পদকর্তারা প্রায় সকলেই পদাবলীতে শ্রীকৃষ্ণের বা শ্রীরাধিকার সখীর অভিনয় করেছেন৷ এই সখীভাবে সখ্য, দাস্য ও মধুরভাব তিনই মিশ্রিত আছে ৷ সখীদের প্রধান কাজ রাধাকৃষ্ণের পরিচর্যা ৷
এই সেবাধর্মের সঙ্গে Anthropomorphic ভাব বিজড়িত আছে ৷ আমাদের লৌকিক জীবনে যা প্রীতিকর, তাই তাই দিয়েই পরম প্রিয়ের সেবা বা উপাসনা করারই পদ্ধতি চলে আসছে ৷ ব্যক্তিগতভাবে প্রীতিকর বা অপ্রীতিকর উপচারের কথা নয়, জাতিগত, শ্রেণীগত বা গোষ্ঠীগতভাবে যা মোদনীয়, তাই হয় পরমপ্রিয়ের সেবার উপাচার ৷ মন্দিরে মন্দিরে দেবদেবীর পূজা ও ভোগের উপচারের কথা স্মরণ করিতে বলি ৷ দেবদাসীর নৃত্যগীত ও রাগানুকূল হাবভাবের কথাও উল্লেখযোগ্য ৷ আরাধ্য যেখানে প্রেমাকৃষ্ট কিশোর-কিশোরী, সেখানে তাদের সেবা-উপাচারও তদুপযোগী ৷ তরুণ রসবিদগ্ধ নাগর-নাগরীর প্রেমলীলার উপচার যোগানোই সখী-সজনীর কাজ ৷ এইরূপ উপচার যোগাতে গিয়ে কবিদের রচনায় অজস্র কামকেলির উপকরণ এসে পড়েছে ৷ এটা থেকে কেউ মনে না করেন, কামকেলি বৈষ্ণব কবিদের পরম হৃদ্য বস্তু এবং তাই পরম প্রিয়কে উৎসর্গ করেছেন ৷ কামকেলি হৃদ্য বস্তু কবিদের সখীর ভূমিকায় বাস্তব জীবনে নয়৷ জীবনে তাঁরা হয়ত কামকেলি বর্জন করেছিলেন— প্রেমিকচূড়ামণি শ্রীকৃষ্ণের উপভোগ্য হবে বলেই সখীর ভূমিকায় সম্ভোগের উপচাররূপে তাই যুগিয়েছেন ৷ এদেশে প্রথা আছে যে বস্তু ইষ্টদেবতাকে, যেমন জগন্নাথকে উৎসর্গ করা হয়— তা ভক্ত নিজে আর উপভোগ করেন না ৷ সাধক কবিদের সম্বন্ধে একথাও বলা যেতে পারে ৷