শ্রীচৈতন্যমুখোদ্গত হরেকৃষ্ণেতিদ্বিবর্ণকা।
মজয়ন্তো জগত প্রেম্নিবিজয়ন্তাং … ।।
হরের্নাম হরের্নাম হরের্নামৈব কেবলম্‌ ।
কলৌ নাস্তেব নাস্তেব নাস্তেব গতিরন্যথা।।
চেতোদর্পণমার্জনং ভবমহাদাবাগ্নি নির্বাপণম্‌।
শ্রেয়ঃকৈরবচন্দ্রিকাবিতরণং বিদ্যাবধূজীবনম্‌।।
আনন্দাম্বুধিবর্ধনং প্রতিপদং পূর্ণামৃতাস্বাদনম্‌।
সর্বাত্মস্নপনং পরং বিজয়তে শ্রীকৃষ্ণসংকীর্ত্তনম্‌।।
কৃষ্ণবর্ণংত্বিষাকৃষ্ণং সাঙ্গোপাঙ্গস্তপার্ষদম্‌।
যজ্ঞৈঃ সংকীর্ত্তনপ্রায়ৈর্যজন্তি হি সুমেধসঃ।।
শ্রীমদ্‌গুরুপাদাম্ভোজং হৃদি ম স্ফূরতাং সদা।
তচ্ছীধুমতুকৃদ্ভূঙ্গৈর্জনৈঃ সঙ্গোস্তমেহানিসং ।।
জয় জয় শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য গৌরধাম।
জগত তরিল যিহোঁ দিয়া হরিনাম।।
আপনে লইয়া নাম জগতে শিখায়।
ঈশ্বর হইয়া কর্ম সাধকের প্রায়।।
জয় জয় নিত্যানন্দ অবধূত রায়।
প্রেমভক্তি পায় লোক যাহার কৃপায়।।
প্রেমবানে নিতাইচান্দ বিশ্ব ডুবাইল।
উত্তম অধম সব সমান করিল।।
জয় জয় সীতানাথ অদ্বৈত গোসাঞি।
হুহুঙ্কারে যে আনিল চৈতন্য নিতাই।।
ভক্তির ভাণ্ডারী হয় আচার্য গোসাঞি।
যারে দেন সেই পায় ভেদাভেদ নাই।।
জয় জয় গদাধর পণ্ডিত শ্রীবাস।
মুকুন্দ মুরারি জয় নরহরি দাস।।
জয় জয় রামানন্দ স্বরূপ গোসাঞি।
গোবিন্দ মাধব বাসুদেব তিন ভাই।।
জয় হরিদাস হরিনামের ভাজন।
তিনলক্ষ নাম নিত্য যাহার গ্রহণ।।
নামের প্রভাবে বেশ্যা নারী উদ্ধারিল।
মায়া ভগবতী যারে মোাহিতে নারিল।।
হরিদাস ঠাকুরের হেন কৃষ্ণ ভক্তি।
মায়া পরাভব যারে কৈল স্তুতি।।
জয় সনাতন রূপ ভট্ট রঘুনাথ।
শ্রীজীব গোপাল ভট্ট দাস রঘুনাথ।।
এই ছয় গোসাঞি ব্রজে করিল নিবাস।
যুগল উজ্জ্বল রস কৈল পরকাশ।।
জয় গৌরভক্তগণ অনন্ত অপার।
সভার প্রকট জীব করিতে উদ্ধার।।
জয় জয় সংকীর্ত্তন জয় হরিনাম।
শ্রীগৌড়মণ্ডল জয় নবদ্বীপ ধাম।।
জয় গুরু গোসাঞির চরণ কমল।
যাহার স্মরণে চিত্ত হয় সুনির্মল।।
যে পদ আশ্রয় মাত্র বিঘ্ন বিনাশন।
অনায়াসে হয় নিজ বাঞ্ছিত পূরণ।।
অজ্ঞান নাশিল যে দিব্যজ্ঞান দিয়া।
কৈতবাদি তম যেহ পেলিল ধুনিয়া।।
তার পাদপদ্মমধু পানে যারা মত্ত।
সে সব মধুপ সঙ্গ হউক সদত।।
বৈষ্ণব গোসাঞি জয় করুণার সিন্ধু।
তাপতমো নাশ করে যৈছে পূর্ণ ইন্দ্র।।
গুণগ্রাহি দোষ ক্ষমা করে সর্ব্বক্ষণ।
তাহার চরণ মোর একান্ত শরণ।
জয় জয় শ্রোতাগণ কর অবধান।
প্রভুর হরিদাসের প্রশ্নোত্তর অনুপাম।।
প্রভু নিয়ম প্রতিদিন একবার।
হরিদাসে মিলি করেন তাহার সৎকার।।
প্রতি দিন ইষ্ট গোষ্ঠী করি তার সনে।
সিন্ধু স্নান করি তবে যান বাসা স্থানে।।
এই মত মহাপ্রভুর নীলাচলে বাস।
তাতে যত লীলা শাস্ত্র আছে পরকাশ।।
একদিন ইষ্টগোষ্ঠী করি তার সনে।
শেষে মহাপ্রভু পুছে সভঙ্গি বচনে।।
হরিদাস কলিযুগ বড় দুরাচার ।
জীবের স্বধর্ম্ম নাশে করি অনাচার।।
কলির প্রভাবে জীব পাপ কর্ম্ম করে।
তপ যজ্ঞ দান পুণ্য দূরে পরিহরে।।
বেদ অধ্যয়ন নাহি তীর্থ পর্যটন।
সত্যবাদী জিতেন্দ্রিয় নাহি একজন।।
যদি বল পাপ পুণ্য হয় কি প্রকারে।
তাহার কারণ কহিয়ে তোমারে ।।
চারিবেদ চৌদ্দশাস্ত্র আঠার পুরাণ।
জীবের উদ্ধার হেতু কৈল ভগবান।।
তার মধ্যে বিধি আর নিষেধ বর্ণন।
বিধি আচরণে হয় পুণ্য উপার্জন।।
শাস্ত্রেতে নিষেধ আছে যে সকল কর্ম।
নিষিদ্ধ আচরণে হয় পাপ উৎপন্ন।।
সেই পাপ বহুবিধ নাহি তার পার।
তথি মধ্যে প্রধান পাপ পঞ্চ প্রকার।।
কামক্রোধ লোভ মোহ মদ অহঙ্কার ।
এই ছয় দ্বারে হয় পাপের সঞ্চার ।।
মনেন্দ্রিয় হরে জীবে পাপকর্ম করে।
যম পাশে বন্দি হঞা রৌরবেতে পড়ে।।
এ সকল জীবে কৈছে হইবে উদ্ধার।
প্রথম কলিতে হইল ভবিষ্য আচার।।
কহ হরিদাস কলি জীবের মোচন।
হরিদাস কহে বন্দি প্রভুর চরণ।।
সর্বতত্ত্ববেত্তা তুমি ধর্ম সনাতন।।
তোমার নিঃশ্বাসে হৈল বেদ প্রবর্তন।।
অতএব ভালমন্দ তোমার গোচরে।
তথাপিহ ভঙ্গি করি জিজ্ঞাস আমারে।।
আমি ক্ষুদ্র জীব না জানিয়ে ধর্মাধর্ম।
কোন বলে বাখানিব এসকল কর্ম।।
না জানি কি অপরাধ কৈলুঁ জন্মান্তরে।
সেই ফলে জন্ম হৈল যবনের ঘরে।।
আমারে ছুইলে স্নান করিতে জুয়ায়।
আমারে দেখিলে তার পুণ্য হয় ক্ষয়।।
এ হেন অধমে যাতে কৈলে অঙ্গিকার।
ইহাতেই জানি প্রভু মহিমা তোমার।।
রামানন্দ স্বরূপ সার্বভৌম ভট্টাচর্য।
এসব মহান্ত হয় মোর শিরোধার্য।।
পাণ্ডিত্য গাম্ভীর্য আর সর্বতত্ত্ব-বেত্তা।
তা সভার স্থানে প্রশ্ন কর এই কথা ।।
শুনিতে পাইবে প্রভু তা সভার মুখে।
আমিহ শুনিব যদি ভাগ্যে মোর থাকে।।
প্রভু কহে কর তুমি দৈন্য সম্বরণ।
শুনিয়া তোমার দৈন্য ফাটে মোর মন।।
আপনে না জান তুমি আপনার তত্ত্ব।
বেদে ভাগবতে গায় তোমার মহত্ত্ব।।
ঈশ্বরের ভঙ্গি কিছু বুঝন না যায়।
কারো দ্বারে কোন কার্য্য ঈশ্বর করায়।।
পণ্ডিত ব্রাহ্মণগণের গর্ব্ব খণ্ডাইতে।
নীচকুলে জন্ম তোমার লয় মোর চিত্তে।।
প্রহলাদে অসুর যৈছে কপি হনুমান।
তৈছে নীচকুলে তোমার হৈল অধিষ্ঠান।।
শ্রীকৃষ্ণ ভজনে নাহি কুলাদি বিচার।
যেই ভজে তারে কৃষ্ণ করে অঙ্গিকার।।
কৃষ্ণ চরণারবিন্দ বিমুখ ব্রাহ্মণ।
ভক্ত স শ্বপচ তাহা হইতে উত্তম।।
তথাহি শ্রীভাগবতে ৭ম স্কন্ধে–
বিপ্রাদ্বিষড়গুণযুতাদরবিন্দনাভ-
পাদারবিন্দবিমুখাৎ শ্বপচং বরিষ্ঠং।
মন্যেতদর্পিত মনোবচনে হিতার্থ।
প্রাণং পুনাতি স কুলং নতু ভুরিমানঃ।।
