নতুন কথা নতুন ভঙ্গীতে নতুন সঙ্গীতে বলাই তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল না; যে কথা পূর্ববর্তী মহাজনেরা বলেছেন— যে কথা বৈষ্ণবগোষ্ঠীর ইষ্টানুগত, যে কথা চৈতন্যদেবের ভাবাদর্শের সম্পূর্ণ অনুগত এবং যা তাঁদের সকলেরই সাধারণ ভাবসম্পদ্‌ — সেই কথা রসাভাস বর্জন করে সুরসঙ্গতরূপে বলতে পারলেই তাঁদের সাহিত্যগত দায়িত্ব ও গোষ্ঠীগত কর্তব্যের সমাধা হত ৷
পদগুলো যেন এক-একটি শ্লোকের মত, শ্লোকের মতই ইহাদের চতুঃসীমা বিধিবদ্ধ ৷ অনেক পদ বিদগ্ধমাধব, ললিতমাধব, উদ্ধব-সন্দেশ, দানকেলিকৌমুদী— এমন কি অবৈষ্ণব সংস্কৃত বা প্রাকৃত কাব্যনাট্যের শ্লোকের ভাবানুবাদ (এই নিবন্ধের মধ্যে সেরকম দৃষ্টান্ত কয়েকটা দেখানো হল ) ৷ আবার পক্ষান্তরে কোন কোন পদ পরে বৈষ্ণবাচার্যগণের দ্বারা সংস্কৃতে শ্লোকত্ব লাভও করেছে ৷
অনেক ক্ষেত্রে কোন একটা নির্দিষ্ট ভাবকে বিকশিত করে তোলাই বহু পদের উদ্দিষ্ট নয় ৷ নির্দিষ্ট সীমাবন্ধনের মধ্যে সুরের আকাঙ্ক্ষা মিটে গেলেই পদকর্তারা স্বকীয় ভণিতা দিয়ে শেষ করতেন— গীতিকবিতার বিকাশধারার অনুসরণ করতেন না ৷ অনেক সময় কোন একটা বিশিষ্ট ভাবের বিকাশ সাধন না করে তিন চারটে বিভিন্ন ভাবের অন্তরার দ্বারা পদটিকে পরিপূর্ণতা দান করতেন ৷ পদের গঠনে সনেটের মতো একটি নির্দিষ্ট গণ্ডী থাকায় বাধ্য হয়ে কবিদের ভাবাবেগ সংবরণ করতেও হয়েছে— ভাষা হয়েছে মিতাক্ষরা, অতিভাষণের দূষণ কোথাও ঘটে নাই ৷