‘শ্রীগুরু-প্রেমানন্দে নিতাই-গৌর-হরিবোল।।’’
‘‘ভজ, নিতাই-গৌর রাধে শ্যাম।
জপ,–রাম রাম হরে হরে—জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম
রমে রামে মনোরমে—জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম
শ্রীরাধারমণ রাম—জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম
ওরে ভাই রে,–এই ত’ কলিযুগের মহামন্ত্র—জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম
ঘোর-কলিযুগে,–পরিত্রাণের মূলমন্ত্র—জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম
এ-যে,–বেদের নিগূঢ়-মর্ম্ম—কলি,–যুগোচিত এই নাম-ধর্ম্ম
গীতা-আদি করিয়া মন্থন।’’
জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম
এ-নাম,–অখিল-রসের ধাম—জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম
‘এ-নাম,–অখিল-রসের ধাম’—
অভেদ নাম নামী—এ নাম,–অখিল-রসের ধাম
‘আমরি—অভেদ নাম নামী’—
নাম চিন্তামণি কৃষ্ণ—অভেদ নাম নামী
‘নাম চিন্তামণি কৃষ্ণ’—
চৈতন্য-রস-বিগ্রহ—নাম চিন্তামণি কৃষ্ণ
‘অভেদ নাম নামী’—
এ-নাম,–অখিল-রসের ধাম—জপ,–হরে কৃষ্ণ হরে রাম
অদ্বয়-ব্রহ্ম-নন্দনন্দন পেতে—এই,–নাম বই আর সাধন নাই রে
অনাদির আদি গোবিন্দ পেতে—এই,–নাম বই আর সাধন নাই রে
‘সচ্চিদানন্দ-ঘন-মূরতি দেখতে’—
নিত্য নবকৈশোর নটবর—সচ্চিদানন্দ-ঘন-মূরতি দেখ্তে
আমরি,–গোপবেশ বেণুকর—সচ্চিদানন্দ-ঘন-মূরতি দেখ্তে
পরিপূর্ণ কৃষ্ণ-প্রাপ্তি কর্তে—এই,–নাম বই আর সাধন নাই রে
আমরি—সম্বন্ধের বন্ধনে বাঁধ্তে—এই,–নাম বই আর সাধন নাই রে
‘সম্বন্ধের বন্ধনে বাঁধ্তে’—
অনাাদির আদি শ্রীগোবিন্দে—সম্বন্ধের বন্ধনে বাঁধ্তে
ও-সে,–ব্রজবাসীগণের মত—সম্বন্ধের বন্ধনে বাঁধ্তে
পুত্র, সখা, প্রাণ-পতি এই—সম্বন্ধের বন্ধনে বাঁধ্তে
কৃষ্ণ বশ করে অধীন কর্তে—নাই,–নাম বই আর সাধন নাই রে
‘‘খাইতে শুইতে নাম যথা তথা লয়। রে !
ইথে,–‘‘কাল দেশ নিয়ম নাই সর্ব্বসিদ্ধি হয়।।’’ রে !!
হেলায় শ্রদ্ধায় নিলে নাম—আ’মরি,–পুরে ভাই মনস্কাম
পরিপূর্ণ-কৃষ্ণ-ভোগের—স্বভাব জাগায়ে দেয় রে সুখে
নামে,–বুক ভরে যায় অভাব মিটায়—স্বভাব জাগায়ে দেয় রে সুখে
চিত্তশুদ্ধি সর্ব্বভক্তি-সাধন-উদ্গম।। রে ! !
কৃষ্ণ-প্রেমোদ্গম প্রেমামৃত-আস্বাদন। রে !
কৃষ্ণপ্রাপ্তি-সেবামৃত-সমুদ্রে মজ্জ।। রে ! !
পাপ হরে আর তাপ হরে
মধুর-হরিনাম-সঙ্কীর্ত্তন—পাপ হরে আর তাপ হরে
যদি কেউ,–নাম বল্ব মনে করে—আগেই তার,–পাপ-তম-পালায় দূরে
সূর্য্যোদয়ের পূর্ব্বে,–অন্ধকার-রাশির মত—পাপ-তম পলায় দূরে
অনাদিকালের সঞ্চিত যত—পাপ-তম পালায় দূরে
সূর্যোদয়ের পূর্ব্বে,–অন্ধকার-রাশির মত—পাপ-তম পলায় দূরে
নাম-সুচন্দ্র-কিরণ প্রকাশে—পাপ-তম পলায় দূরে
যদি কেউ,–নাম বল্ব মন করে—তার,–পাপ-রেখা সব মুছে ফেলে রে
অনাদিকালের সঞ্চিত যত—তার,–পাপ-রেখা সব মুছে ফেলে রে
কম্পিত-কলেবরে চিত্তগুপ্ত—তারে, পাপ-রেখা সব মুছে ফেলে রে
ধর্ম্মরাজের কাছে,–দণ্ডিত হবার ভয়ে –তার, পাপ-রেখা সব মুছে ফেলে রে
ধর্ম্মরাজের কাছে—লজ্জিত হবার আগে—তার,–পাপ-রেখা সব মুছে ফেলে রে
এই এখনি,–পাপহারী নাম কর্বে বলে –তার,–পাপ-রেখা সব মুছে—
যে এখনি নাম করবা বলে—তার,–পাপ-রেখা সব মুছে ফেলে রে
অর্ঘ্য লয়ে দাঁড়ায় দুয়ারে
তাকে অভ্যর্থনা করবার লাগি—অর্ঘ্য লয়ে দাঁড়ায় দুয়ারে
সেই পথে যাবার বেলা—অর্ঘ্য লয়ে দাঁড়ায় দুয়ারে
তাকে অভ্যর্থনা করবে বলে—অর্ঘ্য লয়ে দাঁড়ায় দুয়ারে
পাপ-তম পলায় দূরে
চিত্তদর্পণ মার্জ্জন করে
মধুর-হরিনাম-সঙ্কীর্ত্তন-চিত্তদর্পণ মার্জ্জন করে
দুর্ব্বাসনা—মালিন্য ক্ষালন করে—চিত্তদর্পণ মার্জ্জন করে
‘দুর্ব্বাসনা-মালিন্য ক্ষালন করে—
অনাদিকালের, সঞ্চিত যত—দুর্ব্বসনা মালিন্য ক্ষালন করে
অনাদিকালের দুর্ব্বাসনা-মালিন্য-পূর্ণ—চিত্তদর্পণ মার্জ্জন করে
মধুর-হরিনাম-সঙ্গীর্ত্তন-চিত্তদর্পণের সম্মার্জ্জনী
চিত্তশুদ্ধি করবার তরে—এমন উপায় আর নাই ভাই
হরি,–নাম-সঙ্কীর্ত্তনের মত—এমন উপায় আর নাই ভাই
অজ্ঞানতা যায় রে দূরে
মধুর-হরিনাম-সঙ্কীর্ত্তনে-অজ্ঞানতা যায় রে দূরে
ভুক্তি-মুক্তি-বাসনা-রূপ—অজ্ঞানতা যায় রে দূরে
শ্রীমদ্ভাগবত, পুরাণ এই ফুকারি কয়
সেই হয় জীবের এক অজ্ঞানতম—ধর্ম্ম।। রে !!
অজ্ঞানতমের নাম কহিয়ে কৈতব।’ রে !
ধর্ম্ম-অর্থ-মোক্ষ-বাঞ্ছা আদি এই সব।।’’ রে !!
কৃষ্ণ ভজে চতুবর্বর্গ-বাসনা—ইহাকেই বলে অজ্ঞানতা
যাহা হৈতে কৃষ্ণভক্তি হয় অন্তর্দ্ধান।।’’ রে !!
সে হৃদয়ে কখনও যান না
ভাগবত, পুরাণ এই ফুকারি কয়—সে হৃদয়ে কখনও যান না
যে হৃদয়ে—ভুক্তি-মুক্তি-বাসনা-ধৃষ্টা-চণ্ডালিনী থাকে–সে হৃদয়ে কখনও যান না
শুদ্ধা-সাধ্বী-ব্রাহ্মণী-ভকতি-দেবী—সে হৃদয়ে কখনও যান না
ভুক্তি-মুক্তি-বাসনা থাকতে—শ্রীকৃষ্ণ-ভক্তি লাভ হয় না
ভুক্তি-মুক্তি-বাসন-রূপ—এই,–অজ্ঞানতা যায় রে দূরে
মধুর-হরিনাম-সঙ্কীর্ত্তনে—এই,–অজ্ঞানতা যায় রে দূরে
তার,–দুয়ারে গড়াগড়ি যায় রে
হরিনাম-রসে যে মজে—তার,–দুয়ারে গড়াগড়ি যায় রে
চতুবির্বধা-মুক্তি অষ্ট-সিদ্ধি—তার,–দুয়ারে গড়াগড়ি যায় রে
আমায়,–গ্রহণ কর কর বলে—তার,–দুয়ারে গড়াগড়ি যায় রে
হরিনাম-রসে যে মজে—সে,–ফিরেও ত’ চায় না রে
কোটি কোটি,–ব্রহ্মানন্দ তার আগে নহে এক–বিন্দু।।’’ রে !!