অতএব দৈন্যাদি নির্বেদ ছাড় তুমি।
জীবের উদ্ধার হেতু কহ কিছু শুনি।।
হরিদাস কহে আজ্ঞা লঙ্ঘিতে না পারি।
কহিবার সাধ্য নহে কি উপায় করি।।
তাতে শ্রীচরণ প্রভু মোরে মাথে দিয়া ।
আশীর্ব্বাদ কর নিজ শক্তি সঞ্চারিয়া।।
তবে সে কহিতে পারি মোর মনে লয়।
শ্রীহস্ত দিলেন প্রভু তাহার মাথায়।।
হরিদাস প্রভুর চরণ ধূলি লৈয়া ।
মস্তকে ধারণ কৈল ভক্ষণ করিয়া।।
পুনর্বার দণ্ডবৎ করি শ্রীচরণে।
জীবের উদ্ধার কহে বিনয় বচনে।
সর্ব্বকাল জীব প্রতি করুণা তোমার।
আমা হেন পাপিষ্ঠেরে করিলে উদ্ধার।।
পতিতপাবন তুমি মোর মনে লয়।
কলির প্রভাব দেখি না করিহ ভয়।।
জীবোদ্ধার হেতু পূর্বে করিয়াছ তুমি।
শাস্ত্রে আছে অদ্যাবধি সাধুমুখে শুনি।।
দোষের সমুদ্র কলি যুগ ভয়ঙ্কর ।
কামাদি গ্রাহক তাতে ফিরে নিরন্তর।।
পাপ সমুচ্চরে তাতে তরঙ্গের প্রায়।
তাহাতে পতিত জীব নানা দুঃখ পায়।।
করুণা অবধি কৃষ্ণ জীবে দয়া করি।
নাম নৌকা গুরুরূপে হইলা কাণ্ডারী।।
সাধুরূপে পবন হইলা পুনর্বার।
কলি সিন্ধু হৈতে জীব করেন উদ্ধার।
দ্বাদশে তৃতীয়াধ্যায়ে ত্রিচত্বারিংশ শ্লোক–
কলের্দোষনিধে রাজন্ নাস্তিহ্যেকো মহান্‌ গুণঃ।
কীর্ত্তনাদেব কৃষ্ণস্য মুক্তবন্ধঃ পরং ব্রজেৎ।।৭
অতএব হরিনাম হরিনাম সার।
হরিনাম বিনে কলৌ গতি নাহি আর।।
বৃহন্নারদীয়ে–
হরের্নাম হরের্নাম হরের্নামৈব কেবলম্।
কলৌ নাস্তেব নাস্তেব নাস্তেব গতিরন্যথা।।
কৃষ্ণ যৈছে চিন্তামণি সর্ব্বফলদাতা।
নামচিন্তামণি তৈছে জানিহ সর্ব্বথা।।
চেতন স্বরূপ কৃষ্ণ তৈছে মায়াতীত।
তৈছে কৃষ্ণ নাম করে জগতের হিত।।
রসের বিগ্রহ কৃষ্ণ সর্ব্ব রস ধরে।
গৌণ মুখ্য রস গণ কৃষ্ণেতে বিহরে।।
তৈছে কৃষ্ণ নাম হয় সর্ব্ব রসময়।
শান্তাদি মধুর রস নামে উপজয়।।
কৃষ্ণ যৈছে পূর্ণরূপে স্বয়ং ভগবান।
স্বতন্ত্র ঈশ্বর যাহা বহি নাহি আন।।
কৃষ্ণ নাম তৈছে হয় না করে বিচার।
আপনে স্বতন্ত্র হইয়া তারয়ে সংসার।।
কৃষ্ণ যৈছে শুচি হয় পাবন চরিত।
বিশুদ্ধ কপট হীন দোষ বিবর্জিত।।
তৈছে কৃষ্ণ নাম হয় পতিত পাবন।
পাপা তাপ নাশ করে শুদ্ধ করে মন।।
প্রকটাপ্রকটি কৃষ্ণ নিত্য অবস্থিতি।
মায়াবন্ধ শূন্য তাথে মুক্ত দশা প্রাপ্তি।।
তৈছে কৃ্ষ্ণনাম নিত্য মায়া বন্ধ হরে।।
মুক্ত দশা প্রাপ্তি দিয়া আনন্দে বিহরে।।
এই হেতু নাম নামী অভিন্ন বাখানে।
নাম নাম্নী সমশক্তি শাস্ত্র পরমাণে।।
তথাহি বিষ্ণুধর্মোত্তরবচনং–
নামচিন্তামণিঃ কৃষ্ণশ্চৈতন্য-রস-বিগ্রহঃ।
পূর্ণঃ শুদ্ধো নিত্যমুক্তোহভিন্নাত্বান্নামনামিনোঃ।।
হেন কৃষ্ণ নাম সদা যে করে গ্রহণ।
সে যদি চণ্ডাল হয় তথাপি উত্তম।।
সর্ব্বতপ যজ্ঞ তার হয় ক্ষণে ক্ষণে ।
সর্ব্বতীর্থ স্নান চারি বেদ অধ্যয়নে।।
এতাদৃশ কৃষ্ণ নামের অদ্ভুত চরিত্র।
জিহ্বা উচ্চারিতে মাত্র করয়ে পবিত্র।।
তথাহি তৃতীয় স্কন্ধে কপিলদেবপ্রতি দেবহুতি বচনং–
অহোবত শ্বপচোহতো গরীয়ান্‌ ।
যদ্‌জিহ্বাগ্রে বর্ত্ততে নাম তুভ্যং।।
তেপুস্তপস্তে জুহুবুঃ সস্নুরার্য্যা।
ব্রহ্মানূচু নাম গৃণন্তি যে তে।।
সত্যযুগে ধ্যান ধর্ম্ম ত্রেতা যুগে যজ্ঞ।
দ্বাপরে অর্চ্চন করে যেই হয় বিজ্ঞ।।
তিন যুগে তিন ধর্ম্ম যত ফল হয়।
কলিযুগে কৃষ্ণ নামে তত ফল পায়।।
তথাহি দ্বাদশস্কন্ধে–
কৃতে যদ্‌ধ্যায়তে বিষ্ণুংত্রেতায়াং যজতো মখৈঃ।
দ্বাপরে পরিচর্য্যায়াংকলৌতদ্ধরিকীর্ত্তনাৎ ।
তথাহি বিষ্ণুপুরাণে চ —
ধ্যায়ন্‌ কৃতে যজন্‌ যজ্ঞৈ স্ত্রেতায়াং দ্বাপরেহর্চ্চয়ন্‌ ।
যদাপ্নোতি তদাপ্নোতি কলৌ সংকীর্ত্ত্য কেশবম্‌ ।।
কলিযুগে যজ্ঞ ব্রত তপস্যাদি করে।
বৃথা পরিশ্রম তাতে ফল নাহি ধরে।।
তাতে শাস্ত্র বিচারজ্ঞ যেই জন হয়।
নাম সংকীর্ত্তন যজ্ঞে কৃষ্ণ আরাধয়।।
সেইত সুমেধা পায় কৃষ্ণের চরণ।
সর্ব্বানর্থ নাশ হয় ভব বিমোচন।
তথাহি একাদশে–
কৃষ্ণবর্ণং ত্বিষাকৃষ্ণং সাঙ্গোপাঙ্গাস্তপার্ষদম্‌।
যজ্ঞৈঃ সংকীর্ত্তনপ্রায়ৈর্যজন্‌তিহি সুমেধসঃ ।।
গ্রহণে গো কোটি দান যদি করে কাশি।
মাঘ মাসে প্রাগে যদি হয় কল্পবাসি।।
সুমেরু সমান যদি স্বর্ণ করে দান।
তথাপি না হয় কৃষ্ণ নামের সমান।।
কোটি অশ্বমেধ কহে নামের সমান।।
যমদণ্ড পায় তার নাহি পরিত্রাণ।।
তথাহি পাণ্ডবগীতায়াং গৌতমোবাচ–
গো-কোটি-দানং গ্রহণেষু কাশী-
প্রয়াগ-গঙ্গাষুত-কল্পবাসঃ।
যজ্ঞাযুতং মেরুসুবর্ণদানং
নহি তুল্যং গোবিন্দনামম্ ।।
নামের সম কৃষ্ণ কৃষ্ণ সম নাম।
ভক্তস্তু এক শক্তি একই সমান।।
তথাপি নামে কৃষ্ণে কৃপা অনুসারে।
অসমতা হয় শাস্ত্রে আছয়ে প্রচারে।।
ভক্তিবস কৃষ্ণপ্রেম ভক্তি লুকাইয়া।
ভক্তি মুক্তি দেয় ভক্তে বঞ্চনা করিয়া।।
তথাহি পঞ্চম স্কন্ধে শ্রীশুকবাক্যং–
রাজন্‌ পতির্গরুবলং ভবতাং যদুনাং
দৈবংপ্রিয়ঃ কুলপতিঃ ক্বচকিঙ্করোবঃ।
অস্তেবমঙ্গ ভজতাং ভগবান্‌মুকুন্দো
মুক্তিং দদাতি কর্হিচিৎ স্মভক্তিযোগং ।।
কৃষ্ণের কর্তব্য এই শাস্ত্র অনুসার।
কৃষ্ণ নামে নাহি করে এতেক বিচার।।
নাম সংকীর্তনে হয় ভব বিমোচন।
চিত্তের মলিন ঘুচে শুদ্ধ হয় মন।।
ভক্তি প্রেমানন্দসিন্ধু বাড়ে ক্ষণে ক্ষণে।
পদে পদে কৃষ্ণ প্রেমামৃত আস্বাদনে।।
কৃষ্ণের অভয়পদ প্রাপ্তির কারণ।
সেবামৃত সমুদ্রেতে করায় মজ্জন।।
এই হেতু কৃষ্ণ হইতে নাম বলবান।
কৃষ্ণ তার তুল্য নহে কেবা আছে আন।।
তথাহি পদ্যাবল্যাং ধৃতানন্দাচার্য কৃত শ্লোক–
চেতোদর্পনমার্জ্জনং ভবমহাদাবাগ্নিনির্বাপণং।
