‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’
‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।
‘‘জয় জয় গৌরচন্দ্র জয় নিত্যানন্দ।’’
ভাইরে আমার,–শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য-মেঘের—প্রাণভরে জয় দাও ভাই (মাতন)
‘শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য-মেঘের’—
প্রেমধারা-বর্ষণকারী—শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য-মেঘের
‘প্রেমধারা-বর্ষণকারী’—
গৌড়দেশে-উদ্যানে—প্রেমধারা-বর্ষণকারী
গৌর-মেঘের জয় দাও ভাই
প্রেমবৃষ্টি-বর্ষণকরা—নিত্যানন্দ-বায়ুর জয় দাও
‘প্রেমবৃষ্টি-বর্ষণকরা’—
গৌর-মেঘ চালাইয়ে—প্রেমবৃষ্টি-বর্ষণকরা
প্রেম-বৃষ্টি করা বর্ষণ—গৌর-মেঘের অদ্বৈত গর্জ্জন
‘‘প্রভুর হইল ইচ্ছা যাইতে বৃন্দবন।’’
প্রিয়গণ-সঙ্গে রঙ্গে—নীলাচলে বিহরে গোরা
শুনিয়া প্রতাপরুদ্র হইলা বিমন।।’’
প্রভু বৃন্দাবন যাবে শুনে—প্রতাপরুদ্রের প্রাণ কেঁদে উঠ্ল
নীলাচল ছেড়ে যাবে বলে—প্রতাপরুদ্রের প্রাণ কেঁদে উঠ্ল
সার্ব্বভৌম রামানন্দ আনি দুই জন।
দোহাঁকে কহেন রাজা বিনয়-বচন।।
নীলাদ্রি ছাড়ি প্রভুর মন অন্যত্র যাইতে।
তোমরা করিহ যত্ন তাঁহারে রাখিতে।।’’
কেঁদে বলেন প্রতাপরুদ্র—ও সার্ব্বভৌম ও রামানন্দ
তাহা বিনা এই রাজ্য মোর নাহি ভায়।
গোসাঞি রাখিতে করিহ অনেক উপায়।।’’
কেঁদে বলেন প্রতাপরুদ্র—আমি,–কেমন করে থাকব বল
ও সার্ব্বভৌম রামানন্দ—আমি,–কেমন করে থাকব বল
প্রভু নীলাচল ছেড়ে গেলে—আমি,–কেমন করে থাকব বল
গৌর-শূন্য-নীলাচলে—আমি,–কেমন করে থাকব বল।।(মাতন)
রামানন্দ সার্ব্বভৌম দুইজন-সনে।
তবে যুক্তি করে প্রভু যাইতে বৃন্দাবনে।।
দোঁহে কহে রথযাত্রা কর দরশন।
কার্ত্তিক আইলে তবে করিহ গমন।।
কার্ত্তিক আইলে কহে এবে মহাশীত।
দোলযাত্রা দেখি যাইছ এই ভাল রীত।।
আজি কালি করি উঠায় বিবিধ উপায়।
যাইতে সম্মতি না দেয় বিচ্ছেদের ভয়।।’’
কেমন করে থাকবে বলে—প্রাণেতে বিরহ জাগ্ল
গৌরশূন্য-নীলাচলে—কেমন করে থাকব রে
যদ্যপি স্বতন্ত্র প্রভু নহে নিবারণ।
ভক্ত-ইচ্ছা বিনা তবু না করে গমন।।’’
‘‘এই মত প্রত্যব্দ আইসে গৌড়ের ভক্তগণ।
