নমামি গৌরচন্দ্রং তং নিত্যানন্দং তৎপরং ।
অদ্বৈত শ্রীনিবাসাং চ গৌরভক্তগণাং স্তথা।।
প্রণমহুঁ গুরুদেব শ্রীপাদকমল।
যার কৃপালেশে হয় কৃষ্ণ প্রাপ্তি বল।।
এমন শ্রীগুরু পায় সদা করি ধ্যান।
কৃপার ইঙ্গিতে খণ্ডে সকল অজ্ঞান।।
শ্রীগুরু চরণ ধ্যান শ্রীগুরু সেবন।
শ্রীগুরু চরিত্র নিত্য শ্রবণ কীর্তন।।
নিজগ্রন্থে শ্রীযুত রূপ মহাশয়।
প্রথমে শ্রীগুরু ধ্যান লিখিল নিশ্চয়।।
তত্রৈব শ্রীগুরুধ্যানং
শ্রীমন্মঞ্জনপাদপঙ্কজ যুগং সৎশাস্ত্রকাসারজং।
ভ্রজদ্বিক্রমসঞ্চরৎ সুরুচিরং ধূলিপরান্বিতম্।।
সাবল্যাঙ্কুলি পল্লবং হ্লিলিতং সাদ্বিক্রমেনান্তরং।
তন্মেমানসভৃঙ্গ শৃঙ্খলমহো বন্দে গুরোঃ শ্রীতনো।।
জয় জয় শ্রীচৈতন্য ব্রজেন্দ্রনন্দন।
প্রণাম সহস্র আর স্মরণ বন্দন।।
কলিযুগে অবতরি জীবেরে তারিল।
ভক্ত সঙ্গে লঞা প্রেমভক্তি প্রচারিল।।
শ্রীবলরাম গোসাঞি দ্বিতীয় কলেবর।
নিত্যানন্দ রূপ যিহো ভুবন ভিতর।।
দীনহীন পতিত পামর জনে দয়া।
সব উদ্ধারিল কিছু না রাখিল মায়া।।
হেন নিত্যানন্দ পাদদ্বন্দ্বে নমস্কার ।
জন্মে জন্মে হঙ যেন কিংকর তাঁহার।।
অদ্বৈত গোসাঞির পাদপদ্ম করো ধ্যান।
চৈতন্য অবতারে যিহোঁ নাশিল অজ্ঞান।।
দ্বাদশ গোপাল আর চৌষট্টি মোহান্ত।
বৈষ্ণব গোসাঞি যত কে করিব অন্ত।।
অনন্ত কৃষ্ণের মূর্ত্তি অনন্ত অবতার।
ঐছন বৈষ্ণব প্রভুর না পাইয়ে পার।।
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য আর শ্রীনিত্যানন্দ।
অদ্বৈত শ্রীবাস আর গৌর ভক্তবৃন্দ।।
তোমা সভার চরিত্র হয়ে অনন্ত অপার।
অনন্ত কহিতে নারে যাহার বিস্তার।।
মুঞি ক্ষুদ্র মন্দ মতি কিবা পাব পার।
যোগ্য নহি তোমা সভার কৃপা পাইবার।।
কৃপা যোগ্য নহি কৃপা কি করিবে মোরে।
আপনার গুণে কৃপা করহ কিংকরে।।
পতিত অধম দুষ্ট কঠিন জীবন।
ইহাতে তারিলে জানি পতিতপাবন।।
দৈন্যরূপ ভাবভক্তি কিছুই না জানি।
আপনার গুণে দয়া করহ আপনি।।
এক বাঞ্ছা হয় মোর বহুদিন হৈতে।
সাধ্য সাধনবস্তু না পারি বুঝিতে।।
যদি কৃপা কর মোরে দেহ ভক্তি বল।
বাঞ্ছা পূর্ণ হয় তবে জনম সফল।।
জয় জয় নিত্যানন্দ শক্তি দাতা তুমি।
স্বগুণ চরিত্র কিছূ ইবে লিখি আমি।।
আশ্রয় জাতীয় সাধন প্রাপ্তি আমার।
কেহো কোনরূপে বলে নারি বুঝিবার।।
শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ রাম।
যোগমায়া মহাবিষ্ণু অদ্বৈত আখ্যান।।
প্রথমেই শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য গোসাঞি।
ব্রজেন্দ্র নন্দন তিহঁ অন্য মত নাঞি।।
তথাহি–
ব্যৃহঃ প্রাদুর্ভাব দাদ্যঃ গৃহে ষ্বনক দুর্লভেঃ ।
গোষ্ঠেঃ মায়য়াসাঙ্গং শ্রীলীলাপুরুষোত্তমঃ।।
বাসুদেব গৃহে বাসুদেব নাম ধরে।
সেই দ্বারে কৈল কৃষ্ণ অসুর সংহারে।।
ঐশ্বর্য মিশ্রিত ব্রজে যেই লীলা হয়।
বাসুদেব দ্বারে সব লীলা সে করয়।।
ব্রজে শুদ্ধ লীলা করে ব্রজেন্দ্রকুমার।
মায়ার সহিত জন্ম হয়েত তাহার।।
লীলা পুরুষোত্তম বলি বলিয়ে তাহারে।
ব্রজের মাধুর্য্য লীলা যিহঁ পরচারে।।
ঐশ্বর্য প্রকাশ বাল্য পৌগণ্ডের কর্ম।
