শ্রীচৈতন্যের আগে প্রচলিত ছিল বিদ্যাপতির পদাবলী এবং কারও কারও মতে দ্বিজ চণ্ডীদাসের পদাবলী ৷ শ্রীচৈতন্যের সময় থেকে বাংলার পদাবলীর প্রকৃতপক্ষে সূত্রপাত ৷ শ্রীচৈতন্যের তিরোধানের পর এর স্বর্ণযুগের আবির্ভাব হয়৷ শ্রীচৈতন্যের পূর্বে যা ছিল কুট্নল তা ই তাঁর পরে বহুদলে বিকশিত হয়ে উঠল৷ শ্রীচৈতন্যের জীবনই ছিল একখানা মহাকাব্য, তা ই শত শত ভাগে বিকীর্ণ হয়ে পদাবলীর রূপ ধারণ করল ৷ সমগ্র বৃন্দাবনলীলা শ্রীচৈতন্যের জীবনের রঙ্গমঞ্চে নাট্যের মত অভিনীত হয়েছিল৷ ফলে, শ্রীচৈতন্যদেবই ব্রজলীলাকে বাস্তব রূপ দান করেন৷ তিনি নিজেই এই অভিনয়ে ছিলেন রাধা ৷ তাঁর জীবন পূর্ববর্তী পদাবলীর কুসুমে আরোপ করেছিল অলৌকিকতা ও আধ্যাত্মিকতার মধু ও গন্ধ এবং পরবর্তী পদাবলীর কুসুমপুঞ্জে সঞ্চার করেছিল প্রাণরস, মধু, গন্ধ ও সুষমা ৷
শ্রীচৈতন্যকে একজন পদকর্তা মেঘের সঙ্গে উপমিত করেছেন ৷ তাঁর জীবন সত্যি সত্যিই এদেশে রসের বর্ষা নামিয়েছিল ৷ ফলে, বাংলার সাহিত্যক্ষেত্রে যে সোনার ফসল ফলেছে — সেই প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন—
”বর্ষা ঋতুর মত মানুষের সমাজে এমন একটা সময় আসে, যখন হাওয়ার মধ্যে ভাবের বাষ্প প্রচুর পরিমাণে বিচরণ করিতে থাকে ৷ শ্রীচৈতন্যের পরে বাংলাদেশের সেই অবস্থা হইয়াছিল ৷ তখন সমস্ত আকাশ প্রেমের রসে আর্দ্র হইয়াছিল ৷ তাই তখন দেশে যেখানে যত কবির মন মাথা তুলিয়া দাঁড়াইয়াছিল— সকলেই সেই রসের বাষ্পকে ঘন করিয়া কত অপূর্ব ভাষা ও নূতন ছন্দে, কত প্রাচুর্যে ও প্রবলতায় তাহাকে দিকে দিকে বর্ষণ করিয়াছিল৷”