(আশ্বিন-শুক্লাদ্বাদশী)
‘‘ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।।
শ্রীগৌরাঙ্গের আজ্ঞা পেয়ে—রূপ সনাতন গেল ব্রজে
হিরণ্য-গোবর্দ্ধনের পুত্র—সেই ত’ রঘুনাথ দাস
‘হিরণ্য-গোবর্দ্ধনের পুত্র’—
সপ্তগ্রামের অধিপতি—হিরণ্য-গোবর্দ্ধনের পুত্র
রঘুনাথের স্বাভাবিক গৌর-অনুরাগ
বয়ঃপ্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে—রঘুনাথের স্বাভাবিক গৌর-অনুরাগ
পরস্পর,–লোকমুখে গৌর-কথা শুনে—রঘুনাথের স্বাভাবিক গৌর-অনুরাগ
আরও গূঢ়-কথা আছে
রঘুনাথের,–স্বাভাবিক অনুরাগ প্রকাশ পাবার—আরও গূঢ়-কথা আছে
স্বাভাবিক গৌর-অনুরাগের—আরও গূঢ়-কথা আছে
ঠাকুর-শ্রীহরিদাসের—বাল্যকালে পেয়েছেন দর্শন
রঘুনাথের মনে ছিল আশ
যাইবার গৌরাঙ্গেরপদ-পাশ—বহুদিন হইতে মনে আশ
লয়ে অতি উৎকণ্ঠা অন্তরে—অনেক-দিন ছিলেন ধৈর্য্য ধরে
শান্তিপুরে সীতানাথের ঘরে—প্রাণগৌর-আগমন-বার্ত্তা শুনে
প্রভুর সন্ন্যাসের পরে—প্রাণগৌর-আগমন—বার্ত্তা শুনে
শ্রীসন্ন্যাস-গ্রহণের পরে—প্রাণগৌর-আগমন-বার্ত্তা শুনে
‘শ্রীসন্ন্যাস-গ্রহণের পরে’—
আর,–রামকেলি হতে ফিরবারকালে—শ্রীসন্ন্যাস-গ্রহণের পরে
গেলেন রঘুনাথ প্রাণের টানে
দীন-হীন-কাঙ্গালের বেশে—গেলেন রঘুনাথ প্রাণের টানে
দুইবার অতি গোপনে –গেলেন রঘুনাথ প্রাণের টানে
করিবারে প্রভুর দর্শনে—গেলেন রঘুনাথ প্রাণের টানে
কিন্তু,—দুইবার ফিরায়ে দিলেন প্রভু
নানামতে প্রবোধ দিয়ে—কিন্তু,–দুইবার ফিরায়ে দিলেন প্রভু
ক্রমে ক্রমে পায় জীব ভবসিন্ধুকূল হে।।
মর্কট-বৈরাগ্য না কর লোক দেখাইয়া হে।
যথাযোগ্য বিষয় ভুঞ্জ অনাসক্ত হইয়া হে।।’
দুইবার রঘুনাথ—কেঁদে কেঁদে এলেন ফিরে
বাধা পেয়ে হতাশ হয়ে—কেঁদে কেঁদে এলেন ফিরে
প্রভু-আজ্ঞা শিরে ধরে—কেঁদে কেঁদে এলেন ফিরে
প্রাণের কথা প্রামে ধরে—কেঁদে কেঁদে এলেন ফিরে
ব্যাকুল হয়ে সদাই কাঁদে
নিরজনে নিজ-মনে—ব্যাকুল হয়ে সদাই কাঁদে
‘কতদিনে কৃপা হবে বলে’—
হা গৌর ! প্রাণগৌর—কতদিনে কৃপা হবে বলে
এবার আর প্রাণ মানিছে না
দুইবার ফিরে এসেছেন ঘরে
কিছুদিন পরে রঘুনাথ
পরস্পর শুনতে পেলেন
সপার্ষদে প্রভু নিতাই
আসিয়াছেন পানিহাটীতে
নিতাই আইলা পানিহাটীতে
মধুর-নীলাচল হতে—নিতাই আইলা পানিহাটীতে
গৌর-আজ্ঞায় নাম প্রেম বিলাতে—নিতাই আইলা পানিহাটীতে
চলিলেন নিতাই-পাশে
অতি-গোপনে ছদ্মবেশে—চলিলেন নিতাই-পাশে
নিঃসঙ্গে দীনবেশে—চলিলেন নিতাই-পাশে
দূর হতে দেখতে পেলেন
আছেন,–সঙ্কীর্ত্তনে উনমত
নিজগণ-সনে নিতাই-সু্ন্দর—আছেন,–সঙ্কীর্ত্তনে উনমত
অনুক্ষণ কীর্ত্তন করে—কীর্ত্তন-রঙ্গে ক্লান্ত হয়ে
গঙ্গাতীরে বটবৃক্ষমূলে—নিতাই বসিলেন পিণ্ডোপরে
সেই বৃক্ষমূলে গণ-সনে—নিতাই বসিলেন পিণ্ডোপরে
সেই বৃক্ষ সাক্ষ্যরূপে—অদ্যাপিও বিরাজিছে
গঙ্গতীরে পানিহাটীতে—অদ্যাপিও বিরাজিছে
দূর হতে রঘুনাথ—করিলেন দণ্ডবৎ
জানাইলেন নিতাইচাঁদে
দেখ দেখ দেখ প্রভু
তোমায় দণ্ডবৎ করে