ব্রহ্মার,–মানস-পুত্র সনক-সনাতন-আদি—তারাই ত’ আদি ব্রহ্মজ্ঞানী
শ্রীকৃষ্ণের,–পদস্থিত-চন্দন-তুলসীর গন্ধে—তাদের, –ব্রহ্মজ্ঞান ছুটে গেল রে
তারা,–ভক্তিরসে লুব্ধ হল—তাদের,–ব্রহ্মজ্ঞান ছুটে গেল রে
তাদের,–স হতে বাসনা হল—তাদের,–ব্রহ্মজ্ঞান ছুটে গেল রে
তাদের,–দাস হতে বাসনা হল
কৃষ্ণ—সেবামৃত-পানে ধন্য হবে বলে—তাদের,–দাস হতে বাসনা হল
নিজ-দাস্যে লুব্ধ করে
আত্মারামের মন হরণ করে—নিজ-দাস্যে লুব্ধ করে
লক্ষ্মীরও মন হরণ করে
নারায়ণের বক্ষস্থিতা—লক্ষ্মীরও মন হরণ করে
নারায়ণের বক্ষে স্থিতি—তবু,–কৃষ্ণ-পদ-সেবায় মতি
ভব-মহাদাবাগ্নি নিবর্বাপণ করে
মধুর-হরিনাম-সঙ্কীর্ত্তনে—ভব-মহাদাবাগ্নি নির্ব্বাপণ করে
মধুর-হরিনাম-সঙ্কীর্ত্তনে—ত্রিতাপ-জ্বালা যায় রে দূরে
আধ্যাত্মিক,–আধিদৈবিক, আধিভৌতিক—ত্রিতাপ-জ্বালা যায় রে দূরে
এই,–ভুবনমঙ্গল-নাম-গানে—সর্ব্ব-অমঙ্গল হরে
শ্রী,–কৃষ্ণপ্রাপ্তির অনুকূল—সকল-মঙ্গল উদয় করে
পরিপূর্ণ,–কৃষ্ণপ্রাপ্তির অনুকূল—সকল-মঙ্গল উদয় করে
যত,–বহিম্মুখ-চিত্তবৃত্তি—শ্রী,–কৃষ্ণপদে উন্মুখ করে
প্রাকৃত,–ভোগ-বাসনা হতে তুলে লয়ে –শ্রী,–কৃষ্ণপদে উন্মুখ করে
কার-মনো-বাক্য-দ্বারায়—শ্রীকৃষ্ণ-অনুশীলন করায়
সর্ব্ব-সাধন-শকতি দিয়ে—শ্রীকৃষ্ণ-অনুশীলন করায়
‘সর্ব্ব-সাধন-শকতি দিয়ে’—
শ্রীহরিনাম-সঙ্কীর্ত্তন—সর্ব্ব-সাধন-শকতি দিয়ে
সর্ব্ব-বিদ্যার জীবনশক্তি নাম—সর্ব্ব-সাধন-শকতি দিয়ে
সর্ব্বাত্মাকে স্নিগ্ধ করে
মধুর-হরিনাম-সঙ্কীর্ত্তন—সর্ব্বাত্মাকে স্নিগ্ধ করে
প্রেমামৃত সিঞ্চন করে—সর্ব্বাত্মাকে স্নিগ্ধ করে
সর্ব্বাত্মাকে স্নিগ্ধ করে—ভাব-ভূষণে ভূষিত করে
কম্প-অশ্রু-পুলকাদি—ভাব-ভূষণে ভূষিত করে
ভাব-ভূষণে ভূষিত করে—গোপী,–ভাবামৃতে লুব্ধ করে
মধুর-হরিনাম-সঙ্কীর্ত্তনে—এই,–দেহাভিমান যায় রে দূরে
দারুণ-সংসার,–বন্ধনের একমাত্র কারণ—এই,–দেহাভিমান যায় রে দূরে
যে আমিতে হয় সংসার-বন্ধন—সেই,–‘আমি’ ঘুচায়ে ‘তুমি’ করে দেয়
যাতে হয় সংসার-বন্ধন—সেই,–‘আমার’ ঘুচায়ে ‘তোমার’ করে
আমরা,–জোর-গলায় বল্তে পারি—আর কোন উপায় নাই রে
বিধির কলম রদ করিবার—আর কোন উপায় নাই রে
এই,–দেহাভিমান ঘুচাইবার—আর কোন উপায় নাই রে
হরিনাম-সঙ্কীর্ত্তনের মত—আর কোন উপায় নাই রে
রাধাদাসী-অভিমান দেয় রে
এই—দেহাভিমান ঘুচাইয়ে—রাধাদাসী-অভিমান দেয় রে
জীবের নিত্যসিদ্ধ-স্বরূপ—রাধাদাসী-অভিমান দেয় রে
হলাদিনীর বৃত্তি জীব—জীব নিত্য রাধাদাসী
এই তত্ত্ব জাগায়ে দেয়রে
এক শক্তিমান্ আর সকলি শক্তি—এই তত্ত্ব জাগায়ে দেয় রে
এ পুরুষ কৃষ্ণ আর সব প্রকৃতি—এই তত্ত্ব জাগায়ে দেয় রে
রাধাদাসী-অভিমান দিয়ে—শ্রী,-রাধাকৃষ্ণ-প্রাপ্তি করায়
রাধাদাসীগণে গণও করে—শ্রী,–রাধাকৃষ্ণ-প্রাপ্তি করায়
‘রাধাদাসীগণে গণ্যা করে’—
শ্রী,–গুরু-রূপা-সখীর আনুগত্যে—রাধাদাসীগণে গণ্যা করে
ব্রজে গোপী-দেহ দিয়ে—শ্রী,–রাধাকৃষ্ণ-প্রাপ্তি করায়
গুরুরূপা-সখীর আনুগত্যে—যুগল,–সেবামৃত-সমুদ্রে ডুবায়
তাইতে বলি মহাশূর
পূর্ব্ব পূর্ব্ব যুগে
যে ধনের পায় নাই সন্ধান
কর্ম্ম-যোগ-জ্ঞান-সাধন-ফলে—যে ধনের পায় নাই সন্ধান
মহামন্ত্র মহাশূর—তাই,–অনায়াসে করেন দান
পঞ্চম-পুরুষার্থ-প্রেমধন—অনায়াসে করেন দান
সবাই,–শক্তিহীন নামের কাছে
জগতে,–কত কত সাধন আছে—সবাই,–শক্তিহীন নামের কাছে
শ্রীকৃষ্ণলীলা-রস-ধাম
এই,–বত্রিশ-অক্ষর ষোল-নাম—শ্রীকৃষ্ণলীলা-রস-ধাম
এ যে,–ব্রজলীলা-রস-ধাম—তাই,–মহামন্ত্র এত শক্তিমান্
শ্রীগুরু –মুখে শুনেছি—অপরূপ এই নাম-রহস্য
কিশোরীর দশমী-দশাতে—যখন দেখ্লেন লীলা থাকেন না
ব্রজলীলা রাখ্বার লাগি—তখন এ নাম হলেন প্রকাশ
কৃষ্ণ-বিরহিণী,–কিশোরীর শ্রীমুখ হতে—তখন এ নাম হলেন প্রকাশ
‘কৃষ্ণ-বিরহিণী,–কিশোরীর শ্রীমুখ হতে’—
দশমী-দশায় আরূঢ়—কৃষ্ণ বিরহিণী,–কিশোরীর শ্রীমুখ হতে
যখনি এ নাম হলেন প্রকাশ
সঙ্গে সঙ্গে বিরহের শান্তি
বিরহিণী-কিশোরী শুনে
প্রথম ‘হরে’ নাম স্ফুরণে—বিরহিণী-কিশোরী শুনে
ঐ,–বাঁশী বাজে কদম-বনে—বিরহিণী-কিশোরী শুনে
তবে ত,–কৃষ্ণ আছে এই ব্রজে
ঐ যে,–কদমে-বনে বাঁশী বাজে—তবে ত’,–কৃষ্ণ আছে এই ব্রজে
ব্রজ ছেড়ে যায় নাই কোথায়—ব্রজে আছে শ্যাম-রায়
কদম-বনে বাঁশী শুনে—অমনি হল বিরহের শান্তি
ব্রজ ছেড়ে যায় নাই বলে—অমনি হল বিরহের শান্তি
বিরহ-তাপ মিটাইয়ে—প্রথম ‘হরে’ পূবর্বরাগ জাগায়
কদম-বনে বাঁশীা শুনায়ে—প্রথম ‘হরে’ পূবর্বরাগ জাগায়
পর পর নাম-স্ফুরণে-পর পর লীলা ভোগ
প্রথম ‘হরে’ পূর্ব্বরাগ জাগায়
শেষ ‘হরে’ মহারাস দেখায়—প্রথম ‘হরে’ পূর্ব্বরাগ জাগায়
মহামন্ত্র ‘হরে কৃষ্ণ’ নাম—ব্রজলীলা-রস-ধাম
বিরহিণী,–গৌরকিশোরীর শ্রীমুখোদ্গীর্ণ—মহামন্ত্র ‘হরে কৃষ্ণ’ নাম
যদি কিশোরীর,–শ্রীমুখ হতে এ নামের প্রকাশ
তবে,–কেন বলিলেন কবিরাজ
শ্রীচৈতন্য—চরিতামৃত-গ্রন্থে –তবে,–কেন বলিলেন কবিরাজ
শ্রীচৈতন্য—মুখোদ্গীর্ণ বলে—তবে,–কেন বলিলেন কবিরাজ
অনুভব কর ভাই রে
এ কথার মর্ম্ম—অনুভব কর ভাই রে
শ্রীগুরু-চরণ হৃদে ধরে—অনুভব কর ভাই রে
ব্রজ-বিহারী নন্দনন্দন—নাম ধরেছেন গৌরহরি
আস্বাদিতে স্বমাধুরী—নাম ধরেছেন গৌরহরি
রাধা-ভাব-কান্তি অঙ্গী করি—নাম ধরেছেন গৌরহরি
বিরহে—পরিপূর্ণ ভোগ বটে
নিরন্তর শ্রীকৃষ্ণের বিরহেতে ভোর।।’’ রে ! !
