ভজ, নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ, হরে কৃষ্ণ হরে রাম।। [মাতন]
সঙ্কীর্ত্তন-নৃত্যরসে জাগিয়া রজনী।।’’
শ্রীবাস-অঙ্গনে—আমার,–গৌরাঙ্গ নাচে রে
‘‘সঙ্কীর্ত্তন-নৃত্যরসে জাগিয়া রজনী।।
বাহু পসারিয়া ধরে নিতাই গুণমণি।’’
ও প্রাণ বিশ্বম্বর—কীর্ত্তন সম্বর হে
শ্রান্ত সব পরিকর—কীর্ত্তন সম্বর হে
‘শ্রান্ত সব পরিকর’—
সারা-নিশি নেচে গেয়ে—শ্রান্ত সব পরিকর
রত্ন-সিংহাসনে বৈসে গোরা গুণমণি।
নরহরি চামর ঢুলায় চেয়ে মুখখানি।।’’
গোরারসের বদন হেরি’—চামর ঢুলায় নরহরি
চামর ঢুলায় নরহরি—তার,–দুনয়নে বহে বারি
অনুরাগে নরহরি—প্রেম-ধারায় ধিক্ মানিছে
এখন তোরে চাই না-বলে,–দূরে যা’ রে প্রেমবারি
তুই যে,–হলি গৌর-সেবার ঐরি—বলে,–দূরে যা’ রে প্রেমবারি
গোরা-রসের,–বদন হেরি চামর করি—বলে,–দূরে যা’ রে প্রেমবারি
মুখ,–পদ পাখালিল দিয়ে ‘সুশীতল-পানি’
অমনি,–ক্ষীর, সর, নবনী আনিল শ্রীবাস-গৃহিণী।।
প্রাণ-গৌর খাও হে
মুখখানি শুকায়ে গেছে—প্রাণ-গৌর খাও হে
‘মুখখানি শুকায়ে গেছে’—
সারা-নিশি নেচে গেয়ে—মুখখানি শুকায়ে গেছে
চারিদিকে উঠিল জয় জয় ধ্বনি।
আনন্দে ভোজন করে গোরা বাৎসল্য জানি ।।’’
পরাণ-গৌরাঙ্গের—একলা খেতে ভাল লাগে না
নিতাই-মুখে তুলে দেয়—অবধূত খাও বলে
দুহুঁ দোহাঁর কোমল-করে—দুহুঁ-মুখে তুলে দেয়
ভোজন-বিলাস-রঙ্গে—উঠিল আনন্দ-রোল
‘ভোজন-বিলাস-রঙ্গে’—
সবাই বলে হরিবোল—উঠিল আনন্দ-রোল
মুখ পাখালিল দিয়ে ‘সুশীতল-পানি’
অবশেষে বাঁটি দিল নিজগণে ডাকি আনি’।’’
প্রেম,–দিঠে চেয়ে অমিয়া-ভাষে—নাম ধরে ডেকে ডেকে
‘‘অবশেষ বাঁটি দিল নিজ-গণে ডাকি আনি’।
অবশেষ পেয়ে সবে করে জয়-ধ্বনি।।’’
নদীয়া-বিনোদিয়া—জয় শচীদুলালিয়া
জয় নিতাই রঙ্গিয়া—জয় শচীদুলালিয়া
শ্রীবাস-অঙ্গনের নটুয়া—জয় শচীদুলালিয়া
যাদবায় মাধবায় কেশবায় নমঃ ।
গোপাল গোবিন্দ রাম শ্রীমধুসূদন।
গিরিধারী গোপীনাথ মদনমোহন।।’’
‘‘শ্রীচৈতন্য নিত্যানন্দ অদ্বৈত সীতা।
ভজ,–হরি গুরু বৈষ্ণব ভাগবত গীতা।।’’
‘‘জয় রূপ সনাতন ভট্ট-রঘুনাথ।
শ্রীজীব গোপালভট্ট দাস-রঘুনাথ ।।’’
‘‘শ্রীনিবাস নরোত্তম প্রভু লোকনাথ।
রামচন্দ্র দাস্য দিয়া কর আত্মসাৎ।।
জয় জয় শ্যামানন্দ জয় রসিকানন্দ।
নিধুবনে নিত্যলীলা পরম-আনন্দ।।’’
‘‘এই সব গোসাঞির করি চরণ বন্দন।