প্রভু সঙ্গে রহি করে যাত্রা দরশন।।
তার মধ্যে যে যে বর্ষ আছয়ে বিশেষ ।
বিস্তারিয়া আগে তাহা কহিব বিশেষ।।
এইমত মহাপ্রভুর চারি বৎসর গেল।’’
আর দুই বৎসর চাহে বৃন্দাবন যাইতে
রামানন্দ হঠে প্রভু না পারে চলিতে।।
পঞ্চম বৎসরে গৌড়ের ভক্তগণ আইলা।
রথ দেখি না রহিলা গৌড়ে চলিলা।।
তবে প্রভু সার্ব্বভৌ-রামানন্-স্থানে।
আলিঙ্গন করি কহে মধুর-বচনে।
বহুত উৎকণ্ঠা মোর যাইতে বৃন্দাবন।’’
কাতরে গৌরহরি বলেন—ও সার্ব্বভৌম রামানন্দ
তোমার হঠে দুই বৎসর না কৈল গমন।।
অবশ্য চলিব দোঁহে করহ সম্মতি।।’’
ও সার্ব্বভৌম রামানন্দ—আমায়,–আর নিষেধ করো না
যাবার লাগি বৃন্দাবন—আমার মন বড় উচাটন
যেতে দাও বৃন্দাবন—আর আমায় করো না বারণ
নবকৈশোর নটবর—করিব আমি দরশন
‘নবকৈশোর নটবর’—
গোপবেশ বেণুকর—নবকৈশোর নটবর
প্রভুর ভক্ত-বাৎসল্যের –বালাই লয়ে মরে যাই
জননী জাহ্নবী এই দুই দয়াময়।।
গৌড়দেশ দিয়া যাব তা’ সবা দেখিয়া।
তুমি দোঁহে আজ্ঞা দেহ প্রসন্ন হইয়া।।’’
ও সার্ব্বভৌম রামানন্দ—আর বাধা দিও না
ব্রজে যাবার আজ্ঞা দাও—আরা বাধা দিও না
প্রভু সনে অতি হঠ কভু ভাল নয়।।
দুঁহে কহে এবে বর্ষা চলিতে নারিবা।
বিজয়া দশমী আইলে অবশ্য চলিবা।।’’
ব্রজে যেতে তোমার বড় উৎকণ্ঠা—আর বাধা দেব না
প্রাণ-গৌর-সুন্দর আমার—মনে মনে দিন গণে
আসিবে কতদিনে—মনে মনে দিন গণে
বিজয়া দশমী—মনে মনে দিন গণে
যাব আমি বৃন্দাবনে—বিজয়া দশমী আসিবে কতদিনে
বিজয়া দশমী দিনে করিলা পয়ান।।’’
বিজযা দশমী তিথিতে—প্রভু চলিলেন নীলাচল হতে
মধুর নীলাচল হতে—যায় প্রভু ব্রজবনেতে
জগন্নাথের প্রসাদ প্রভু যত পাইয়াছিলা।
কড়ার চন্দন ডোর সব সঙ্গে লৈলা।।’’
গৌড়দেশের সবা—ভক্তগণ দিবেন বলে
উড়িয়া ভক্তগণ সব পাছে চলি আইলা।।’’
বলে,–কোথা যাও গোরাশশী—আমরি,–কাঁদে নীলাচলবাসী
নীলাচলবাসী সভে বলে—গৌর কোথা যাও চলে
আমাদের অনাথ করে ফেলে—গৌর কোথা যাও চলে
আঁধার করি এই নীলাচলে—গৌর কোথা যাও চলে
আমরা,–কেমনে থাক্ব তোমায় ছেড়ে—গৌর কোথা যাও চলে
নীলাচলবাসী নর-নারী—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
কত দিনে দেখ্তে পাব বলে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