রঘুনাথ অদূরে—তোমায় দণ্ডবৎ করে
শ্রীরঘুনাথ দাস—চির,–পরিচিত নিতাইচাঁদের
অমনি উঠিলেন নিতাই
স্বাভাবিক স্নেহের বশে—অমনি উঠিলেন নিতাই
বাহু পসারি কৈলেন কোলে
বলিলেন শ্রীমুখেতে
আজ দণ্ড দিব তোরে
চোরা তোরে পেয়েছি কাছে—আজ দণ্ড দিব তোরে
লুকায়ে থাক দূরে দূরে—আজ দণ্ড দিব তোরে
এই লীলার রহস্য—অনুভব কর ভাই রে
কেন ‘চোরা’ সম্বোধন কৈলেন—অনুভব কর ভাই রে
গৌর আমার নিজস্ব-ধন—নিতাইচাঁদের মনে এই অভিমান
নিতাইচাঁদ রঘুনাথে—সেই অভিমানে বলছেন
আমার ধন আমায় না বলে—গিয়েছিলে ভোগ করিতে
চোরা তোরে পেয়েছি কাছে—আজ দণ্ড দিব তোরে
মহোৎসবের আজ্ঞা দিয়ে—রঘুনাথে কৈলেন কৃপাদণ্ড
দণ্ডমহোৎসব বলে—আজও তার খ্যাতি আছে
চিড়া-দধি-মহোৎসব বলে—আজও তার খ্যাতি আছে
পড়ি’ নিতাই-পদতলে—রঘুনাথ কাঁদে রে
বল বল প্রভু নিতাই
আমি কি তোমার গৌরাঙ্গ পাব—বল বল প্রভু নিতাই
করিলেন শকতি সঞ্চার
তাঁর মাথে চরণ দিয়ে—করিলেন শকতি সঞ্চার
স্থির করিলেন বুকে ধরে
বলিলেন,–স্থির হও রঘুনাথ
অচিরে পূরিবে সাধ—স্থির হও রঘুনাথ
রঘুনাথ ফিরে এলেন গৃহে
কবে,–গৌরপদে ঠাঁই পাব—সদাই ব্যাকুলিত চিত
রূপ-সনাতন গেল ব্রজে—শ্রীগৌরাঙ্গে আজ্ঞা পেয়ে
শুনি’,–রূপ-সনাতন গেল ব্রজপুরে—আর ত’ ঘরে রইতে নারে
রঘুনাথ উৎকণ্ঠিত-মনে—দিন গণিছেন নিশিদিনে
কবে যাব গৌরচরণে—দিন গণিছেন নিশিদিনে
শুনি’,—রূপ-সনাতন গেল ব্রজে—প্রাণ আজ উঠল কেঁদে
রঘুনাথ সঙ্কল্প কৈল—আর ঘরে নাহি থাকব
গৌরপদে বিকাইব—আর ঘরে নাহি থাকব
আমি,–থাকব না আর এ সংসারে
রূপ-সনাতন গেল ব্রজপুরে—আমি,–থাকব না আর এ সংসারে
তাঁদের,–ব্রজে গমন-বার্ত্তা-সনে—কে যেন তাঁরে বলল প্রাণে
আইস রঘুনাথ আর কেন—কে যেন তাঁরে বলল প্রাণে
আইস আমার রঘু বলে—কে যেন তাঁরে ডাকল প্রাণে
ডাকার সনে টানল প্রাণে—কে যেন তারে ডাকল প্রাণে
সব,–ছাড়িয়া চলিলা প্রভু-পাশ।।’’
ইন্দ্রসম ঐশ্বর্য্য-রাশি—বামপদে ঠেলি রে
নব-লক্ষের ঐশ্বর্য্য—থুথু করে ত্যাগ করে
বিষয়ে গৌর মিলে না বলে—মলবৎ ত্যাগ করে
অতুল ঐশ্বর্য্যরাশি—কিছুতেই বাঁধতে পারল না রে
আমার,–গৌর-প্রেমের বাউলে রে—বল কে বাঁধিতে পারে
‘আমার,–গৌর-প্রেমের বাউলে রে’—
গৌর-গুণে যাঁর মন মজেছে—আমার,–গৌর-প্রেমের বাউলে রে
দেহ-স্মৃতি কাঁহা তাঁর
গৌরভাবে মাতা প্রাণ যাঁর—দেহ-স্মৃতি কাঁহা তাঁর
দেহ-স্মৃতি নাহি যাঁর-সংসার-কূপ কাঁহা তাঁর
গৌর-কৃপা হয়েছে যাঁরে—তাঁরে কি বাঁধিতে পারে
ছার-বিষয়-বন্ধনে—তাঁরে কি বাঁধিতে পারে
গৌর,–চেয়েছে যাঁর গৌর-গুণে—কি করবে তাঁরে বিষয়-বন্ধনে
রঘুনাথের পিতা তাঁরে—বেঁধেছিলেন বিবাহ-বন্ধনে
তাঁর,–গৌর-অনুরাগে জেনে—বেঁধেছিলেন বিবাহ-বন্ধনে
গৌর-পদে যাঁর মজেছে মন—কিন্তু,–কি করবে ছার-সংসার-বন্ধন
যে বাঁধা-পড়েছে গৌর-প্রেম-ডোরে—কে রাখিতে পারে ধরে
অতুল-ঐশ্বর্য্য অপ্সরা-নারী—ফিরেও ত’ চাইল না রে
দেহ-স্মৃতি নাহি যাঁর—সংসার-কূপ কাঁহা তাঁর