যাহা হইতে বিঘ্ন-নাশ অভীষ্ট-পূরণ।।
এই সব গোসাঞি যবে ব্রজে কৈলা বাস।
শ্রীরাধাকৃষ্ণ-নিত্যালীলা করিলা প্রকাশ।।
(শ্রীগৌর-গোবিন্দ-লীলা করিলা প্রকাশ।।)
এই সব গোসাঞি যাঁর তাঁর মুঞি দাস।
তাঁ সভার পদরেণু মোর পঞ্চ গ্রাস।।
তাঁদের চরণ সেবি ভক্ত-সনে বাস।
জনমে জনমে মোর এই অভিলাষ।।
গো-কোটি দানে গ্রহণে চ কাশী।।
মাঘে প্রয়াগে কোটি-কল্প-বাসী।।
সুমেরু-সমতুল্য-হিরণ্য দানে।
নহি তুল্য নহি তুল্য গোবিন্দ-নামে।।
গোবিন্দ কহেন আমার রাধা সে পরাণ।
তপ জপ পরিহরি লও রাধা-নাম ।।
জয় জয় রাধা-নাম প্রেম-তরঙ্গিণী।
প্রেম-তরঙ্গিণী নাম সুধা-তরঙ্গিণী।
নাম জপিতে জপিতে উঠে অমৃতের খনি।
রাধা,– নামের স্বাদ ভাল জানে শ্যাম-গুণমণি।।
তাই,–বাঁশী-যন্ত্রে গান করে দিবস-রজনী।।’’
ধীরসমীরে যমুনা-তটে—বংশীবটে সদা রটে
অকপটে শ্যাম-নটে—বংশীবটে সদা রটে
‘রাধা’—নাম গেয়ে গৌর হল’—
নামে বরণ ধরাইল—রাধা,–নাম গেয়ে গৌর হল
সেই দুই এক তনু প্রাণের গৌরহরি ।।
এ হেন গৌরাঙ্গ-হরি পেতে যার আশ।
ধর্ম্মাধর্ম্ম পরিহরি হও নিতাইএর দাস।।
সংসারের পার হইয়া ভক্তির সাগরে।
যে ডুবিবে সে ভজুক আমার নিতাইচাঁদেরে।।
মুখেও যে জন বলে মুঞি নিত্যানন্দ-দাস।
সে,–নিশ্চয় দেখিবে গোরার স্বরূপ-প্রকাশ।।
গোপীগণের যেই প্রেম কহে ভাগবতে।
আমার,–একলা নিত্যানন্দ হইতে পাইবে জগতে।।
নিত্যানন্দ প্রেমদাতা, গৌরাঙ্গ পরম-ধন।
রাস-বিলাসে পাবে শ্রীরাধারমণ।।
‘হরে কৃষ্ণ হরে রাম’ নাম-তরী আরোহণে।
সংসার-সাগর-পার চল বৃন্দাবনে।।
অতিঘোর-বিষ-সম দেখিবে সম্মান।
অপমান দেখ ভাই অমৃত-সমান।।’’
শূকরী-বিষ্ঠা-সম—প্রতিষ্ঠা ত্যাগ কর
সুরা-সম—অভিমান ত্যাগ কর
রৌরব-সম—গৌরব ত্যাগ কর
প্রেমধনে ধনী হতে চাও—এই তিন ত্যাগ কর
অপমান দেখ ভাই অমৃত-সমান।।’’
প্রভু,–নিত্যানন্দ স্মঙরিয়ে—অপমান অমৃত দেখ
প্রভু—নিত্যানন্দ স্মঙরিয়ে’—
অভিমান-শূন্য—প্রভু,–নিত্যানন্দ স্মঙরিয়ে
সুমধুর-বৃন্দাবন কভু না ছাড়িয়া।’’
শ্রী,–নবদ্বীপ আর বৃন্দাবন—ভেদ যেন করো না
ভেদ-জ্ঞানে কোটি-কল্প—ভজলেও পাবে না
ঠাকুর-নরোত্তম বলেছেন—তারই তো হয় রে
ব্রজ-ভূমেতে বাস—তারই তো হয় রে
যে বা জানে চিন্তামণি—তারই তো হয় রে
‘যে বা জানে চিন্তামণি’—
শ্রীগৌড়মণ্ডল-ভূমি—যে বা জানে চিন্তামণি