মহাভাব-নিধি গৌরাঙ্গ-সুন্দর—দশমী-দশায় সদাই বিভোর
কাঁদেন সদাই দশমী-দশায়—গম্ভীরা-ভিতরে গোরারায়
এই ‘হরে কৃষ্ণ’ নাম—নিরন্তর গৌরহরি জপেন
রাধাভাবে দশমী-দশায়—নিরন্তর গৌরহরি জপেন
প্রাণ-গৌর-রহস্য-অনুভবী—তাই বলেছেন কবিরাজ
দশমী-দশাপন্ন-শ্রীচৈতন্য-শ্রীমুখোদ্গীর্ণ
রাধিকা-ভাবিত-মতি—দশমী-দশাপন্ন
এ নাম,–যুগল-বিলাস-ধাম
কারুণ্য-তারুণ্য-লাবণ্যামৃত-ধাম—এ নাম,–যুগল-বিলাস-ধাম
ব্রজলীলারসের উপাদান—এই,–নামেই করেন অবস্থান
মহামন্ত্র-নামের মাঝে—ব্রজলীলা-রস পূর্ণ আছে
প্রথম ‘হ’ কার হতে শেষ ‘রে’ কারের মাঝে—ব্রজলীলা-রস পূর্ণ আছে
পূর্বরাগ হতে সম্ভোগ সমৃদ্ধিমান্–সকলি আছেন মূর্ত্তিমান্
এ যে,–ব্রজলীলা-রস-পূর—তাই বলি—মহামন্ত্র মহাশূর
রাধাকৃষ্ণ,–যুগল-উজ্জ্বল-বিহার—যদি কারও—ভোগ করতে সাধ থাকে
শ্রীগুরুদেবের পাছে পাছে—তবে,–যাও ভাই এই নামের কাছে
যুগল-উজ্জ্বল-বিহার—এই নাম,–সব ভোগ করাবে
শ্রীরাধা,–রাধারমণের রহোলীলা—এই,–নাম সব ভোগ করাবে
পূর্ণ,–পূর্ণতর, পূর্ণতম রূপে—এই,–নাম সব ভোগ করাবে
মধুর,–হরিনাম-সঙ্কীর্ত্তন-যুগল,–সেবামৃত-সমুদ্রে ডুবায়ে
‘হরে কৃষ্ণ’ নাম নিজ-স্বরূপ—পরাণ-গৌরাঙ্গ দেখায়
মহা,–রাস-বিলাসের পরিণতি—দেখায় প্রাণের গৌর-মুরতি
রাই কানু একাকৃতি—দেখায় প্রাণের গৌর-মূরতি
মূরতি অদভূত-দেখায় প্রাণের শচীসূত
ভানুসুতা-মণ্ডিত-নন্দসুত—দেখায় প্রাণের শচীসুত
মুরতিমন্ত-প্রেমবৈচিত্ত্য—দেখায় প্রাণের শচীসূত
নিত্য-মিলনে নিত্য-বিরহ –দেখায় মধুর গৌরদেহ
‘হরে কৃষ্ণ’ নাম নিজ-স্বরূপ—দেখায় চিতচোর গোরা
পরস্পর,–বুকে ধরে আত্মহারা—দেখায় চিতচোরা গোরা
বিলাস-বিবর্ত্ত-রসে ভোরা—দেখায় চিতচোরা গোরা
গৌর-অনুরাগীর বুক-ভরা—দেখায় চিতচোরা গোরা
গৌর-অনুরাগী যারা
আন্ নাম বলে না তারা
গৌরের ত’ অনেক নাম আছে—আন্ নাম বলে না তারা
‘গোরা’ নামে আবেশ তাদের
যত আছে পদকর্ত্তা—‘গোরা’ নামে আবেশ তাদের
গৌরহরির ‘গোরা’ নামে—না জানি কি রস আছে
সেই,–ভোগ-লিপ্সু হয়ে তারা
বলে,–‘গোরা’ ‘গোরা’ ‘গোরা’ ‘গোরা’
হয়ে—গর-গর মাতোয়ারা—বলে,–‘গোরা’ ‘গোরা’ ‘গোরা’ ‘গোরা’
শ্রীগুরু-চরণ হৃদে ধরে—অনুভব কর ভাই রে
গৌর-অনুরাগীর,–এই অদ্ভুত-ভোগ—অনুভব কর ভাই রে
যুগল,–নাম নেবার এই ত’ রীতি
আগে ‘রাধা’ পরে ‘গোবিন্দ’—যুগল,–নাম নেবার এই ত’ রীতি
যুগল,–নাম নেবার এই ত’ রীতি—কিন্তু,–‘গোরা’ নামে যে বিপরীত দেখি
আগে ‘গোবিন্দ’ পরে ‘রাধা’—গোরা,–নামে যে দেখি বিপরীত ধারা
গোবিন্দের ‘গো’ রাধিকার ‘রা’
এ দুই মিলে নাম ‘গোরা’ –গোবিন্দের ‘গো’ রাধিকার ‘রা’
আমার,–গৌরাঙ্গ-রাজ্যে—বিবর্ত্ত ঘটনা
কোন্ গোবিন্দের ‘গো’ কোন্ রাধিকার ‘রা’—অনুভব কর ভাই রে
শ্রীগুরু-কৃপা-প্রেরণায় বলি—অপরূপ রহস্য ভাই
বিবর্ত্ত শ্রীশ্যাম-সুন্দর
স্বমাধুরী ভোগ করিতে—বিবর্ত্ত শ্রীশ্যাম-সুন্দর
আপন,–মাধুরী ভোগে উঠ্ল সাধা—বিবর্ত্ত হইলেন রাধা
বিলাস-বিবর্ত্ত-রসে ভোরা—এই দুই মিলে হল গোরা
স্বরূপের বিবর্ত্ত বলে—তাই,–নামে হয়েছে বিবর্ত্ত
বিলাস,–বিবর্ত্ত হতে উঠেছে নাম—তাই,–নামে হয়েছে বিবর্ত্ত
সেই গোবিন্দের ‘গো’ সেই রাধার ‘রা’—দুই মিলে নাম ‘গোরা’
বিবর্ত্ত-গোবিন্দের ‘গো’ বিবর্ত্ত-রাধার ‘রা’—দুই মিলে নাম ‘গোরা’
ঐ,–নামেই স্বরূপ আছে—ঐ,–নামেই স্বরূপ ব’লেদিছে
প্রাণে প্রাণে ভোগ করে
মুখে ‘গোরা’ ‘গোরা’ বলে—প্রাণে প্রাণে ভোগ করে
বিবর্ত্তে বিলাস-রঙ্গ—প্রাণে প্রাণে ভোগ করে
বিলাস—বিবর্ত্তে বিলাস-রঙ্গ—নিশিদিশি তাদের বুক-ভরা
ঐ ভোগে মাতা তারা—তাতেই,–বলে তারা ‘গোরা’ ‘গোরা’
যে যে দ্রব্য ভোগ করে
উদ্গারে তা’ হয় বিদিত
মুখে বলে ‘গোরা’ ‘গোরা’
ঐ,–ভোগ তাদের বুক-ভরা—তাই,–মুখে বলে ‘গোরা’ ‘গোরা’
যা’ খায়,–তাই উদ্গার করে—তাই,–মুখে বলে ‘গোরা’ ‘গোরা’
দুই ত’ আছে জড়াজড়ি—কিন্তু—কেমন করে ভোগ হবে বল
ভোক্তা ভোগ্য এক-ঠাঁই—কিন্তু,–কেমন করে ভোগ হবে বল
স্বতন্ত্র-স্বরূপ না হলে—কিন্তু,–কেমন করে ভোগ হবে বল
দেখাদেখি না হলে—কিন্তু,–কেমন করে ভোগ হবে বল
যোগমায়া লীলাশক্তি
যুগলের সুখদাত্রী—যোগোমায়া লীলাশক্তি
অভিন্ন-স্বরূপ কে বল ভাই
নিগম-নিগূড়-শ্রচৈতন্যের—অভিন্ন-স্বরূপ কে বল ভাই
নিগম-নিগূঢ় শ্রীচৈতন্য আমার—বলেছেন বসে পানিহাটিতে
মহা-মহা-উল্লাসেতে—বলেছেন বসে পানিহাটিতে
অভিন্ন-স্বরূপের কথা—বলেছেন বসে পানিহাটিতে
আমার দ্বিতীয় নাই নিত্যানন্দ বই।।’’ হে !!