শ্রেয়ঃকৈরবচন্দ্রিকাবিতরণংবিদ্যাবধূজীবনম্‌।।
আনন্দম্বুধিবর্ধনং প্রতিপদং পূর্ণামৃতাস্বাদনং ।
সর্বাত্মস্নপনং পরং বিজয়তে শ্রীকৃষ্ণসংকীর্তনং ।।
ছেন কৃষ্ণ নাম যেবা করয়ে গ্রহণ।
তার যত চেষ্টা রূপ করিল বর্ণন।।
তথাহি বিদগ্ধমাধবে–
তুণ্ডে তাণ্ডবিনী রতিং বিতুনুতে তুণ্ডা লব্ধয়ে
কর্ণক্রোড় কড়ম্বিনী ঘটয়তে কর্ণার্ব্বুদেভ্যঃ স্পৃহাং।
চেতঃপ্রাঙ্গনসঙ্গিনী বিজয়তে সর্ব্বেন্দ্রিয়ানাং
কৃতিং নো জানে জনিতা কিয়দ্ভিরমৃতৈঃ কৃষ্ণেতিবর্ণদ্বয়ী।।
এতাদৃশ চেষ্টা তায় লালসাদি আর।
সদারুচি নামগানে বহে অশ্রুধার।।
তথাহি ভক্তিরসামৃতসিন্ধৌ–
কদাহং যমুনাতীরে নামানি তব কীর্ত্তয়ন্‌।
উদ্বাষ্পঃ পুণ্ডরিকাক্ষ রচয়িষ্যামি তাণ্ডবম্।।
তত্রৈব–
রোদনবিন্দুমকরন্দস্যন্দিদৃগিন্দীবরাদ্য গোবিন্দ।
তব মধুরস্বরকণ্ঠী গায়তি নামাবলিং বালা ।।
শুনিঞা প্রভুর প্রেমাবিষ্ট হৈল মন।
তুষ্ট ইহয়া হরিদাসে কৈলা আলিঙ্গন।।
পান করাইলা মোরে কৃষ্ণ নামামৃত।
আজি শুভদিন মোর হইল কৃতার্থ।।
চিত্ত শুদ্ধ হৈল মোর ভব রোগ নাশ।
আজি হৈতে হইলাম শুদ্ধ কৃষ্ণদাস।।
তোমার মুখে জলধর বর্ষে নামামৃত।
মোর কর্ণ চাতকের স্নিগ্ধ হয় চিত্ত।।
অবএব পুন কহ নামের মহত্ত্ব।
শুনিতেই শ্রদ্ধা বাড়ে ধৈর্য্য নহে চিত্ত।।
দেশকালপাত্র নামের কহ বিবরিয়া।
শৌচাচার বিধি কহ বিচার করিয়া।।
শাস্ত্রজ্ঞান ক্রিয়াহীন নাহি সদাচার।
অধম পামর আদি যত দুরাচার।।
এ সকল লোকে যদি লয় কৃষ্ণ নাম।
হবে কি না হবে তা সভার পরিত্রাণ।।
হরিদাস কহে তুমি পতিতপাবন।
তোমার প্রকট জীব উদ্ধার কারণ।।
তথাপিহ নানা দৈন্যে কর প্রতারণা।
তোমার মায়ায় স্থির হবে কোন জনা।।
আমি ক্ষুদ্র জীব হই নীচ নীচাচার।
আপনে জানিয়া মোরে পুছ বারেবার।।
আজ্ঞা হইলে মোর সর্বনাশ হয়।
তে কারণে কহি কিছু তেজি লাজ ভয়।।
স্থানাস্থান অপেক্ষা না করে কৃষ্ণ নামে।
গ্রহণ করিব মাত্র যেখানে সেখানে।।
কৃষ্ণনামে নাহি কালাকালের বিচার।
পাত্রাপাত্র ভেদ নাহি অধম চণ্ডাল।।
দিক্ষা পুরশ্চর্যা বিধি নিষিধ না মানে।
শুচি বা অশুচি ক্রিয়া নাহি কৃষ্ণ নামে।।
কৃষ্ণ নাম মহামন্ত্র হেন বল ধরে।
একবার জিহ্বা স্পর্শে সভারে উদ্ধারে।।
আনুসঙ্গ ফলে পাপ সংসারের নাশ।
চিত্ত আকর্ষিয়া করে কৃষ্ণপদে দাস।।
আচণ্ডালাবধি প্রেমভক্তি করে দান।
হেন প্রভু ধন্য হেন ধন্য প্রভু নাম।।
তথাহি শ্রীধরস্বামীকৃত শ্লোক —
আকৃষ্টিঃ কৃতচেতসাং সুমহাতামুচ্চাটনং চাংহসাম্‌
আচণ্ডালমমূকলোকসুলভোবস্যশ্চ মুক্তিশ্রিয়ঃ ।
নো দীক্ষাং নচ সৎক্রিয়াং নচ পুরশ্চর্যাং মনাগীক্ষ্যতে
মন্ত্রেহয়ং রসনাস্পৃগেব ফলতি শ্রীকৃষ্ণনামাত্মকঃ।।
নিগমন তার ফল কৃষ্ণ হেন নাম।
রসে পরিপূর্ণ সদা চিদানন্দ ধাম।।
আস্বাদনে সুমধুর মঙ্গল প্রকাশে ।
অসৎক্রিয়া কুটিনাটি অবিদ্যা বিনাশে।।
হেন কৃষ্ণ নামে যার নাহি রতি মতি।
শ্রদ্ধা রুচি নিষ্ঠা ন্যহি নাহিক আসক্তি।
হেলায় শ্রদ্ধায় যদি তেহু একবার।
নাম উচ্চারিতে মাত্র তরয়ে সংসার।।
তথাহি —
মধুরমধুরমেতন্মঙ্গল মঙ্গলানাং সকল
নিগমবন্দি সৎফলং চিৎস্বরূপং।
সহৃদপি পরিগীতং শ্রদ্ধয়া হেলয়া বা
ভৃগুধর লবমাত্রং তারয়েৎ কৃষ্ণনাম ।।
নামে রতি নাহি কিবা শ্রদ্ধাহীন জন।
যৈছে তৈছে একবার করে উচ্চারণ ।।
শুদ্ধাশুদ্ধ বর্ণ ব্যবহিত নাহি মানে।
নামের স্বভাব (সতত) তারে সর্বজনে।।
তথাহি পদ্মপুরাণে নামপরাধনিরস স্তোত্রে–
নামৈকং যস্য বাচি স্মরণপথগতং শ্রোত্রমূলং গতং বা।
শুদ্ধং বাশুদ্ধবর্ণং ব্যবহিতরহিতং তারয়েত্যেব সত্যম্।।
সংকেতে বা পরিহাস্যে লয় কৃষ্ণ নাম।
হেলা করিয়া লয় কিবা করি অবিজ্ঞান।।
তা সভার যত পাপ সর্ব হয় নাশ।
কৃপা করি ভাগবতে কহে বেদব্যাস।।
তথাহি —
সাঙ্কেতং পরিহাসাং বা স্তোভং হেলনমেব বা।
বৈকুণ্ঠ নামগ্রহণমশেষাঘৈ হরং বিদুঃ ।।
মঙ্গল স্বরূপ হয় কৃষ্ণ ইতি নাম ।
যাহার জিহ্বায় বর্ত্তে সেই ভাগ্যবান।।
কোটি মহাপাপ নাশি তারে সর্ব্বজনা।
তুলারাশি দহে যৈছে অগ্নি এককণা।।
তথাহি বিষ্ণুধর্ম্মোত্তরে–
কৃষ্ণেতি মঙ্গলংনাম যস্য বাচি প্রবর্ত্তেতে
ভস্মীভবন্তি রাজেন্দ্র মহাপাতক কোটায়ঃ ।।
অথবা শ্রীকৃষ্ণ নাম পরম পাবন।
একবার যদি কেহু করে উচ্চারণ।।
তা সভার পাপতম বিনাশে সকলি।
সূর্যোদয়ে ভাজে যৈছে অন্ধকারাবলি।।
তথাহি শ্রীধরস্বামীকৃত শ্লোক–
অহং সংহরদখিলং সকৃদুদায়াদেব সকললোকস্য।
তরণিরিব তিমিরজলধের্জয়তি জগন্মঙ্গল হরের্ণাম।।
চোরে চুরি করে সব বাহিরের ধন।
সেহো যদি অচেতন থাকে গৃহীজন।।
কৃষ্ণনাম মহা চোর চেতন থাকিতে।
কর্ণদ্বারে লবা মাত্র প্রবেশিয়া চিত্তে।।
বহু জন্মার্জিত জীবের পাপ ধন যত ।
হরণ করিয়া লয় মুলের সহিত।।
তথাপি পাণ্ডবগীতায়াং ইন্দ্রোবাচ–
নারায়ণনামলবো নরাণাং প্রসিদ্ধ চৌরঃ কথিতঃ পৃথিব্যাং।
অনেকজন্মার্জিতপাপসঞ্চয়ং হরন্তু শেষং শ্রুতিমাত্র কেবলম্‌।।
কৃষ্ণ নামে পাপক্ষয় ভব বিমোচন।
এহো ফল নহে নামের কহিয়ে কারণ।।
সূর্যোদয়ারম্ভে যৈছে তাহার আভাসে।
চৌর প্রেত তমোরাশি ভাজয়ে তরাসে।।
ঐছে কৃষ্ণনামভানু জীবের অন্তরে।
উদয় আভাসে সর্ব পাপ তমো হরে।।
তথাহি রসামৃতসিন্ধৌ ধৃতরাষ্ট্রং প্রতি শ্রীবিদুরোপদেশ–
তং নির্ব্যাজং ভজ গুণনিধে পাবনং পাবনানাং
শ্রদ্ধারজ্যন্মতিরতিতরামুত্তমশ্লোকমৌলিম্‌।
প্রোদ্যন্নন্তঃকরণকুহরে হন্ত যন্নামভানো-
