শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণ চৈতন্য জয়। শ্রীগুরবে নমঃ
অজ্ঞান তিমিরান্ধস্য জ্ঞানাঞ্জন -শলাকয়া।
চক্ষুরুন্মীলিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নম।।
প্রথমে বন্দিব গুরু বৈষ্ণব চরণ।
যাঁহার প্রসাদে হয় অভীষ্ট পূরণ।।
মূর্খ নীচ হই আমি অতি অন্ধ জন।
দয়া করি কর মোরে বাঞ্ছিত পূরণ।।
অন্ধ জন করে যদি ঔষধ ভক্ষণ।
তথাপি হয় তার ব্যাধি বিমোচন।
তৈছে মুর্খ মুঞি ইহা কর বড় সাধ।
তোমরা করুণা করি করহ প্রসাদ।।
পূর্বাপর ক্রমে জদি নাহি মোর মন।
তথাপি দয়া মোরে করিবে সাধুজন ।।
বালক যদি মাতার স্থানে করে অপরাদ।
স্নেহ করি মাতা তবু করেন প্রসাদ।।
অতএব গুরু কৃষ্ণ বৈষ্ণব চরণে।
প্রণাম করিয়া কিছু করিয়ে বচনে।।
সাধুমুখে যে কিছু করিল শ্রবণ।
পুন সাধু শাস্ত্রে তাহা করিল দর্শন।।
আমি মুখ তাহা কিছু না পারি বুঝিতে ।
সংস্কার নাহি তাথে নারি প্রবেশিতে।।
অতএব ভাষারূপ করিএ লিখন।
যে কিছু স্মরয়ে তাহা করিএ রচন।।
কৃষ্ণ যবে বৃন্দাবনে করএ ভ্রমণ।
পঞ্চগুণে গোপিকার করে আকর্ষণ।।
শব্দগুণ গন্ধগুণ রূপগুণ আর।
রসস্পর্শ গুণ পঞ্চ পরকার।।
এই পঞ্চগুণ শ্রীরাধিকাতে বৈসে।
তার ক্রম কহি কিছু গুরু কৃপা লেসে।।
শব্দগুণ কর্ণে গন্ধগুণ নাসিকাতে।
রূপগুণ নেত্রে রসগুণ অধরেতে।।
স্পর্শগুণ অঙ্গে লাগে অতি সুশীতল।
যেই গুণ লাগি রাধা হইলা বিকল।।
এই গুণ হইতে পূর্ব্বরাগের উদয়।
পূর্ব্বরাগে এবে করিএ নির্ণয়।।
আগে পূর্ব্বরাগ হয় দুইত প্রকার।
গাছে ছয় মত হয় তাহার প্রচার ।।
অকস্মাৎ শ্রবণ আর হটাৎ দর্শন।
এই দুই মূল পূর্ব্বরাগ বিবরণ।।
এবে ছয় মত হয় তাহার আখ্যান।
তিন শ্রবণ আর তিন দরশন।।
বংশী দূতী সখী তিন হয় শ্রবণে।
স্বপ্ন সাক্ষাৎ চিত্রপট দরশনে।।
তার পশ্চাৎ উৎকণ্ঠা পশ্চাৎ দর্শন।
পূর্ব্বরাগ দুগ্ধবত রাগ অন্বেষণ।।
অনুরাগ দধি হয় উৎকণ্ঠা মথন।
পরে সাচ হইতে হয় প্রেম বৃক্ষের লক্ষণ।।
অতএব রাধিকা প্রেমের বৃক্ষ হইলা।
সেই বৃক্ষের দুই দিগে শাখা উপজিলা।।
এক শাখা ভাব আর মহাভাব হয়।
ভাব বামা আনন্দ দর্শন তারে কয়।।
