হরি হরি কি মোর করম অতি মন্দ।
করি অতি পরিশ্রম কেবল মনের ভ্রম
না ভজিলাম গৌর পদদ্বন্দ্ব।।
দেহ সুখ ইন্দ্রিয় ভোগ তাথে জন্মে নানা রোগ
ব্যাধি বাড়ে কুপথ্য ভোজনে।
বায়ু পিত্ত দুষ্ট কফ বিকার হইল সব
এই হেতু মৃত্যুর লক্ষণে।।
বায়ু জীর্ণ কৈল ভোলা দুষ্ট পিত্ত কামজ্বালা
কফে তেষ্টা বাড়ে অতিশয়।
সম্মিন ত্রিদোষ ব্যাধি না পাইলুঁ মহৌষধি
দিনে দিনে আয়ু করে ক্ষয়।।
কুপথ্যে রুচি বড় সুপথ্যে অরুচি দঢ়
সাধু বৈদ্যের নাহি চেষ্টা লেশ।
অজ্ঞান অবৈদ্য আনি তিচিনের কর যে মানি
তাহে নহে ব্যাধির বিশেষ।।
নানারোগ ক্ষীণ হয়ে সাধু বৈদ্য না চিনিয়ে
শক্তি হীন হৈল ক্রমে ক্রমে।
দেহ হইল শয্যাগত বলবুদ্ধি হইল হত
সাধু বৈদ্যে না চিনিলাম ভ্রমে।।
কিবা ছিলাম কিবা হলাম আপনার দোষে মলাম
কি বোল বলিব সেথা যেয়ে।
নরোত্তম দাসে বলে মৃত্যু হল অবহেলে
সাধু বৈদ্যের ঔষধ না পেয়ে।।
(ক. বি. ৫৩২২)

কি কাজ করিলে মন ভারতে আসিয়া।
আপনি দিয়েছ খত কড়চা করিয়া।।
ইসাদ উত্তম আছে পাসরিলে মনে।
কি বলে জবাব দিবে মহাজনের স্থানে।।
আসলে উশুল নাই কিছু নাই স্থিত।
পরিণামে কেমনে পাইবে পরিমিত।।
ইহকাল গেল ভাই রাখহ আপনা।
ইহকাল হইতে কর ব্যাপার অর্চ্চনা।।
সাধুজনের স্থানে আন গিয়া পুঁজি।
প্রেমরতন ধন আন খুঁজি খুঁজি।।
হস্ত কর তরাজু মন কর সেরে।
হরিনাম অমূল্য ধন তৌল ফেরে ফেরে।।
তৌল মাপ লেখা জোখা সদা কর মনে।
অমূল্য রতন লভ্য হবে দিনে দিনে।।
শ্রীগুরু ভজন করি করহ কিনারা।
তবে সে খালাস পাবে খত যাবে চেরা।।
বাজুকর চাল রে অন্তরে অস্ত্র ধরি।
হরিনামে দামামা দিয়া লোট যমপুরী।।
দোকান ছান্দিয়া কর জিনিষ পত্তন।
নরোত্তম দাস কহে ডুবাইয়া মন।।
(ক. বি. ৫৩২২)

