আমাদের দেশে সংস্কৃত কাব্যের যে ধারা চলে আসছিল, কালক্রমে তা ক্ষীণ হয়ে পড়ল। সংস্কৃতে রচিত বৈষ্ণব সাহিত্যের কথা ছেড়ে দিয়ে ভট্টনারায়ণের বেণীসংহারই বাংলার উল্লেখযোগ্য নাটক, গোবর্দ্ধনাচার্য্যের আর্য্যাসপ্তশতী ও ধোয়ীসেনের পবনদূত উল্লেখযোগ্য কাব্য আর সন্ধাকর নন্দীর রামচরিত একমাত্র ঐতিহাসিক কাব্য । বাংলাদেশের কাব্যসাহিত্যের ধারা অন্য পথে প্রবাহিত হল— সঙ্গীতের আমন্ত্রণে ও প্রয়োজনে । সংস্কৃত ভাষাকে অবলম্বন করে জয়দেবের গীতগোবিন্দ আর প্রাথমিক স্তরের বাংলা ভাষাকে অবলম্বন করে বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যগণের চর্যাপদে এই নতুন ধারার সূত্রপাত । এই ধারা একাধারে ধর্ম, সঙ্গীত ও কাব্যসাহিত্যকে পুষ্টিদান করেছে। জয়দেব যে ধারার প্রবর্ত্তন করলেন তা ই পদাবলীর ধারা। জয়দেবের এই মধুরকোমলকান্ত পদাবলী শ্রীকৃষ্ণের মধুর রসের বৃন্দাবনলীলা অবলম্বনে রচিত, রাগতালসংযোগে গেয়। বিদ্যাপতি ও বড়ু চণ্ডীদাস জয়দবের অনুসরণে যে পদগুলি রচনা করেন— সেইগুলোই বাংলা ভাষার প্রথম পদাবলী । বিদ্যাপতির ভাষা যদিও ঠিক বাংলা নয়, কিন্তু বাংলাদেশে তাঁর পদগুলোর ঈষৎ রূপান্তরিত ভাষা বাংলা ভাষারই সমীপবর্ত্তী। চর্যাপদের ভাষার তুলনায় বিদ্যাপতির পদের বাংলায় প্রচলিত রূপের ভাষা খাঁটি বাংলার অধিকতর নিকটবর্তী ।