ভজ, নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ, হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।
শুতিয়াছে রসের আলসে।
চকিতে চন্দ্রমুখী, উঠিলেন স্বপ্ন দেখি রে,
কাঁদি কাঁদি কহেন বঁধূ-পাশে।।’’
বলে,–‘‘উঠ উঠ প্রাণনাথ,’’
এক যুবা গৌর-বরণ।’’
গৌরবরণ এক যুবাপুরুষ—পরাণ,—বঁধু হে আমি স্বপনে দেখলাম
জনমিয়ে এই বৃন্দাবনে—এমন রূপ ত’ কভু দেখি নাই হে
‘‘কি বা তার রূপ ঠাম, জিনি কত-কোটি-কাম হে,
ও সে,–রসরাজ রসের সদন।।
অশ্রু-কম্প-পুলকাদি,’’
নাচে গায় মহামত্ত হইয়া।
নিরুপম-রূপ দেখি, জুড়াইল মোর আঁখি হে,’’
অখিল-লাবণ্য-মাধুর্য্য-ধাম
আমরি,–কি বা সে রূপের ঠাম—অখিল-লাবণ্য-মাধুর্য্য-ধাম
আজু—মন ধায় তাহারে দেখিয়া।।’’
সে,–রূপে আমার মন মজেছে—পরাণ—বঁধু হে আমি সাধে কি কাঁদি
আজু,–মন ধায় তাহারে দেখিয়া।।
আমাদের,–কিশোরী কেঁদে আকুল হয়ে বলে—আজ,–কেন
কেন,–পরপুরুষে মতি গেল—আজ,–কেন এমন হল বঁধু
ইহা বই না হেরি নয়নে।
আজ,–তবে কেন বিপরীত, হেন হইল আচম্বিত হে,’’
তোমার বিনে আন্ জানি না—কেন,–পরপুরুষে স্বপনে দেখ্লাম
আমি জনম ধরিয়ে,–তোমা বিনে আন্ জানি না—কেন,–পরপুরুষে
চতুর্ভুজ-আদি কত, বনের দেবতা যত,
দেখিয়াছি এই বৃন্দাবনে।
তাহে তিরপিত মন, নাহি ভেল কদাচন হে,
সে গৌরাঙ্গ হরিল মোর মনে।।’’
আমাদের,–কিশোরী কেঁদে আকুল হয়ে বলে—আজ,–কেন এমন হল বঁধু
কেন,–পুরপুরুষে মতি গেল—আজ,–কেন এমন হল বঁধু
আমি,–তোমা বিনে আন জানি না—কেন,–পরপুরুষে মতি গেল
ও সে,–গৌররূপে আমার মন ভুলেছে—পরাণ,–বঁধু হে আমি
সাধে কি কাঁদি
বিদগধ রসিক নাগর।
কোলেতে করিয়া গোরী, মুখ চুম্বে বেরি বেরি রে,
হেরিয়া জগদানন্দ ভোর।।
শ্রীরাধা-গোবিন্দ-প্রেমের—আমরি,–বালাই লয়ে মরে যাই যে
কিশোরীর ঐ দশা দেখে শ্যাম, নাগর বলেন মধুর-স্বরে
মিছামিছি ভূমি কেঁদ না রাধে
সে তো পরপুরুষ নয় গো—মিছামিছি তুমি কেঁদ না রাধে
(২)
সো নহি আন, কেবল তুয়া প্রেম হে,
মোহে করব তেন রূপ।।’’
এবার,–আমি যে গৌরাঙ্গ হব
রাধে,–সে ত’ পরপুরুষ নয় গা—এবার,–আমি যে গৌরাঙ্গ হব
রাধে তোমার,–প্রেম-ঋণ শোধিবারে—এবার,–আমি যে গৌরাঙ্গ হব
কৈছন তুয়া প্রেমা, আর,–কৈছন মধুরিমা,
কৈছন সুখে তুঁহু ভোর।’’
তোমার,–প্রেমের মাধুরী কেমন
সেই প্রেমে কি বা সুখ
আমি,–কতই না চেষ্টা করিলাম—কিছুতেই আস্বাদিতে নারিলাম
কি করিব না পাইয়া ওর।।
