শ্রীশ্রীহোরিলীলা কীর্ত্তন

‘‘শ্রীগুরু-প্রেমানন্দে নিতাই-গৌর-হরিবোল।’’
‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’

(১)

‘‘দেখ দেখ অপরূপ গৌরাঙ্গের লীলা।’’

যাইরে লীলার বালাই যাইরে

লীলারঙ্গিয়া-বিলাসী গৌরাঙ্গের—যাইরে লীলার বালাই যাইরে
মধুর শ্রীনবদ্বীপে—যাইরে লীলার বালাই যাইরে
মধুর গৌরাঙ্গ-লীলার—যাইরে লীলার বালাই যাইরে

‘‘ঋতু বসন্তে, সকল প্রিয়গণ মেলি,’’

আজ,–নবভাবের উদয় হল

দেখি’ ঋতুরাজ বসন্ত—আজ,–নবভাবের উদয় হল

উপজিল নব-ভাব-তরঙ্গ

ভাবনিধি প্রাণগৌরাঙ্গের—উপজিল নব-ভাব-তরঙ্গ
দেখি ঋতুরাজের আগমনে—উপজিল নব-ভাব-তরঙ্গ
জাগিল নব-লীলারঙ্গ
স্মঙরি পূরব রঙ্গ—জাগিল নব-লীলারঙ্গ

‘‘ঋতু বসন্তে, সকল প্রিয়গণ মেলি,
সুরধুনী-তীরে চলিলা।।’’


বাসন্তীরঙ্গে রঙ্গিয়া গৌর-আজ হোরি খেলবে বলে
ভাবনিধি গৌরাঙ্গ আমার—আজ হোরি খেলবে বলে

‘‘সুরধুনী-তীরে চলিলা।।’’

শ্রীযমুনা উদ্দীপনে

‘‘সুরধুনী-তীরে চলিলা।।
একদিকে গদাধর, সঙ্গে স্বরূপ দামোদর’’

সেই ত’ ভানুদুলারী

হোরিরঙ্গে গদাধররূপ ধরি—সেই ত’ ভানুদুলারী
স্বরূপে ভিন্ন ভাবে অভিন্ন—সেই ত’ ভানুদুলারী
আজ হোরি খেলবে বলে—সেই ত’ ভানুদুলারী

‘‘একদিকে গদাধর, সঙ্গে স্বরূপ দামোদর,
বাসু ঘোষ গোবিন্দাদি মেলি।’’

সারি সারি দাঁড়াইল রে

মণ্ডলী বন্ধন করি—সারি সারি দাঁড়াইল রে
আজ হোরি খেলবে বলে—সারি সারি দাঁড়াইল রে
সহচরী সঙ্গে ভানুদালারী—সারি সারি দাঁড়াইল রে

দাঁড়াইল সারি সারি

গদাধর রাইকিশোরী—দাঁড়াইল সারি সারি
স্বরূপাদি নিজগণ মেলি—দাঁড়াইল সারি সারি
যেন,–সহচরী সঙ্গে ভানুদুলারী—দাঁড়াইল সারি সারি

সারি সারি দাঁড়াইল রে

সুরধুনী-পুলিনে—সারি সারি দাঁড়াইল রে
আজ হোরি খেলবে বলে—সারি সারি দাঁড়াইল রে
‘আজ হোরি খেলবে বলে’—
গৌরাঙ্গ-নাগর-সনে—আজ হোরি খেলবে বলে

সারি সারি দাঁড়াইল রে
দাঁড়াইল সম্মুখা সম্মুখী

গৌরাঙ্গ-শ্যাম-গদা-কিশোরী—দাঁড়াইল সম্মুখা সম্মুখী
নিজ নিজ যূথ প্রবন্ধ করি—দাঁড়াইল সম্মুখা সম্মুখী
‘‘গৌরীদাস আদি করি,’’

সেইত ব্রজের সুবল-সখা

এবে,–গৌরীদাসরূপে দেখা—সেইত ব্রজের সুবল সখা
শ্যাম-নগরের সহায় সেরা—সেইত ব্রজের সুবল সখা
হোরিরঙ্গে,–শ্যাম-নাগরের সেনাপতি—সেইত ব্রজের সুবল সখা

‘‘গৌরীদাস আদি করি,’ চন্দন পিচকারিভরি,’
গদাধরের অঙ্গে দেয় ফেলি।।’’

সামাল সামাল বলি’