রাধাসহ ব্রজে লীলা কিশোর অতি মর্ম্ম।।
কিন্তু ব্রজে নিত্যলীলা দ্বিবিধ প্রকার।
লীলায় প্রকট নিত্য গুপ্ত তাহার।।
তাহার প্রকাশলীলা প্রকট হয়েন।
স্বয়ংরূপ স্বরূপ দুই এতিন কহেন।।
তথাহি —
যঃ স্বয়ং বশতে নিত্যং … বর্ত্মময়ং জগৎ।
স্বয়ং রূপঃ স্বরূপৈকঃ কলৌ গৌরো ভবিষ্যতি।।
শুনহ লক্ষণ কথা ইহার বিস্তার।
কিন্তু বহু বিররণ আছয়ে ইহার।।
মথুরাগমন কথা আর নিত্য লীলা।
মাতাপিতা গোপীসঙ্গে গোলোকে আইলা।।
তথাহি সনাতনোক্তং–
তত্রস্থা নন্দগোপাদয়ঃ সর্ব্বে জনাঃ পুত্রদারাদি সহিতাঃ।
বাসুদেব প্রসাদেন দিব্যরূপ ধরাঃ বিমানরূঢ়া পরম বৈকুণ্ঠ
লোকমবাপুঃ।। তদুক্তং।। শ্রীরূপচরণে।। গোপগোপিকা
সঙ্গে গোলোকং প্রতিগচ্ছতিঃ ইতি।
এই এক অনুসার শুন ভক্তগণ।
আর কথা কৃষ্ণের মথুরা গমন।।
মথুরাগমন বাসুদেব মহাবল।
গোসাঞি লেখিল তার লক্ষণ সকল।।
তথাহি —
রথেন মথুরাং গত্বা দন্তবক্রং নিহত্য চ।
সপষ্টং পাদ্যে পুরাণেহস্য কৃষ্ণস্যোক্তা ব্রজেগতি।।
অথ প্রকট রূপেণ কৃষ্ণ যদুপুরিং ব্রজেৎ।।
ব্রজেশজনুমাচ্ছাদ্য স্বয়ং কুঞ্জলতাং গতঃ।।
মথুরা গমনাদি কৈল মহাশয়।
সেইকালে ব্রজলীলা অপ্রকট হয়।।
বাসুদেব সর্ঙ্কর্ষণ মথুরাকে গেলা।
কৃষ্ণ বলরাম দুই অপ্রকট হৈলা।।
দুষ্ট দলিবারে বাসুদেব সঙ্কর্ষণ।
দুষ্ট দলি দোঁহে কৈল্য পৃথিবী পালন।।
দ্বারিকাদি লীলা পূর্ণ করিলা গোসাঞি।
লীলা শেষ হৈল মনে করিল তথাই।।
সর্ব্ববংশ নাশ অর্থ মনেতে ভাবিল।
ব্রহ্ম শাপ তথা আসি উপস্থিত হৈল।।
সেইকালে সঙ্কর্ষণ ধ্যানেতে বসিলা।
লীলাসম্বরণ বলি তাহাতে পাইলা।।
নিজস্থানে মহাপুরুষ গমন করিলা।
লীলার কারণে কৃষ্ণ দেহপাত কৈলা।।
নীলাচলপুরি আসি আপনে রহিলা।
জগন্নাথ বলরাম সুভদ্রা হইলা।।
সে সকল সূত্র কথা যে লাগি কহিলা।।
সে কথা রহিল কথা বাঢ়িয়া চলিলা।।
ব্রজে যে বিহার কৈল্য ব্রজেন্দ্রনন্দন।
অবধি রহিল বাঞ্ছা নহিল পূরণ।।
প্রথমে অদ্বৈত মহা বিষ্ণুর উদয়।
অবতীর্ণ হয়্যা বিসময় হৈলা মহাশয়।।
কৃষ্ণ বলরাম যদি আনি পৃথিবীরে।
তবে যে সকল লোক জানিব আমারে।।
এমত করয়ে ধ্যান অদ্বৈত ঠাকুর ।
আনি অবতার কৈল প্রেম প্রচুর।।
কৃষ্ণের দ্বিতীয় মূর্ত্তি শ্রীবলরাম।
জগত তারিল ধরি নিত্যানন্দ নাম।।
শচীর উদরে প্রভু আপনি জন্মিলা।
বিশ্বভরি প্রেমধন যিহোঁ প্রকাশিলা।।
অকথ্য কথন কিছু বুঝনে না যায়।
উপাসনাতত্ত্বসার নরোত্তম গায়।।

গুরু কৃষ্ণ বৈষ্ণব হয় তিন প্রকার।
চৈতন্য নিত্যানন্দ অদ্বৈত হয়েন সার।।
মদন গোপাল শ্রীগোবিন্দ গোপিনাথ।
এই তিন বিহরে ব্রজে ব্রজলোকসাথ।।
গুরুরতি বৈষ্ণব রতি কৃষ্ণ রতিসার।
তিনে তিন রতি হয় আশ্রয় বিচার।।
আশ্রয় জাতীয় রতি গুরুরূপ ধ্যান।
উদ্দীপন আশ্রয় রতি বৈষ্ণব যার নাম।।
কৃষ্ণ আলম্বন রতি গাঢ়তা জন্মিলে।
গাঢ়তা হইলে প্রেমাশ্রু হঞা দোলে।।
গুরুরতি নিত্যানন্দ জগতের গুরু।
প্রৈম মর্ম্ম দিয়া হৈল বাঞ্ছাকল্পতরু।।
অতএব গুরুরতি নিত্যানন্দ রায়।
সর্ব্বরূপে যেহোঁ করে চৈতন্য সহায়।।