তখন,–ভাবিয়া দেখিনু মনে,’’
আমি ত’,–সেই রসের বিষয়টি—আমা হতে হবে না হে
আশ্রয়-জাতীয়-রস-আস্বাদন—আমা হতে হবে না হে
তোমার,–আশ্রয়-জাতীয়-ভাবে—আমায়,–বিভাবিত হতে হবে
আমার,–এ বাসনা পূর্ণ কভু নয়।
তাই,–তুয়া ভাব-কন্তি ধরি, তুয়া প্রেম গুরু করি’ হে
আসি,–নদীয়াতে করব উদয়।।’’
তিন-বাঞ্ছা পুরাইতে—এবার,–আমি যে গৌরাঙ্গ হব
রাধে তোমার,–ভাব-কান্তি অঙ্গীকরি’—এবার,–আমি যে গৌরাঙ্গ হব [মাতন]
এবার আমি,–নদীয়াতে করব উদয়।।’’
আমার,–বাসনা পূরণ হবে কি না—তাই—পরীক্ষা করে দেখিলাম
আমার,–গৌর হওয়া হবে কি না—তাই,–পরীক্ষা করে দেখিলাম
আমার,–গৌররূপে তোমার মন মজেছে—তাই,–জানিলাম বাসনা পূরণ হবে
সাধিব মনের সাধা, আমার,–ঘুচিবে সকল-বাধা,
ঘরে ঘরে বিলাব প্রেমধন।’’
মিছামিছি তুমি কেঁদ না রাধে—এবার,–আমি যে গৌরাঙ্গ হব
তোমার,–প্রেমধন বিলাইব—এবার, আমি যে গৌরাঙ্গ হব
শ্যাম-নগরের ঐ কথা শুনি’—তখন,–কিশোরী কেঁদে বলেন কাতরে
শুনে প্রাণ কেঁদে উঠল—এ-কি নিদারুণ-কথা বঁধু
তুমি ব্রজ ছেড়ে যাবে—এ-কি নিদারুণ-কথা বঁধু
ব্রজপুর বাঁধব থেহা।।’’
তুমি ব্রজ ছেড়ে গেলে—কেমন করে ধৈর্য্য ধরবে
ওহে ব্রজের জীবন,–তুমি ব্রজ ছেড়ে গেলে—ব্রজবাসী, কেমন করে
জল বিনু মীন, আর,–ফণী মণি বিনু,
তেজয়ে আপন-পারণ।’’
মণি ছাড়া কি ফণী বাঁচে—জল বিনে কি মীন বাঁচে
তিল আধ তুঁহারি, দরশ বিনু তৈছন হে,
ব্রজপুর গতি তুঁহু জান।।’’
তুমি ব্রজ ছেড়ে গেলে—ব্রজবাসী,–কেউ ত’ প্রাণে বাঁচবে না হে
এ,–‘‘সকল সমাধি,’’
পাওবি কোনহি সুখ।’’
এই ব্রজজনে বধি—আবার কোন খেলা খেলবে
কিয়ে আন জন, তুয়া মরমহি জানব হে,
তছু লাগি বিদরয়ে বুক।।
এই,–বৃন্দাবন-কুঞ্জ, নিকুঞ্জহি নিবসয়ি,
তুহুঁ বর নাগর কান।
অহনিশি তুঁহারি, দরশ বিনু ঝুরব হে,
তেজব সবহুঁ পরাণ।।
অগ্রজ-সঙ্গে, রঙ্গে যমুনা-তটে
সখা-সঙ্গে করবি বিলাস।
পরিহরি মুঝে কিয়ে, প্রেম প্রকাশবি হে,’’
আমাদের,–কিশোরী কেঁদে আকুল হয়ে বলে—বঁধু,–আমাকেও কি ছেড়ে যাবে
তোমার,–তিন-বাঞ্ছা পূরাইতে—বঁধূ,–আমাকেও কি ছেড়ে যাবে
না বুঝয়ে বলরামদাস।।’’
মিছামিছি তুমি কেঁদ না রাধে
ব্রজপুর-প্রেম করব পরকাশ।।
এই,–ব্রজপুর পরিহরি কবহুঁ না যাব।’’
আমি যেখানে ব্রজ সেখানে—ব্রজ ছেড়ে কোথাও যাব না রাই
ব্রজ বিনা প্রেম না হোয়ব লাভ।।
গোপ গোপাল সব-জন মেলি।’’
কাকেও ছেড়ে যাব না রাই—
সকলেই আমার সঙ্গে যাবে—কাকেও ছেড়ে যাব না রাই
