ব্রজলীলার কোন পদের কোন অংশে আধ্যাত্মিক ব্যঞ্জনার কোন ইঙ্গিত নেই তাও সত্য নয় ৷ অবশ্য রসাভাস বাঁচিয়ে যতটুকু সম্ভব ততটুকুই কোন কোন পদে আছে ৷ অনেক সময় রচনার মধ্যে অপ্রাকৃত কিছু থাকলে তা পাঠকের মনকে সাধারণতঃ বাচ্যাতীত অর্থের দিকে নিয়ে যায় ৷ দৃষ্টান্তস্বরূপ, রবীন্দ্রনাথের সোনার তরী কবিতার উল্লেখ করা যেতে পারে ৷ সোনার তরী — ঘন বর্ষা— পাকা ধান— সোনার ধানে সোনার তরী বোঝাই— ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই ছোট সে তরী— সোনার তরীর নিরুদ্দেশ প্রয়াণ— শূন্য নদীর কূলে ধানের অধিকারী পরিত্যক্ত ৷ এই সকলের মধ্যে যে একটি অসাধারণ অনুক্রম রয়েছে — তাতে পাঠকের মন বাচ্যার্থ অতিক্রম করে যেতে বাধ্য ৷ কবি অবশ্য এতেই নিশ্চিন্ত হননি ৷ তিনি তরীটিকে কাঠের তরী না করে সোনার তরী বানিয়েছেন ৷ গোড়াতেই কবি সতর্ক করে দিয়েছেন— মনে থাকে যেন এটি সোনার তরী, তাই মনে রেখে এর অর্থ সন্ধান কোরো ৷
পদাবলীর মধ্যে অভিসারের পদগুলিতে সংস্কৃত কবিদের অনুকৃতি থাকলেও আমরা একটা অসাধারণ ও অপ্রাকৃত অনুক্রম পাই — অভিসারের পথকে বহু বিঘ্ন বিপত্তির সমবায়ে এমকি দুর্গম এবং রাধাকে এমনই আত্মবিস্মৃতা করে তোলা হয়েছে যে, ঐ পদগুলিতে নায়কের উদ্দেশ্যে নায়িকার চিরপ্রচলিত অভিসারের বর্ণনামাত্র মনে করে আমাদের চিত্ত বিশ্রাম করতে পারে না ৷ এখানে যেন মনে হয় নায়ককে অসীম অনন্ত, ব্রহ্ম, পরমাত্মা, পূর্ণ, নিত্য এমনই একটা কিছু ভাবলেই কবির অভিসন্ধি পূর্ণ হতে পারে ৷ লীলাতত্ত্ব সম্বন্ধে ধারণা না থাকলেও প্রত্যেক কাব্যরসিক চিত্ত এই ক্ষেত্রে লোকাতীত ব্যঞ্জনার সন্ধান করে পদের কবিত্বরস উপভোগ করবে ৷