ও স্বরূপ তোমার গদাধরে—সামাল সামাল বলি

এ ত,–ঘরের কণে বসে কাঁদা নয় হে

এ যে মোদের হোরি খেলা—এ ত,–ঘরের কণে বসে কাঁদা নয় হে

একে বলে হোরিবরণ

এ ত নয়,–ঘরের কণে বসে ক্রন্দন—একে বলে হোরিবরণ

সামাল সামাল বলি

‘‘গদাধরের অঙ্গে দেয় ফেলি।।
তখন,–স্বরূপ নিজগণে-সাথে, আবির লইয়া হাতে,’’

সেইত ব্রজের ললিতা সখী

হোরিরঙ্গে,–কিশোরী-মণির সেনাপতি,–সেইত ব্রজের ললিতা সখী
হোরিরঙ্গে,–ভানু-নন্দিনীর সেনাপতি,–সেইত ব্রজের ললিতা সখী

‘‘স্বরূপ নিজগণ সাথে, আবির লইযা হাতে,
এ হো,–সঘনে ফেলায় গোরাগায়।’’

সামাল সামাল বলে

ও গৌরীদাস,–তোমার প্রাণ-গোরাঙ্গে—সামাল সামাল বলে

এ ত,–সঙ্কীর্ত্তনের নাচা নয় হে
এ ত,–হরি বলে নাচা নয় হে

একে বলে হোরি খেলা—এক ত’,–হরি বলে নাচা নয় হে

সামাল সামাল বলে

‘‘এ হে—সঘনে ফেলায় গোরাগায় !
গোরীদাস খেলি খেলি, গৌরাঙ্গ জিতল বলি,
করতালি দিয়া আগে ধায়।।’’

আজ গদাধর হারি গেল

গৌরাঙ্গের সঙ্গে হোরিখেলায়—আজ গদাধর হারি গেল

গৌরাঙ্গ জিতল

আজ মেনে হোরিখেলায়—গৌরাঙ্গ জিতল
গদাধর হেরে গেল—গৌরাঙ্গ জিতল

‘‘রুধিয়া স্বরূপ কয়, হারিলা গৌরাঙ্গ রায়,’’

বলতে কি লাজ বাস না হে

গৌর,–হোলিখেলায় জিতেছে—বলতে কি লাজ বাস না হে

বলে,–কোন কালে সে জিতেছিল

গদাধরের সনে কোন খেলায়—বলে,–কোন কালে সে জিতেছিল

ছিঃ ছিঃ,–বলতে লাজ কি বাস না হে
জিতেছি,–বলতে কি লাজ বাস না হে

হারুয়ার সঙ্গে তাক হারাই দশা—জিতেছ,–বলতে কি লাজ বাস না হে
হারাই ত’ তোমাদের ব্যবসা—জিতেছি,–বলতে কি লাজ বাস না হে

হেরে গিয়ে বলছ জিতেছি

ছিঃ ছিঃ,–শুনে আমরা লাজে মরি— হেরে গিয়ে বলছ জিতেছি

‘‘রুষিয়া স্বরূপ কয়, হারিলা গৌরাঙ্গ-রায়
জিতল আমার গদাধর।”

আজ মেনে হোরিখেলায়—গদাধর জিতল
হারিলা গৌরাঙ্গ–রায়

গদাধর সনে হোরিখেলায়–হারিলা গৌরাঙ্গ–রায়

গৌরাঙ্গ জিতল

গৌরাঙ্গ হেরে গেল—গদাধর জিতল

(এহো,–‘‘জিতল আমার গদাধর।
কক্ষতালি দিয়ে কেহু, নাচে ঊর্দ্ধবাহু।।’’

বলে,–হো হো হোরি

গদাধর গৌরাঙ্গ খেলে—বলে,–হো হো হোরি
‘গদাধর গৌরাঙ্গ খেলে’—
নদীয়ায় সুরধুনী-পুলিনে—গদাধর গৌরাঙ্গ খেলে

বলে,–হো হো হোরি
দাঁড়াইল সবে দুই দলে

সম্মুখা সম্মুখী হয়ে—দাঁড়াইল সবে দুই দলে

কেউ বলে,–গদাধর জিতল

গৌরাঙ্গ হারিল –কেউ বলে,–গৌরাঙ্গ জিতল

কেউ বলে,–গৌরাঙ্গ জিতল

গদাধর হারিল—কেউ বলে,–গৌরাঙ্গ জিতল

গদাধর জিতল

গৌরাঙ্গ জিতল—গদাধর জিতল

গৌরাঙ্গ হারাল

গদাধর হারল—গৌরাঙ্গ হারল

আনন্দের পাথার বয়ে যায়

হোরি-খেলায় মধুর—নদীয়ায়—আনন্দের পাথার বয়ে যায়

‘‘এ দাস মোহন মনোহর।।’’

