যমুনা কিনারে

তিরীর সভাব মণে করে

তিরীর সভাব মণে করে।
প্রাণ কাহ্নাঞি ল
তাত রোষ না কর নাগরে।।
এ তোহ্মার বচনে।
প্রাণ কাহ্নাঞিঁ ল
সব কোপ খণ্ডিল এখনে।।এআ।।
আল হের
এহি জাগে তোহ্মার চরণে।
প্রাণ কাহ্নাঞিঁ ল
আহ্মা সম না করিহ আনে।।ধ্রু।।
তোহ্মার আহ্মার দুঈ মনে।
এক করী গান্থিল মদনে।।
তার আনুরূপ বৃন্দাবনে।
তোর বোল না করিব আনে।।
বিধি কৈল তোর মোর নেহে।
একই পারণ এক দেহে।।
সে নেহ তিঅজ নাহিঁ সহে।
সে পুণি আহ্মার দোষ নহে।।
কে বুলিতেঁ পারে তোর গুণে।
একেঁ একেঁ বলে মোর মনে।।
এবেঁ আসি বৈস মোর পাশে।
গাইল বড়ু চণ্ডীদাসে।

অন্তঃকথন:
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের বৃন্দাবন খন্ডের এই গান রাধার প্রেমনিবেদনের গান। তবে এই প্রেম্নিবেদন শ্রীমতির দুর্জয় মান ও মানভঞ্জন পেরিয়ে তবেই সম্ভব হয়েছে। রাসলীলায় মগ্ন কৃষ্ণের আচরণে ব্যাথিত রাধা রানী অভিমান করেছিলেন! তারপর মধুসূদনের মধুরবাক্যে তাঁর সেই মান দূরীভূত হয়। 'আহা কে না সুতিত্থে তপ' এবং 'তমাল কুসুম চিকুর গণ' গান দুটিতে সেই মান ও মানভঞ্জনের মধুর ছবি বিদ্যমান। অভিমান মুক্তা রাধারানী এই গানে কৃষ্ণকে বলছেন, আমার অভিমান কে স্ত্রীজাতির স্বভাব মনে করে তুমি ক্ষমা করে দাও, তাতে রাগ কোর না। তোমার সুমধুর কথাতেই প্রাণকানাই, আমার সকল কোপ খন্ডন হল। খালি তোমার চরণে আমার একটাই নিবেদন, আমার সমান জায়গা তুমি অন্য কাউকে দিও না অর্থাৎ তোমার প্রেমে আমার স্থান যেন অন্য কেউ না নিতে পারে। তোমার আমার মনকে মদন একসূত্রে গেঁথেছে, আমি কখনো বৃন্দাবনে তোমার কথার অন্যথা করবো না। বিধাতাই তোমার আমার এই প্রেম সৃষ্টি করেছে। এই প্রেমে দুই দেহ হলেও আসলে আমরা একই দেহ একই প্রাণ। এমন যে প্রেম তা কি তৃতীয় কাউকে সহ্য করতে পারে? আমার কি দোষ। অর্থাৎ শ্রীমতি বলছেন, কৃষ্ণ তোমায় অন্য গোপীদের সঙ্গে দেখে আমার যে মান সে আমাদের প্রেমেরই বহিঃপ্রকাশ তাতে দোষ নেই কোন। এ ঈর্ষা প্রেমের ঈর্ষা তাতে কলুষতা নেই। অতঃপর রাধিকা কৃষ্ণের প্রশংসা করে বলছেন, তোমার গুণ বলে শেষ করা যায় না কানাই। তোমার সেই গুণের কথা আমার মনকে অধিকার করে নিচ্ছে, আমি তোমার গুণে বশীভূত। এখন তুমি এসে আমার পাশে উপবেশন কর। এই ভাবে শ্রীমতি নিজেকে নিবেদন করে কৃষ্ণের মিলন প্রার্থনা করলেন। রাধিকার নিজমুখে প্রেম মনস্তত্বের প্রকাশ গানটিকে বিশিষ্ট করে তুলেছে।

পদকর্তা:বড়ু চন্ডীদাস
রাগ:ভাঠিআলীরাগ
তাল:রূপক
সংকলন:দেবহূতি সরকার

সন্ধিনী