অদ্বৈত আচার্য্য গোসাঞি ভক্ত অবতার।
অতএব বৈষ্ণবরতি খ্যাতি হৈল যাঁর।।
কৃষ্ণরতি চৈতন্য স্বয়ং ভগবান।
যাহা বই বস্তুতত্ত্ব না দেখি-এ আন।।
গুরু কৃষ্ণ বৈষ্ণব তিনে তিন রতি।
চৈতন্য নিত্যানন্দাদ্বৈত এই তিনে স্থিতি।।
ইবে যাথে যেই রতি শুন বিবরণ।
ক্রমে সে লিখিব যার সম্বন্ধ কারণ।।
গুরুতে আশ্রয় রতি সেবা নিষ্ঠা হয়।
নিষ্ঠা হৈতে প্রেমতত্ত্ব করয়ে উদয়।।
গুরুতে নাহিক নিষ্ঠা কৃষ্ণেতে কি হয়।
গুরু ত্যাগি কৃপাযোগ্য কোন কালে নয়।।
কায়মন বাক্যে করে গুরুর সেবন।
তবে যাঞা হয় কৃষ্ণ প্রাপ্তির ভাজন।।
গুরুতে করয়ে নিষ্ঠা বৈষ্ণবেতে নয়।
বৈষ্ণব নহিলে কৃষ্ণ কৃপা কি করয়।।
বৈষ্ণবের আলম্বন রতি যার উপজয়।
সঙ্গে রঙ্গে তবে সেই শ্রীকৃষ্ণ ভজয়।।
ভক্তের নহিলে কৃপা ভক্ত হৈতে নারে ।
বৈষ্ণবের কৃপা হইলে (কৃষ্ণ) কৃপা করে।।
কৃষ্ণ রতি প্রীতি নিত্য নূতন যাহার।
সদা অনুরাগী চিত্ত বহে প্রেমধার।।
কৃষ্ণ প্রাণপতি এই সম্বন্ধ জানিবা।
এই অনুরূপা ভাব রাধারে ভাবিবা।।
প্রাণাধিক প্রাণপ্রিয়া প্রাণের দোসর।
আপনে ভাবিবা সদা রাধার কিংকর।।
শ্রীকৃষ্ণের সুখে সুখ তার দুঃখে দুঃখ।
অন্যভাব রহিত সদা শ্রীকৃষ্ণ উন্মুখ।।
মহাভাব শ্রীরাধার অঙ্গিকার করি।
নিজ বাঞ্ছা পূর্ণ কৈল গৌরাঙ্গ শ্রীহরি।।
সে ভাবে আশ্রয় দায় তাহার সেবন।
তাহার চরণে সিদ্ধ দেহ সমর্পণ।।
অনুসার সাধুমার্গ শুন ভক্তগণ।
অনুসার বিনে নহে শ্রীকৃষ্ণ ভজন।।
সম্বন্ধ তত্ত্বের কথা পাছেতে কহিব ।
কথা অনুসারে কথা হেথাই রচিব।।
বাহ্য অর্দ্ধবাহ্য প্রভুর অন্তর্দশা আর ।
এই তিন মুখ্য অন্য আনুষঙ্গী আর।।
আনুষঙ্গ ভাব প্রভুর আস্বাদন হয়।
মুখ্য তিন ভাব এই জানিহ নিশ্চয়।।
মনোবৃত্তি এক আনুষঙ্গী যত আর।
লিখিলে বাঢ়য়ে গ্রন্থ বহুত বিস্তার।।
সংক্ষেপে লিখি যে কিছু দিগ দরশন।
বহুত বিস্তার কথা না হয়ে বর্ণন।।
বাহ্য কৃষ্ণকথা কৃষ্ণলীলা আস্বাদন।
দেহের স্বভাবে করে স্নান ভোজন।।
হরির্নাম জাপ্য পূজা ঈশ্বর দর্শন।
ভক্ত সঙ্গে রঙ্গে করে কীর্ত্তন নর্ত্তন।।
কীর্ত্তন শ্রবণে হয় ভাবের উদয়।
ভাব হৈলে পুলকাঙ্গ অশ্রু নেত্রে বয়।।
ভাবের স্বরূপ রূপ হৃদয়ে প্রকাশ।
লালাশ্রাব অষ্ট হাস কিছু নহে ত্রাস।।
সেই কালে অন্তর্দশা প্রবেশ করয়।
রাধাকৃষ্ণ লীলা করে সে লীলা দেখয়।।
বৃকভানুকিশোরি আর ব্রজেন্দ্রকুমার।
সখি সহ নিত্য যেহোঁ করয়ে বিহার।।
হাস্য আলিঙ্গন আর কটাক্ষের ভঙ্গি।
অধরে অধর দোহাঁ দেখি নানা রঙ্গি।।
এইরূপে কৃষ্ণলীলা করে দরশন।
অন্তর্দশা জানি ভক্ত করে সংকীর্ত্তন।।
সেইকালে মহাপ্রভুর অর্দ্ধবাহ্য হয়।
অন্তর্দশা দেখি যেবা প্রকট করয়।।
এইমত ভাব প্রভুর বুঝিবে সকল।
বুঝিয়া সাধন চেষ্টা করিবে নির্ম্মল।।
এই অনুসারে পূর্ব্বাপরের বিচার।
আশ্রয় জাতীয় কর সম্বন্ধ ব্যবহার।।
বৈষ্ণব গোসাঞি সব পূর মোর আশ।
উপাসনাতত্ত্ব কহে নরোত্তম দাস।।

কৃষ্ণের সম্বন্ধতত্ত্ব এইরূপে জানি।
বৈষ্ণবে করহ ভাব এই অনুমানি।।
অদ্বৈত আচার্য গোসাঞি আর ভক্তগণ।