রাভাসোহপিক্ষপয়তি মহাপাতকধ্বান্তরাশিম্‌।।
রাম কৃষ্ণ হরে তিন নামের আভাসে।
পাপক্ষয় মুক্তি লভ্য হয় অনায়াসে।।
তার সাক্ষী অজামিল ব্রাহ্মণ কুমার।
নানা পাপ কৈল কত কৈল অনাচার।।
অন্তকালে যমদূতে আসিয়া বান্ধিল।
দণ্ড পরহার কত করিতে লাগিল।।
কণ্ঠ ঘর্ঘর করে ভয় পাইল মনে।
পুত্র নামে নারায়ণ কৈল উচ্চারণে।।
হেন কালে বিষ্ণুদূত আসিয়া মিলিল।
নামের আভাসে তার শুদ্ধ হৈল মন।
মুক্ত হইয়া বিষ্ণুধামে করিল গমন।।
তথাহি ষষ্ঠস্কন্ধে শুকবাক্যং–
ম্রিয়মাণো হরের্নাম গৃণন্ পুত্রোপচারিতম্‌।
অজামিলোহপ্য গাদ্ধামকিমুত শ্রদ্ধায়া গৃণন্।।
আর যত মহাপাপী গোবধি যবন।
তাহারাও নামাভাসে পাইবে মোচন।
তার সাক্ষী এক ম্লেচ্ছ কার্যানুসন্ধানে।
একেশ্বর প্রবেশিল ঘোরতর বনে।।
সেই বনে ছিল বন শূকর প্রচণ্ড।
দন্তের প্রহারে তারে কৈল খণ্ড খণ্ড।।
হারাম হারাম পুনঃ পুনঃ উচ্চারিল।
নামাভাসে মুক্তি পাই বৈকুণ্ঠকে গেল।।
তথাহি নৃসিংহ পুরাণে–
দংস্ত্রিদংষ্টাহতো শ্লেচ্ছো হারামেতি পুনঃ পুনঃ ।
উক্তাপি মুক্তিমাপ্নোতি কিং পুনঃ পুনঃ শ্রদ্ধায়া গৃণন্‌ ।।
অতএব নামাভাসে জীবের মোচন।
হইবেক প্রভু তুমি না কর চিন্তন।।
না জানিয়া করে যৈছে ঔষুধি ভক্ষণ।
তাহা হৈতে হয় সর্ব রোগ নিবারণ।।
ঐছে কৃষ্ণ নাম কেহু জানে বা না জানে।
সর্ব পাপ হরে মুক্তি শ্রবণে গ্রহণে।।
হেন কৃষ্ণ নাম যদি শ্রদ্ধা করি লয়।
তার কিবা গতি তাহা কহনে না যায়।।
তথাপিহ শাস্ত্রে কহে কৃষ্ণ নামের ফল।
কৃষ্ণপদে প্রেম জন্মায় এই তার বল।।
তথাহি একাদশে —
এবংব্রতঃস্বপ্রিয়নামকীর্ত্যা জাতানুরাগেদ্রুতচিত্ত উচ্চৈঃ ।
হসত্যথেরোদিতিরৌতি গায়ত্যুন্মাদবন্নৃত্যতি লোকবাহ্যঃ।।
এতাদৃশ শুনি প্রভু নামের মহিমা।
হরিদাসে শ্লাঘা কৈল নাহি তার সীমা।।
হরিদাস তুমি হও পতিতপাবন।
তোমার প্রকট জীব উদ্ধার কারণ।।
কত কত জীব তুমি করিলা পবিত্র।
কেবা বুঝিবারে পারে তোমার চরিত্র।।
তোমার মুখে কৃষ্ণনাম করিয়া শ্রবণ।
পবিত্র হইনু মোর সফল জীবন।।
সন্ন্যাসী মানুষ মোর নাহি কিছু ধন।
সবে মাত্র দেহ আছে কৈল সমর্পণ।।
এত বলি আলিঙ্গিতে যান হরিদাসে।
হরিদাস পাছে ভাজে পরম তরাসে।।
মহাপ্রভু বলাৎকারে কৈল আলিঙ্গন।
হরিদাস কৈল প্রভুর চরণ বন্দন।।
তারে আলিঙ্গিয়া প্রভু প্রেমাবিষ্ট হৈলা।
দৈন্য নির্বেদ ভাবে কহিতে লাগিলা।।
কৃষ্ণ নাম কল্পতরু সর্ব ফল ধরে।
যেবা যে বাঞ্ছয়ে তার বাঞ্ছা সিদ্ধ করে।।
নিজ সর্বশক্তি কৃষ্ণ দিল নিজ নামে।
স্মরণে নাহিক দেশ কালাদি নিয়মে।।
খাইতে শুইতে কিবা যথায় তথায়।
নাম উচ্চারিলে মাত্র সর্ব সিদ্ধ হয়।।
অহে কৃষ্ণচন্দ্র হেন করুণা তোমার।
তব নামে নাহি পাত্রাপাত্রের বিচার।
আমার দুর্দৈব হেন নামে নাহি রতি।।
পরকালে না জনি কি হবে মোর গতি।
এত কহি মহাপ্রভু কহে পুনর্বার।
হেন ভাগ্য কবে আর হইবে আমার।।
বদনে তোমার নাম করিতে গ্রহণ।
প্রেমে কণ্ঠ রুদ্ধ হবে গদ্গদ বচন।।
অঙ্গ পুলকিত হবে নেত্রে অশ্রুধার।
স্বেদ কম্প হবে নানা ভাবের বিকার।।
এত বলি মহাপ্রভু আপনার কৃত।
দুই শ্লোক উচ্চারিয়া হইলা অসম্বিত।।

তথাহি প্রভুরুক্ত শ্লোকদ্বয়ং–
নাম্নামকারি বহুধানিজসর্বশক্তিস্তত্রার্পিতা নিয়মিতঃস্মরণে ন কালঃ।
এতাদৃশী তব কৃপা ভগবন্মমাপি দুর্দৈবমীদৃশমিহাজনিনানুরাগঃ।।
তত্রৈব —
নয়নং গলদশ্রুধারয়া বদনং গদ্গদরুদ্ধয়াগিরা।
পুলকৈর্নিচিতং বপুঃ কদা তব নামগ্রহণে ভবিষ্যতি।।
হরিদাস ঠাকুর হরিনাম শুনাইয়া।
প্রভুকে চেতন কৈল চমৎকার হইয়া।।
চেতন পাইয়া প্রভু স্থির কৈলা মন।
হরিদাসে কহে পুন সভঙ্গি বচন।
হরিদাস তুমি হও সর্বতত্ত্ববেত্তা।
আর এক আমাকে কহিবে মর্ম কথা।।
যুগে যুগে অবতার হয় ভগবান।
পাষণ্ড সংহারি সাধু করে পরিত্রাণ।।
প্রতি যুগে যুগে করে ধর্ম সংস্থাপন।
অধর্ম সংহারি করে জীবাদি রক্ষণ।।
তথাহি গীতায়াং শ্রীভগবদ্বাক্যং —
পরিত্রাণায় সাধুনাং বিনাশায়শ্চ দুষ্কৃতাম্‌।
ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে ।।
অতএব কোন যুগে কোন বর্ণ ধরে ।
কোন নাম কোন যুগে ধরেন ঈশ্বরে।।
কোন যুগে কোন ধর্ম করেন স্থাপন।
ক্রমে ক্রমে বিস্তারিয়া কহ বিবরণ।।
হরিদাস কহে চারি যুগে চারি বর্ণ।
বর্ণ অনুরূপে নাম ধরে নারায়ণ।।
সত্যযুগে শুক্ল বর্ণ ধরে শুক্ল নাম।
ধ্যান ধর্ম স্থাপি করে লোক পরিত্রাণ।।
ত্রেতা যুগে রক্ত বর্ণ রক্ত নাম ধরে।
আপনে করিয়া যজ্ঞ শিখান সভারে।।
দ্বাপর যুগেতে শ্যামবর্ণ ভাগবান।
শ্যামশব্দে কৃষ্ণ বর্ণ ধরে কৃষ্ণনাম।।
আপনে অর্চ্চন করি পরিচর্য্যা ধর্ম্ম।
জগতে লওায় সেবা করে সর্ব্বজন।।
কলিযুগে পীতবর্ণ ধরে ভগবান।
পীত শব্দে গৌরবর্ণ গৌরচন্দ্র নাম।।
অঙ্গ উপাঙ্গ পারিষদ গণ সঙ্গে।
পাষণ্ড দলন করে নাম গুণ রঙ্গে।।
নাম সংকীর্ত্তন যুগধর্ম্ম প্রকাশিঞা।
আপনে কীর্ত্তন করে ভক্ত গণ লইয়া।।
আপনি আচরি শিখায়েন জগজনে ।
কলিযুগে গতি নাহি হরিনাম বিনে।।
এই মত চারি যুগে চারি বর্ণ ধরে ।
চারি যুগে চারি ধর্ম্ম পরচার করে।।
চারি যুগে যত জীব করে পরিত্রাণ।
পুরাণ শ্রীভাগবত ইহাতে প্রমাণ।।
তথাহি দশমে নন্দপ্রতি গর্গমুনি বাক্যং —
আসন্বর্ণান্ত্রয়োহাস্য গৃহ্‌ন্তোনুযুগং তনুঃ।
শুক্লোরক্তস্তুথাপীত ইদানীং কৃষ্ণতাং গতঃ।।
একাদশে শ্রীশুকবাক্যং —
কৃতে শুক্ল চতুর্ব্বাহু জটিলঃ বল্কলাম্বর।
কৃষ্ণাজিনোপবিতশ্চ বেত্রদণ্ড কমণ্ডলু।।
