প্রাকৃত ভাষার নিকটবর্তী ভাষায় পদ রচনা করেছিলেন বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যগণ ৷ এইগুলোকে চর্যাপদ বলা হয় ৷ এগুলোতে বঙ্গদেশে রূপান্তরিত বৌদ্ধ সাধনমার্গের তত্ত্বগুলি সাঙ্কেতিক ভঙ্গীতে ও রূপকের আবরণে সাঙ্গীতিক রূপ লাভ করেছে ৷ মনে হয়, এরূপ পদ দেশে অনেক ছিল ৷ ক্রমে বৌদ্ধধর্মের বিলুপ্তি এবং ভাষার দ্রুত পরিবর্তনের ফলে চর্যাপদগুলিও অপ্রচলিত হয়ে পড়ল ৷ কতগুলো এই শ্রেণীর পদ নেপালে আবিষ্কৃত হয়েছে ৷ এগুলোতে বাংলা ভাষার আদিমরূপের পরিচয় পাওয়া যায় ৷ — বর্তমান যুগে অপ্রচলিত হলেও সম্ভবতঃ বিদ্যাপতি, বড়ু চণ্ডীদাসের যুগে অপরিচিত ছিল না ৷ এগুলোর গঠনগত সাম্য ছাড়া পদাবলীর সাথে এগুলোর কোন সম্বন্ধ নেই ৷ ব্রজপদাবলী রসময়, চর্যা পদাবলী রহস্যময় ৷ এই কুজ্ঝটিকাচ্ছন্ন চর্যাপদগুলি সাধারণতঃ পজ্‌ঝটিকা ও চৌপইআ ছন্দে এবং ভণিতান্ত হ্রস্বাকারে লিখিত ৷ ধ্রুবপদও পদের প্রথমে কিংবা মধ্যে আছে ৷ বৈষ্ণব পদের গঠনভঙ্গী আগে থেকেই প্রচলিত ছিল কেবল এই কথাটাই এতে প্রমাণিত হয় ৷ উভয় শ্রেণীর পদাবলীর মধ্যে দৈহিক সাম্য আছে, আত্মিক সাম্য কিছুই নাই ৷