দাস,–মনোহরের মন হরে নিল

গদাধর গৌরাঙ্গের হোরিলীলা—দাস,–মনোহরের মন হরে নিল

‘‘এ দাস মোহন মনোহর।।’’

(২)

‘‘আজু কোই কুলবতী নাহি বাহিরার।
যমুনা সিনানে কোই নাহি যাব।।’’

ঘরের বাহির হয়ো না গো

যমুনা সিনানে যেও না—ঘরের বাহির হয়ো না গো

‘‘বিপতি পড়ল আজু যুবতী সমাজ।।’’

ঘরের বাহির হতে নারে

যমুনা সিনানে কেউ যায় নারে—ঘরের বাহির হতে নারে

‘‘সখীগণ সঙ্গে খেলই ব্রজরাজ।।
পন্থহি পন্থ ঘেরল চতুর চৌওর।’’

আর যাবার পথ নাই

যমুনা সিনানে জল আনিবারে—আর যাবার পথ নাই

‘‘সব ব্রজ-বালক তাহে আগোর।।
বটু সুবল দুহুঁ ভেল এক ঠাম।
যূথহি যূথ করল নিরমাণ।।
ভরি পিচকারী লেই সভে হাত।
ঘন বরিখন জনু পড়তহিঁ মাথ।।’’

পিচকারী ধারা পড়ছে

বরিষার ধারার মত—পিচকারী ধারা পড়ছে

‘‘আবিরে না হেরিয়ে দিগ্‌বিদিগ।।’’

লালহি লাল হো

ব্রজের পথ হল সব—লালহি লাল হো
দিকবিদিক চেনা যায় না—লালহি লাল হো

‘‘রঙ্গে বসন বহি যাওত ভিগ।।
কহ গোবর্দ্ধন রহ গৃহ-মাহ।
কোই নাই মন্দির ছোড়ি বাহিরাহ।।

ঘরের মাঝে বসে থাক
ব্রজের পথে কেউ যেও না গো
বাহিরে গেলেই বড়ই বিপদ

হোরি খেলে ব্রজরাজ—বাহিরে গেলেই বড়ই বিপদ

(৩)

‘‘আজুরে সখা সঙ্গে খেলত হোরি।’’


ঝক্কা ঝোরি আবির উড়াওত,—‘‘আজুরে সখা সঙ্গে খেলত হোরি।’’
বর্ষাণকা মহল পর,–‘‘ঠারিদেখত বৃষভানু-দুলারী।। (চুটকী)
ললিতা কর ধরি,–‘‘হাসি বোলত বৃষভানু-দুলালী।

‘‘হোরি খেলত হেরো প্যারো হামারী।।


যমুনা সিনান ছলে,–‘‘ঝাঁপি বসনে সভে লেহ পিচকারী।
আজু সব সখী মেলি,–‘‘হোরিরঙ্গে ভেটব গিরিবরধারী।।

(৪)

‘‘আজু কাহে মন্দির, বাহির না হোয়বি,
এদিন হোরি আনন্দে।’’

আজ কাহে না হোয়বি
আজ কেন ঘরে বসে রইলি

আবেশে বলে ললিতা দেবী—আজ কেন ঘরে বসে রইলি

‘‘কাহে ডরসি হোরি, খেলত সুনায়র,
জিতব আন পরবন্ধে।।’’

তাতে আবার ভয় কি আছে

শ্যাম-নাগর হোরি খেলবে—তাতে আবার ভয় কি আছে

‘‘সুন্দরী সহচরী-কুল সঙ্গে।
যমুনা অবগাহন, চলব আন ছলে,
সবহুঁ ভরি লেহ রঙ্গে।।’’

রং ভরি কুম্ভ কক্ষে লও গো

যমুনার জল আনবার ছলে—রং ভরি কুম্ভ কক্ষে লও গো

‘‘ললিতা-বচনে, সাজি কুল কামিনী,
বসনে ঝাঁপি পিচকারী।
তঁহি চলতঁহি যঁহি, শ্যাম সোহাগিনী,
ধনী বৃষভানু-কুমারী।
কালিন্দী-তীর, সবহুঁ ঊজোরল,
নিভৃত-নিধুবন-পাশ।’’

