ভজ, নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ, হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’ [মাতন]
জপ,–রাম রাম হরে হরে—জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম
রমে রামে মনোরমে—জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম
শ্রীরাধারমণ রাম—জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম
শ্রীরাধিকা-নয়ন-রঞ্জন মুখ—নিরখি মন বিচোরো রে
শ্রীরাধা-নয়ন-রঞ্জন মখ—নিরখি মন বিচারো রে
‘শ্রীরাধা-নয়ন-রঞ্জন মুখ’—
যে মুখ—দেখতে রাধা অনিমিখ—শ্রীরাধা-নয়ন-রঞ্জন মুখ
আমাদের ভানুনন্দিনী—যে মুখ,–অনিমিখ দেখতে সাধ করে গো
নিরখি মন বিচারো রে
কিশোর-নয়ন-রঞ্জন-মুখ—নিরখি মন বিচারো রে
অলকা-আবৃত বদন—নিরখি মন বিচারো রে
হাসিয়া বাঁশিয়া বদন—নিরখি মন বিচারো রে
ও-ত’ বদন নয় গো—বংশী-গানামৃত-ধাম
‘ও-ত’ বদন নয় গো—
লাবণ্যামৃত-জন্মস্থান-ও-ত’ বদন নয় গো
চন্দ্র-কোটি ভানু-কোটি,’’
শ্রীগোবিন্দের,–অকলঙ্ক-মুখচাঁদের আগে—ছার,–গগন-চাঁদে কিসে বা গণি
গগন-চাঁদে প্রতিপদ আছে
বদন-চাঁদ,–অকলঙ্ক নিশিদিশি ষোল-কলা—গগন-চাঁদে প্রতিপদ আছে
সুন্দর কপোল লোল,’’
সুন্দর-লোল-কপোল—সহজেই হাসিমাখা
অধরবিম্ব মধুর-হাস,’’
আমার শ্রীগোবিন্দ-মুখে—হাসি নয় যেন চাঁদ ফাটল
ঝরিল অমিয়া রাশি রাশি—হাসি নয় যেন ফাটল শশী
আঁখি-পাখী-ধরা ফাঁসি—হাসি নয় ও-যে প্রেমের ফাঁসি
বরজ-ললনার—আঁখি-পাখী-ধরা ফাঁসি
হাসি নয় ও-যে প্রেমের ফাঁসি—মন-প্রাণ,–উদাসী করে করে দাসী
তার মাঝে,–দস্তপাঁতি-কুন্দ ফুটল—হাসি নয় যেন চাঁদ ফাটল
‘‘মণি-কুণ্ডল মকরাকৃতি,’’
মকরাকৃতি-কুণ্ডল—গণ্ডস্থলে ভাল দোলে
গোবিন্দের কানের মকর-কুণ্ডল—মুখ ব্যাদান করে দোলে
মনোমীন গিলিবে বলে—
বরজ-ললনার—মনোমীন গিলিবে বলে
আমার শ্রীগোবিন্দ-মুখে—অলকা নয় যেন ভৃঙ্গাবলী
দেখে এই মনে হয়—যেন,–অলকারূপে বিরাজিছে
বরজ-আলি-চিত-ভৃঙ্গাবলী—যেন—অলকারূপে বিরাজিছে
নীল-কমল-মধু পিবে বলে—যেন—অলকারূপে বিরাজিছে
‘নীল-কমল-মধু পিবে বলে’—
গোপনে গোবিন্দ-মুখ—নীল-কমল পিবে বলে
কেশরক তিলক বন্য়ো,’’
নন্দকিশোরের নাসায় কেশরের তিলক—মদন-বিজয়ী ধ্বজা
