণনাম করিত ৷

কুলীনগ্রামের ভাগ্য কহনে না যায় ৷
শূকর চরায় ডোম সেহ কৃষ্ণ গায় ৷৷