শ্রীরাধামুরলীধর ভজ প্রাণ দিয়া।।
শ্রী,–রাধা-কৃষ্ণ এক অঙ্গ—গৌরাঙ্গ ভজ ভাই
শ্রীগুরু-বৈষ্ণব-পদে মজাইয়া মন ।।
শ্রীগুরু-বৈষ্ণব-পাদপদ্ম করি’ আশ।’’
হরি-নাম-সঙ্কীর্ত্তন কহে নরোত্তম-দাস।।’’
আমার,–দয়াল-নিতাই অমিয়া বিলায় রে ।
আমার,–শ্রীগৌরাঙ্গ-সুধার আধারে;
আমার,–নিতাইচাঁদ তার অঙ্গ-আধারে।।
চাঁদে চাঁদে মিশে’ দুটী চাঁদ’’,
বৃষ,–ভানু-কূলচাঁদ নন্দ-কূলচাঁদ—চাঁদে চাঁদে মিশে
আমাদের,–রাইচাঁদ আর শ্যামচাঁদ—চাঁদে চাঁদে মিশে
কলিঘোর,–অমানিশা বিনাশিতে—চাঁদে চাঁদে মিশে
শ্রীরাধিকার প্রেম-ঋণ শোধিতে
একা নন্দ-কূলচাঁদের—শকতি হল না ঋণ শোধিতে
আমাদের,–ভানু-কূলচাঁদের সনে—তাই হল মিশিতে
‘‘চাঁদে চাঁদে মিশে দুটী চাঁদ;
এসে উদয় হল নদীয়ায় আয় রে।
আয় রে তোরা লুটবি কে আয়,
আমার,–দয়াল-নিতাই অমিয়া বিলায় রে।।’’
কিশোরী-ভাণ্ডার লুটিয়া—এনেছে নিতাই প্রেম-অমিয়া
আচণ্ডালের দ্বারেতে গিয়া—দিতেছে নিতাই যাচিয়া যাচিয়া
গলবাসে দন্তে তৃণ ধরিয়া—বলিছে নিতাই কাঁদিয়া কাঁদিয়া
তোদের,–পাপ-তাপের বোঝা নিয়া—আমি,–বিনামূলে যাব বিকাইয়া
একবার গৌর,–হরি বোলে আমায় লও কিনিয়া–আমি,–বিনামূলে যাব বিকাইয়া
মাথায় লয়ে নাম-প্রেমের ডালি-যেচে বেড়াইছে নিতাই-মালী
প্রেম,–কে নিবি আমায় কিনিবি বলি—যেচে বেড়াইছে নিতাই-মালী
এই,–সুরধুনি-কূলে বুলি বুলি—ডাকিয়ে নিতাই দুবাহু তুলি
আয়,–কলিহত-জীব বলি—ডাকিছে নিতাই দুবাহু তুলি
আয় বলি,–আচণ্ডালে কোলে তুলি—কাঁদিছে নিতাই ফুলি ফুলি
আষ বলি,–পতিতেরে বুকে তুলি—কাঁদছে নিতাই আকুলি বিকুলি
একবার,–আয় রে গৌরহরি বলি—প্রেমের ডালি দিব রে ঢালি
‘‘গৌরহরি বোল, হরিবোল, হরিবোল, হরিবোল।’’
‘‘বোল হরিবোল, গৌরহরি বোল।।’’
প্রেম্সে কহো শ্রীরাধে শ্রীকৃষ্ণ বলিয়ে—
প্রভু-নিতাই-শ্রীচৈতন্য-অদ্বৈত-শ্রীরাধারাণীকী জয় !
প্রেমদাতা-পরমদয়াল-পতিতপাবন-শ্রীনিতাইচাঁদকী জয় !
করুণাসিন্ধু-গৌরভক্তবৃন্দকী জয় !
শ্রীনাম-সঙ্কীর্ত্তনকী জয় !
খোল-করতালকী জয় !
শ্রীনবদ্বীপ-ধামকী জয় !
শ্রীনীলাচল-ধামকী জয় !
শ্রীবৃন্দাবন-ধামকী জয় !
চারি-ধামকী জয় !
চারি-সম্প্রদায়কী জয় !
অনন্তকোটি-ব্রাহ্মণ-বৈষ্ণবকী জয় !
পরমকরুণ-শ্রীগুরুদেবকী জয় !
প্রেমদাতা-পরমদয়াল-পতিতপাবন—
শিশুপশুপালক-বালকজীবন-শ্রীমদ্রাধারমণকী জয় !