সব ছেড়ে হা গৌর বলে—চলিল গৌর-প্রেমের পাগল
সপ্তদশ বর্ষ বয়ঃক্রম-কালে—চলিল গৌর-প্রেমের পাগল
দীন হীন কাঙ্গালের বেশে—চলিল গৌর-প্রেমের পাগল
সব ছেড়ে ঝাঁপ না দিলে-মুখের কথায় কি গৌর মিলে
‘সব ছেড়ে ঝাঁপ না দিলে’—
প্রাণ-গৌর হে যা কর বলে—সব ছেড়ে ঝাঁপ না দিলে
চলিল গৌর-প্রেমের পাগল
পেয়ে নিতাই-কৃপাবল—চলিল গৌর-প্রেমের পাগল
দাস-রঘুনাথের বৈরাগ্য কেবল—সবই,–নিত্যানন্দ-কৃপাবল
দাস-রঘুনাথের দ্বারে—প্রভু,–দেখাইলেন জগতেরে
আপনার প্রাপ্তির উপায়—প্রভু,–দেখাইলেন জগতেরে
আমি,–বিকায়েছি নিতাই-ঠাঁই—আমায়,–দিবার আমার অধিকার নাই
নিতাই-চাঁদের কৃপা হলে—তবে ত আমারে মিলে
উঠি রাত্রি-শেষ-ভাগে, জানি বা প্রহরী জাগে,
পথ ছাড়ি বিপথে চলিলা।’’
গৌর-সেবা-শকতি নিত্যানন্দ—সেই ত’,–পথে লয়ে যায় তারে
‘‘মনোদ্বেগে সদা ধায়,’’
সেই,–হরিবোলা রসের বদন—কতক্ষণে দেখতে পাব বলে
সঙরি নিতাই-যুগল-চরণে—যায় রঘুনাথ ব্যাকুল-প্রাণে
রঘুনাথ পথে যেতে—মনে মনে ভাবে রে
কথা কি ফলবে
আমার ভাগ্যে নিতাই-চাঁদের—কথা কি ফলবে
পানিহাটী-গ্রামে দেখা দিয়ে—প্রভু নিতাই বল্লেন সাধ পূরবে
গৌরের রাতুল-চরণ-যুগল—হায় আমি কি দেখা পাব
সোণার গৌরাঙ্গ প্রভু—একবার দেখা দিও হে
যাঁর,–হৃদে গৌর-বাস সদা—কি করবে তাঁরে ক্ষুধা তৃষ্ণা
যাঁর,–হৃদে জাগে গোরাশশী—তাঁর,–আবার কিসের দিবানিশি
শ্রীগৌরাঙ্গ-অনুরাগে—দেহ স্মৃতি নাই রে
আহার নাই নিদ্রা নাই—চলিল গৌর-প্রেমের পাগল
দু-নয়নে ধারা বহে অবিরল—চলিল গৌর-প্রেমের পাগল
স্থাবর জঙ্গম যারে দেখে—করজোড়ে ভিক্ষা মাগে
যেন আমি দেখতে পাই
মধুর-নীলাচলে গিয়ে—যেন আমি দেখতেপাই
শচীদুলাল প্রাণগৌরাঙ্গে—যেন আমি দেখতে পাই
একদিন ভিক্ষাছলে, গো-বাথানে সন্ধ্যাকালে,
হা চৈতন্য বলিয়া বসিলা।
এক গোপ দুগ্ধ দিলা, তা খাইয়া বিশ্রামিলা,
সেই রাত্রি তাঁহাই বঞ্চিলা।।’’
রঘুনাথ দাস-গোসাঞির—কি বলব বৈরাগ্যের কথা
সে অঙ্গ বাথানে গড়ি যায়।’’
কাঁধে করে বৈষ্ণবের ঝোলা
রাজার রাজত্ব ছাড়ি—কাঁধে করে বৈষ্ণবের ঝোলা
শ্রীগৌরাঙ্গ-অনুরাগে—লে আজ,–শুতিয়াছে গো-বাথানে
যে,–শোয় না কভু পালঙ্ক বিনে—সে আজ,–শুতিয়াছে গো-বাথানে
বলি,–হা প্রাণ-গোরারায়—গো-বাথানেতে গড়ি যায়
এত অনুরাগ না হইলে—মুখের কথায় কি গৌর মিলে
যেই ঘোড়া দোলা বিনে, পদব্রজ নাহি জানে,
সে পথ হাঁটয়ে রাঙ্গা-পায়।।
যে না হইতে দণ্ডচারি, তোলা জলে স্নান করি’,
ষড়রসে করিত ভোজন।
এবে যদি কিছু পান, সন্ধ্যাকালে তাহা খান,
না পাইলে অমনি গমন।।’’
কেউ দিলে তবে খায়—আহারের চেষ্টা নাই
উত্তরিলা নীলাচলপুরে।
দেখিয়া শ্রীমন্দির, নয়নে গলয়ে নীর,
হা চৈতন্য ডাকে উচৈঃস্বরে।।’’
দূর হতে শ্রীমন্দির দেখে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
উপনীত সিংহদ্বারে
হা গৌর বলে কাঁদতে কাঁদতে—উপনীত সিংহদ্বারে
নীলাচল-বাসী নর নারী—যারে দেখে শুধায় তারে