নদীয়া-নগর-পর করবহুঁ কেলি।।’’
এই সব ব্রজজন মেলি—আবার-নদীয়ায় করব নব-কেলি
আহা,–তনু তনু মেলি’’
তোমাকে ছেড়ে কোথা যাব-আমি,–একা গৌর হব না রাই
‘‘তনু তনু মেলি’’
রাধে,–তোমাতে আর আমাতে—
‘‘তনু তনু মেলি’’
রাধে,–তোমাতে আর আমাতে—দুজন মিলে গৌর হব
অবরিত বদনে বোলব হরিনাম।।’’
দুজনে মিলে গৌর হব
তোমায় ছেড়ে কোথায় যাব—দুজনে মিলে গৌর হব
‘হরি’ বোলব বলাইব—দুজনে মিলে গৌর হব
ব্রজপুর-ভাবে পূরব মনস্কাম।
অনুভবি জানল দাস বলরাম।।’’
কহে শুন প্রাণনাথ তুমি।
কহিলে সকল তত্ত্ব, বুঝিনু স্বপন সত্য হে,
সেই-রূপ দেখিব যে আমি।।
স্বপনে,–দেখা দিয়ে মন চুরি করেছে—আমি,–সেই মূরতিদ একবার দেখব
আমাকে যে সঙ্গে লবে, দুই তনু এক হবে,
এ,–অসম্ভব হইবে কেমনে।’’
ব্রজের বিশুদ্ধ-প্রেমার –আমরি,–বালাই লয়ে মরে যাই রে
কেবলার গণ কৃষ্ণের—ঐশ্বর্য্য জানেনা রে
আমাদের,–নন্দনন্দন বিনে তারা—আর ত’ কিছু জানে না রে
যশোদাদুলাল বিনে—আর ত’ কিছু জানে না রে
কেবলার গণ কৃষ্ণের—আর ত’ কিছু জানে না রে
ঐশ্বর্য্য দেখিলে কৃষ্ণে—নিজ-সম্বন্ধ মানে না রে
ওহে বঁধূ,–দুই কেমন করে এক হবে—এ যে বড় অসম্ভব কথা
দুই দেহ এক হবে—এ যে বড় অসম্ভব কথা
এই,–কাল গৌর হইবে কেমনে।।
এত শুনি কৃষ্ণচন্দ্র, কৌস্তভের প্রতিবিম্বে,
দেখাইলা শ্রীরাধার অঙ্গ।
আপনি তাহে প্রবেশিলা, দুই তনু এক হৈলা হে,’’
প্রাণ রাধা রাধারমণ—দুজন মিলে গৌর হল
মহাভাব রসরাজ—দুজনে মিলে গৌর হল
নিধুবনে এই কয়ে, দুই তনু এক হয়ে,
আসি,–নদীয়াতে করল উদয়।
সঙ্গেতে সে ভক্তগণে, হরিনাম-সঙ্কীর্ত্তনে,
প্রেম-বন্যায় জগত ভাসায়।।
বাহিরে জীব উদ্ধারণ, আর,–অন্তরে রস আস্বাদন,
ব্রজবাসী-সখা-সখী-সঙ্গে।
বৈষ্ণবদাসের মন, হেরি রাঙ্গা-শ্রীচরণ,
না ভাসিলাম সে সুখ-তরঙ্গে।।’’
এই,–নবদ্বীপের নব-কেলি—কিছুই দেখতে পেলাম না রে
গৌর-গোবিন্দের লীলা—কিছুই দেখতে পেলাম না
সেই,—প্রেম-পুরুষোত্তম-লীলা—কিছুই দেখতে পেলাম না রে
প্রাণ-গৌরাঙ্গের,–পাষাণ-গলান-লীলা—কিছুই দেখতে পেলাম না রে
সে,–কীর্ত্তন-নটন-লীলা—কিছুই দেখতে পেলাম না রে
সুরধুনী-পুলিনে—কীর্ত্তন-নটন-লীলা
ও,–‘‘গমন নটন-লীলা’’
সীতানাথের আনানিধিরগমন নটন-লীলা
আমার,–নদীয়া-বিনোদিয়ার—গমন নটন-লীলা
আমার,–প্রাণ-শচীদুলালিয়ার—গমন নটন-লীলা
আমার,–নিতাই-পাগল-করা-গোরার—গমন নটন-লীলা
গদাধর-নরহরির কাঁধে হাত দিয়া—গমন নটন-লীলা