ঐ হরিবোলা রসের বদন—আর কতদিনে দেখতে পাব
গৌরশূন্য-নীলাচলে—বলে,–কেমন করে থাকব রে
উড়িয়া ভক্তগণ সভে—পিছে পিছে কেঁদে চলে
হা গৌর প্রাণ গৌর বলে—পিছে পিছে কেঁদে চলে
নিজগণ সঙ্গে প্রভু ভবানীপুর আইলা।।
রামানন্দ আইলা পাছে দোলায় চড়িয়া।’’
গৌরগত প্রাণ রামানন্দ—কেমন করে থাক্বে রে
প্রাণ গেল নীলাচল ছেড়ে—কেমন করে থাকবে রে
বাণীনাথ বহু প্রসাদ দিলা পাঠাইয়া।।’’
পথে যেতে ভোজনের—প্রভুর কষ্ট হবে বলে
প্রসাদ ভোজন করি তথায় রহিলা।
প্রাতঃকালে চলি প্রভু ভুবনেশ্বর আইলা।।
কটক আসিয়া কৈল গোপাল দর্শন।’’
রাজা প্রতাপরুদ্র
এই দ্বারগড়ের মাঝে রেখেছিলেন
এইখানে,–প্রাণশশী সাক্ষী-গোপালে—এই দ্বারগড়ের মাঝে রেখেছিলেন
স্বপ্নেশ্বর বিপ্র কৈল প্রভুর নিমন্ত্রণ।।
রামানন্দ রায় সভগণ নিমন্ত্রিল।
বাহির উদ্যানে আসি প্রভু বাসা কৈল।।
ভিক্ষা করি’ বকুলতলে করিল বিশ্রাম।’’
পঞ্চ সিদ্ধ মূর্ত্তি আছে—ঐ সিদ্ধ-বকুল-তলে
জগন্নাথ-বল্লভ-উদ্যানে—ঐ সিদ্ধ-বকুল-তলে
ঐখানে বেদী বাঁধা—এখনও আছে নিদর্শন
পূণ্য-ভূমি কটক-নগরে—আজও তার স্মৃতি আছে
প্রভু বসেছিলেন যে-বকুল-তলে—আজও তার স্মৃতি আছে
শুনি আনন্দিত রাজা শীঘ্র আইলা।
প্রভু দেখি দণ্ডবৎ ভুমেতে পড়িলা ।।’’
ছিন্ন-কদলীর প্রায়—প্রতাপরুদ্র প্রেমে গড়ি যায়
প্রভু দেখি প্রতাপরুদ্র—কাঁদি কাঁদি গড়ি যায়
স্তুতি করে পুলকাঙ্গ পড়ে অশ্রুজল।।
তাঁর ভক্তি দেখি প্রভুর তুষ্ট হৈল মন।
উঠি মহাপ্রভু তাঁরে কৈল আলিঙ্গন।।’’
আইস আইস আইস বলে—বাহু পসারি কৈল কোলে
ভাসি দুটী নয়ন-জলে—বাহু পসারি কৈল কোলে
প্রেমদিঠে চেয়ে বাহু পসারিয়ে—প্রভু তারে কৈলা কোলে
আইস প্রতাপরুদ্র বলে—প্রভু তারে কৈলা কোলে
প্রভুর কৃপা-অশ্রুতে তাঁর দেহ হইল স্নান।।’’
রাজা,–প্রতাপরুদ্রে করি কোলে—গৌর ভাসে নয়ন-জলে
কায়মনোবাক্যে প্রভু তাঁরে কৃপা কৈল।।
ঐছে তাঁহারে কৃপা কৈল গৌররায়।
প্রতাপরুদ্র-সন্ত্রাতা নাম হৈল যায়।।’’
জয়,–প্রেমাবতার গৌরহরি
প্রতাপরুদ্র-ত্রাণকারী—জয়,–প্রেমাবতার গৌরহরি
জয় জয় গৌরহরি
জয় জয় শচীনন্দন
গজপতি-উদ্ধারণ—জয় জয় শচীনন্দন
রাজ-পাত্রগণ কৈল প্রভুর বন্দন।