তত্রৈব–
ত্রেতায়াং রক্তবর্ণোহসৌ চতুর্ব্বাহু স্ত্রিমেখলঃ।
হিরণ্যকেশস্তুর্য্যাত্মা শ্রুকশ্রু বাদ্যুপ লক্ষিত।।
তত্রৈব–
দ্বাপরে ভগবান্‌ শ্যামঃ পীতবাসা নিজায়ুধঃ।
শ্রীবৎসাদিভিরঙ্কৈশ্চ লক্ষণৈরুপলক্ষিতঃ ।।
ইতি দ্বাপরে উর্ব্বীশ স্তুবন্তি মধুসূদনং
নানাতন্ত্র বিধানেন কলাবপি তথা শৃণু।।
তত্রৈব–
কৃষ্ণবর্ণং ত্বিষাকৃষ্ণং সাঙ্গোপাঙ্গাস্ত্রপার্ষদম্‌।
যজ্ঞৈঃসংকীর্ত্তনপ্রায়ৈ যজন্তি হি সুমেধসঃ ।।
দ্বাদশস্কন্ধে–
কৃতে যজ্ঞায়তে বিষ্ণুং ত্রেতায়াং যজতে মখৈঃ।
দ্বাপরে পরিচর্যায়াং কলৌতদ্ধরিকীর্ত্তনাৎ।।
তথাহি বিষ্ণুপুরাণে —
ধ্যায়ন্‌ কৃতে যজন্‌ যজ্ঞৈ স্ত্রেতায়াং দ্বাপরেহর্চ্চয়ন্‌
যদাপ্নোতি তদাপ্নোতি কলৌ সংকীর্ত্ত্য কেশবম্‌ ।
তথাহি একাদশে শ্রীশুকবাক্যং–
কলিং সভ্যজয়ন্ত্যার্য্যাগুণজ্ঞাঃ সারভাগিনঃ।
যত্র সংকীর্ত্তনেনৈব সর্ব্বস্বার্থোপিলভ্যতে।।
প্রভু কহে তুমি হও কৃষ্ণ কৃপাপাত্র।
তোমার গোচর সব ভক্তি যোগ তত্ত্ব।।
অতএব যে সকল কহিয়াছ তুমি।
শাস্ত্র পরমাণ সত্য মানিলাম আমি।।
কলিযুগে যেই ভগবান অবতরে।
পীতবর্ণ ধরি নাম করে পরচারে।।
হইয়াছে কি হবে কহ তার অবতার।
তেহো প্রয়োজন বস্তু আমা সভাকার।।
হরিদাস কহে তিহু প্রকট হইয়া।
জগৎ তারিল নিজ নাম প্রচারিয়া।।
অদ্যাবধি ভক্ত সঙ্গে করেন কীর্ত্তন।
মর্ত্য লীলাচ্ছলে গুপ্ত ঈশ্বর লক্ষণ।।
আপনাকে লুকাইতে নানা যত্ন করে।
তথাপি তাহার ভক্ত জানএ তাহারে।।
তথাহি যামুনাচার্য্য স্তোত্রে —
উংলঘিত ত্রিবিধ সীম সমাতিশায়ি-
সম্ভাবনঃ তব পরিব্রড়িমস্বভাবম্‌।
মায়াবলেন ভবতাপি নিগুহ্যমানং
পশ্যন্তি কেচিদনিশং ত্বদনন্যভাবাঃ।।
প্রভু কহে কহ তার স্বরূপ লক্ষণ।
আশ্রম আচার আদি যত বিবরণ।।
ঈশ্বর মায়ায় যদি মর্ত্ত্য দেহ ধরে।
মানুষের মত যদি লীলাখেলা করে।।
তবে তারে কিরূপে জানিবে সর্বলোকে।
ক্রমে বিস্তারিয়া সব কহিবে আমাকে।।
হরিদাস কহে যদি কোন কার্য্যান্তরে।
ঈশ্বর প্রকট হয় মানুষ ভিতরে।।
অলৌকিক কার্য্য তার বীর্য্য পরাক্রম।
তাহাতে বেকত হয় ঈশ্বর লক্ষণ।।
তথাহি শ্রীদশমে যমলার্জুনবাক্যং–
তৈস্তৈব তুল্যাতি শৌর্য্যে বীয্যে দেহিস্বসঙ্গতৈঃ।।
যদি বা লৌকিক লীলা করেন ঈশ্বরে।
তথাপিহ বিজ্ঞলোক জানয়ে তাহারে।।
শাস্ত্রে নিরূপণ করে ঈশ্বর লক্ষণ।
বত্রিশ প্রকার মহাপুরুষ ভূষণ।।
তথাহি শামুদ্রকে–
পঞ্চসূক্ষ্ম পঞ্চদীঘ সপ্তরক্তঃ ষড়ুন্নত
ত্রিদৃশ্ব পৃথু গম্ভীরো দ্বাত্রিংশ লক্ষণো মহান্‌ ।।
এসব লক্ষণ তার সন্ন্যাসী স্বরূপ।
তপ্ত হেম কান্তি জিনি শ্রীঅঙ্গের রূপ।।
উদয় অরুণ জিনি বসনের কাঁতি।
দন্তাবলী শোভা যেন মুকুতার পাঁতি।
বদনে চান্দের শোভা কহিতে না পারি।
করপদনখে বিশ চন্দ্র যায় গড়ি।।
আকর্ণ লোচন যেন ভুরু কামধনু।
ননীর পুতলি যৈছে রস মাখা তনু।।
আজানুলম্বিত দুই ভুজ উঠাইয়া।
নানাভাবে নৃত্য করে হরিগুণ গাঞা।।
নানাভাবে আকুল নাহি তার পার।
অশ্রুধারা বহে গঙ্গাযমুনার ধার।।
ভাবাবেশে যবে পড়ি গড়াগড়ি যায়।
সোনার পর্ব্বত যেন ভূমিতে লোটায়।।
চন্দনে ভূষিত অঙ্গ চন্দন বিরাজে।
চন্দনের অঙ্গদ বলয়া দুই ভূজে।।
নিষ্ঠাশান্তিপরায়ণ শান্ত কলেবর।
জগতে সমান ভাব নাহি নিজ পর।।
তথাহি মহাভারতে–
সুবর্ণ হেমাঙ্গোবরাঙ্গশ্চন্দনাঙ্গদী।
সন্ন্যাসকৃচ্ছমঃশান্তোনিষ্ঠাশান্তিপরায়ণঃ।।
সিন্ধুসুতা সেবিত চরণ দুইখানি।
ঊনবিংশ চিহ্ন তাতে সুন্দর বলনি।।
মত্তগজরাজ জিনি গমন মন্থর ।
পদভরে সসাগর মহী টলমল।।
ভূমি পরে যথা পড়ে চরণ যুগল।
পদাঙ্কেতে বসুমতী করে ঝলমল।।
কোনস্থানে অর্ধচন্দ্র কলস ত্রিকোণ।
ইন্দ্রধনু অম্বর গোস্পদ সুশোভন।।
মীন শঙ্খ চক্র অষ্ট কোন ছত্র ধ্বজ।
কোনস্থানে জবাঙ্কুশ উর্দ্ধরেখাম্বুজ।।
জম্বুফল স্বস্তিকাদি কোন কোন স্থানে।
সৌভাগ্যতে কেহু কেহু পায় দরশনে।।
তাতে নিরূপণ করি ঈশ্বর লক্ষণ।
শাস্ত্র অনুসারে বিজ্ঞ করেন বর্ণন।।
যথা রূপচিন্তামনৌ স্তবরাজে–
চন্দ্রর্ধৎ কলসং ত্রিকোণ ধুনষীঃ খং গোস্পদং প্রেষ্ঠিকাম।
শঙ্খং সব্যপদেহথ দক্ষিণপদে কোণাষ্টকং স্বস্তিকম্‌।।
চক্রং ছত্রং জবাঙ্কুশং ধ্বজপবীজম্বুঙ্গ রেখাম্বুজম্‌।
বিভানং হরিমনুবিংশর্হালক্ষ্মার্চিতাঙ্ঘিং ভজে।।
যথা পদ্মপুরাণে নারদং প্রতি শ্রীব্রহ্মোবাচ–
শৃণু নারদ বক্ষ্যামি পাদযোশ্চিহ্ন লক্ষণং ভগবৎ
কৃষ্ণরূপশ্চ হ্যাননৈকঘনস্যচ।
ষোড়সৈবতু চিহ্নানি ময়াদৃষ্টানি তৎপদো
দক্ষিণে চাষ্ট চিহ্নানি উতরে সপ্তএবচ।।
ধ্বজপদ্মং তথা বজ্রমঙ্কুশোযবএবচ।
স্বস্তিকঞ্চো উর্দ্ধরেখা চ অষ্টকোণং তথৈবচ।।
সপ্তান্যানি প্রবক্ষ্যামি সাম্প্রতং বৈষ্ণবোত্তম।
ইন্দ্রচাপং ত্রিকোণঞ্চ কলসং চার্দ্ধ চন্দ্রকম্‌।।
অম্বরং মৎসচিহ্নঞ্চ গোস্সদং সপ্তমং স্মৃতম।।
অঙ্কান্যেতানিভোবিদ্বন্‌ দৃশ্যন্তেতুয়াদাকদা।
কৃষ্ণাখ্যন্তুপরং ব্রহ্মভুরিজাতং ন সংশয়ঃ।।
দ্বয়ংবাথ ত্রয়ং বাথ চত্বারঃ পঞ্চচৈবচ
দৃশ্যন্তে বৈষ্ণব শ্রেষ্ঠ অবতারে কথঞ্চন।।
ষোড়শঞ্চ তথাচিহ্নং শৃণু দেবর্ষি সত্তম।
জম্বুফলসমাকারং দৃশ্যন্তে যত্র কুত্রাচিৎ।।
এ সকল চিহ্ন তার ঈশ্বর লক্ষণ।
এবে কহি যুগধর্ম্ম নাম সংকীর্ত্তন।।
নাম সংকীর্ত্তন ধ্বনি জগত মোহন।
পৃথিবীর নারিগণ করে আকর্ষণ।।
সে সকল দূরে রহু যতেক ঈশ্বরী।
মধুকণ্ঠস্বরে তারা কাঁপে থরথরি।।
স্থকিত হইল সূর্য্য কীর্ত্তনের নাদে।