তোমাদের,–হাতে ধরি পায়ে পড়ি—বলে দাও নীলাচল-বাসী
কোথা গেলে তার দেখা পাব—বলে দাও নীলাচল-বাসী
নাম যাঁর শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য।’’
সে যে আমার,–শচীসুত গুণ-ধাম—যাঁর—শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য নাম
আমরা,–ডাকি তাঁরে শচীদুলাল বলে—শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য নাম এই নীলাচলে
কেঁদে কেঁদে রঘুনাথ শুধায়—কোথা আছে সে ন্যাসী-রতন
গৌর-বরণ হিরণ-পিধন—কোথা আছে সে ন্যাসী-রতন
গৌর-বরণ যুবা-সন্ন্যাসী—কোথা আছে দাও বলি’
গৌর-বরণ নবীন-সন্ন্যাসী—আমি,–তাঁর দর্শনে অভিলাষী
করজোড়ে মিনতি করি—বলে দাও গো দয়া করি’
কহে মুঞি অকিঞ্চন, দুরাচার মন্দ হীন,
কাঁহা মুঞি রঘুনাথ দাস।
যাঁহার দর্শনমাত্র, উলসিত সর্ব্ব-গাত্র
তাঁর পদরেণু মোর আশ।’’
মুঞি দুরাচার মন্দহীন—কোন গুণে তাঁর দেখা পাব
বামনের চাঁদ ধরিতে আশি—তৈছে মোর অভিলাষ
রঘুনাথ দাস গোসাঞি—এত বলি গড়ি যায়
জগন্নাথের সিংহদ্বারে—এত বলি’ গড়ি যায়
প্রাণের রঘু ডাকে তাঁরে—আর কি প্রভু রইতে পারে
রঘুনাথ কাঁদে সিংহদ্বারে—আর কি প্রভু রইতে পারে
টান পড়েছে প্রাণে প্রাণে—আর কি প্রভু রইতে পারে
স্বরূপ-রামানন্দ-সনে—কৃষ্ণ-প্রসঙ্গে ছিলেন নিরজনে
নিভৃত-গম্ভীরা-ভবনে—কৃষ্ণ-প্রসঙ্গে ছিলেন নিরজনে
স্বরূপ রামরায় বলে এ কি এ কি—অকস্মাৎ উঠিলেন চমকি
অকস্মাৎ এমন করে—কেন প্রভু চঞ্চল হলে
বড়ই ব্যাকুল-প্রাণে—প্রাণ গৌর বলেন মধুর-স্বরে
জগন্নাথের সিংহদ্বার-পানে-কে যেন,—টানছে আমায় প্রাণে প্রাণে
কে টানে আমায় সিংহদ্বারে—আর ত রইতে নারি ঘরে
অকস্মাৎ গমন দেখে
স্বরূপ রামরায় ছুটলেন ত্বরা করে
প্রাণ—গৌরহরির পিছে পিছে—স্বরূপ রামরায় ছুটলেন ত্বরা করে
রঘুনাথের আকর্ষণে—গৌর,—উপনীত সিংহদ্বারে
দূর হতে দেখতে পেয়ে
রঘুনাথ নিজ-পরাণ-নাথে—দূর হতে দেখতে পেয়ে
নয়ন দরদর-ধারে—কেঁদে উঠলেন দ্বিগুণ-বেগে
অভিমানে আকুল হয়ে—কেঁদে উঠলেন দ্বিগুণ-বেগে
এতদিনে দয়া হল কি বলে—কেঁদে উঠলেন দ্বিগুণ-বেগে
এতদিনে কি মনে পড়েছে বলে—কেঁদে উঠলেন দ্বিগুণ-বেগে
রঘুনাথের কাছে বাহু পসারি’—ছুটে গেলেন গৌরহরি
প্রেমে ছলছল দুটী আঁখি—ছুটে গেলেন গৌরহরি
রঘুনাথ বলেন কাতরে
ভাসি দুটী নয়ন-ধারে—রঘুনাথ বলেন কাতরে
আমি,–অস্পৃশ্য বিষয়-সেবী-আমায় তুমি ছুঁয়ো না প্রভু
আমি,–তোমা স্পর্শের যোগ্য নই—আমায় তুমি ছুঁয়ো না প্রভু
প্রাণগৌর-গণ যত—দৈন্য-ভূষণে বিভূষিত
এই দৈন্যে কৃষ্ণ বশ—দৈন্য—ভূষণে বিভূষিত
ে
আমরা,–গরব করে বলতে পারি—এ দৈন্য কি আর কোথাও আছে
গৌরগণ বিনে এ জগতে—এ দৈন্য কি আর কোথাও আছে
রঘুনাথের কোন বারণ—মানিলেন না শচীনন্দন
এস আমার রঘু বলে—বাহু পসারি কৈলেন কোলে
দৈন্য সম্বরণ কর বলে—বাহু পসারি কৈলেন কোলে
ও আমার প্রাণের রঘু—কর দৈন্য সম্বরণ
তোমার,–দৈন্যে ফাটে মোর মন—কর দৈন্য সম্বরণ