সুরধুনী-পুলিনে—গমন নটন-লীলা
সার্ব্বভৌমের চৈতন্য-দাতার—গমন নটন-লীলা
রাজা,–প্রাতাপরুদ্রের ত্রাণকারীর—গমন নটন-লীলা
অমোঘের প্রাণদাতার—গমন নটন-লীলা
স্বরূপের সবর্বস্বধনের –গমন নটন-লীলা
রামরায়ের চিত-চোরের—গমন নটন-লীলা
শ্রী,–সনাতনের গতি-গৌরাঙ্গের—গমন নটন-লীলা
শ্রীরূপ-হৃৎকেতন-গোরার—গমন নটন-লীলা
দাস,–রঘুনাথের সাধনের ধনের—গমন নটন-লীলা
শ্রী,–গোপালভট্টের প্রাণ-গৌরাঙ্গের—গমন নটন-লীলা
শ্রী,–লোকনাথের হৃদ্বিহারীর—গমন নটন-লীলা
প্রকাশানন্দের নয়নানন্দের—গমন নটন-লীলা
নদীয়া-ভূমির সুসম্পদ—গমন নটন লীলা
নবদ্বীপের সুসম্পদ—গমন নটন-লীলা
রসময় গৌরাঙ্গ-রায়—চলে যেতে নেচে যায়
নাটুয়া-মূরতি নটন-গতি—চলে যেতে নেচে যায়
ভাব হিল্লোলে হেলে দুলে—চলে যেতে নেচে যায়
চলে যেতে নেচে যায়—সঙ্গীতেতে কথা কয়
শচীদুলাল-প্রাণ-গৌরাঙ্গের—গমনে নটন বচনে গান
নদীয়াবিনোদ-গৌরাঙ্গের—গমনই নটন বচনই গান
কে দেখেছে কে শুনেছে কোথায়—চলতে নাচে বলতে গায়
রসময় গৌরাঙ্গ-রায়—চলতে নাচে বলতে গায়
যেন,–কতশত-কোকিল কুহরিছে
পঞ্চ মরাগ জিনি—যেন,–কতশত-কোকিল কূহরিছে
যেন,–অমিয়া-সিন্ধু উথলিছে
জগৎ–অমৃতময় করবে বলে—যেন,–অমিয়া-সিন্ধু উথলিছে
আমার,–গৌরহরি ‘হরি’ বলিছে—যেন,–অমিয়া-সিন্ধু উথলিছে
‘হরি’ বলে যার পানে চাইছে—তারই আঁখি-মন হরিছে
‘হরি’ বলে যার পানে চাইছে’—
রসের গোরা নেচে নেচে—‘হরি’ বলে যার পানে চাইছে
রঙ্গ বিনে নাহি অঙ্গ, ভাব বিনে নাহি সঙ্গ,’’
আমার,–রঙ্গিয়া-প্রাণ-গৌরাঙ্গের—প্রতি-অঙ্গ রঙ্গে গড়া
অনঙ্গমোহন-গৌরাঙ্গের—প্রতি অঙ্গ রঙ্গে গড়া
ভাবনিধি-প্রাণ-গৌরাঙ্গের—অভাবের সঙ্গ করে না
কম্প, অশ্রু, পুলকাদিভাব-ভূষণে ভূষিত অঙ্গ
অন্তরঙ্গ-ভাবুক-সঙ্গে—নিশিদিশি ভাব-প্রসঙ্গ
আ-রে আমার—গৌর কিশোর-বর
আরে আরে আরে আমার—গৌর কিশোর-বর
রসে তনু ঢর ঢর –গৌর কিশোর-বর
‘রসে তনু ঢর ঢর’—
নবদ্বীপ-সুনাগর—রসে তনু ঢর ঢর
কীর্ত্তন-নাটুয়া-মূরতি—দেখিতে ত’ পেলাম না
ভাই ভাই মিলে কত খুঁজেছি—দেখিতে ত’ পেলাম না
‘ভাই ভাই মিলে কত খুঁজেছি—দেখিতে ত’ পেলাম না
‘ভাই ভাই মিলে কত খুঁজেছি’—
ত্রিকাল-সত্য লীলা জেনে—ভাই ভাই মিলে কত খুঁজেছি
মধুর-নীলাচলে গিয়ে—ভাই ভাই মিলে কত খুঁজেছি
‘মধুর-নীলাচলে গিয়ে’—
শ্রীরথযাত্রা-কালে—মধুর-নীলাচলে গিয়ে
শ্রী,–জগন্নাথের রথের আগে—মধুর-নীলাচলে গিয়ে
দেখিত ত’ পেলাম না