নাচনে রথের ঘোড়া পড়িল প্রমাদে।।
ভাবাবেশে অচেতন স্থির নহে মন।
জড় প্রায় হইলেন কশ্যপ নন্দন।।
পবন স্তভিত করে যার কণ্ঠস্বরে।
প্রেমে গরগর বায়ু চলিতে না পারে।।
যার কণ্ঠধ্বনি শুনি দেব পুরন্দর।
সহস্র নয়নে ধারা বহে নিরন্তর।।
কীর্ত্তনের ধ্বনি শুনি সপ্ত ঋষিগণে।
শুনিতে না পাইয়া পুন খেদ করে মনে।।
উত্থানপাদের কথা কহনে না যায়।
কীর্ত্তনের ধ্বনি শুনি নাচে আর গায়।।
পরম উল্লাসে দেহ গেহ পাসরিল।
মনুর নন্দন যেন পাগল হইল।।
ধ্যানযোগে ছিল ব্রহ্মা বাহ্য নাহি জানে।
হেনকালে হরিধ্বনি প্রবেশিল কানে।।
চিত্ত আকর্ষণ করি ধ্যান কৈল ভঙ্গ।
স্থির হৈতে নারে হৈল প্রেমের তরঙ্গ।।
অবিশ্রান্ত অশ্রু ধারা বহয়ে নয়নে।
চমৎকার হইয়া ব্রহ্মা ভাবে মনে মনে।।
এ হেন মধুর শব্দ কোথা হৈতে আইল।
কর্ণে প্রবেশিয়া মোরে উন্মাদ করিল।।
পুরুবে শুনিল যৈছে মুরুলীর নাদ।
তৈছে এই ধ্বনি মোর ধ্যান কৈল বাদ।।
এতেক চিন্তিয়া ব্রহ্মা হইলা নিশবদ।
দেহ গেহ আদি পাসরিলা ব্রহ্মপদ ।।
যথা শ্রীচৈতন্যচন্দ্রোদয় নাটকে–
ক্ষোভং ক্ষৌণী মৃগাক্ষ্যাঃ স্থগনমিবরবেঃ কম্পমীশা।
বধুনাং স্তম্ভবাতস্য কুর্ব্বন্নহমরপরি বৃঢ়স্যাহশ্রুমক্ষ্মাং সহস্রে।।
খেদং সপ্তর্ষি গোষ্ঠাঃ পরমরসমল্লাসমৌত্তানপাদে।
র্ধ্যানধ্বংসং বিরিঞ্চেঃ সজয়তি ভগবতকীর্ত্তনানন্দনাদঃ ।।
অতএব এতাদৃশ কীর্ত্তনের ধ্বনি ।
কর্ণে প্রবেশিয়া মোহে দেব ঋষি মুনি।।
ব্রহ্মা আদি নরনারী লক্ষ্মী আদি যত।
যাহার কীর্ত্তনে মোহে সেই ভগবত।।
প্রভু কহে পীতবর্ণ নাম সংকীর্ত্তন।
জীব পরিত্রাণ আর সন্ন্যাস আশ্রম।।
এ চারি লক্ষণ কলি যুগে অবতারে।
কৈছে হয় কহ মোরে শাস্ত্র অনুসারে।
হরিদাস কহে যাতে এ চারি লক্ষণ
সেই ভগবান শাস্ত্রে করে নিরূপণ।।
ভূতভব্য বর্ত্তমান মুনিগণে জানে।
তাতে তারা নিরূপিয়া পুরাণে বাখানে।।
কলিযুগে গৌরবর্ণ হবে ভগবান।
নাম প্রচারিয়া জীব করিবেক ত্রাণ।।
সন্ন্যাস আশ্রম আর করিবে গ্রহণ।
এইমত করে মুনি ভবিষ্য বর্ণন।।
তথাহি গরূঢ় পুরাণে–
মুর্ত্তোগৌরঃ সুদীর্ঘাঙ্গস্ত্রিস্রোতাতীর সম্ভবঃ।
দয়ালু কীর্ত্তনগ্রাহী ভবিষ্যামি কলৌযুগে।।
তথাচ কৌর্ম্মে–
কলিনাদহ্যমান্যনা মরন্দায় তনুভুতাম্‌।
জন্ম প্রথম সন্ধ্যায়াং ভবিষ্যামি দ্বিজাতিষু।।
তথাচ দেবীপুরাণে শিবনারদ সংবাদে–
কলৌ প্রথম সন্ধ্যায়াং ভগবানঃ ভূত ভাবনঃ।
দ্বিজাতিনাং কূলে জন্ম শন্তানো পুরুষোত্তমঃ।।
তথাচ ভবিষ্যপুরাণে–
আনন্দাশ্রুকলারোম হর্ষ পুর্ন্ন তপোধনম্‌।
সর্ব্বেমামেব দৃক্ষিন্তি কলৌসন্ন্যাসরূপিনম্‌।।
তথাচ উপপুরাণে ব্যাসং প্রতি শ্রীভগবদ্বাক্যং–
অহমেবকচিৎব্রহ্মণ সন্ন্যাসামমাশ্রিতঃ।
হরিভক্তিং গ্রহয়ামি কলৌ পাপহুতান্নরান্‌।।
প্রভু কহে ন্যাসি ভগবান কহ যারে।
তিহো এবে কোথা আছে দেখাহ আমারে।।
হরিদাস কহে তার নীলাচলে স্থিতি।
দারুব্রহ্ম সমীপেতে আছেন সম্প্রতি।।
প্রভু কহে কোন শাস্ত্রে করে নিরূপণ।
হরিদাস কহে আছে পুরাণ বচন।।
তথাহি ব্রহ্মাণ্ডপুরাণে–
কলৌ প্রথম সন্ধ্যায়াং লক্ষ্মীকান্ত ভবিষ্যতি।
দারুব্রহ্ম সমীপস্থঃ সন্ন্যাসী গোরবিগ্রহঃ।।
প্রভু কহে তার জন্ম কোন স্থান।
কাহার নন্দন তিহো কিবা তার নাম।।
হরিদাস কহে তাহা জগতে বিদিত।
কহিয়া কি প্রয়োজন চিত্ত সশঙ্কিত।।
প্রভু কহে হরিদাস কেন কর ভয়।
হরিকথা হরিনাম জীবের আশ্রয়।।
যুগে যুগে ভগবান যে যে লীলা করে ।
তাহার শ্রবণে জীব ভবসিন্ধু তরে।।
সাধুর স্বভাব মাত্র শ্রবণ কীর্ত্তন।
শ্রবণ কীর্ত্তনে পায় কৃষ্ণ প্রেমধন।।
প্রেমে কৃষ্ণ মিলে ভুঞ্জে সেবানন্দ সুখ।
ভবরোগ ছুটে যায় অনর্থাদি দুঃখ।।
অতএব কহ ভয় লাজ পরিহর।
কলিযুগে কোথা অবতীর্ণ গদাধর।।
হরিহাস কহে প্রভু না করিহ রোষ।
প্রভু কহে কৃষ্ণ কথায় সবারি সন্তোষ।।
হরিদাস কহে সেই কৃষ্ণ ইচ্ছা বিনে।
কৃষ্ণ কথা নাহি সরে জীবের বদনে।।
অতএব কৃষ্ণের ইচ্ছায় কহি আমি।
অপরাধ ক্ষমা প্রতু করিবে আপনি।
প্রভু কহে কহ তোমার নাহি অপরাধ।
হরিদাস কহে পাই প্রভুর প্রসাদ।।
কলিযুগে অবতার নদীয়া নগরে
জগনাথ মিশ্র পত্নী শচীর উদরে।।
ফাল্গুনের পৌর্ণমাসী সন্ধ্যা অবসরে
প্রকট হইল প্রভু গ্রহণের কালে।
চন্দ্র উপরাগ ছলে জগতের লোক।
হরি হরি বলি পাসরিল দুঃখশোক।।
নানা জনে নানাধন ব্রাহ্মণেরে দিল।
নিমাঞি বলিয়া নাম নারীগণে থুইল।।
বিপ্রগণে নাম রাখিলেন বিশ্বম্ভর।
গৌরাঙ্গ রাখিল নাম দেখিয়া সুন্দর।।
চন্দ্র জিনি মুখচন্দ্র তাহার কারণে।
গৌরচন্দ্র নাম রাখিলেন ভক্তগণে।।
কৃষ্ণ নাম দিয়া বিশ্ব চেতন করিল।
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য নাম ভারতী রাখিল।।
শচীগর্ভ জাত তাতে জগতের জন।
শ্রীশচীনন্দন বলি করে উচ্চারণ।।
নবদ্বীপে জন্ম তাতে প্রিয় ভক্তবৃন্দ।
প্রেমাবিষ্ট হইয়া ডাকে নবদ্বীপচন্দ্র।।
এতবলি হরিদাস হইল নিশবদ।
ভাবে পুলকিত অঙ্গ প্রেমে গদগদ।।
প্রভু বলে কিবা কহ প্রলাপের মত ।
বুঝিতে না পারি শুনি লাগে বিপরীত।।
ঈশ্বর স্থাপন কর মানুষ ভিতরে।
তোমার শকতি কেহ বুঝিতে না পারে।।
হরিদাস কহে যাতে ঈশ্বর লক্ষণ।
মানুষ ভিতরে তেহো না হয় গোপন।।
ঈশ্বর বেকত হয় ক্রিয়া অনুসারে।
অতএব কহি কিছু তার ব্যবহারে।।
অদ্বৈত আচার্য আর প্রভু নিত্যানন্দ।
যাহার ষড়ভুজ দেখি পাইল আনন্দ।।
বরাহ আকার হই মুরারি অঙ্গনে।
দশনে লইয়া বারি যে কৈল ভ্রমণে।।
জগাই মাধাই ছিল পাপী দুরাচার।