কৃপাশক্তি সঞ্চারিয়ে—রঘুনাথে স্থির কৈলেন
যাঁর প্রাণ তাঁরে দিয়ে—রঘুনাথ স্থির হলেন
রঘুনাথে স্থির করি
সঁপে দিলেন স্বরূপের করে
রীতিমত,–ভজন-প্রণালী শিখাবার তরে—সঁপে দিলেন স্বরূপের করে
সাধন-প্রণালী শিখায়ো বলে—সঁপে দিলেন স্বরূপের করে
সেইদিন হতে রঘুনাথে—আদর করে ডাকতেন প্রভু
ও স্বরূপের রঘু বলে—আদর করে ডাকতেন প্রভু
২নং পদ
পরম বৈরাগ্য উপজিলা।
দারা গৃহ সম্পদ, নিজ রাজ্য অধিপদ,
মলপ্রায় সকলি ত্যজিলা।।
পুরশ্চর্য্য কৃষ্ণ-নামে, গেলা শ্রীপুরুষোত্তমে,’’
রঘুনাথ দাস গোসাঞি—কৃষ্ণ-নামে করেন পুরশ্চরণ
পাইতে গৌরাঙ্গ-চরণ—কৃষ্ণ-নামে করেন পুরশ্চরণ
গৌরগণের চরিতে—অনুভব কর ভাই রে
শ্রীগুরু-চরণ হৃদে ধরে—অনুভব কর ভাই রে
পাবার লাগি গৌর-চরণ—তাঁরা করেন কৃষ্ণ-ভজন
শ্রীগৌরাঙ্গ-সেবা আশয়—তাঁদের কৃষ্ণ-ভজন মুখ্য নয়
শ্রী,–গৌরাঙ্গেপ পদ-যুগ সেবে।’’
শ্রীদাস-রঘুনাথের—কি বলব ভজনের কথা
অপূর্ব্ব বৈরাগ্যের কথা—সঙরিলে প্রাণ কেঁদে উঠে
অযাচক-বৃত্তি করে
জগন্নাথের সিংহ-দ্বারে—অযাচক-বৃত্তি করে
হা,–গৌর বলে অঝোরে ঝুরে—অযাচক-বৃত্তি করে
কারে কিছু নাহি চায়—যেচে দিলে তবে খায়
না দিলে উপবাস—যেচে দিলে তবে খায়
গৌর-কৃপা পাবার লাগি’—সিংহ-দ্বারে অযাচক-বৃত্তি
তারপর তাও ছাড়ি দিলেন
ছত্রে ছত্রে মেগে খায়
গৌর বলে কাঁদে সদাই—ছত্রে ছত্রে মেগে খায়
তারপর অদ্ভুত বৈরাগ্য
বলতে বুক ফেটে যায়—তারপর অদ্ভুত বৈরাগ্য
তেলেঙ্গা গাই-এর পরিত্যক্ত—গলা-প্রসাদ বেছে খায়
যা গাভীতেও খেতে নারে—গলা—প্রসাদ বেছে খায়
হা,–গৌর বলে ভাসে নয়ন-ধারায়—গলা—প্রসাদ বেছে খায়
প্রেমময় গৌরহরি—পরস্পর শুনতে পেলেন
রঘুনাথের এই ব্যবহার—পরস্পর শুনতে পেলেন
দেখাইলেন জগতেরে
প্রিয়-রঘুনাথের দ্বারে—দেখাইলেন জগতেরে
ত্যাগ বৈরাগ্য কারে বলে—দেখাইলেন জগতেরে
আপন মনে প্রসাদ বাছছেন
হা,–গৌর গৌর বলে কাঁদছেন—আপন মনে প্রসাদ বাছছেন
নয়ন-জলে ভেসে যায়—এক এক রঞ্চ মুখে দেয়
দাস-রঘুনাথের রীতি—দূর হতে দেখলেন প্রভু
এক,–কণিকা-প্রসাদ তুলে নিলেন
রঘুনাথের কর হতে—এক,—কণিকা-প্রসাদ তুলে নিলেন
ছিঃ ছিঃ এ কি রঘুনাথ
এমন সুধা একা আস্বাদ করছ
আমাকে বঞ্চিত করে—এমন সুধা একা আস্বাদ করছ
হায় প্রভু কি করলে বলে—রঘুনাথ বক্ষে কর হানিলেন
রঘুনাথে করলেন কোলে
ভাসি দুটী নয়ন-জলে—রঘুনাথে করলেন কোলে
এস প্রাণের রঘু বলে—রঘুনাথে করলেন কোলে
সাধে কি গলে শিলা
না হলে এমন লীলা—সাধে কি গলে শিলা
দাসের গুণ কি প্রভুর গুণ—কার গুণ গাইব রে
যেমন প্রভু তেমনি দাস—কার গুণ গাইব রে
সে মধুর লীলা কৈ—সে দাস কৈ সে প্রভু কৈ
নয়ন-গোচর কবে হবে।।’’
শ্রীরঘুনাথ দাস—আদর্শ গৌরাঙ্গ-দাস
গৌরদাস বলে পরিচয় দিয়ে—নামে কলঙ্ক রটালাম
আমাদের পরিচয়ে—দাস-নাম কলঙ্কিত হল
গোবর্দ্ধনের শিলা গুঞ্জাহারে।
ব্রজবনে গোবর্দ্ধনে, শ্রীরাধিকার শ্রীচরণে,
সমর্পণ করিল তাহারে।।’’
নিজ-বক্ষঃস্থিত গুঞ্জাহার’—