প্রভু নিতাই প্রাণ গৌর-সুন্দর—এক আত্মা দুই কলেবর
রাঘবের করে ধরি—আবেশে বলেন গৌরহরি
নিজ-গূঢ়-মরম-কথা—আবেশে বলেন গৌরহরি
সেই করি আমি এই বলিল তোমারে।।’’
যেমন নাচায় তেমনি নাচি—আমি,–নিতাই-চাঁদের খেলার পুতুল
রাই-কানু-মিলিত-গোরার-অভিন্ন শ্রীনিত্যানন্দ
সম্বন্ধ ছাড়ে নাই
ভোক্তা আর ভোগদাতা—সম্বন্ধ ছাড়ে নাই
আর,–এক স্বরূপ সেবা-পিপাসু—এক স্বরূপ ভোগ-লিপ্সু
সেবার স্বরূপ নিত্যানন্দ-রাম—ভোগের স্বরূপ গৌরাঙ্গ নাম
আমার নিত্যানন্দ-রাম—পুরায় শ্রীচৈতন্যের কাম
এই দুই স্বরূপে বিলাস যখন—রসরাজ-মহাভাব তখন
এই রসরাজ-মহাভাব প্রত্যক্ষে—গোদাবরী-তীরে রামরায় দেখে
দেখি,–নিতাই-গৌর-জড়িত—রামরায় মুরছিত
দেখি,—নিতাই-গৌর-আলিঙ্গিত—রামরায় মূরছিত
দেখি,–নিতাই-গৌর-বিলসিত—রামরায় মূরছিত
শ্রীমুখেতে শুনেছি
বলেছেন আমার পাগ্লা প্রভু
এই গূঢ়-রহস্যের কথা—বলেছেন আমার পাগ্লা প্রভু
মহাপ্রসাদ-ভোজনকালে—বলেছেন আমার পাগ্লা প্রভু
বৈষ্ণব,–সেবা-মহাত্ম্য বল্বার ছলে—বলেছেন আমার পাগ্লা প্রভু
দৈবাৎ বৈষ্ণব-সেবা ঘটে যদি অল্প।। রে !!
তবে জীবের কর্ম্ম-বন্ধ ছুটে (জীব) কৃষ্ণপর হয়। রে !
সালোক্যাদি চারি মুক্তি অঙ্গুলী না ছোঁয়া।। রে !!
ক্রমে পায় প্রেমভক্তি গোপিকার ভাব। রে !
তারপর মহাভাব শ্রীরাধার স্বভাব।।’’ রে !!
‘মহাভাব-স্বরূপিণী শ্রীরাধা-ঠাকুরাণী’—এই কথা বল্বার পরে
শ্রীগৌর-তত্-কথা—ভাবাবেশে বলিলেন
রসরাজ মহাভাব দুই একরূপ।।
যা’ দেখি রায়-রামানন্দ মূরছিত।’’
দেখি,–নিতাই-রমণ-গোরা—রামরায় পড়্ল ধরা
দেখি,–নিতাই-রমণ-গোরা-রায়—রামরায় মূরছিত ধরায়
সঙ্কীর্ত্তন-রাসরঙ্গে—নিত্যানন্দ রমে গোরা
বিবর্ত্তে বিলাস-রঙ্গে—নিত্যানন্দ রমে গোরা
চৌদ্দ-মাদল বাজাইয়ে—নিত্যানন্দ রমে গোরা
নিত্যানন্দ-রমণে মাতা—ঐ মূরতি হৃদে ধর সদা
শ্রীগুরু-চরণে দিয়ে মাথা—ঐ মূরতি হৃদেধর সদা
নরহরির চিতচোরা—ঐ মূরতি হৃদে ধর সদা
গৌর-রহস্য ভোগের তরে—প্রাণভরে গান কর
গৌর-রহস্য ভোগের তরে’—
নিকুঞ্জ,–কেলি-বিলাস-অনুশীলন—গৌর-রহস্য ভোগের তরে
রহস্যের উৎপত্তি তথায়
ব্রজ,–নিকুঞ্জ-বিহারে প্রবেশ না হলে
নদীয়া-বিহার বুঝা যায় না
যে যুগল-বিলাস বুঝ্বে
তার,–ভোগ করতে সাধ হবে
বিলাস-বিবর্ত্ত-বিলাস-রঙ্গ—তার,–ভোগ করতে সাধ হবে
ব্রজে যা’ পায় নাই তা’—তার,–ভোগ কর্তে সাধ হবে
সে-ভোগে যখন সাধ জাগে
তখন আস্তে হয় নদীয়াতে
গৌরগণের আনুগত্যে—তখন আস্তে হয় নদীয়াতে
নদীয়ায় কেবল ভোগাধিক্য
আমার,–চিতচোর প্রাণ-গৌরাঙ্গ
বিবর্ত্তে বিরহ-রঙ্গ—আমার,–চিতচোর প্রাণ-গৌরাঙ্গ
গান ছলে ভাই ভাই–সেই,–গৌর-রহস্য ভোগ করি আয়
নিকুঞ্জ,–কেলি-বিলাস অনুশীলনে—সেই,–গৌর-রহস্য ভোগ করি আয়
কল্প-বৃক্ষময় বন—চিন্তামণিময় ভূমি
ব্রজের এক-একটি রজ-রেণু—কোটি কোটি,–চিন্তামণিকেও তুচ্ছ করে
সৃষ্টি-কর্ত্তা ব্রহ্মা যেথায়—লতা-গুল্ম হতে বাঞ্ছা করে
রজ-পরশে ধন্য হবে বলে—লতা-গুল্ম হতে বাঞ্ছা করে
বৃন্দাবনের তরুলতা—তারা,–দীনতার মূরতি রে
ভকতি-রাণীর একমাত্র আসন—তারা,–দীনতার মূরতি রে
‘তারা,–ভকতি-রাণীর একমাত্র আসন’—
ভকতি-রাণী আছে আসীন—তারা,–ভকতি-রাণীর একমাত্র আসন
তাদের,–সদাই অবনত শির-তারা,–দীনতার মূরতি রে
তারা,–স্বাভাবিক অধোমুখে থেকে—যেন,–ইঙ্গিত করে জানাইছে
যাদের,–ব্রজবাসে সাধ আছে তাদের—যেন,–ইঙ্গিত করে জানাইছে
হৃদে,–ধর ভকতি-আসন দৈন্যে—যদি,–সাধ থাকে বাস ব্রজবনে
তৃণাদপি-আসনে উপবেশন কর—আপনাকে হীন করে মান
তারা,–অবনতশির হয়ে থাকে
কিছু—ভোগ আছে তাদের বুকে—তাই তারা,–অবনত-শির হয়ে থাকে
ব্রজের,–গুল্মলতা নত-শিরে—যেন অন্বেষণ করিছে
কোথায়,–যুগল-পদাঙ্ক পড়েছে—যেন অন্বেষণ করিছে
যেন—নিশিদিশি ভোগ করছে
পদাঙ্গ অনুসন্ধান করে—যেন,–নিশিদিশি ভোগ করিছে
যুগল—পদাঙ্ক-মাধুরী—যেন,–নিশিদিশি ভোগ করিছে
রজে,–যুগলের পদাঙ্ক দেখ্ছে—তাইতে মাথা নোয়ায়ে আছে
ঐ ভোগে তারা মেতে আছে—তাইতে মাথা নোয়ায়ে আছে
সুমধুর-রসের আধার।’’ রে !