মহাভাব দক্ষিণাকে করএ বিচ্ছেদ।
বামা দক্ষিণা এবে করিয়ে বিভেদ।।
বামা শাখাতে জন্মিলা তার নাম মিলা।
দক্ষিণ শাখাতে হইলা তাঁর নাম অমিলা।।
মিলা আনন্দ ফল সম্ভোগ আক্ষান।
অমিলা বিচ্ছেদ ফল বিপ্রলম্ভ নাম।।
সম্ভোগ রসের ফল অমৃত হইল।
বিপ্রলম্ভ রসের ফল বিষ হইল।।
এবে ফলে চারি নায়িকা নিকষিল।
সম্ভোগ বিপ্রলম্ভে সমান হইল।।
অতএব দুই রসে অষ্ট নায়িকা নিকষিল।
এই অষ্ট রসের অষ্ট নায়িকা প্রধান।।
সম্ভোগের ভোক্তা চারি নায়িকার নাম।
অভিসারিকা বাসক সজ্জা তাহার আক্ষান।।
খণ্ডিতা স্বাধীনভর্ত্তৃকা চারি হয়।
এবে বিপ্রলম্ভের করিয়ে নির্ণয়।।
উৎকণ্ঠা কলহন্তরিতা বিপ্রলম্ভা।
প্রোষিতভর্ত্তৃকা হয় চারি নায়িকা।।
একেক নায়িকাতে অষ্ট নায়িকা নিকসিল ।
অষ্ট অষ্টে চৌষট্টি নায়িকা হইল।।
অভিসারিকাতে অষ্ট নায়িকা প্রধান।
বাসকসজ্জাতে আট নায়িকার আক্ষান।।
এই মতে সব ডালে শাখা নিকষিল।
অষ্ট নায়িকা এই বিবরি কহিল।।
সেবা কিছু না লিখিল রহিল অবশেষ।
বুঝিবে রসিক জন বুদ্ধির বিশেষ।।
আমি হীন বুদ্ধি অনুভব না জানি।
শাখাচন্দ্র ন্যায় রূপ করি টানাটানি।।
শ্রীগুরু পাদপদ্ম করি ধ্যান।
সংক্ষেপে কহিল কিছু এ সব আক্ষান।।
এবে কহি শাখা অঙ্গে যে পল্লব হইল।
সে সব পল্লবে বৃক্ষের আনন্দ জন্মাইল।।
বাম শাখা পল্লবের কহিএ বিচার।
অসংখ্য পল্লব তার নাহি লেখার পার।।
প্রধান প্রধান কছিু করিএ লিখন।
যেবা কিছু মনে স্মরে দিগ দরসন।।
প্রথম পল্লব ললিতা বিশাখা মুল অষ্ট।
তাহার মঞ্জরিগণে তারে কৈল পুষ্ট।।
সে সব মঞ্জরির নাম পশ্চাতে কহিব।
মধ্যম পল্লব আগে … করিব।।
অনেক তাহার গুণ না যায় লিখন।
কিছু মাত্র করি লিখি আপন (শোধন)।।
মধ্যম পল্লব তার নাম প্রাণসখি।
বাসন্তি আদি করি যত শশিমুখী।।
পত্র শিল্প কারি সখি সে সব পল্লব ।
অন্তরঙ্গা মণিমঞ্জরি আদি এই সব ।।
ইহাকে কহি পত্র পরিচারি করি।
নিত্য সখি রাধিকাকে স্নেহ করে বড়ি।।
প্রাণসখি রাধিকাকে করে স্নেহ পক্ষ।
সমস্নেহা পরমেষ্ট সখি অষ্ট মুখ্য।।
যদ্যপি দোহাতে করে প্রতি সমস্নেহা।
তথাপি রাধিকা প্রতি অতি বড় লেহা।।