সে দোহারে অবহেলে যে কৈল উদ্ধার।।
শ্রীবাসের ভ্রাতৃসুতা নারায়ণী নাম।
চারি বৎসরের তেহো বালিকা অজ্ঞান।।
কৃষ্ণ বোলাইয়া তারে করাই রোদন।
শ্রীবাসের রাজভয় যে কৈল মোচন।।
নিশাভাগে শ্রীবাসের পুত্র মরি গেল।
শক্তি বলে যেহো তাহে পুনু জিয়াইল।।
মৃতপুত্র মুখে করি তত্ত্ব পরকাশ।
গোষ্ঠীসহ শ্রীবাসের দুঃখ কৈল নাশ।।
প্রতাপরুদ্রের পুন এই লীলাছলে।
ষড়ভুজ দেখায় যেহো নিজ মায়াবলে।।
তেহো যে ঈশ্বর হবে ইথে কি বিস্ময়।
সূর্য্য উদিলে হাতে ঢাকা নাহি যায়।।
প্রভু কহে ঈশ্বরের মর্ম্ম না জানিয়া।
একেরে কহিছ আর বিভ্রম হইয়া।।
নিত্যানন্দ অবধূত পরম ঈশ্বর ।
অংশ কলা দ্বারে বিশ্ব পানে নিরন্তর।।
কলিযুগে প্রকট হইয়া পুনর্বার।
জগাই মাধাই আদি করিল উদ্ধার।।
তথাহি শ্রীস্বরূপ গোস্বামী কড়চায়াং–
সঙ্কর্ষণং কারণতোয়শায়ী গর্ভোদশায়ী চ পয়োব্ধিশায়ী।
শেষশ্চ যস্যাংশকলাঃ স নিত্যানন্দাখ্য রামহং শরণং মমাস্তু ।।
অদ্বৈত আচার্য্য হয় ঈশ্বরের মুর্ত্তি।
তেহো মোরে প্রকাশিল ষড়ভুজাকৃতি।।
মায়াদ্বারে সৃষ্টি করে কারণাব্ধিশায়ী।
তার অবতার হয় আচার্য্য গোসাঞি।।
হরি সহ অভিন্নাত্মা ভক্তি করে দান।
ঈশ্বর হইয়া করে ভক্ত অভিমান।।
তত্রৈব–
মহাবিষ্ণুর্জগতকর্ত্তা মায়য়া যঃ সৃজত্যদঃ ।
তস্যাবতার এবায়মদ্বৈতাচার্য্য ঈশ্বরঃ।।
তত্রৈব–
অদ্বৈতং হরিনাদ্বৈতাদাচার্য্যং ভক্তিশংসনাৎ।
ভক্তাবতারমীশং তমদ্বৈতাচার্য্যমাশ্রয়ে ।।
সাক্ষাৎ নারদ হয় পণ্ডিত শ্রীবাস।
ভাগবতে তাহার মহিমা পরকাশ।।
পূর্ব্বে চিত্তকেতু রাজা মৃত পুত্র মুখে।
তত্ত্ব কহাইয়া তারা খণ্ডাইল দুঃখে।।
তৈছে মৃত পুত্র দেহে শক্তি সঞ্চারিয়া।
তত্ত্ব কহাইল সব সন্তোষ লাগিয়া।।
রুদ্র অংশ রামের কিংকর হনুমন্ত।
এবে নাম ধরে তেহো শ্রীমুরারি গুপ্ত।।
তাহার মহিমা কেহু কহিতে না পারে।
বরাহ আকার মোর কৈল শক্তি বলে।।
রঘুনাথের পদে তার একান্ত ভক্তি।
আর কোন দিন মোরে কৈল রামমূর্ত্তি।।
শ্রীবাসের ভ্রাতৃসুতা নারায়ণী নাম।
নিত্যসিদ্ধা হয় তেহো ঈশ্বরী সমান।।
স্বাভাবিক প্রেম তার কৃষ্ণের চরণে।
অতএব কৃষ্ণ বলি করিল রোদনে।।
শিশুকালে হৈল যৈছে ধ্রুবের ভকতি।
তৈছে নারায়ণীর কৃষ্ণ পদে রতি মতি।।
প্রতাপরুদ্রের শক্তি কহনে না যায়।
দেব পুরন্দর হেন মোর মনে লয়।।
তিহু মোরে প্রকাশিল ষড়ভুজাকার।
দেবমায়া বুকে হেন শক্তি আছে কার।।
এ সকল গূঢ় তত্ত্ব হইলা জানিয়া।
আমাকে ঈশ্বর কহ মায়া মুগ্ধ হইয়া।।
তোমার আনন্দ ইথে মোর সর্ব্বনাশ।
লোকে শুনি করিবেক নিন্দা উপহাস।।
বিজ্ঞ হইয়া অবিচারে কহ হেন বাণী।
লাজে মরি আর তাহে পুণ্য হয় হানি।।
আমি ক্ষুদ্র জীব হই মায়ার কিঙ্কর।
সচ্চিৎ আনন্দ যুক্ত স্বতন্ত্র ঈশ্বর।।
হেন ঈশ্বরের সহ তুল্য কর মোরে।
ভয় নাহি কর মোর প্রাণ কাঁপে ডরে।।
তথাহি সন্দর্ভে সর্বজ্ঞ সুক্ত–
হ্লদিন্যা সম্বিদাশ্লিষ্টঃ সচ্চিদানন্দ ঈশ্বরঃ।
স্বাবিদ্যাসংবৃতো জীবঃ সংক্লেশনিকরাকরঃ।
জীবের কা কথা ব্রহ্মা রুদ্রাদি দেবতা।
ঈশ্বরের সহ যেই মানয়ে সমতা।।
তাহারে পাষণ্ড করি করে নিরূপণ।
শাস্ত্র আজ্ঞা হয় আছে বিজ্ঞের বচন।।
তথাহি বৈষ্ণব তন্ত্রে–
যস্তু নারায়ণং দেবং ব্রহ্মরুদ্রাদিদৈবতৈঃ।
সমত্বেনৈব বীক্ষেত স পাষণ্ডী ভবেৎ ধ্রুবম্।।
অতএব মুখে না আনিহ হেন কথা।
যাতে পরকাল যায় মনে পায় ব্যাথা।
হরিদাস কহে প্রভু কেন কর রোষ।
মহাজনে কহে(ইহা) মোর কিবা দোষ।।
সার্বভৌম ভট্টাচার্য যেন বৃহস্সতি ।
জগদ্গুরু হয় তেহো ধরে সর্ব শক্তি।।
বেদপুরাণাদি ভাগবৎ শাস্ত্র যত।
তাহার গোচর হয় জানে সর্ব তত্ত্ব।।
তেহো তোমা নিরুপিল ঈশ্বর করিয়া।
আমি কহি তা সভার বদনে শুনিয়া।।
তথাহি সার্ব্বভৌমোক্ত–
বৈরাগ্য বিদ্যা নিজ ভক্তি যোগঃ শিক্ষার্থমেকঃ পুরুষঃ পুরাণঃ।
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য শরীর ধারী কৃপাম্বুধি র্যস্তমহং প্রপদ্যে।।
কালান্নষ্টং ভক্তিযোগং নিজং যঃ প্রাদুস্কর্ত্তুং কৃষ্ণচৈতন্য নামা।
আবির্ভুতস্তস্য পাদারবিন্দে গাঢ়ং গাঢ়ং লীয়তাং চিত্তভৃঙ্গঃ।।
তোমার কৃপা পাত্র রূপ সর্ব্বশাস্ত্র জানে।
রসিক ভক্ত তারে জগতে বাখানে।
নানা শাস্ত্র বাখানিয়া ভক্তি কৈল সার।
তাহার বর্ণন যৈছে সুরধুনী ধার।।
তুমি তারে কৃপা কৈলা শক্তি সঞ্চারিয়া।
তেহো তোমা নিরূপিল ঈশ্বর করিয়া।।
তথাহি বিদগ্ধ মাধবে–
অনর্পিতচরীংচিরাৎ করুণয়াবতীর্ণ কলৌ।
সমর্পয়িতুমুন্নতোজ্জ্বলরসাং স্বভক্তিশ্রিয়ম্‌।।
হরিঃ পুরটসুন্দরদ্যুতিকদম্বসন্দীপিতঃ।
সদা হৃদয় কন্দরে স্ফুরতু বঃ শচীনন্দনঃ।।
প্রভু কহে সার্ব্বভৌম রূপ সনাতন ।
মুরারি মুকন্দ আদি যত ভক্তগণ।।
শ্রীবাস পণ্ডিত কশীমিশ্র রামানন্দ।
নরহরি গদাধর স্বরূপ গোবিন্দ।।
পণ্ডিত জগদানন্দাচার্য্য গোপীনাথ।
প্রতাপরুদ্র নরপতি আর বাণী নাথ।।
রাঘব পণ্ডিত আর সেন শিবানন্দ।
বাচস্পতি সত্যরাজ বসু রামানন্দ।।
বক্রেশ্বর পণ্ডিত জগদীশাদিক যত।
গণনা না যায় আর আছে কত শত।।
এ সকল কৃষ্ণভক্ত মোরে দয়া করে।
বাৎসল্যতে নানাজনে নানাকথা বলে।।
ইহা সভার বচনে ঈশ্বর নহি আমি।
পুরাণে কহয়ে যদি তবে আমি মানি।।
হরিদাস কহে শাস্ত্র জগতের আঁখি।
শাস্ত্রদ্বারে কুপথ সুপথ সব দেখি।।
ভালমন্দ বিচার জানিয়ে শাস্ত্র হৈতে।
শাস্ত্র বিনা প্রতীত ন্য হয় কার চিত্তে।।