মায়ার আকৃতি জীবের প্রকৃতি
কামরসে উতপতি ।
মায়াজাল মাঝে সতত বিরাজে
কেবল মায়ার রীতি।।
বিষম করণ শ্রীকৃষ্ণ ভজন
তাহাতে মাধুর্য্য রস।
কামিনী লালস সতত ধ্যায়ত
চতুর্থ যুবতী বাস।।
তটস্থ মরণৈ বিশ্বাস না জানে
দেখিলে না দেখে বাট।
ইথে কি জানিবে উজ্জ্বল মাধুরী
… সেই হাট।।
সুরকুলগণে শ্রীকৃষ্ণ চরণে
দাস করিবারে পারে।
ত্রিতাপ গণে কৈল নিবারণে
নাম অধিকারী (ভারে)।।
নামের মরম জানিতে বিষম
প্রেমের শকতি (যায়)।
পাপিয়া পাপিষ্ঠ হয় (যম) দণ্ডী
ঐশ্বর্য কহয়ে তায়।।
নাম নামী এক দেখি পরতেক
সুমাধুর্য্যময় হরি।
স্বরূপে ওরূপে আনন্দ শকতি
(অনড়) বসতি তারি।।
পুণ্যমুক্তি পার নাম সারাসার
যে রূপে স্বরূপ গোরা।
… … গুণে সাধিতে মরম
তৃষিত চকোর পারা।।
নামে রতি মতি পিরিতি ভকতি
অচল হইল যার।
তাহার যে তনু প্রেমায় গড়ল
নরোত্তম কহে সার।
(গ. গ.ম. ৪৭)

মানুষ রতন করে আচরণ
দুই রূপে বলরাম।
যোগবল বলে ভুলাল্য সকলে
না দেই মানুষ ধাম।।
অনুবাদ কহে মানুষ পাইলাঙ
ব্রহ্মাণ্ড ভেদিতে নারে।
মন্ত্রগুরু ছাড়ি মায়াবাদে পড়ি
এ জীবে মানুষ করে ।।
সাধনেতে হীন কামেতে প্রবীণ
প্রপঞ্চ বচন দড়।
পঞ্চতত্ত্ব সার না করে বিচার
অর্থবাদে ক(রে) জড়।।
অস্ত সঙ্গতি করে নিরবধি
না করে সতের সঙ্গ।
প্রকৃতি দেখিয়া পাষণ্ড ভুলল
নরোত্তম মন ভঙ্গ।।
(ক. বি. ৪৮৪৬)

মানুষ মানষ বলিয়া যে জন
প্রকাশ করিয়া লয়।
স্বধর্ম্ম আচরে নারায়ণে ভজে
ক্ষিরোদ সাগরে রয়।।
প্রাকৃত যাহার রতি।
মানুষ ভজিলে নরকে যাইবে
ঈশ্বর ভজিলে গতি।।
ব্রজ সুখ নাম সহজানুপাম
ঈশ্বর ভজিয়া ভজ।
ব্রহ্মাণ্ড মানুষ ভজিবারে দেহ
যদি না উপজে রজ।।
কিশোর মানুষ করিল প্রকাশ
তিন বাঞ্ছা ছিল মনে ।
মন্ত্রগুরু বিনে মানুষ না মিলে
নরোত্তম ইহা ভণে।।
(ক. বি. ৪৮৪৬)

সহজ মানুষ, বেদবিধি পার, শৃঙ্গার রসেতে রস।
মানুষে মানুষে, সহজ শৃঙ্গার, তাহাতে উঠএ রস ।।
সহজ নাগর, সহজ নাগর, দুহু বিহরএ সদা।
কামরূপী হয়, রমণ করয়, দুহে দুহু প্রাণ আধা।।
সহজ শৃঙ্গার, মানুষ অন্তরে , সহজ পিরিতি ভোর।
সহজ শৃঙ্গার, পরকীয়া রস, তাহার নাহিক ওর।।
কহে নরোত্তম, সহজ মানুষ, বুঝিতে বিষম জড়।
সহজ হইয়া, সহজ আচারে, মনেতে করিয়া দড়।।
(ক. বি. ৫১৭৫)