ব্রজে ষড়্ঋতু একই কালে—মূর্ত্তিমান্ হয়ে বিরাজ করে
ব্রজে,–চন্দ্র সূর্য্য উদয় হয়ে—আপন আপন সার্থকতা করে
‘ব্রজে,–চন্দ্র সূর্য্য উদয় হয়ে’—
শ্রীরাধা,–গোবিন্দ-লীলার অনুকূল হয়ে—ব্রজে,–চন্দ্র সূর্য্য উদয় হয়ে
মদন-মোহন শ্যাম, দলিত-নীরদ-দাম,
প্রিয়া সহ সতত বিহার।।’’ রে !!
বিহরে,–রতন-বেদির পর—দোঁহে,–বেদবিধির অগোচর
রাই-কানুর প্রেমের খেলা—অনুভব-পার লীলা
প্রাকৃত-বাক্যৃ-মন-বুদ্ধির—অনুভব-পার লীলা
সে,–কামগন্ধ-হীন ব্রজলীলা—আলোচনার অধিকার হয় না
এই,–প্রাকৃত-দেহ স্মৃতি থাক্তে—সে লীলা,–আলোচনার অধিকার হয় না
গোপীভাব-লুব্ধ চিত্ত না হলে—সে লীলা,–আলোচনার অধিকার হয় না
রাধাদাসী অভিমান না পেলে—সে লীলা,–আলোচনার অধিকার হয় না
বলেছেন শ্রীকবিরাজ
তৎকালে বিনাশ পায় হাসিতে খেলিতে।।’’
শ্রীগুরু-বৈষ্ণবের কৃপায়—একমাত্র গোপী-ভাবের গোচর
শ্রীগুরু-বৈষ্ণবের কৃপায়—একমাত্র ভোগের উপায়
গোপিকার গাঢ়-আলিঙ্গনে।’’
রাই-কানুর মিলনে—যেন,–তড়িত-জড়িত-নবঘনে
সম্ভে দিয়া শ্যাম-সুচিক্কণে।।’’
রাই-অঙ্গে,–শ্যাম-অঙ্গ ঢাকা পড়েছে—কিন্তু,–মাঝে মাঝে ঝলক্ দিছে
শ্যামের,–উজ্জ্বল-নীলমণির ছটা—মাঝে মাঝে ঝলক্ দিছে
শ্যাম-অঙ্গ ঢাকি গৌর-রায়।’’ রে !
নিরন্তর অঙ্গ-সঙ্গে—গৌরাঙ্গ হল রে
রাস-কেলি-বিলাস-রঙ্গে—পেয়ে রাই-অঙ্গ-সঙ্গে
রাই-অঙ্গ-চ্ছটা লেগে—শ্যাম,–গৌরাঙ্গ হল রে
ভিতরে বাহিরে রং ধরাল
ভিতরেতে ভাব ধরাল
বাহিরে,–শ্যামাঙ্গ গৌরাঙ্গ কৈল—ভিতরেতে ভাব ধরাল
শ্রীনবদ্বীপ-ধামে আসি, প্রেম বিলায় রাশি রাশি,
তরঙ্গে যার জগত ভাসায়।।’’ রে !!
‘‘শ্রীনবদ্বীপ-ধামে আসি’’,
উপরে রাই ভিতরে কালশশী—হয়ে,–রাই কানু মিশামিশি
রাই-সম্পুটে কালশশী—নাম ধরিল গোরাশশী
রাই-স্বরূপে কানু পশি—নাম ধরিল গোরাশশী
রাইচাঁদ,–মাঝে পশি কালশশী—নাম ধরিল গোরাশশী
নদীয়া—আকাশে আসি—উদিল গৌরাঙ্গ-শশী
নিজ-বাঞ্ছা-পূর্ত্তি-অভিলাষী—নদীয়ায় উদয় হল আসি
ব্রজ,–নিভূত-কুঞ্জের নিভৃত-কুঞ্জ—নদীয়া তার খেলার ভূমি
ব্রজ,–নিকুঞ্জে ব’ন্ল স্বরূপ-খানি—নদীয়া তার খেলার ভূমি
মহারাস-রঙ্গ-ভূমি—নদীয়া তার খেলার ভূমি
‘‘শ্রীনবদ্বীপ-ধামে আসি’’
নদীয়াতে সতত স্থিতি
পরিণতি-গৌর –স্বরূপের-নদীয়াতে সতত স্থিতি
পারিষদ-গোপী-সংহতি—নদীয়াতে সতত স্থিতি
নিত্য-বিহার,–ভোগ করে গৌর-অনুরাগী—আসি’,–কথা কেবল বুঝাবার লাগি
শ্রীগুরু-কৃপায় বলি—অপরূপ রহস্য ভাই রে
বৃন্দাবনে রসের রন্ধন—নদীয়ায় রস পরিবেশন
তরঙ্গে যার জগত ভাসায়।।’’ রে !!
কে বল তরঙ্গ
আমার,–গৌর-লীলা-সিন্ধুর—কে বল তরঙ্গ
প্রেমসিন্ধু গোরারায়—নিতাই তরঙ্গ তায়
নদীয়ায়,–প্রেমসিন্ধু গোরারায়—নিতাই-তরঙ্গ জগৎ ভাসায়
পরিবেষ্টা-নিতাই-পরিবেষণে—মাত্ল সবে উজ্জ্বল-প্রেমে
প্রেমসিন্ধু-গৌরাঙ্গের-প্রেমধন কে বা পেত
যদি,–নিত্যানন্দ না বিলাত—প্রেমধন কে বা পেত
অদ্বৈত-করুণা-বাতাস-পরশে-নিতাই-তরঙ্গ জগৎ ভাসায়
অদ্বৈত-করুণা-বাতাস-পরশে—গৌর,–প্রেমসিন্ধু তরঙ্গায়িত
‘অদ্বৈত-করুণা-বাতাস-পরশে’—
নিতাই-তরঙ্গ সনে—অদ্বৈত-করুণা-বাতাস-পরশে
ভাসালে ডুবালে
উত্তাল-তরঙ্গ-যোগে—ভাসালে ডুবালে
চির-অনর্পিত-প্রেমের বন্যায়—মধুর-নদীয়া ভেসে যায়
শান্তিপুর ডুবু ডুবু—মধুর-নদীয়া ভেসে যায়
স্থাবর-জঙ্গম-গুল্ম-লতা—ভেসে গেল সেই প্রেমের বন্যায়
অঙ্গ-বঙ্গ-কলিঙ্গ—ভেসে গেল সেই প্রেমের বন্যায়
হিমালয় হতে কুমারিকা—ভেসে গেল সেই প্রেমের বন্যায়
শ্রীগৌরাঙ্গ-প্রেমবন্যায়—চৌদ্দ-ভুবন ভেসে যায়
মধুর-রসের প্রেমবন্যায়—চৌদ্দ-ভুবন ভেসে যায়
‘বিশ্বম্ভর’ নাম পূর্ণ হল –বিশ্ব প্রেমে ভেসে গেল
নিজ-ভোগ্য-গোপ্য-প্রেমে—গৌর-স্বরূপে জগৎ ভাসাল
‘নিজ-ভোগ্য-গোপ্য-প্রেমে’—
যা’,–ব্রজ-নিকুঞ্জে গোপনে ছিল—নিজ-ভোগ্য-গোপ্য-প্রেমে
আ’মরি কি দান অদভূত
প্রেমাবতার-গৌরহরির—আ’মরি কি দান অদভূত
কৈল,–স্থাবর-জঙ্গম গোপীভাবে মত্ত—আমরি কি দান অদভুত
দিব্য-দৃষ্টে সাধক দেখে—সবে,–বিকাইছে গোরার পায়
গোরা-রসে নিমগ্ন সদাই।’’ গো !