গোবর্দ্ধন-শিলা আর—নিজ-বক্ষঃস্থিত গুঞ্জাহার
শ্রীমুখে বল্লেন প্রভু
রঘু—এই তোমার যুগল-সেবা
এই নাও রঘুনাথ—এই তোমার যুগল-সেবা
গোবর্দ্ধন-শিলা গুঞ্জামালা—এই তোমার যুগল-সেবা
গুঞ্জা রাধা, গিরিধারী কৃষ্ণ—রঘু,–এই তোমার যুগল-সেবা
ব্রজবনে গোবর্দ্ধনে—বাসের আজ্ঞা কৈলেন
শ্রীরঘুনাথ দাস গোসাঞির—কি বলব অনুরাগের কথা
শুনলে পাষাণ ফেটে যায়—কি বলব অনুরাগের কথা
বিরহে আকুল ব্রজে গেলা।।’’
দেহত্যাগ করি’ মনে, গেলা গিরি গোবর্দ্ধনে,’’
গৌরাঙ্গ-বৈমুখী দেহ—এ-ছার-দেহে কাজ কি আছে
প্রাণ-গৌর যদি বিমুখ হয়েছে—এ ছার-দেহে কাজ কি আছে
প্রাণ-গৌর যদি ছেড়ে গেল—আর বেঁচে কাজ কি বল
শ্রীগৌরাঙ্গ-বৈমুখী প্রাণ—আর আমি রাখব না
রঘুনাথের আশায় জেনে
প্রাণের প্রাণ গৌরহরি—রঘুনাথের আশয় জেনে
প্রিয় শ্রীরূপ-সনাতনে—জানাইলেন স্বপনে
রঘুনাথের মনোবৃত্তি—জানাইলেন স্বপনে
আমার বিরহে করবে প্রাণপাত—সঙ্কল্প করেছে রঘুনাথ
রঘুনাথ বিরহে ত্যজিবে পরাণ—তোমরা গিয়ে রাখ প্রাণ
গিরিগোবর্দ্ধন-তটে—ত্বরায় দাও দুইজনে
আমার,—রঘুনাথে বাঁচাও প্রাণে—ত্বরায় যাও দুইজনে
‘আমার,–রঘুনাথে বাঁচাও প্রাণে’—
তার দ্বারে আমার অনেক কাজ হবে—আমার,–রঘুনাথে বাঁচাও প্রাণে
প্রাণ-গৌরাঙ্গের আজ্ঞা পেয়ে
ত্বরায় গেলেন দুইজনে
শ্রীরূপ-সনাতন উঠি’ প্রভাতে—ত্বরায় গেলেন দুইজনে
গিরি-গোরর্দ্ধন-পানে—ত্বরায় গেলেন দুইজনে
রাখতে রঘুনাথের প্রাণে—ত্বরায় দাও দুইজনে
গৌর-প্রিয়-রঘুনাথে—দূর হতে দেখতে পেয়ে
ধরি’ রূপ-সনাতন, রাখিল তাঁর জীবন,
দেহ ত্যাগ করিতে না দিলা।’’
কার দেহ ত্যাগ করিবে
এ কি,–তোমার দেহ রঘুনাথ—কার দেহ ত্যাগ করিবে
এ দেহ গৌর করেছেন অঙ্গীকার—এ দেহে তোমার কি অধিকার
এ যে গৌরের কেনা দেহ—কার দেহ ত্যাগ করবে
এ যে,–গৌর-উৎসর্গীকৃত দেহ—কার দেহ ত্যাগ করবে
‘‘দুই গোসাঞির আজ্ঞা পাইয়া,’’
বার করি’ নিয়ম করিলা।।’’
রঘুনাথ দাস গোসাঞি—নিশিদিশি ডাকে রে
রাধাকুণ্ড-তীরে বসে—নিশিদিশি ডাকে রে
গোসাঞি,—নিয়ম করে সদা ডাকে—হা-রাধে শ্রীরাধে
হা হা গান্ধর্ব্বিকে—হা-রাধে শ্রীরাধে
হা রাধে শ্রীরাধে—তবৈবাস্মি তবৈবাস্মি
ন জীবামি ত্বয়া বিনা—তবৈবাস্মি তবৈবাস্মি
তোমার অদর্শনে প্রাণে মরি—রাধে,–তোমার আমি তোমার আমি
দেখা দাও প্রাণ-কিশোরী—তোমার অদর্শনে প্রাণে মরি
গোসাঞি বলে অনুরাগভরে—দেখা দাও প্রেমময়ী রাধে
এই,–কুণ্ডতীরে তোমার বঁধু-সাথে—দেখা দাও প্রেমময়ী রাধে
এই,—কুণ্ডতীরে প্রাণবঁধু-সনে—দেখা দিয়ে রাখ মোর প্রাণে
কোথায় আছ প্রাণগৌর—একবার দেখা দাও
কোথা গো প্রেমময়ী রাধে—নিয়ম করে সদাই ডাকে
রঘুনাথের ভজন-নিয়ম—যেন পাষাণের রেখা
শ্রীরঘুনাথ দাস গোসঞির—অপূর্ব্ব ভজন-রীতি
মুখে কৃষ্ণ-গুণ-গাথা—ছেঁড়া কাঁথা নেড়া মাথা
পরিধানে,—ছেঁড়া কাঁথা বহির্ব্বাস—নিশিদিশি হা হুতাশ
পরিচয় দেয় শ্রীচৈতন্য-দাস—নিশিদিশি হা হুতাশ
অন্ন আদি না করে আহার।