এই কহিল কিছু স্নেহের আচরণ ।
এবে কহি পল্লবের পত্রের ব্যাখ্যান।।
অনেক এসব কথা না যায় কথন।
পরম প্রেষ্ঠের গুণ করিএ লিখন।।
শ্রেষ্ঠ সখি মধ্যে হয় ঊর্দ্ধ দুই শাখা।
সখি মধ্যে দুই দিগে মঞ্জরির লেখা।।
অনেক মঞ্জরি তার প্রধান শ্রীরূপ।
রতি অনঙ্গ আদি তাহার স্বরূপ ।।
এসব মঞ্জরি বিগসিঞা পুষ্প হয়।
পুষ্প হইয়া নিত্য করে বিলাস সহায়।।
পুন সে পুষ্প সব নাম ধরে মালা।
রূপমালা লবঙ্গমালা আর রতিমালা।।
অনঙ্গমালা গুণমালা সুরঙ্গ মালিকা।
রত্নমালা রাগমালা গন্ধমালিকা।।
স্বর্ণ মালা আদি করি করিএ নির্ণয়।
মধ্যম পল্লব কহি যেবা কিছু হয়।।
প্রধান কন্দর্প মঞ্জরি মধুমঞ্জরি আদি।
সে পল্লবে মঞ্জরি নিকষিল বহুবিধি।।
মঞ্জরি বর্গের গুণ কহা নাহি যায়।
শ্রীমতীর সঙ্গে করে বিলাস সহায়।।
শ্রীমতীর মাধুরি গুণমঞ্জরিতে স্থিতি।
রসরঙ্গ পরিপাটি করয়ে বসতি।।
রূপমাধুরি গুণে লবঙ্গ মঞ্জরি।
অনঙ্গ মাধুরি গুণে অনঙ্গ মঞ্জরি।।
গুণ মাধুরি গুণে গুণ মঞ্জরি।
কাম মাধুরি গুণে কাম মঞ্জরি।
প্রীতি মাধুরি গুণে প্রীতি মঞ্জরি ।।
রস মাধুরি গুণে রস মঞ্জরি।
লীলা মাধুরি গুণে লীলা মঞ্জরি ।।
প্রেম মাধুরি গুণে প্রেম মঞ্জরি।
বিলাস মাধুরি গুণে বিলাস মঞ্জরি।।
সৌরভ মাধুরি গুণে কোস্তুরি মঞ্জরি।
রাগ মাধুরি গুণে রাগ মঞ্জরি ।।
রঙ্গ মাধুরি গুণে রঙ্গ মঞ্জরি।
কেলী মাধুরি গুণে কেলী মঞ্জরী।।
মাধুর্য্য মাধুরি গুনে মাধুর্য্য মঞ্জরী।
বাক্য মাধুর্যগুণে মধু মঞ্জরি।।
কান্তি মাধুরি গুণে স্বর্ণ মঞ্জরি।
কপোল মাধুরি গুণে ভানু মঞ্জরি।।*
*অতিরিক্ত —
(বাক্য মাধুর্য্যগুণে রসমঞ্জরী।)
সৌন্দর্য্য মাধুরি গুণে কন্দর্প মঞ্জরি।
হস্ত মাধুরি গুণে হরিত মঞ্জরি।।
পাদপদ্ম মাধুরি গুণে পদ্ম মঞ্জরি।
অনন্ত মাধুরি গুণে আনন্দ মঞ্জরি।।
অনঙ্গ মাধুরি গুণে হেম মঞ্জরি।
সৌভাগ্য মাধুরি গুণে গন্ধ মঞ্জরি।।
মঞ্জরিগণের কৈল দিগদরশন।
দক্ষিণ শাখার ক্রম শুন সাধুজন।।
দক্ষিণ পল্লবে পত্র হইল চারিমত।
যে মতে হইল পত্র শুন তার মত।।
প্রিয় সখি আদি করি হয় সমস্নেহা।
যদি সমস্নেহা তভু কৃষ্ণে অতি লেহা।।