ভাই ভাই মিলে কত খুঁজলাম—দেখিতে ত’ পেলাম না
রাধাভাবে ভোরা গোরা—দেখিতে ত’ পেলাম না[মাতন]
কেঁদে কেঁদে ফিরে এলাম
মনের আশা মনে রেখে—কেঁদে কেঁদে ফিরে এলাম
আগমন-বার্ত্তা শুনে—আবার প্রাণে আশা জাগল
‘আগমন-বার্ত্তা শুনে’—
শ্রী,–বৃন্দাবনে প্রাণ-গৌরাঙ্গের—আগমন-বার্ত্তা শুনে
তাই আমরা এলাম ছুটে
শ্রীগুরুদেবের প্রেরণায়—তাই আমরা এলাম ছুটে
প্রণ-গৌর দেখব বলে—তাই আমরা এলাম ছুটে
কত না খুঁজলাম
এই,–ব্রজবনে বনে বনে –কত না খুঁজলাম
কেমন করে দেখতে পাব
তাঁরা যদি না দেখায়—কেমন করে দেখতে পাব
তাঁরা যদি না দেখায়’—
গৌর যাঁদের হাতে ধরা—তাঁরা যদি না দেখায়
তাঁরা,–আছেন এই বৃন্দাবনে
গৌর যাঁদের হাতে ধরা—তাঁরা,–আছেন এই বৃন্দাবনে
দেখালে দেখাতে পারে—তাঁরা দিলে দিতে পারে
এই ব্রজবনে এসে—কত না ডাকলাম
শ্রীরূপ শ্রীসনাতন—সবাই,–আছেন এই বৃন্দাবনে
ভট্টযুগ-শ্রীজীব-গোসাঞি—সবাই,–আছেন এই বৃন্দাবনে
লোকনাথ-ভূগর্ভ-গোসাঞি—সবাই,–আছেন এই বৃন্দাবনে
লোকনাথ-ভূগর্ভ-গাসাঞি—সবই,–আছেন এই বৃন্দাবনে
ত্রিকালসত্য-লীলায় তাঁরা—সবাই,–আছেন এই বৃন্দাবনে
তাঁহাদের বসতি-স্থানে গিয়ে—ভাই ভাই মিলে কত ডাকলাম
ও প্রভু-রূপ-সনাতন—একবার দেখা দাও
প্রাণ—গৌর লয়ে কোথায় আছ—একবার দেখা দাও
ত্রিকালসত্য,–লীলায় এই ব্রজবনে—এসেছেন গৌর তোমাদের কাছে
বসিয়া তোমরা নিরজনে—গৌর ভোগ-করছ গোপনে
হায়,–ভট্টযুগ—শ্রীজীব-গোসাঞি—একবার দেখা দাও
হা,–ভূগর্ভ-শ্রীলোকনাথ—একবার দেখা দাও
এলাম সে,–শ্রীরাধাকুণ্ড-তীর-কেউ ত’ দেখা দিলে না
‘এলাম,–শ্রীরাধাকুণ্ড-তীর’—
ভাই ভাই ভাই মিলে—এলাম,–শ্রীরাধাকুণ্ড-তীর
মনে মনে অনুমান করলাম
এসেছেন রাধাকুণ্ডৃ-তীরে
গিয়াছেন ইস্ট-গোষ্ঠীর কারণে
ভাই ভাই মিলে গেলাম সবে
কত না ডাকলাম
হা দাস-গোসাঞি বলে—কত না ডাকলাম
‘হা দাস-গোসাঞি বলে’—
রাধাকুণ্ড-তীরে গিয়ে—হা দাস-গোসাঞি বলে
এই ত’ রাধাকুণ্ড-তীর
কোথায় আছ দাস-গোসাঞি—এই ত’ রাধাকুণ্ড তীর
কেঁদে কেঁদে কত ডাকলাম—কেউ ত’ দেখা দিলে না
কে-বা,–গৌর-সন্ধান বলে দিবে—তবে,–কোথা বা যাব রে
বেড়াইব বনে বনে
যাব গৌরগণের কাছে
যাঁরা,–ব্রজবনে বাস করছেন—যাব,–সেই গৌরগণের কাছে
‘যাঁরা,–ব্রজবনে বসে করছেন’—
যাঁরা,–রূপ-সনাতনের সনে—ব্রজবনে বাস করছেন
পরাণ-গৌরাঙ্গ-সন্ধান—সুধাইব তাঁদের কাছে
আসবেন সবে বৃন্দাবনে
ব্রজের গৌরগণ সব—আসবেন সবে বৃন্দাবনে
পরাণ-গৌরাঙ্গগণ—একঠাঁই পাব দরশন