তিন সন্ধ্যা স্নান করি, স্মরণ কীর্ত্তন করি,
রাধাপদ ভজন যাঁহার।।’’
রাধাপদ ভজন করে—কেবল গৌর-সুখের তরে
স্মরণেতে সদাই গোঁয়ায়।
চারিদণ্ড শুতি থাকে স্বপ্নে রাধাকৃষ্ণ দেখে,
একতিল ব্যর্থ নাহি যায়।।’
এমন করে,–তিলে তিলে না ভজিলে—শুধু কি,–মুখের কথায় গৌর মিলে
আপন প্রাণের ভোগের কথা—প্রকাশিলেন দাস-গোসাঞি
শ্রীচৈতন্য-স্তবকল্পবৃক্ষে—প্রকাশিলেন দাস-গোসাঞি
স্তবকল্পবৃক্ষ বর্ণন করে—কবিরাজের গলা ধরে কাঁদে
রথের আগে নটন-পর—গৌর,–হবে না কি নয়ন-গোচর
রঘুনাথ দাস গোসাঞি—কাঁদে আর্ত্তনাদ করে
রাধাকুণ্ড-তীরে বসে—কাঁদে আর্ত্তনাদ করে
কৃষ্ণদাস,–কবিরাজের গলা ধরে—কাঁদে আর্ত্তনাদ করে
প্রাণ-গৌরাঙ্গের,—নীলাচল-বিহার বলতে বলতে—কাঁদে আর্ত্তনাদ করে
আর কি আমি দেখতে পাব
সোণার গৌরাঙ্গ প্রভু—আর কি আমি দেখতে পাব
গৌরের নীলাচল-বিহার—আর কি আমি দেখতে পাব
গুঞ্জা-গিরিধারী দেখায়ে বলে—বলে,—এই দেখ কবিরাজ
এই শিলা প্রভুর বক্ষে ছিলা—এই আমার,–প্রভুর গলার গুঞ্জামালা
গুঞ্জা-গিরিধারী বুকে ধরে
বাহু পসারি জড়ায়ে ধরে
ভাবাবেশে বলে রে
আর ছেড়ে দিব না
পেয়েছি তোমায় চিতচোর—আর ছেড়ে দিব না
গুঞ্জা-গিরিধারী বুকে ধরে—গৌর-অঙ্গ-সঙ্গ ভোগ করে
সে যে,–প্রাণ-গৌরাঙ্গের বুকে ছিল—না হবে বা কেন রে
আবার—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
হা গৌর প্রাণ গৌর বলে—আবার,–ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
বলে—পাব কি গৌরাঙ্গ-ধনে
আমার প্রভু স্বরূপের সনে—বলে,–পাব কি গৌরাঙ্গ-ধনে
হা আমার প্রভু স্বরূপ—বলে,–আর কি দেখা দিবে মোরে
প্রাণ-গৌর লয়ে গম্ভীরা-ঘরে—বলে,–আর কি দেখা দিবে মোরে
তোমার,–গলা-ধরা প্রাণ-গোরা—আর কি দেখতে পাব না
তোমার,–কণ্ঠমালা শচীর বালা—আর কি দেখতে পাব না
রাধাভাবে ভোরা গোরা—আর কি দেখতে পাব না
বিবর্ত্ত-বিলাস-প্রসঙ্গ—আর কি শুনতে পাব না
তোমার—গলা ধরি’ গৌর-কিশোরী—ডাকবেন ও প্রাণ-সহচরী
ও প্রাণ-সহচরী—ত্বরায় মিলাও বংশীধারী
আর কি দেখাবে না
গম্ভীরার গুপ্তলীলা—আর কি দেখাবে না
রঘুনাথ দাস গোসাঞি—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
হা স্বরূপ মোর প্রভু—হা গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু
অভেদ শ্রীরূপ-সনে, গতি যাঁর সনাতনে,
ভট্টযুগ-প্রিয় মহাশয়।।
শ্রীরূপের গণ যত, তাঁর পদে আশ্রিত,
অত্যন্ত বাৎসল্য যাঁর জীবে।
সেই আর্ত্তনাদ করি’, কাঁদি’ বলে হরি হরি,
প্রভুর করুণা হবে করে।।’’
তার এই ত’ স্বভাব বনে
আপনারে অযোগ্য মানে—তার এই ত’ স্বভাব বনে
ব্রজবনে গোবর্দ্ধনে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
রঘুনাথ দাস গোসাঞি—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
রাধিকা-রমণ রাধানাথ।
হে বৃন্দাবনেশ্বর, হা হা কৃষ্ণ দামোদর,
কৃপা করি কর আত্মসাৎ।।’’
অন্ধ হল এ দুই নয়ন।’’
শ্রীরূপ শ্রীসনাতন—চলে গেল দুই নয়ন