নাম সব কত লব সংখ্যায়ে গণন।।
দ্বাদশ গোপাল আর মহান্ত সকল।
সেব নিত্য সিদ্ধ সব বৈষ্ণব মণ্ডল।।
স্বরূপ রূপ সনাতন প্রভুর যত গণ।
পূর্বে রাধাকৃষ্ণ সহ যত ভক্তগণ।।
সে সব চৈতন্য সঙ্গে হয় অবতার।
কেবা কোন যূথ হয় নারি বুঝিবার।।
অগম্যে কহিলে কথা দোষ যে সঞ্চারে।
পর ছাড়ি পূর্ব্ব ইউবে করিয়ে বিচারে।।
যৌথিকগণ হয় অযৌথিক আর ।
যৌথিক সারাংশ অযৌথিক সারাংশ পার।।
দেবকন্যা মুনিকন্যা শ্রুতিকন্যাগণ।
যজ্ঞ-পত্নী আদি করি যৌথিকের গণ।।
যূথ সখিভাবে যারা শ্রীকৃষ্ণ পাইল।
যৌথিক সংজ্ঞার পাঠ এই গোসাঞি লেখিল।।
অযৌথিক সখি কথা এবে কহি শুন।
শুনিলে ভজন পুষ্ট বাড়য়ে দ্বিগুণ।।
ললিতা বিশাখা এই নিত্য সিদ্ধগণ।
কৃষ্ণ যৈছে নিত্য সিদ্ধ তৈছে সিদ্ধ হন।।
কৃষ্ণ সুখ হেতু হয় যত ব্যবহার।
সেই সব কর্ম্ম ইষ্ট তাহা সভাকার।।
কৃষ্ণে সুখ দিয়া নিজ কোটি সুখ পায়।
কৃষ্ণানন্দময়ী কৃষ্ণ আনন্দ বাঢ়য়।।
তথাহি —
আত্মাকোটি গুণাৎ কৃষ্ণে প্রেমাণং পরমং গতাঃ।
নিত্যানন্দ গুণাঃ সর্ব্বে নিত্যসিদ্ধা মুকুন্দবৎ।।

তার অনুরূপা হয় মঞ্জরির গণ।
সখি আজ্ঞাশ্রয় সেবা তাহার করণ।।
প্রাচীনা এক হয় আর হয়েত নবীনা।
প্রাচীনা সে সখিগণ মঞ্জরি নবীনা।।
তথাহি —
প্রাচীনা ললিতাদ্যানং নবীনা মঞ্জুলাদয়ঃ।
প্রাচীনা শুভগাত্রবনিরতাঃ সাধ্যমাশ্রয়াঃ।।

ক্রমে ক্রমে সাধন করি সিদ্ধ কৈল ভয়।
অযৌথিক বলি তারে জানিহ নিশ্চয়।।
তাহাতে আশ্রয় যার সাধন অনুরতা।
তার নাম হয়ে ইবে সাধন নিরতা।।
তথাহি–
ক্রমেনৈব প্রপদ্যেত যৌথিকং রসামাশ্রয়া।
অন্যানুগাকৃপাসিদ্ধা সর্ব্বশাস্ত্রমতং যথা।।

যার সেবা পরিচর্য্যা সখিগণ করে।
যারে সুখ দিতে অঙ্গে ভূষণাদি পরে।।
সেই মূর্ত্তি সেই ভাব চৈতন্য গোসাঞি।
আশ্রয় অনুরূপা ভাব সাধকের ঠাঞি।।
শ্রীগুরু পরম গুরু পরাৎপর গুরু।
পরমষ্টী গুরুর গুরু চৈতন্য কল্পতরু।।
গুরু রূপাশ্রয় মস্ত্র ক্রমে সিদ্ধ হয়।
সম্বদ্ধ বুঝিবে ভাব অনুরূপা কয়।।
দীক্ষাকালে করে শিষ্য আত্ম সমর্পণ।
আত্মস্বামী সম্বন্ধ গুরু এই তার মর্ম্ম।।
বৈষ্ণব সুখের গুরু রসের নিবাস।
সুখ স্বামী বলি সম্বন্ধ মনে অভিলাষ।।
এসব করণ কৃষ্ণ প্রাপ্তির কারণ।
প্রাণপতি সম্বন্ধ হন ব্রজেন্দ্রনন্দন।।
ব্রজেন্দ্রনন্দন রাধা প্রাণের ঈশ্বরী।
কি প্রকট অপ্রকট তাহার মাধুরী।।
সহজতা ধর্ম্ম মর্ম্ম সহজ মাধুরি।
সহজ রসের সিন্ধু সহজ চাতুরি।।
বিধির মাধুরী সব তাহাতে নিন্দয়।
অবধি মাধুরী রস সুখ আস্বাদয়।।
বিধির মাধুরী যত নিন্দন করিয়া।
সহজ মাধুরী পান করে লুব্ধ হঞা।।
সহজ কৈসর বয় সহজ লাবণ্য।
সহজ ললিত রূপ সহজ যৌবন।।
সহজ অঙ্গের ভঙ্গি সহজ রঙ্গিমা।
সহজ ভূষণ অঙ্গে কি দিব উপমা।।
সহজ নিগূঢ় স্থল অত্যন্ত দুর্ল্লভ।
সহজ উত্তম বলি এই অনুভব।।
সহজ সহজ সব রসকেলি মর্ম্ম।
সহজ চলন সব সহজত ধর্ম্ম।।
কৃষ্ণ সুখে কামক্রিয়া কৃষ্ণেতে বিলাস।
কৃষ্ণ সুখ পায় যাতে তাহাতে উল্লাস।।
এইমত বিলাস করেন তার সঙ্গে।
হাস্য পরিহাস রাসক্রীড়া রঙ্গে।।
এইরূপে নিত্যলীলা সদা বৃদ্ধি হয়।