রাজারে বিদায় দিলা শচীর নন্দন।।
বাহিরে আসিয়া রাজা পত্র লিখাইল।
নিজ-রাজ্যে যত বিষয়ী তাহারে পাঠাইল।।’’
নিজ-রাজ্যের বিষয়ীগণে—পত্র লিখেন প্রতাপরুদ্র
তোমাদের কাছে করি এই নিবেদন—তোমরা করো প্রভুর সেবন
শ্রীগৌড়-মণ্ডলে—আমার প্রভু যেতেছেন
যেন তাঁর দুঃখ হয় না—প্রাণ দিয়ে সেবা করো
পাঁচ সাত নবগৃহে সামগ্রী ভরিবা।।
আপনি প্রভুকে লইয়া তাঁহা উত্তরিবা।
রাত্রি-দিবা বেত্র হস্তে সেবায় রহিবা।।’’
সঙ্গে যাব সেবা কর্ব—আমার ভাগ্যে হল না
আমার ভাগ্যে নাহি হল—তোমরা প্রভুর সেবা করো
তোমার সভে অকপটে—সেবা করো অশেষ-বিশেষে
প্রাণগৌর চলেছেন গৌড়দেশে—সেবা করো অশেষ-বিশেষে
দুই মহাপাত্র হরিচন্দন মঙ্গরাজ।
তারে আজ্ঞা দিলা রাজা কর সর্ব্বকাজ।।
এক নব-নৌকা আনি রাখ নদীতীরে।
যাঁহা স্নান করি প্রভু যান নদীপারে।।
তাঁহা স্তম্ভ রোপণ কর মহাতীর্থ করি’।
নিত্যা স্নান করিব তাঁহা তাঁহা যেন মরি।।’’
যেথা প্রভু করবেন অবগাহন—কর স্তম্ভ আরোপণ
সেইখানে আমি মরিব—সেইখানে স্নান করিব
কৈলা স্তম্ভ আরোপণ
এই মহানদী-তীরে—কৈলা স্তম্ভ আরোপণ
গৌর-স্তম্ভ নিদর্শন—কৈলা স্তম্ভ আরোপণ
কটক-নগরে মহানদী-তীরে—এখনও তার স্মৃতি আছে
চরণ-চিহ্নিত-মঞ্চ—এখনও তার স্মৃতি আছে
চতুর্দ্বারে করহ উত্তম নব্য ব্যস।
রামানন্দ যাহ তুমি মহাপ্রভু-পাশ।।
সন্ধ্যাতে চলিবে প্রভু নৃপতি শুনিল।
হস্তী উপর তাম্বুগৃহে স্ত্রীগণে চড়াইল।।
প্রভু চলিবার পথে রহে সারি হৈয়া।’’
এইঘাটের ধারে—এই মহানদীর কূলে
চিত্রোৎপলা নদী আসি ঘাটে কৈল স্নান।
মহিষী সকল দেখি করয়ে প্রাণাম।।
প্রভুর দর্শনে সবে হৈলা প্রেমময়।
কৃষ্ণ কৃষ্ণ কহে নেত্রে অশ্রু বরিষয়।।
এমন কৃপালু নাহি শুনি ত্রিভুবনে।
কৃষ্ণ-প্রেমা হয় যার দূর দরশনে।।’’
যারে,–দূরে হেরি প্রেমোদয়—কত গুণের গৌর আমার
যারে,–দূরে হেরি প্রেমোদয়—তার,–পরশ হলে কিনা হয়
প্রেম উপজয় যাঁর দূর-দরশনে—কিনা হয় তাঁর পরশনে
জ্যোৎস্নাবতী রাত্রে চলি আইলা চতুর্দ্বার।।
রাত্রে তথা রহি প্রাতে স্নানকৃত্য কৈল।
হেনকালে জগন্নাথের মহাপ্রসাদ আইল।।’’
প্রভুর সেবার পাছে হয় কষ্ট—মহাপ্রসাদ পাঠায়েছেন প্রতাপরুদ্র
কিন্তু,–প্রাণ আছে গৌর-পদ-পাশে—প্রতাপরুদ্র আছে নিজ-বাসে