গোরা-রসে আগরী—যত নদীয়া-নাগরী
কহিতে গৌরাঙ্গ-কথা প্রেমজলে ভাসে।। গো !!
ভাব-ভরে ভাবিনী পুলক-ভরে ভোরা। গো !
শ্রবণে নয়নে মনে গোরা গোরা গোরা।।’’ গো !!
যত,–গৌর-ভাবিনী নদীয়া-রমণী—গৌর বিনে আন্ শুনে না কাণে
আন্ শুনিতে গৌর শুনে—গৌর বিনে আন্ শুনে না কাণে
আঁখি,–রঞ্জিত গোরা-রূপ-অঞ্জনে—তাই,–গৌর বিনে আন্ দেখে না নয়নে
গৌর,–বসে আছে হৃদি-সিংহাসনে-গৌর বিনে আন্ ভাবে না মনে
হয়ে তাদের বুক-জোড়া-মনে বিরাজিছে গোরা
গৌর-ভাবিনী নদীয়া-রমণী-কর্ণাভরণ করেছে
গোরা-রূপ-গুণ তারা—কর্ণাভরণ করেছে
গোরা-রূপ-গুণ-গানে—কুণ্ডল পরেছে কাণে
দিবানিশি গৌর বিনে অন্য নাহি জানে।। গো !
শয়নে স্বপনে জাগরণে—গৌর বিনে আন্ নাহিক জানে
যতন করিয়া ‘গোরা’ নাম লিখে তায়।।’’ গো!!
নিজ-অঙ্গে গৌর-নাম লিখে—তারা গৌর,–নামের পানে চেয়ে বলে
তারা,–নামেতে মূরতি দেখে—তাই গৌর,–নামের পানে চেয়ে বলে
তাদের,–নয় শুধু অঙ্গে নাম লেখা—তারা,–নামেতে দেখে গৌর বাঁকা
তাদের,–নয়নে আছে গৌর আঁকা তাই—দেখে,–দাঁড়ায়ে আছে গৌর বাঁকা
নামেতে মূরতি দেখা—নদে-নাগরী-স্বভাবের সার্থকতা
আমার মনে এই হয়—ও-ত’ নাম লেখা নয়
তাদের,–বুকের নিধি দিয়েছে দেখা—নদে—নাগরীর নয় গো নাম লেখা
তাদের,–বুকে আছে গৌর আঁকা—নাম-রূপে দিয়েছে দেখা
নাম নামী অভিন্ন-কথা—তাই,–নাম-রূপে দিয়েছে দেখা
হাত দিয়ে গড়িয়ে গিয়ে,–নাম-রূপে হয়েছে প্রকাশ—তাদের বুকে,–
তারা,–নামেতে মূরতি দেখে—গৌর,–নামের পানে চেয়ে বলে
আড্ নয়নে মৃদু-হেসে—গৌর,–নামের পানে চেয়ে বলে
অনেক,–দিনের সাধে পেয়েছি একা’—একবার,–মৃদু-হেসে কথা কও
‘অনেক,–দিনের সাধে পেয়েছি একা’—
হেথা,–তুমি আছ আর আমি আছি—অনেক,–দিনের সাধে, পেয়েছি একা
দেখি মুখান হাসি-মাখা—একবার,–মৃদু-হেসে কথা কও
ভাবে ভাবে—গুপ্ত-প্রীতির কত সুখ
নামে,–মূরতি হেরে কথা কয়ে—তাতেও আশা মিটে না
পূজয়ে চোখের জলে প্রাণ-ফুল দিয়া।।’’ গো !!
বাদিনী কেউ দেখে পাছে—তাই,–গোপনে গৌরাঙ্গ পূজে
আঁখির জলে প্রাণ-ফুলে—পূজে গোরার পদ-যুগলে
আঁখির জলে প্রাণ-ফুলে—নদে,–নাগরী করে গৌর-পূজন
পূজান্তে,–ভোগ-সমর্পণ আছে নিয়ম—করে,–গৌর-ভোগের আয়োজন
গৌর-ভোগের সম্ভার আন্তে—কোথা বা যাবে বল
উপাচারের বাধ্য নয়—প্রেম-ভুখা প্রাণ-গৌরাঙ্গ
গোরা-রসে আগরী নদে-নাগরী—তাই গৌরের মন যেনে
বুক মুখ প্রসারণে—ভোগ নিবেদন করে
নৈলে,–স্বরূপের কেমন হবে উপভোগ—যেমন স্বরূপ তার তেমনি ভোগ
গুপত-গৌরাঙ্গ-প্রীতি—নদে-নাগরীর বুক-জোড়া
নদে-নাগরী নিজ-বুক-জোড়া—প্রীতি-নৈবেদ্য ভোগ দিয়ে
নদে-নাগরী নিজ-বচনামৃত-তাম্বুল অর্পণ করে
গৌরের,–রসনা রসাল কর্বে বলে—তাম্বূল অর্পণ করে
গৌরের,–রসনা সরস হবে বলে—তাম্বূল অর্পণ করে
গোরা,–রসরাজের মনের মত—তাম্বূল অর্পণ করে
তাতে—অধর-রস আছে মিলিত—দেয় তাম্বূল বচনামৃত
যাতে সুখী শচীসূত—দেয় তাম্বূল বচনামৃত
তাতে আছে অধরামৃত ভরা—রচনামৃত-তাম্বূল অর্পে তারা
আনে বুঝ্লে লাগ্বে ঝগড়া—যারা বুঝে বুঝুক্ তারা
নদে-নাগরী বুকে মুখে ধরে—ভোগ-তাম্বূল কৈল অর্পণ
দিয়ে বুক আর মুখের বচন—ভোগ-তাম্বূল কৈল অর্পণ
গোরা-রসে আগরী নদে-নাগরী—পূজা ভোগ শেষ করে
যখন যেমন তখন তেমন—জেনে মন,–ভাব-পরিচর্য্যা করে
ভাবে ভাবেই তার পূজা—গৌর মহাভাবের রাজা
ভোগান্তে আরতি বিধি—চিরকাল এই আছে রীতি
আরতি কর্তে দীপের লাগি—কোথা বা যাবে বল
না জানি কোন্ রসিক-বিধি—গড়েছে নদীয়া-নাগরীগণে
গৌর-সেবা-উপকরণে-গড়েছে নদীয়া-নাগরীগণে
অঙ্গকান্তি-দীপ তখনি—আপনি আপনি জ্বলে উঠ্ল
আরতি কর্বে বলে—বহুদিনের আশা ছিল
পূজা-ভোগ শেষ হল দেখে—আজ,–আরতির দীপ জ্বলে উঠ্ল
আপন সেবার সময় জেনে—আজ,–আরতির দীপ জ্বলে উঠ্ল
নদে-নাগরীর অঙ্গকান্তি—আজ,–আরতির দীপ জ্বলে উঠ্ল
গোরা-রসে আগরী নদে-নাগরী—আ-রতি-ভরে আরতি করে
অঙ্গকান্তি-প্রদীপেতে—আ-রতি-ভরে আরতি করে
তখন আর কি রইতে পারে
আপন সেবার সময় জেনে—তখন আর কি রইতে পারে
কঙ্কণ-ঘণ্টা-ধ্বনি—আনন্দেতে বেজে উঠ্ল
অঙ্গকান্তি-আরতি দেখে—উঠ্ল কঙ্কণ-ঘণ্টা-ধ্বনি
আরতির রঙ্গে প্রেমতরঙ্গে—উঠ্ল কঙ্কণ-ঘণ্টা-ধ্বনি
আ-রতি-পিরীতি-রঙ্গে–উঠ্ল কঙ্কণ-ঘণ্টা-ধ্বনি
করে কর মিলনে—উঠ্ল কঙ্কণ-ঘণ্টা-ধ্বনি
‘করে কর মিলনে’—
অঙ্গকান্তি-আরতি দানে—কারে কর মিলনে
কঙ্কণের কন্কনি
বিলাস-রসের ঘণ্টা-ধ্বনি—কঙ্কণের কন্কনি
তখন আর কি রইতে পারে
আরতির বাজ্না বাজ্ল শুনে—তখন আর কি রইতে পারে
আপন সেবার সময় জেনে—তখন আর কি রইতে পারে
ধূপ-ধূঁয়া-গন্ধ—আরতির উপরকণ
নদে-নাগরীর অঙ্গ-গন্ধ-ধূপ-ধূঁয়া প্রকাশ হল
আরতি-রঙ্গ বাড়াবে বলে—ধূপ-ধূঁয়া প্রকাশ হল
‘আরতি-রঙ্গ বাড়াবে বলে’—
গৌর-নাসা মাতাইয়ে—আরতি-রঙ্গ বাড়াবে বলে
গৌর-নাসায় বাসা করে—আরতি-রঙ্গ বাড়াবে বলে
উধাও হয়ে ছুট্ল
গৌর-সঙ্গ পাবে বলে—উধাও হয়ে ছুট্ল
পূজা করি দরশ-পরশ-রস মাগে।।’’ গো !!
