যমুনা কিনারে

করতল কমল নয়ন ঢর নীর

করতল কমল নয়ন ঢর নীর।
ন চেতএ সঁভরন কুন্তল চীর।।
তুঅ পথ হেরি হেরি চিত নহি থীর।
সুমরি পুরুব নেহা দগধ সরীর।।
কতে পরি মাধব সাধব মান।
বিরহী জুবতি মাঁগ দরসন দান।।
জলমধে কমল গগনমধে সূর।
আঁতর চাঁদহু কুমুদ কত দূর।।
গগন গরজ মেঘা সিখর ময়ূর।
কত জন জানসি নেহ কত দূর।।
ভনই বিদ্যাপতি বিপরিত মান।
রাধা বচনে লজাএল কান।।

অন্তঃকথন:
আজ মাধব আমাদের রাধারানীর ওপর মান করে আছেন। দর্শন দিচ্ছেন না। মাধব বিহনে রাধারানীর যে কত করুণ অবস্থা সে কথা মাধবের কাছে বর্ননা করে দূতী মাধবের মান ভাঙাতে এসেছেন। দূতী বলছেন, তোমা বিহনে রাইকমলিনীর দশা আর চোখে দেখা যায় না কানাই, সে গালে হাত রেখে বসে আছে সারাক্ষণ, দুচোখে অবিরামজলঝরে পড়ছে, তার পোশাক আসাক গয়নাগাটি এমনকি কেশরাশির সম্পর্কেও তার আর চেতনা নেই। তোমার পথ চেয়ে চেয়ে তার চিত্ত অস্থির, তোমার সঙ্গে তার পূর্বপ্রেমের কথা স্মরণ করে করে শরীর দগ্ধ করছে। হে মাধব, তুমিকেমন করে মান সাধবে? বিরহিণী যুবতী তোমার দর্শন চাইছে যে। দেখো কানাই, কমল থাকে জলের মধ্যে আর সূর্য্য থাকে গগনমণ্ডলে, কুমুদ আর চাঁদের মধ্যেও দুস্তর ব্যাবধান, তবুও তো প্রেম হয় বলো! মেঘ সেই সুদূর আকাশে গর্জন করে আর তাই দেখে ময়ূর পাহাড়চূড়ায় বসে নৃত্য করে। তাহলেই বুঝে দেখো প্রেম কখনো দূরত্ব মানে না। প্রেম যে কতদূর যেতে পারে তা আর কজন জানে? বিদ্যাপতি বলছেন, এ হল বিপরীত মান, রাধারানীই মান করেন আজ মাধব মান করেছেন। তবে দূতীর কাছে রাধারানীর কথা শুনে কানাই লজ্জিত হলেন।

পদকর্তা:বিদ্যাপতি (বাঙ্গালী)
রাগ:অজ্ঞাত
তাল:অজ্ঞাত
সংকলন:সুজাহাঁ দাস

সন্ধিনী