সারি সারি চলিল রে

ব্রজবালা চাঁদের মালা—সারি সারি চলিল রে

আলো করে চলেছে পথে

সহচরী-সনে ভানুদুলারী—আলো করে চলেছে পথে
অপরূপ রূপের ছটায়—আলো করে চলেছে পথে

‘‘কালিন্দী-তীর, সবহুঁ উজোরল,
নিভৃত-নিধুবন-পাশ।’’

কতক্ষণে মিলব বলে

পরাণ বঁধুর সনে—কতক্ষণে মিলব বলে

‘‘অবগাহন ছল, মরমহি চঞ্চল,
সবহুঁ অধিক উল্লাস।।’’

(৫)

‘‘রসবতী রাই, খেলত ফাগু সখী সঙ্গে,
আজু,–কি আনন্দ-বৃন্দাবনে—‘‘রসবতী রাই, খেলত ফাগু সখী সঙ্গে,
নিরুপম কান মাঝ।’’

রসবতী রাই ফাগু খেলে

সখী সঙ্গে কানন মাঝে—রসবতী রাই ফাগু-খেলে

সখী সনে রাই খেলছে শুনে

এ কথা,–শুনাইতে সখা সঙ্গে,তুরিতঁহি সাজিয়া,

আসি মিলল রসরাজ।।


দূর সঙ্গে হেরি,চরিত ভেল দুহুঁ জন,’’

অনিমেষে চেয়ে রইল

আঁখির পলক পড়ে নারে—অনিমেষে চেয়ে রইল

কারো,–না চলে পা না সরে রা

কখনও,–দেখে নাই যেন নূতন দেখা—কারো,–না চলে পা না সরে রা

সবে,–এই যেন নূতন দেখা

কেউ,–যেন কখনও দেখে নাই—সবে,–এই যেন নূতন দেখা

রসরাজ্যের এই ত রীতি

‘‘সখী্গণে কহতই রাই।’’

দেখ সখী চেয়ে দেখ

শ্যাম-নাগর সেজে এল—দেখ সখী চেয়ে দেখ

রসিক-নাগর সেজে আসছে

সখা সঙ্গে হোরি খেলবে বলে—রসিক-নাগর সেজে আসছে

ঐ যে,–‘‘সখা সঙ্গে আওল, রসিক-নাগর-বর’’

দেখ সখী দেখ দেখ
দেখ দেখ সখী দেখ

ঐ,–সখা সঙ্গে আওল নাগর-বর—দেখ দেখ সখী দেখ
আজ,–‘‘ঘের সবে করি চতুরাই।।’’

যেন,–পলাইতে পারে না গো
যেন কোথাও পলাতে নারে

সব সখী মেলি,–ওরে এমনি করে ঘের—যেন কোথাও পলাতে নারে

ঘের ঘের রে

কপট-নাগর-বরে—ঘের ঘের রে

(৬)

আজুরে,–‘‘সব সখী মেলি, ঘের রি,
কুঞ্জ-বনসে না নিকসে কানাইয়া।’’


‘‘যূথ হি যূথ, প্রবন্ধ হইল তঁহি,
ললিতা বিশাখা আদি করি।
সুমুখা সুমুখী দুহুঁ, ছুটে পিচকারী মুহু,
রঙ্গ গোলাল বহু ভরি।।’’
আহারে,–‘‘সব সখী মেলি, ঘের রি,
কুঞ্জ-বনসে সহ,আগে মেল তঁহি,
‘‘এহো,–শ্যামরু নটবর-রায়।
উড়ত গোলাল, লাল ভেল দশদিশ’’

,

লালহি লাল হো

সখী সঙ্গে ফাগু খেলে—লালহি লাল হে

‘‘কেহ কারে লখিতে না পায়।।
ঘের রি,–সব সখী মেলি, ঘের রি
কুঞ্জ-বনসে না নিকসে কানাইয়া।।
লাখে লাখে পিচকারী, মেলি সব সহচরী,
এহো,—ভারত শ্যামরু গায়।
মধুমঙ্গল সহ, সুবল পলাওল,’’

পালারে পালারে সুবল

আজকের গতিক ভাল নয়—পালারে পালারে সুবল
খেলার গতি ভাল নয়—পালারে পালারে সুবল
আজ,–গোয়ালিনী খেপেছে—পালারে পালারে সুবল