স্বর্ণমণ্ডিত-গুঞ্জাহার-পরিসর-হিয়ায় দোলে
বরজ,–ললনা-চিত দোলাবে বলে—পরিসর-হিয়ায় দোলে
‘‘নবজলধর তড়িতাম্বর,’’
রাধার প্রাণ-গোবিন্দ হে—নবীন-নীরদ-কাঁতিয়া
বিনোদ-রঙ্গিয়া
ত্রিভঙ্গ-ভঙ্গিয়া
শ্যাম,–বিনোদিয়া আমাদের—‘‘নবজলধর’’
‘‘নবজলধর তড়িতাম্বর,’’
শ্যাম-অঙ্গে পীতাম্বর—দেখে এই মনে হয়
থির-বিজুরী-বরণী রাই—যেন,–পীতাম্বর হয়েছে গো
নিরন্তর,–শ্যাম-অঙ্গ-সঙ্গ লাগি’—যেন,–পীতাম্বর হয়েছে গো
লীলানট সুরকো পহুঁ, রূপে জগমন মোহে।।’’
সে-যে জগ-মনোমোহনিয়া—একা মেনে আমি নই গো
শ্রীরাধা-নায়ক নাগর শ্যাম।
সো শচীনন্দন, নদীয়া-পুরন্দর,
সুর-মুনিগণ-মনোমোহন-ধাম।।
জয় নিজ-কান্তা,- কান্তি-কলেবর,
জয় নিজ-প্রেয়সী-ভাব-বিনোদ।।’’
নিগূঢ়-গৌরাঙ্গ-লীলার—অপরূপ রহস্য রে
প্রাণ-রাধা-রাধারমণের—সর্ব্ব-বাঞ্ছা-পূর্ত্তি লীলা
ব্রজ-বিহারী-নন্দনন্দনের—হইল ইচ্ছার উদ্গম
রাধার,–প্রেমমাধুর্য্যাধিক্য দেখে—হইল ইচ্ছার উদগম
কে আমারে মুগ্ধ করে
রাধা-মাধুরী দেখে বলছেন—কে আমারে মুগ্ধ করে
যে আমারে মুগ্ধ করছে—আমি উহায় আস্বাদিব
কৈছন সুখে তিঁহ ভোর !’’
প্রেমের মাধুরী কেমন
রাধা-প্রেমে কি বা সুখ
কি করিব না পাইয়া ওর।।’’
কতই না চেষ্টা করিলাম—কিছুতেই আস্বাদিতে নারিলাম
এ বাসনা পূর্ণ কভু নয়।’’
এই তিন-বাঞ্ছা পূরণ—আমা হতে হবে না
আমি ত’ লীলার বিষয়-বটি—আমা হতে হবে না
আশ্রয়-জাতীয়-সুখাস্বাদন—আমা হতে হবে না
আশ্রয়-জাতীয়-ভাবে—আমায়,–বিভাবিত হতে হবে
আসি,–নদীয়াতে করিল উদয়।।’’
নদীয়া-বিহারী হেরি—সবাই বলে গৌরহরি
ও-যে আমাদের রাই-কিশোরী
ও-ত’ নয় গৌরহরি—ও-যে আমাদের রাই-কিশোরী
পলকে প্রলয় গণে
শ্যাম-বঁধুর অদর্শনে—পলকে প্রলয় গণে
এক-পলক না দেখিলে—কোটি-যুগ মানে গো
ফিরছে বঁধুকে বুকে ধরি’
আমাদের প্রাণ-কিশোরী—ফিরছে বঁধুকে বুকে ধরি’
ব্রজ আর নদীয়া—যেন,–ভিন্ন মনে করো না
নবদ্বীপরূপে বেকত
ব্রজের,–গুপত-কুঞ্জের গুপত-কুঞ্জ-নবদ্বীপরূপে বেকত
পরস্পর বুকে ধরে—নদীয়ায় নিরন্তর বিহরে
কখনও নয় ছাড়াছাড়ি—নিরন্তর জড়াজড়ি
পরস্পর বিপরীত—অপূর্ব্ব মিলন রে
রাই কানু, কানু রাই—অপূর্ব্ব মিলন রে
এ-যে,–মূরতিমন্ত প্রেমবৈচিত্ত্য—অপূর্ব্ব মিলন রে