নদে-নাগরী মনেতে গণে
চিরকালই আছে রীতি
পূজান্তে দক্ষিণা বিধি—চিরকালই আছে রীতি
নদে নাগরী মনেতে গণে—দক্ষিণান্ত কি বা দিব
পূজা-ভোগ,–আরতিতে সকলি দিলাম—দক্ষিণান্ত কি বা দিব
যা কিছু ছিল আমার বল্তে—দিলাম পূজা-ভোগ-আরতিতে
না দিলে পূজা অপূর্ণ থাক্বে—দক্ষিণান্ত কি বা দিব
অঙ্গ-উপাঙ্গ সব দিয়েছি
পূজা-ভোগ-আরতিতে—দেহের,–অঙ্গ-উপাঙ্গ সব দিয়েছি
যাতে সুখ হয় তাই কর—দক্ষিণান্ত দিলাম দেহ
আশীর্ব্বাদ ঐ দেহ দেহ—দক্ষিণান্ত দিলাম দেহ
নদে-নাগরীর গৌর-পূজার—বালাই লয়ে মরে যাই
তাদের,–দেহেই আছে সেবার সম্ভার—গৌর-সেবার দেহ সবাকার
গোরা-রসে অগরী নদীয়া-নাগরী-পূজে গোরা-নাগর-বরে
নিজ-দেহেন্দ্রিয়-উপচারে—পূজে গোরা-নাগর-বরে
নদে নাগরী ভাবে মনে—পূজা কৈল সমাপনে
উপকরণে পূজা কৈলে—তারে ত’ বাহ্য-পূজা বলে
আত্মদান না করিলে—ফল-ফুলে কিসের পূজা
নবদ্বীপ-নাগরীর—আন্তরিক-পূজা বটে
পরস্পর দিয়ে আত্মদান—কৈল পূজা সমাধান
তুমি গৌর আমার হলে—গৌর আমি তোমার হলাম
তারা,–গোরা-রসে নিমগ্ন সদাই। গো !
তাদের অনুগা হব, নিতাই-পদ-রজ পাব,
নবদ্বীপ-দাস গায় তাই।।’’ গো !!
রসরাজ-গৌরাঙ্গ-নাগরের—প্রধানা-নাগরী নিতাই পাব
নদীয়া-নাগরীর আনুগত্যে—প্রধানা-নাগরী নিতাই পাব
অদ্বৈত-বলে বলী হয়ে—নিতাই-ধনে ধনী হব
গদাধরের কুলে দাঁড়ায়ে—নিতাই-ধনে ধনী হব
নরহরির আনুগত্যে—নিতাই-ধনে ধনী হব
গৌরাঙ্গ-বিলাসের তনু—নিতাই পেলেই সকলি পাব
এ-কথা অন্যথা নবে—বিলাস-ভূমি পেলেই বিলাসী পাব
বিলাসী পেতে কি বাকী থাকে—যদি,–বিলাস-মন্দির থাকে বুকে
মন্দির ছাড়া ঠাকুর থাক না—মন্দির পেলেই ঠাকুর পাব
লীলাভূমি ছেড়ে থাকে না—লীলা-স্বরূপের এই ত’ স্বভাব
সে ভূমি ছেড়ে থাকে না—ভূমিও তারে ছাড়ে না
লীলা-স্বরূপের সাধ যেতে যেখানে—আগে ছুটে যায় সেখানে
ডাক্তে হবে না খুঁজতে হবে না—বিহারী,-ভূমি পেলেই বিহারী আস্বে
বিহার-ভূমির আকর্ষণে—আপনি আস্বে টানে টানে
বিহার—ভূমিতে খেলা কর্তে—স্বভাবেতে আপনি আস্বে
না খেলে রইতে নারে—স্বভাবেতে আপনি আস্বে
‘না খেলে রইতে নারে’—
নিরন্তর খেলা স্বভাব—না খেলে রইতে নারে
অনায়াসে গৌর পাব
বিহার—ভূমি ধরে থাক্ব—অনায়াসে গৌর পাব
খুঁজিব না চাইব না—অনায়াসে গৌর পাব
জগদ্-গুরু নিত্যানন্দ—বুকে ধরে বসে থাক্ব
গৌর এস বা বল্ব কেন-বুকে ধরে বসে থাক্ব
আপনি,–আস্বে খেল্বে দেখ্ব রঙ্গে—বুকে ধরে বসে থাক্ব
জগদ্গুরু,–নিত্যানন্দ খেলার ভূমি—বুকে ধরে বসে থাক্ব
শ্রীগুরুরূপ নিতাই-রূপ—জগদ্গুরু নিত্যানন্দ
আমার,–শ্রীনিত্যানন্দ-প্রকাশ-স্বরূপ—যত দেখ শ্রীগুরুরূপ
দেখি,–জগদ্গুরু-নিতাইএর স্বরূপ নানা—যেন,–ভিনু ভিনু মনে করো না
সেখানে জেনো নিত্যানন্দ-রায়—‘গুরু’ আখ্যা শুন্বে যেথায়
অনুকূল-প্রতিকূলে—নিতাই অনন্ত গুরুরূপে
নিতাই,–যেখানে যেমন সেখানে তেমন
যে যেমন তার কাছে তেমন
নৈলে,–কেমন করে তুল্বে বল
তুল্তে গেলে যে ডুব্তে হবে
নৈলে,–কেমন করে হাতে পাবে—তুল্তে গেলে যে ডুব্তে হবে
ফিরে বেড়ায় বহুরূপে
জীব,–উদ্ধারিতে ভব-কূপ হতে—ফিরে বেড়ায় বহুরূপে
পরাশক্তি দিতে জীবে—ফিরে বেড়ায় বহুরূপে
জগৎ উদ্ধারিতে নানারূপ—জগদ্গুরু-নিত্যানন্দ-রূপ
গুরু পেলেই সকলি পাব
বিহার-ভূমি রে
শ্রীগুরুদেবের হৃদয় যে—বিহার-ভূমি রে
প্রভু-নিতাই-প্রাণ-গৌরাঙ্গের—বিহার-ভূমি রে
নিতাই,–গৌরাঙ্গ-বিলাস হের্ব সুখে—সেই,–শ্রীগুরু-স্বরূপ ধর্ব বুকে
গৌর-গোবিন্দ-লীলা-ভোগ—শ্রীগুরু-স্বরূপে সকলি আছে
গৌর-গোবিন্দ-লীলা আপনি মিলে—শ্রীগুরু-চরণ বুকে ধর্লে
গৌর-গোবন্দি-বিহারভূমি—শ্রীগুরু-শ্রীতনুখানি
ঠাকুর শ্রীনরোত্তম—তাই,–বলেছেন পরাগতি
গৌর-গোবিন্দ-লীলার পরিণতি—আমার শ্রীগুরু-স্বরূপে স্থিতি
শ্রীগুরু-দেবের রাতুল-চরণ—সর্ব্বলীল-ভোগের সমাধান
গৌর-গোবিন্দ-বিলাস হের্ব—সেই,–শ্রীগুরু-চরণ হৃদে ধর্ব
পূজার উপকরণ হৃদে ধর্ব
প্রাণ-গৌরাঙ্গ পূজা কর্ব
শ্রীগুরু-নাগরীর আনুগত্যে—প্রাণ-গৌরাঙ্গ পূজা কর্ব
কেন শ্রীগুরুপদ ভজ্ব
সকলি পাব বলে—কেন শ্রীগুরুপদ ভজ্ব
স্বভাবেতে হৃদে ধর্ব
শ্রীগুরুদেবের রাতুল-চরণ—স্বভাবেতে হৃদে ধর্ব
আমার সর্ব্বস্ব জেনে—স্বভাবেতে হৃদে ধর্ব
আন্ বা চাইব কেন—তারে শুধু চাইব
সে বিনে এই জগ-মাঝে—আর,–আমাদের কে আপন আছে