‘‘মধুমঙ্গল সহ, সুবল পলাওল,
আনন্দে থেহ নাহি পায়।।
আজুরে,–সব সখী মেলি, ঘের রি ,
কুঞ্জ-বনসে না নিকসে কানাইয়া।।’’

আর,–কারে লয়ে খেলবে বল

সুবল পলায়ে গেল—আর,–কারে লয়ে খেলবে বল

বিশাখা তখন,–কোথা পালাবে বলে

আর পালাপার পথ নাই হে—বিশাখা তখন,–কোথা পালাবে বলে

যেন,–চোর ধরে আনল রে

কত সাজা দিবে বলে—যেন,–চোর ধরে আনল রে

ছিঃ ছিঃ নাগর হারলে হে

পুরুষ হয়ে রমণী মাঝে—ছিঃ ছিঃ নাগর হারলে হে

কেঁদে যে পড়ল নাগর

কেউ নাই একা—কেঁদে যে পড়ল নাগর

তখন প্রাণ কিশোরী বলে
শ্যাম-নাগরে কাঁদায়েছি
বঁধু তোমার ভয় কি

এই যে তোমার আমি আছি—বঁধু তোমার ভয় কি

(৭)

মধুর স্বরে কিশোরী বল

‘‘আইস হে হারুয়া শ্যাম, খেলি হে ফাগুয়া।’’

একবার হেরেছ তা কি হয়েছে

খেলতে গেলে অমন হয়ে থাকে—একবার হেরেছ তা কি হয়েছে
হার জিত্‌ খেলার রীতি—একবার হেরেছ তা কি হয়েছে

হেরেছ তায় ভয় কি আছে

‘‘আইস হে হারুয়া শ্যাম, খেলি হে ফাগুয়া।
এবার হারিবা যদি, ফাগুহারা নিরবধি,’’


হারুয়া প্রাণ আমার,–এবার হারিবা যদি,ফাগুহারা নিরবধি,

ব্রজভরি’ গাওযাইব ধূয়া।।’’

এবার হারিলে,–ব্রজভরি’ গাওয়াইব
রটে দিব ব্রজভরে

এবার যদি খেলায় হার—রটে দিব ব্রজভরে
ফাগুহারা শ্যাম বলে—রটে দিব ব্রজভরে

‘‘যদি বল একা আমি, বহুসঙ্গের সঙ্গী তুমি,’’


হাতে আর কি হযেছে,–

‘‘যদি বল একা আমি, বহুসঙ্গের সঙ্গী তুমি,’’


তোমার,–সঙ্গীগণ সব পলায়েছে—

একথা—বললে তুমি বলতে পার

একা কেমন করে খেলবে—একথা,–বললে তুমি বলতে পার

‘‘যদি বল একা আমি, বহুসঙ্গের সঙ্গী তুমি,’’

কোন চিন্তা করো না রে

তোমার,–সকল অভাব পূরণ করব—কোন চিন্তা করো না হে

সঙ্গীগণ পলায়েছে,–ভয় কি আছে আমি দিব

‘‘সম্মুখে বিশাখা হইক তুয়া।’’

সযূথে বিশাখা তোমায় দিলাম

সঙ্গী হারা হয়েছ তাই—সযূথে বিশাখা তোমায় দিলাম
তোমার হয়ে খেলবে তারা—সযুথে বিশাখা তোমায় দিলাম

ছাড়ব না আজ খেলতে হবে

তুমি—কেমন খেলুয়া তাই দেখে নিব—ছাড়ব না আজ খেলতে হবে

শ্যাম হে,–‘‘সযূথে বিশাখা হউক তুয়া।
ললিতা আমার সখী, আইস আবার খেল দেখি,
জানা যাবে কেমন খেলুয়া।।’’

তোমায়,–খেলতে হবে ছাড়ব না হে

তোমার,–যা চাই সব পূরণ করব-তোমায়,–খেলতে হবে ছাড়ব না হে

তোমার,–নাগরালী বুঝা যাবে
এ ত,–গোঠে মাঠে ঘুরা নয় হে

হৈ হৈ করে ধেনু পাল লয়ে—এ ত,–গোঠে মাঠে ঘুরা নয় হে

এ ত,–অবলা মজান নয় হে

গহন বনে বাঁশী বাজায়ে—এ ত,–অবলা মজান নয় হে

একে বলে হোরি খেলা

‘‘জানা যাবে কেমন খেলুয়া।।
যদি বল রং নাই, রং লেহ যত চাই,’’