মিলা অমিলা রসের খেলা
নিগূঢ়-গৌরাঙ্গ-লীলা—মিলা অমিলা রসের খেলা
নিরন্তর-মিলনে—মিলা অমিলা রসের খেলা
বর্ণিয়াছেন সাধুগণ—যাহার চরিত রে
নিরন্তর ক্রীড়াপর—যাহার চরিত রে
নিরন্তর ক্রীড়া—কেমন করে হবে বল
নিরন্তর মিলন না হলে—কেমন করে হবে বল
সদাই মিলিত না থাকিলে –- কেমন করে হবে বল
নিরন্তর ক্রীড়া বল—কেমন করে হবে বলে
সার্থকতা মূরতি
নিরন্তর ক্রীড়া-শকতির—সার্থকতা মূরতি
বুকে ধরে আছে মাতি—নিরন্তর-ক্রীড়ার মূরতি
নিরন্তর ক্রীড়া ভোগ কর—ঐ মূরতি হৃদে ধর
সে-যে,–আশ-মিটান মূরতি রে
প্রাণ-রাধা-রাধারমণের—সে-যে,–আশ-মিটান মূরতি রে
এ-যে,–বাঞ্ছা-পূর্ত্তিকারী লীলা
নিগূঢ়-গৌরাঙ্গ-লীলা—এ-যে,–বাঞ্ছা-পূর্ত্তিকারী লীলা
ব্রজজন-সঙ্গে যুগলকিশোরের—এ-যে,–বাঞ্ছা-পূর্ত্তিকারী লীলা
ব্রজের সখা-সখীর—সকলের বাঞ্ছা পূরণ হল
স্থাবর-জঙ্গম-গুল্মলতা—সকলের বাঞ্ছা পূরণ হল
সঙ্কীর্ত্তন-রাসরঙ্গে—সকলের বাঞ্ছা পূরণ হল
মিলনেতে কেমন মাধুরী—সে মূরতি দেখবার লাগি’
আমি একবার দেখব
প্রাণ-বঁধুর হয় কি মাধুরী—আমি একবার দেখব
‘প্রাণ-বঁধুর হয় কি মাধুরী’—
আমার সঙ্গে মিলনে—প্রাণ-বঁধুর হয় কি মাধুরী
সেই মাধুরী আস্বাদিছে
রাধা গদাধররূপে—সেই মাধুরী আস্বাদিছে
আস্বাদ ত’ মিটে নাই—তাই,–সেবা-সুখ মিটাইছে
অনঙ্গ নিতাই হয়ে—সেবা-সুখ মিটাইছে
আস্বাদিতে সে মাধুরী—নিতাই অনঙ্গমঞ্জরী
মূরতি ধরেছে
অনঙ্গ-কেলি—মূরতি ধরেছে
শ্রীনিত্যানন্দরূপে—মূরতি ধরেছে
নিগূঢ়-শ্রীনিত্যানন্দ—অনঙ্গ-কেলি মূর্ত্তিমন্ত
যুগলকিশোরের বিলাস—মূরতি ধরেছে
ঠাকুর-নরহরিরূপে—মূরতি ধরেছে
যুগল সুখ-পায় বটে
এবার আমি আস্বাদিব
আমার কি মাধুরী—এবার আমি আস্বাদিব
ঠাকুর-নরহরিরূপে—তাই,–বিলাস বিলাস আস্বাদিছে
যদি,–ভোগ করতে সাধ থাকে
বিলাসের পরিণতি-লীলা—যদি,–ভোগ করতে সাধ থাকে
শ্রী,–গুরুরূপা-সখীর আনুগত্য—তবে,–রাধাপদ আশ্রয় কর
গরবিণী ভানুনন্দিনী—আমাদের,–কতই-গুণের রাই-কিশোরী
সখীর প্রণয়, কুঙ্কুমে যে জন, উজল-সুকাঁতি-যুত।। রে !!
যে নারী-রতন, ধরি, ক্ষণে ক্ষণ, নব নব রূপ কত। রে !
নিখিল-ভুবন, মোহন-নাগরে, মোহিতেছে অবিরত।। বে !!
যাঁহার বিমল, শ্রীতনু তটিনী, দিনে ধরে তিন-রূপ।’’ রে !