কুরঞ্জাক্ষি মদনালসা আদি করি।
এসব কৃষ্ণের পক্ষ কহিল বিচারি।।
বৃন্দা ধনিষ্ঠা আদি কৃষ্ণে স্নেহাধিকা।
প্রধান চন্দ্রাবলি আদি প্রতি পক্ষা।।
শ্যামলাদি তটস্থ পক্ষা ভদ্রার যত।
বিশাখা আর তারা-বলি সকলি এমত।।
চকোরাক্ষি শঙ্করী কুঙ্কুমাদি আর।
উপনয়ন খঞ্জনাক্ষি অষ্ট পরকার।।
এসব কহিল কিছু করিঞা নির্ণয়।
এবে কিছু কহি সুন করিয়া বিনয়।।
শ্রীরূপচরণ পদ্ম করিঞা স্মরণ।
ভাষারূপ করি কিছু করিয়ে লিখন।।
এবে সাধক নাম সিদ্ধ নামের আক্ষান।
আশ্রিত নাম কহি করিঞা প্রণাম।।
শ্রীচৈতন্য হয়েন ক্লিল মঞ্জরি।
প্রেমমালা নাম অতি মনোহারি।।
সৌভাগ্যমঞ্জরি নাম দাস গদাধর।
প্রেমানন্দ মালা নাম পরম সুন্দর ।।
শ্রীরূপ মঞ্জরি হয় শ্রীরূপ গোসাঞি।
রূপমালা সম নাম আর শুনি নাঞি।।
লবঙ্গ মঞ্জরি নাম গোসাঞি সনাতন।
স্বর্ণ মালা লবঙ্গবর্ণ তাহার আক্ষান।।
রতিমঞ্জরি শ্রীরঘুনাথ দাস।
রাগমালা নাম বর্ণ সূর্যের আভাষ।।
শ্রীগোপাল ভট্ট গোস্বামি অনঙ্গ মঞ্জরি।
গুণ মালা অঙ্গ বর্ণ অতি মনোহারি।।
শ্রীরঘুনাথ ভট্ট গোসাঞি রসমঞ্জরি নাম ধরে।
প্রেমমালা পিতবর্ণ বুলিয়ে তাহারে।
শ্রীলোকনাথ গোস্বামি নাম আনন্দ মঞ্জরি।
রসমালা রঙ্গ বর্ণ নাম বিচারি।।
এই প্রভু হয়ে মোর কুলের দেবতা।
সে লইতে মোর হয় প্রফুল্লতা ।।
সে প্রভুর চরণে মোর কোটী প্রণাম।
দয়া করি কর মোরে কৃপা দৃষ্টি দান।।
বিলাস মঞ্জরি নাম শ্রীজীব গোসাঞী।
বিদ্যুৎমালা বিলাস বর্ণ সম আর নাঞী।।
শ্রীকৃষ্ণ দাস কবিরাজ গোস্বামী কস্তুরি মঞ্জুরি।
গন্ধমালা রূপবর্ণ সভাতে আগলি।।
যে কহিলু মুঞি হইঞা মুর্খ জন।
তাহাতে অপরাধ না লবে সাধুজন।।
পূর্ব্বাপর শুদ্ধাশুদ্ধ নারিএ বুঝিতে ।
তেই নিবেদন করি দয়া কর মোতে।।
মো সম পাপি কেবা আছে ত্রিভুবনে।
শ্রীগুরু বৈষ্ণব পদ ভাবি মনে মনে ।।
অতএব দোহে মোরে কর কৃপা দান।
তোমরা করিলে দয়া হইবে কল্যাণ।।
আমি লিখি এই সব মোর নাঞি মনে।
যে লাগি তাহা করি করি নিবেদনে।।
একদিন সহবাস বৈষ্ণবের সঙ্গে।
বসি আছিএ সভে কৃষ্ণ কথা রঙ্গে।।
এই কালে এক ঠাকুর করিঞা যতনে।
মোরে বহু কৃপা করি কহিল বচনে।।