আমার,–রাজ-ভাণ্ডারে অভাব কিসের

দেবী পৌর্ণমাসীর কৃপায়—আমার,–রাজ-ভাণ্ডারে অভাব কিসের
তোমার মত,–গোটা কতক ধেনু পুঁজি নয় হে-–আমার, রাজ-ভাণ্ডারে অভাব কিসের

তোমায় আবার খেলতে হবে

সকল অভাব পূরণ করব—তোমায় আবার খেলতে হবে

‘‘নাহি বোলাও আপন খেলুয়া।
পিচকারী যদি নাই থাকে, দিব আমি লাখে লাখে
যত চাবে পাবে হে বঁধুয়া।।’’

খেলতে হবে ছাড়বে না হে

তোমার,–সকল অভাব পূরণ করব—খেলতে হবে ছাড়বে না হে

‘‘গিরিধারী নাম ধর, লোকে বলে বীর বড়,
হেন নাম হইল হারুয়া।’’

ছিঃ ছিঃ—তোমার নামে যে কলঙ্ক হল

আমরা দুঃখে মরে গেলাম—ছিঃ ছিঃ –তোমার নামে কলঙ্ক হল

তোমার,–অত বড় নামে কলঙ্ক হল

ছিঃ ছিঃ আমরা লাজে মইলাম—তোমার,–কত বড় নামে কলঙ্ক হল
ছিঃ ছিঃ আমরা লাজে মইলাম’—
শ্যাম,–হেন নাম হইল হারুয়া—ছিঃ ছিঃ,–আমরা লাজে মইলাম
তোমার,–অত বড় নাম ডুবে যায় হে—ছিঃ ছিঃ,–আমরা লাজে মইলাম
তোমার,–অতবড় নাম ডুবে যায় হে’—
রমণী সনে হোরি খেলায় হেরে—তোমার,–অত বড় নাম ডুবে যায় হে

ছিঃ ছিঃ,–আমরা লাজে মইলাম
বীরত্ব তোমার কোথায় গেল

যদি,–নারীর সঙ্গে হেরে গেলে—বীরত্ব তোমার কোথায় গেল

‘‘শুনহে রসিক শ্যাম, জিনিয়া রাখহ নাম,’’
এবার নামের কালিমা ঘুচাও


আজ হোরি খেলাতে—এবার নামের কালিমা ঘুচাও

‘‘বটু যেন জোগায় ফাগুয়া।।’’

ভয় কি আছে শ্যাম-নাগর

খেল আবার হোলি খেল—ভয় কি আছে শ্যাম-নাগর
আনন্দে,–খেল বটু ফাগু যোগাবে—ভয় কি আছে শ্যাম-নাগর

কেন,–শ্যাম তোমার ভয় কি আছে

বটু তোমার ফাগু যোগাবে—কেন,–শ্যাম তোমার ভয় কি আছে

দুইজনে দাঁড়াইল রে

ললিতা বিশাখা—দুই জনে দাঁড়াইল রে
পরস্পর সম্মুখা-সম্মুখী—দুই জনে দাঁড়াইল রে
হোরিবরণ করবে বলে-দুই জনে দাঁড়াইল রে

কেউ কারে হারাতে নারে
হোরি খেলায় পাগল হল

রাইসনে শ্যামনাগর—হোরি খেলায় পাগল হল

(৮)

‘‘আজুরে রঙ্গে,রঙ্গে হোরি,–খেলত শ্যাম গোরী।।
সখীগণ মেলি গাওত বাওত,’’
আজু কি আনন্দ বৃন্দাবনে—আনন্দের পাথার বয়ে যায় রে

আনন্দের আর সীমা নাইরে

‘‘সখীগণ মেলি গাও বাওত, কিশোর কিশোরী নাচি নাচাওত রে,’’

কিশোর কিশোরী নাচি নাচাওত

সখীগণ মেলিগাওত বাওত—কিশোর কিশোরী নাচি নাচাওত

‘‘আনন্দে মন ভোরি। (চুটকী)
আনন্দে মন ভোরি।তল লল তোরি।।
আজুরে রঙ্গে, হোরি,–খেলত শ্যাম গোরী।।’’


বাজে,–‘‘তথতথ তথতথৈয়া,’’
আজ,–হোরিরঙ্গে মৃদঙ্গ বাজে—বাজে,–‘‘তথতথ তথতথৈয়া,’’

