মুর্শিদাবাদ জেলায় দোপুখুরিয়া-বাজার গ্রাম ৷ এই গ্রামে এর সর্বজন শ্রদ্ধেয় বৈষ্ণব-পরিবারে ১৩১৭ সালে ১২ই অগ্রহায়ণ নন্দকিশোর জন্মগ্রহণ করেন ৷ পিতা রাধাকৃষ্ণ দাস একজন বিখ্যাত মৃদঙ্গবাদক ৷ বহু ছাত্র ইঁহার নিকট মৃদঙ্গ শিক্ষা করিয়া খ্যাতিমান হইয়াছেন ৷ স্থানীয় বিদ্যালয়ে মধ্য ইংরাজী পর্যন্ত অধ্যয়নপূর্বক নন্দকিশোর শক্তিপুরের রামচাঁদ দত্তের নিকট কিছুদিন হরিনামামৃত ব্যাকরণ পাঠ করেন ৷ পঠদ্দশাতেই পিতার নিকট এবং কীর্তনের আসরে গান শুনিয়া তিনি ‘গোষ্ঠ’ ও ‘দান’ গান শিখিয়াছিলেন ৷ বাঙ্গালার বিখ্যাত কীর্তনীয়া অবধূত বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দকিশোরের কন্ঠমাধুর্যে আকৃষ্ট হইয়া গোষ্ঠ ও দানের এক একটি পদ শুনিয়া তাঁহাকে আপন দলে গ্রহণ করিয়াছিলেন ৷ ষোল বৎসরকাল বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়ের দলে নন্দকিশোর দোহারি করেন ৷ রাধাকৃষ্ণের প্রিয় ছাত্র মৃদঙ্গবাদক বিষ্ণু দাসের নিকট নন্দকিশোর বিশেষ সাহায্য পাইয়াছিলেন ৷
শক্তিপুরের নিকট গৌরীপূরে গুরুদেব শ্রীললিতমোহন গোস্বামীর শ্রীপাটে শ্রীশ্রীমহাপ্রভুর অঙ্গনে ষোল বৎসরের বালক নন্দকিশোর প্রথম কীর্তন গান করেন ১৩৩৩ সালে ৷ নন্দকিশোরের বয়স যখন সাতাশ বৎসর, তিনি দল লইয়া শ্রীধাম নবদ্বীপে গান করিতে গেলেন প্রভুপাদ শ্রীপ্রাণগোপাল গোস্বামীর বাড়িতে৷ নবদ্বীপে এই তাঁহার প্রথম গান ৷
প্রথম দিনের গানেইে তখনকার দিনের সুপ্রসিদ্ধ শ্রীমদ্ভাগবততত্ত্ববেত্তা প্রাণগোপাল অত্যন্ত আনন্দিত হইলেন এবং পণ্ডিতমণ্ডলী লইয়া নন্দকিশোরকে ‘লীলাগীতসুধাকর’ উপাধি দান করিলেন ৷ সেই দিন হইতে নবদ্বীপে তাঁহার বাঁধা আসর হইয়া গেল ৷ প্রভুপাদের বাড়িতে এবং ধুলোট-মহোৎসবে গিয়া তিনি নবদ্বীপে বেশ কয়েকদিন লীলাকীর্তন পরিবেশনপূর্বক আপামর সাধারণকে আনন্দ বিতরণ করেন ৷ ভুবনেশ্বর সাধু-প্রতিষ্ঠিত শ্রীগোবিন্দ বাড়িতে নন্দকিশোরের গান শুনিয়া দেশবিদেশের বহু লোক পরিতৃপ্ত হইয়া থাকেন ৷
নন্দকিশোর এখন বাঙ্গালার একজন অন্যতম শ্রেষ্ঠ গায়ক৷ শ্রীধাম বৃন্দাবনে গান করিতে গিয়া তিনি বহু বৈষ্ণবের কৃপালাভ করিয়াছেন৷ দিল্লী শহরেও গানে তিনি সুনাম অর্জন করিয়াছিলেন৷ কলিকাতায় প্রায় সর্বত্রই নন্দকিশোর পরিচিত ৷ সুমিষ্ট কণ্ঠ, পরিবেশনের পারিপাট্য, তালমানে সাবলীল অধিকার, পদাবলীর উচ্চারণ-মাধুর্য এবং রসবোধ তাঁহাকে কীর্তনীয়া-মহলে উচ্চ স্থান দিয়াছে৷ আমরা এই জনপ্রিয় গায়কের নিরাময় দীর্ঘজীবন কামনা করি ৷