শুন শুন কহি মোর হাতেত ধরিঞা।
একখানি গ্রন্থ তুমি লিখহ বসিঞা।।
শ্রীরূপানুগ লক্ষণ কিছু বুঝিতে নারিএ।
তার ক্রম লিখ যদি তবে সুখ পাইএ।।
এত বলি সভে গেলা আমার হইল ভয়।
কেমতে লিখিব তাহা না জানি নিশ্চয়।।
এই কালে মোর মনে হইল অনুভব।
বাঞ্ছা কল্পতরু হয় শ্রীগুরু বৈষ্ণব।।
কামধেনু কল্পতরু তাহার আক্ষান।
কেনে না করিব মোর বাঞ্ছিত পূরণ।।
এ সব ভরোসায় মনে বড় হইল দম্ভ।
সেই ক্ষণে গ্রন্থের করিল আরম্ভ।।
শ্রীগুরু বৈষ্ণব পদ করিঞা স্মরণ।
ভজনের ক্রম এবে করিএ লিখন।।
মঞ্জরিগণের নাম করিল নিশ্চয়।
আর যেবা আছে কিছু করিয়ে নির্ণয়।।
মঞ্জরির গুণ বৈসে শ্রীরূপ মঞ্জরিতে।
এই সব ক্রম বৈসে আর আপনাতে।।
এই সব ক্রম কহি যেবা কিছু আইসে।
সে সব কহিএ ক্রম মনের হরিষে।।
মনে লবঙ্গ মঞ্জরির গুণ বৈসে।
বুদ্ধ্যে অনঙ্গ মঞ্জরির গুণ বৈসে।।
গুণে গুণ মঞ্জরির গুণ বৈসে।
অন্তরে কাম মঞ্জরির গুণ বৈসে।।
অঙ্গে স্বর্ণ মঞ্জরির গুণ বৈসে ।
কণ্ঠে ভৃঙ্গ মঞ্জরির গুণ বৈসে।।
জিহ্বাতে রস মঞ্জরির গুণ বৈসে।
বাক্যে মধুমঞ্জরির গুণ বৈসে।।
নেত্রে রূপমঞ্জরির গুণ বৈসে।
নাসাতে কস্তুরি মঞ্জরির গুণ বৈসে।।
কর্ণে লীলা মঞ্জরির গুণ বৈসে।
বক্ষে প্রেম মঞ্জরির গুণ বৈসে।।
হস্তে বিলাস মঞ্জুরির গুণ বৈসে।
এই সব গুণ বৈসে শ্রীরাধিকাতে।
শ্রীরূপমঞ্জরিতে আর আপনাতে।।
এই সব গুণ নেত্রে দুই গুনে টানে।
শ্রীরূপ আশ্রিত হয় এইত সন্ধানে।।
শ্রীরূপ প্রাপ্তি রূপ সাধ্য সাধন।
আপনেহ রূপাশ্রিত মনে অনুক্ষণ।।
রূপের ক্রম হইলে রূপ মিলে সর্ব্বথায়।
এই হেতু রূপানুগা সর্ব্ব গ্রন্থে কয়।।
ক্রমরূপে কহি এবে উপাস্য উপাসনা ।
উপাস্য রাগানুগা কামানুগা উপাসনা।।
কাম গায়ত্রির স্বরূপ শ্রীকৃষ্ণ হয়।
কাম গায়ত্রিতে হয় রাধিকার আশ্রয়।।
এই ক্রমে শ্রীরাধিকা হয় কামানুগা।**
**অতিরিক্ত —
(তাহার আশ্রয় উপাসনা কামানুগা।)
শ্রীরাধিকা হয় কামবিজ স্বরূপা।।
কৃষ্ণের আশ্রয় তাতে শুন অপরূপ।
এই লাগি কৃষ্ণ প্রেমানুগা হয়।
কৃষ্ণ হএন তেই প্রেমের আশ্রয়।।
প্রেমের আশ্রয় উপাস্য রাগানুগা।