সবাই দিয়েছেন দরশন
অহৈতুকী-কৃপার স্বভাবে—সবাই দিয়েছেন দরশন
পরাণ-গৌরাঙ্গগণ—সবাই দিয়েছেন দরশন
কাঙ্গালের এক নিবেদন শুন
দয়া করে বলে দাও
ওগো,–ভুবন-পাবন-গৌরাঙ্গগণ—দয়া করে বলে দাও
ওগো তোমাদের চরণে ধরি—দয়া করে বলে দাও
কোথা গেলে তাঁদের দেখা পাব—দয়া করে বলে দাও
‘কোথা গেলে তাঁদের দেখা পাব’—
যাঁদের,–আনুগত্যে করছে ব্রজে বাস—কোথা গেলে তাঁদের দেখা পাব
কোথায় প্রভু রূপ-সনাতন—দয়া কর বলে দাও
শ্রীরূপ-সনাতন-ভট্টরঘুনাথকে—কোথায় গেলে দেখতে পাব
শ্রীজীব,–গোপালভট্ট-দাস-রঘুনাথকে–কোথায় গেলে দেখতে পাব
একবার সুধাব
তাঁদের চরণে ধরে—একবার সুধাব
চাই না আমি দেখতে চাই না
দেখবার আমার অধিকার নাই
কেবল,–সুধাব তোমাদের প্রাণ-গৌরাঙ্গে
সকল-সুখেই করেছ বঞ্চিত
তখন জনম দাও নাই মোদের—সকল-সুখেই করেছ বঞ্চিত
অদর্শন-শেল বুকে আছে—তবু,–এক-আশা বুকে জাগছে
সুধাব তোমাদের প্রাণ-গৌরাঙ্গে—সে-দিনের আর কদিন বাকী
সর্ব্বত্র প্রচার হইবে মোর নাম।।’’ রে !!
তোমার,–‘বিশ্বম্ভর’ নাম পূর্ণ হবার—সে-দিনের আর কদিন বাকী
নাম-প্রেমে বিশ্ব ভরবে—কত-দিনে পূর্ণ হবে
যেখানে যাব দেখতে পাব
ঘরে ঘরে সবাই ঝুরবে
ঘরে ঘরে সবাই ঝুরছে
ম্লেচ্ছ,–যবন-আদি-নর-নারী—ঘরে ঘরে সবাই ঝুরছে
সোনার গৌর প্রভু বলে—ঘরে ঘরে সবাই ঝুরছে
ঘরে ঘরে সবাই ঝুরবে—কত-দিনে দেখতে পাব
আর,–হবিবোলা রসের বদন—কত-দিনে দেখতে পাব
হা,–প্রভু-রূপ-সনাতন-পুরাও মোদের এই বাসনা
কোথায় আছে,–প্রাণ-গৌর বলে দিয়ে—পুরাও মোদের এই বাসনা
এই বাসনা পূরাও মোদের—দেখব গৌর-প্রেমের পাথার
পরাণ-গৌরাঙ্গগণ—এই বাসনা পুরাও মোদের
গৌর-প্রেমের কান্না দেখে—পাগল হয়ে বেড়াব মোরা
ভাই ভাই ভাই মিলে—পাগল হয়ে বেড়াব মোরা
জপ, হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।’’
‘‘গৌরহরি বোল, হরিবোল, হরিবোল, হরিবোল।’’
———
প্রেম্সে কহো শ্রীরাধে শ্রীকৃষ্ণ বলিয়ে—
প্রভু—নিতাই-শ্রীচৈতন্য-অদ্বৈত-শ্রীরাধারাণীকী জয় !
শ্রীনিধুবনকী জয় !
শ্রীবৃন্দাবনেশ্বরীকী জয় !
প্রেমদাতা-পরমদয়াল-পতিতপাবন-শ্রীনিতাইচাঁদকী জয় !
করুণাসিন্ধু-গৌরভক্তবৃন্দকী জয় !
শ্রীশ্রীনাম-সঙ্কীর্ত্তনকী জয় !
খোল-কলতালকী জয় !
শ্রীনবদ্বীপধামকী জয় !
শ্রীনীলাচলধামকী জয় !
চারি-ধামকী জয় !
চারি-সম্প্রদায়কী জয় !
অনন্তকোটী-ব্রাহ্মণ-বৈষ্ণবকী জয় !
পরমকরুণ-শ্রীগুরুদেবকী জয় !