সামান্য মানুষ কে, সহজে পশেছে যে।
কেমনে সামান্য হয়, সামান্য আচার ময়।
উত্তম সামান্য হয়্যা, সহজে পশিল যায়া।
সহজ বুঝিবে কে, আপনা জানিব যে।
আপনা যেজনা জানে, সহজে রাখিল প্রাণে।
সহজ মদন রতি, শৃঙ্গার ভাবক নিতি।
শৃঙ্গার বিলাসময়, সদাই আনন্দে রয়।
বুঝিয়া আনন্দ রস, সদাই তাহারি বশ।
কে তাহা কহিতে পারে, পিরিতি লাগিয়া ঝুরে।
নয়ানে নয়ানে রাগ, সেই সে প্রেমের দাগ।
পহিল নয়ানে প্রীত, হিয়ায় হিয়ায় চিত।
প্রিতিয়ে হানিলে বানে, রসিক সুপিল প্রাণে।
চতুর্থে মরমে ভোর, পঞ্চমের শেষে চোর।
শৃঙ্গার রতিতে ভোরা, তিনে শতবার হারা।
দাস নরোত্তমে কয়, শুনহ রসিকময়।।
(ক. বি. ৫১৭৫)

রসিক মুরতি, শৃঙ্গার আকৃতি, সহজ মানুষ সে।
রমণ শৃঙ্গার, রসিক ভবন, ইহা সে হইব যে।।
যে জনা হইবে, সে জনা পাইবে, সহজ মানুষ রীত।
অনুরাগ মন, রাগের ভাবন, সদাই সহজ প্রীত।।
মধুর শৃঙ্গার, সদাই ধিয়ান, সহজ মধুর মনে।
সহজ স্বরূপ, সহজ প্রকৃতি, সহজ মরম জানে।।
সহজ … সহজ পিরিতি সদাই সহজ মন।
সহজ বিলাস, সহজ বিহার সহজ থাকিব যেন।।
সহজ দেশেতে, সহজ বসতি সহজ মানুষ মনে।
সহজ ঘরেতে, সহজ বসিতি, কহে দাস নরোত্তমে ।।
(ক. বি. ৫১৭৫)

সহজ বুঝিতে নারি,
সহজ বিষম বড়ি।
যে জন চিনেছে তায়,
সহজ মদন রায়।
কামরূপী হয়া ভজে,
সেই সে সহজে মজে।
সহজ শৃঙ্গার ময়,
সহজ রূপেতে কয়।
কহে নরোত্তেম দাস,
সহজ করহ আশ।।

(ক. বি. ৫১৭৫)

কি জানি কি ক্ষণে চিকণ কালিয়া সনে
ভরম শরম কৈল নাশ।
খাইয়া আপন মনে চাহিলাঙ তাহার পানে
গলে লইলাম পিরিতের ফাঁস।।
পিরিতি মূরতি যেন আপন দেখিল
সে পিরিতি পরাণ কৈল বশ।
পিরিতি রতন ধন ছাড়িতে না লয় মন
গায় গাহুক লোকে অপযশ।।
পিরিতি হিয়ায় ধরি … চুয়াচন্দন
বিষে পিরিতি নয়ানের অঞ্জন।
পিরিতি মূরতির তত্ত্ব না বুঝিলাম
পামর মনে না রহে পিরিতি বিনে।।
… … …
পিরিতে পরাণ ভেল ভোর।
নরোত্তম দাস আশে রহিল পিরিতি আশে
হার করি নন্দকিশোর।।
(ক. বি. ৩১৫)

প্রেম পিরিতি মধুরস যাহাতে ভুবন সকলি বশ
কে জানে তাহার জনম কথা।
পিরিতি রতনে না জানে যতনে
নিগূঢ় রসের কথা।।
মধুর রস মধুর রতি ভুবনে দুর্লভ হয় সে অতি
শুনিতে আনন্দ বড় হয়।
মধুর আশ্রয় যেই মধুরস জানয়ে সেই
তাহার অঙ্গে মানুষ রয়।।
যত সব জনে রতি রসে ভণে
আশ্রয় বলিয়া কহে।
না জানে সন্ধান ভরমে মানুষ জ্ঞান
এ রস মানুষের নহে।।
একটি মানুষ সদা বিলসই
বেদেতে না পায় মহিমা।
আপনার সম নাহিক জগতে
আনন্দে নাহিক সীমা।।
ঈশ্বরাদি বস্তু যত তার রসে উনমত
আনন্দ চিন্ময় নাম।
নরোত্তম কহে সার ইহা বহি নাহি আর
কেমনে জানিব জীব ছার ।।
(নিরঞ্জন চক্রবর্ত্তীর পুথি পৃ. ৫৩)