চিদানন্দময় লীলা হ্রাস কভু নয়।।
তাহা হৈতে নিত্য লীলা প্রকট প্রকাস।
সে লীলা রতন তাতে ভক্তগণের আশ।।
প্রকট বাহুল্য লীলা না যায় লিখন।
অল্পাক্ষরে কিছু করি দিগ দরশন।।
কৃষ্ণ প্রকট নন্দালয়ে গোকুল হইলা।
চারিরসের ভক্ত সঙ্গে লঞা খেলা কৈলা।।
মধুর গোপীর সঙ্গে ত্রিবিধ বিহার।
মহারস লীলা আর সঙ্গেতে বিহার।।
তাতে নিত্যগপ্ত লীলা আর সে করিল।
নিত্যের চরিত্র সব তাতে সঞ্চারিল।।
বৃকভানুকিশোরী আর যত সখীগণ।
এই এক লীলা করে ব্রজেন্দ্রনন্দন।।
সংকেতে পুলিনে আর রাধাকুণ্ড তীরে।
প্রকাশ করিলা যেবা করয়ে সুসারে।।
মহারাস লীলা কৈল সর্ব আকর্ষণ।
আর এক লীলা কৈল বস্ত্র হরণ।।
এবিধি প্রকারে বহু লীলা প্রকাশিলা।
সে সকল লীলা কিছু লিখিতে নারিলা।।
শ্রীগোবিন্দ মদনগোপাল গোপীনাথ।
এই তিন ঠাকুর রহে ব্রজজন সাথ।।
এই তিনের পাদপদ্ম সদা করি ধ্যান।
তিনে এক বস্তু হয় ইথে নাহি আন।।
ভিন্ন ভাব করি মনে কিছু না জানিবা।
ভিন্ন লঘু জ্ঞান হৈলে অপরাধ পাবা।।
একথা লিখিতে মনে বড় ছিল আশ।
উপাসনাতত্ত্ব কহে নরোত্তম দাস।।

কৃপা কর গৌরচন্দ্র কৃপার সাগর।
পতিতে করিয়া কৃপা করহ কিংকর।।
মোসম পতিত নাহি ভুবন ভিতর।
ফুলিঙ্গ একমন মোর বিষয় বিস্তর।।
কাম ক্রোধ লোভ মোরে কৈল হতজ্ঞান।
তোমা বিনে নিস্তারিতে না দেখি যে আন।।
কেন বা পাপিষ্ঠ জন্ম পৃথিবীতে হৈল।
চৈতন্যের কেলি রঙ্গ দেখিতে না পাইল।।
সেসব বৈষ্ণব সঙ্গ মোর নাহি হৈল।
অভাগা পাপিষ্ঠ জন্ম কেন বা লভিল ।।
নিত্যানন্দ পাদপদ্ম পূজিতে না পাইল।
দুর্লভ মানুষ জন্ম অকারণে গেল।।
শ্রীনিত্যানন্দ আর শ্রীঅদ্বৈতচন্দ্রে।
জীব নিস্তারিলা দুহেঁ দিয়া প্রেমফাঁদে।।
প্রেমে ঢল ঢল অঙ্গ পদ্ম লোচন।
ডগমগ নেত্রে সদা অশ্রু বরিষণ।।
সুবলিত দীর্ঘ ভুজ প্রকাণ্ড শরীর।
মন্থর গমন তাতে মহামল্ল ধীর।।
প্রভাত কালের সূর্য্য দেখি অঙ্গ কান্তি।
দিননাথ বলিয়া লোকের হয় ভ্রান্তি।।
কিবা সে বক্ষের ঠান অতি সুবিস্তার।
সিংহ জিনি মাঝাখিনি দেখিতে যাহার।।
শ্রীনাভি গভীর যেন ফুল্ল কমল।
শ্রীহরি চন্দন ঐছন সঙ্গ শীতল।।
রম্ভা জিনি উরু কিবা দেখি মনোহর।
উপামা দিবার নাঞি সংসার ভিতর।।
মুখপদ্ম নেত্রপদ্ম হস্তপদ্ম আর।
পাদপদ্ম মনোহর শোভা নাহি তার।।
শ্রীপাদ উপামা নাহি সংসার ভিতরে।
তবে যে উপমা দিয়ে জানিবার তরে।।
জয় জয় নিত্যানন্দ আনন্দের কন্দ।
জন্মে জন্মে ভজঁ যেন তুয়া পদদ্বন্দ্ব।।
রাধাকৃষ্ণ ভজিবারে যার আছে আশ।
নিত্যানন্দ ভজন করু অধিক উল্লাস।।
নিতাই না জানে করে চৈতন্যতে রতি।
ভাব সিদ্ধ নহে তার চৈতন্য উন্মতি।।
অদ্বৈত-বিমুখ জনের মুখ না দেখিয়ে।
চৈতন্য-বিমুখ জনের সঙ্গ না করিয়ে।
শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য আর শ্রীনিত্যানন্দ।
শরণ লইলু (আর) শ্রীঅদ্বৈতচন্দ্র।।
গৌরভক্তগণ কৃপা করহ আমারে।
অরা কে করিব দয়া সংসার ভিতরে।।
স্মরণ লভিনুঁ গুরু বৈষ্ণব চরণে।
যার কৃপালেসে হয় বাঞ্ছ্যর পূরণে।।
শ্রীগুরু বৈষ্ণব পাদপদ্ম আস।
