কীর্তনীয়া যদুনন্দন দাস বর্ধমান জেলার কাটোয়ার নিকটবর্তী বিরাহিমপুরে জন্মগ্রহণ করেন ১২৭৯ সালের ৪ঠা মাঘ ৷ পিতার নাম নবদ্বীপচন্দ্র দাস; মাতার নাম চিন্তামণি দাসী ৷ বিরাহিমপুর কায়স্থপ্রধান গ্রাম ৷ গ্রামের অধিকাংশ লোকই বৈষ্ণবধর্মে অনুরক্ত ৷ শ্রীরামরসায়ণ-প্রণেতা মাড়োর বিখ্যাত শ্রীল রঘুনন্দন গোস্বামীর বংশধর শ্রীমদনগোপাল প্রভু অনেকের ইষ্টদেব ছিলেন ৷ কৈশোরে গ্রামের পাঠশালায় তাঁহার হাতেখড়ি হয় ৷ গ্রামের সুজন মৌলিক, নিতাইসুন্দর মজুমদার মনোহরসাহী কীর্তনগানের অধ্যাপক ছিলেন ৷ যদুনন্দনের পিতাও কীর্তনের বড় বড় তালের গান জানিতেন ৷ পাঠ্যাবস্থাতেই পিতার নিকট এবং মৌলিক ও মজুমদার মহাশয়ের নিকট যদুনন্দন কীর্তনগান শিক্ষা করিয়াছিলেন ৷ পরে তাঁহারা নিত্যধামে গমন করিলে যদুনন্দন দক্ষিণখণ্ডের সুবিখ্যাত কীর্তনীয়া শ্রীরসিক দাস মহাশয়ের কীর্তনের দলে প্রায় সাত বৎকাল দোহারি করিয়াছিলেন ৷ অতঃপর তিনি বাড়ি ফিরিয়া আসেন এবং একটি সম্প্রদায় গঠনপূর্বক মূল গায়করূপে গান করিতে থাকেন ৷ বিরাহিমপুরের শ্রীশ্রী মহাপ্রভুর মন্দির-প্রাঙ্গণে উপস্থিত হইয়া সদলে তিনি মহাপ্রভুকেই প্রথম গান শুনাইয়াছিলেন ৷ দল চলিতে লাগিল, কিন্তু উপার্জনের দিক্‌ দিয়া তেমন সুবিধা হইল না ৷ সুযোগ পাইয়া যদুনন্দন শ্রীধাম বৃন্দাবন যাত্রা করিলেন ৷ বৃন্দাবনে গিয়া কৃষ্ণদাস, বলরাম দাস ও প্রেমদাস প্রভৃতি কয়েকজন বৈষ্ণব গায়ককে সঙ্গে লইয়া একটি কীর্তনের দল গঠনপূর্বক শ্রীমন্দিরে, কুঞ্জে এবং নানা স্থানে গান করিয়া বেড়াইতে লাগিলেন ৷ দলের বেশ নাম হইল ৷ আনন্দেই দুই বৎসর অতিবাহিত হইয়া গেল ৷
কান্দীর রাজকুমার শরচ্চন্দ্র সিংহ বৃন্দাবনে লালাবাবুর কুঞ্জে যদুনন্দনকে আনাইয়া রাস-গান শুনিলেন ৷ গান শুনিয়া সন্তুষ্ট হইয়া তিনি যদুনন্দনকে আনাইয়া রাস-গান শুনিলেন ৷ গান শুনিয়া সন্তুষ্ট হইয়া তিনি যদুনন্দনকে আনাইয়া রাস-গান শুনিলেন ৷ গান শুনিয়া সন্তুষ্ট হইয়া তিনি যদুনন্দকে কলিকাতায় লইয়া আসেন এবং কাশীপুর রাজবাড়িতে শ্রীগোপাল-বিগ্রহের গায়ক নিযুক্ত করেন ৷ একজন মৃদঙ্গবাদক ও দুইজন দোহার সঙ্গে থাকিত; যদুনন্দন সকালে মধ্যাহ্নে এবং সন্ধ্যায় গোপাল জীউকে গান শুনাইতেন ৷ কুমার বাহাদুর গুণগ্রাহী ছিলেন ৷ কুমার বাহাদুরের অর্থসাহয্যে তিনি গ্রামে কিছু ধানের জমি কিনিয়াছিলেন ৷ কুমার বাহুদুর যদুনন্দনের বিবাহের ব্যয়ও নির্বাহ করিয়াছিলেন ৷
কাশীপুরে প্রায় ছয় বৎসর তিনি ছিলেন ৷ কুমার বাহাদুরের পরলোকগমনের পর যদুনন্দন এবার বিরাহিমপুরে আসিয়া দল গঠন করিলেন ৷ অল্পদিনের মধ্যেই দলের খুব সুনাম হইল ৷ যদুনন্দন প্রায় শতায়ু লাভ করিয়াছিলেন ৷ পরলোকপ্রাপ্তির এক বৎসর পূর্ব পর্যন্ত তিনি দল চালাইয়া গিয়াছেন ৷ সারা বাঙ্গালায় কীর্তনগানে তাঁহার প্রতিষ্ঠা হইয়াছিল ৷ যদুনন্দন দেখিতে সুপুরুষ ছিলেন ৷ মূল গায়করূপ আসরে দাঁড়াইলেই শ্রোতৃবৃন্দ আনন্দে হরিধ্বনি করিয়া উঠিতেন ৷ তাঁহার কণ্ঠও মধুর ছিল ৷ কীর্তন পরিবেশনের ভঙ্গিও ছিল সুন্দর ৷ তিনি মনোহরসাহী সুরের সুনিপুণ গায়ক ছিলেন ৷ এই রসজ্ঞ গায়ক ১৩৭৩ সালের ২০শে চৈত্র নিত্যধামে প্রস্থান করিয়াছেন ৷