পিরিতি ঘরেতে, সদাই থাকিব, পিরিতে বান্ধাব চাল।
পিরিতি পাড়ায় , বসতি করিব, পিরিতে গুঙাব কাল।।
পিরিতির মালা, গলায় গাথিয়া, পরিব পিরিতি সনে।
পিরিতি নয়নে, পিরিতি ভজনে, পিরিতি রাখিব কোনে।।
পিরিতি কাঁচলী, হিয়ায় পরিব, পিরিতি গলার হার।
পিরিতি ধরম, পিরিতি করম পিরিতি রসের সার।।
পিরিতি সায়রে, সিনান করিব, পিরিতি ঘাটেতে বসি।
পিরিতি নয়ানে, সদাই দেখিব, পিরিতি মধুর হাসি।।
পিরিতি কটাক্ষে, সদাই হানিব, পিরিতি কটাক্ষ সনে।
সহজ পিরিতি, সেই সে আরতি, কহে দাস নরোত্তমে।।
(ক. বি. ৫১৭৫)

সখি পিরিতি আখর তিন, জপহ রজনী দিন।।
পিরিতি না জানে যারা, কাষ্ঠের পুতলী তারা।
পিরিতি জানিল যে, অমর হইল সে।
পিরিতে জনম যার, কে বুঝে মরম তার।
যে জন পিরিতি জানে, বেদবিধি সে কি মানে।
পিরিতি বেদের পর, হৃদয়ে তাহার ঘর।
পিরিতি … … সে শৃঙ্গারে উদয় করে ।
শুন পিরিতের মর্ম লাবণ্যে তাহার জন্ম।
পিরিতি মাধুরি বিনু, অন্তরে বাজয়ে কানু ।
পিরিতি যাহাতে যার, সেই সে পরাণ তার।
সে পিরিতি মানুষে হয়, অন্য রসিকেতে নয়।
সেই সে মানুষ কে, পিরিতি জেনেছে যে।
পিরিতি বাজারে থাকে, সদাই পিরিতি দেখে।
এ বড় বিষম কথা, পিরিতি জন্মিল কোথা।
নয়ন যুগলে স্থানা, বদনে হৃদয়ে হানা।
পিরিতি বিষম বীজ, সেই মত্ত মনসিজ।
মস্তকে তাহারি ঘর, পিরিতি পঞ্চম স্বর।
পিরিতি না ছেড় ভাই, পিরিতি সকলি পাই।
পিরিতে জনম যার, পিরিতে পরান তার।
পিরিতি জানিবে যদি, থাকিতে না পাবে বিধি।
রতিতে বীর্য্যেতে জন্ম, শৃঙ্গার তাহার মর্ম্ম।
সেই ঋতু রতি সার, রূপ রঘুনাথ যার।
ভজন পূজন যত, পিরিতি বিহনে হত।
পিরিতি করহ আশ, কহে নরোত্তম দাস।।
(ক. বি. ২৫২0, স্বরূপ কল্পতরু)