উপাসনাতত্ত্ব কহে নরোত্তম দাস।।

জয় জয় গৌরচন্দ্র জয় দীনবন্ধু।
জয় জয় নিত্যানন্দ করুণার সিন্ধু।।
দুর্গম ভজন কথা কহন না যায়।
অনুভবে ভজন তত্ত্ব সংজ্ঞা পাওয়া যায়।।
ভক্তির আশ্রয় যদি করয়ে সাধন।
তবে সে তাহার হয় মানস পোষণ।।
মানস পুষ্ট হৈলে হয় প্রেমময়রূপ।
প্রেম সিদ্ধ হৈলে হয় প্রেমের স্বরূপ।।
স্বরূপ বিচার তার যতেক লক্ষণ।
তার পরে নাহি পায় ভক্তিহীন জন।।
লৌকিক করিলে হয় অলৌকিক কর্ম।
লৌকিকতা ত্যাগ করে যার এক ধর্ম।।
অলৌকিক কথা যত ধর্ম ত্যাগ করে।
তথাপিহ লৌকিক ধর্ম ছাড়িতে না পারে।।
লৌকিক করিয়া হয় লোকাতীত পার।
যার ধর্ম প্রেম ধর্ম করয়ে আচার।।
অলৌকিক যার ধর্ম লৌকিক ব্যবহার।
এসব না জানে জ্ঞান আশ্রয় যাহার।।
জ্ঞানমার্গ কর্মমার্গ বিভেদ লক্ষণ।
জ্ঞানে শূন্য ব্রজ কর্ম লক্ষ্মীনারায়ণ।।
যোগস্থল সূক্ষ্ম এই শাস্ত্রেতে বাখানে।
শাস্ত্রপারগ যেই সেজন জানে।।
তারে সব বিধি ত্যাগ করয়ে খণ্ডন।
স্বধর্ম আচার তার শুন প্রয়োজন ।।
যজ্ঞ জ্ঞান তপদান কর্ম আদি করি।
এসব ছাড়িলে হয় ভক্তি অধিকারী।।
সামাম্য লৌকিক সব দুরে পরিহরে।।
কৃষ্ণ লৌকিকতা ধর্ম অঙ্গিকার করে।।
কৃষ্ণ লৌকিকতা যেই সেই অলৌকিক।
ইহা বহি যত দেখ সামান্য লৌকিক।।
ধর্ম কর্ম জ্ঞান কিছু স্বপ্‌নে না যজিবে।
আনুকূল্যে কৃষ্ণ তত্ত্ব সদাই ভাবিবে।।
ব্রজলোক ভাব ঘন তৎপর হইয়া।
ব্রজে রাধাকৃষ্ণ সেব জ্ঞান খাণ্ডাইয়া।।
কাম রসময় মূর্তি রাধাঠাকুরাণি।
তাঁহার আশ্রয় মূল প্রয়োজন জানি।।
নিত্য সিদ্ধগণ আর অনুচরিগণ।
তা সভার আজ্ঞা যেই সেই সে কারণ।।
কামরূপা অনুরূপা তার অনুরূপা।
কামকর্ম্ম কার্য্যাসন অনুভাব স্বরূপা।।
সকাম আপন চেষ্টা ধরে কাম নাম।
কৃষ্ণ সুখ কাম সেই ধরে প্রেম নাম।।
কৃষ্ণ সুখ অর্থে দুঃখ সুখ করি মানে।
কৃষ্ণ দুঃখ সম যেই সেই ইহা জানে।।
কামক্রিয়া কৃষ্ণে রতি সতত আলম্বন।
কৃষ্ণ প্রীতি নিষ্ঠা হয় সুখে অগেয়ান।।
কৃষ্ণের নিমিত্ত চেষ্টা প্রকাষ্ঠা অন্তরে।
কৃষ্ণ সুখের নিমিত্ত দেহ মাত্র ধরে।।
কামরূপা অনুরূপা এসব আচারে।
তার অনুরূপা যেই সে ধর্ম্ম আচারে।।
যজ্ঞ ধর্ম্ম কুল ক্রিয়া দূরে পরিহরে।
কুটি নাটী পরিপাটী বিনাশ অন্তরে।।
এসব ছাড়িলে হয় রতির উদয়।
তবে প্রেম কিরণ তার হৃদে প্রবেশয়।।
চিত্তের কৈতব জাঢ্য যাবত না যায়।
তাবত দেহ অভিলাষ সুখ সেই চায়।।
প্রমাণ বিরুদ্ধ ধর্ম্ম অভিলাষ সব।
যাবত অভিলাষ তাবৎ থাকে কর্ম্ম সব।।
অভিলাষ উত্তম দ্রব্য তাতে মন বাঢ়ে।
কৃষ্ণের ভজনে মন শিথিলতা পাড়ে।।
উত্তম সদগুণ কৃষ্ণ সৌন্দর্য্য মাধুরি।
যার গুণে আকর্ষএ লক্ষ্মী আদি করি ।।
যার সম ব্রহ্মাণ্ড ভিতরে নাহি আর।
কিবা পাটান্তর দিব মহিমা তাহার।।
যার রূপগুণে সব ব্রজবধুগণ।
কুল ক্রিয়া পতি তেজি করিল সেবন।।
হেন কৃষ্ণাশ্রয় হয়া না করে ভজন।
অভিলাষ শুষ্ক জ্ঞানে করয়ে বঞ্চন।।
মায়াত্যাগ করে পুন মায়ার চরিত।
অনিত্য করয়ে ত্যাগ পুন সেই নিত।।
কি দেখি সংসার ত্যাগ কি শুনি করিল।