কিছুই ত’ জান্তাম না
ভাল মন্দ—কিছুই ত’ জান্তাম না
কৈশোরে সম-সঙ্গী সনে—খেলা-রসে মেতে ছিলাম
চাই নাই ডাকি নাই—সে,–যেচে গিয়ে হাত ধরিল
হাত বাড়ায়ে দিই নাই—ধর বলে বলি নাই
আপন গরজে—সে,–যেচে গিয়ে হাত ধরিল
সত্য সঙ্কল্প করে—সে,–যেচে গিয়ে হাত ধরিল
‘সত্য সঙ্কল্প করে’—
অভাব ঘুচায়ে স্বভাব দিবে—এই,–সত্য সঙ্কল্প করে
সে-দিন সাধন শেষ হয়েছে
যে-দিন,–শ্রীগুরুরূপে হাত ধরেছে—সে-দিন সাধন শেষ হয়েছে
যে-দিন,–শ্রীগুরুরূপে দিয়েছে পদছায়া—সে-দিন,–পূর্ণ হয়েছে সব
তোমরা বল্লে বল্তে পার
তবে আবার ভজ কেন
যখন ভজাভজি হয়েছে পূর্ণ—তবে আবার ভজ কেন
তবে আবার চাও কেনে
গৌর-গোবিন্দ-সেবা—তবে আবার চাও কেনে
সে-যে সুখী সেই ধনে—চাই,–চেয়ে তার মুখ-পানে
শ্রীগুরু-সুখ বাঞ্ছা করি—গৌর-গোবিন্দ-ভজন করি
তাতে সুখ পান শ্রীগুরু-গোসাঞি—তাই,–গৌর-গোবিন্দ-গুণ গাই
তাতেই মমতা হয় ত’ অতি
প্রিয়–জনের যাতে প্রীতি—তাতেই মমতা হয় ত’ অতি
এ-কথা হয় কি না হয়—একবার ভেবে দেখ ভাই
ব্রজ-লীলায় মা যশোদা-দধি-মন্থন কর্ছেন
চঞ্চল-বালক আসি—ননী-তোলায় বাধা দিচ্ছে
বাৎসল্যবতী-মা গোপালে—অমনি ঠেলে ফেলে দিচ্ছেন
যার লাগি দধি-মন্থন
তারে কেন করেন বর্জ্জন
দধি হতে ননী উঠ্বে
তাই প্রাণ-গোপাল খাবে
ননী-তোলায় পড়্ছে বাধা
তাইতে ঠেলে ফেলে দিচ্ছেন
প্রীতি-রাজ্যের এই ত’ রীতি
প্রিয়ের প্রিয়ে অধিক প্রীতি—প্রীতি-রাজ্যের এই ত’ রীতি
শ্রীগুরুদেব তাতে পান প্রীতি—তাইতে গৌর-গোবিন্দ ভজি
তার সুখেই আমার সুখ—আমার কোন দরকার নাই
আমার কাজ পদে বিকানা—কাজ কি অন্য উপাসনা
শ্রীগৌড়মণ্ডল-বাসী—সবে মিলে কৃপা কর গো
বিহার-ভূমিতে পেয়েছ বসতি—তোমরা,–ভাগ্যবান, ভাগ্যবতী
‘বিহার-ভূমিতে পেয়েছ বসতি’—
প্রভু-নিতাই-প্রাণ-গৌরাঙ্গের-বিহার-ভূমিতে পেয়েছ বসতি
যদি তার নিজ-জন না হবে
তার,–বিহার-ভূমিতে জনম কেন বা পাবে
তোমরা তার নিজ-জন
তোমরা সবাই নিত্যসিদ্ধ
যেমন ব্রজবাসী নিত্যসিদ্ধ—তোমরা সবাই নিত্যসিদ্ধ
তাই,–আবরণে রেখেছে নিজ-জনে
আপনি আছে স্বরূপ-আবরণে—তাই,–আবরণে রেখেছে নিজ-জনে
অগতির গতি তোমরা—সবে মিলে কৃপা কর গো
আমার,–সবর্বস্ব গুরু-মূরতি-খানি—যেন,–হৃদে ধরে থাক্তে পারি
আত্ম-সুখ বর্জ্জন করি-অকপটে,-গুরু-সেবা করতে পারি
শ্রীগুরু,–কৃপাদত্ত-নাম সর্ব্বস্ব করি’—যেন,–প্রাণভরে গাইতে পারি
সাধ্য-সাধন-নির্ণয়-করা নাম—যেন,–প্রাণভরে গাইতে পারি
‘ভজ’ ‘জপ’ দুই শব্দ-দ্বারে—সাধ্য-সাধন-নির্ণয়-করা
সাধন,–‘হরে কৃষ্ণ হরে রাম’
‘হরে কৃষ্ণ রাম’ নাম-সাধন-ফলে
গৌর-গোবিন্দ-লীলা মিলে—‘হরে কৃষ্ণ রাম, নাম-সাধন-ফলে
শ্রীহরিদাস-ঠাকুর নীলাচলেতে—দেখাইলেন নিজ-স্বরূপেতে
কৃষ্ণচৈতন্য বলে ছাড়্লেন জীবন—আজীবন,–‘হরে কৃষ্ণ’ নাম কৈলেন
এই কৃপা কর সবে
যেন,–পাগল হয়ে বেড়াই সদা
ভাই ভাই এক-প্রাণে—যেন,–পাগল হয়ে বেড়াই সদা
উড়য়ে এই নামের ধ্বজা—দেশ-বিদেশে বেড়াই সদা
পাগলা—প্রভু হৃদে ধরি—যারে দেখি তারে বলি
দন্তে তৃণ, গলবাসে—যারে দেখি তারে বলি
ভাই রে তোদের পায়ে পড়ি—একবার বল ভাই
সাধ্য-সাধন-নির্ণয়-করা নাম—একবার বল ভাই
শ্রীগুরু-কৃপায়,–গৌর-গোবিন্দ পাবে—সর্ব্ব-বাঞ্ছা পূর্ত্তি হবে
জপ, হরে কৃষ্ণ হরে নাম।।’’
পাগলা-প্রভুর দেওয়া নাম—ভজ,–নিতাই গৌর রাধে শ্যাম
জীবনে মরণে গতি—ভজ,–নিতাই গৌর রাধে শ্যাম
ধন, পতি, প্রাণ আমাদের—ভজ,–নিতাই গৌর রাধা-শ্যাম
নিতাই ধন, গৌর পতি—প্রাণ আমাদের রাধা-শ্যাম
‘হরে কৃষ্ণ’ নাম সাধনে—ধনী হব নিত্যানন্দ-ধনে
নিতাই-ধনে রাধা-শ্যাম-প্রাণে—গৌর-পতির সেবা কর্ব
জপ, হরে কৃষ্ণ হরে রাম।,’
[মাতন]
প্রেম্সে কহো শ্রীরাধে শ্রীকৃষ্ণ বলিয়ে—
প্রভু-নিতাই-শ্রীচৈতন্য-অদ্বৈত –শ্রীরাধারাণীকী জয় !
প্রেমদাতা পরম-দয়াল পতিত-পাবন শ্রীনিতাইচাঁদকী জয় !
করুণাসিন্ধু গৌর-ভক্তবৃন্দকী জয় !
শ্রীশ্রীনাম-সঙ্কীর্ত্তনকী জয় !
খোল-করতালকী জয় !
শ্রীনবদ্বীপ-ধামকী জয় !
শ্রীনীলাচল-ধামকী জয় !
শ্রীবৃন্দাবন-ধামকী জয় !
চারি-ধামকী জয় !
চারি-সম্প্রদায়কী জয়!
অনন্ত-কোটি ব্রহ্মাণ-বৈষ্ণবকী জয় !
আপন আপন শ্রীগুরুদেবকী জয় !
প্রেমদাতা পরম-দয়াল পতিত-পাবন—
শিশু-পশু-পালক বালক-জীবন শ্রীমদ্রাধারমণকী জয় !