গৌরপ্রেমিক প্রতাপরুদ্রের—সদাই প্রাণ কাঁদ্ছে
আমার,–প্রভুর দুঃখ হয় পাছে—সদাই প্রাণ কাঁদছে
বহুত প্রসাদ পাঠায় দিয়া বহুজনে।।’’
প্রতাপরুদ্রের গৌর-সেবার—বালাই লয়ে মরে যাই
দেহ আছে নিজ-ভবনে—প্রাণ আছে গৌর-চরণে
উঠিয়া চলিলা প্রভু বলি হরি হরি।।
রামানন্দ মঙ্গরাজ শ্রীহরিচন্দন।
সঙ্গে সেবা করি চলে এই তিনজন।।
প্রভু-সঙ্গে পুরী গোসাঞি স্বরূপ-দামোদর।
জগদানন্দ মুকুন্দ গোবিন্দ কাশীশ্বর।।
হরিদাস ঠাকুর আর পণ্ডিত বক্রেশ্বর।’’
সঙ্গ ছাড়া কি রইতে পারে
গৌর-গত প্রাণ যাঁদের—সঙ্গ ছাড়া কি রইতে পারে
গোপীনাথাচার্য্যে আর পণ্ডিত দামোদর।।
রামাই নন্দাই আর বহু ভক্তগণ।
প্রধান কহিল সভার কে করে গণন।।
গদাধর পণ্ডিত যবে সঙ্গে চলিলা।
ক্ষেত্রসন্ন্যাস না ছাড়িহ প্রভু নিষেধিলা।।’’
যদিও প্রভু নিষেধিল—কেমন করে থাকবে বল
কায়া ছাড়িয়া ছায়া—কখনও ত থাকে না
ক্ষেত্রসন্ন্যাস মোর যাউক রসাতল।।’’
ক্ষেত্রসন্ন্যাস যাউক রসাতল—যাঁহা তুমি তাঁহা নীলাচল
তোমার সঙ্গ ত্যাগ করে—ক্ষেত্রসন্ন্যাস কিসের তরে
প্রাণ-গৌর-আগে বলেন গদাধর—ক্ষেত্রসন্ন্যাস যাক্ রসাতল
যাঁহা তুমি সেই নীলাচল—ক্ষেত্রসন্ন্যাস যাক্ রসাতল
পণ্ডিত কহে কোটি সেবা ত্বৎপাদ দর্শন।।
পণ্ডিত-গোসাঞির গৌর-অনুরাগের—বালাই লয়ে মরে যাই
ইঁহা রহি সেবা কর আমার সন্তোষ।।
পণ্ডিত কহে সবে দোষ আমার উপর।’’
পণ্ডিত-গোসাঞি প্রেমভরে—অভিমানে বলে রে
তোমার সঙ্গে গেলে পরে—যদি তোমায় দোষ লাগে,
তোমাতে দোষ না লাগিবে—আমি একা যাব তবে
এ যে বেদস্তুতি হতে মধুর
প্রেমমাখা-অভিমান-বাক্য—এ যে বেদস্তুতি হতে মধুর
শচীমাকে দেখ্তে যাব—আমি,–তোমার জন্য যাব না
এতবলি পণ্ডিত গোসাঞি পৃথক চলিলা।
কটক আসি প্রভু তারে সঙ্গে আনাইলা।।
পণ্ডিতের চৈতন্যপ্রেম বুঝন না যায়।
প্রতিজ্ঞা শ্রীকৃষ্ণসেবা ছাড়িল তৃণ প্রায়।।’’
অনাথ-জনের প্রাণ—আমার করুণাবান
কত-গুণের নিধি রে
গৌর-প্রেমময় গদাধর—কত-গুণের নিধি রে
প্রাণগৌর ছেড়ে গদাধর—কেমন করে থাকবে বল
ছায়া থাকে কি কায়া ছেড়ে—থাকবে বল কেমন করে
তাঁহার হাতে ধরি কহে করি প্রণয়-রোষ।।’’
অন্তরে প্রভুর সন্তোষ—বাইরে করে প্রণয়-রোষ