পূরায় শ্যামের মন-সাধে—রাই জয় জয় রাধে রাধে
তাহে নিতি নিতি, কেলি করে সুখে, রসিক-নাগর-ভূপ।।’’রে !!
কৃষ্ণ-কেলি-সরোবর—আমার রাই-কলের
মধ্যাহ্নে তারুণ্য, অমৃত-প্রবাহ সবেগে বহিয়া যায়। রে !!
সায়াহ্নে লাবণ্য, সুধা-বন্যা কি বা, উদয় হয় গো আসি।’’ রে !
পূবর্বাহ্নে, মাধ্যাহ্নে, সায়াহ্নে—নিরন্তর কেলি করে
কৃষ্ণ-কেলি-পারাবারে—তিন-ধারা প্রবাহিত
কারণ্য, তারুণ্য, লাবণ্যামৃত—তিন-ধারা প্রবাহিত
আমাদের,–রাস-বিলাসী কেলি করে—তিন-ধারাময়-সরোবরে
সেই কেলি-পারাবারে—যদি সাঁতার দিতে চাও
হংস-চক্রবাক হয়ে—যদি সাঁতার দিতে চাও
এমন সম্বন্ধ ভুলে গেছ
জেনেও সম্বন্ধ ভুলে গেছ
জেনেও সম্বন্ধ ভুলে গেছ
নিজ নিজ সম্বন্ধ ভুলে গেছ
তার কি রাধার সেবা মিলে
রাধা-গদাধরের কৃপা না হলে—তার কি রাধার সেবা মিলে
গদা –রাধা কৃপাকরে—সেবা-স্বভাব জাগায়ে দেয়
গোরারসে ডুবে যাও—রাধা-গদাধরের শরণ লও
‘গোরা-রসে ডুবে যাও’—
মহা,–রাস-বিলাসের পরিণতি—গোরা-রসে ডুবে যাও
যুগল-উজ্জ্বল-রস-নির্য্যাস—গোরা-রসে ডুবে যাও
রাধা-গদাধরের শরণ লও—গোরা-রসে ডুবে যাও
নিরন্তর গান করবে
মরমে মরিয়া যেন থাকি।
সাধ হয় নিরন্তর, হেম-কান্তি-কলেবর,
সতত হিয়ার মাঝে রাখি।।’’
জড়াজড়ি বুকে না ধরে—সে কেমনে বাঁচবে
ধৈরজ ধরিতে নাহি পারি।
‘‘অনুরাগের ডুরি দিয়া, অন্তরে কি করে সিয়া,
না জানি তার কতই ধার ধারি।।
সুরধুনীর কূলে গিয়া, কুল দিব ভাসাইয়া,
অনল জ্বালিয়া দিব লাজে।
গৌরাঙ্গ সম্মুখে করি,’ হেরিব নয়ন ভরি,’
দিন যায় মিছামিছি কাজে।।’’
আর কি লাগে না ভাল—বল বল ভাই গৌর বল
রাই-কানু জড়াজড়ি—বল,–জয় জয় গৌরহরি
জপ, হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’
[মাতন]
[মাতন]
প্রেমসে কহো শ্রীরাধে শ্রীকৃষ্ণ বলিয়ে—
প্রভু-নিতাই-শ্রীচৈতন্য-অদ্বৈত-শ্রীরাধারাণীকী জয় !
শ্রীবর্ষাণকী জয় !
প্রেমদাতা-পরমদয়াল-পতিতপাবন-শ্রীনিতাইচাঁদকী জয় !
করুণাসিন্ধু-গৌরভক্তবৃন্দকী জয় !
শ্রীশ্রীনাম-সঙ্কীর্ত্তনকী জয় !
খোল-করতালকী জয় !
শ্রীনবদ্বীপধামকী জয় !
শ্রীনীলাচলধামকী জয় !
শ্রীবৃন্দাবনধামকী জয় !
অনন্তকোটি-শ্রী-ব্রাহ্মণ-বৈষ্ণবকী জয় !
আপন আপন শ্রীগুরুদেবকী জয় !