নিতাই কারণ অমিয়া (মাখন)
(বস্তু) পঞ্চদশ গুণে।
পঞ্চরস আর লীলার পসার
নির্ম্মল উজ্জ্বল (জনু)।।
… মুখ কারণ পুন আগমন
যুগল দ্বিগুণ যে।
সরসে সরস পুলক কারণ
স্বরূপে স্বরূপ সে।।
দেখিল আনন্দ নিবিড় সানন্দ
প্রেমায়ে অখণ্ড রূপ।
নীল পীত শ্বেত অরুণ বরণ
তাহার আলয় কূপ।।
অবতার গুণে সদয় …
গোপত আরাম ধাম।
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য যাহার লাবণ্য
সাধয়ে বিষম কাম।।
স্বরূপে স্বরূপে রসরঙ্গ রূপে
মধুর পিরিতি ময়।
সকল লাবণি আনন্দ কামিনী
যে জনা হরিয়া লয়।।
… গুণ বপু পুন পুন
সব আত্মাভীষ্ট কলা।
বারিদ সঞ্চার বরিখে সঘন
নিতাই কণ্ঠহি মালা।।
কিরণ উজ্জ্বল প্রকাশে সকল
(আত্মজ) সব রাখি।
বিরুদ্ধ ধরমে নতুন বিধাতা
সকলি প্লাবিত দেখি।।
(কুসুম) নির্ম্মলে ভ্রমরার গুণে
তাহাতে উন্মাদ মধু।
কমলিনীগণে গরল শোধিতে
অকলঙ্ক সুখ বিধু।।
রাস প্রতি খেলা সেই সব মেলা
(উল্টা) রসের চাঁদে।
(সূর্য্য ধয্য) একে সে গুণ মায়াতে
সকল স্বরূপ বাধে।।
নিরাশ্রয় রূপ হৃদে দিনমণি
কারণ সন্তোষ নাম।
(রমণ) … বল্লভ জীবিত
গৌর রসের ধাম।।
ভকত করম সোদর (ভুমর)
সতত ধাওল ঠাম।
যতেক নাগরী হৃদয়ে ঝামরী
সে ধাম (ধোয়ান ) বাম।।
… … ভকত (পৃথিবী)
(দ্বিতীয়) সে হয়।।
কহে নরোত্তম পাইবার আশে
ভরসা নিতাইর পায়।।
(গ. গ. ম. ৪৭)

রূপ সরোবরে রূপ ভরিবারে
রূপের গাগরী কে।
শ্রীরূপমঞ্জরী রূপের লহরী
নয়ান যুগল যে।।
নব অনুরাগী অনঙ্গ মঞ্জরী
নব নব রূপ ধরে।
অনঙ্গের গুণে অনঙ্গ মঞ্জরী
তাহাকে জানিতে পারে ।।
বিলাস মঞ্জরী করে নানা কেলি
তাহাকে জানিবে কে।
সকল সেবন করয়ে সাধন
দুকর যুগল যে।।
রতির সঙ্গে বিবিধ রঙ্গে
শ্রীরতিমঞ্জরী রহে।
রসনা সহিতে রস আস্বাদিতে
শ্রীরসমঞ্জরী কহে।।
অঙ্গের সৌরভ সুগন্ধ জানিতে
যে করে সতত আশ।
কস্তরীমঞ্জরী গন্ধের পেটারি
জানিহ যুগল নাস।।
এ সব তত্ত্ব স্বরূপে বিদিত
গুণ বা আস্বাদে কে।
শ্রীগুণমঞ্জরী রূপের লহরী
শ্রবণ যুগল যে।।
অনুগত বিনে এ সব তত্ত্ব
কাহারে না কহি ভাই।
নরোত্তম কহে মরম জানিলে
তাহারে কহিতে চাই।।
(নিরঞ্জন চক্রবর্তীর পুথি পৃ. ১৬ ও ১৩)