যাঁরা করায় গৌর দরশন—চলে গেল দুই নয়ন
শ্রীরূপ শ্রীসনাতন চলি’ গেলা—দুই,–নয়নতারা হলাম হারা
গৌর-গোবিন্দ-লীলা দরশনের-দুই—নয়নতারা হলাম হারা
শ্রীরূপ সনাতন গেল চলে—আর কি দেখবে আঁখি মেলে
যদি,–ছাড়ি গেল রূপ-সনাতন—বৃথা কেন রাখব নয়ন
প্রাণের,–প্রাণ গৌর ছেড়ে গেল—এ প্রাণে আর কাজ কি বল
এত বলি করয়ে ক্রন্দন।।’’
হা রূপ সনাতন বলে—ব্যাকুল হয়ে কাঁদে রে
অবতার শ্রীবিগ্রহ নাম।
গুপ্ত ব্যক্ত লীলাস্থল, দৃষ্ট শ্রুত বৈষ্ণব সব,
সবারে করয়ে পরণাম।।‘’
লীলাস্থলী গৌরগণ—সবে মিলে কৃপা কর
শ্রীরূপ-সনাতন-সঙ্গ,–জন্মে জন্মে পাই হে
‘শ্রীরূপ-সনাতন-সঙ্গ’—
প্রাণের ঠাকুর শ্রীগৌরাঙ্গ—শ্রীরূপ-সনাতন-সঙ্গ
যেন,–জন্মে জন্মে পাই গৌরাঙ্গ-ধনে
আমার প্রভু স্বরূপ-সনে,–যেন—জন্মে জন্মে পাই গৌরাঙ্গ-ধনে
এই কৃপা কর,–গৌরগণ গৌর-লীলাস্থলী—যেন,–গৌর বলে মরতে পারি
রাধাকৃষ্ণ-বিয়োগে, ছাড়িল সব ভোগে,
শুখা রুখা অন্নমাত্র সার।
গৌরাঙ্গের বিয়োগে, অন্ন ছাড়ি দিলা আগে,
ফল গব্য করিল আহার।।
সনাতনের অদর্শনে, তা ছাড়ি সেই দিনে,
কেবল করয়ে জল পান।’’
সনাতন যদি ছেড়ে গেল—বলে,–এ জীবনে কাজ কি বল
অন্নজল –বিষ খাই—কেন মরে নাহি যাই
রাধাকৃষ্ণ বলি’ রাখে প্রাণ।।
শ্রীরূপের অদর্শনে, না দেখি তাঁহার গণে,
বিরহে আকুল হঞা কাঁদে।
কৃষ্ণ-কথা আলাপনে, না শুনিয়া শ্রবণে,
উচ্চৈঃস্বরে ডাকে আর্ত্তনাদে।।’’
শ্রীরাধাকুণ্ড-তীরে পড়ে—ব্যাকুল হয়ে দাস গোসাঞি ডাকে
কৃপা করি’ দেহ দরশন।
হা চৈতন্য মহাপ্রভু’’
হা হা প্রভু রূপ সনাতন।।’’
নয়নে দরদর-ধারে—কুণ্ডতীরে রঘুনাথ কাঁদে
আহার নাই নিদ্রা নাই—কুণ্ডতীরে রঘুনাথ কাঁদে
হা প্রাণ শচীনন্দন
হা,—স্বরূপ রূপ সনাতন—হা প্রাণ শচীনন্দন
আর কে শুনাবে গৌর-কথা—রূপ-সনাতন গেলে কোথা
আর কি সঙ্গ দিবে না
গৌর-কথা কি শুনাবে না—আর কি সঙ্গ দিবে না
ক্ষণে অঙ্গ ধূলায় ধূসর।
চক্ষু অন্ধ অনাহার,’’
বিরহে হৈল জরজর।।’’
বিরহেতে শীর্ণ তনু—উঠিবার শকতি নাই
ত্যাগ করেছেন আহার—কঙ্কাল হয়েছে সার
মুখে বাক্য না হয় স্ফুরণ।’’
‘‘মন্দ মন্দ জিহ্বা নড়ে’’
মনে কৃষ্ণ করয়ে স্মরণ।।
সেই রঘুনাথ দাস, পুরাহ মনের আশ,
এই মোর বড় আছে সাধ।
এ রাধাবল্লভ দাস, মনে বড় অভিলাষ
প্রভু মোরে কর পরসাদ।।’’
রঘুনাথ দাস গোসাঞি—এই কৃপা কর মোরে
স্বরূপের প্রিয় রঘুনাথ—এই কৃপা কর মোরে
তোমা হতে অধিক দুঃখী মোরা—বিতর বিরহ-কণা
চৈতন্য-স্তব-কল্প-বৃক্ষ গান করি’—যেন,–নিশিদিশি কাঁদতে পারি
তোমার চরণ হৃদি ধরি’—যেন,–গৌর-গুণে সদা ঝুরি
কুণ্ডতীরে তোমার গুণ গেয়ে—যেন,–কেঁদে লুটাই ব্যাকুল হয়ে
শ্রীরাধাকুণ্ড-তীরে গিয়ে—যেন,—কেঁদে লুটাই ব্যাকুল হয়ে
শ্রীগুরু-গৌরাঙ্গ হৃদে ধরি’—যেন,–তোমার চরিত্র সঙরি’ মরি
ভজ নিতাই গৌর রাধে শ্যাম।
জপ হরে কৃষ্ণ হরে রাম।
গৌরহরি বোল, হরিবোল, হরিবোল, হরিবোল।
শ্রীগুরু-প্রেমানন্দে নিতাই গৌর হরিবোল।।