(তত্ত্ববিচার ও রস-বিশ্লেষণ)

বৈষ্ণব পদাবলী রাগানুগ বৈষ্ণব ভক্তগণের সাধনভজনের সহায়, বাংলার প্রাচীন যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্যসাহিত্য ও কীর্তনসঙ্গীতের প্রধান অবলম্বন ৷ এইগুলির উপজীব্য একাধারে ধর্ম, সাহিত্য ও সঙ্গীত, — বাংলার প্রাচীন সংস্কৃতির সর্বশ্রেষ্ঠ নিদর্শন ৷ যাঁরা বৈষ্ণব, তাঁদের কাছে পদাবলী একাধারে ভাগবতের মতই ধর্মগ্রন্থ ও সাহিত্য ৷ যাঁরা বৈষ্ণব নন— তাঁদের কাছে অনুরাগমূলক উৎকৃষ্ট কাব্যসাহিত্য ৷

পদাবলীর বিষয়বস্তু— বাংলাদেশে সংস্কৃত সাহিত্যের চর্চা থাকলেও চার পাঁচ-শ বছর ধরে বাঙালী জাতির সাহিত্য-রসপিপাসা মিটিয়েছে এই পদাবলী-সাহিত্য ৷ সেকালে কাব্যের প্রধান উপজীব্য ছিল ধর্মপ্রসঙ্গ ৷ কোন লৌকিক, ব্যবহারিক বা ঐহিক বিষয়বস্তু নিয়ে কিছু রচনা হয়ে থাকলে তা বিলুপ্ত হয়েছে ৷ বিশেষতঃ পদকর্তারা ছিলেন বৈষ্ণব সাধক ৷ কাজেই বৈষ্ণব লীলাতত্ত্বকে অবলম্বন করেই তাঁরা সাহিত্য সৃষ্টি করেছেন ৷ রাধাশ্যামের প্রণয়লীলাই পদাবলীর মুখ্য বিষয়বস্তু ৷ শ্রীকৃষ্ণের বাৎসল্যলীলা ও সখ্যলীলা-ও পদাবলীর উপজীব্যের অঙ্গীভূত হয়েছে ৷ রাধাকৃষ্ণের সম্মিলিত অবতার শ্রীচৈতন্যদেবের লীলাবর্ণনার পদগুলি পদাবলীর একটি নতুন ধারার সৃষ্টি করেছে ৷ ভাগবতের অনুসরণে রচিত শ্রীকৃষ্ণের ঐশ্বর্যলীলার পদগুলি আসল পদাবলীর অন্তর্গত নয় ৷ পদাবলী শব্দটি ‘মধুরকোমলকান্ত পদাবলীর’ কবি জয়দেবের প্রবর্তিত ৷