অভিলাষ মায়া তার পথ ভুলাইল।।
মহাবিজ্ঞ জন যদি রাখে অভিলাষ।
স্বগুণেতে যায় সদা অভিলাষ পাশ।।
কৃষ্ণ চিন্তা রহিত করি নিজ চিন্তা দেই।
যে লাগি রহিত চিন্তা পুন চিন্তা সেই।।
ধর্ম অনুসারে যেই সেই সে করিব।
আর সব অভিলাষ দূরে তিয়াগিব।।
অভিলাষ যত দেখ সব মায়া ময়।
ধর্ম অনুসারে যেই সেই সে করিব।
আর সব অভিলাষ দূরে তিয়াগিব।।
অভিলাষ যত দেখ সব মায়া ময়।
ধর্ম ছাড়াইয়া মায়া আপন করয়।।
মায়াতে পড়িয়া মুঞি সব পাসরিলুঁ ।
যার লাগি সব ছাড়ি তারে তিয়াগিলুঁ ।।
নিজ গ্রন্থে শ্রীযুত শ্রীরূপ মহাশয় ।
মায়াত্যাগ হেতু বহু লিখিল নিশ্চয়।।
কর্ম ছাড়ি কৃষ্ণ ভজে তারে মায়া নারে।
কর্ম আবর্তন মায়াগ্রস্ত করে তারে।।
নিরপেক্ষ হয়া করে কৃষ্ণের ভজন।
আপন না রহে মায়া পালায় তৎক্ষণ।।
মায়াতে রহিত সবে তবে নিষ্ঠা হয়।
নিষ্ঠা হৈলে ভাবসিন্ধু প্রেম উপজয়।।
প্রেম ক্রমে মানসে সিদ্ধি জানিহ নিশ্চয় ।
সিদ্ধ দেহ পাঞা করে কৃষ্ণ সেবা লয়।।
তাহার অনুগত শুন মহতের গণ।
বুঝিয়া করহ সদা কৃষ্ণের ভজন।।
আপন হৃদয়ে ধর প্রকৃতি স্বরূপা।
রূপ গুণ বয়ঃ সেবা রাধা অনুরূপা।।
অঙ্গের মাধুরী বেশ ভূষণাদি করি।
কৃষ্ণ সুখ হেতু এই সিদ্ধ দেহে পরি।।
কৃষ্ণ সুখে কাম ক্রিয়া রস পরিহাস।
উল্লাসে অধিক তার বাঢ়য়ে প্রকাশ।।
নিজ প্রীতি অর্থে কৃষ্ণ সুখ বাঢ়াইয়া।
যত অভিলাষ করে কৃষ্ণের লাগিয়া।।
নিজ প্রিয় সখি সঙ্গে ঐক্যভাব করি।
বাঢ়য়ে উল্লাস ভাব চাতুরী মাধুরি।।
শ্রীকৃষ্ণ সেবন চেষ্টা সতত বাঢ়য়।।
সাধনাঙ্গ সেবানিষ্ঠা ততোধিক হয়।।
নিজ সখিগণ আজ্ঞা পালন করয়।
তবে রাধাকৃষ্ণ সেবা রত্ন যোগ্য হয়।।
সিদ্ধ দেহে এই সব সাধক ভাবয়।
সাধনা সাধক দেহে করয়ে নিশ্চয়।।
অন্যভাব তেজি ভজ ব্রজেন্দ্রনন্দন।
যেই ইহা করে সেই সাধু মহাজন।।
বৈষ্ণব গোসাঞি মোর প্রাণের ঈশ্বর।
তোমা বিনু বন্ধু নাঞি সংসার ভিতর।।
শ্রীরামচন্দ্র কবিরাজ হয়ে সঙ্গোত্তম।
তাঁর সঙ্গ কৃপাবলে এসব নিয়ম।।
এসকল কথা সাধু জনের শ্রবণ।
যেন ইহা নাঞি শুনে পাষণ্ডির গণ।।
বৈষ্ণব নিন্দক আর গুরুদ্রোহী জনে।
গুপ্ত রাখিবে কথা যেন নাহি শুনে।।
অন্য আশ্রয় জন দেখিতে না পায়।
বৈষ্ণব গোসাঞি ইহা করিহ সহায়।।
ইহা আস্বাদন কর বৈষ্ণবের গণ।
উপাসনাতত্ত্ব কহে দাস নরোত্তম।।

জয় জয় গৌরচন্দ্র জয় দীনবন্ধু ।
জয় প্রেমানন্দ নিত্যানন্দ কৃপাসিন্ধু ।।
তত্ত্ববস্তু নিরূপণ শাস্ত্রানুরহিত।
অনুভবানন্দ কহে সে সব উচিত।।
অনুভবে কহে যেই সেই সব সার।
বেদ বিধি নাহি পায় তা সভার পার।।

পেজ ৫৯০ ৫৯১

তথাহি–
যস্যা সগোলকে নিত্য য়সং সেপরমোব্যয়ঃ
লিলায়া প্রতিবিম্বেন সয়ং নিত্যং ব্রজে সদা।
এসকল কথা নহে সিদ্ধান্ত গোচর।
উপাসনা অনুভবে জানয়ে তৎপর।।
রতিপ্রেম তারতম্য কৃষ্ণ প্রাপ্তি লাগি।
সিদ্ধান্ত বিরুদ্ধ অর্থ তে কারণে ত্যাগি।।
কৃষ্ণ মর্মরস লীলা অনুভব গোচর।
সাধুসঙ্গে অনুভবে বাঢ়য়ে বিস্তর।।
ইহা বুঝি সাধু সঙ্গ করহ সর্ব্বথা।
প্রপঞ্চ করহ ত্যাগ শুনি কৃষ্ণ কথা।।