হোরিরঙ্গে মৃদঙ্গ বাজে

কিশোর কিশোরী নাচে—হোরি রঙ্গে মৃদঙ্গ বাজে

‘‘তথতথ তথতথৈয়া, দুর্গতি দুর্গতি দ্রিমি ধৈয়া,
চওল উল উলোরি।।’’


হোরিরঙ্গে মৃদঙ্গ বাজে,–‘‘চওল উল উলোরি।।’’

‘‘আজুরে রঙ্গ, হোরি,–খেলত শ্যাম গোরী।।’’


বাজে,–‘‘কুড়ু গুড়ু গুড়ু দাং,দ্রিমিদাং কিটধাং তৃগধাং,’’

হোরি রঙ্গে মৃদঙ্গ বাজে

‘‘শিবরাম গাওয়ে হোরি।।
আজুরে রঙ্গে, হোরি,–খেলত শ্যাম গোরী।।’’

(৯)

‘‘মধুবনে মাধব খেলত রঙ্গে।
ব্রজবনিতা ফাগু দেই শ্যাম-অঙ্গে।।
কানু ফাগু দেয়ল সুন্দরী-অঙ্গে
মুখ মোঢ়ল ধনী করি কত ঢঙ্গে।।’’

চেয়ে আড় নয়নে বঁধুর পানে

‘‘ফাগুরঙ্গে গোপী সব চৌদিকে বেড়িয়া।’’

কি আনন্দ বৃন্দাবনে

আজ,–আনন্দের পাথার বয়ে যায় রে—কি আনন্দ বৃন্দাবনে

‘‘শ্যাম-অঙ্গে ফাগু দেই অঞ্জলি পূরিয়া।।
ফাগু খেলইেত ফাগু উঠিল গগনে।’’

লালহি লাল হো

হোরিরঙ্গে ভেল সব—লালহি লাল হো

‘‘বৃন্দাবনের তরুলতা রাতুল বরণে।।
রাঙ্গা ময়ূর নাচে গাছে রাঙ্গা কোকিল গায়।
রাঙ্গা ফুলেরাঙ্গা ভ্রমর রাঙ্গা মধু খায়।।
রাঙ্গা লতা রাঙ্গা পাতা রাঙ্গা বৃন্দাবন।
রাঙ্গা রাধা রাঙ্গা কৃষ্ণ রাঙ্গা গোপীগণ।।
রাঙ্গা বায়ে রাঙ্গা হল কালিন্দীর পানী।
গগনে ভুবন দিক বিদিক নাহি জানি।।
রতি জয় রতি জয় দ্বিজ কুলে গায়।
এ রাধা মোহন হেরে নয়ন জুড়ায়।’’

(১0)

‘‘খেলাতে হারিয়া শ্যাম পলাইতে চায়।
চৌদিকে ব্রজবধূ পথ নাহি পায়।।’’

ফাঁপরে পড়িল শ্যাম-নাগর

সঙ্গীসব পলায়েছে—ফাঁপরে পড়িল শ্যাম-নাগর
পলাইবার পথ নাই—ফাঁপরে পড়িল শ্যাম-নাগর
‘পলাইবার পথ নাই’—
ব্রজবধূ চৌদিকে ঘিকেছে—পলাইবার পথ নাই।

ফাঁপরে পড়িল শ্যাম-নাগর

‘‘আবিরে অরুণ আঁখি মেলিতে না পারে।
হারিনু হারিনু শ্যাম বলে বারে বারে।।
করসঙ্গে মুরলী ভূমেতে পড়ে খসি।’’

শ্যামের অবশ হইল অঙ্গ

‘‘করতালি দেই সব গোপীগণ হাসি।।’’

ছিঃ ছিঃ নাগর হারলে

পুরুষ হয়ে নারীর সনে—ছিঃ ছিঃ নাগর হারলে
আজ এই হোরিখেলায়– ছিঃ ছিঃ নাগর হারলে

‘‘শিখিপুচ্ছ এলাইয়া পড়ে মহীতলে।’’

অবশ হয়েছে অঙ্গ

‘‘অরুণিত বসন তিতিল শ্রমজলে।।
শ্যামেরে কাতর দেখি রসবতী রাই।’’