অতএব রাগবস্তু আপনে রাধিকা।।
তাহার অনুগত হইলা সখিগণ।
তাহার আশ্রয় উপাস্যের কহি ক্রম।।
সাধ্য সাধন প্রাপ্তি তাতে সাধন সখী।
সাধন সেবা প্রাপ্তি রাগ এই সব লিখি।।
সাধক দেহকে কহি সেবার আশ্রয়।
সিদ্ধ দেহকে কহি সেবার আশ্রয়।।
আশ্রিত দেহের এবে অনুক্রম লিখি।
রাগের আশ্রয় আপনে সাধক সাধয় সখি।।
সাধন সেবায় প্রবর্ত্ত দেহের ভজন।
প্রবর্ত্ত দেহ গুরু আশ্রয় সমন্ধ।।
ভজনে বন্ধু সম্বন্ধ সাধনে সখি সমগুণ।
এবে কহিএ সদা স্থিতির লক্ষণ।।
শ্বশুর বাড়িতে আর মাতাপিতার ঘরে।
সর্ব্বথাতে শ্রীরাধিকা গতাগতি করে।।
সখির গমনাগমন হয় রধিকার সঙ্গে।
মঞ্জরির গমন হয় অতি বড় রঙ্গে।।
মঞ্জরিগণ সর্ব্বক্ষণ থাকে রাধা সঙ্গে।
একক্ষণ সঙ্গ ছাড়া না হয় অনুরাগে।।
সর্ব্বক্ষণ সেবা করে প্রেমে উনমতা।
সেবার সৌষ্ঠব দেখি আনন্দ রাধিকা।।
কেহু কেশ বেস করে কেহোত সিন্দুর।
কোহোঁতগাথএ হার দিঞা নানা ফুল।।
কেহুত চন্দন ঘষে কেহো তাম্বুল বীজন।
তাহা দেখি মগ্নসুখী রাধিকার মন।।
সেবা দিঞা সুখী করে যত সখীগণ।
এবে বারমাসের ক্রম সুন সাধুজন।।
শ্রীপঞ্চমীর তিন দিবস থাকিতেই যান।
বাপের ঘরে আসি করে হোলির বিধান।।
মাঘ ফাল্গুন চৈত্র থাকেন বাপের ঘরে।
ফাগু দোল পুষ্প দোল করে কুতূহলে।।
যতদিন হুলি খেলে নাহি গোচারন।
হুলি খেলা ছলে মধ্যাহ্ন মিলন।।
পুন বৈশাখ মাসে যান শ্বশুরের ঘরে।
বৈশাখ জ্যৈষ্ঠী আষাঢ়ের সাতাইস দিন পরে।।
স্বসুরের ঘর যান তিন দিন থাকিতে।
হিলোলা লীলা আর ঝুলনা খেলিতে।।
শ্রাবণ ভাদ্র আর চব্বিশ আশ্বিন।
পুন শ্বশুর ঘর যান থাকিতে তিন দিন।।
পঞ্চদিন থাকিতে রাই জাবট আসিঞা ।
সখি সঙ্গে লিলা করে গোপনে বসিঞা ।।
কার্ত্তিক অগ্রাহয়ন আর পৌষ মাসে মাস।
মাঘের শ্রীপঞ্চমীতে পুন মাতার ঘরে বাস।।
এই তো কহিল বার মাসের নিয়ম।
মাতাপিতার ঘর শ্বশুর ঘর এই অনুক্রম।।
শ্রীগুরু বৈষ্ণবের পাদ পদ্ম করি ধ্যান।
সংক্ষেপে কহিল কিছু তাহার আক্ষান।।
প্রভু সম্মতে কৈল রাগমালা প্রকাশ।
এ সব আক্ষান কহে নরোত্তম দাস।।

ইতি রাগমালা সম্পূর্ণ ।।

(ক. বি. ৫৬৫ পুথি হইতে আদর্শ পাঠ গৃহীত)