সে সিদ্ধ হইল ছাড়ি আইলা দূরদেশ।।
আমার সঙ্গে রহিতে চাহ বাঞ্ছ নিজ-সুখ।
তোমার দুই-ধর্ম্ম যায় আমার হয় দুঃখ।।
মোর সুখ চাহ যদি নীলাচলে চল।
আমার শপথ যদি আর কিছু বল।।’’
সর্ব্ব-শাস্ত্রেতে প্রকাশ—ঈশ্বরের এই ত স্বভাব
লীলা বিশেষে—কুসুম হইতে কোমন
বজ্র হইতেও কঠিন—আবার কোন লীলাতে
সর্ব্বেশ্বর ভগবানে—দুই আছে একাধারে
যত কোমল তত কঠিন—দুই আছে একাধারে
অনুভব কর ভাই রে—আজ গুণের প্রকাশ কৈলা
পাষাণ হতে কঠিনতা—আজ গুণের প্রকাশ কৈলা
অদ্বৈততত্ত্ব গৌরগোবিন্দ—আজ গুণের প্রকাশ কৈলা
এ লীলাতে গৌরের আমার—ব্রজ হতে কঠোর ব্যবহার
ছায়ার মত সদা সঙ্গে ফিরে—যে,–একতিল ছেড়ে রইতে নারে
সঙ্গ ছেড়ে নীলাচলে যেতে—তারে—আজ্ঞা কৈলেন শপথ দিয়ে
গৌরগোবিন্দ কৈলা—আমরি কি বিবর্ত্তলীলা
গৌরাঙ্গের গদাধরের প্রতি—আমরি কি ব্রজ সম বাণী
শাস্ত্রে যে কঠোর স্বভাব কয়—এই ত তার পরিচয়
আজ গৌরগোবিন্দ কৈলা—আমরি কি বিবর্ত্তলীলা
গদারাধায় উপেখিয়া—আমরি কি বিবর্ত্তলীলা
মূরছিত হইয়া তথায় পণ্ডিত পড়িলা।।’’
মূরছিত হা গৌর বলে—এই মহানদীর কূলে
পণ্ডিত মূরছিত ভূমিতলে—এই মহানদীর কূলে
প্রেম-বিবর্ত্ত-লীলার বালাই যাই রে—এই মহানদীর কূলে
হা গৌর প্রাণ গৌর বলে—গদাই, মূরছিত মহানদী-কূলে
এই যে তাঁর স্মৃতি স্তম্ভ—গদাই, মূরছিত মহানদী-কূলে
ভট্টাচার্য্য কহে উঠ ঐছে প্রভুর লীলা।।
তুমি ত সকলি জান—ওর কাঁদানই স্বভাব রে
ভক্তবাক্য রক্ষা-কারণে—নিজে কাঁদে কাঁদায় আনে
ভক্তকৃপায় ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা রাখিলা।।
এই মত প্রভু তোমার বিচ্ছেদ সহিয়া।
তোমার প্রতিজ্ঞা রক্ষা কৈল যত্ন করিয়া।।
এইমত কহি তারে প্রবোধ করিলা।
দুইজনে শোকাকুল নীলাচলে আইলা।।’’
হা গৌর বলে ভাসি নয়ন-জলে—দোঁহে গেলা নীলাচলে
কতদিনে দেখা পাব বলে—গলা ধরে দু’জনে কাঁদে
‘কতদিনে দেখা পাব বলে’—
হরিবোলা রসের বদন—কতদিনে দেখা পাব বলে
ভক্ত-ধর্ম্ম-হানি প্রভুর না হয় সহন।।
প্রেমের বিবর্ত্ত ইহা শুনে যেইজন।
অচিরে মিলয়ে তারে চৈতন্য-চরণ।।’’
এই মহানদীর কূল—এই সেই ভূমি রে
এই সেই কটক-মহানদী—এই সেই পূণ্যভূমি
রাজা,–প্রতাপরুদ্রের মহিষীগণ—প্রাণগৌর করি’ দরশন