আর কি ধনী রইতে পারে

বঁধূর চাঁদমুখ হয়েছে মলিন—আর কি ধনী রইতে পারে

‘‘শ্যামেরে কাতর দেখি রসবতী রাই।
অরুণ বসন দিয়া ওমুখ মুছাই।।’’

আইস আমার পরাণ বঁধু

তোমার,–কেউ কিছু বলিস না গো—আইস আমার পরাণ বঁধু

তোরা,–আর কিছু বলিস না গো

বঁধুর,–চাঁদমুখ হয়েছে মলিন—তোরা,–তোরা,–আর কিছু বলিস না গো

বঁধু তোমার ভয় কি

এই যে তোমার আমি আছি—বঁধু তোমার ভয় কি

সিংহাসনে বৈসে রাই কোলে করি শ্যাম।।’’

আইস আমার পরাণ বঁধু

তোমায়,–দুঃখ দিয়ে আমার কিসের খেলা—আইস আমার পরাণ বঁধু
যত খেলা তোমার সুখের লাগি—আসি আমার পরাণ বঁধু

‘‘শ্রমভরে দুহু অঙ্গে পরিপূর্ণ ঘাম।।
শ্রীরতিমঞ্জরী দোঁহে চামর ঢুলায়।’’

দোঁহার,–চাঁদ বদন পানে চেয়ে

‘‘শ্রীরতিমঞ্জরী দোঁহে চামর ঢুলায়।’’

ভোগের আয়োজন করে

সখীগণ সবাই মিলে—ভোগের আয়োজন করে
মিষ্টান্ন পক্কান্নাদি—ভোগের আয়োজন করে

‘‘শ্রীগুণমঞ্জরী দোঁহে তাম্বুল যোগায়।।
শ্রীরতিমঞ্জরী দেই সুবাসিত জল।
এ রাধামোহন হেরি নয়ন সফল।।’’

সখীগণের নয়ন জুড়াইল
রাধামোহনের নয়ন সফল হল

আজ হোরিরঙ্গ দেখে—রাধামোহনের নয়ন সফল হল
বসন্তবিহার দেখে—রাধামোহনের নয়ন সফল হল

নিতুই যেন এমনি দেখি

রাধাশ্যামের নবনব কেলি—নিতুই যেন এমনি দেখি

শ্যামাঙ্গ গৌরাঙ্গ হল

হোরিরঙ্গে বিহরিতে—শ্যামাঙ্গ গৌরাঙ্গ হল
অঙ্গে অঙ্গ মিলনে—শ্যামাঙ্গ গৌরাঙ্গ হল

‘‘এ রাধামোহন হেরি নয়ন সফল।।’’

প্রাণভরে জয় দেগো

জয় রাধা রাধারমণ বোলে—প্রাণভরে জয় দেগো

‘‘জয় রাধারাধারমণ, জয় রাধারাধারমণ।।’’
‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।
‘‘শ্রীগুরু-প্রেমানন্দে নিতাই-গৌর-হরিবোল।।’’



অভিসার আক্ষেপানুরাগ কুঞ্জভঙ্গ খণ্ডিতা গীতগোবিন্দ গোষ্ঠলীলা দানলীলা দূতী ধেনুবৎস শিশুহরণ নৌকাখন্ড পূর্বরাগ বংশীখণ্ড বিপরীত বিলাস বিরহ বৃন্দাবনখন্ড ব্রজবুলি বড়াই বড়াই-বচন--শ্রীরাধার প্রতি মাথুর মাধবের প্রতি দূতী মান মানভঞ্জন মিলন রাধাকৃষ্ণসম্পর্ক হীন পরকীয়া প্রেমের পদ রাধা বিরহ রাধিকার মান লখিমাদেবি শিবসিংহ শ্রীকৃষ্ণকীর্তন শ্রীকৃষ্ণের উক্তি শ্রীকৃষ্ণের পূর্বরাগ শ্রীকৃষ্ণের মান শ্রীকৃষ্ণের স্বয়ংদৌত্য শ্রীগুরু-কৃপার দান শ্রীরাধা ও বড়াইয়ের উক্তি-প্রত্যুক্তি শ্রীরাধার উক্তি শ্রীরাধার প্রতি শ্রীরাধার প্রতি দূতী শ্রীরাধার রূপবর্ণনা শ্রীরাধিকার পূর্বরাগ শ্রীরাধিকার প্রেমোচ্ছ্বাস সখীতত্ত্ব সখীর উক্তি সামোদ-দামোদরঃ হর-গৌরী বিষয়ক পদ