শাস্ত্রে যদি থাকে সাক্ষাৎ দেখিতে না পায়।
তাথে কারো কারো চিত্তে প্রতীত না যায়।।
আকাশে গ্রহণ যৈছে শাস্ত্রে নিরূপিল।
নরমাত্র যদি কেহু দেখিতে না পাইল।।
তবে তারা শাস্ত্রবাক্য মিথ্যা করি মানে।
সাক্ষাৎ দেখিলে সত্য মানে সর্বজনে।।
তৈছে শাস্ত্রে আছে কৃষ্ণ হবে অবতার।
সাক্ষাৎ দেখিলে প্রত্যয় জন্ময়ে সভার।।
কলিযুগে নবদ্বীপে শচীর উদরে।
সাক্ষাৎ প্রকট কৈলা নাম পরচারে।।
জীব পরিত্রাণ হেতু সন্ন্যাস গ্রহণ।
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য নাম করিল ধারণ।।
অতএব রূপ সার্বভৌম দুইজনে।
তোমাকে ঈশ্বর কহে পুরাণ প্রমাণে।।
তথাহি পাদ্মে বৈশাখ মাহাত্ম্যে–
দিবি জাভুবিজায়ধ্বং জায়ধ্বং ভক্তিযোগিনঃ।
কলৌ সংকীর্ত্তনারম্ভে ভবিষ্যামি শচীসুতঃ।
তথাচ বামন পুরাণে–
কলি ঘোর তমচ্ছন্নান্‌ সর্বনাচারবর্জিতান্‌।
শচীগর্ভে সমুদ্ভব তারয়িয্যামি নারদঃ ।।
তথাচ জৈমিনি ভারতে–
স্বম্নদীতীরমাচ্ছায় নবদ্বীপ জনালয়ে
ভক্তিযোগপ্রকাশায় লোকস্যানু গ্রহায় চ।।
সন্ন্যাসাশ্রমমাশ্রিত্য কৃষ্ণচৈতন্য নামক।।
তথাচ–
অন্যাবতারাবহ্বঃ সর্বসাধারণোদ্ভঢ়া।
কলৌ কৃষ্ণাবতারোপি গূঢ় সন্ন্যাসরূপধৃকঃ।।
প্রভু কহে তুমি আর রূপ সার্বভৌম।
উত্তম ভকভ মধ্যে তিনের গণন।।
কৃষ্ণ চরণারবিন্দে গাঢ় প্রেমভক্তি।
স্থাবর জঙ্গম দেখ নিজ ইষ্ট মূর্তি।।
তে কারণে ঈশ্বর করিয়া কহ মোরে।
তোমাদের বাক্য কেবা লঙ্ঘিবারে পারে।।
তথাহি একাদশে–
সর্বভূতেষু যঃ পশ্যেৎ ভগদ্ভাব আত্মনঃ।
ভূতানি ভগবত্যাত্মন্যেষ ভাগবতোত্তমঃ।।
অতএব পরাজয় মানিলাম আমি।
যাহা বলি সুখ পাও সেই কহ বাণী।।
হরিদাস কহে এই স্বভাব তোমার।
ভক্তস্থানে পরাভব হয়ো সর্ব্বকাল।।
ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা রাখি আপনি হারিলা।
রথের চাকা ধরি তারে মারিবারে গেলা।।
তথাহি প্রথম স্কন্ধে যুধিষ্ঠিরং প্রতি ভীষ্মবাক্যং–
স্বনিগম্মপহায় মৎ প্রতিজ্ঞামৃতমধিকর্ত্তুমবল্লুতো রথস্থঃ।
ধৃতরথচরণোহভ্যয়াচ্চলদ্‌গুর্হরিরিব হন্তমিভং গতোত্তরীয়।।
অতএব ভক্ত বৎসল নামধর।
ভক্তের কারণে নানা অবতার কর।।
সে সকল অবতারে মোর নমস্কার।
গৌর অবতার মোর প্রয়োজন সার।।
এতবলি দৈন্য করি কহে পুনর্বার।
হেনদিন কবে আর হইবে আমার।।
তোমার চরণ দুই হৃদয়ে ধরিয়া।
নয়নে তোমার চান্দমুখ নিরখিয়া ।।
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য নাম জিহ্বা উচ্চারিতে ।
প্রাণ নিষ্ক্রমণ হবে নামের সহিতে।।
হাহা প্রভু বিশ্বম্ভর শচীর নন্দন।
মোর এই অভিলাষ করিবে পূরণ।।
স্থাবর জঙ্গম মধ্যে যত জীব জাতি।
নিজ কর্ম্ম ফলে যদি হয় গতাগতি।।
সে সকল যোনি মধ্যে জনম লভিয়া।
তোমা না পাসরি যেন মায়ামূগ্ধ হইয়া।।
দৃঢ়ভক্তি হয় যেন তোমার চরণে।
গজেন্দ্রাদি পূর্ব্বে যৈছে শুনিল পুরাণে।।
কুন্ত্যোবাচ–
স্বকর্ম্মফলানি দৃষ্টাঃ যাং যাং যোনিং ব্রজাম্যহম্‌।
তস্যাং তস্যাং হৃষিকেশ ত্বয়ি ভক্তির্দৃঢ়াস্তুমে।।
প্রভু কহে যৈছে তোমার নাম হরিদাস।
তৈছে তোমার স্তুতি ভক্তি দৈন্য অভিলাষ।।
ভক্তের স্বভাব এই অকথ্য কথন।
বাক্যে স্তুতি করে মনে করেন স্মরণ।।
কায়কী বন্দনা অদি করে নিরন্তর।
তথাপি না হয় তৃপ্তি নেত্রে বহে জল।।
হরিভক্তিসুধোদয়ে–
বাগ্‌ভিস্তুবন্তো মনসা সমরন্ত
স্তুন্বানমন্তোহপ্যনিশং ন তৃপ্তাঃ।
ভক্তাঃ শ্রবন্নেত্রজলাঃ সমগ্রমায়ুরেবের সমর্পয়ন্তি।।
কৃষ্ণ অনুরাগে ভক্ত সর্বসুখ তেজে।
সুতদার সুহৃৎ রাজ্য ছাড়ি কৃষ্ণ ভজে।।
তথাহি পঞ্চম স্কন্ধে–
যো দুস্ত্যজান্‌ দারসুতান্সুহৃদ্রাজ্যং হৃদিস্সৃশঃ।
জহো যুবৈব মনবদুত্তমো শ্লোক লালসঃ।।
মল প্রায় রাজ সিংহাসন তেয়াগিয়া ।
ভাণ্ড হাতে ভিক্ষা মাগে ভিখারী হইয়া।।
তথাহি পদ্মপুরাণে–
হরৌ রতিং বহন্নেষ নরেন্দ্রাণাং শিখামণি।
ভিক্ষামটন্নরিপুরে স্বপাকমপি বন্দতে।।
হেন ভক্ত তুমি তোমার মনের বাসনা।
কৃষ্ণ পূর্ণ করিবেন মনের ভাবনা।।
বড় সুখ পাই আমি তোমার দর্শনে।
কৃষ্ণ কথা কৃষ্ণ নাম শ্রবণে কীর্তনে।।
অতএব তোমা স্থানে আসি নিতি নিতি।।
ঐছে তোমার প্রেমভক্তি অনুরাগ প্রীতি।।
নামের মহিমা শুনিলাম তোমা হইতে
তোমার প্রকট জানি জগৎ তারিতে।।
রত্নগণ মধ্যে যৈছে কৌস্তুভ প্রধান।
ভক্তগণ মধ্যে তৈছে তোমার ব্যাখ্যান।।
কৃপা করি কৃষ্ণ দিয়াছেন হেন সঙ্গ।
না জানি কৃষ্ণের ইচ্ছা সঙ্গ করে ভঙ্গ।।
এতবলি প্রভু হরিদাসে আলিঙ্গল।
হরিদাস পদতলে ভূমিষ্ঠ হইল।।
হরিদাসে কৃপা করি গৌর ভগবান।
সিন্ধু স্নান করি যাইলেন বাসাস্থান।।
হরিদাস বসি করে নাম সংকীর্তন।
গৌরাঙ্গ বলিয়া ক্ষণে করেন রোদন।।
প্রভু হরিদাসে যত প্রশ্নোত্তর হইল।
অতি বিস্তারিত কথা সংক্ষেপে কহিল।।
শ্রদ্ধা করি ইহা যেই করে আস্বাদন।
শ্রবণে পঠনে হয় অভীষ্ট পূরণ।।
চিত্ত সুনির্ম্মল হয় অমঙ্গল হরে।
সর্ব্ব তীর্থ স্নান ফল মিলয়ে তাহারে।।
চারিবেদ অধ্যয়ন ফল সেই পায়।
নানা বিদ্যা সংর্ত্তি হয় কৃষ্ণের কৃপায়।।
সাধুসঙ্গে লোভ তার বাড়ে দিনে দিনে।
কৃষ্ণের চরণ স্মৃতি সদা হয় মনে।।
নামে রুচি হয় তার কৃষ্ণধামে বাস।
নানা ভাব হয় তার চিত্তে পরকাশ।।
চৈতন্য-পাদারবিন্দে হয় রতি মতি।
অন্তকালে হয় ব্রজে রাধাকৃষ্ণ প্রাপ্তি।।
লোকনাথ পাদপদ্ম হৃদয় বিলাস।
নাম চিন্তামণি কহে নরোত্তম দাস।।
– ইতি শ্রীনামচিন্তামণি পুস্তক সংপূণ।।

(সা. প. ২১১৭ পুথি হইতে গৃহীত পাঠ)