একমন পঞ্চ করি, পঞ্চমন এক পুরি, যাহাতে জন্মিল গোপিগণ।
কায়ামায় দুইজন , হইল আলোক বৃন্দাবন, ভূতদেহ সাকার লক্ষণ।।
আত্মা কৃষ্ণ জন্ম হইল, জীব রাধা কৃষ্ণ কৈল, ছয়রিপু মঞ্জরী ঘটন।
অষ্ট স্থানে অষ্ট সখী, অঙ্গেতে চৌষট্টি লেখি, নবদারে হইল কুঞ্জবন।।
শুতিয়াছে রাধাকৃষ্ণ, সেই রসে মন তৃষ্ণ, নাসার উপরে ভগবান।
হাড়মাংস হইল মাটি, নমগুণ তিনঝাটি, রক্ত হইল পাষাণ সমান।।
শব্দেতে ভগবতি, নাভিমুলে পদ্মাবতী, শিরের উপরে রসরাজ।
কহে নরোত্তম দাস, সিদ্ধ দেহের এই আশ, দৃঢ় কর চৈতন্য চরণ।।
(ক. বি. ৫৯৬৮, সিদ্ধদেহের লক্ষণ)

বয়স কৈশোর, চাঁচর চিকুর, সুদীর্ঘ হইব অতি।
বঙ্কিম চাহনি, হাস্য সুবদনী, বচন মধুর জিতি।।
কমল চরণ, স্থলপদ্ম যেন, সুকমল শারাশার।
জোবারা কণিকা, জিনি অঙ্গুলিকা, অতি সুশোভন আর।।
প্রেমে পুলকিত, সে দেহে সদত, পিরিতি জানএ সার।
নয়ান বাহিয়া, পুলক হইয়া, বহে প্রেমজলধার।।
সুধা মৃদুবানী কহে সুবদনী, অতি সুরোদন মিলে।
সদানন্দময়, সদা বিহরয়, কৃষ্ণ প্রেমহিল্লোলে।।
কিশোরীর ভাব, আর অনুরাগ, সেই সুবদনী ধরে।
নাহি জানে আন, প্রিয় অঙ্গ ধ্যান, সদা বিরহ অন্তরে।।
এই ত নায়িকা , তত্ত্বের আধিকা, সপ্ত গুণাশ্রিত হয়।
কহে নরোত্তম, সে গুরু উত্তম, হইবে সে প্রেমাশ্রয় ।।
(ক. বি. ৫১৭৫)

শৃঙ্গার সাধন, তাহার কারণ, শুনহ রসিক জন।
সকিয় রসহ, বাঢ়াইএ লেহ, কর রস আবর্ত্তন।।
ষড়রিতু আগে, সকিয়ার রাগে, সুস্থির করিএ মন।
জন্ত্রে জন্ত্র পুরি, গুরুকে সঙরি, কর নামের জাপন।।
হৃদয়ে রাখিবে, হৃদয়ে থাকিবে, স্থিরতা করিয়ে মতি।
গুমরি গুমরি, পক্বতা হইবে, অপক্ব এ দেহে রতি।।
ষড়রিতু পুন, করিবে সাধন, গুরুমন্ত্র আপনেতে।
আপনা ভুলিবে গুরুদেহ লবে, থাকিবে সুস্থির চিতে।।
শুন মহাভাগ, শুন ষড় রাগ, জাপন যে মূলমন্ত্র।
গুরু কৃষ্ণ হবে, সে দেহ পাইবে, সৃকিত চালন যন্ত্র।।
পুন ষড়রিতু, সাধন করিবে, কামগাত্রি কামবীজে।
তিনে ঐক্য করি, একত্রে রহিবে, সে দেহ ধরিয়ে নিজে।।
প্রীতি জাপনেতে, উভয় যন্ত্রেতে, মন্দন করিবে ভাই।
সভে এক করি, সে বস্তু মাধুরী, পক্কতা হইবে তাই।।
সভাব সাঁপিয়ে, সভাব লইয়ে, পুন ষড়রিতু রবে।
সুধা মকরন্দ, বরিষণানন্দ, গোপনে সিঞ্চন হবে।।
এ নিত্য শৃঙ্গার, মধুর মধুর, উজ্জ্বল দুঁহার অঙ্গ।
নরোত্তম কহে, দুহা একদেহে, অপার রসের রঙ্গ।।
(ক. বি. ৫১৭৫, সহজ উপাসনা)