রামচন্দ্র কবিরাজ মোর প্রাণসঙ্গ।
কৃষ্ণের মাধুরী গুণে যাহার তরঙ্গ।।
তারসঙ্গ বলে বলি কৃষ্ণের মাধুরী।
যিহঁ রাধা সঙ্গে কৃষ্ণ প্রাণ কৈল চুরি।।
সে জনার সঙ্গ সদা করোঁ অভিলাষ।
উপাসনাতত্ত্ব গায় নরোত্তম দাস।।

জয় জয় গৌরচন্দ্র রসময় সিন্ধু।
জয় নিত্যানন্দ প্রভু মোর প্রাণবন্ধু।।
আরতি করিয়ে সদা মনের হরিষে।
প্রার্থনা করিয়ে সদা কর কৃপালেশে।।
মুঞি অতি দীন হীন দর্শন না পাঞা।
কাকুতি করিয়া মরোঁ তোমার লাগিয়া।।
গৌরগুণ গাইবারে মনে বড় আশা।
কৃপা কর মহাপ্রভু করিয়ে ভরসা।।
হাহা প্রভু গৌরচন্দ্র প্রাণের দুর্ল্লভ।
হাহা প্রভু নিত্যানন্দ প্রাণের বল্লভ।।
হা অদ্বৈত প্রভু কোথা কোথা শ্রীনিবাস।
গদাধর পণ্ডিত কাঁহাঁ গদাধর দাস।।
কোথা নরহরি মোর শ্রীরঘুনন্দন।
গৌরিদাস পণ্ডিত কাঁহা প্রভুর প্রিয়তম।।
হরিদাস ঠাকুর কাঁহাঁ কাঁহাঁ শিবানন্দ।
ভক্তগণে না দেখিয়া জন্ম হইল অন্ধ।।
কাঁহাঁ রূপসনাতন চৈতন্যের প্রিয়।
কাঁহা ভট্ট রঘুনাথ কৃপাময় যিহোঁ ।।
হা দাস রঘুনাথ দেহ দরশন।
শ্রীজীব দর্শন বিনা বৃথা এ জীবন।।
কাঁহা শ্রীগোপাল ভট্ট চৈতন্যের দাস।
তোমা সভার পাদপদ্ম মোর অভিলাষ।।
দন্তে তৃণ করি সভে কর আত্ম সাথ।
আমা বই ত্রিভুবনে নাহিক অনাথ।।
ব্রহ্মাণ্ডের জীব যত সব নিস্তারিল।
সর্বত্র সমান কৃষ্ণ ভক্তি আচরিল।।
অহে কৃষ্ণ প্রাণনাথ কৃপা কর মোরে।
আর কেহো নাহিঁ মোর সংসার ভিতরে।।
দেহ প্রাণ ধন জন সব মোর তুমি।
সর্বস্ব লালসা মোর পাদপদ্ম মানি।।
দুর্ঘটন চিত্ত নিত্য সব স্বেচ্ছাময়।
জল নিত্য প্রয়োগতা অব সেহ নয়।।
তথাপি তোমার পাদপদ্ম হৃদি মাঝে।
লক্ষ শ্রীৎসালঙ্কার সদা বক্ষে সাজে।।
অনন্য শরণ বিনে নাহি করি আন।
স্মরণ পূজন স্তব এই সমাধান।।
নাহি ত্যাগি কর্ম যত সব দুষ্টময়।
কষ্ট কর্ম সব অনুষঙ্গ লব্ধ হয়।।
জনস্তান্য ক্রিয়া রূপ যত্ন করি।
অকর্ম বিক্লেশ সব সতত আচরি।।
তব পাদপদ্ম বিনে সব ধন্দ ময়।
নিত্যত্ব জানিয়া সব করি পরিণয়।।
অপ্রসঙ্গ সঙ্গ প্রায় বধির সমান।
আয়ু বিঘ্ন করে আর পরশ প্রমাণ।।
হেন পাপময় যদি কৃষ্ণাশ্রয় হয়।
ইহপর দুই তার পাপ হয় ক্ষয়।।
তবে যে আমার পাপ মোচন না হয়।
দুর্দৈব প্রবল তাথে বারণ করয়।।
তথাপিহ প্রাণপতি ব্রজেন্দ্রনন্দন।
জীবনে মরণে সদা ভাবিয়ে চরণ।।
বৃন্দাবনে বিহরয়ে শ্রীরাধাগোবিন্দ।
নিরন্তর ভাবি তার চরণার বিন্দ।।
রসময় লীলা প্রভু রসের বিগ্রহ ।
দয়া করি কর মোরে প্রভু গোপীনাথ।
এই তিন জন্মে জন্মে মোর প্রাণনাথ।।
শ্রীচৈতন্য দয়ানিধি নিত্যানন্দ রায়।
তোমা কৃপা বিনে মোর অন্য নাহিঁ ভায়।।
অদ্বৈত আচার্য প্রভু জগতের ভর্ত্তা।
সংসার তারণে যেহোঁ ধরে শক্তিকর্ত্তা।।
অবধি আছয়ে এক নরোত্তম দাস।
কৃপা করি পূর্ণ কর মোর নিজ আশ।।
বৈষ্ণব গোসাঞি কর কৃপা নিরীক্ষণ।
বিকাইন তব পায় দেহ প্রেমধন।।
শ্রীরামচন্দ্র করি সঙ্গে মর্মোল্লাস ।
উপাসনাতত্ত্ব কহে নরোত্তম দাস।।

ইতি উপাসনা পট্টল নাম সমাপ্তং

(সা. প. ১৩৫৮পুথি হইতে আদর্শ পাঠ গৃহীত)