দূর হতে গৌর দর্শন করে—পুলকিত হইল প্রেমে
‘দূর হতে গৌর দর্শন করে’—
হস্তী-উপরে তাম্বুগৃহে—দূর হতে গৌর দর্শন করে
সে ত এই ভূমিতে—দূর হতে গৌর দর্শন করে
এই ঘাটে গৌর কৈলেন স্নান
রাজ,–প্রতাপরুদ্র কৈল স্তম্ভ আরোপণ—এই ঘাটে গৌর কৈলেন স্নান
গৌরচরণ-চিহ্ন মঞ্চ—এই ত তার নিদর্শন
প্রেমময় রাজা প্রতাপরুদ্র—প্রতিজ্ঞা করিলেন
এইখানে আমি মরিব—এই ঘাটে নিত্য স্নান করিব
সেই লীলা ধরি’ হিয়ায়—প্রাণভরে বল ভাই
রাজা,–প্রতাপরুদ্র-উদ্ধারণ—জয় জয় শচীনন্দন
এই,–মহানদীর কূল দিয়া—বয়েছিল প্রেমের বন্যা
প্রেমের বিবর্ত্ত-লীলায়—বয়েছিল প্রেমের বন্যা
‘প্রেমের বিবর্ত্ত-লীলায়’—
গদাধর-গৌরাঙ্গের—প্রেমের বিবর্ত্ত-লীলায়
এই ত সে পূণ্যভূমি
প্রেমবিবর্ত্ত-লীলাস্থলী—এই ত সেই পুণ্যভূমি
প্রেমের বিবর্ত্ত—লীলায়—মূরছিত পণ্ডিত গোসাঞি
বলি,–হা প্রাণ গোরারায়—মূরছিত পণ্ডিত গোসাঞি
পণ্ডিত-গোসাঞিকে তুলে –সার্ব্বভৌম কৈলেন কোলে
এই মহানদীকূলে—গদাধর কাঁদে হা গৌর বলে
ক্ষণে ক্ষণে দুই-বাহু তুলে—গদাধর কাঁদে হা গৌর বলে
সেই,–হাসিমাখা রসের বদন—বলে,–আর কতদিনে দেখ্তে পাব
গদাধর স্থির হও
ঐছে প্রভুর লীলা হয়—গদাধর স্থির হও
এই সেই তোমার লীলাভূমি
প্রাণগৌর কোথা তুমি—এই সেই তোমার লীলাভূমি
গদাধরের প্রাণনাথ—একবার দেখা দাও
শ্রীগুরুচরণে হৃদে ধরে—প্রাণভরে গাও ভাই সবে
সেই,–হৃদয়-বিদারণ-লীলা স্মরণ করে—প্রাণভরে গাও ভাই সবে
গদাধরের চিতচোর—পরাণ-গৌরাঙ্গ-কিশোর
নিতাই-পাগল-করা গোরা—জয় গদাধরের প্রাণ-বঁধুয়া
‘নিতাই-পাগল-করা গোরা’—
গদাধরের চিতচোরা—নিতাই-পাগল-করা গোরা
নিতাই গৌরাঙ্গ গদাই—প্রাণভরে বল ভাই
একবার দেখা দাও
এই মহানদীর কূলে—একবার দেখা দাও
তোমার গদাধরের প্রীতে—একবার দেখা দাও
প্রাণভরে গাহিব
গদাই-গৌরাঙ্গ-বিহার—প্রাণভরে গাহিব
হৃদি-পটে এঁকে লব—প্রাণভরে গাহিব
ভাই ভাই এক-প্রাণে—পাগল হয়ে বেড়াব
বল বল বল ভাই—গদাধরের চিতচোরা
গদাধরের প্রাণ-গোরা—পাগলের চিতচোরা
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।
‘‘গৌরহরিবোল, হরিবোল, হরিবোল, হরিবোল।’’
‘‘শ্রীগুরু-প্রেমানন্দে নিতাই-গৌর-হরিবোল।।’’